এন্ডলেস এইট আর মেলানকলি অফ ইউকি নাগাতো — Fahim Bin Selim
মিলেনিয়াম একট্রেস ও একটি জাতির পুনর্জন্ম — Fahim Bin Selim
মিকিও নারুসের দৃষ্টিপাত বরং নিকট অতীত আর বর্তমানে – যুদ্ধ-পূর্ববর্তী এক গ্রামীন স্কুল কিংবা যুদ্ধ-শেষে টোকিওর ধ্বংসস্তুপ। যুদ্ধের ভয়াবহতা যে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেশের ভিতরেও চলে এসেছিলো। আকাশে ভেসে বেড়ানো কালো মেঘের ভেতর থেকে বর্ষণ হলো গুলি-বোমা। তা বিদায় নিলে আবার হাজির দূর্ভিক্ষ, বাস্তুহরণ আর বেকারত্ব। আর নিজভূমে থেকেও পরাধীনতার স্বাদ পাওয়া প্রথমবারের মত। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো আমেরিকান সেনারা জানান দেয় সেই নতুন বাস্তবতার। সে সময়টায় চিয়োকো মাথায় জড়ায় হিদেকো তাকামিনের স্কার্ফ। ভাঙ্গা কাঠ আর জঞ্জালের নিচে হাতড়ে ফিরে স্মৃতি আর স্বপ্ন। গলায় তখনো ঝুলতে থাকে সেই আরাধ্য চাবি।
কারণ তবুও তো জীবন থেমে থাকে না। ইয়াসুজিরো ওযু তাই আসন গাড়েন মেঝেতে, ক্যামেরা সাজান এমনভাবে যাতে ধরা পড়ে পুরো ঘর আর তাতে থাকা সব মানুষ। বাইরের সব কোলাহলমুক্ত, অন্তত ব্যক্তিগত এই জায়গা-ই তো শেষ সম্বল। অতীতকে পাশে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রণা দেন। সেৎসুকো হারার হাসি জায়গা নেয় চিয়োকোর ঠোঁটে। নাকি তার পুরোটাই দখল করে নেয়! তাই কি ষাটের দশকের মাঝ থেকে দুজনেই হারিয়ে গেলো লোকচক্ষুর আড়ালে?
সে-ও তো অনেক বছর আগের কথা। সবার স্মৃতিতেই কিছুটা মরচে পড়েছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে কীভাবে! চিয়োকো যে পান করেছে অমরত্বের সুধা। ফিল্মের ফিতা আর গেনিয়ার মুগ্ধতায় চিয়োকোর প্রতিটি সংলাপ আর অভিব্যক্তি টিকে আছে আগের মতই। তাই গেনিয়া হাজির হলো চাবি নিয়ে। ধুলোর আস্তরণ সরিয়ে খুলে বসলো বাক্সটা আবার। চিয়োকো, জাপান, সাতোশি কনের নিজের কিংবা আমাদের স্মৃতির। মুখে-ক্ষতওয়ালা লোকটা এখনো বিদ্যমান; নতুন চরিত্র নিয়ে, নতুন জায়গায় দখলদারিত্ব আর সাম্রাজ্যবিস্তারের সেই পুরনো নাটকের মঞ্চায়ন।
উচিয়াগে হানাবি ও কিছু অসংলগ্ন চিন্তাভাবনা — Shifat Mohiuddin
উচিয়াগে হানাবি ও কিছু অসংলগ্ন চিন্তাভাবনা:
Paradox Paradigm (Kara no Kyoukai, EP 5) [অ্যানালাইসিস] — Amor Asad
গার্ডেন অফ সিনারস দেখতে গিয়ে মনে হলো এটা নিয়ে big pile of shit লিখবো কোন এক সময়, তবে পাঁচ নম্বর এপিসোড Paradox Paradigm বিশেষ নজরে আসায় স্থগিত করতে মন চাইলো না। সিরিজটা দেখে ফেলেছি এবং পুরো সিরিজে এটা সবচেয়ে পছন্দের এপিসোড। কারণ সমেত এটা তাই—মাঝারি pile of shit.
প্রথমত, পুরো সিরিজে এটা সম্পূর্ণ একটা গল্প। এর আগের এপিসোডগুলো একটার সাথে একটা জড়িত মনে হয়েছে, স্বতন্ত্র মনে হয়নি। প্যারাডক্স প্যারাডাইম ওই গল্পগাথার সাথে জড়িত হলেও, একে আলাদা ভাবে দাঁড় করানো যায়। অন্যতম মূল চরিত্র Tomoe-এর পরিচয় পর্ব, মূল গল্পের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা, তাঁর সাথে Shiki-র যোগাযোগ পর্ব এবং একই সময়কালে Tauko এবং Kokutou এর অবস্থান, শিকির উধাও পর্বের সাথে তাঁর কমরেডদের পদক্ষেপ, মূল অ্যান্টাগনিস্টের পরিচয় পর্ব ও পুরো ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা সবকিছু একটা গল্পের নানা অংশ যা অন্য এপিসোডগুলোর উপর নির্ভরশীল না। শিকি হয়তো সিরিজের প্রোটাগনিস্ট কিন্তু এই গল্পের চাবিকাঠি ছিলো Tomoe.
এছাড়া গল্পটা যে চমৎকার, এটা আলাদা করে বলছি না।
মেকার নন-লিনিয়ার স্টোরিটেলিং ব্যবহার করে ভালো কাজ করেছেন। সোজা সাপ্টাভাবে গল্প এগোলে ভালো লাগতো ঠিকই, কিন্তু এখন যেমন মনে হয়েছে, অতটা হয়তো লাগতো না।
দ্বিতীয়ত, মন্টেজ এর সঠিক ব্যবহার। মন্টেজ ফিল্মমেকিং এর একধরনের টেকনিক, যেখানে একাধিক এলোমেলো ছবি যোগ করে কোন অর্থ প্রকাশ করা হয়। যেমন, কারো পা দেখা গেলো, এর পর একটা রোড দেখানো হলো, ক্লোজ শটে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে ধেয়ে আসা দেখানো হলো, আরেকটা শটে দেখান হলো একজন রাস্তায় পড়ে আছে, গায়ে রক্ত। এই এলোমেলো শটগুলো দিয়ে বোঝানো যায় রোড-অ্যাকসিডেন্ট ঘটেছে।
মন্টেজের ব্যবহার অ্যানিমেতে প্রচুর দেখা যায়। বিশেষ করে মাকোতো শিনকাই একদম খামোখা ব্যবহার করেন। স্রেফ একটা বিশেষ আবহ আনতে। এই কাজ অবশ্য Garden of Sinners-এও আছে, হাবিজাবি শট এক করে একটা আবহ আনার চেষ্টা। কিন্তু এর মাঝেও একটা অংশ আছে যখন মন্টেজের ভালো ব্যবহার ছিলো।
Tomoe শিকির ঘরে থাকা শুরু করলো, দিন পার হয়ে যাওয়া বোঝাতে দরজার হ্যান্ডেল ঘোরানো, বেসিনে কাপের পর কাপ আইসক্রিম জমা হওয়া আবার ফাঁকা হওয়া এরকম একগাদা সদৃশ ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে।
এখানে সফলতাটা হচ্ছে, যে সময়ের ভিতর দেখানো হয়েছিলো সেই সময়ে স্রেফ কোন একটা চরিত্রকে দিয়ে বলানো যেত, ‘অনেকদিন পার হয়ে গেছে।’— কিন্তু মন্টেজ দিয়ে আক্ষরিকভাবে সময়পার হবার একটা আপেক্ষিক রূপ দর্শককে দেখানো হচ্ছে। এতগুলো আইসক্রিম খেতে কতদিন সময় লাগতে পারে একটা খসড়া হিসেব হয়ে যায় মনে মনে।
তৃতীয়ত, পয়েন্ট অফ ভিউ শট। প্রথমার্ধের শেষে যখন শিকি বন্দি হলো আরায়া সৌরেন এর দেহরুপী ইমারতে, তার পরের কিছু অংশে সরাসরি শিকি-কে না দেখিয়ে পয়েন্ট অফ ভিউ স্টাইল ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা ফার্স্ট-পার্সন-শুটার গেম এর ভিউ এর মতো। শিকির চোখ এখানে ক্যামেরা, তাঁর চোখে দর্শক দেখছে, কথা শুনছে, কিন্তু তাঁকে দেখতে পাচ্ছে না। প্রথমার্ধের পর শিকিকে না দেখিয়ে কেবল পয়েন্ট অফ ভিউতে দর্শকের মধ্যে এক ধরণের প্রবল কৌতুহল আর টেনশন সৃষ্টি করা হয়। আমি জানি না গল্পের এই পর্যায়ে কাজটা ইন্টেনশনাল ছিলো কিনা, ইনটেনশনাল হলে সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট কাজ।
চতুর্থত, ম্যাচ কাট। প্রথমার্ধে বেশ কটা ম্যাচ কাট ছিলো, বিশেষ করে আপাত মূল চরিত্র Tomoe-কে নিয়ে। ম্যাচ কাট বিশেষ ধরণের সিন-ট্রানজিশন, যেখানে একটা দৃশ্যপটের সাথে ভিন্ন আরেকটা দৃশ্যের মিল করা হয় পারিপার্শ্বিকতা মিল করে। এই কাজটা সুচারুরূপে অ্যানিমেতে প্রথম এবং শেষ যাকে করতে দেখেছি, তিনি ক্ষণজন্মা মাস্টারমাইন্ড, সাতোশি কন। ম্যাচ কাট নিয়মিত ব্যবহার করে অনেকেই, কিন্তু স্টাইলিস্ট সিন ট্রানজিশন এর উপায় হিসেবে খুব কমই করে। প্যারাডক্স প্যারাডাইমের কয়েকটা অংশ হুট করে কন-এর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলো।
এটা অবশ্য অ্যানিমের পক্ষে খুব শক্তিশালী কোন প্রমাণ নাও হতে পারে, হতে পারে কেবলই কনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে অযথাই মেলাচ্ছি।
যাই হোক, কেবল এই এপিসোডের জন্যে আমার রেটিং ৯/১০
ভালো থাকুন, ভালো অ্যানিমে দেখুন।
Devilman: Crybaby-এর সবচাইতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলির একটি, Baton Passing দৃশ্যের ব্যাখ্যা — Tahsin Faruque Aninda
[Spoiler Warning: যেহেতু আনিমের সবচাইতে বড় স্পয়লারের একটি এটি, তাই আনিমে শেষ করে লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইলো।]
আনিমেটির একদম শেষ পর্বে আর্মাগেডন ধরণের এক বড় ফাইট দেখতে পাই আমরা। স্যাটান আর ডেভিলদের দলের বিপক্ষে আকিরা আর ডেভিলম্যানের দল। এই বড় ফাইটের মাঝখানে খুব আর্টিস্টিকভাবে একটি দৃশ্য যোগ করা হয়েছেঃ ব্যাটোন পাস করার দৃশ্য। হঠাৎ এরকম ফাইটের সময়ে মিকি, মিকো, আকিরা আর রিয়োর মধ্যে ব্যাটোন পাস করার দৃশ্যের মানে কী!? এই শেষ ফাইটগুলিতে তো আকিরা বাদে বাকি কেউ ছিলও না, তাহলে? আসলে, এই দৃশ্যটার একটা বেশ বড় অর্থ রয়েছে।
আনিমেটির মূল থিম কী, জানেন?
