পিংপং দ্য অ্যানিমেশন – ব্যর্থতা, সংগ্রাম আর জীবনের শৈল্পিকতা — Fahim Bin Selim

[Ping Pong the Animation স্পয়লার সতর্কতাঃ নিজ দায়িত্বে পড়ুন]

পিংপং দ্য অ্যানিমেশন গতবছর দেখা অংগোয়িং অবস্থায়, সপ্তাহে এক পর্ব করে , এপ্রিল থেকে জুন অবধি। আর এটা ছিলো আমার গতবছরের সবচেয়ে প্রিয় অ্যানিমে। গত মাসে এর ডাব বের হওয়ায় কিছুদিন আগে পুনরায় দেখা শুরু করেছিলাম। আমি কি এখনোও মনে করি, পিংপং দ্য অ্যানিমেশন ২০১৪-এর সেরা অ্যানিমে? Does it hold up?

 

“There are no heroes.”

-Kazama

                      vlcsnap-2015-07-14-17h09m11s124
হোশিনো ইউতাকা – পেকো। পিংপং খেলায় অসাধারন প্রতিভাবান, আঞ্চলিক বয়সভিত্তিক প্রতিযোগীতায় দুর্জেয়, চারিদিক সমাদৃত। অত্যুৎসাহী, খামখেয়ালী। আর উদ্ধত। ছোট পুকুরের বড় মাছ।
কিন্তু একেবারেই প্রথম পর্বে কং-এর কাছে পরাজয়ে পেকো প্রথম এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পায় – সম্ভবত সবার জীবনেরই কোন না কোন এক মুহূর্তে যার সমুক্ষীন হতে হয় – “You are not the center of the Universe.” এতদিন পেকোর কাছে পিংপং ছিলো শুধু সাফল্যগাঁথা। কিন্তু এই প্রথম পেকো মুদ্রার অপর পিঠটাও দেখে। এতদিন যে শুধু বিজয়কেই অবশ্যম্ভাবী বলে ধরে নিয়েছিল, যার সন্তরণ জল ছিল স্থির আর অগভীর – সে অনাকাঙ্খিত এক ব্যর্থতার স্বাদ পায়, সমুদ্রের প্রথম স্পর্শেই খেই হারায়। প্রথম বুঝতে পারে তার আপাত উজ্জ্বল, ঈর্ষনীয়, গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্ব মহাকালের প্রবাহে খুবই ম্রীয়মান, তুচ্ছ, আর গুরুত্বহীন। তার পরিচিত জগৎ তাসের ঘরের মত দুমড়ে পরে। ১১-০ তে হারা এক ম্যাচ, শুধুমাত্র একটি ম্যাচের ব্যর্থতা পেকোর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, তার জীবন সম্পর্কে ধারণা আমূল বদলে দেয়।

                   vlcsnap-2015-07-14-17h19m14s26
আর এই ব্যর্থতা হল পিংপং দ্য অ্যানিমেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বারবার ফিরে আসা প্রসঙ্গ। ব্যর্থতা, সংগ্রাম, বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নেওয়া। কোন অত্যুক্তি  না, কোন লুকাছাপা না। আর এখানেই মনে হয় এই গল্প আর বেশিরভাগ  স্পোর্টস অ্যানিমে থেকে আলাদা। পিংপং দ্য অ্যানিমেশনের গল্প জীবনের সামগ্রিকতা নিয়ে, সকল ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ। এর কাহিনী প্রত্যেক চরিত্রের কাছে খেলাটার আলাদা আলাদা অর্থ নিয়ে, তাদের জীবনাভিপ্রায়ের বৈপরিত্য নিয়ে। অবশ্যই পিংপং দ্য অ্যানিমেশন, পিংপং খেলা নিয়ে অ্যানিমে। কিন্ত এখানে খেলাটা সবসময়ই নেপথ্য বিষয়, কেবলই অন্তর্নিহিত বক্তব্যের বাহক মাত্র। পিংপং দ্য অ্যানিমেশন কখনই তার চরিত্রদের ভুলে যায় না, তাদের খেলার বাইরের জীবনটাকে ভুলে যায় না – তাদের পরিবার, তাদের পারিপার্শ্বিকতা, তাদের বেড়ে ওঠা।
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ অ্যানিমের দুই পার্শ্বচরিত্র – ক্যাপ্টেন ওতা আর সাকুমা। ওতা, ছোটবেলার থেকেই সে পিংপং খেলার প্রতি প্রবল ভালো লাগা নিয়ে বড় হয়েছে। কিন্তু হাইস্কুলের পিংপং ক্লাবে যোগ দিয়ে পেকো আর স্মাইলের দেখা পাবার পর, বাস্তবতা বুঝতে তার খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। তাদের সাথে তার পার্থক্যটা যে আকাচচুম্বী! কং এর কাছে পেকোর হারে যা আরো সুসংহত হয়। বড় মাছেরাই যেখানে হাবুডুবু খায়, ছোট পুকুরের ছোট মাছদের অসম্ভবত স্বপ্ন দেখাটা তো রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পরে। আর একারণেই তার কাছে পিংপং খেলাটা কেবলই উপভোগের জন্য, হাইস্কুলের শেষ সময়টায় কিছু স্মৃতি রেখে যাওয়ার জন্য। সে আর নামকরা পিংপং খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে না, পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরাই জীবনের একমাত্র নিয়তি হিসেবে মেনে নেয়।

