Fate Series Character Origin: Gilles de Montmorency Laval — Safayet Zafar

Caster 1

Full Name: Gilles de Montmorency Laval
Born: prob. c. September at France
Social standing: c (baron)

এই সেই ফেট জিরোর Gille de rais . Caster class, was a servant of Ryonnosuke

এই ব্যক্তি ছিলেন ফ্রান্সের একজন নোবেল ম্যান। ফান্সের ব্রিটানি (ফ্রান্সের উত্তর পূর্বে অবস্থিত) মিলিটারির সদস্য ছিলেন ১৫ শতাব্দীতে। তার ভাগ্য ছিল অনেক সু প্রসন্ন। তার জমা করা মোট সম্পত্তি এতোই বেশি ছিল তা ব্রিটানির ডিউকের মোট সম্পত্তিকে ছাড়িয়ে যায়। Hundred Years war এ তিনি অকল্পনীয় সাফল্য লাভ করেন যার কারণে তাকে মার্শাল অফ ফ্রান্স উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৪৩৪/১৪৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিলিটারি থেকে অবসর নেন এবং তার জমা করা সম্পদ বিপুল ভাবে খরচ করতে থাকেন। ১৪৩২ খ্রিষ্টাব্দে তার উপর সিরিয়াল কিলিং এর অভিযোগ আনা হয় যা ছিল ১০০ এর উপর বাচ্চা হত্যার।

Caster 2এর পর পর ই এক পাদ্রীর সাথে ভয়ংকর ঝগড়া হবার পর অভিযোগের তদন্ত যাযকীয় তন্দন্তে রূপ নেয় এবং ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে তার অপরাধ সবার সামনে এসে পড়ে। তার বিচার কার্যে তিনি নিজের মুখে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া বাচ্চাদের পরিবারের সামনে নিজের দোষ শিকার করেন।

তিনি ১ম হত্যা করেন জেউডন নামের ১২ বছর বয়সী এক ছেলেকে ( ১৪৩২-১৪৩৩) খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। এই জেউডন ছিল পশম প্রস্তুত কারী Gulliaume Hilairet এর সহকারী।

Gille de rais এর খালাতো ভাই Gilles de sille এবং Roge de Briqueville. সেই পশম প্রস্তুতকারী কে বলে জেউডেন কে নিয়ে যায় Machecoul এ একটি বার্তা পাঠাতে। যা ছিল পুরোই একটি মিথ্যা কথা এবং সেই বালক টি আর ফিরে আসেনি। তারা পরে অপহরনের কথা বলে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়।

Gilles de rais এর ১৯৭১ নং বায়োগ্রাফিতে Jean Benedetti বলেছেন যে বালকটি কিভাবে gille এর হাতে পড়ে ও মারা যায়।

“[The boy] was pampered and dressed in better clothes than he had ever known. The evening began with a large meal and heavy drinking, particularly hippocras, which acted as a stimulant. The boy was then taken to an upper room to which only Gilles and his immediate circle were admitted. There he was confronted with the true nature of his situation. The shock thus produced on the boy was an initial source of pleasure for Gilles.”

Gilles de rais এর দেহ ভৃত্য poitou যিনিও এসব নির্মম হত্যাকান্ডে সহায়তা করতেন তিনি স্বীকার করেছেন যে Gilles ১ম এ বাচ্চা দের কে উলঙ্গ করতো। তারপর তাদের একটি হুকের সাথে বেধে ঝুলিয়ে দিতো এবং তাদের গায়ের উপর বীর্যপাত করতো। এরপর তাদের আশস্ত করা হতো এই বলে যে সে তাদের সাথে কিছুক্ষণ খেলতে চায়। এরপর পরইর তাদের হত্যা করা হতো।

আর যেসব বাচ্চাদের Gilles এর পছন্দ হতো তাদের সে সোডোমাইজ (sodomize = kind of. sexually abuse like oral or anal sex).

সবশেষে তাদের পেট চিরে ফেলে তাদের ভিতরের অঙ্গপ্রতঙ্গ গুলো দেখতেন Gille, তাদের চুমু খেতেন ও পেটের উপর বসে মৃত্যুযন্ত্রনা দেখতেন। শেষে মৃতদেহ গুলো তার রুমের ফায়ার প্লেসে পুড়িয়ে ফেলা হতো।

সকল দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ফাসির আদেশ দেওয়া হয় এবং ২৬ অক্টোবর, ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে ৩৫ বছর বয়সে মারা যান। তাকে Church of the monastrey of Notre Dame des carmes যা Nantes এ অবস্থিত, সেখানে দাফন করা হয়। ধারণা করা হয় তার হাতে মারা যাওয়া বাচ্চার সংখ্যা ১৪০ জন।

Caster 3

চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান – ৬ — কেইরন ও অ্যাকিলিস (ফেইট/অ্যাপোক্রিফা) — Shifat Mohiuddin

আচ্ছা, এবার আমি দুটো চরিত্রকে একসাথে উঠিয়ে আনতে চাচ্ছি লেখাতে। চরিত্র দুটোই গ্রীক মিথের অন্তর্ভুক্ত। ফেইট/অ্যাপোক্রিফা যেহেতু এখন খুব হাইপড মোমেন্টে আছে তাই ভাবলাম এখনই সময় দুইজনকে নিয়ে আলোচনা করার।

প্রতিটি ফেইট সিরিজেই একজন আরেকজনের সাথে পূর্ব পরিচিত এমন একাধিক সারভেন্টের দেখা পাওয়া যায়। ফেইট জিরোতে ছিল আর্থুরিয়া-ল্যান্সেলট, স্টে নাইট আর UBW তে ছিল গিলগামেশ-আর্থুরিয়া। অ্যাপোক্রিফাতেও এর ব্যতিক্রম হল না। হ্যাঁ, আজকের পোস্ট পূর্ব পরিচিত গুরু-শিষ্য যুগল কেইরন আর অ্যাকিলিসকে নিয়ে। দুইজনের কাহিনীই গ্রীক সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। দুইজনই দেবতাদের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন, যুগে যুগে তাদের নিয়ে অসংখ্য কাব্য, নাটক ও চিত্রকর্ম রচিত হয়েছে। আধুনিক সাহিত্য ও অন্যান্য শিল্পকর্মেও তাদের নিয়মিত আবির্ভাব দেখা যায়। যেহেতু মিথ এবং এনিমে দুই জায়গাতেই তারা খুব ডিপলি কানেক্টেড তাই এক পোস্টেই তাদের অতীত নিয়ে আলোচনা করবো।

শুরুর আগে বলে রাখি, কেইরন আর অ্যাকিলিস দুজনই সম্পূর্ণ মিথিকাল চরিত্র। তাদের ঐতিহাসিক সত্যতা নেই বললেই চলে। কেইরন তো মানুষ নন তাই তার অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নই উঠে না। অ্যাকিলিসও কাল্পনিক চরিত্র তবে ট্রয় যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রমাণাদি থাকায় অ্যাকিলিসের মত বড় কোন বীরের অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ধারণা করা হয় একাধিক বীরের বীরত্বগাথা যোগ করে গ্রীক কবিরা অ্যাকিলিসের গুণকীর্তন করেছেন।

Fate Apo Chiron Achilles 1

চরিত্র: কেইরন (Chiron)
এনিমে: Fate/Apocrypha 
ভূমিকা: মধ্যমপন্থী
জাতীয়তা: ? (পেলিয়ন নামক এক পর্বতে বাস করতেন)
জন্মস্থান: জানা যায় নি
জন্ম ও মৃত্যুসাল: জানা যায় নি

চরিত্র: অ্যাকিলিস (Achilles)
এনিমে: Fate/Apocrypha 
ভূমিকা: মধ্যমপন্থী
জাতীয়তা: গ্রীক (থেসেলিয়ান)
জন্মস্থান: থেসেলি, গ্রীস
জন্ম ও মৃত্যুসাল: জানা যায় নি

যেহেতু শিক্ষক তাই কেইরনকে দিয়েই শুরু করি। সবাই জানি কেইরন মানুষ নন, তিনি একজন সেন্টর। সেন্টররা এক ধরণের পৌরাণিক প্রাণী যাদের শরীরের অর্ধেক ঘোড়া আর অর্ধেক মানুষের মতন। সেন্টররা মারাত্মক অশিক্ষিত, উশৃঙ্খল, মদ্যপ, ধর্ষকামী জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু কেইরন অন্যান্য সেন্টরদের চেয়ে আলাদা ছিলেন। এর কারণ জানতে চাইলে সেন্টরদের উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

সেন্টরদের জন্ম হয়েছিল খুব অদ্ভুতভাবে। ইক্সিওন নামের একজন রাজা একবার দেবী হেরার (জিউসের স্ত্রী) প্রতি খুব প্রলুব্ধ হয়ে পড়েছিল। জিউস তাই ইক্সিওনের সাথে একটু কৌতুক করে বলা যায়। জিউস ধুলা আর মেঘের সমন্বয়ে হেরার মত দেখতে একটি আকৃতি তৈরি করে। ইক্সিওনের সাথে এই আকৃতির মিলনের ফলে যেসব প্রাণীর জন্ম হয় তাদের শরীরের নিচের অংশ ঘোড়ার মত আর উপরের অংশ মানুষের মত ছিল। এদের বংশধরেরাই পরে সেন্টর নামে পরিচিতি লাভ করে।

কেইরনের জন্ম এসব সেন্টরদের মত হয় নি। আসলে সেন্টরদের জন্মের অনেক আগেই কেইরনের জন্ম হয়েছিল। টাইটানদের শাসক ক্রোনোস (জিউসের বাবা) একবার ফিলাইয়া নামের এক মৎসকন্যার সাথে ঘোড়ার রূপ ধরে জোর করে মিলিত হন। (এইসব অস্বাভাবিক সম্পর্ক গ্রীক মিথে স্বাভাবিকই বলা যায়!) ফিলাইয়ার গর্ভেই কেইরনের জন্ম হয়। আর কেইরনের দেহের নিম্নাংশের আকার হয় ঘোড়ার মত। টাইটানের ঔরসে জন্ম নেওয়ায় কেইরনের বুদ্ধিমত্তা উচ্চপর্যায়ের ছিল। গ্রীক মিথে খুব কম সংখ্যক বুদ্ধিমান সেন্টরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় আর কেইরন ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমান। কেইরনের দৈহিক আকৃতিও অন্য সেন্টরদের চেয়ে ভিন্ন ছিল। বিভিন্ন চিত্রকর্মে দেখা যায় যে, কেইরনের সামনের পা দুটো মানুষের যেখানে অন্য সেন্টরদের চারপাই ঘোড়ার মত ছিল।

কেইরনের শৈশব-কৈশোর সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় নি। শৈশবে অ্যাপোলো ও আর্টেমিসের সঙ্গ কেইরনের শান্তিপ্রিয় ও যৌক্তিক চরিত্র গড়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে। কেইরন সেন্টর-মানুষ উভয়ের কাছেই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। সেন্টরদের সাথেই তিনি বসবাস করতেন এবং মাউন্ট পেলিয়নে তিনি অন্য অসভ্য সেন্টরদের সাথে বিতাড়িত হয়ে আসেন। কেইরন অন্য সেন্টরদের সভ্য করার চেষ্টা চালাতেন। বর্ষীয়ান হওয়ায় মানুষের সাথে কেইরনের পরিচয় কিভাবে হয়েছিল তা জানা যায় না। কয়েক পুরুষ ধরে অসংখ্য বীর কেইরনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে তাই তার বয়স ও কালও আন্দাজ করা যায় না।

একজন দক্ষ সমরবিদ, জ্যোতিষী ও চিকিৎসক হলেও কেইরনের মূল পরিচিতি ছিল শিক্ষক হিসেবে। অসংখ্য মানুষ তার কাছে যুদ্ধবিদ্যার শিক্ষা নিয়েছিল। পার্সিয়াস, থিসিয়াস, ইনিয়াস, অ্যাজাক্স, জ্যাসন (স্টে নাইটের মিডিয়ার স্বামী), হেরাক্লস (হারকিউলিস), অ্যাকতিওন সহ অনেক বড় বড় বীর কেইরনের নিজের হাতে গড়া। এছাড়া উদ্ভিদবিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের একজন আদি পথপ্রদর্শক হিসেবে কেইরনকে কৃতিত্ব দেয়া হয়।

Fate Apo Chiron Achilles 2

অ্যাকিলিসের কাছে আসা যাক। এই শিক্ষকতার সুবাদে অ্যাকিলিসের সাথে কেইরনের পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটে। অ্যাকিলিসকে চেনে না এমন কেউ গ্রুপে মনে হয় না আছে। ট্রয় সিনেমার ব্র‍্যাড পিটের দুর্দান্ত অভিনয় কে ভুলতে পেরেছে! অ্যাকিলিসকে সহজেই গ্রীক মিথের সবচেয়ে জনপ্রিয় বীর বলা যায়। অ্যাকিলিসের মত সুদক্ষ যোদ্ধা, বক্তা ও নেতা কমই আছে গ্রীক সাহিত্যে। শৌর্য-বীর্যে অ্যাকিলিস অনন্য আর সবচেয়ে সুদর্শন বীর হিসেবেও অ্যাকিলিস স্বীকৃত। এনিমেতে অ্যাকিলিসের বিশৌনেন হওয়াটা তাই খুবই যৌক্তিক। এখন অ্যাকিলিসকে নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করা যাক।

অ্যাকিলিসের জন্ম থেসেলিতে, তার পিতার নাম পেলেয়ুস, মাতার নাম থেটিস। অ্যাকিলিসের জন্ম নিয়ে বিশাল একটা কাহিনী আছে। সংক্ষেপে বর্ণনা করছি:

অ্যাকিলিসের মা থেটিস ছিল একজন সমুদ্রদেবী। প্রধান দুই দেবতা জিউস আর পোসাইডন দুজনেই থেটিসের পাণিপ্রার্থী ছিল। কিন্তু ভবিষ্যৎবাণী আসে যে থেটিসের গর্ভে জন্মানো সন্তান তার পিতার চেয়েও শক্তিশালী হবে। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দুজনেই পিছিয়ে আসে। থেসেলির শাসক বীর পেলেয়ুসের সাথে থেটিসের বিয়ে ঠিক করা হয়। বলা যায় এই বিয়েতে ঘটিকালির কাজটা কেইরনই করেন। এখানেও একটা বিশাল কাহিনী আছে তবে সেটা অন্যদিনের জন্য তোলা থাকুক। তো এভাবে জন্মের আগেই অ্যাকিলিসের সাথে কেইরনের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।

বিখ্যাত ‘অ্যাকিলিস হিল’ প্রসঙ্গে আসা যাক। মানুষ হওয়ার পরও অ্যাকিলিস প্রায় অমর ছিলেন, শুধুমাত্র বাম পায়ের গোড়ালিই তার একমাত্র মরণশীল জায়গা ছিল। ‘অ্যাকিলিস হিল’ তৈরি হওয়া নিয়ে দুটো কাহিনী প্রচলিত:

১। থেটিস সমুদ্রদেবী হওয়ায় পাতালের নদী স্টিক্সের অবস্থান জানতেন। শিশু অ্যাকিলিসকে তিনি সেই নদীর পানিতে গোসল করাতেন নিয়মিত। শিশু অ্যাকিলিসকে বাম পায়ে ধরে উল্টো করে স্টিক্সের পানিতে ডোবানো হত। ফলে অ্যাকিলিসের সারা দেহই অমর হয়ে যায়। পায়ের গোড়ালি হাতে ধরা থাকতো বলে সেই স্থানে পানি লাগে নি। এ কারণেই বাম পায়ের গোড়ালিই অ্যাকিলিসের একমাত্র দুর্বল জায়গা ছিল। এই কাহিনীটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়।

Fate Apo Chiron Achilles 4
থেটিস শিশু অ্যাকিলিসকে স্টিক্স নদীতে স্নান করাচ্ছেন

২। অন্য আরেকটি কাহিনী অনুসারে থেটিস নিজ পুত্রের সারাদেহ অ্যামব্রোসিয়া (দেবতাদের খাদ্য- সহজ ভাষায় অমৃত) দ্বারা আবৃত করে অ্যাকিলিসের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এর ফলে অ্যাকিলিসের ভেতরের মরণশীল অংশ পুড়ে যায়। পেলেয়ুস এই ঘটনা দেখতে পেরে নিজ স্ত্রীকে বাঁধা দেন। অ্যাকিলিসের বাম পা শুধুমাত্র আগুনের স্পর্শ পায় নি তাই এই জায়গাটাই তার একমাত্র মরণশীল জায়গা হিসেবে রয়ে যায়। পেলেয়ুস বাঁধা দেওয়ায় থেটিস ক্রোধান্বিত হয়ে পরিবার ত্যাগ করেন এবং সমুদ্রে চলে যান।

‘অ্যাকিলিস হিল’ প্রবাদটি দিয়ে এখন কোন শক্তিশালী জিনিসের দুর্বল জায়গাকে ইঙ্গিত করা হয়।

কেইরনের কাছে অ্যাকিলিসের শিক্ষা গ্রহণের প্রসঙ্গে আসা যাক। হোমারের ‘ইলিয়াডে’ এ প্রসঙ্গে কোন তথ্য নেই। কবি Statius এর কাব্য ‘অ্যাকিলিডে’ এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আছে।

অ্যাকিলিসের পিতা পেলেয়ুস নিজেই কেইরনের ছাত্র ছিলেন। থেটিস চলে যাওয়ার পর পেলেয়ুস নিজের ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য কেইরনের কাছে নিয়ে আসেন। কেইরনের কাছে অ্যাকিলিস নয় বছর অধ্যয়ন করেন। কেইরন অ্যাকিলিসকে তলোয়ারবিদ্যা, রথচালনা, বর্শাচালনা, তীরন্দাজি সহ যুদ্ধবিদ্যার সকল শাখায় পারদর্শী করে তোলেন। হিলিং মেডিসিনেও অ্যাকিলিস তার কাছ থেকে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন যা ট্রোজান যুদ্ধে কাজে এসেছিল। শরীর সম্পর্কিত এসব বিদ্যা ছাড়াও সুস্থ মানসিকতা তৈরির শিক্ষাও তিনি কেইরনের কাছে পান। অ্যাকিলিসের ভাষ্যে,

“তিনিই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ন্যায়ের ধারণার সাথে।” (অ্যাকিলিড- 2.163-4).