ভালবাসা।
হ্যাঁ, আকিরার ডেভিলম্যান হয়ে ডেভিলদের সাথে মারামারি, তারপর কাহিনী এক দিক থেকে গড়াতে গড়াতে আরেকদিকে চলে যাওয়া, এত সবকিছু মূলে আসলে একটি মূল ব্যাপার ছিল, তা হল – ভালবাসা। কীভাবে, বুঝতে পারছেন না? চিন্তা নেই, সেটি বুঝানোই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।
আর হ্যাঁ, আনিমের মূল থিম ভালবাসা – এইটা আমার নিজের বানানো কথা না। মূল গল্পের মাঙ্গাকা আর ডিরেক্টর দুইজনেই এই কথা বলেছে। আমার পোস্টের উদ্দেশ্য সেটা সবার জন্যে সোজা ভাষায় তুলে ধরা।
মিকো ব্যাটোনটা মিকিকে পাস করে, মিকি সেটা আকিরাকে পাস করে, আকিরা সেটা রিয়োকে দিতে যায়, কিন্তু রিয়ো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বা একদম ইগ্নোর করে। ব্যাটোন আর পাস করা হয় না। বেশ অনেকবার এই দৃশ্যটি দেখি আমরা, তাও এমন সময়ে যখন আকিরা আর স্যাটান মারামারি করতে থাকে, দুনিয়া ধ্বংস হতে থাকে। হঠাৎ এরকম মুহুর্তে ব্যাটোন পাস করা কেন? আসলে ব্যাটোন পাস – এই আইডিয়াটা পুরা সিরিজ জুড়েই ছিল কিন্তু। যেমন এই দৃশ্যেও একবার দেখতে পাই আমরাঃ
এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। মিকোকে দিয়েই শুরু করা যাক।
৯ম পর্বের এক পর্যায়ে মিকো তার ভালবাসার কথা মিকিকে বলতে পারে অবশেষে, যার কিছুক্ষণের পরেই মিকো মারা যায়। মিকো তাই মিকিকে ভালবাসার ব্যাটোন পাস করে দিল। শেষ পর্বের ব্যাটোন পাসের সিরিয়ালে প্রথমেই তাই দেখতে পাই মিকো মিকিকে ব্যাটনটা দিল।
এরপর ৯ম পর্বের শেষে মিকি মারা যাবার আগে আকিরার প্রতি তার আস্থা আর ভালবাসা পৌঁছে দেয়। মৃত্যুর মুহুর্তে কল্পনার দৃশ্যে সেটা দেখতে পায় সেই ব্যাপারটা। আকিরা শেষ মুহুর্তে হলেও তাকে বাঁচাবে, সেই বিশ্বাস মিকির ছিল, এমনকি মারা যাবার সময়েও আকিরার প্রতি তার টান বুঝা যায়। মিকি আর অন্য সবার ছিন্নবিচ্ছিন্ন মৃতদেহ দেখে আকিরার কষ্ট পাওয়াটা খুবই ইমোশনাল এক দৃশ্য ছিল। মিকো আর মিকি, ছোটকালের দুই বন্ধুর পৌঁছে দেওয়া ভালবাসা আর তাদের করুণ মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেল। ব্যাটোন পাসের সিরিয়ালে দ্বিতীয় ক্রমে মিকোর পৌঁছে দেওয়া ব্যাটোন মিকির হাত থেকে আকিরার কাছে চলে যায় এ জন্যে।
শেষ যুদ্ধে আকিরা রিয়োর প্রতি এতদিনের ভালবাসা আর ঘৃণার এক অদ্ভুত মিশ্রণে পড়ে সব অনুভূতি একের পর এক ঘুষির আকারে পৌঁছে দেয়। রিয়োর বিট্রে করা আকিরা মন থেকে মেনে নিতে পারে নি — শুধু এই কারণে না যে পৃথিবীর এই অবস্থা হয়েছে বলে। বরং তার সবচাইতে কাছের বন্ধু তাকে বিট্রে করেছে। সেই দুঃখ তো আছেই, আর রয়েছে আকিরার সব চেনাজানা মানুষ, এবং পুরা পৃথিবীরই করুণ পরিণতি!
ঐ সময়ে প্রত্যেকটা ঘুষির সময়ে ব্যাটোন পাস দেখানো হয়। স্যাটানকে একটা করে ঘুষি মারে, আর পরের দৃশ্যেই আকিরা রিয়োকে ব্যাটোন পাস করার চেষ্টা করে। স্যাটান ফিরতি আঘাত দেয়, আর রিয়ো সেই ব্যাটোন ফেলে দেয়। মানুষদের প্রতি আকিরার ভালবাসা জিনিসটা রিয়ো ঠিকমত বুঝে না, তাই বারবার আকিরার পাস করা ব্যাটোন রিয়োর কাছে পৌছার আগেই নিচে পড়ে যায়।
যুদ্ধের শেষে আকিরার মৃত্যু হয়, আর তখন রিয়ো বুঝতে পারে তার ভুলটা। গড কেন ডিমনদের ধ্বংস করবে এই রাগের কারণে স্যাটান নিজেই যে মানুষদের ধ্বংস করতে গিয়ে হিপোক্রিসি করলো সেটা সব মানুষ আর আকিরা মারা যাবার পর বুঝতে পারলো। আর আকিরাকে হারানোর পর বুঝতে পারে আকিরার প্রতি তার ভালবাসার ব্যাপারটা। বুঝতে পারে কত বড় ভুল হয়েছে। আকিরার পাস করা ব্যাটোন অবশেষে রিয়োর কাছে পৌঁছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক, অনেক দেরী হয়ে যায়! একমাত্র কাছের বন্ধু, একমাত্র ভালবাসার মানুষটাকে নিজ হাতে মেরে ফেলে স্যাটান নিজেই পরাজিত হয়ে যায়।
মিকোর সেই এগিয়ে দেওয়া ভালবাসার ব্যাটোন মিকির হাত ধরে আকিরার কাছ হয়ে রিয়োর হাতে পৌঁছে যায় অবশেষে। আর সেই সাথে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়।
Fate Series Character Origin: Gilles de Montmorency Laval — Safayet Zafar
Full Name: Gilles de Montmorency Laval
Born: prob. c. September at France
Social standing: c (baron)
এই সেই ফেট জিরোর Gille de rais . Caster class, was a servant of Ryonnosuke
এই ব্যক্তি ছিলেন ফ্রান্সের একজন নোবেল ম্যান। ফান্সের ব্রিটানি (ফ্রান্সের উত্তর পূর্বে অবস্থিত) মিলিটারির সদস্য ছিলেন ১৫ শতাব্দীতে। তার ভাগ্য ছিল অনেক সু প্রসন্ন। তার জমা করা মোট সম্পত্তি এতোই বেশি ছিল তা ব্রিটানির ডিউকের মোট সম্পত্তিকে ছাড়িয়ে যায়। Hundred Years war এ তিনি অকল্পনীয় সাফল্য লাভ করেন যার কারণে তাকে মার্শাল অফ ফ্রান্স উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৪৩৪/১৪৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিলিটারি থেকে অবসর নেন এবং তার জমা করা সম্পদ বিপুল ভাবে খরচ করতে থাকেন। ১৪৩২ খ্রিষ্টাব্দে তার উপর সিরিয়াল কিলিং এর অভিযোগ আনা হয় যা ছিল ১০০ এর উপর বাচ্চা হত্যার।
এর পর পর ই এক পাদ্রীর সাথে ভয়ংকর ঝগড়া হবার পর অভিযোগের তদন্ত যাযকীয় তন্দন্তে রূপ নেয় এবং ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে তার অপরাধ সবার সামনে এসে পড়ে। তার বিচার কার্যে তিনি নিজের মুখে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া বাচ্চাদের পরিবারের সামনে নিজের দোষ শিকার করেন।
তিনি ১ম হত্যা করেন জেউডন নামের ১২ বছর বয়সী এক ছেলেকে ( ১৪৩২-১৪৩৩) খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। এই জেউডন ছিল পশম প্রস্তুত কারী Gulliaume Hilairet এর সহকারী।
Gille de rais এর খালাতো ভাই Gilles de sille এবং Roge de Briqueville. সেই পশম প্রস্তুতকারী কে বলে জেউডেন কে নিয়ে যায় Machecoul এ একটি বার্তা পাঠাতে। যা ছিল পুরোই একটি মিথ্যা কথা এবং সেই বালক টি আর ফিরে আসেনি। তারা পরে অপহরনের কথা বলে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়।
Gilles de rais এর ১৯৭১ নং বায়োগ্রাফিতে Jean Benedetti বলেছেন যে বালকটি কিভাবে gille এর হাতে পড়ে ও মারা যায়।
“[The boy] was pampered and dressed in better clothes than he had ever known. The evening began with a large meal and heavy drinking, particularly hippocras, which acted as a stimulant. The boy was then taken to an upper room to which only Gilles and his immediate circle were admitted. There he was confronted with the true nature of his situation. The shock thus produced on the boy was an initial source of pleasure for Gilles.”