                 vlcsnap-2015-07-14-17h10m18s213
সাকুমার জন্য অবশ্য ব্যাপারটা এতটা সহজ না। সাকুমা, খেলার প্রতি যার আবেগ আর কারো চেয়ে কম না; যে বড় হয়েছে পেকো আর স্মাইলের মত প্রতিভাদের সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতায়; যে দুর্দম, দৃঢ়কল্প। কিন্তু পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর আবেগ কতটা দূর পর্যন্ত নিয়ে যাবে যদি প্রতিভাটাই না থাকে? যদি পরাস্ত হতে হয় অপরিবর্তনীয় কোন নিয়তির কাছে? ওতা যেটা আগে থেকেই জানতো, আকুমার তা উপলব্ধি করতে লাগে ছয় পর্ব; যখন তাৎপর্যবহুল, ষ্মরনীয় এক ম্যাচে সে স্মাইলের কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয় – অতঃপর তার পিংপং ক্লাব থেকে বহিষ্কৃত হয়। সাকুমা আগে অনেকবারই ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু কখনোই এভাবে না। পারতপক্ষে তার ছোটবেলা কেটেছে পেকোর কাছে বারবার হার মেনে নেওয়ার পরিচিত অনুভূতি নিয়ে। পেকো ছিল অস্পৃশ্য। যাকে হারানোই ছিল তার কাছে অভিষ্ট লক্ষ্য, পরম সাফল্যের প্রতিরূপ। সাকুমা, যে এতদিন শুধু পেকোকেই সাফল্যের দুর্দমীয় চূড়া হিসেবে ভেবে এসেছে, এবং তা অবশেষে জয় করেছে, কিন্তু তাতে এতোটাই বিভোর ছিলো যে বাকি কোন কিছুর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি, বুঝতে পারে স্মাইল তাদের দুজনকে বেশ আগেই অতিক্রম করে গেছে, এবং বেশ ভালোভাবেই। বাস্তবতা আকুমাকে অবশেষে অপ্রীতিকর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। সে বুঝতে পারে নিজের অনেক পছন্দের এই খেলায় সে কখনোই সাফল্য পাবেনা, অনেক আরাধ্য এক স্বপ্ন তার কখনোই বাস্তবায়িত হবে না।

               vlcsnap-2015-07-14-17h12m00s28
কিন্তু তবুও সাকুমার গল্পটাই এই অ্যানিমের সবচেয়ে করুণ হতাশার গল্প নয়। কং ওয়েঙ্গার গল্পটা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পতনের। তার জন্ম পিংপং-এর দেশে। খেলোয়াড় জীবন কতটা কঠিন আর নিষ্ঠুর হতে পারে, তা নিয়ে কং এর কখনোই কোন বিভ্রম ছিলো না।  প্রতিভা কোন অভাব তার ছিলো না, দৃঢ়তারও – বরং তার একমাত্র শত্রু ছিলো ভালো করার চাপ, ব্যর্থ হবার আতঙ্ক। শুধুমাত্র একটি হারের কারণেই তাকে কিনা আসতে হল জাপানের মত ছোট এক দ্বীপরাষ্ট্রে, প্রতিভার প্রমাণ দেওয়ার জন্য! পিংপং হয়ে উঠলো তার বাড়ি ফেরার টিকেট।  কিন্তু সেই সাধারন জাপানী-দের কাছেই যখন তাকে হার মানতে হল – প্রথমে স্মাইলের সাথে না হেরেও হেরে, আর তারপর ষোলকলাপূর্ণ করতে কাজামার কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে – তখন তার সামনে নতুন এক বাস্তবতার আগমন ঘটল। কিন্তু সেটা ছিলো তার শিক্ষার অর্ধেক মাত্র।

