Bleach [লাইভ অ্যাকশন রিভিউ] — Tahsin Faruque

(Mild Spoilers warning)

 
অ্যানিমে লাইভ অ্যাকশন অ্যাডাপ্টেশন, আর নেটফ্লিক্স – এই দুইটার কম্বিনেশন অনেকের মনেই আতঙ্কের সৃষ্টি করে এসেছে যেন। এই সিরিজে এর আগে দুটি এরকম লাইভ অ্যাকশন মুভি দেখেছিলাম, ডেথ নোট আর ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্ট। দুটি দেখেই ভয়ংকর হতাশ হয়েছিলাম। তার অনেকদিন পর আজকে হঠাত এটার ট্রেইলারটা চোখে পড়তে মনে হল, ট্রেইলারে যেসব দৃশ্য চোখে পড়লো তা দেখে অন্তত মনে হয়েছে সোর্সকে সম্মান করেই বানিয়েছে (এক্ষেত্রে মাঙ্গার সাথে অ্যানিমেকেও সোর্স হিসাবে ধরছি)। মুভিই তো, দেখেই নেই না হয় কেমন হল!
 
খুব অল্প যে কয়টা লাইভ অ্যাকশন অ্যাডাপ্টেশন দেখা হয়েছে অ্যানিমের, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচাইতে বেশি ভাল লেগেছে এইটা, তবে মন্দের ভাল হিসাবে নয়, আসলেই ভাল লেগেছে। শুরুতেই বলে নেই, এই মুভিতে ব্লিচের Agent of the Shinigami আর্কটি পুরাটা অ্যাডাপ্ট করেছে। যারা ব্লিচ পড়েছেন বা দেখেছেন, তারা জানেন এই আর্ক অ্যাডাপ্ট করলে গল্পের কোন জায়গায় গিয়ে মুভিটি শেষ হবে। একই জায়গাতেই শেষ হয়েছে, তবে গল্পে সামান্য বৈচিত্র হলেও এনেছে যেন মুভিটি স্বতন্ত্র মুভি হিসাবেও কাজ করে। সিকোয়েল মুভি আসবে কি আসবে না তার যেহেতু নিশ্চয়তা নেই, তাই সেরকম হিসাব করেই গল্প শেষ করতে হয়।
 
মুভিতে স্ক্রিন রাইটার ও ডিরেক্টরের যে হাল্কা কিছু ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নেয় নাই তা নয়, বরং লাইভ অ্যাকশন মুভি হিসাবে একটা মাঙ্গা বা অ্যানিমের গল্পকে তুলে ধরতে হলে কিছু জিনিসের পরিবর্তন করতেই হবে। মাঙ্গাতে বা অ্যানিমেশনে অনেক দৃশ্য ও রিয়্যাকশন যেভাবে কাজ করে, লাইভ অ্যাকশনে তা কাজ করে না। সেখান বাস্তব মানুষের বাস্তব রিয়্যাকশন দেখাতে হয়, যা গল্পের অরিজিনাল সোর্সের সাথে কনফ্লিক্ট করতেও পারে। তবে ব্লিচের এই মুভিতে সেসব ছোটখাট পরিবর্তন যা এনেছে, আমার কাছে তা খুবই পজিটিভ দিক মনে হয়েছে মুভিটির। এমনিতে মূল গল্পে ও তার চরিত্রদের মধ্যে এতটুকুও পরিবর্তন আনে নাই এখানে। ব্লিচের অরিজিনাল গল্পের প্রথম দিকের অংশতে অনেক কমেডি উপাদান ছিল, মুভিতেও সেগুলি রয়েছে। ইচিগো-রুকিয়ার কথোপকথন, ইচিগোর বন্ধুদের সামনে রুকিয়ার উপস্থিতি ও তাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথন, চালচলনে কোন অহেতুক জিনিস আনা হয় নি। যা ছিল, একদম আসল গল্পকে সম্মান জানিয়েই দেখানো হয়েছে। ইচিগো রুকিয়ার কথাবার্তা শুনে শব্দ করেই হেসেছিলাম মুভি দেখার মাঝে।
 