Gilles de rais এর দেহ ভৃত্য poitou যিনিও এসব নির্মম হত্যাকান্ডে সহায়তা করতেন তিনি স্বীকার করেছেন যে Gilles ১ম এ বাচ্চা দের কে উলঙ্গ করতো। তারপর তাদের একটি হুকের সাথে বেধে ঝুলিয়ে দিতো এবং তাদের গায়ের উপর বীর্যপাত করতো। এরপর তাদের আশস্ত করা হতো এই বলে যে সে তাদের সাথে কিছুক্ষণ খেলতে চায়। এরপর পরইর তাদের হত্যা করা হতো।
আর যেসব বাচ্চাদের Gilles এর পছন্দ হতো তাদের সে সোডোমাইজ (sodomize = kind of. sexually abuse like oral or anal sex).
সবশেষে তাদের পেট চিরে ফেলে তাদের ভিতরের অঙ্গপ্রতঙ্গ গুলো দেখতেন Gille, তাদের চুমু খেতেন ও পেটের উপর বসে মৃত্যুযন্ত্রনা দেখতেন। শেষে মৃতদেহ গুলো তার রুমের ফায়ার প্লেসে পুড়িয়ে ফেলা হতো।
সকল দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ফাসির আদেশ দেওয়া হয় এবং ২৬ অক্টোবর, ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে ৩৫ বছর বয়সে মারা যান। তাকে Church of the monastrey of Notre Dame des carmes যা Nantes এ অবস্থিত, সেখানে দাফন করা হয়। ধারণা করা হয় তার হাতে মারা যাওয়া বাচ্চার সংখ্যা ১৪০ জন।
চরিত্র বিশ্লেষন এবং উৎস অনুসন্ধান -৫ – Atlanta [Fate/Apocrypha] — Shifat Mohiuddin
চরিত্র: আটলান্টা/Atlanta
উপাধি: আর্চার অফ রেড
এনিমে: Fate/Apocrypha
ভূমিকা: মধ্যমপন্থী
জাতীয়তা: গ্রীক
জন্ম ও মৃত্যু: জানা যায় নি
মৃত্যুর ধরণ: জানা যায় নি
ছোটবেলা হয়তো আমরা অনেকেই এমন একটা গল্প পড়েছি যে, একবার এক রাজকন্যা বিয়ের সময় শর্ত জুড়ে দেন যে তাকে বিয়ে করতে চাইলে তার সাথে পাণিপ্রার্থীকে একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। জিততে পারলে রাজকন্যা মিলবে, হেরে গেলে প্রতিযোগীর শিরশ্ছেদ করা হবে। অনেক জায়গা থেকে বড়বড় বীরগণ ভিড় করলেও কাটা মাথার সংখ্যা বাড়তেই থাকে ক্রমান্বয়ে কারণ রাজকন্যা অত্যন্ত দ্রুতগতির ছিলেন। অবশেষে এক প্রতিযোগী রেসের মধ্যে একটা করে সোনার আপেল নিক্ষেপ করেন রাজকন্যাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। স্বর্ণের আপেল জিনিসটা অনেক চিত্তাকর্ষক হওয়ায় রাজকন্যা ঝুঁকে দেখতে গেলে এই সুযোগে ঐ প্রতিযোগী রেস জিতে যান এবং ঐ রাজকন্যার স্বামী হবার সুযোগ লাভ করেন। আজকে Fate/Apocrypha এর চার নম্বর এপিসোড দেখার সময় এই কাহিনীর কথা মনে পড়ে গেল। হ্যাঁ, রেড সেকশনের আর্চার আটলান্টাই ছিলেন সেই রাজকন্যা। জটিলতা এড়ানোর জন্য রূপকথার বইয়ে কঠিন কঠিন গ্রীক নাম দেওয়া হত না আরকি। প্রায় দুই বছর আগে আমি ফেইট সিরিজের কতিপয় চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে ধারাবাহিক কিছু লেখা লিখেছিলাম। মধ্যে হুট করে লেখার আগ্রহ চলে যায়। আজ আবার হুট করে কীবোর্ডের গায়ে কিছু আগাছা জন্মানোর ইচ্ছা হল।
আটলান্টার পিতৃপরিচয় নিয়ে বিশেষ কিছু জানা যায় না। রাজা Iasus এর ঘরে তার জন্ম এই ধারণাটাই বেশি জনপ্রিয়। আটলান্টাকে জন্মের পরপরই মারাত্মক প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার পিতা পুত্র সন্তানের আশা করেছিলেন, আটলান্টাকে দেখে তিনি আশাহত হন। কন্যাসন্তান পালনের ইচ্ছা না থাকায় তিনি আটলান্টাকে জঙ্গলে রেখে আসেন। একটি বন্য ভাল্লুক আটলান্টাকে প্রতিপালন করে। (এইসব ঘটনা গ্রীক পুরাণে নিত্যনৈমিত্তিক!) বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে আটলান্টা শিকারিদের সাথে মেশা শুরু করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করে অন্য সবার থেকে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেন। সভ্য সমাজের সাথে না চলা নিয়ে আটলান্টার মনে কোন দুঃখ ছিল না। আটলান্টা দেবী আর্টিমেসের অনুসারী হয়ে কুমারীব্রত গ্রহণ করেন। নিজের নারীত্ব নিয়ে তার মনে বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা ছিল না এবং জীবনযাত্রায় পুরুষকে তিনি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। তাছাড়া তার বিয়ে নিয়ে অমঙ্গলজনক ভবিষ্যৎবাণী ছিল।
আটলান্টার বীরত্বের প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় ‘ক্যালিডোনিয়ার বন্য শূকর’ শিকারের সময়। ঠিকমত পূজা না করায় দেবী আর্টেমিস ক্যালিডোনিয়া রাজ্যে একটা বন্য শূকর পাঠান সেখানের মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য। ক্যালিডোনিয়ার রাজপুত্র মেলিয়েগারের নেতৃত্বে একদল শিকারি প্রস্তুত হয় শিকারের জন্য। আটলান্টা এই শিকারি দলে যোগ দিতে চাইলে নারী হওয়ার কারণে অনেকেই এর বিরোধিতা করে। মেলিয়েগার বিবাহিত হওয়ার পরও আটলান্টার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তার চাপাচাপিতেই আটলান্টাকে দলে নিতে সবাই রাজী হয়। আটলান্টার ছোঁড়া তীরই সর্বপ্রথম শূকরটার গায়ে আঘাত হানতে সমর্থ হয়। অবশেষে মেলিয়েগার তার বর্শা দিয়ে শূকরটাকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে মেলিয়েগার প্রথম আঘাতের কৃতিত্বস্বরূপ আটলান্টাকে শূকরের ছাল উপহার দিতে চাইলে মেলিয়েগারের মামারা এর বিরোধীতা করে। তারা আটলান্টার কাছ থেকে পুরষ্কার কেড়ে নিতে চাইলে মেলিয়েগার রেগেমেগে তার দুই মামাকে হত্যা করেন। ভাতৃদ্বয়ের মৃত্যুর কারণে রাগে অন্ধ হয়ে তাই মেলিয়েগারের মা আলথিয়া একটি জাদুর কাষ্ঠখণ্ডকে আগুনে নিক্ষেপ করে যাতে মেলিয়েগারের জীবনীশক্তি অবস্থান করছিল। ফলে মেলিয়েগার মারা যান এবং কিছুক্ষণ পরে জঙ্গল থেকে আরেকটা বন্য শূকর এসে আলথিয়াকে হত্যা করে।
¤
আটলান্টা কলচিস (Fate/stay night এর ক্যাস্টার মিডিয়ার রাজ্য) অভিযানে যেতে চাইলেও জ্যাসন (মিডিয়ার স্বামী) তাতে রাজী হন নি। কারণ হিসেবে আবারও সেই নারী হয়ে জন্ম নেওয়াটাকেই দাঁড়া করানো হয়। তবে কলচিস অভিযান নিয়ে তৈরি হওয়া একাধিক কাহিনীর একটি অনুযায়ী আটলান্টা অভিযানে ঠিকই যোগ দিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধে আহতও হন এবং কথিত আছে যে মিডিয়া তাকে সেবাশুশ্রূষা দিয়ে সারিয়ে তোলেন।
(ফেইট সিরিজ বড়ই বিশাল ব্যাকগ্রাউন্ডওয়ালা একটা সিরিজ। অনেককিছুর সাথেই অনেককিছুর কানেকশান পাওয়া যায়!)