                  vlcsnap-2015-07-14-17h12m58s91

অনবদ্য ঘটনাপ্রবাহে, প্রচারকালের মাত্র ১৩০ মিনিটের মাথায়, এক নাকউচুঁ অভিজাত থেকে সে পরিণত হল সবচেয়ে ভালো লাগার চরিত্রে। কং নতুন উদ্দ্যমে শুরু করে, নতুন আদর্শ আর দর্শনে দীক্ষিত হয়ে। কিন্তু পরপর দ্বিতীয়বারও কং-কে পরাজয়ের গ্লানি বইতে হয় – এবার পেকোর কাছে। প্রতিযোগীতা নিষ্ঠুর – অনেক সময় কেবল ভালো আর খারাপের পার্থক্যকারী না, ভালো আর অধিকতর ভালোর নিরূপণেরও মঞ্চ।

                 vlcsnap-2015-07-14-17h13m48s118
কাজামা যতই “হিরো”-তে অবিশ্বাসী হোক, তার একজন ত্রানকর্তার প্রয়োজন ছিলো আর যে কারোর চেয়ে বেশি। সে বড় হয়েছে পিংপং-কেন্দ্রিক এক পরিবারে। পারিবারিক চাপ তাকে বাধ্য করেছে পিংপং খেলতে, সে খেলায় ভালো হতে। কারণ তাতে মিশে আছে পরিবারের সম্মান, তাদের কম্পানীর বানিজ্যিক ভবিষ্যৎ। নিজস্ব  ইচ্ছা যেখানে পারিবারিক দাবির কাছে বন্দী। পিংপং কং-এর কাছে আর বাকিদের মত ভালোবাসার কোন স্থান না, স্বপ্নপুরনের মঞ্চ না, বরং বেঁচে থাকা, পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য আবশ্যকীয় বিষয়। চিরচেনা গল্প?

স্মাইলেরও বড় হওয়া ভাঙন ধরা পরিবারে, কিন্তু তার অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত।  তার জীবনে এমনিতেই হতাশার অনেক কারণই উপস্থিত, সেখানে নতুন করে পিংপং যোগ করার কোন ইচ্ছা তার কখনোই ছিলো না। প্রতিভা যতটাই থাকুক। পিংপং তার কাছে আর সবার মত প্রতিযোগীতা না, বরং মুখে “হাসি” ফুটানোর নিয়ামক। এবং ততোটুকুই। পিংপং-ই তাকে মানুষের সান্নিধ্যে এনেছে, তাকে যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি দিয়েছে, তাকে শিখিয়েছে লোহার মত স্বাদ হলেও তার ধমনী-শিরা দিয়ে বয়ে যাওয়া তরলপ্রবাহ, রক্তই, আর সবার মত লাল। স্মাইলের নতুন কোন হিরো-র প্রয়োজন ছিলো না, তার যে ইতিমধ্যেই একজন আছে। পুরো অ্যানিমে জুড়ে তার খোলসের মধ্যে চলে যাওয়া, সেই নায়কে পুনরাবির্ভাবের জন্য সংকেত হিসেবে পাঠানো – ব্যাটসিগনাল। কারণ সেই নায়কই  তখন বিধ্বস্ত, পথহারা।

                 vlcsnap-2015-07-14-18h00m01s170

সাকুমা পিংপং খেলা ছেড়ে দেয় কিন্তু যাওয়ার আগে সে তার আগে সে তার আগে “মুক্ত” করে দিয়ে যায় পেকোকে। পেকোর সহজাত প্রতিভা, তার নিজের যেটা কখনোই ছিলো না, ধ্বংস না করার পরামর্শ দেয়। আর পেকো, সে যখন তার অধপতনের চূড়ান্তে পৌছেছে, তখনই তার অতীত দিনে কথা মনে পড়ায়, খেলার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার কথা মনে পড়ায়, নতুন শুরুর মন্ত্রণা পায়। মাঝে মাঝে নায়কদেরও রক্ষাকর্তা দরকার হয়!