 
মুভির স্বার্থেই মাঙ্গা বা অ্যানিমের প্রথম দিকের হলোর সাথের অনেকগুলি ফাইট দেখানো হয় নি, এবং সেই ব্যাপারটি খারাপ হয় নি আসলে। হলোর উপস্থিতি অতিরিক্তও নয়, একদম কমও নয়। আর এখানে সিজিআই-এর কাজ একদম খারাপও নয়, বেশ বিশ্বাসযোগ্য।
চরিত্রদের মধ্যে সবচাইতে ভাল লেগেছে আসলে ইচিগোকেই। নায়ককে ধন্যবাদ দিতেই হবে, এই চরিত্রটাকে লাইভ অ্যাকশনে প্রাণ দেবার জন্যে। এই আর্কে ওরিহিমের উপস্থিতি সেরকম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না আসলে, তাই ওরিহিমে এখানে সাইড ক্যারেক্টারদের দলেই চলেই গিয়েছে। চাদো ও উরইয়ুর চরিত্র করা অভিনেতাদের কাজ ভালই ছিল। তবে রুকিয়ার চরিত্রটি একটু সমস্যাজনক ছিল। নায়িকার কাজ একদম খারাপ যে তা নয়, কিন্তু রুকিয়ার মুখে ৯০% সময় জুড়েই একটি রিয়্যাকশন লেগে ছিল, তা সে ঐ মুহুর্তে খুশি হোক বা অবাক, বিরক্ত হোক বা রাগ, চেহারার অভিমূর্তি দেখে বুঝে উঠে সমস্যা হত। মাঙ্গা পড়া ছিল বলে জানি এই জায়গাতে রুকিয়া আসলে কেমন অনুভব করছিল, ঐ জায়গাতে রুকিয়া আসলে রাগ নয়, অবাক হয়ে ছিল। এটা জানা না থাকলে মুভিটি দেখার সময়ে মনে হয়, রুকিয়ার সমস্যা কী!? আর রেঞ্জি ও বিয়াকুয়ার চরিত্র দুটি যেহেতু এই আর্কের ভিলেইন ছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে তাদের আচরণ একটু বেশি ভিলেইনসুলভ হয়ে গিয়েছিল। ভিলেইন হলেও যে তাদের আচরণ এরকম হবার কথা নয় তা মাঙ্গা পাঠক বা অ্যানিমের দর্শকের জানার কথা। রেঞ্জির অভিব্যক্তি মাঝেমধ্যে অতিরঞ্জিত হয়েছে।
 
আর চরিত্রদের কথা বললে ইচিগোর দুই পিচ্চি বোন দুটির কথা না বললেই নয়! অতিরিক্ত কিউট দুটি পিচ্চি তাদের স্ক্রিনটাইমের প্রায় পুরাটাই মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখার মত অভিনয় করেছে।
 
সব শেষে মুভির পজিটিভ ও নেগেটিভ দিকগুলি অল্পের মধ্যে তুলে ধরিঃ
 
(+) পজিটিভ দিকঃ
  • সোর্সের প্রতি সম্মান দেখানো
  • ইচিগো
  • ইচিগোর দুই বোন
  • ইচিগো-রুকিয়ার কথোপকথন
  • সোর্ড ফাইটের দৃশ্যগুলি (চমৎকার ছিল এগুলি)
  • অ্যানিমেশন (সেরকম আহামরি না হলেও, বিশ্বাসযোগ্য)
  • ইচিগোর স্কুলের অংশগুলি
  • সউল-রিমুভিং গ্লাভস
  • শেষের ফাইট
(-) নেগেটিভ দিকঃ
  • রুকিয়ার চরিত্র
  • রেঞ্জি ও বিয়াকুয়ার “ভিলেইন” সুলভ আচরণের অতিরিক্ততা
ট্রেইলার দেখে বা একের পর এক অ্যানিমে লাইভ অ্যাকশনের ব্যর্থতা দেখে ভয় পেয়ে থাকলে চিন্তা ছাড়া মুভিটি দেখে নিতে পারেন। ব্লিচের লাইভ অ্যাকশন মুভি আমার দৃষ্টিতে অন্যতম সফল অ্যাডাপ্টেশন। এই মুভির সিকোয়েল বের করুক এই আশাতেই আজকের রিভিউ শেষ করছি।
 