¤
আটলান্টাকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে কাহিনী সেটা হল রূপকথার সেই দৌড় প্রতিযোগিতার গল্প। ক্যালিডোনিয়ার শূকর শিকারের পর আটলান্টার বাবা নিজের মেয়েকে স্বীকৃতি দেন। তিনি নিজের মেয়েকে রাজ্যে ফিরিয়ে নেন এবং বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সরাসরি বিরোধিতা করা বোকামি হবে ভেবে আটলান্টা শর্ত জুড়ে দেন যে তাকে রেসে পরাজিত করতে পারলেই বিয়ের অনুমতি মিলবে। আটলান্টা তার সময়ের সর্বাধিক গতি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন তাই তার কুমারীত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। কথিত আছে যে, আটলান্টা নানাভাবে তার প্রতিযোগীদের সুযোগ করে দিতেন। যেমন: বর্ম পরিধান করে অংশগ্রহণ অথবা প্রতিযোগীকে অর্ধেক পথ এগিয়ে দেওয়ার পর দৌড় দেওয়া। এরপরও কেউই তাকে পরাজিত করতে পারছিল না। তখনই দৃশ্যপটে আসেন মেলানিওন। (হিপ্পোমেনেস নামেও পরিচিত) মেলানিওন আটলান্টাকে ভালবাসতেন। তাই তিনি ভালবাসার দেবী আফ্রোদিতির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। আফ্রোদিতি প্রেমিকদের প্রতি দয়াশীল হওয়ায় মেলানিওনকে তিনটি সোনার আপেল দেন আটলান্টাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। নির্দিষ্ট সময়ে রেস শুরু হওয়ার পর আটলান্টা কিছুক্ষণের মধ্যেই মেলানিওনকে পেরিয়ে যান। তখনই মেলানিওন প্রথম আপেলটি নিক্ষেপ করেন। সোনার সেই আপেল দেখতে এতই চিত্তাকর্ষক ছিল যে আটলান্টা সেটা তুলে নিতে গিয়ে দেখেন যে মেলানিওন তাকে পেরিয়ে গেছে। তারপরও আটলান্টা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন রেসে জয়লাভ করার ব্যাপারে। এবং এর প্রমাণ দেন তিনি আবারও মেলানিওনকে পেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। তখনই মেলানিওন দ্বিতীয় আপেলটি নিক্ষেপ করেন। আত্মবিশ্বাসী আটলান্টা আবারও সেই আপেলটি কুড়িয়ে নেন। লক্ষ্যসীমার নিকটবর্তী হওয়ার পর যখন আটলান্টা মেলানিওনকে আবার পেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মেলানিওন শেষ আপেলটি নিক্ষেপ করে আটলান্টাকে বিভ্রান্ত করে দেন এবং রেসে জয়লাভ করে আটলান্টাকে জিতে নেন।
কুমারীব্রত ভেঙ্গে গেলেও আটলান্টা এবং মেলানিওনের সংসার ঠিকমতই চলছিল। আনন্দের স্রোতে ভাসতে ভাসতে মেলানিওন আফ্রোদিতির প্রতি তার দায়বদ্ধতা ভুলে যান। তাই রাগান্বিত হয়ে আফ্রোদিতি সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন। একবার জিউসের মন্দিরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার আফ্রোদিতি দম্পতির মাথায় নিষিদ্ধ কিছু করার প্ররোচনা ঢুকিয়ে দেন। ফলে মেলানিওন আটলান্টাকে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে তারা মিলিত হন। মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ায় জিউস ক্ষুদ্ধ হয়ে মেলানিওন ও আটলান্টাকে সিংহ বানিয়ে দেন। গ্রীকদের ধারণা অনুযায়ী ব্যাপারটা অত্যন্ত কাব্যিক এবং ট্র্যাজিক ছিল কারণ তারা বিশ্বাস করতো সিংহরা নিজেদের মাঝে প্রজনন করতে পারে না, তারা মনে করতো সিংহরা শুধুমাত্র চিতাদের সাথে প্রজনন করে। ফলে মেলানিওন এবং আটলান্টা চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে যান।
(প্রথমে আটলান্টার বিড়ালের মত কান আর লেজ দেখে অবাক হয়েছিলাম। এখন ব্যাপারটা খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। সিংহী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার কারণে হয়তো সামনিংয়ে এর প্রভাব পড়েছে। নভেল পড়ি নি তাই জানি না সামনে এই ব্যাপারে কিছু বলা হবে কিনা। তবে টাইপ-মুনের প্রশংসা করতেই হবে, মিথের অনুসরণ আর ওয়াইফু চার্মের কাজ দুটোই একসাথে হয়ে গেল।
অ্যাকিলিসের আটলান্টাকে বড় বোন ডাকার ব্যাপারটা একটু ধোয়াটে লেগেছিল। এই ব্যাপারের সাথে একটা ঘটনার সংযোগ ঘটানো যায়। একবার এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অ্যাকিলিসের বাবা পেলেয়ুসের সাথে আটলান্টার একটা কুস্তি ম্যাচ হয়েছিল। ম্যাচে আটলান্টা জয়লাভ করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। হয়তো অ্যাকিলিস এই ঘটনার কথা জানতো। তবে আন্টি না ডেকে সিস ডাকার ব্যাপারটা এখনো পরিষ্কার হচ্ছে না।
আটলান্টা এক সন্তানের মা হয়েছিলেন। তবে সেই সন্তানের বাবা মেলানিওন নাকি মেলিয়েগার তা নিয়ে মতভেদ আছে। সেই সন্তান, পার্থেনোপাসকে নিয়েও অনেক বীরত্বের কাহিনী প্রচলিত আছে।
সোর্স: উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, greekmythology.com
সাকুরা কি আসলেই ইউজলেস? নাকি সব আমাদের পার্স্পেক্টিভের ব্যাপার? — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য
নারুতো ভক্তদের অন্যতম বড় এক দাবী, সাকুরা চরিত্রটি অসম্ভব রকমের ইউজলেস, সোজা ভাষায় একদমই অকার্যকর। এক সাকুরা না থাকলেই নারুতো আর সাসকের জার্নি অনেক সহজ হয়ে যেত, গল্প অনেক গতি পেত, তাদের জীবন অনেক সহজ হত ইত্যাদি কত কথা! আসলে ব্যাপারটা কি সেটাই? নাকি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন এক জায়গায় এমন গোলযোগ বেঁধে গিয়েছে যার কারণে এরপর থেকে সাকুরা যা কিছুই করুক না কেন, চরিত্রটা আমাদের চোখে একদম অকার্যকর? আজকে এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করতে চাই।
প্রথমেই আমরা আগে দেখি একদম অল্প বয়সে সিরিজের শুরুর দিকে যখন আমাদের গল্পের নায়ক-নায়িকাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তখন একেকজনের ব্যাকগ্রাউন্ড কীরকম। নাইন টেইল ফক্সের ঘটনার কারণে বিখ্যাত/কুখ্যাত হওয়া ছাড়াও নারুতোর বাবা ছিল চতুর্থ হোকাগে, মা তার সময়ের অন্যতম শক্তিশালী কুনোইচি, এবং নাইন টেইল ফক্সের জিঞ্চুরিকি। বিখ্যাত উচিহা পরিবারের অন্যতম সদস্য সাসকে। টিম ১০-এর ইনো, শিকামারু ও চৌজি তিন জনেই কোনোহার তিন বিখ্যাত পরিবারের সদস্য, যাদের অনন্য ক্ষমতা ও এদের প্রয়োগ এই তিন পরিবারকেই বানিয়েছে তাদের গ্রামের ভয়ংকর সব নিঞ্জা। টিম ৮-এর হিনাতা বিখ্যাত হিউগা পরিবারের সদস্য, তার বিয়াকুগান রয়েছে যাকে গল্পের শুরুর দিকের সবচাইতে শক্তিশালী চোখ সম্পর্কিত ক্ষমতা বলে ধরে নেওয়া হয়। শিনো হল পোকামাকড়ের উপর ক্ষমতাধরী অন্যতম ভীতিকর বংশ আবুরামে-এর সদস্য, আর কিবা হল ইনাজুকা পরিবারের সদস্য, যারা কুকুরদের নিঞ্জা হিসাবে কাজে লাগানোর জন্যে বিখ্যাত। টিম গাই-এর নেজি আরেক বিখ্যাত বিয়াকুগান ব্যবহারকারী, তেনতেন তার বিভিন্ন রকমের নিঞ্জা টুলস ব্যবহার করার জন্যে জনপ্রিয়, এবং রক লি তার ভয়াবহ তাইজুতসুর জন্যে সবার মনে জায়গা করে নেবার মত এক চরিত্র। সেই তুলনায় বাকি থাকা সাকুরার পরিচয় কী? সাকুরার একমাত্র পরিচয় সে সাসকে-কে ভালবাসে। তার বাবা-মাও বিখ্যাত কোন নিঞ্জা নয়, এমনকি সাকুরার বাবা-মায়ের ব্যাপারে পরবর্তীতে আমরা যখন জানতে পারি, ততদিনে শিপুদেনের ৩৫০ পর্ব অতিক্রম করে ফেলে, এবং যেই পর্বে জানতে পারি সেটাই ফিলার পর্ব। অর্থাৎ প্রথম পরিচয়েই সাকুরাকে আমরা কিউট একটা মেয়ে ছাড়া আর বিশেষ কোন কারণে মনে রাখতে পারছি না। প্রথম ইম্প্রেশনেই সাকুরা তাই নিজেকে মেলে ধরার মত কিছুই পায় নি গল্পের নির্মাতার কাছ থেকে।
