“এনিমখোর রিভিউ কন্টেস্ট [২০১৫] – দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এন্ট্রি”
————————————————————————————————————-
Hotaru No Haka (1988)
Genre: War Drama
Imdb: 8.5
MAL: 8.6
Rotten Tomatoes: 97%
যুদ্ধবিরোধী ধ্যানধারণায় নির্মিত সর্বকালের সেরা সিনেমাসমূহের মধ্যে Hotaru No Haka (Aka Grave of the Fireflies) (1988) এর নাম উচ্চারিত হয়েছে বারংবারই। ফিল্ম ক্রিটিকরা হয়েছেন প্রশংসায় পঞ্চমুখ, দর্শকরাও মজেছে সমানতালে।
Hotaru No Haka’র গল্প একমুখী এবং সরল। কাহিনীর সময়কাল ১৯৪৫ সালের জাপান, ওসাকা বে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন সমাপ্তির দোরগোড়ায় পৌছে গেছে প্রায়। শুরুটা হয় ন্যারেটিভ ভঙ্গিমায়, সিনেমার প্রধান দুই চরিত্রের একজন Seita’র কাছে জানা যায় তার নিজের মৃত্যুর কথা। Seita এখানে আত্মিক স্বত্বা, বাকি সিনেমা জুড়ে Seita’র বর্ণনায় দর্শক দেখতে পায় মৃত্যুর আগ অবধি Seita’র জীবনের ঘটনাবলী।
তৎকালীন জাপানে এমন একটা সময় চলছিল যখন মিত্র বাহিনীর অ্যামেরিকান আর্মি নিয়মিত আকাশ পথে আগুনে-বোমা মারত জাপানের শহর গুলিতে। মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকা জাপানী অধিবাসীরা সাইরেন বাজতেই জীবন বাঁচাতে পড়িমরি করে ছুটতো বম্ব-শেল্টারে। তবে সবাই যে যথাসময়ে শেল্টারে পৌছনোর মতো ভাগ্যবান ছিল না, সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার পড়েনা। এমনই একটা শহরের লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া হাজারো পরিবারের একটা Seita’দের পরিবার। বাবা যুদ্ধে, মা বোমা হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত শহরে ছোট বোন Setsuko কে নিয়ে Seita’র জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই।
যুদ্ধকালীন সময়ের কঠিন জীবনের কোন তুলনা হয়না, কল্পনাকেও হার মানায়। সাহায্য পাবার আশা প্রায় নিরাশার সমতুল্য। Seita’র জীবন সংগ্রামের অভিজ্ঞতাও তাই তার জন্য খুব একটা সুখকর হয়নি। তবু হাল ছাড়ার পাত্র নয় সে, নিজে যেমন তেমন, প্রাণপ্রিয় ছোট বোনের দরকারগুলো নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর, একরোঁখা। Seita’র চরিত্রের আত্মসম্মানবোধ, স্নেহপ্রবণতা, দায়িত্ববোধ যেকোন দর্শক হৃদয়কে আন্দোলিত করবে।
Hotaru No Haka’র বড় বৈশিষ্ট্য এতে রাজনৈতিক কোন প্রোপ্যাগান্ডা নেই, যুদ্ধে কে সঠিক, কে বেঠিক, কে জয়ী কে বিজেতা – এসবের কোন ধার ধারেনি। মূলত এটা একটা সেমি-অটোবায়োগ্রাফি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান অধিবাসী এক কিশোরের নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী সম্বলিত লেখার উপর নির্ভর করে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটা। সম্পূর্ণ গল্পটাই যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মানবসমাজে তার প্রভাব নিয়ে। মুভিটা কারো দিকে আঙ্গুল তোলে না, স্রেফ অনুধাবন করতে বলে। যুদ্ধবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে তাই পুরোপুরি সফল বলতে হবে।
পুরো মুভি জুড়েই ছোট ছোট কিছু দৃশ্য বিশেষভাবে নজর কাড়ে। পাঁচ বছরের পিচ্চি মেয়ে Setsuko’কে করাল বাস্তবতার কুৎসিত রূপ থেকে নিষ্কলুষ রাখতে বড় ভাই Seita’র প্রচেষ্টাগুলো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিত্য নৈমত্তিক ব্যপার হলেও সিনেমার প্রেক্ষাপটে অতিমানবীয় রূপ নিয়ে দর্শকের সামনে আবির্ভূত হয়। আবার অন্য এক দৃশ্যে, জোনাকি পোকা নিয়ে Setsuko’র হাস্যোজ্জ্বল উৎসাহ এবং পরদিন পোকাগুলোকে কবর দেয়ার ছেলেমানুষী কাজটা মোটেই ছেলেমানুষী লাগে না। এ পর্যায়ে এসে সিনেমার নামকরণের কারণ এবং সার্থকতা দর্শক অনুধাবন করতে পারে যেন সহসাই।
শেষ করি নিজের একটা ঘটনা দিয়ে। অ্যানিমে পছন্দ করতাম না তেমন, আর্টগুলো ভালো লাগতো না। রটেনটম্যাটোসে অ্যানিমেশন লিস্টে পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখা শুরু করেছিলাম Hotaru No Haka. লাইফ লং দৃষ্টিভঙ্গি এই এক অ্যানিমেই পালটে দিয়েছিল। যে প্রচণ্ড ভাবাবেগের সম্মুখীন করেছিলো এটা আমাকে, সেই অনুভূতির পুনরাবৃত্তি ঘটেনি আগে-পরে কখনও। মোশন পিকচারে কোন জ্যন্ত মানুষ ছাড়াই এত শক্তিশালী ভাব প্রকাশ করা সম্ভব ভাবিনি আগে। নিজেকে তিরস্কার করেছিলাম সমৃদ্ধ এক শিল্প থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখার জন্যে। বিখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিক Rodger Ebert যেন যথার্থই বলেছিলেন, “Grave of the Fireflies” is an emotional experience so powerful that it forces a rethinking of animation.
আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৯.৫/১০