কেইরনের সামনে পেলেয়ুস, কোলে শিশু অ্যাকিলিস
কেইরনের সামনে পেলেয়ুস, কোলে শিশু অ্যাকিলিস

এইসব শিক্ষা কোন আরামদায়ক উপায়ে আসে নি। কেইরন অ্যাকিলিসকে সিংহের নাঁড়িভুঁড়ি, স্ত্রী নেকড়ের মজ্জা ও বন্য শুয়োরের মাংস খাওয়াতেন। এই ভয়ানক খাদ্যাভাসের সাথে চলতো কঠোর সাধনা। দয়ালু হলেও বকাঝকার বেলায় কেইরন কোন কার্পণ্য করতেন না। অ্যাকিলিসের ভাষ্যে,

“আমি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু নদীর প্রবল স্রোত আর তার ক্রমাগত তাড়া দেওয়ার কারণে আমি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে ভয়ানক হুমকি দিলেন এবং বকাঝকা করে ধুয়ে দিলেন। আমি ভয়ে জায়গা ছেড়ে নড়তে পারলাম না।” (অ্যাকিলিড- 2.146-150).

Fate Apo Chiron Achilles 5
কেইরনের কাছে অ্যাকিলিসের তীরন্দাজি শিক্ষা। সাথে শাসনও চলছে সমানে

এইধরণের অম্লমধুর আচরণের কারণে অ্যাকিলিস আর কেইরনের সম্পর্কটা ছাত্র-শিক্ষকের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকটা পিতা-পুত্রের মত হয়ে যায়। অ্যাকিলিস কয়েকবার কাব্যে কেইরনকে পিতৃস্থানীয় হিসেবে উল্লেখ করেন। কেইরন যখন অ্যাকিলিসকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন তখন অ্যাকিলিস তাকে পিতা হিসেবেই মনে করতেন। এক সন্ধ্যায় থেটিস তাকে দেখার জন্য কেইরনের আস্তানায় আসলে অ্যাকিলিস মাকে ছেড়ে কেইরনের উপরেই গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে। কবির ভাষ্যে:

“রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। দীর্ঘদেহী সেন্টর পাথরের উপর এলিয়ে পড়েন আর ছোট্ট অ্যাকিলিস তার কাঁধে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়ে। যদিও তার মা এখানেই আছেন কিন্তু অ্যাকিলিসের কাছে পারিবারিক টানের চেয়ে এটাই বেশী পছন্দনীয়।” (অ্যাকিলিড- 1.195-97).

এখানে কেইরনকেও কোন সেন্টর মনে হচ্ছে না। কেইরনের দেহ পশুর হলেও অন্তরে যে কোন পশুত্ব নেই তা এখান থেকে বোঝা যায়। দয়ালু কেইরন এর এই ভালবাসা অ্যাপোক্রাইফায় কেইরনের মাস্টার ফিয়োরেও পেয়েছে। আমি খুব আবেগান্বিত হয়ে গিয়েছিলাম যখন কেইরন, ফিয়োরের হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেয়ে বিদায় নেয়।

কেইরনের পিঠে কিশোর অ্যাকিলিস!
কেইরনের পিঠে কিশোর অ্যাকিলিস!

অ্যাকিলিসে ফেরা যাক। প্রশিক্ষণ শেষে অ্যাকিলিস নিজ রাজ্যে ফিরে আসে। গ্রীসের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হেলেনের স্বয়ংবর সভায় অ্যাকিলিসও অংশ নেয়। পরে হেলেন, প্যারিস কর্তৃক ট্রয় নগরীতে অপহৃত হলে অন্যান্য বীরদের মত অ্যাকিলিসও ট্রয় অভিযানে যোগ দেন। যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে মা থেটিস অ্যাকিলিসের সাথে দেখা করেন। থেটিস বলেন যে দেবতার আশীর্বাদে তিনি অ্যাকিলিসের জন্য দুটো গন্তব্য নিয়ে এসেছেন:
১। অ্যাকিলিস কোন যুদ্ধে যোগদান করতে পারবে না। তবে এর বিনিময়ে অ্যাকিলিস একটি দীর্ঘ, সুখী জীবন পাবে।
২। যুদ্ধে যোগদান করলে অ্যাকিলিস অনেক বড় বীর হবে কিন্তু বেশীদিন বাঁচতে পারবে না।

রোমাঞ্চপ্রিয় অ্যাকিলিস দ্বিতীয় জীবনটাই বেছে নেন। ৫০ জাহাজ বোঝাই ২৫০০ সৈনিক নিয়ে অ্যাকিলিস ট্রয় অভিমুখে যাত্রা করেন। অ্যাকিলিসের বাহিনীর সৈন্যদের মিরমিডিয়ন বলা হয়। (মিরমিডিয়নরা আগে পিঁপড়া ছিল)
এরপরের কাহিনী সবার জানা। যুদ্ধের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র ছিল অ্যাকিলিস। ট্রয়ের সবচেয়ে বড় বীর হেক্টরকে পরাজিত করে অ্যাকিলিস। অবশেষে দেবতা অ্যাপোলোর পথনির্দেশনায় কাপুরুষ প্যারিসের তীর আঘাত করে অ্যাকিলিসের বাম পায়ের গোড়ালিতে। অ্যাকিলিস সেখানেই মারা যান। বন্ধু প্যাট্রোক্লাসের ছাইয়ের সাথে তার ছাই মিশিয়ে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

কেইরন, অ্যাকিলিসকে lyre বাজানো শেখাচ্ছেন
কেইরন, অ্যাকিলিসকে lyre বাজানো শেখাচ্ছেন

এনিমেতে অ্যাকিলিসের দুটো নোবেল ফ্যান্টাজম দেখা গেছে। দুটোই কিছুটা রিয়েলিটি মার্বেল ঘরানার। Diatrekhōn Astēr Lonkhē অ্যাকিলিস ব্যবহার করেছিল কেইরনের বিপক্ষের ফাইটে। প্রতিপক্ষের পেছনে বর্শা ছুঁড়ে মেরে এটা অ্যাক্টিভেট করতে হয়। মজার ব্যাপার হল এই বর্শাটা কেইরন তৈরি করে পেলেয়ুসকে দিয়েছিলেন, পেলেয়ুস পরে নিজ পুত্রকে উপহার দেন। বর্শাটি কেইরনের বাসস্থান মাউন্ট পেলিয়নের গাছ থেকে তৈরি।

Akhilleus Kosmos নোবেল ফ্যান্টাজমটা অ্যাস্টোলফো অসাধারণভাবে ব্যবহার করেছিল কর্ণের বিপক্ষে। দুর্দান্ত এই নোবেল ফ্যান্টাজমের পেছনেও একটা কাহিনী আছে। মনে হয় সবাই কাহিনীটা জানেন তারপরও বলি:
ট্রয়ের যুদ্ধের এক পর্যায়ে অ্যাকিলিস যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে গ্রীক বাহিনী পর্যদুস্ত হয়ে পড়ে। অ্যাকিলিসের বন্ধুবর প্যাট্রোক্লাস তাই অ্যাকিলিসের বর্ম আর ঢাল ধার নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়ে। সবাই ভাবে অ্যাকিলিস নিজেই যুদ্ধে নেমে এসেছে তাই গ্রীক বাহিনী তার হারানো উদ্যম ফিরে পায়। সারাদিন বীরের মত যুদ্ধ করলেও ট্রোজান বীর হেক্টরের হাতে প্যাট্রোক্লাস নিহত হয়। হেক্টর, প্যাট্রোক্লাসের গা থেকে বর্ম আর ঢাল খুলে নিজের কাছে রেখে দেয়।

প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর অ্যাকিলিস যেন আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠে। লৌহশিল্প ও অগ্নির দেবতা হেফাস্টাস, অ্যাকিলিসকে নতুন একটা ঢাল বানিয়ে দেন। এটাই সেই বিখ্যাত ‘অ্যাকিলিস শিল্ড’। ঢালটি অপূর্ব কারুকার্যময় ছিল। হোমার তাঁর ইলিয়াডের আঠারো নাম্বার অধ্যায়ে প্রায় ১০০ শ্লোক ধরে এই ঢালের গায়ে আঁকা কারুকাজের বর্ণনা করেন। ঢালটিতে গ্রীক নগর সভ্যতার একটা মিনিয়েচার আঁকা ছিল। তাই অ্যাকিলিসের নোবেল ফ্যান্টাজমে আমরা একটা গ্রীক সভ্যতার অনুরূপ রিয়েলিটি মার্বেল দেখি। এই জায়গায় হিগাশিদার কল্পনাশক্তির তারিফ করতেই হবে, A-1 পিকচারসও দুর্দান্ত ফ্লুয়িড অ্যানিমেশন ঢেলেছে। ভাসাবি শক্তিকে প্রতিহত করার জায়গাটা চমৎকার ছিল। এইসব ছোটখাটো ডিটেইলের জন্য অ্যাপোক্রাইফার ২২ নম্বর পর্ব স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

শিল্পীর কল্পনায় অ্যাকিলিসের শিল্ড
শিল্পীর কল্পনায় অ্যাকিলিসের শিল্ড

অ্যাকিলিসের একটি মাত্র সন্তানই ছিল। সেই ছেলের নাম ছিল নিওপতেলেমাস। নিওপতেলেমাস পরে ‘অ্যাকিলিস শিল্ডের’ মালিক হয়। ট্রয় যুদ্ধের পরে আগামেমননের ছেলে ওরেস্তেসের হাতে নিওপতেলেমাস নিহত হয়। বাবা-ছেলে দুজনের মৃত্যুই ট্র‍্যাজিক।

গুরু কেইরনের মৃত্যুও আর দশজনের মত হয় নি। টাইটানের ঘরে জন্ম নেওয়ার কারণে কেইরন অমর ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নিজের ছাত্র হেরাক্লসের কারণেই কেইরন মারা পড়ে। হেরাক্লস একবার গুরুর আস্তানায় ওয়াইনের বোতল খুললে সেই ওয়াইনের গন্ধে মদ্যপ সেন্টররা ভীষণ গোলমাল শুরু করে। এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়ে যায় এবং তাদের থামানোর জন্য হেরাক্লস হাইড্রার রক্তমাখা তীর ছুঁড়তে থাকেন। কেইরন তখন কী গোলমাল হল তা দেখার জন্য নিজের আস্তানার দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত একটা রক্তমাখা তীর কেইরনের গায়ে এসে লাগে।

কেইরন যিনি কিনা নিজে ঔষধ নির্মাণে ওস্তাদ, নিজ ব্যথার কোন ঔষধ তৈরি করতে পারছিলেন না। হাইড্রার রক্ত অব্যর্থ বিষ, দেহে স্পর্শ হলেই মৃত্যু নিশ্চিত। অমর হওয়ায় কেইরনের মৃত্যু হচ্ছিল না কিন্তু অসহনীয় যন্ত্রণা ঠিকই পাচ্ছিলেন। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে তিনি নিজের অমরত্ব সরিয়ে নেওয়ার প্রার্থনা জানান দেবতাদের কাছে। তার সৎ ভাই জিউস এই প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং কেইরনকে আকাশের একটা নক্ষত্রপুঞ্জ বানিয়ে দেন। সেই নক্ষত্রপুঞ্জটিই Sagittarius বা ধনু নামে পরিচিত। দেখলে মনে হয় কোন সেন্টর হাতে তীর-ধনুক তাক করে রেখেছে।

কেইরনের নোবেল ফ্যান্টাজম ‘Antares Snipe’ এর আন্তারেস শব্দটি একটি নক্ষত্রকে নির্দেশ করে। নক্ষত্রটি স্যাজিটেরিয়াসের পাশের স্করপিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। স্যাজিটেরিয়াসের দিকে তাকালে মনে হয় এর ডান দিকের শেষ প্রান্ত অর্থাৎ ধনুক সামনের ‘আন্তারেসের’ দিকে তাক করা আছে। এজন্যই কেইরনের নোবেল ফ্যান্টাজম সবসময়ই চালু থাকে।

২১ পর্বে কেইরন আর অ্যাকিলিস নিজেদের মধ্যে যে মার্শাল আর্টসটা চর্চা করেছিল সেটার নাম Pankration. প্যানক্রেইশন সর্বাধিক প্রাচীন মার্শাল আর্ট হিসেবে স্বীকৃত। প্যানক্রেইশনের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম ও টাইম লিমিট ছিল না। বক্সিই, রেসলিং, কিকিং, সাবমিশন হোল্ডিং সবকিছুই গ্রহণযোগ্য ছিল, একমাত্র নিষিদ্ধ ছিল প্রতিপক্ষের চোখ খোঁচানো ও কামড়াকামড়ি। লড়াইয়ে অনেক সময়ই অংশগ্রহণকারীদের মৃত্যু হত।

Fate Apo Chiron Achilles 9
প্যানক্রেইশন ম্যাচ

প্রাচীন অলিম্পিকে প্যানক্রেইশন একটা ডিসিপ্লিন হিসেবে ছিল। তবে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকেই গ্রীসে প্যানক্রেইশন চর্চা হয়ে আসছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়। স্পার্টান সেনাবাহিনী এবং আলেকজান্ডারের সৈন্যরা প্যানক্রেইশনে দক্ষ ছিল। আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপের প্যানক্রেইশনে অংশ নেয়ার নজির আছে।
মিথলজিতে হেরাক্লস ও থিসিয়াসকে প্যানক্রেইশনের আবিষ্কারক হিসেবে পাওয়া যায়। কেইরনই সম্ভবত ঐ সময়েই প্যানক্রেইশন শেখেন তারপর অ্যাকিলিসকে সেই বিদ্যায় দক্ষ করে তোলেন। আধুনিক যুগে আবার প্যানক্রেইশনের পুনর্জন্ম ঘটেছে। ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও দেখেছিলাম। নিয়ম-কানুনের কারণে এখন মরণের গন্ধ নেই খেলাটাতে। কেইরন ভার্সাস অ্যাকিলিস পর্যায়ের ভয়ানক গতিময় জিনিসের ছিটেফোঁটাও নেই। তবে এরপরও বেশ উপভোগ্য একটা মিক্সড মার্শাল আর্টস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ডিসিপ্লিনটা।
(Now just imagine a pankration match between Iskander and Achilles. Also imagine Iskander performing a submission hold on our lovely Gilgamesh. )