ল্যান্ড অভ স্টিল আর্কে, অর্থাৎ জাবুজার আর্কে কাকাশি, সাসকে আর নারুতো পুরা স্পটলাইট কেড়ে নেয়। সাকুরার সেখানে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেও না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারে অন্যদের তুলনায় সে কতটা পিছনে। এরপরে চুনিন আর্কে পুরা গল্পজুড়ে সাকুরার একমাত্র বলার মত ঘটনা ছিল সাউন্ড ভিলেজের নিঞ্জাদের সাথে মারামারির এক পর্যায়ে নিজের চুল কেটে ফেলা, যেন তাকে ধরে রেখে সাকুরার বন্ধুদের পথে বাঁধা হতে না পারে। বলে রাখা দরকার, এই পর্যায়ে এসে আমরা প্রায় সব অল্পবয়স্ক নিঞ্জাদের প্রত্যেকেরই ক্ষমতার ভাল ব্যবহার দেখেছি। নারুতোর সাসকে-কে বাঁচানো কিংবা তার বিস্ময় জাগানো ট্যাকটিক্স আর সাসকের কাধের সেই সিলের ক্ষমতা, টিম ৭-এর অন্য দুইজনই এরই মধ্যে গল্পের প্রধান চরিত্র হিসাবে দাবী করার মত অনেক কিছু দেখিয়ে ফেলেছে। চুনিন পরীক্ষার ফাইনাল স্টেজ শুরু আগে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে সাকুরা আর ইনোর মারামারির সময়ে আরেকটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠে, এই দুইজন আসলে এখনও চুনিন হবার উপযুক্ত নয়। অন্যরা সবাই নিজেদের প্রমাণ করে ফেলেছে, এমনকি যারা পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারে নি তারাও।
পরবর্তী বড় ৩টা আর্কে সাকুরার বলার মত কোন কার্যকরী ভূমিকাই ছিল না আসলে। কোনোহা ছেড়ে দিয়ে সাসকে ওরোচিমারুর উদ্দেশ্যে চলে যায়, আর তাকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে নারুতোর কাছে মিনতি করা, যার ফলে নারুতোও জিরাইয়ার সাথে গ্রামের বাইরে চলে যায় ট্রেনিং করা – এতটুকুই ছিল সাকুরার প্রথম দিকের ভূমিকা।
গল্পের প্রথম টাইম জাম্প হবার আগ পর্যন্ত তাই সাকুরা সত্যিকার অর্থে তার সমসাময়িক অন্যান্য নিঞ্জার তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল এটা ঠিক। সে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও দেখতে পারে অন্যরা তার চাইতে যোজনে যোজনে এগিয়ে। অন্যরা যেখানে সবাই নিজেদের পরিবারের বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে, কিংবা রক লির মত নিঞ্জারা যেখানে নিজেদের একমাত্র ক্ষমতাকে শাণিত করে নিজেদের প্রমাণ দিয়ে যেতে পেরেছে, সাকুরা সেখানে পিছিয়ে গিয়েছে স্বকীয় কোন কিছু না থাকার কারণে। আমরা নারুতোর উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, ছেলেটার কিছুই ছিল না, সবার ঘৃণার পাত্র থেকে শুরু করে পুরা পৃথিবীর নায়ক হয়ে গিয়েছে, সেখানে কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবো কথাটা শুরু থেকেই ভুল। নারুতো উজুমাকির বংশধর, তার মধ্যে রয়েছে নাইন টেইলসের চাকরা। তাই কেউ যদি শুরু থেকে অভাগা হয়ে থাকে, সেটা সাকুরা। হ্যাঁ, সাকুরা অন্যদের তুলনায় বেশ সুন্দর আর চমৎকার একটা জীবন পাড়ি দিয়ে এসেছে নিঞ্জা হবার আগে, কিন্তু সুপার পাওয়ারের এই যুগে তার বলার মত কোন কিছুই ছিল না যে অন্যদের মধ্য থেকে আলাদা হয়ে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। ছিল শুধু অনেক জ্ঞান, আর প্রবল মনোবল, যার কারণে মাইন্ড কন্ট্রোল ক্ষমতা থাকবার পরেও ইনো সাকুরাকে চুনিন পরীক্ষার অফিসিয়াল ম্যাচে হারাতে পারে নি। গল্পের প্রথম অংশে তাই সাকুরা আসলে ইউজলেস ছিল না, সাকুরার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য সে তার নিঞ্জা জীবন শুরু করেছে সব জিনিয়াসদের মধ্য থেকে।
টিম ৭-এর অন্য দুজন কোনোহার বাইরে থাকাকালীন সাকুরা একটা কঠিন সিদ্ধান্তে আসে, আর তা হল, অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তাকে খুব বিশেষ কিছু করে উঠতে হবে। ৩ লেজেন্ডারি সানিনের অন্যতম সুনাদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে। টাইম জাম্পটা শেষ হবার পর যখন আমরা নারুতোকে কোনোহাতে ফেরত আসতে দেখি, তখন সাকুরা কিন্তু সুনাদের সেরা শিষ্য হয়ে উঠেছে। জিরাইয়া নিজে থেকে বলে উঠেছে যে সাকুরা সেই মুহুর্তে সুনাদের যোগ্য শিষ্য হয়ে উঠেছে, এমন একজন যাকে রাগানো ঠিক হবে না।
এখন একটা জিনিস পাঠকদের জিজ্ঞেস করতে চাই। আমরা কি এই মুহুর্তে সাকুরার ক্ষমতাটুকু বুঝতে পারছি? যদি বুঝে উঠতে না পারি, তবে আসুন দেখি সাকুরা এই মুহুর্তে কোন উচ্চতায় আছেঃ
* গল্পের এরকম সময়ে ৩ সানিনের তিনজনই নিজেদের সেরা ছাত্র-ছাত্রীকে পেয়ে গিয়েছে। ওরোচিমারুকে প্রায় অনেক দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সাসকে, যদিও তার বড় ভূমিকা রাখে সাসকের শারিঙ্গানের ক্ষমতা। জিরাইয়ার শিখানো পথে এসে তাকে পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবার আশা দেখাচ্ছে নারুতো, কিন্তু শিখবার আছে অনেক কিছু। আর সুনাদে, যে কিনা নিঞ্জা দুনিয়ার সেই মুহুর্তের সেরা মেডিকাল নিঞ্জাই শুধু নয়, বরং শারীরিক ক্ষমতার দিক থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী নিঞ্জাদের একজন, তাকে কিনা সাকুরা প্রায় ধরে ফেলেছে! সেটাই নয়, অন্য দুই বড় সানিনের কাছে শিক্ষানবিস থাকা নারুতো-সাসকে যখন দর্শকদের কাছে ভয়াবহ ক্ষমতাধর বলে পরিচিতি পায়, সেখানে সুনাদের এই ছাত্রীকে সেই মুহুর্তে ধরে নেওয়া হত যেকোনদিনে সুনাদেক ছাড়িয়ে যাবে!!! হ্যাঁ, সেই অভাগা সাকুরা যে কিনা বংশানুক্রমে কোন বিশেষ ক্ষমতা পায় নি, সেই সাকুরা যে কিনা তার সময়ের জিনিয়াস সব নিঞ্জাদের ছায়া হয়ে থাকার মত থাকলেও তাদের সাথে দাপট দেখিয়ে চলতে পেরেছে, সেই সাকুরা এখন তার শিক্ষক এবং অন্যতম লেজেন্ডারি সানিন সুনাদেকে যেকোন দিন ছাড়িয়ে যেতে পারে! আর সেটাই শুধু নয়, বরং একই সাথে সাকুরা এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে বেশ বড় এক মেডিকাল নিঞ্জা হয়ে উঠেছে। সাকুরা একটা বড় সুযোগ পেয়েছে, এবং সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যা যা অর্জন করার সব অর্জন করে নিয়েছে।
কিন্তু এসব কিছুই তো হয়েছে স্ক্রিনের পিছনে। সাকুরা ইউজলেস না, এটা প্রমাণ করার জন্যে তাকে অনস্ক্রিনে কিছু করে দেখানো লাগবে। মুখে মুখে “অন্যতম সেরা শক্তিশালী নিঞ্জা” হলে চলবে না, বরং দর্শকদের দেখানো দরকার সাকুরা আসলেই বিশেষ কিছু হয়ে উঠেছে। এজন্যে সাকুরা পরবর্তীকে কী করলো চলুন এক নজরে দেখে নেই।
