Psycho pass: সিস্টেম সিবিলাস কিংবা সংখ্যায় অস্তিত্বের পরমাপ – মোহাম্মদ আসিফুল হক


“I want to see the splendor of people’s souls.” – Makishima shogo.

ধরুন; কোন এক সুন্দর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন দেশ থেকে সব মারামারি কাটাকাটি সব দূর হয়ে গেসে। পাব্লিক সব “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে” গান গাইতে গাইতে যার যার কাজে যাচ্ছে। কিভাবে? ধরুন; দেশ থেকে থানা পুলিশ কোর্ট কাচারি আদালত সব উঠে গেসে; এইগুলোর আসলে দরকারই নেই। এমন টেকনোলজি বের হয়েছে যে রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগানো ক্যামেরা স্ক্যান করেই বলে দিতে পারবে কে কি অপরাধ করতে যাচ্ছে; কে মনে মনে কি ভাবছে; কার ট্যালেন্ট কি; এই মুহূর্তে কার কি করা দরকার – সব। যন্ত্রের স্ক্যানে একবার ধরা খেলেই সব শেষ; সেই লেভেলের সব অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাজির; ধুমধাম যা ব্যাবস্থা নেওয়ার নিয়ে নিবে। :) :) :)

মোটামুটি এইরকম একটা প্লট নিয়েই শুরু হয়েছে “psycho pass” এনিমটার কাহিনী। দূর ভবিষ্যতে জাপান এমন একটা সময়ে বাস করতেসে যেখানে সব কিছুই কন্ট্রোল করে “সিবিল সিস্টেম” নামক একটা স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম। যদিও সিস্টেমটি কিভাবে কাজ করে কিংবা আদৌ সিস্টেমের সব সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত কি না – সেটা কেউ ভেবে দেখে না; আসলে প্রয়োজন মনে করে না। কারন এই সিস্টেম সমাজে এক ধরণের কড়া “rules and order” maintain করতে সক্ষম হয়েছে। জনগন এই শান্তির বিঘ্ন কিছুতেই চায় না।


“The law doesn’t protect people. People protect the law. People have always detested evil and sought out a righteous way of living. Their feelings, the accumulation of those peoples feelings are the law. They’re neither the provisions, nor the system. They’re the fragile and irreplaceable feelings that everyone carries in their hearts.” – Tsunemori akane.

এই পর্যন্ত পরার পর প্রথম রিএকশন যেটা হওয়া স্বাভাবিক সেটা হল, “ভালই তো; প্রব্লেমটা কই? যন্ত্র সমাজ কন্ট্রোল করতেসে; শান্তি বজায় রাখতেসে; সমস্যাটা কই?” Well; দুইটা সমস্যা। এক – যন্ত্র কি আসলেই মানুষের মনের পরিমাপ করতে পারে? ভাল মন্দ অপরাধ শিল্প মানবিকতা – এই জিনিসগুলো কি আসলেই পরিমাপযোগ্য? কিছু certain criteria ধরে হয়ত একটা ঘটনাকে “অপরাধ” বলা যেতে পারে; কিন্তু অপরাধ ঘটার আগেই কি সেটা যন্ত্রের মাধ্যমে প্রেডিক্ট করা সম্ভব? কিংবা ভালর সংজ্ঞাটা আসলে কি? মন্দের সংজ্ঞাটাই বা কি? আইন কি? কোন অপরাধের কি শাস্তি হওয়া উচিত তা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা না করে যন্ত্র কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাকি নেওয়া উচিত? সমাজের চলার পথে মানুষের কিছু বিশ্বাস, কিছু আশা আকাঙ্খা, কিছু তৈরি করা নিয়মই কি আইন নয়? এধরণের বেশ কিছু rhetorical প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করা হয়েছে – কিংবা বলা ভাল – প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে এই এনিমে।

সমস্যা দুই – সিস্টেমেই সমস্যা। এনিমটা কিছু দূর আগানোর পর দেখা যায় এমন কেউ বা কিছু লোক আছে যারা দিব্যি অপরাধ করে যাচ্ছে – সিস্টেম তাদেরকে স্ক্যান করে সেখানে “অপরাধপ্রবনতা” খুজে পাচ্ছে না। কিসের জন্য? জানতে হলে দেখতে হবে এই এনিমটি।

স্টোরিলাইন নিয়ে খুব একটা গভীরে যাচ্ছি না; চরিত্র বিশ্লেষণ নিয়েও না। স্টোরিলাইন খুব একটা জটিল না; বর্ণনা করতে গেলেই প্রচুর স্পয়লার চলে আসবে। আর ক্যারেকটারের কথায় আসি – মুল ক্যারেক্টার আমার কাছে দুইজন। “Shinya Kōgami” আর “Shōgo Makishima”। যদিও দুই জনের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধির লড়াই পুরো সিরিজের অন্যতম মুল উপজীব্য; কিন্তু এদের মধ্যে কে যে নায়ক আর কে যে ভিলেন পুরোপুরি কখনই নিশ্চিত হওয়া যায় না। জোরাজুরি করলে মাকিশিমা কে ভিলেন আখ্যা দেওয়া যায়; তবে পুরো সিরিজে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ছিল এই মাকিশিমাই। যদিও ভাল মন্দ হিরো ভিলেন –রোলগুলো এই এনিমের প্রেক্ষিতে একটু টাফ। যারা ডেথ নোট দেখসেন তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। যদিও psycho pass কোন দিক দিয়েই death note এর ধারেকাছেও না; জাস্ট dilemma টা বোঝানোর জন্যই এখানে death note এর reference টানা।


“Everyone is alone. Everyone is empty. People no longer have need of others. You can always find a spare for any replacement. Any relationship can be replaced.” – Makishima Shogo.” 