বিশেষ দ্রষ্টব্য: একটা মতবাদ আছে, আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সময় প্যানক্রেইশন ভারতে প্রবেশ করে। পরে ভারত ঘুরে এই প্যানক্রেইশনই দূরপ্রাচ্যে গিয়ে কুংফু-যুযুৎসুতে পরিণত হয়েছে। কুংফুর প্রচারক বোধিধর্মাকে ‘নীল চোখের দানব’ হিসেবে অভিহিত করা হত। হতে পারে তিনি আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর লোক ছিলেন, পরে ভারতবর্ষে থেকে যান। (মতবাদটি অতটা শক্তিশালী নয়)

অ্যাকিলিস আর কেইরনের সম্পর্ক প্রাচীন ভারতের গুরু-শিষ্যদের নিয়ে যেসব কিংবদন্তী রয়েছে তার সমতুল্য। ভারতীয় পুরাণে ছাত্রকে শিক্ষকের আস্তানায় অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নানা বিষয়ে দীক্ষিত হতে দেখা যায়। অ্যাকিলিসও সেই প্রক্রিয়া পার হয়ে এসেছে। অ্যাকিলিসের জীবনে কেইরনের ভূমিকা পিতার চেয়ে কোন অংশ কম নয়। এজন্যই অ্যাপোক্রাইফা শুরু হওয়ার পর আমি সবচেয়ে বেশী হাইপড ছিলাম এই দুইজনকে নিয়ে। অ্যাকিলিস জানতো যে ব্ল্যাক ফ্যাকশনের কেউ তাকে ঠেকাতে পারবে না। আর্চার অফ ব্ল্যাকের পরিচয় জানার পর অ্যাকিলিসের সেই আত্মবিশ্বাস অনেক কমে যায়। কারণ অ্যাকিলিসের সকল কৌশল কেইরনের চেয়ে ভাল কেউ জানে না। কেইরনও নিজ শিষ্যের উন্নতি কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। অ্যাকিলিস নিজের যুদ্ধলব্ধ বিদ্যা দিয়ে কেইরনকে হতাশ করে নি। পরাজিত হয়ে কেইরন নিজেই আসলে জয়ী হলেন। এই জয় মহান শিক্ষকব্রতের জয়। এনিমের একটা বড় অংশে দুইজনের দ্বন্দ্বকে একটুও ফোকাস করা হয় নি, তবে সব পুষিয়ে দিয়েছে একটা পর্বই। ইডিওলজিকাল কোন ক্ল্যাশ না থাকার পরও শুধুমাত্র দুর্দান্ত একটা অতীতের জোরে দুজনের মধ্যের লড়াইটা চমৎকারিত্ব পেয়েছে। অ্যাকিলিস ‘গুরু মারা বিদ্যা’ প্র‍য়োগ করলেও আন্তারেস স্নাইপের মাধ্যমে কেইরন দেখিয়ে দিলেন যে ‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে”। 

রেফারেন্স:

  • britannica.com
  • greekmythology.com
  • history.com
  • Percy Jackson and Greek Gods- Rick Riordan
  • গ্রীক বীরদের আখ্যান- রজার ল্যান্সেলিন গ্রীন
  • মিথলজি- এডিথ হ্যামিল্টন
  • Wikipedia

চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান -৫ – Atlanta [Fate/Apocrypha] — Shifat Mohiuddin

Atlanta 1

চরিত্র: আটলান্টা/Atlanta
উপাধি: আর্চার অফ রেড
এনিমে: Fate/Apocrypha
ভূমিকা: মধ্যমপন্থী
জাতীয়তা: গ্রীক
জন্ম ও মৃত্যু: জানা যায় নি
মৃত্যুর ধরণ: জানা যায় নি

ছোটবেলা হয়তো আমরা অনেকেই এমন একটা গল্প পড়েছি যে, একবার এক রাজকন্যা বিয়ের সময় শর্ত জুড়ে দেন যে তাকে বিয়ে করতে চাইলে তার সাথে পাণিপ্রার্থীকে একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। জিততে পারলে রাজকন্যা মিলবে, হেরে গেলে প্রতিযোগীর শিরশ্ছেদ করা হবে। অনেক জায়গা থেকে বড়বড় বীরগণ ভিড় করলেও কাটা মাথার সংখ্যা বাড়তেই থাকে ক্রমান্বয়ে কারণ রাজকন্যা অত্যন্ত দ্রুতগতির ছিলেন। অবশেষে এক প্রতিযোগী রেসের মধ্যে একটা করে সোনার আপেল নিক্ষেপ করেন রাজকন্যাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। স্বর্ণের আপেল জিনিসটা অনেক চিত্তাকর্ষক হওয়ায় রাজকন্যা ঝুঁকে দেখতে গেলে এই সুযোগে ঐ প্রতিযোগী রেস জিতে যান এবং ঐ রাজকন্যার স্বামী হবার সুযোগ লাভ করেন। আজকে Fate/Apocrypha এর চার নম্বর এপিসোড দেখার সময় এই কাহিনীর কথা মনে পড়ে গেল। হ্যাঁ, রেড সেকশনের আর্চার আটলান্টাই ছিলেন সেই রাজকন্যা। জটিলতা এড়ানোর জন্য রূপকথার বইয়ে কঠিন কঠিন গ্রীক নাম দেওয়া হত না আরকি। প্রায় দুই বছর আগে আমি ফেইট সিরিজের কতিপয় চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে ধারাবাহিক কিছু লেখা লিখেছিলাম। মধ্যে হুট করে লেখার আগ্রহ চলে যায়। আজ আবার হুট করে কীবোর্ডের গায়ে কিছু আগাছা জন্মানোর ইচ্ছা হল।

আটলান্টার পিতৃপরিচয় নিয়ে বিশেষ কিছু জানা যায় না। রাজা Iasus এর ঘরে তার জন্ম এই ধারণাটাই বেশি জনপ্রিয়। আটলান্টাকে জন্মের পরপরই মারাত্মক প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার পিতা পুত্র সন্তানের আশা করেছিলেন, আটলান্টাকে দেখে তিনি আশাহত হন। কন্যাসন্তান পালনের ইচ্ছা না থাকায় তিনি আটলান্টাকে জঙ্গলে রেখে আসেন। একটি বন্য ভাল্লুক আটলান্টাকে প্রতিপালন করে। (এইসব ঘটনা গ্রীক পুরাণে নিত্যনৈমিত্তিক!) বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে আটলান্টা শিকারিদের সাথে মেশা শুরু করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করে অন্য সবার থেকে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেন। সভ্য সমাজের সাথে না চলা নিয়ে আটলান্টার মনে কোন দুঃখ ছিল না। আটলান্টা দেবী আর্টিমেসের অনুসারী হয়ে কুমারীব্রত গ্রহণ করেন। নিজের নারীত্ব নিয়ে তার মনে বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা ছিল না এবং জীবনযাত্রায় পুরুষকে তিনি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। তাছাড়া তার বিয়ে নিয়ে অমঙ্গলজনক ভবিষ্যৎবাণী ছিল।

আটলান্টার বীরত্বের প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় ‘ক্যালিডোনিয়ার বন্য শূকর’ শিকারের সময়। ঠিকমত পূজা না করায় দেবী আর্টেমিস ক্যালিডোনিয়া রাজ্যে একটা বন্য শূকর পাঠান সেখানের মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য। ক্যালিডোনিয়ার রাজপুত্র মেলিয়েগারের নেতৃত্বে একদল শিকারি প্রস্তুত হয় শিকারের জন্য। আটলান্টা এই শিকারি দলে যোগ দিতে চাইলে নারী হওয়ার কারণে অনেকেই এর বিরোধিতা করে। মেলিয়েগার বিবাহিত হওয়ার পরও আটলান্টার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তার চাপাচাপিতেই আটলান্টাকে দলে নিতে সবাই রাজী হয়। আটলান্টার ছোঁড়া তীরই সর্বপ্রথম শূকরটার গায়ে আঘাত হানতে সমর্থ হয়। অবশেষে মেলিয়েগার তার বর্শা দিয়ে শূকরটাকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে মেলিয়েগার প্রথম আঘাতের কৃতিত্বস্বরূপ আটলান্টাকে শূকরের ছাল উপহার দিতে চাইলে মেলিয়েগারের মামারা এর বিরোধীতা করে। তারা আটলান্টার কাছ থেকে পুরষ্কার কেড়ে নিতে চাইলে মেলিয়েগার রেগেমেগে তার দুই মামাকে হত্যা করেন। ভাতৃদ্বয়ের মৃত্যুর কারণে রাগে অন্ধ হয়ে তাই মেলিয়েগারের মা আলথিয়া একটি জাদুর কাষ্ঠখণ্ডকে আগুনে নিক্ষেপ করে যাতে মেলিয়েগারের জীবনীশক্তি অবস্থান করছিল। ফলে মেলিয়েগার মারা যান এবং কিছুক্ষণ পরে জঙ্গল থেকে আরেকটা বন্য শূকর এসে আলথিয়াকে হত্যা করে।

¤

আটলান্টা কলচিস (Fate/stay night এর ক্যাস্টার মিডিয়ার রাজ্য) অভিযানে যেতে চাইলেও জ্যাসন (মিডিয়ার স্বামী) তাতে রাজী হন নি। কারণ হিসেবে আবারও সেই নারী হয়ে জন্ম নেওয়াটাকেই দাঁড়া করানো হয়। তবে কলচিস অভিযান নিয়ে তৈরি হওয়া একাধিক কাহিনীর একটি অনুযায়ী আটলান্টা অভিযানে ঠিকই যোগ দিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধে আহতও হন এবং কথিত আছে যে মিডিয়া তাকে সেবাশুশ্রূষা দিয়ে সারিয়ে তোলেন।
(ফেইট সিরিজ বড়ই বিশাল ব্যাকগ্রাউন্ডওয়ালা একটা সিরিজ। অনেককিছুর সাথেই অনেককিছুর কানেকশান পাওয়া যায়!)

¤

Atlanta 2

আটলান্টাকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে কাহিনী সেটা হল রূপকথার সেই দৌড় প্রতিযোগিতার গল্প। ক্যালিডোনিয়ার শূকর শিকারের পর আটলান্টার বাবা নিজের মেয়েকে স্বীকৃতি দেন। তিনি নিজের মেয়েকে রাজ্যে ফিরিয়ে নেন এবং বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সরাসরি বিরোধিতা করা বোকামি হবে ভেবে আটলান্টা শর্ত জুড়ে দেন যে তাকে রেসে পরাজিত করতে পারলেই বিয়ের অনুমতি মিলবে। আটলান্টা তার সময়ের সর্বাধিক গতি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন তাই তার কুমারীত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। কথিত আছে যে, আটলান্টা নানাভাবে তার প্রতিযোগীদের সুযোগ করে দিতেন। যেমন: বর্ম পরিধান করে অংশগ্রহণ অথবা প্রতিযোগীকে অর্ধেক পথ এগিয়ে দেওয়ার পর দৌড় দেওয়া। এরপরও কেউই তাকে পরাজিত করতে পারছিল না। তখনই দৃশ্যপটে আসেন মেলানিওন। (হিপ্পোমেনেস নামেও পরিচিত) মেলানিওন আটলান্টাকে ভালবাসতেন। তাই তিনি ভালবাসার দেবী আফ্রোদিতির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। আফ্রোদিতি প্রেমিকদের প্রতি দয়াশীল হওয়ায় মেলানিওনকে তিনটি সোনার আপেল দেন আটলান্টাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। নির্দিষ্ট সময়ে রেস শুরু হওয়ার পর আটলান্টা কিছুক্ষণের মধ্যেই মেলানিওনকে পেরিয়ে যান। তখনই মেলানিওন প্রথম আপেলটি নিক্ষেপ করেন। সোনার সেই আপেল দেখতে এতই চিত্তাকর্ষক ছিল যে আটলান্টা সেটা তুলে নিতে গিয়ে দেখেন যে মেলানিওন তাকে পেরিয়ে গেছে। তারপরও আটলান্টা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন রেসে জয়লাভ করার ব্যাপারে। এবং এর প্রমাণ দেন তিনি আবারও মেলানিওনকে পেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। তখনই মেলানিওন দ্বিতীয় আপেলটি নিক্ষেপ করেন। আত্মবিশ্বাসী আটলান্টা আবারও সেই আপেলটি কুড়িয়ে নেন। লক্ষ্যসীমার নিকটবর্তী হওয়ার পর যখন আটলান্টা মেলানিওনকে আবার পেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মেলানিওন শেষ আপেলটি নিক্ষেপ করে আটলান্টাকে বিভ্রান্ত করে দেন এবং রেসে জয়লাভ করে আটলান্টাকে জিতে নেন।

কুমারীব্রত ভেঙ্গে গেলেও আটলান্টা এবং মেলানিওনের সংসার ঠিকমতই চলছিল। আনন্দের স্রোতে ভাসতে ভাসতে মেলানিওন আফ্রোদিতির প্রতি তার দায়বদ্ধতা ভুলে যান। তাই রাগান্বিত হয়ে আফ্রোদিতি সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন। একবার জিউসের মন্দিরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার আফ্রোদিতি দম্পতির মাথায় নিষিদ্ধ কিছু করার প্ররোচনা ঢুকিয়ে দেন। ফলে মেলানিওন আটলান্টাকে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে তারা মিলিত হন। মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ায় জিউস ক্ষুদ্ধ হয়ে মেলানিওন ও আটলান্টাকে সিংহ বানিয়ে দেন। গ্রীকদের ধারণা অনুযায়ী ব্যাপারটা অত্যন্ত কাব্যিক এবং ট্র‍্যাজিক ছিল কারণ তারা বিশ্বাস করতো সিংহরা নিজেদের মাঝে প্রজনন করতে পারে না, তারা মনে করতো সিংহরা শুধুমাত্র চিতাদের সাথে প্রজনন করে। ফলে মেলানিওন এবং আটলান্টা চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে যান।
(প্রথমে আটলান্টার বিড়ালের মত কান আর লেজ দেখে অবাক হয়েছিলাম। এখন ব্যাপারটা খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। সিংহী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার কারণে হয়তো সামনিংয়ে এর প্রভাব পড়েছে। নভেল পড়ি নি তাই জানি না সামনে এই ব্যাপারে কিছু বলা হবে কিনা। তবে টাইপ-মুনের প্রশংসা করতেই হবে, মিথের অনুসরণ আর ওয়াইফু চার্মের কাজ দুটোই একসাথে হয়ে গেল।

অ্যাকিলিসের আটলান্টাকে বড় বোন ডাকার ব্যাপারটা একটু ধোয়াটে লেগেছিল। এই ব্যাপারের সাথে একটা ঘটনার সংযোগ ঘটানো যায়। একবার এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অ্যাকিলিসের বাবা পেলেয়ুসের সাথে আটলান্টার একটা কুস্তি ম্যাচ হয়েছিল। ম্যাচে আটলান্টা জয়লাভ করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। হয়তো অ্যাকিলিস এই ঘটনার কথা জানতো। তবে আন্টি না ডেকে সিস ডাকার ব্যাপারটা এখনো পরিষ্কার হচ্ছে না।

আটলান্টা এক সন্তানের মা হয়েছিলেন। তবে সেই সন্তানের বাবা মেলানিওন নাকি মেলিয়েগার তা নিয়ে মতভেদ আছে। সেই সন্তান, পার্থেনোপাসকে নিয়েও অনেক বীরত্বের কাহিনী প্রচলিত আছে।

সোর্স: উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, greekmythology.com

সাকুরা কি আসলেই ইউজলেস? নাকি সব আমাদের পার্স্পেক্টিভের ব্যাপার? — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য