কাজেকাগে হয়ে যাওয়া গারা-কে আকাতসুকি কিডন্যাপ করেছে। তাকে উদ্ধার করতে কোনোহা যে কয়জন নিঞ্জাকে পাঠায়, সাকুরা তার মধ্যে অন্যতম। গারার ভাই কানকুরো ততদিনে সুনাগাকুরের অন্যতম শক্তিশালী ও বড় মাপের এক নিঞ্জা হয়ে উঠে। আকাতসুকির সাসোরির কারণে তার মধ্যে অন্যরকমের এক বিষ ছড়িয়ে পরে, আর সেটা সাড়িয়ে তুলবার মত কোন মেডিকাল নিঞ্জা ছিল না সুনাগাকুরেতে। সাকুরা সেখানে এসে সেখানে বসেই সেই বিষ পরীক্ষা করে নিয়ে কানকুরোকে সারিয়ে তুলে। এক সাকুরা একাই সম্মিলিতভাবে সুনাগাকুরে যা করতে পারে নি তা করে দেখিয়েছে। এই পর্যায়ে এসে আমরা সাকুরার মেডিকাল ক্ষমতা হাতেনাতে প্রমাণিত হতে দেখতে পারি। সাকুরা তার অর্জিত জ্ঞানের একটি অংশের প্রমাণ দিয়ে নিজেকে চিনিয়ে নিতে পেরেছে।
পরবর্তীতে বেশ বড়সড় অনেক ঘটনা ঘটে, এবং এক পর্যায়ে দেখতে পাই চিয়ো-এর সাথে মিলে সে আকাতসুকির অন্যতম বড় এক নাম সাসোরিকে হারিয়ে দেয়। হ্যাঁ, চিয়োর ভূমিকা এখানে বেশি ছিল হয়তো, কিন্তু সাকুরার ভূমিকা কোন দিক থেকেই কম নয়। কম তো নয়ই, বরং অনেক অনেক বেশি। নিজেকে চিয়োর পাপেট বানিয়ে নিলেও সাকুরার নিজের ক্ষমতা তেমন কিছু বলার মত না হলে এই মারামারির ফলাফল তাদের বিপক্ষে চলে যেত একদম শুরুর দিকেই।
সাকুরা, যে কিনা নিজের দূর্ভাগ্যের জন্যে এরই মধ্যে “ইউজলেস” খেতাব পেয়ে গিয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে, সে প্রথম পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়েই আকাতসুকির সবচাইতে ভীতি জাগানিয়ে একজনকে হারিয়ে দিয়েছে। আরেকজনের সাথে মিলিত হয়ে মারামারি মূখ্য নয়, কারণ নিঞ্জাদের শক্তির এক বড় অংশ হলে অন্যদের সাথে মিলে নিজেদের কাজ উদ্ধার করে নেওয়া। সাকুরা সেই মারামারিতে বড় ভূমিকা রেখে আকাতসুকির একজনকে শেষ করে ফেলে। গল্পের এই পর্যায়ে আমরা সাকুরার একই ব্যাচের আর কয়জন নিঞ্জাকে আকাতসুকির কোন সদস্যকে হারিয়ে দিতে দেখি? একজনকেও না।
এর পরবর্তীতেই সাকুরা কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার আরেকটা সুযোগ নিয়েও কাজে লাগিয়ে দেয়, যেটা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। তেনচি ব্রিজে টিম কাকাশি যখন ওরোচিমারুর মুখোমুখি হয়, তখন নারুতো নিজের উপর ক্ষমতা হারিয়ে নাইন টেইল অবস্থায় চলে যায়। একাই ওরোচিমারুকে পিছে হটিয়ে দিতে পারে। এই অবস্থায় নারুতোকে শান্ত করবার জন্যে সবাই যেখানে ভয়ে ভয়ে থাকে, সাকুরা এগিয়ে আসে। নারুতো তার উপর চড়াও হলেও গুরুতর জখম পায়, কিন্তু নারুতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসলে তাকেও আমার সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে নিজের মেডিকাল ক্ষমতার বলে। বড় বড় নিঞ্জারা যেখানে এগিয়ে যেতে ভয় করে, সাকুরা সেখানে এগিয়ে যায়, এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও অন্যদের সারিয়ে তুলে। অকার্যকর? না, এটা অকার্যকারিতার সংজ্ঞা নয়।
এর পরবর্তীতে বড় যেই আর্কে আমরা সাকুরাকে দেখি, সেটা নারুতোর অন্যতম সেরা আর্কঃ পেইন আর্ক। আসলে এই আর্কটিতে সাকুরার ভূমিকা ছিল মেডিকাল নিঞ্জা হিসাবে সবার সাহায্য করা। কোনোহা ধ্বংসের পরে আসলে নারুতো বাদে চোখে পড়ার মত একমাত্র যে ছিল সে হল নারুতো ভালবেসে নিজেকে উতসর্গ করে দেবার জন্যে এগিয়ে আসা হিনাতা। সেই জন্যে এই আর্কে সাকুরার আসলে অন্য সব নিঞ্জার মত ভূমিকা থাকার কথা না তেমন। কিন্তু সবাই যেখানে বসে বসে হাহুতাশ করছে কিংবা নারুতোর দিকে চেয়ে আছে, সেখানে সাকুরা নিজের ক্ষমতা দিয়ে সব মেডিকাল নিঞ্জাকে যতজনের সম্ভব চিকিৎসা করার আহ্বান জানায় এবং সুনাদের পাশে থাকে।
নিজের একমাত্র ভালবাসার মানুষটির উপর যখন মৃত্যুর পরওয়ানা জাড়ি হয়, তখন নিজের সব রকমের কষ্টকে ধামাচাপা দিয়ে সাসকেকে নিজেই মারতে উদ্যোগী হয়। সাকুরা শুধু শারীরিকভাবেই শক্তিশালী নয়, মানসিক দিক থেকেও অনেকের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে এগিয়ে ছিল তার ভাল প্রমাণ এটি।
সর্বশেষে থাকছে সম্ভবত সাকুরার সবচাইতে বড় অবদানের কথা – ৪র্থ নিঞ্জা ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ঘটনা। গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমাদের গল্পের দুই নায়ক নারুতো ও সাসকে, ও খলনায়ক তোবি এবং পরে মাদারাসহ সব বড় বড় নামগুলি একের পর এক পাওয়ারাপ পেয়ে গিয়েছে। যেই টিমের সদস্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যাবে, সেই দলের সবাই গল্পের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে একের পর এক ক্ষমতা পেয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ হবার কারণে খলনায়কেরাও নিজেদের অকল্পনীয় সব ক্ষমতা দেখানো শুরু করেছে। এমতাবস্থায় সাকুরার কী করণীয়? গল্পকার যখন তাকে এক রকমের পার্শচরিত্রের কাতারে ফেলেই দিয়েছে, সেখানে বসেই নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে যেতে থাকে সে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বড় চরিত্র আগাতপ্রাপ্ত হলে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসাটা অনেক বেশি হয়েছে বলে হয়তো এটি দর্শকদের কাছে একটি স্বাভাবিক দৃশ্যই হয়ে উঠেছে, কিন্তু ব্যাপারটির ভূমিকা কত বড় সেটা এভাবে ভেবে দেখুন যে, এই যুদ্ধে এদের সবাই বারবার বিভিন্ন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে। সাকুরার চিকিৎসা না পেলে গল্পের এত বড় বড় চরিত্রদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতো না।
এদিকে সাদা জেতসুর অতর্কিত হামলার কারণে যেখানে সবাই দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছিল, তখন সাকুরা সাদা জেতসুর ব্যাপারটি সবার আগে ধরতে পারে। হ্যাঁ, গল্পের নায়ক হবার কারনে নারুতো আরেকটি পাওয়ারাপ পায়, এবং এখন সে সবধরনের এরকম লুকায়িত জেতসুদের খুঁজে বের করতে পারে। পাওয়ারাপ না পাওয়া সাকুরা নিজ ক্ষমতায় তাদের ব্যাপারটি জেনে নিতে পারে ও সবাইকে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে পারে। “ইউজলেস” সাকুরা অন্য সব নিঞ্জাদেরকে ইউজলেস হওয়া হতে আরেকবার বাঁচিয়ে দেয়।
শেষ পর্যন্ত যখন বড় যুদ্ধে মেডিকাল নিঞ্জা হবার পরেও অংশগ্রহণ করে, তখন দর্শকদের মনে করা উচিৎ সুনাদের সেই নিয়মের কথা। যেখানে শেষ নিয়মটিতে বলা হয়, যদি মেডিকাল নিঞ্জা এত ক্ষমতাধর হয় যে সরাসরি মারামারি করতে পারে, তাহলে অন্য সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেই ফ্রন্টলাইনে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। সাকুরা সেটিই করে, এবং নারুতো ও সাসকের সাথে মিলে ওবিতোর বিপক্ষে লড়াই করে। নারুতোর কাছ থেকে যখন নাইন টেইলসকে কেড়ে নেওয়া হয়, তখন নারুতো যেন সাথেসাথে মারা না যায় তার জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে। খেয়াল রাখতে হবে, নারুতোকে এই পর্যায়ে বাঁচিয়ে তুলবার জন্যে সাকুরা ছাড়া আর কেউ যোগ্য মেডিকাল নিঞ্জা ছিলও না। নারুতোর হার্টকে পাম্প করতে থাকে, যেন নারুতো বেঁচে ফিরবার জন্যে আরেকটু সময় পায়। “ইউজলেস” সাকুরা একাই পুরা নিঞ্জার দুনিয়ার হার্ট পাম্প করে বাঁচিয়ে তুলে।