ও হ্যাঁ, আমার রেটিংঃ
মুভি হিসাবেঃ ৭/১০
অ্যানিমে আডাপ্টেশন মুভি হিসাবেঃ ৮/১০
 

Bakuman [লাইভ অ্যাকশন রিভিউ] — Farhad Mohsin

Bakuman live

দেখে ফেললাম বাকুমান লাইভ একশান মুভি।

কদিন আগে গ্রুপেই ডেথ নোটের আম্রিকান লাইভ একশন মুভি নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিভাবে মুভিতে মূল আনিমে/মাঙ্গার গল্প তো বটেই, আনিমের “soul” ও ধ্বংস করে ফেলেছে। এর উল্টোটাও যে হয় না, তাও অবশ্য না। রুরৌনি কেনশিনের মুভি ট্রিলজি আমার বেশ লেগেছিল। মনে হয়েছিল, হ্যাঁ ঠিক ঠাকই তো আছে সব। শিশিওর থেকে আসা ভীতিকর আভা পর্যন্ত মনে হয় আনিমের কাছাকাছি যেতে পেরেছিল।

বাকুমানের ক্ষেত্রে চিন্তাটা বেশি, কারণ এর “মূল উপাদান” ও বেশি। একদিকে যেমন বাকুমান চিরকালের জন্য ‘The manga about making manga’ উপাধিটা নিজের করে নিয়েছে, অপরদিকে এটি নাকামা পাওয়ার, রাইভালরি, deplorable antagonists দিয়ে সাজানো বেশ উপভোগ্য ব্যাটল মাঙ্গাও বটে। আর সাথে মাশিরো-আজুকি’র রোমান্স এলিমেন্ট তো আছেই; ব্যাকড্রপে রেখেও শোনেন মাঙ্গার “Final Villain” হিসেবে কিভাবে রোমান্সকে ব্যবহার করা যায়, তার একটা আদর্শ উদাহরণ এই বাকুমান। মুভি করতে গেলে আসলে গুরুত্ব দিবে এই তিন এলিমেন্টের কোনটিকে?

শেষমেশ রোমান্সের দিকে না গিয়ে শোনেন পথটাই বেছে নেয় ফিল্মমেকাররা। এমন না যে রোমান্স নেই, আছে এবং বেশ ভালো ভূমিকাও আছে। তাও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমার মতে বাকুমানের সবচেয়ে রোমান্টিক সিন (স্পয়লারহীন থাকার স্বার্থে বলছি না কোনটা) ব্যবহার না করা, বরং উলটা মুভির এন্ডে সাফল্যের কৃতিত্ব শোনেন এলিমেন্টের দিকে দিয়ে দেওয়াটায় মনে হয়েছে, conscious decision হিসেবেই রোমান্সকে de-priorotize করা হয়েছে। নিজুমা এইজি’র সাথে রাইভ্যালরিকে মুভিতে ভিজুয়ালি একটা ফিজিক্যাল রূপ দিয়ে একটা লম্বা সময় কাটানোটাও এর দিকেই নির্দেশ করে। আর মাঙ্গার প্রোডাকশনের ব্যাপারটা সময়স্বল্পতার কারণেই হয়তো কেটে দিতে হয়েছে। Shonen Jump সম্পর্কে, আর্টিস্টদের প্র্যাক্টিস ও জীবন নিয়ে যা একটু জানি, তা ন্যারেশন থেকে। গল্পের প্রবাহ থেকে না। মূল মাঙ্গাতে অনেক বেশি সময় পেয়েছিল সব flesh out করার জন্য, যা এখানে অনুপস্থিত। তার পরেও, যা করেছে মন্দ করে নি।
ভাল্লাগে নি যা যা: মাশিরোকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে তাকাগির যথেষ্ট ডেভেলপমেন্ট হয় নাই। তাকাগিকে যে ফোকাস দেয় নি, সেটা অবশ্য তার ব্যাকস্টোরি চেঞ্জ করে ফেলা থেকে প্রথমেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মাঙ্গা/আনিমেতে আশিরোগি মুতো’র সাফল্যের জন্য মাশিরোর সমপরিমাণ কৃতিত্বের দাবিদার তাকাগি। এইটা পোর্ট্রে না করায় কিঞ্চিত মেজাজ গরম হয়েছে।

সব মিলিয়ে আমার রেটিং 6.5/10।
বাকুমান ফ্যানদের জন্যও Must watch না।