নারুতো ভক্তদের অন্যতম বড় এক দাবী, সাকুরা চরিত্রটি অসম্ভব রকমের ইউজলেস, সোজা ভাষায় একদমই অকার্যকর। এক সাকুরা না থাকলেই নারুতো আর সাসকের জার্নি অনেক সহজ হয়ে যেত, গল্প অনেক গতি পেত, তাদের জীবন অনেক সহজ হত ইত্যাদি কত কথা! আসলে ব্যাপারটা কি সেটাই? নাকি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন এক জায়গায় এমন গোলযোগ বেঁধে গিয়েছে যার কারণে এরপর থেকে সাকুরা যা কিছুই করুক না কেন, চরিত্রটা আমাদের চোখে একদম অকার্যকর? আজকে এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করতে চাই।

প্রথমেই আমরা আগে দেখি একদম অল্প বয়সে সিরিজের শুরুর দিকে যখন আমাদের গল্পের নায়ক-নায়িকাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তখন একেকজনের ব্যাকগ্রাউন্ড কীরকম। নাইন টেইল ফক্সের ঘটনার কারণে বিখ্যাত/কুখ্যাত হওয়া ছাড়াও নারুতোর বাবা ছিল চতুর্থ হোকাগে, মা তার সময়ের অন্যতম শক্তিশালী কুনোইচি, এবং নাইন টেইল ফক্সের জিঞ্চুরিকি। বিখ্যাত উচিহা পরিবারের অন্যতম সদস্য সাসকে। টিম ১০-এর ইনো, শিকামারু ও চৌজি তিন জনেই কোনোহার তিন বিখ্যাত পরিবারের সদস্য, যাদের অনন্য ক্ষমতা ও এদের প্রয়োগ এই তিন পরিবারকেই বানিয়েছে তাদের গ্রামের ভয়ংকর সব নিঞ্জা। টিম ৮-এর হিনাতা বিখ্যাত হিউগা পরিবারের সদস্য, তার বিয়াকুগান রয়েছে যাকে গল্পের শুরুর দিকের সবচাইতে শক্তিশালী চোখ সম্পর্কিত ক্ষমতা বলে ধরে নেওয়া হয়। শিনো হল পোকামাকড়ের উপর ক্ষমতাধরী অন্যতম ভীতিকর বংশ আবুরামে-এর সদস্য, আর কিবা হল ইনাজুকা পরিবারের সদস্য, যারা কুকুরদের নিঞ্জা হিসাবে কাজে লাগানোর জন্যে বিখ্যাত। টিম গাই-এর নেজি আরেক বিখ্যাত বিয়াকুগান ব্যবহারকারী, তেনতেন তার বিভিন্ন রকমের নিঞ্জা টুলস ব্যবহার করার জন্যে জনপ্রিয়, এবং রক লি তার ভয়াবহ তাইজুতসুর জন্যে সবার মনে জায়গা করে নেবার মত এক চরিত্র। সেই তুলনায় বাকি থাকা সাকুরার পরিচয় কী? সাকুরার একমাত্র পরিচয় সে সাসকে-কে ভালবাসে। তার বাবা-মাও বিখ্যাত কোন নিঞ্জা নয়, এমনকি সাকুরার বাবা-মায়ের ব্যাপারে পরবর্তীতে আমরা যখন জানতে পারি, ততদিনে শিপুদেনের ৩৫০ পর্ব অতিক্রম করে ফেলে, এবং যেই পর্বে জানতে পারি সেটাই ফিলার পর্ব। অর্থাৎ প্রথম পরিচয়েই সাকুরাকে আমরা কিউট একটা মেয়ে ছাড়া আর বিশেষ কোন কারণে মনে রাখতে পারছি না। প্রথম ইম্প্রেশনেই সাকুরা তাই নিজেকে মেলে ধরার মত কিছুই পায় নি গল্পের নির্মাতার কাছ থেকে।

ল্যান্ড অভ স্টিল আর্কে, অর্থাৎ জাবুজার আর্কে কাকাশি, সাসকে আর নারুতো পুরা স্পটলাইট কেড়ে নেয়। সাকুরার সেখানে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেও না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারে অন্যদের তুলনায় সে কতটা পিছনে। এরপরে চুনিন আর্কে পুরা গল্পজুড়ে সাকুরার একমাত্র বলার মত ঘটনা ছিল সাউন্ড ভিলেজের নিঞ্জাদের সাথে মারামারির এক পর্যায়ে নিজের চুল কেটে ফেলা, যেন তাকে ধরে রেখে সাকুরার বন্ধুদের পথে বাঁধা হতে না পারে। বলে রাখা দরকার, এই পর্যায়ে এসে আমরা প্রায় সব অল্পবয়স্ক নিঞ্জাদের প্রত্যেকেরই ক্ষমতার ভাল ব্যবহার দেখেছি। নারুতোর সাসকে-কে বাঁচানো কিংবা তার বিস্ময় জাগানো ট্যাকটিক্স আর সাসকের কাধের সেই সিলের ক্ষমতা, টিম ৭-এর অন্য দুইজনই এরই মধ্যে গল্পের প্রধান চরিত্র হিসাবে দাবী করার মত অনেক কিছু দেখিয়ে ফেলেছে। চুনিন পরীক্ষার ফাইনাল স্টেজ শুরু আগে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে সাকুরা আর ইনোর মারামারির সময়ে আরেকটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠে, এই দুইজন আসলে এখনও চুনিন হবার উপযুক্ত নয়। অন্যরা সবাই নিজেদের প্রমাণ করে ফেলেছে, এমনকি যারা পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারে নি তারাও।

haruno_sakura__the_last_by_vashperado-d7zwm74

পরবর্তী বড় ৩টা আর্কে সাকুরার বলার মত কোন কার্যকরী ভূমিকাই ছিল না আসলে। কোনোহা ছেড়ে দিয়ে সাসকে ওরোচিমারুর উদ্দেশ্যে চলে যায়, আর তাকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে নারুতোর কাছে মিনতি করা, যার ফলে নারুতোও জিরাইয়ার সাথে গ্রামের বাইরে চলে যায় ট্রেনিং করা – এতটুকুই ছিল সাকুরার প্রথম দিকের ভূমিকা।

গল্পের প্রথম টাইম জাম্প হবার আগ পর্যন্ত তাই সাকুরা সত্যিকার অর্থে তার সমসাময়িক অন্যান্য নিঞ্জার তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল এটা ঠিক। সে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও দেখতে পারে অন্যরা তার চাইতে যোজনে যোজনে এগিয়ে। অন্যরা যেখানে সবাই নিজেদের পরিবারের বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে, কিংবা রক লির মত নিঞ্জারা যেখানে নিজেদের একমাত্র ক্ষমতাকে শাণিত করে নিজেদের প্রমাণ দিয়ে যেতে পেরেছে, সাকুরা সেখানে পিছিয়ে গিয়েছে স্বকীয় কোন কিছু না থাকার কারণে। আমরা নারুতোর উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, ছেলেটার কিছুই ছিল না, সবার ঘৃণার পাত্র থেকে শুরু করে পুরা পৃথিবীর নায়ক হয়ে গিয়েছে, সেখানে কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবো কথাটা শুরু থেকেই ভুল। নারুতো উজুমাকির বংশধর, তার মধ্যে রয়েছে নাইন টেইলসের চাকরা। তাই কেউ যদি শুরু থেকে অভাগা হয়ে থাকে, সেটা সাকুরা। হ্যাঁ, সাকুরা অন্যদের তুলনায় বেশ সুন্দর আর চমৎকার একটা জীবন পাড়ি দিয়ে এসেছে নিঞ্জা হবার আগে, কিন্তু সুপার পাওয়ারের এই যুগে তার বলার মত কোন কিছুই ছিল না যে অন্যদের মধ্য থেকে আলাদা হয়ে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। ছিল শুধু অনেক জ্ঞান, আর প্রবল মনোবল, যার কারণে মাইন্ড কন্ট্রোল ক্ষমতা থাকবার পরেও ইনো সাকুরাকে চুনিন পরীক্ষার অফিসিয়াল ম্যাচে হারাতে পারে নি। গল্পের প্রথম অংশে তাই সাকুরা আসলে ইউজলেস ছিল না, সাকুরার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য সে তার নিঞ্জা জীবন শুরু করেছে সব জিনিয়াসদের মধ্য থেকে।

টিম ৭-এর অন্য দুজন কোনোহার বাইরে থাকাকালীন সাকুরা একটা কঠিন সিদ্ধান্তে আসে, আর তা হল, অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তাকে খুব বিশেষ কিছু করে উঠতে হবে। ৩ লেজেন্ডারি সানিনের অন্যতম সুনাদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে। টাইম জাম্পটা শেষ হবার পর যখন আমরা নারুতোকে কোনোহাতে ফেরত আসতে দেখি, তখন সাকুরা কিন্তু সুনাদের সেরা শিষ্য হয়ে উঠেছে। জিরাইয়া নিজে থেকে বলে উঠেছে যে সাকুরা সেই মুহুর্তে সুনাদের যোগ্য শিষ্য হয়ে উঠেছে, এমন একজন যাকে রাগানো ঠিক হবে না।

এখন একটা জিনিস পাঠকদের জিজ্ঞেস করতে চাই। আমরা কি এই মুহুর্তে সাকুরার ক্ষমতাটুকু বুঝতে পারছি? যদি বুঝে উঠতে না পারি, তবে আসুন দেখি সাকুরা এই মুহুর্তে কোন উচ্চতায় আছেঃ
* গল্পের এরকম সময়ে ৩ সানিনের তিনজনই নিজেদের সেরা ছাত্র-ছাত্রীকে পেয়ে গিয়েছে। ওরোচিমারুকে প্রায় অনেক দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সাসকে, যদিও তার বড় ভূমিকা রাখে সাসকের শারিঙ্গানের ক্ষমতা। জিরাইয়ার শিখানো পথে এসে তাকে পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবার আশা দেখাচ্ছে নারুতো, কিন্তু শিখবার আছে অনেক কিছু। আর সুনাদে, যে কিনা নিঞ্জা দুনিয়ার সেই মুহুর্তের সেরা মেডিকাল নিঞ্জাই শুধু নয়, বরং শারীরিক ক্ষমতার দিক থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী নিঞ্জাদের একজন, তাকে কিনা সাকুরা প্রায় ধরে ফেলেছে! সেটাই নয়, অন্য দুই বড় সানিনের কাছে শিক্ষানবিস থাকা নারুতো-সাসকে যখন দর্শকদের কাছে ভয়াবহ ক্ষমতাধর বলে পরিচিতি পায়, সেখানে সুনাদের এই ছাত্রীকে সেই মুহুর্তে ধরে নেওয়া হত যেকোনদিনে সুনাদেক ছাড়িয়ে যাবে!!! হ্যাঁ, সেই অভাগা সাকুরা যে কিনা বংশানুক্রমে কোন বিশেষ ক্ষমতা পায় নি, সেই সাকুরা যে কিনা তার সময়ের জিনিয়াস সব নিঞ্জাদের ছায়া হয়ে থাকার মত থাকলেও তাদের সাথে দাপট দেখিয়ে চলতে পেরেছে, সেই সাকুরা এখন তার শিক্ষক এবং অন্যতম লেজেন্ডারি সানিন সুনাদেকে যেকোন দিন ছাড়িয়ে যেতে পারে! আর সেটাই শুধু নয়, বরং একই সাথে সাকুরা এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে বেশ বড় এক মেডিকাল নিঞ্জা হয়ে উঠেছে। সাকুরা একটা বড় সুযোগ পেয়েছে, এবং সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যা যা অর্জন করার সব অর্জন করে নিয়েছে।

কিন্তু এসব কিছুই তো হয়েছে স্ক্রিনের পিছনে। সাকুরা ইউজলেস না, এটা প্রমাণ করার জন্যে তাকে অনস্ক্রিনে কিছু করে দেখানো লাগবে। মুখে মুখে “অন্যতম সেরা শক্তিশালী নিঞ্জা” হলে চলবে না, বরং দর্শকদের দেখানো দরকার সাকুরা আসলেই বিশেষ কিছু হয়ে উঠেছে। এজন্যে সাকুরা পরবর্তীকে কী করলো চলুন এক নজরে দেখে নেই।

কাজেকাগে হয়ে যাওয়া গারা-কে আকাতসুকি কিডন্যাপ করেছে। তাকে উদ্ধার করতে কোনোহা যে কয়জন নিঞ্জাকে পাঠায়, সাকুরা তার মধ্যে অন্যতম। গারার ভাই কানকুরো ততদিনে সুনাগাকুরের অন্যতম শক্তিশালী ও বড় মাপের এক নিঞ্জা হয়ে উঠে। আকাতসুকির সাসোরির কারণে তার মধ্যে অন্যরকমের এক বিষ ছড়িয়ে পরে, আর সেটা সাড়িয়ে তুলবার মত কোন মেডিকাল নিঞ্জা ছিল না সুনাগাকুরেতে। সাকুরা সেখানে এসে সেখানে বসেই সেই বিষ পরীক্ষা করে নিয়ে কানকুরোকে সারিয়ে তুলে। এক সাকুরা একাই সম্মিলিতভাবে সুনাগাকুরে যা করতে পারে নি তা করে দেখিয়েছে। এই পর্যায়ে এসে আমরা সাকুরার মেডিকাল ক্ষমতা হাতেনাতে প্রমাণিত হতে দেখতে পারি। সাকুরা তার অর্জিত জ্ঞানের একটি অংশের প্রমাণ দিয়ে নিজেকে চিনিয়ে নিতে পেরেছে।

পরবর্তীতে বেশ বড়সড় অনেক ঘটনা ঘটে, এবং এক পর্যায়ে দেখতে পাই চিয়ো-এর সাথে মিলে সে আকাতসুকির অন্যতম বড় এক নাম সাসোরিকে হারিয়ে দেয়। হ্যাঁ, চিয়োর ভূমিকা এখানে বেশি ছিল হয়তো, কিন্তু সাকুরার ভূমিকা কোন দিক থেকেই কম নয়। কম তো নয়ই, বরং অনেক অনেক বেশি। নিজেকে চিয়োর পাপেট বানিয়ে নিলেও সাকুরার নিজের ক্ষমতা তেমন কিছু বলার মত না হলে এই মারামারির ফলাফল তাদের বিপক্ষে চলে যেত একদম শুরুর দিকেই।

সাকুরা, যে কিনা নিজের দূর্ভাগ্যের জন্যে এরই মধ্যে “ইউজলেস” খেতাব পেয়ে গিয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে, সে প্রথম পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়েই আকাতসুকির সবচাইতে ভীতি জাগানিয়ে একজনকে হারিয়ে দিয়েছে। আরেকজনের সাথে মিলিত হয়ে মারামারি মূখ্য নয়, কারণ নিঞ্জাদের শক্তির এক বড় অংশ হলে অন্যদের সাথে মিলে নিজেদের কাজ উদ্ধার করে নেওয়া। সাকুরা সেই মারামারিতে বড় ভূমিকা রেখে আকাতসুকির একজনকে শেষ করে ফেলে। গল্পের এই পর্যায়ে আমরা সাকুরার একই ব্যাচের আর কয়জন নিঞ্জাকে আকাতসুকির কোন সদস্যকে হারিয়ে দিতে দেখি? একজনকেও না।

এর পরবর্তীতেই সাকুরা কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার আরেকটা সুযোগ নিয়েও কাজে লাগিয়ে দেয়, যেটা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। তেনচি ব্রিজে টিম কাকাশি যখন ওরোচিমারুর মুখোমুখি হয়, তখন নারুতো নিজের উপর ক্ষমতা হারিয়ে নাইন টেইল অবস্থায় চলে যায়। একাই ওরোচিমারুকে পিছে হটিয়ে দিতে পারে। এই অবস্থায় নারুতোকে শান্ত করবার জন্যে সবাই যেখানে ভয়ে ভয়ে থাকে, সাকুরা এগিয়ে আসে। নারুতো তার উপর চড়াও হলেও গুরুতর জখম পায়, কিন্তু নারুতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসলে তাকেও আমার সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে নিজের মেডিকাল ক্ষমতার বলে। বড় বড় নিঞ্জারা যেখানে এগিয়ে যেতে ভয় করে, সাকুরা সেখানে এগিয়ে যায়, এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও অন্যদের সারিয়ে তুলে। অকার্যকর? না, এটা অকার্যকারিতার সংজ্ঞা নয়।

