একটা অ্যানিমে যখন আমাদের ভাল লাগে, তখন আমরা সবাই আশা করি যে ঐ অ্যানিমেটার আরেকটা সিজন আসুক, এবং একই রকম চমক উপহার দিক আমাদের। আর অ্যানিমে ইন্ডাস্ট্রি চলেই আমাদের এই এক্সপেকটেশনের ওপর নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে সাইকো পাসের সফলতার পরে যখন সিজন ২ আসার খবর পাওয়া যায়, আমরা আগ্রহ নিয়ে দেখব এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে এটা আমাদের আশা পূর্ণ না করে যদি শুধু নাম ভাঙিয়ে খাওয়ার একটা প্রচেষ্টা হয়, তাহলে বিরক্ত লাগাটাও স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হল, সাইকো পাস সিজন ২ আগের সিজনের সেই চমৎকার এক্সপেরিয়েন্সটা দেয়ার ক্ষমতা রাখে কিনা।
প্রথমে দেখা যাক, কি কি কারণে সিজন ২ অনেকের দেখতে ইচ্ছা না হতে পারে।
# প্রথম সিজনটা ছিল গেন উড়োবুচির সৃষ্টি। কিন্তু পরেরটায় তিনি কোন কাজই করেননি। এটা খুব সহজেই ধরে নেয়া যায় যে অন্য কেউ তার লেখা গল্প তার মত করে এক্সিকিউট করতে পারবে না, কাজেই সবচেয়ে বড় রিস্কটা ওখানেই। তবে শেষমেশ অবস্থা কি হল, তা জানতে হলে তো দেখতেই হবে।
# Studio পাল্টে গেছে। এটা যদিও আমার কাছে তেমন বড় ফ্যাক্ট না, তবে বাজেট, গ্রাফিক্স আরও যা যা একটা অ্যানিমে বানাতে প্রয়োজন, সেটা তো এরই সাথে পাল্টাবে। তবে এইক্ষেত্রে আমার চোখে গ্রাফিক্সে খুব পার্থক্য ধরা পড়েনি, হয়ত এপিসোড সংখ্যা কমিয়ে সেটা ম্যানেজ করা গেছে।
# শিনিয়া কৌগামি। সবচাইতে বড় পার্থক্যটা সে একা গড়ে দিয়েছে। এই সিজনে একমাত্র আকান সুনেমোরির কল্পনাতে ছাড়া কোথাও তার দেখা নেই। একটা প্রধান চরিত্রের অনুপস্থিতিটা অনাগ্রহ জাগিয়ে তোলার জন্যে যথেষ্ট।
# Storyline এ আগের সিজনের সাথে ধরতে গেলে কোন সম্পর্কই নেই। আবার সেই সিবিল সিষ্টেমকে চ্যালেঞ্জ, এটাকে জাজ করার প্লট, আকানে সুনেমোরির ওপর প্রেশার। ক্রাইম সিনে মারামারি কাটাকাটি যা হয় তা এই সিজনের চরিত্রগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ। সম্ভবত গেন উড়োবুচি নিজের সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে নিজহাতে খুন করতে চান।
# আগের সিজনের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্রুটাল করার চেষ্টা করেছে। এবং তাতে কিছুটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
# ক্যারেক্টার ডিজাইন কিছুটা বিরক্তিকর। প্রায় সব ফিমেল ক্যারেক্টার দেখতে একই রকম। আমি শেষ এপিসোড পর্যন্ত তাদের চিনতে ভুল করেছি বারবার।
# শুরুর দিকে কাহিনীটা একটু জট পাকিয়ে গিয়েছিল। পরে যেটা শুধরে নেয়।
# সবশেষে আবার স্টোরিটাকে মোটামুটি ঐ সিজন ১ যেখানে শেষ হয়েছে ঐরকমই একটা পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যদিও এটা কেবল একটা অনুমান মাত্র, ঠিক নাও হতে পারে।
এবার বলি কেন আমার কাছে সাইকো পাস সিজন ২ কে ভাল লেগেছে।
# কৌগামি নেই, মাকিশিমা নেই, তো কে আছে? কিরিতো কামুই। মাকিশিমা যদি ক্রিমিনালি অ্যাসিম্পটোম্যাটিক হয়, তো কামুই আরেক আশ্চর্য বস্তু। কামুই এর কাজকর্ম দেখার জন্য হলেও এটা দেখা উচিৎ।
# স্টোরিলাইন। সিবিল সিস্টেমকে বেশ ভালভাবে সংশয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে কিরিতো। টানটান উত্তেজনাটা ধরে রাখতে পেরেছে।
# আকানে সুনেমোরি। সে যেভাবে ল’ কে প্রতিনিয়ত বুদ্ধিমত্তার সাথে রক্ষা করে যাচ্ছে, তার প্রমাণ আরও একবার পেতে ভালই লাগবে।
# আমি নিশ্চিত সুনেমোরির কালার নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন আছে। ওর কালার কি আসলেই কখনো পাল্টাবে না? Well, there is a surprize for you regarding that fact!
# নতুন ইনস্পেক্টর এবং এনফোর্সার আছে বেশ কয়েকজন, তারা যদি হঠাৎ করে মুভিতে এসে পড়ে, চিনতে কষ্ট হবে। তারওপর একরকম দেখতে, ঐ ব্যাপারটা তো আছেই।
# সিবিলকে কামুই এর শেষমূহুর্তে ছুড়ে দেয়া প্রশ্নটা। এটা মুভির সাথে সিজন ২ কে জুড়ে দিতে পারে।
# সিবিল নিজেকে কিভাবে পাল্টাবে কামুইকে জাজ করতে। এটা জানাটা বোধহয় সবারই উচিৎ।
# মাত্র ১১টা এপিসোডের মাঝে অনেক কিছুই দেখিয়ে ফেলেছে, যে সময়টা দেখতে ব্যয় হবে, তা মোটেই নষ্ট হবেনা।
সবমিলিয়ে সাইকো পাস সিজন ২ কে আমার কাছে অনেকটা ফিলার সিজনের মত মনে হয়েছে। কিন্তু এঞ্জয়েবল, ভাল স্টোরিলাইনের এবং চমৎকার ওএসটি যুক্ত একটি ফিলার এবং আমি বেশ উপভোগ করে দেখেছি। আবার বলাও যায়না, কোন না কোনভাবে মুভির কাহিনী যদি এর সাথে জুড়ে যায়, তাহলে এটা মাস্ট ওয়াচে পরিণত হবে। কাজেই, আমার মতে, মুভি আসতে আসতে একটু কষ্ট করে এটা দেখে নেয়াটাই উচিৎ।