বাকি সব দিক গুলো নিয়ে এক কথায় বলতে গেলে – সুন্দর প্লট; মোটামুটি চলে টাইপ স্টোরি; adorable and likable ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এবং interesting এন্ডিং। খুব বেশি নাড়া দেওয়ার মত ঘটনা না হলেও চরিত্র রুপায়ন আর বাকি সব দিক মিলিয়ে ভালই উৎরে গিয়েছে। গানগুলো বেশ সুন্দর; এমনকি একটা এন্ডিং সং এখন আমার মোবাইলের রিংটোন এবং আমি আমার রিংটোন এর ব্যাপারে যথেষ্টই খুতখুতে। :)

সুতরাং দেরি না করে আজই দেখে ফেলুন এই জম্পেশ এনিমটি; আশা করি ঠকবেন না।:D

এনিম নিয়ে আড্ডা দিতে চাইলে; ছবি আঁকতে কিংবা দেখতে চাইলে; মজার সব কুইজে অংশ নিতে চাইলে জয়েন করতে পারেন ফেসবুকে “এনিমখোর” গ্রুপে। :) :)

শেষ করব এই এনিমে আমার অন্যতম প্রিয় একটা লাইন দিয়ে –
“Books are not something that you just read words in. They’re also a tool to adjust your senses.”

এনিমেঃ আমার পছন্দ

আমার পছন্দের এনিমে এনিমে– শব্দটার সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। জাপানিজ এনিমেশনকে এক কথায় এনিমে বলা হয়। নামটার উৎপত্তি ‘এনিমেশন’ থেকেই। যারা এনিমে দেখে নাই আগে, যারা কার্টুন নামক অনুষ্ঠান দেখে বিরক্ত, তারা ১ পলক দেখেই চোখ কুচকায়ে ফেলে কার্টুন বলে তাচ্ছিল্য করে বসে। কিন্তু আমি বাজি রেখে বলতে পারব, তারা যদি ধৈর্য সহকারে কোন জনপ্রিয় এনিমে সিরিজ দেখতে পারে, তাদের থেকে অন্তত ৬০ভাগ মানুষ এনিমে দেখার নেশায় পড়ে যাবে।

আমি- বলতে গেলে ১জন এনিমে ফ্রিক। এখনো মনে পড়ে কলেজে, তারপর ভার্সিটি তে উঠে পাগলের মত দেখা শুরু করলাম। কত শ এনিমে যে দেখা হইসে, তার সিংহভাগের কাহিনীই মনে নাই। এনিমে তে আমি সব কিছুরই সামারি পাই। রোমান্টিসম, মারামারি, ভৌতিক মুহূর্ত, কমেডি, জীবনের প্রতিচ্ছবি, রূপকথা- সব কিছুরই ১টা ছোঁয়া থাকে, সিরিজ ভেদে। এনিমে দুনিয়ায় আছে হাজার হাজার এনিমে সিরিজ। একেকটার ক্যাটাগরি বিচার করলে একেক রকম। তবে প্রধান যে জিনিসটা আমাকে এনিমে ফ্রিক বানিয়েছে, তা হল ইমোশনাল মুহূর্তগুলোর বাস্তব প্রতিফলন, যা সাধারণত অনেক মুভি, ইংরেজি সিরিজেও সঠিকমত তুলে ধরতে পারে না।

অজস্র এনিমে রয়েছে, উইকিপিডিয়া সার্চ দিয়ে খুজলে গুনে শেষ করা যাবে না। এনিমের দৌরাত্ম্য শুরুই হয় ১৯৬৯ সালের থেকে। সমস্ত এনিমে কে, এখন পর্যন্ত যতগুলো বেরিয়েছে, সব এনিমের জনপ্রিয়তা এবং ভাললাগা হিসেব করলে, আমার কাছে সেরা ১০ এনিমে হলঃ

  • One Piece
  • Death Note
  • Code Geass
  • Baccano!
  • Clannad
  • Naruto
  • GTO (Great Teacher Onizuka)
  • Full Metal Alchemist
  • Bleach
  • Gundam Seed

আরো আছে ভালো লাগা এনিমে। সবগুলার নাম বলে শেষ করতে পারব না। অনেকে হয়ত এগুলোর সবগুলোই দেখে ফেলেছে। অনেকে কিছু দেখেছে। যারা কেছু দেখেছে, তাদের আমি বলব বাকিগুলো দেখে ফেলতে- Recommended