এর পরবর্তীতে বড় যেই আর্কে আমরা সাকুরাকে দেখি, সেটা নারুতোর অন্যতম সেরা আর্কঃ পেইন আর্ক। আসলে এই আর্কটিতে সাকুরার ভূমিকা ছিল মেডিকাল নিঞ্জা হিসাবে সবার সাহায্য করা। কোনোহা ধ্বংসের পরে আসলে নারুতো বাদে চোখে পড়ার মত একমাত্র যে ছিল সে হল নারুতো ভালবেসে নিজেকে উতসর্গ করে দেবার জন্যে এগিয়ে আসা হিনাতা। সেই জন্যে এই আর্কে সাকুরার আসলে অন্য সব নিঞ্জার মত ভূমিকা থাকার কথা না তেমন। কিন্তু সবাই যেখানে বসে বসে হাহুতাশ করছে কিংবা নারুতোর দিকে চেয়ে আছে, সেখানে সাকুরা নিজের ক্ষমতা দিয়ে সব মেডিকাল নিঞ্জাকে যতজনের সম্ভব চিকিৎসা করার আহ্বান জানায় এবং সুনাদের পাশে থাকে।

নিজের একমাত্র ভালবাসার মানুষটির উপর যখন মৃত্যুর পরওয়ানা জাড়ি হয়, তখন নিজের সব রকমের কষ্টকে ধামাচাপা দিয়ে সাসকেকে নিজেই মারতে উদ্যোগী হয়। সাকুরা শুধু শারীরিকভাবেই শক্তিশালী নয়, মানসিক দিক থেকেও অনেকের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে এগিয়ে ছিল তার ভাল প্রমাণ এটি।

সর্বশেষে থাকছে সম্ভবত সাকুরার সবচাইতে বড় অবদানের কথা – ৪র্থ নিঞ্জা ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ঘটনা। গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমাদের গল্পের দুই নায়ক নারুতো ও সাসকে, ও খলনায়ক তোবি এবং পরে মাদারাসহ সব বড় বড় নামগুলি একের পর এক পাওয়ারাপ পেয়ে গিয়েছে। যেই টিমের সদস্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যাবে, সেই দলের সবাই গল্পের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে একের পর এক ক্ষমতা পেয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ হবার কারণে খলনায়কেরাও নিজেদের অকল্পনীয় সব ক্ষমতা দেখানো শুরু করেছে। এমতাবস্থায় সাকুরার কী করণীয়? গল্পকার যখন তাকে এক রকমের পার্শচরিত্রের কাতারে ফেলেই দিয়েছে, সেখানে বসেই নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে যেতে থাকে সে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বড় চরিত্র আগাতপ্রাপ্ত হলে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসাটা অনেক বেশি হয়েছে বলে হয়তো এটি দর্শকদের কাছে একটি স্বাভাবিক দৃশ্যই হয়ে উঠেছে, কিন্তু ব্যাপারটির ভূমিকা কত বড় সেটা এভাবে ভেবে দেখুন যে, এই যুদ্ধে এদের সবাই বারবার বিভিন্ন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে। সাকুরার চিকিৎসা না পেলে গল্পের এত বড় বড় চরিত্রদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতো না।

এদিকে সাদা জেতসুর অতর্কিত হামলার কারণে যেখানে সবাই দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছিল, তখন সাকুরা সাদা জেতসুর ব্যাপারটি সবার আগে ধরতে পারে। হ্যাঁ, গল্পের নায়ক হবার কারনে নারুতো আরেকটি পাওয়ারাপ পায়, এবং এখন সে সবধরনের এরকম লুকায়িত জেতসুদের খুঁজে বের করতে পারে। পাওয়ারাপ না পাওয়া সাকুরা নিজ ক্ষমতায় তাদের ব্যাপারটি জেনে নিতে পারে ও সবাইকে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে পারে। “ইউজলেস” সাকুরা অন্য সব নিঞ্জাদেরকে ইউজলেস হওয়া হতে আরেকবার বাঁচিয়ে দেয়।

শেষ পর্যন্ত যখন বড় যুদ্ধে মেডিকাল নিঞ্জা হবার পরেও অংশগ্রহণ করে, তখন দর্শকদের মনে করা উচিৎ সুনাদের সেই নিয়মের কথা। যেখানে শেষ নিয়মটিতে বলা হয়, যদি মেডিকাল নিঞ্জা এত ক্ষমতাধর হয় যে সরাসরি মারামারি করতে পারে, তাহলে অন্য সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেই ফ্রন্টলাইনে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। সাকুরা সেটিই করে, এবং নারুতো ও সাসকের সাথে মিলে ওবিতোর বিপক্ষে লড়াই করে। নারুতোর কাছ থেকে যখন নাইন টেইলসকে কেড়ে নেওয়া হয়, তখন নারুতো যেন সাথেসাথে মারা না যায় তার জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে। খেয়াল রাখতে হবে, নারুতোকে এই পর্যায়ে বাঁচিয়ে তুলবার জন্যে সাকুরা ছাড়া আর কেউ যোগ্য মেডিকাল নিঞ্জা ছিলও না। নারুতোর হার্টকে পাম্প করতে থাকে, যেন নারুতো বেঁচে ফিরবার জন্যে আরেকটু সময় পায়। “ইউজলেস” সাকুরা একাই পুরা নিঞ্জার দুনিয়ার হার্ট পাম্প করে বাঁচিয়ে তুলে।

কাগুইয়ার সাথে মারামারিতে যেখানে নারুতো আর সাসকেই একমাত্র তাকে হারানর ক্ষমতা রাখে, সেখানে সাকুরার সাহসিকতা সাসকে-কে উদ্ধার করবার জন্যে বড় ভূমিকা রাখে। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থে এক দেবীকে হারাবার জন্যে যেই দুজনের একত্রে উপস্থিত থাকা দরকার, সেখানে একজন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, সাকুরার সাহসী ভূমিকার অভাবে হয়তো সেক্ষেত্রে গল্পের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।

সত্যিকার অর্থে বলার মত ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকার পরেও একের পর এক ক্ষমতা আর জিনিয়াস নামধারী সব নিঞ্জাদের পাশেই শুধু ছিল না সাকুরা, তাদের অনেককে ছাড়িয়ে গিয়ে যুদ্ধে নিঞ্জাদের জোটকে জিতাতে সাহায্য করেছে সাকুরা। সাকুরা যদি সত্যিকার অর্থেই অকার্যকর হয়ে থাকতো, তাহলে নারুতোর গল্পটি নারুতো কম বরং বার্সার্কের মত হয়ে যেত। একের পর এক ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া থেকে একাই রক্ষা করেছে গল্পের অন্যান্য মূল চরিত্রদের।

তাহলে কেন দর্শকদের অধিকাংশই সাকুরাকে এখনও ইউজলেস বলে আসছে? এখানে আসলে দর্শকদের সাইকোলজি একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা যখনই সাকুরাকে দেখি, তখনই তার তুলনা করি নারুতো আর সাসকের সাথে। কেনই বা করবো না আমরা, তারা তিনজন যে একই টিমের সদস্য। সেই টিমের লিডার আবার কাকাশি নিজেই। পরবর্তীতে তাদের এই টিমে যোগ দেয় ইয়ামাতো আর সাই, যারা স্পেশাল আনবু ফোর্সের সদস্য বলে আগে থেকেই তাদের ভারী ক্ষমতার অধিকারি বলে জানি। আসলে এত সব জিনিয়াস আর অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারীদের দলে এমন একজনকে আমরা দেখতে পাই যার শুরু থেকে বলার মত কিছু ছিল না কখনই। এমনকি নারুতোর মাঙ্গা বা আনিমের ইনফো ঘাটলে আমরা দেখতে পাই সাকুরা একজন মেইন চরিত্র, অথচ গল্পে তাকে আমরা নারুতো আর সাসকের তুলনায় খুব কম সময়েই দেখেছি। হ্যাঁ, সাকুরার চরিত্রের সবচাইতে বড় দিক হল সে সাসকে-কে অনেক বেশি ভালবাসে। বলার মত কিছু নেই এমন এক চরিত্রের যখন মূল ফোকাসটা পড়ে তার ভালবাসার জীবনের উপর, যেখানে তার আশেপাশের সবার ফোকাস পড়ে তাদের নিঞ্জা ক্ষমতার উপর, সেখানে দর্শকদের মনে এই ধারণাটা হওয়া অসম্ভব নয় যে সাকুরা ইউজলেস। ব্যাপার হল, সাকুরা কখনই ইউজলেস ছিল না। বরং কঠিন পরিবেশে শুরুতে খাপ খেয়ে নেওয়াতে কষ্ট পেতে হলেও এরপর সে ঠিকভাবেই সেই পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দর্শক মনের সাইকোলজিতে আরেকটা জিনিস খাটে – প্রথম ইম্প্রেশন। সেটা শুধু দর্শকদের জন্যেই নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবক্ষেত্রেই দেখতে পারি। প্রথম ইম্প্রেশনের উপরেই আমাদের আরেকটি মানুষের ব্যাপারে জন্ম নেওয়া ধারণাটি গড়ে উঠতে থাকে। হয়তো তার চরিত্রের অন্যান্য দিক দেখতে পেলে সেই ধারণাতে বিভিন্ন প্রলাপ পড়ে, কিন্তু ধারণার মূল ভিত্তি থাকে সেই প্রথম ইম্প্রেশনেই। সাকুরার ক্ষেত্রেও সেরকমই হয়েছে, দর্শকদের প্রথম ইম্প্রেশনটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাসকে উচিহা কেন “নারুতো” গল্পের সবচাইতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত চরিত্র — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য

Uchiha Sasuke Evolution

লেখাটির টপিক দেখে হয়তো অনেকে শুরুতেই ভ্রু কুঁচকে উঠবেন। দাঁড়ান একটু, আমি বলছি না সাসকে এই আনিমেটির সবচাইতে সেরা চরিত্র। নারুতোর গল্পের চরিত্রদের মধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় অবশ্যই ইতাচি। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না এখানে, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল, উচিহা সাসকে এই গল্পটির সবচাইতে ভালভাবে গড়ে তুলা চরিত্র। লেখাটি কিছুটা বড় হতে পারে, তাই সময় নিয়ে পড়বার অনুরোধ করছি।

একটা ১২-২৪ পর্বের সিরিজে চরিত্রের গঠন জিনিসটা যেভাবে হয়, স্বাভাবিকভাবেই একটা শত পর্বের সিরিজে তার চাইতে বেশ ভিন্নভাবে হয়ে থাকবে। এ জন্যে ৬০০+ পর্বের নারুতো সিরিজের একটা পার্শ্ব চরিত্র যে ধরণের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে যায়, তা অনেক ১২ বা ২৪ পর্বের সিরিজের প্রধাণ চরিত্রের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে না।

এবার আসি চরিত্রের গড়ে উঠার ব্যাপারটিতে, অর্থাৎ ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাক। ডেভলপমেন্ট হিসাব করলে লিটারেচার কাজগুলিতে আমরা দুই ধরণের চরিত্রায়ন দেখে থাকতে পারিঃ Static Characterization ও Dynamic Characterization. স্ট্যাটিক চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে কোন চরিত্র ঘটনাক্রমে গল্প এগিয়ে যেতে থাকলেও বড় ধরণের কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় না। তার লক্ষ্য, চিন্তা-ভাবনা, ধারণা ইত্যাদি মোটামুটি একই রকমের থেকে যায়। অন্যদিকে ডিনামিক চরিত্রায়ণ বলতে সেই ব্যাপারটি বুঝিয়ে থাকে, যেখানে একটা চরিত্র গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে থাকার সাথে সাথে বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই পরিবর্তন থাকে তার লক্ষ্যে, চিন্তাভাবনায়, আচার-আচরণে, ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দুই আলাদা ধরণের চরিত্র অর্থ কিন্তু এই নয় যে একটি বেশি ভালো ও অন্যটি খারাপ। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের উপযুক্ত ব্যবহার দুই ধরনের চরিত্রকেই বিশেষ কিছু করে তুলতে পারে।

আমাদের আলোচ্য গল্পের প্রধাণ চরিত্র নারুতো উজুমাকি স্ট্যাটিক চরিত্রায়ণের সবচাইতে বড় উদাহরণ। গল্পের একদম শুরু থেকে তার লক্ষ্য ছিল হোকাগে হওয়া ও সবার কাছে এক সম্মানজনক ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া। হাটতে-চলতে সব ক্ষেত্রেই নারুতোর এই লক্ষ্যের কথা আমরা শুরু থেকে জেনে এসেছি, এবং কোন ধরণের বাঁধা তাকে দমাতে পারে নি এই উদ্দেশ্য অর্জন থেকে। তার এই অনড় অবস্থান মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ঘৃণা থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে সম্মানের পথে নিয়ে আসে।

ডিনামিক চরিত্রায়নের আদর্শ উদাহরণ সাসকে। তার ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য ছিল তার ভাইকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিবে আর নিজের বংশের পুনরুত্থান ঘটাবে। ঘটনাপ্রবাহে আমরা দেখতে পারি সাসকে তার সেই লক্ষ্য মাঝপথেই অর্জন করতে পেরেছে, কিন্তু এরপর সত্যি কথাটা তার সামনে চলে আসলে তার চরিত্রে একটা ভাঙ্গন দেখতে পারি। শুরু হয়ে যায় ভাঙ্গা-গড়ার খেলা, যেখানে কোনোহাকে ধ্বংশ করে দেওয়া কিংবা কোনোহাকে বাঁচিয়ে ফেলা – এই দোটানায় তার চিন্তাভাবনা ঝড়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নারুতোর সাথে শেষবারের মত মারামারির মধ্য দিয়ে তার চরিত্র পূর্ণায়তা পেয়ে উঠে।

দুটি চরিত্রই আনিমে জগতের অন্যতম জনপ্রিয়তা পাওয়া চরিত্র, সন্দেহ নেই। কিন্তু এবার যদি আমরা এই দুজনের ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকি, তাহলে কোন চরিত্রটিকে আমরা ঠিকভাবে গড়ে উঠতে দেখি? নিঃসন্দেহে সেটা সাসকে। নারুতো চরিত্রটির প্রতি বিদ্বেষ নেই আমার, একটি চিরাচরিত শৌনেন গল্পের প্রধান চরিত্র হবার মত সবকিছুই তাকে দিয়েছে গল্পের লেখক – অনড় চিন্তাভাবনা, হাসিখুশিভাবে সবাইকে আপন করে নেওয়া, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এ সব কিছুই তাকে একজন হিরো করে তুলে। কিন্তু, চরিত্রের বিকাশ যদি হিসাব করি আমরা, নারুতো উজুমাকি কি আদৌ তেমন কোন বিকাশ দেখাতে পেরেছে? নারুতোর চরিত্রে যেটি হয়ে উঠে নি, সাসকের চরিত্রে তার সবকিছু হয়ে উঠেছে আসলে।

ঘটনাক্রমে আমরা দেখে উঠতে পারি সাসকে ছোটকালে খুবই হাসিখুশি এক চরিত্র ছিল, যে বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ পাবার জন্যে সবরকমের চেষ্টা করতো। একদিন তার বড় ভাই তার বাবা-মাসহ পুরা উচিহা বংশকে হত্যা করে ফেলে। এই ঘটনা সাসকে-কে করে তুলে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ, এবং এরকম একটা অবস্থান থেকেই গল্পে প্রথম তাকে দেখতে পারি আমরা। এরকম সময়ে তার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর, নিঞ্জাদের দুনিয়া হয়ে থাকলেও ম্যাচিউরিটি আসার মত বয়স তখনও হয়ে উঠে নি। নিজের প্রতিশোধ নেবার লক্ষ্যে নিজের গ্রাম ছেড়ে দিতেও রাজী হয়ে উঠেছিল। এরপর ১৬ বছর বয়সের দিকে এসে বড় ভাইকে হত্যা করে যখনই নিজের জীবনের লক্ষ্য পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বলে মনে করেছিল, তখনই তোবির কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পারে। জানতে পারে কীভাবে তার বড় ভাই বাধ্য হয়েছিল নিজের বংশকে নির্মূল করে দিতে। এমন সময়ে এসেই আমরা সাসকের চরিত্রে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেখতে পারি। এই মুহুর্তটি ছিল তার চরিত্রের বিকাশের একটি বড় উপলক্ষ্য। অবশেষে নিজে থেকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে সে, কোনোহাকে ধ্বংস করবে সে, কোনোহার উপর বদলা নিবে সে।