বারবার ব্যর্থতার কথা বললেও পিংপং দ্য অ্যানিমেশন শুধু নিরাশার গল্প না। বরং সম্পুর্ণ বিপরীত। বাস্তব ঘেঁষা, পতনের অনিবার্যতার কথা বলা; কিন্তু তা মেনে নিয়ে উত্তরনের, হার না মানার, এর সবটুকু উপভোগ করার বার্তাবাহী। পেকো ফিরে আসে, ভষ্ম থেকে, দুর্নিবার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নিয়ে; সে নিজে কং-কে মুক্তি দেয়, কাজামাকে মুক্তি দেয়। উড়তে শেখায়। কং জাপানকে আপন করে নেয়, কাজামা  নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় প্রত্যাশা আর পারিবারিক চাপের দাসত্ব শিকল থেকে। সেই সাথে পিংপং দ্য অ্যানিমেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বার্তাটা দিয়ে যায়।

জীবন কোন অঙ্কের সমীকরণ না, যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুসারে চললে আকাংক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে। জীবন আরো বেশি কিছু, আরো জটিল কিছু। হয়তো তা পিংপং খেলার মতই। জীবনে “জয়ী” হওয়া কখনোই সম্ভব না। এখানে সাফল্য কখনোই চিরস্থায়ী না। এখানে ব্যর্থতাও কখনোই চিরস্থায়ী না। কারণ জীবনের মহাত্ব্য কখনোই না পরাতে নয়, তা অবশ্যম্ভাবী, বরং পুনরোড্ডয়নের দৃঢ়কল্পতায়; তা থেকে শিক্ষালাভটাই আসল। জীবন সবকিছু নিয়েই, চিরবহমান, ধুসর।

                    

                 vlcsnap-2015-07-14-17h21m52s80        


vlcsnap-2015-07-14-17h21m19s1

আসলেই বাস্তব জীবনে নেই কোন কোন সুপারম্যান, ব্যাটম্যান; নেই কোন সুপার সেন্তাই, কামেন রাইডার। নেই কোন অতিপ্রাকৃত ক্ষমতাসম্পন্ন, অজেয় অতিমানব – যে বিপদের সময় রক্ষা করবে অবিশ্বাস্য দক্ষতায়; যার নাম ঘুরবে মানুষের মুখে মুখে, আর ত্রাস ছড়াবে দুর্বৃত্তদের হৃদয়ে। কিন্তু একজন “হিরো”, ত্রানকর্তা, অনুপ্রেরণার উৎস হওয়ার জন্য সেগুলোই একমাত্র গুণ? বাস্তব জীবনের নায়কেরা সম্ভবত কমিক বই আর চলচ্চিত্রের মত সার্বজনীন না; অনেকটা ব্যক্তিগত। হয়তো একজন বন্ধু, একজন শিক্ষক, হয়তো বাবা-মা বা কোন এক সহচর। বাস্তব জীবনের নায়করা আর যে কারোর মতই সাধারন, মানবিক আর অনেকাংশে ত্রুটিপূর্ণ।

                   vlcsnap-2015-07-14-17h19m03s163

মাত্র ১১ পর্বে – ২২০ মিনিটের প্রচারকালে পিংপং দ্য অ্যানিমেশন বলেছে কিছু উদীয়মান পিংপং খেলোয়াড়, অবিস্মরনীয় চরিত্রদের তারুন্য, তাদের বিশ্বাস, তাদের স্বপ্ন, তাদের সংগ্রাম, তাদের বেড়ে ওঠা,  “কামিং-অফ-এজ”-এর গল্প। এক বছর আগে পিংপং দ্য অ্যানিমেশন দেখা আমার কাছে যে অভিজ্ঞতা ছিল, ভালো লাগার জায়গাটা এক থাকলেও, এখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন।  সহজে বোধগম্য, আপাত দৃষ্টিতে সাধারন এক গল্প, কিন্তু অনেক বেশি ঘনিষ্ট, অনেক বেশি পরিচিত। অনেক বেশি অনুপ্রেরণার – এক “হিরো”।