কাগুইয়ার সাথে মারামারিতে যেখানে নারুতো আর সাসকেই একমাত্র তাকে হারানর ক্ষমতা রাখে, সেখানে সাকুরার সাহসিকতা সাসকে-কে উদ্ধার করবার জন্যে বড় ভূমিকা রাখে। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থে এক দেবীকে হারাবার জন্যে যেই দুজনের একত্রে উপস্থিত থাকা দরকার, সেখানে একজন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, সাকুরার সাহসী ভূমিকার অভাবে হয়তো সেক্ষেত্রে গল্পের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।
সত্যিকার অর্থে বলার মত ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকার পরেও একের পর এক ক্ষমতা আর জিনিয়াস নামধারী সব নিঞ্জাদের পাশেই শুধু ছিল না সাকুরা, তাদের অনেককে ছাড়িয়ে গিয়ে যুদ্ধে নিঞ্জাদের জোটকে জিতাতে সাহায্য করেছে সাকুরা। সাকুরা যদি সত্যিকার অর্থেই অকার্যকর হয়ে থাকতো, তাহলে নারুতোর গল্পটি নারুতো কম বরং বার্সার্কের মত হয়ে যেত। একের পর এক ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া থেকে একাই রক্ষা করেছে গল্পের অন্যান্য মূল চরিত্রদের।
তাহলে কেন দর্শকদের অধিকাংশই সাকুরাকে এখনও ইউজলেস বলে আসছে? এখানে আসলে দর্শকদের সাইকোলজি একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা যখনই সাকুরাকে দেখি, তখনই তার তুলনা করি নারুতো আর সাসকের সাথে। কেনই বা করবো না আমরা, তারা তিনজন যে একই টিমের সদস্য। সেই টিমের লিডার আবার কাকাশি নিজেই। পরবর্তীতে তাদের এই টিমে যোগ দেয় ইয়ামাতো আর সাই, যারা স্পেশাল আনবু ফোর্সের সদস্য বলে আগে থেকেই তাদের ভারী ক্ষমতার অধিকারি বলে জানি। আসলে এত সব জিনিয়াস আর অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারীদের দলে এমন একজনকে আমরা দেখতে পাই যার শুরু থেকে বলার মত কিছু ছিল না কখনই। এমনকি নারুতোর মাঙ্গা বা আনিমের ইনফো ঘাটলে আমরা দেখতে পাই সাকুরা একজন মেইন চরিত্র, অথচ গল্পে তাকে আমরা নারুতো আর সাসকের তুলনায় খুব কম সময়েই দেখেছি। হ্যাঁ, সাকুরার চরিত্রের সবচাইতে বড় দিক হল সে সাসকে-কে অনেক বেশি ভালবাসে। বলার মত কিছু নেই এমন এক চরিত্রের যখন মূল ফোকাসটা পড়ে তার ভালবাসার জীবনের উপর, যেখানে তার আশেপাশের সবার ফোকাস পড়ে তাদের নিঞ্জা ক্ষমতার উপর, সেখানে দর্শকদের মনে এই ধারণাটা হওয়া অসম্ভব নয় যে সাকুরা ইউজলেস। ব্যাপার হল, সাকুরা কখনই ইউজলেস ছিল না। বরং কঠিন পরিবেশে শুরুতে খাপ খেয়ে নেওয়াতে কষ্ট পেতে হলেও এরপর সে ঠিকভাবেই সেই পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দর্শক মনের সাইকোলজিতে আরেকটা জিনিস খাটে – প্রথম ইম্প্রেশন। সেটা শুধু দর্শকদের জন্যেই নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবক্ষেত্রেই দেখতে পারি। প্রথম ইম্প্রেশনের উপরেই আমাদের আরেকটি মানুষের ব্যাপারে জন্ম নেওয়া ধারণাটি গড়ে উঠতে থাকে। হয়তো তার চরিত্রের অন্যান্য দিক দেখতে পেলে সেই ধারণাতে বিভিন্ন প্রলাপ পড়ে, কিন্তু ধারণার মূল ভিত্তি থাকে সেই প্রথম ইম্প্রেশনেই। সাকুরার ক্ষেত্রেও সেরকমই হয়েছে, দর্শকদের প্রথম ইম্প্রেশনটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাসকে উচিহা কেন “নারুতো” গল্পের সবচাইতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত চরিত্র — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য
লেখাটির টপিক দেখে হয়তো অনেকে শুরুতেই ভ্রু কুঁচকে উঠবেন। দাঁড়ান একটু, আমি বলছি না সাসকে এই আনিমেটির সবচাইতে সেরা চরিত্র। নারুতোর গল্পের চরিত্রদের মধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় অবশ্যই ইতাচি। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না এখানে, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল, উচিহা সাসকে এই গল্পটির সবচাইতে ভালভাবে গড়ে তুলা চরিত্র। লেখাটি কিছুটা বড় হতে পারে, তাই সময় নিয়ে পড়বার অনুরোধ করছি।
একটা ১২-২৪ পর্বের সিরিজে চরিত্রের গঠন জিনিসটা যেভাবে হয়, স্বাভাবিকভাবেই একটা শত পর্বের সিরিজে তার চাইতে বেশ ভিন্নভাবে হয়ে থাকবে। এ জন্যে ৬০০+ পর্বের নারুতো সিরিজের একটা পার্শ্ব চরিত্র যে ধরণের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে যায়, তা অনেক ১২ বা ২৪ পর্বের সিরিজের প্রধাণ চরিত্রের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে না।
এবার আসি চরিত্রের গড়ে উঠার ব্যাপারটিতে, অর্থাৎ ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাক। ডেভলপমেন্ট হিসাব করলে লিটারেচার কাজগুলিতে আমরা দুই ধরণের চরিত্রায়ন দেখে থাকতে পারিঃ Static Characterization ও Dynamic Characterization. স্ট্যাটিক চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে কোন চরিত্র ঘটনাক্রমে গল্প এগিয়ে যেতে থাকলেও বড় ধরণের কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় না। তার লক্ষ্য, চিন্তা-ভাবনা, ধারণা ইত্যাদি মোটামুটি একই রকমের থেকে যায়। অন্যদিকে ডিনামিক চরিত্রায়ণ বলতে সেই ব্যাপারটি বুঝিয়ে থাকে, যেখানে একটা চরিত্র গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে থাকার সাথে সাথে বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই পরিবর্তন থাকে তার লক্ষ্যে, চিন্তাভাবনায়, আচার-আচরণে, ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দুই আলাদা ধরণের চরিত্র অর্থ কিন্তু এই নয় যে একটি বেশি ভালো ও অন্যটি খারাপ। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের উপযুক্ত ব্যবহার দুই ধরনের চরিত্রকেই বিশেষ কিছু করে তুলতে পারে।
আমাদের আলোচ্য গল্পের প্রধাণ চরিত্র নারুতো উজুমাকি স্ট্যাটিক চরিত্রায়ণের সবচাইতে বড় উদাহরণ। গল্পের একদম শুরু থেকে তার লক্ষ্য ছিল হোকাগে হওয়া ও সবার কাছে এক সম্মানজনক ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া। হাটতে-চলতে সব ক্ষেত্রেই নারুতোর এই লক্ষ্যের কথা আমরা শুরু থেকে জেনে এসেছি, এবং কোন ধরণের বাঁধা তাকে দমাতে পারে নি এই উদ্দেশ্য অর্জন থেকে। তার এই অনড় অবস্থান মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ঘৃণা থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে সম্মানের পথে নিয়ে আসে।
ডিনামিক চরিত্রায়নের আদর্শ উদাহরণ সাসকে। তার ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য ছিল তার ভাইকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিবে আর নিজের বংশের পুনরুত্থান ঘটাবে। ঘটনাপ্রবাহে আমরা দেখতে পারি সাসকে তার সেই লক্ষ্য মাঝপথেই অর্জন করতে পেরেছে, কিন্তু এরপর সত্যি কথাটা তার সামনে চলে আসলে তার চরিত্রে একটা ভাঙ্গন দেখতে পারি। শুরু হয়ে যায় ভাঙ্গা-গড়ার খেলা, যেখানে কোনোহাকে ধ্বংশ করে দেওয়া কিংবা কোনোহাকে বাঁচিয়ে ফেলা – এই দোটানায় তার চিন্তাভাবনা ঝড়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নারুতোর সাথে শেষবারের মত মারামারির মধ্য দিয়ে তার চরিত্র পূর্ণায়তা পেয়ে উঠে।