ইতোমধ্যে নিঞ্জাদের ৪র্থ বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়, আর এমন এক কঠিন মুহুর্তে তোবি, কাবুতো আর জেতসু সবাই তাকে নিজের মত করে ব্যবহার করতে চেষ্টা করে, সে বিষয়টিও বুঝে উঠতে পারে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বড় ভাইকে রিএনিমেশন অবস্থায় দেখতে পারে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সত্য ঘটনাটির অন্য আরেক সংস্করণ শুনতে পারে। সাসকের চরিত্রের গঠনের আরেকটি বড় মুহুর্তের সাক্ষী হতে পারে দর্শক এই জায়গাটিতে, যখন সাসকে বুঝে উঠতে পারে শুধুমাত্র প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামি হবে। এরপর পূর্বের হোকাগেদের কাছ থেকে নিঞ্জার ইতিহাসের সবকিছু জেনে নেয় সে। বুঝে উঠতে পারে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাতেই সমস্যা হয়েছে।

শুধু প্রতিশোধ আর প্রতিশোধ যার লক্ষ্য ছিল, সেই চরিত্রকে আমরা এরপর কী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখি? সে কি এরপর পুরা নিঞ্জা দুনিয়াকে নির্মূল করতে উঠে যায়? না, বরং এই প্রথম সে বুঝে উঠতে পারে নিজের পরিণতি যেন অন্য কাউকে মুখোমুখি হতে না হয়, এজন্যে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। হোকাগে হয়ে এই লক্ষ্য পূরণের জন্যে এগিয়ে যেতে দেখি আমরা, যদিও গল্পের নায়ক না হবার কারণে সেটা তার ভাগ্যে জুটে নি। কিন্তু হোকাগে হবার লক্ষ্য নারুতোর কাছে রেখে দিয়ে এলেও, এরপর সাসকে পুরা নিঞ্জা দুনিয়া ঘুড়ে দেখে সব সমস্যা ঠিকঠাক করার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।

একটি প্রতিশোধপরায়ণ ছোট্ট বাচ্চা বিভিন্ন ধরণের মানসিক ধাক্কা, অশান্তি, কষ্ট, ক্ষোভ সামলে উঠে সুন্দর একটি বিশ্ব গড়ে তুলার উদ্দেশ্যে শান্তির পথে অগ্রসর হয় — লক্ষ্য, চারিত্রিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের পুর্ণায়ন হয়ে উঠে সাসকে উচিহা চরিত্রটির।

আমরা গল্পের ক্রমে অন্যান্য অনেক চরিত্রেরও কাছাকাছি বিকাশ দেখতে পাই। বাবার প্রতি অন্যায়ে কঠিন হয়ে যাওয়া, আপন দুই বন্ধুকে হারানোর পরে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে হারিয়ে যাওয়া এবং নারুতো-সাসকে-সাকুরার শিক্ষক হবার মাধ্যমে আবার আলোর পথে ফেরত আসা – কাকাশিরও প্রায় একই ধরণের ডিনামিক পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমরা এই পরিবর্তনের অধিকাংশই জানতে পারি গল্পের শেষের দিকে এসে। ওবিতো চরিত্রটিও বেশ ট্র্যাজিক এক চরিত্র। তবে এত বিশাল মাপের দুনিয়া পাল্টে দেওয়া যুদ্ধ শুরুর পর, অগণিত মানুষ হত্যার পর শুধু নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেটা কাটিয়ে তুলার চেষ্টা – তার চরিত্রের বিকাশটি অনেকের কাছেই তাই আপত্তিকর। অন্যদিকে ইতাচির মনের মধ্যে ঝড়ঝঞ্ঝা এবং অকল্পনীয় ত্যাগের মাধ্যমে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে উঠা – সবকিছু মিলিয়ে তাকে গল্পটির সবচাইতে পছন্দের চরিত্র করে তুলতে পেরেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তা এক জিনিস, আর ব্যক্তিত্বের গঠন আরেক জিনিস।

সবসময়ে শান্তির পথে থাকতে চাওয়া ইতাচিকে নিজের পুরা বংশকে হত্যা করতে বাধ্য হতে হয়। এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সন্দেহ নাই, কিন্তু এত বড় এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবার পরে সবার চোখে অপরাধী হয়ে থাকার পরেও কোনোহাকে ও নিজের ছোট ভাইকে চোখে চোখে রাখতে আকাতসুকিতে যোগদান করে সে। ভাইয়ের হাতে নিজের মৃত্যুটিকে নিজের পাপের শাস্তি ও কষ্ট থেকে মুক্তির পথ হিসাবে বেঁছে নেয়। আমরা গল্পের শুরু থেকেই ইতাচিকে গল্পের সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবে দেখে এসেছি, তার অংশ শেষ হবার পরেও একইভাবে তাকে গল্পের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবেই জানতে পেরেছি। ফলাফল স্বরূপ, তার ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট জিনিসটি বাদ পড়ে গিয়েছে।

অতএব, ডেভলপমেন্ট ব্যাপারটি যদি লক্ষ্য করি শুধু, তাহলে পুরা গল্পে সাসকের মত চারিত্রিক বিকাশ আর দ্বিতীয়টি কারও নেই। সাসকে চরিত্রটি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কখনই ছিল না, কিন্তু নিজের ত্রুটি মেনে নিয়ে সেটিকে ঠিক করে তুলবার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে, এবং প্রায় ৬৫০ পর্বের এই যাত্রায় তাতে সফল হওয়াটা তার চরিত্রকে পরিপূরণ করতে পেরেছে। Well-developed চরিত্রের কথা যদি উঠে থাকে, তাহলে এই গল্পে সাসকের চরিত্রের গঠনের ধারেকাছেও কেউ নেই।

চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান -৪ – Saito Hajime — Shifat Mohiuddin

 

Saito Hajime 1

চরিত্রঃ Saito Hajime
এনিমে: Rurouni Kenshin, Rurouni Kenshin: Trust and Betrayal
ভূমিকাঃ মধ্যপন্থী
আসল নামঃ Yamaguchi Hajime/Saito Hajime
জন্মঃ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪
মৃত্যুঃ ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫
কর্মস্থলঃ শিনসেনগুমির তৃতীয় স্কোয়াড(জাপানিজ সামরিক সরকারের বিশেষ পুলিশ বাহিনী)
পদবিঃ ক্যাপ্টেন

 

¤
আমরা যারা রুরুনি কেনশিন এনিমেটা দেখেছি তারা সকলেই সাইটো চরিত্রটির সাথে পরিচিত।দুর্বিনীত,অহংকারী,অতি-আত্মবিশ্বাসী কিন্তু তলোয়ারবাজিতে অত্যন্ত দক্ষ;সর্বোপরি ব্যাডঅ্যাস এই চরিত্রটি আমাদের মনে ভালোই দাগ কেটেছে।গ্রুপের অধিকাংশ মেম্বারই বোধহয় জানেন যে সাইটো একটি ঐতিহাসিক চরিত্র হতে অনুপ্রানিত।কেনশিনের লেখক নবুহিরু ওয়াতসুকি একজন স্বঘোষিত শিনসেনগুমি ফ্যান এবং তাঁর অনেকগুলো চরিত্রই শিনসেনগুমির সদস্যদের হতে অনুপ্রানিত।সাইটোও তাদের মধ্যে একজন।এনিমের মতো বাস্তব জীবনের সাইটোও সেইরকম ব্যাডঅ্যাস ছিলেন এবং তার জীবন কোন অংশেই কেনশিনের চেয়ে কম বৈচিত্রপূর্ণ নয়।সাইটোই সেই অল্পসংখ্যক যোদ্ধাদের মধ্যে একজন যারা বাকুমাতসুর রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছিলেন।
¤
সাইটো বর্তমান টোকিওতে জন্মগ্রহন করেন।Saito Hajime 2 তার পিতার নাম Yamaguchi Yusuke যিনি কিনা একজন পদাতিক সৈন্য ছিলেন।তার আরও এক ভাই এবং এক বোন ছিল।পারিবারিক সূত্র হতে জানা যায় যে, দুর্ঘটনাবশত একজন যোদ্ধাকে হত্যা করায় সাইটোকে ১৮৬২ সালে গৃহত্যাগ করতে হয়।তিনি কিয়োটোতে চলে যান এবং yoshida নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে তলোয়ারবিদ্যার শিক্ষা নেন।তার পূর্বজীবন সম্পর্কে এর থেকে বেশি কিছু জানা যায় না।
¤
একজন দক্ষ তলোয়ারযোদ্ধা হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই সাইটো শিনসেনগুমিতে পদোন্নতি পান।সাইটো,Okita soji এবং todo heisuke এই তিনজন ছিলেন শিনসেনগুমির সবচেয়ে কম বয়স্ক এবং দক্ষ যোদ্ধা।১৮৬৪ সালে সাইটোকে শিনসেনগুমির চতুর্থ স্কোয়াডের প্রধান করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে ১৮৬৫ সালের এপ্রিলে তিনি তৃতীয় স্কোয়াডের প্রধান হন।তার দক্ষতা প্রথম স্কোয়াডের লিডার Okita soji[এই চরিত্রটিকে ট্রাস্ট এন্ড বিট্রেয়ালে দেখানো হয়েছে]এর সমকক্ষ ছিল এবং বলা হয় যে ওকিটা,সাইটোকে ভয় পেতেন।
¤
শিনসেমগুমিতে সাইটো মূলত ভাইস কমান্ডারের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।এছাড়াও তলোয়ারবিদ্যা শেখানোর কাজটাও তিনি করতেন।১৮৬৭ সালে সাইটো এবং তার শিনসেনগুমির অন্য সদস্যরা Hatamote(এমন সৈন্য যারা জাপান সামরিক সরকারের সরাসরি অধিনস্থ থাকতো)পদে পদোন্নতি পান।বুশিন ওয়ার(১৮৬৮-১৮৬৯) চলাকালিন সময়ে সাইটো Battle of toba-fusimi এবং battle of koshu-katsunuma তে অংশগ্রহন করেন।যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সাইটো অবশিষ্ট যোদ্ধাদের নিয়ে জাপানের আইজু এলাকায় পলায়ন করেন।
¤
Utsunomiya দুর্গের লড়াইয়ে শিনসেনগুমির কমান্ডার Hijikata Toshizo মারাত্মক আহত হন।ফলশ্রুতিতে ১৮৬৮ সালের ২৬ মে তারিখে সাইটো আইজু শিনসেনগুমির কমান্ডার হন।Bonari pass এর লড়াইয়ের পর Hijikata আইজু হতে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিলেও সাইটো থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং আইজু আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে battle of aizu এর শেষপর্যন্ত লড়াই করেন।(এই বিচ্ছেদের ব্যাপারে বিতর্ক আছে।অনেকের মতে সাইটো হিজিকাতার কাছ থেকে আলাদা হন নি।)
সাইটো এবং তার অনুসারিরা Nyorai-do টেম্পলে ইমপেরিয়াল বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন।যুদ্ধে তারা মারাত্মকভাবে outnumbered হন এবং সকলে ধরে নেয় যে এই যুদ্ধে সাইটো মৃত্যুবরণ করেছেন।কিন্তু সাইটো পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং আইজুতে ফিরে এসে আইজুর সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করেন।আইজু দুর্গের পতনের পর সাইটো কিছু সহযোদ্ধাদের নিয়ে takada এলাকায় যান কিন্তু সেখানে তারা যুদ্ধবন্দী হন।আটক হওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকায় সাইটোকে Ichinose Denpachi নামে অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
¤
মেইজি পুনরুত্থানের পর সাইটো,Fujita Goro ছদ্মনাম নিয়ে Tonami অঞ্চলে চলে যান।সেখানে তিনি তার এক পুরনো বন্ধু Kurasawa Heijiemon এর বাসায় অবস্থান করেন।সেখানে,সাইটোর সাথে শিনোদা ইয়াসো নামক এক নারীর পরিচয় হয়।কুরাসাওয়ার ঘটকালিতে ১৮৭১ সালে সাইটোর সাথে ইয়াসোর বিবাহ সম্পন্ন হয়।তারা কুরাসাওয়ার বাড়িতেই থাকতেন।ধারনা করা হয় তখনই সাইটো পুলিশ বিভাগের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।১৮৭৪ সালে সাইটো tonami ছেড়ে টোকিও চলে যান।দুই বছর পরে সাইটো fujita goro নাম নিয়েই টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
¤
এর পর সাইটো Takagi Tokio নামক আরেক নারীকে বিয়ে করেন।তোকিও এর পিতা আইজুর একজন সম্ভ্রান্ত পুরুষ ছিলেন।সাইটো এবং তোকিওর ঘরে Tsutomu,Tsuyoshi এবং Tatsuo নামের তিন সন্তানের জন্ম হয়।Tsutomu এর সন্তানরা এখনও সাইটোর বংশধারা বজায় রেখেছেন।
¤
তিনি মেইজি সরকারের আমলে Satsuma বিদ্রোহ দমনে পুলিশ বাহিনীর হয়ে জাপানিজ সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেন।পুলিশ বাহিনীতে তিনি অত্যন্ত সুনামের সহিত কাজ করেন এবং বীরত্বসূচক অনেক পুরষ্কারও পান।১৮৯০ সালে তিনি পুলিশ বাহিনী হতে অবসর গ্রহন করেন।পরবর্তিতে এক বন্ধুর সহায়তায় Tokyo Education Museum এ তিনি গার্ডের দায়িত্ব পালন করেন।তারপর তিনি টোকিও নরমাল হাই স্কুলে সাত বছর চাকরি করেন।১৯০৯ সালে তিনি এই চাকরি হতে অবসর গ্রহন করেন।
¤
শিনসেনগুমির অন্যান্য সদস্যদের মতই সাইটো ছিলেন অর্ন্তমুখী এবং রহস্যময় স্বভাবের।তিনি খুবই কম কথা বলতেন এবং খেজুরে আলাপে তার কোন আগ্রহ ছিল না।সবসময় বিশেষ করে জীবনের শেষের দিকে তিনি অত্যন্ত গর্বিত ভাবে জীবনযাপন করতেন।অবসর সময়ে সর্বদাই তাকে সেইজা(জাপানিজদের হাঁটু ভেঙ্গে বসার স্টাইল)রত অবস্থায় দেখা যেত।মেইজি যুগে সাইটোই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যাকে কাতানা বহনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল।সাইটোর উচ্চতা ছিল ৫’ ১১” অর্থ্যাৎ এনিমের মত বাস্তব জীবনেও তিনি অত্যন্ত লম্বা ছিলেন।তিনি সর্বদাই অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় থাকতেন যেন যেকোন সময়ে যেকোন পরিস্হিতির মোকাবেলা করতে পারেন।
সাইটো অত্যন্ত বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন।তীক্ষ্ণ বিচারবুদ্ধির কারণে শিনসেনগুমির অভ্যন্তরের গুপ্তচর ধরায় তার জুড়ি মেলা ভার ছিল।সদস্যরা সকলেই তাকে সমঝে চলতো।ফলে অনেকে তাকেই স্পাই মনে করতো।সাইটোর অন্যান্য সংস্হার ইন্টিলিজেন্স এবং গতিবিধির উপর নজর রাখাই ছিল তাদের সন্দেহের কারন।সাইটোর হাতে শিনসেনগুমির কতিপয় দুর্নীতিবাজ সদস্যের মৃত্যু তাকে আরোও বিতর্কিত করে তুলেছিল।
¤
সাইটোর তলোয়ারবাজির স্টাইলের নাম ছিল Mugai Ryu যার উৎপত্তি হয়েছিল তার পারিবারিক স্টাইল Yamaguchi Itto-ryu হতে।সাইটো প্রচুর sake পান করতেন এবং পানরত অবস্থায় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তির কাছে তিনি তার পূর্বকথা বলতেন।সাইটো তার কোন স্মৃতিকথাই লিখে রাখতেন না।
¤
এনিমেতে সাইটো যে গাটুটসু টেকনিকের ব্যবহার করতেন সেটা তার আসল তলোয়ারবিদ্যার সাথে মিল থাকলেও পুরোপুরি কল্পিত।’Aku Soku Zan’ অর্থ্যাৎ “Slay Evil Immediatly” নামক যে নীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন তা কাল্পনিক হলেও বাকুমাতসুর সময়ের শিনসেনগুমির এক সাধারন চিন্তাভাবনাই ছিল।কেনশিন ব্যতিত আরো কিছু শিল্পমাধ্যমেও সাইটোর উপস্হিতি আছে।
¤
অতিরিক্ত সাকে পান করার কারণেই স্টমাক আলসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯১৫ সালে ৭২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুর সময়ও তিনি সেইজা অবস্হাতেই বসে ছিলেন।
¤
source:wikipediaB-)

চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান – Angra Mainyu [Fate series] — Shifat Mohiuddin

চরিত্রঃ Angra Mainyu
এনিমে: Fate/stay night, Fate/Zero, Fate/stay night: Unlimited Blade Works
ভূমিকাঃ খলনায়ক
উপাধি/অপর নামঃ আহিরমান, Source of all evil in the world, Destructive spirit, Daeva of Daevas.
উপস্হিতিঃ জরুথ্রস্টবাদ, মানিবাদ এবং অন্যান্য খ্রিষ্টোত্তর ধর্ম।
¤
অ্যাংগ্রা মাইনয়ু আসলে এমন একটা চরিত্র যাকে কল্পনা করতেই যোগ্যতা লাগে।মূলত ফেইট সিরিজের এনিমেগুলোর শেষ এপিসোডে এর উপস্হিতি লক্ষ করা যায়।এর উপস্হিতি পঙ্কিল এবং বীভৎস(অনেকটা সাউরনের মত)।কাদার মত থকথকে বস্তু দ্বারা এর পুরো দেহ আবৃত।তো,এই চরিত্রটির আমদানি ঘটেছে জরুথ্রুস্টবাদ ধর্ম থেকে।তাদের ধর্মগ্রন্হ আবেস্তার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু অ্যাংগ্রা মাইনয়ু যার আসল নাম আহিরমান(পার্সি ভাষায় অ্যাংগ্রা মাইনয়ু বলা হয়)।আমি এই লেখায় আহিরমান শব্দটিই ব্যবহার করবো।
¤
অ্যাংগ্রা মাইনয়ু শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ধ্বংসাত্মক আত্মা।জরুথ্রুস্টের মতে নামটি এখনো পরিপূর্ণতা লাভ করে নি।এখানে এমন এক মনকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার মন কলুষতায় পরিপূর্ণ এবং ধ্বংসই যার টিকে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য।
¤
আবেস্তার প্রথম অংশে আহিরমানকে ডেভাদের (daeva) প্রধান হিসেবে অভিহিত করা হয়।জরুথ্রুস্টের মতে ডেভারা হল fallen angel দের মত,পুরোপরি ডিমন না।ডেভারা অন্ধকার জগতে বাস করে এবং আহিরমান তাদের সর্বময় কর্তা।আহিরমান যাবতীয় নেগেটিভ ইমোশন যেমনঃদুঃখ,কষ্ট,বেদনা,ঘৃণা,হিংসা ইত্যাদির প্রতিনিধিত্ব করে।ধারণা করা হয় যে,আহিরমানই ডেভাদের ভেতরে অন্ধকারের প্রবেশ ঘটিয়েছে,যদিও সে ডেভাদের স্রষ্টা নয়।
¤
জরুথ্রুস্টবাদে আহিরমানের উৎপত্তি নিয়ে সেইরকম কোন তথ্য নেই।যেন,সৃষ্টির প্রথম থেকেই আহিরমান ছিল।আর আহিরমানের বিপরীত সত্ত্বা হল ওহরমাজদা।ওহরমাজদা হল আলোর প্রতীক এবং সে ইয়াজদাদের (creature of light) নিয়ন্ত্রন করে।তবে ইয়াসনার ৩০.৩ স্লোক অনুযায়ি দুইজন পবিত্র যমজের উৎপত্তির কথা বলা হয়েছে যাদের একজনের নাম অ্যাংগ্রা মাইনয়ু এবং অপরজনের নাম স্পেনটা মাইনয়ু।এই স্লোকটি চিরকালীন ওহরমাজদা-আহিরমান বিশ্বাসে চিড় ধরায়।তবে আহিরমানের উৎপত্তির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে জুরভানিজম ধর্মে।
¤
জুরভানিজম (zurvanism) হল জরুথ্রুস্টবাদের একটি শাখা ধর্ম যা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়।পরে অবশ্য শাসকদের রক্তচক্ষুর প্রভাবে এই ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যায়।তবুও আধুনিক জরুথ্রুস্টবাদে এখনও জুরভানিজমের প্রভাব দেখা যায়।
জুরভানিজম অনুসারে,বিশ্বজগতে প্রথম উপাদান ছিল জুরওয়ান(time) নামের একজন উভলিঙ্গ দেবতা।জুরওয়ান বংশবৃদ্ধিতে আগ্রহী ছিল এবং চাইতো যে তার পক্ষ থেকে কেউ যেন স্বর্গ আর নরক তৈরি করে।সন্তান লাভের জন্য জুরওয়ান ১০০০ বছর ধরে সাধনা করে।এই দীর্ঘ সাধনার ফল না পাওয়ায় জুরওয়ানের মনে সামান্য সন্দেহ দেখা দেয় এবং তৎক্ষনাৎই সে যমজ সন্তানের অধিকারী হয়।এই সন্তানদ্বয় ছিল ওহরমাজদা এবং আহরিমান।বলা হয় যে,সেই সাধনার ফসল ছিল ওহরমাজদা এবং সেই সূক্ষ সন্দেহের ফসল ছিল আহরিমান।
জুরওয়ান সিদ্ধান্ত নেন,যে সন্তান আগে গর্ভ ভেদ করবে তাকেই তিনি সার্বভৌম ক্ষমতা দান করবেন।ওহরমাজদা এই কথা বুঝতে পারে এবং তার ভাই আহিরমানকে এই ব্যাপারে অবহিত করে।আহিরমান এই কথা শুনে জুরওয়ানের উদর বিদীর্ন করে বাইরে বের হয়ে আসে।জুরওয়ান তার কথা মতো,আহিরমানকে সার্বভৌম ক্ষমতা দান করেন তবে তা ৯০০০ বছরের জন্য।তিনি বলে দেন যে,৯০০০ বছর পরে ওহরমাজদাই এই মহাবিশ্ব শাসন করবে।
আহিরমান আর ওহরমাজদা পরষ্পরের সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।অবশ্য সব ধর্মগ্রন্থের শেষেই বলা হয়েছে শেষমেষ আহিরমানই পরাজিত হবে এবং নরকে পতিত হবে।যেহেতু,নরক তার নিজেরই সৃষ্টি।
আহিরমান এবং ওহরমাজদা উভয়েই একে অপরকে চ্যালন্জের মাধ্যমে পৃথিবীকে বৈচিত্র্যময় বানিয়েছে।যেমনঃওহরমাজদার ষোলটি শুভ শক্তির বিপক্ষে আহিরমান ষোলটি অশুভ শক্তির ব্যবহার করেন।এই অশুভ শক্তি গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মহামারি,দুর্ভিক্ষ,শীত ইত্যাদি।মানুষ নিয়মিতই তাদের যুদ্ধের কেন্দ্রে থাকত এবং তাদের কাজ হতো চারিদিকের এই অন্ধকারের মধ্যে অন্তরের সততা বজায় রাখা।কলুষতার ছোঁয়া পেলেই ডেভারা মানুষের আত্মাকে অপবিত্র করে ফেলতে পারতো।
¤
আধুনিক যুগে অবশ্য আহিরমানের উৎপত্তি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করা হয়।১৮৬২ সালে মার্টিন হগ নামক একজন ব্যক্তি আহিরমানের উৎপত্তির নতুন ব্যাখা দেন।তাঁর মতে,আহিরমান,ওহরামাজদার সমসাময়িক কেউ নয়।বরং ওহরামাজদারই নিজস্ব দুই সৃষ্টি হল অ্যাংগ্রা মাইনয়ু এবং স্পেনটা মাইনয়ু,যারা যথাক্রমে ওহরামাজদার ‘সৃষ্টি’ এবং ‘ধ্বংস’ বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে।এইখানে স্পেনটা মাইনয়ু নামক নতুন এক সৃষ্টির অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয়।হগের মতে এটাই জরুথ্রুস্টবাদের মূলনীতি এবং কালেক্রমে এটাই বিকৃত হয়ে প্রচলিত রূপ নিয়েছে।
হগের এই তত্ত্ব ইয়াসনার ৩০.৩ স্লোকের যমজ সন্তান তত্ত্বকে মারাত্মক ভাবে সমর্থন করে।সমকালীন পন্ডিতেরাও হগের তত্ত্বে সমর্থন দেন এবং তাদের মতে হগের তত্ত্ব জরুথ্রুস্টবাদকে আধুনিক যুগের সাথে মানানসই করেছে।
মজার ব্যাপার হল,রুডলফ স্টাইনার নামক প্রখ্যাত একজন দার্শনিকের মতে আহিরমানের পূর্নজন্ম হবে।তাঁর মতে ৩০০০ খ্রিষ্টাব্দের পর আহিরমানের আবির্ভাব ঘটতে পারে।বর্তমান পৃথিবীতে বিদ্যমান অস্হিতিশীলতাই হবে তার আবির্ভাবের কারণ।তিনি আহিরমানকে মাত্র দুইজনের একটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন যারা কিনা যীশুর মৃত্যুর পর যীশুর ফোকাস নিজেদের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে।
¤
রেফারেন্সঃ সাহিত্য,সংষ্কৃতি এবং মিডিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আহিরমানকে প্রচুরভাবে উপস্হাপন করা হয়েছে।তবে একটি উদাহরন না দিলেই নয়।বাংলাদেশের সুলেখক তানজীম রহমানের থ্রিলার-হরর উপন্যাস ‘আর্কনে’ অ্যাংগ্রা মাইনয়ুর(আহিরমান) কথা উল্লেখ আছে।আর্কন উপন্যাসের একটি প্রধান খল চরিত্র হল আর্কনেরা।জানলে খুশি হবেন যে এই আর্কনেরা হল ডেভাদের অনুরূপ।তাদের শাসনকর্তাও হল আহিরমান।লেখক আর্কন উপন্যাসে মানিকেয়িজম নামক এক ধর্মের আশ্রয় নিয়েছেন যা জরুথ্রুস্টবাদের অনুরূপ ধর্ম।এমনকি বইয়ের কয়েক জায়গায় আহিরমান লেখাও আছে।বইটির পাঠকেরা নিশ্চয়ই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।যারা ফেইট সিরিজের ভক্ত তারা অবশ্যই আর্কন বইটা পড়ে দেখতে পারেন।
¤
স্পয়লার অ্যালার্ট
Fate/hollow ataraxia অনুযায়ি (আমি hollow ataraxia খেলি নাই।অনিন্দ্য ভাইয়ের পোস্ট এবং পরে উইকিতে কাহিনী জানতে পারি।)অ্যাংগ্রা মাইনয়ুকে অ্যাভেন্জার ক্লাস হিসেবে থার্ড হোলি গ্রেইল ওয়ারে সামন করার চেষ্টা করা হয়।কিন্তু যে সামন হয় সে নাকি একজন সাধারন বালক ছিল যার জন্ম নাকি মধ্যপ্রাচ্যে।এক্ষেত্রে টাইপ মুনের প্রশংসাই করতে হয় কারণ জরুথ্রুস্টবাদের উৎপত্তি ঘটেছিল ইরাকে।মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে উপুযুক্ত কোন জায়গায় অ্যাভেন্জারের জন্ম নেওয়া সম্ভব ছিল না।
¤
source:all hail wikipedia 😛

Angra Mainyu

চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান – Caster [Fate/stay night] — Shifat Mohiuddin