দুটি চরিত্রই আনিমে জগতের অন্যতম জনপ্রিয়তা পাওয়া চরিত্র, সন্দেহ নেই। কিন্তু এবার যদি আমরা এই দুজনের ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকি, তাহলে কোন চরিত্রটিকে আমরা ঠিকভাবে গড়ে উঠতে দেখি? নিঃসন্দেহে সেটা সাসকে। নারুতো চরিত্রটির প্রতি বিদ্বেষ নেই আমার, একটি চিরাচরিত শৌনেন গল্পের প্রধান চরিত্র হবার মত সবকিছুই তাকে দিয়েছে গল্পের লেখক – অনড় চিন্তাভাবনা, হাসিখুশিভাবে সবাইকে আপন করে নেওয়া, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এ সব কিছুই তাকে একজন হিরো করে তুলে। কিন্তু, চরিত্রের বিকাশ যদি হিসাব করি আমরা, নারুতো উজুমাকি কি আদৌ তেমন কোন বিকাশ দেখাতে পেরেছে? নারুতোর চরিত্রে যেটি হয়ে উঠে নি, সাসকের চরিত্রে তার সবকিছু হয়ে উঠেছে আসলে।
ঘটনাক্রমে আমরা দেখে উঠতে পারি সাসকে ছোটকালে খুবই হাসিখুশি এক চরিত্র ছিল, যে বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ পাবার জন্যে সবরকমের চেষ্টা করতো। একদিন তার বড় ভাই তার বাবা-মাসহ পুরা উচিহা বংশকে হত্যা করে ফেলে। এই ঘটনা সাসকে-কে করে তুলে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ, এবং এরকম একটা অবস্থান থেকেই গল্পে প্রথম তাকে দেখতে পারি আমরা। এরকম সময়ে তার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর, নিঞ্জাদের দুনিয়া হয়ে থাকলেও ম্যাচিউরিটি আসার মত বয়স তখনও হয়ে উঠে নি। নিজের প্রতিশোধ নেবার লক্ষ্যে নিজের গ্রাম ছেড়ে দিতেও রাজী হয়ে উঠেছিল। এরপর ১৬ বছর বয়সের দিকে এসে বড় ভাইকে হত্যা করে যখনই নিজের জীবনের লক্ষ্য পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বলে মনে করেছিল, তখনই তোবির কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পারে। জানতে পারে কীভাবে তার বড় ভাই বাধ্য হয়েছিল নিজের বংশকে নির্মূল করে দিতে। এমন সময়ে এসেই আমরা সাসকের চরিত্রে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেখতে পারি। এই মুহুর্তটি ছিল তার চরিত্রের বিকাশের একটি বড় উপলক্ষ্য। অবশেষে নিজে থেকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে সে, কোনোহাকে ধ্বংস করবে সে, কোনোহার উপর বদলা নিবে সে।
ইতোমধ্যে নিঞ্জাদের ৪র্থ বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়, আর এমন এক কঠিন মুহুর্তে তোবি, কাবুতো আর জেতসু সবাই তাকে নিজের মত করে ব্যবহার করতে চেষ্টা করে, সে বিষয়টিও বুঝে উঠতে পারে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বড় ভাইকে রিএনিমেশন অবস্থায় দেখতে পারে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সত্য ঘটনাটির অন্য আরেক সংস্করণ শুনতে পারে। সাসকের চরিত্রের গঠনের আরেকটি বড় মুহুর্তের সাক্ষী হতে পারে দর্শক এই জায়গাটিতে, যখন সাসকে বুঝে উঠতে পারে শুধুমাত্র প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামি হবে। এরপর পূর্বের হোকাগেদের কাছ থেকে নিঞ্জার ইতিহাসের সবকিছু জেনে নেয় সে। বুঝে উঠতে পারে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাতেই সমস্যা হয়েছে।
শুধু প্রতিশোধ আর প্রতিশোধ যার লক্ষ্য ছিল, সেই চরিত্রকে আমরা এরপর কী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখি? সে কি এরপর পুরা নিঞ্জা দুনিয়াকে নির্মূল করতে উঠে যায়? না, বরং এই প্রথম সে বুঝে উঠতে পারে নিজের পরিণতি যেন অন্য কাউকে মুখোমুখি হতে না হয়, এজন্যে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। হোকাগে হয়ে এই লক্ষ্য পূরণের জন্যে এগিয়ে যেতে দেখি আমরা, যদিও গল্পের নায়ক না হবার কারণে সেটা তার ভাগ্যে জুটে নি। কিন্তু হোকাগে হবার লক্ষ্য নারুতোর কাছে রেখে দিয়ে এলেও, এরপর সাসকে পুরা নিঞ্জা দুনিয়া ঘুড়ে দেখে সব সমস্যা ঠিকঠাক করার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।
একটি প্রতিশোধপরায়ণ ছোট্ট বাচ্চা বিভিন্ন ধরণের মানসিক ধাক্কা, অশান্তি, কষ্ট, ক্ষোভ সামলে উঠে সুন্দর একটি বিশ্ব গড়ে তুলার উদ্দেশ্যে শান্তির পথে অগ্রসর হয় — লক্ষ্য, চারিত্রিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের পুর্ণায়ন হয়ে উঠে সাসকে উচিহা চরিত্রটির।
আমরা গল্পের ক্রমে অন্যান্য অনেক চরিত্রেরও কাছাকাছি বিকাশ দেখতে পাই। বাবার প্রতি অন্যায়ে কঠিন হয়ে যাওয়া, আপন দুই বন্ধুকে হারানোর পরে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে হারিয়ে যাওয়া এবং নারুতো-সাসকে-সাকুরার শিক্ষক হবার মাধ্যমে আবার আলোর পথে ফেরত আসা – কাকাশিরও প্রায় একই ধরণের ডিনামিক পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমরা এই পরিবর্তনের অধিকাংশই জানতে পারি গল্পের শেষের দিকে এসে। ওবিতো চরিত্রটিও বেশ ট্র্যাজিক এক চরিত্র। তবে এত বিশাল মাপের দুনিয়া পাল্টে দেওয়া যুদ্ধ শুরুর পর, অগণিত মানুষ হত্যার পর শুধু নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেটা কাটিয়ে তুলার চেষ্টা – তার চরিত্রের বিকাশটি অনেকের কাছেই তাই আপত্তিকর। অন্যদিকে ইতাচির মনের মধ্যে ঝড়ঝঞ্ঝা এবং অকল্পনীয় ত্যাগের মাধ্যমে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে উঠা – সবকিছু মিলিয়ে তাকে গল্পটির সবচাইতে পছন্দের চরিত্র করে তুলতে পেরেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তা এক জিনিস, আর ব্যক্তিত্বের গঠন আরেক জিনিস।
সবসময়ে শান্তির পথে থাকতে চাওয়া ইতাচিকে নিজের পুরা বংশকে হত্যা করতে বাধ্য হতে হয়। এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সন্দেহ নাই, কিন্তু এত বড় এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবার পরে সবার চোখে অপরাধী হয়ে থাকার পরেও কোনোহাকে ও নিজের ছোট ভাইকে চোখে চোখে রাখতে আকাতসুকিতে যোগদান করে সে। ভাইয়ের হাতে নিজের মৃত্যুটিকে নিজের পাপের শাস্তি ও কষ্ট থেকে মুক্তির পথ হিসাবে বেঁছে নেয়। আমরা গল্পের শুরু থেকেই ইতাচিকে গল্পের সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবে দেখে এসেছি, তার অংশ শেষ হবার পরেও একইভাবে তাকে গল্পের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবেই জানতে পেরেছি। ফলাফল স্বরূপ, তার ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট জিনিসটি বাদ পড়ে গিয়েছে।
অতএব, ডেভলপমেন্ট ব্যাপারটি যদি লক্ষ্য করি শুধু, তাহলে পুরা গল্পে সাসকের মত চারিত্রিক বিকাশ আর দ্বিতীয়টি কারও নেই। সাসকে চরিত্রটি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কখনই ছিল না, কিন্তু নিজের ত্রুটি মেনে নিয়ে সেটিকে ঠিক করে তুলবার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে, এবং প্রায় ৬৫০ পর্বের এই যাত্রায় তাতে সফল হওয়াটা তার চরিত্রকে পরিপূরণ করতে পেরেছে। Well-developed চরিত্রের কথা যদি উঠে থাকে, তাহলে এই গল্পে সাসকের চরিত্রের গঠনের ধারেকাছেও কেউ নেই।