আরেকটি চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান
চরিত্র: মিদিয়া (ক্যাস্টার)
এনিম: Fate/stay night,Fate/stay night [unlimited blade works]
ভূমিকাঃ খলনায়িকা
¤
আসল নামঃমিডিয়া
জাতীয়তাঃগ্রীক,কলচিয়ান
সামাজিক পদমর্যাদাঃরাজকন্যা
জন্ম ও মৃত্যুঃ১১০০-৮০০ খ্রীষ্টপূর্বের মধ্যকার যেকোন সময়ে।
মৃত্যুর ধরনঃজানা যায় নি
সময়কালঃগ্রীক অন্ধকার যুগ
¤
আমরা যারা FSN এবং FSN UBW দেখেছি তারা রূপসী এবং রহস্যময়ী চরিত্র ক্যাস্টারের সাথে সুপরিচিত।ক্যাস্টারের প্রতিটি কাজ রহস্যমন্ডিত এবং তার চরিত্রটাও অনেক জটিল একটা চরিত্র।ক্যাস্টারের আচরন অনেকের কাছেই পুরোপুরি বোধগম্য হয় নি।শেষমূহূর্তে তার নাম সকলের সামনে উন্মোচিত হয় এবং আমরা জানতে পারি যে চরিত্রটি গ্রীক মিথের একটি অত্যন্ত খ্যাতনামা গল্পের একটি প্রধান চরিত্র থেকে নেওয়া।
¤
পূর্বকথাঃগ্রীক মিথ অনুযায়ী যুদ্ধদেবতা এরেস[রোমান নাম মার্স] এর দুটি পবিত্র বনভূমি আছে।এর মধ্যের একটি বনভূমির অবস্হান গ্রীসের কলচিস রাজ্যে।কলচিস রাজ্যটি মূল গ্রীক ভূখন্ড হতে অনেক দূরে কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্হিত।কলচিসের রাজা ঈটিস ছিলেন এরেসের অনেক বড় উপাসক।তাই এরেস খুশি হয়ে ঈটিসকে একটি Golden fleece[স্বর্নমন্ডিত মেষচামড়া] উপহার দেন।এই গোল্ডেন ফ্লিস কলচিসকে যাবতীয় মহামারী,প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করত।অন্যান্য রাজ্যের মানুষরা এই ফ্লিস দখল করতে চাইতো বলে এরেস একটি নরমাংসভোজী নির্ঘুম ড্রাগনকে ফ্লিসের পাহাড়ায় রাখেন।ড্রাগনটির দাঁত ছিল বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন।এই দাঁত মাটিতে পুঁতে গোড়ায় সামান্য রক্ত ঢাললে কন্কালসদৃশ কিছু যোদ্ধা জন্ম নিত।এভাবে দাঁত রোপন করে ঈটিস এক বিশাল সেনাবাহিনীর নেতা হন।এছাড়াও এরেস ঈটিসকে একজোড়া ষাঁড় উপহার দেন।ষাঁড়গুলোর নাক থেকে আগুনের নিঃশ্বাস বের হত।এই ষাঁড়গুলোকে চাষ করাবার জন্য এরেস ঈটিসকে একটি অগ্নিনিরোধক বর্মও উপহার দেন।
¤
আমাদের কাহিনী শুরু হয় সুদূর Iolcus নগর হতে।এই নগরের রাজা ছিলেন ঈসন নামক একজন বয়স্ক ব্যাক্তি।কিন্তু তার ছেলে পেলিয়াস জোরপূর্বক তার সিংহাসন দখল করে।পেলিয়াস এর সৎ ভাই জ্যাসন সিংহাসনের দাবি জানালে পেলিয়াস মনে মনে অস্বীকৃতি জানালেও কৌশলে জ্যাসনকে গোল্ডেন ফ্লিস চুরি করে নিজেকে বীর প্রমান করার পরামর্শ দেয়।পেলিয়াস জ্যাসনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল কারন যারা এপর্যন্ত ফ্লিস উদ্ধারের অভিযানে গেছে তারা কেউই জীবিত ফেরত আসে নি।যাইহোক,জ্যাসন এই পরামর্শে রাজি হয়।[LIKE A TRUE HERO:-P]তবে এই শর্তে যে জ্যাসন যদি ফ্লিস নিয়ে আসতে পারে তাহলে পেলিয়াস সিংহাসন ছেড়ে দেবে।জ্যাসন তার সমসাময়িক বীরদের নিয়ে ‘Argonauts’ নামের একটি অভিযাত্রী দল গঠন করে।অনেকের মতে এই দলে নাকি হারকিউলিসও যোগ দিয়েছিলেন।তাঁরা ‘Argo’ নামের একটি জাহাজ তৈরি করেন এবং কলচিসের প্রতি যাত্রা শুরু করেন।যাত্রাপথের বিচিত্র ঘটনাগুলো আমি আর উল্লেখ করছি না।
¤
কলচিসের রাজা ঈটিসের মেয়ে ছিলেন মিডিয়া।তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী ডাইনী।জ্যাসন যখন দলবল নিয়ে কলচিসের রাজদরবারে গোল্ডেন ফ্লিস দাবি করেন তখন মিডিয়া জ্যাসনের প্রতি প্রথম দর্শনেই ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হন।অনেকে মনে করেন দেবী হেরার(রোমান নাম জুনো) পরামর্শে ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতি(ভেনাস) মিডিয়াকে জ্যাসনের প্রতি আসক্ত করে দেন।জ্যাসন ফ্লিসের দাবি জানালে ঈটিস মৌখিকভাবে সম্মতি জানান কিন্তু মনে মনে জ্যাসনকে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেন।ঈটিস নিশ্চিত ছিলেন যে তাঁর পরীক্ষা থেকে জ্যাসন কোনমতেই বেঁচে ফিরে আসতে পারবে না।
¤
কিন্তু ভালোবাসায় অন্ধ মিডিয়া পিতার কূটচাল বুঝতে পারেন।মিডিয়া জ্যাসনের কাছে প্রেম নিবেদন করেন এবং জ্যাসনকে সাহায্য করেন প্রতিশ্রুতি দেন।জ্যাসন মিডিয়াকে গ্রহন করতে রাজি হয় একশর্তে যে মিডিয়াকে ফ্লিস উদ্ধার সাহায্য করতে হবে।প্রেমের জালে আবদ্ধ মিডিয়া পিতার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করতে সানন্দে রাজি হয়।
¤
ঈটিসের প্রথম পরীক্ষা এমন ছিল যে জ্যাসনকে আগুনের নিঃশ্বাস ফেলা ষাঁড়দুটোকে দিয়ে হালচাষ করতে হবে।কাজটি ছিল অত্যন্ত বিপদজনক কারন ষাঁড়ের নিঃশ্বাসে দেহ পুড়ে যাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল।কিন্তু মিডিয়া জ্যাসনের দেহে এক ধরনের মলম মেখে দেন ফলে জ্যাসন অতি সহজে ষাঁড়দুটোকে দিয়ে অতি সহজেই হালচাষ করে ফেলেন।
¤
দ্বিতীয় পরীক্ষা এমন ছিল যে ঐ চষা জমিতে জ্যাসনকে ঐ ড্রাগনের দাঁত মাটিতে রোপণ করতে হবে।জ্যাসন দাঁত রোপণ করার সাথেই একদল কন্কাল যোদ্ধা তাঁকে ঘেরাও করে ফেলে।কিন্তু মিডিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী জ্যাসন কন্কাল যোদ্ধাদের ভিড়ের মধ্যে একটি পাথর নিক্ষেপ করেন।কোথা থেকে পাথরটি এসেছে বুঝতে না পেরে কন্কাল যোদ্ধারা নিজেদের মধ্যেই লড়াই শুরু করে এবং শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যায়।এইজন্যই বোধহয় এনিমেতে ক্যাস্টারকে দেখা যায় কন্কালসদৃশ কিছু প্রানীকে নিয়ন্ত্রন করতে।
¤
জ্যাসনের আসল কাজ ছিল ড্রাগনকে যেভাবেই হোক হারিয়ে ফ্লিস দখল করা।এক্ষেত্রেও মিডিয়া সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।এক রাতে জ্যাসন মিডিয়ার প্রস্তুতকৃত একধরনের ঔষধি স্প্রে ড্রাগনের শরীরে ছিটিয়ে দেয়।ফলে ড্রাগন ঘুমিয়ে পড়ে এবং জ্যাসন সহজেই ফ্লিস দখল করতে সক্ষম হন।
¤
জ্যাসন মিডিয়াকে নিয়ে কলচিস হতে পলায়ন করেন।জাহাজ দিয়ে পলায়নের সময় মিডিয়ার ভাই অ্যাপসাইরটাস তাদেরকে তাড়া করে।মিডিয়া অ্যাপসাইরটাসকে হত্যা করে তার দেহকে টুকরো করে সমুদ্রে ফেলে দেয় যাতে ঈটিস তার পুত্রের দেহাবশেষ উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।এই ফাঁকে জ্যাসন এবং মিডিয়া Iolcus এ ফিরে আসেন।পথিমধ্যে অনেক বিচিত্র ঘটনা ঘটে।সেই ঘটনাগুলো এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
¤
Iolcus এ ফিরে আসার পরে জ্যাসন এবং মিডিয়া বিবাহ করেন।তাঁরা পাঁচ ছেলে এবং এক মেয়ের জনক-জননী হয়েছিলেন।কিন্তু কাহিনী এখানেই শেষ নয়।মিডিয়ার বাকী জীবনের বিবরন এই পোস্টে দেওয়া সম্ভব নয়।তাই আপাতত এখানেই সমাপ্তি ঘটাচ্ছি।
¤
এই পোস্টটা আগেরটার চেয়ে অনেক বড়।তাই অনেকেই পড়তে পড়তে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলতে পারেন।যাইহোক,সকল ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
¤
তথ্যসূত্রঃপার্সি জ্যকসনস গ্রীক গডস(বই),উইকিপিডিয়া,গুগলের কতিপয় ওয়েবসাইট।
আবারও কৃতজ্ঞতাঃশাফিউল মুনির ভাই।

Caster Fate Stay

 

চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান – Caster [Fate/Zero] — Shifat Mohiuddin

¤
চরিত্র: Caster
এনিম: ফেইট/জিরো
ভূমিকা: খলনায়ক
¤
আসল নাম: Gilles de Rais
জাতীয়তা: ফ্রেন্ঞ্চ
উপাধি: মার্শাল,ব্যারন,ডিউক অব ব্রিটানি
জন্ম: সেপ্টেম্বর,১৪০৫
মৃত্যু: ২৬ অক্টোবর,১৪৪০
মৃত্যুর ধরন: মৃত্যুদন্ড
¤
আমরা অনেকেই ফেইট জিরো এনিমেতে অদ্ভুত চেহারা এবং খনখনে কন্ঠস্বর বিশিষ্ট চরিত্র ক্যাস্টারের কাজকর্ম দেখে আতঙ্কিত হয়েছি।শিশুহত্যায় পারদর্শি এই চরিত্রটি ইতিহাসের একটি বাস্তব চরিত্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত।যদিও তিনি আরতুরিয়া,ইস্কান্দর এবং গিলগামেশের মত সুপরিচিত নন এবং তার আসল নাম খুব কমই উল্লেখ করা হয়েছে।এনিমেতে তাকে অনেক আন্ডারএস্টিমেট করা হলেও বৈচিত্রের দিক দিয়ে তার জীবন অন্যান্য হিরোয়িক স্পিরিটদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
¤
গিলাস ডি রেইস ছিলেন একাধারে একজন বীর নাইট এবং অত্যন্ত ধনী একজন জমিদার।তিনি তার পিতামহ কর্তৃক লালিত হন এবং তার বিশাল সম্পত্তির মালিক হন।তিনি ছিলেন ফ্রান্সের ব্রিটানি প্রদেশের জমিদার।পরবর্তিতে তিনি বিয়ের মাধ্যমে তার সম্পত্তি আরো বৃদ্ধি করেন।তিনি Anjou এবং Poito প্রদেশের জমিদারিত্বও লাভ করেন।
¤
গিলাস ফেন্ঞ্চ সেনাবাহিনীতে ১৪২৭ থেকে ১৪৩৫ পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে সংগঠিত হওয়া শতবর্ষী যুদ্ধে তিনি জোয়ান অফ আর্কের সাথে যুদ্ধ করেন।যুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদানের জন্য মার্শাল অফ ফ্রান্স উপাধি লাভ করেন।
¤
১৪৩১ সালে যখন জোয়ান অফ আর্ককে খুঁটিতে অগ্নিদগ্দ্ধ করা হয় তখন তিনি সেখানে উপস্হিত ছিলেন না।এই ব্যাপারে মনে হয় গিলাসের মনে অনেক আফসোস ছিল।ফেইট জিরো এনিমেতে জোয়ানের[আরতুরিয়ার]প্রতি তার দুর্বলতা দেখে বিষয়টা বোঝা যায়।
¤
১৪৩৫ সালে গিলাস সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন।তিনি একটি বিলাসবহুল বৃহৎ গির্জা নির্মানে হাত দেন।নির্মানকাজের অর্থ জোগাড়ের জন্য তিনি তার সব সম্পত্তি বিক্রি শুরু করেন।কিন্তু ক্যাথলিক কর্তৃপক্ষ গিলাসের আত্নীয়দের অনুরোধে তার এই গনহারে সম্পত্তি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।এতে গিলাস গির্জা কর্তৃপক্ষের উপর অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন।
¤
১৪৩৮ সালে গিলাস অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য আলকেমি এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন।কথিত আছে তিনি নাকি ব্যারন নামের একটি আত্নাকে নিজের অধীনে আনতে চেয়েছিলেন।
¤
১৪৩২ সালে গিলাসের বিপক্ষে প্রথম শিশুহত্যার অভিযোগ আনা হয়।এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গিলাসের বিপক্ষে ট্রায়াল গঠন করা হয়।ট্রায়ালে গিলাসের বিপক্ষে তিনটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।তার বিরুদ্ধে ১৪০ জন শিশুহত্যার প্রমান পেশ করা হয়।অনেকের মতে নাকি হত্যাকান্ডের সংখ্যা নাকি ৬০০ এর উপরে!হত্যাকান্ডগুলো ১৪৩২ থেকে ১৪৪০ সালের মধ্যে সংগঠিত হয়।১৪৩৭ সালে গিলাসের এক আস্তানা থেকে ৩৭ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।গিলাস তার চাকরদের সাহায্যে গ্রামান্ঞ্চল থেকে তার শিকারদের সংগ্রহ করতেন।তার ভিকটিমদের বয়স ছিলো ছয় থেকে আঠারো বছরের মধ্যে।মূলত ছেলে শিশুরাই তার মূল আকর্ষন ছিল।হত্যাকান্ডগুলোর বর্ননা অত্যন্ত নৃশংস বলে আমি বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছি।যারা ফেইট জিরো দেখেছন তারা বিষয়টি ভালো বুঝতে পারবেন।
¤
গিলাস জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে[পড়ুন রিমান্ডে] তার সকল অপরাধ স্বীকার করেন।তার এক বিশ্বস্ত চাকর হত্যাকান্ডের কৌশল এবং পদ্ধতি বর্ননা করে।গুরুতর অপরাধের সাজা হিসেবে গীর্জা গিলাস এবং তার দুই চাকরকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে।২৬ অক্টোবর,১৪৪০ সালে গিলাস ডি রেইসকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
¤
মজার ব্যাপার যে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে গিলাস নির্দোষ এবং সবকিছুই গীর্জার কারসাজি।সর্বোপরি বলা যায়,গিলাস ডি রেইস ছিলেন একজন জ্বাজল্যমান বীর যোদ্ধা,কিন্তু তিনি পতিত হলেন পাপের অন্ধকার গহ্বরে।
¤
আরেকটা ব্যাপার হলো এত নিষিদ্ধ কাজ করার পরেও গিলাস পুরোপুরি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন।এই ব্যাপারটি ফেইট জিরোতে গিলাসের প্রতি ঈশ্বরের প্রত্যাখানের বিষয়টি ব্যাখা করে।
¤
অনেকে গিলাসকে বিখ্যাত লোককথা ‘Bluebeard’ এর উৎস মনে করে।এজন্যই বোধহয় গিলাস তার মাস্টার রিয়োনসকিকে গিলাসকে ব্লুবিয়ার্ড সম্বোধনে ডাকতে বলে।
¤
পোস্টটা অনেক বড় তাই অনেকে বিরক্ত হবেন।তবে আশা করি সকলেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Fate Zero - Caster

ক্যারেক্টার রিভিউ: গারা [আনিমে – নারুতো] — Goutam Debnath Sagar

Gaara-gaara-of-suna-27045252-1024-768

নামঃ গারা, গারা অফ দা সেন্ড, গারা অফ দা ডেজার্ট।
এনিমেঃ নারুতো

সে এখন বালুর দেশের প্রধানমন্ত্রী (বা ঐ রকমের কিছু :v)। জাপানের ভাষায় কাজেকাগে। তার গাঁয়ের সবাই এখন তার প্রতি নির্ভরশীল, তাকে ভালোবাসে। বারে বারে এখন বলছি কেন? কারন তার অতীত খুব একটা সুখকর ছিল না। চলুন তার জন্ম থেকেই শুরু করি।
তথাকথিত সকল গ্রামের মধ্যে শক্তির সুষম বন্টনের শিকার হয়ে তাকে ‘শুকাকু’ এর জিঞ্ছুরিকি হতে হয়। এটি সম্পন্ন করতে গিয়ে তার মায়ের করুন মৃত্যু হয় আর সে তার ‘গারা'(শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘ a self loving carnage’ মানে যে অসুর শুধু নিজেকে ভালবাসে) নামটি পায়। সবার ঘৃণার জন্যই হোক বা নিজের নামের সার্থক করার জন্যই হোক গারা দিনে দিনে এক অসুরে পরিণত হয়, সে খুনের মধ্যেই তার জীবনের অর্থ খুঁজে পায়।
এখন কথা হচ্ছে নারুতোও তো একজন জিঞ্ছুরিকি, গারা কেন নারুতোর মতো হল না? কারণ নারুতো পেয়েছিল একজন ইরুকা সেন্সেই, একজন কাকাশি সেন্সেই। অপর দিকে গারার একমাত্র আপনজন ছিল ইউশিমুরা (তার মামা) যে নাকি মারা যাওয়ার সময় গারার জীবনকে আরো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। যাইহোক পৃথিবীর সকলকে খুন করার আগেই নারুতোর সাথে চুনিন এক্সামের সময় গারা ‘ভালবাসা’, ‘ব্যাথা’, আবেগ ইত্যাদি বুঝতে সক্ষম হয় এবং দেশ ও দশের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া শুরু করে।
কেন ভালবাসবেনঃ (সম্পুর্ণ নিজস্ব মতামত)
সমস্ত নারুতো সিরিজে গারাকেই একমাত্র ভয় জাগানিয়া (fearfull) ভিলেন লেগেছে।
তার সেইয়ু (সাব ডাব দুইটারই) অসম্ভব সুন্দর কাজ করেছেন।
ওর মত খুব সহজে খুন করার প্রতিভা নারুতোতে খুব কম দেখা গেছে।
তার ট্রেজেডিক জীবন তাকে ভালোলাগার অন্যতম কারন।
সর্বোপরি তার calm nature এনিমে জগতে তাকে অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

শেষ করতে চাই এইটা বলে, কিশিমত সেন্সেই at least ওরে কোন মাইয়ার সাথে জুইড়া দিতে পারতো। গারার সমস্ত জীবন গেল অন্যের জন্য কাজ করতে করতে। T-T

4381168-4379879-gaara-wallpaper-1024