আমি কি এখনো মনে করি পিংপং দ্য অ্যানিমেশন ২০১৪ সালের সবচেয়ে সেরা অ্যানিমে?
পিংপং দ্য অ্যানিমেশন আমার দেখা সবসময়ের সবচেয়ে প্রিয় অ্যানিমেরগুলোর তালিকায় একেবারে উপরের সারিতে থাকবে।

Animekhor Admins’ Choice (2014)

এনিমখোর এডমিন্স’ চয়েস

এ বছরের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এডমিনদের ভোটে নির্বাচিত এন্ট্রিগুলি নিয়ে একটি সাজেশনমূলক লিস্ট। এডমিন প্যানেলের চোখে সেরা যেসব এন্ট্রি ছিল, সেগুলি এখানে প্রকাশ করা হল।

admins-choice

 

Best Female Character (2014) – Miyazono Kaori [Shigatsu wa Kimi no Uso]

২০১৪ তে হয়ে যাওয়া সবগুলো পোলের মধ্যে এনিমখোরের সবার মাঝে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে সম্ভবত এই পোলটি। শিগাতসু ওয়া কিমি নো উসোর মিয়াযোনো কাওরি নাকি গেক্কান শৌজো নোযাকি কুনের সাকুরা চিয়ো, এই নিয়ে বিপুল উত্তেজনা, ব্যাপক প্রচারণা আর প্রচুর ভোটের ছড়াছড়ি এর আগে আর কোন পোলে দেখা যায়নি। এ থেকেই বোঝা যায় এই দু’ জনের মাঝে অবশ্যই এমন কিছু আছে যা দর্শকদের মন জয় করেছে ব্যাপকভাবে।
মিয়াযোনো কাওরির মিষ্টি হাসি, স্বাধীনচেতা মনোভাব, সুরের প্রতি ভালবাসা আর জীবনদর্শন মন ছুঁয়ে যাবে যে কারোরই। কঠিন বাস্তবতার মাঝেও হাসতে ভুলে না যাওয়া এই কিশোরী তার অদম্য মানসের কারণেই এনিমখোরের সবার মনে বেশ পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে বোঝাই যায়।
প্রথম স্থান একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেলেও কাওরির থেকে মোটেও পিছিয়ে নেই চিয়ো। নোযাকি কুনের প্রতি শর্তহীন ও অপরিসীম ভালবাসা থেকে বার বার নানা রকম হাস্যরসাত্মক ঘটনার শিকার হওয়া চিয়োর প্রতি এক মায়া জন্মাতে বাধ্য হয়েছে অনেকেরই। তাই, শুধু এ বছরের জন্যই নয়, অনেকের ক্ষেত্রে হয়ত সব সময়ের জন্যের পছন্দের চরিত্রের তালিকাতেও এদের নাম ঢুকে গিয়েছে।

 

17-best-female-char

Best Male Character (2014) – Archer [Fate/Stay Night: Unlimited Blade Works]

২০১৪ এর অন্যতম হাইপ সৃষ্টিকারী আনিমে ছিল ইউফোটেবলের ফেট/স্টে নাইটঃ আনলিমিটেড ব্লেডওয়ার্ক্স পার্ট ১। ২০০৬ সালে প্রচার সম্পন্ন হওয়া আনিমের রিমেক ছিল এটি আর এই আনিমের এবারের প্রধান আকর্ষণ ছিল আর্চার। প্রথম পর্ব থেকেই এবার আর্চার নিজের খেল দেখাতে থাকে। আর তার আইডিয়ার এবং আনিমের মূল চরিত্র শিরোর সাথে তার আচরণ শুধু রহস্যেরই অবতারণা করেছে। আর তার সাথে তার অস্ত্র Caladbolg তো ছিলই। তাতেই মাত্র ১২ পর্বের সীমিত স্ক্রিনটাইম সত্ত্বেও হাচিকেন ইউগোকে পিছে ফেলে সেই এবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেইল ক্যারেক্টার।ঐদিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা হাচিকেন হয়তো এমন কোন ফ্ল্যাশি, ক্যারিজমাটিক, ড্যাশিং চরিত্র না। কিন্তু অসম্ভব প্রেরণার উৎস এই চরিত্রও গিন নো সাজি আনিমের দুই সিজনে জয় করে নিয়েছে অনেকের মন।

16-best-male-char

 

Best OST (2014) – Zankyou no Terror

কাউবয় বিবপের পর আবার ফিরে এসেছেন ডিরেক্টর ওতানাবে আর কম্পোজার ইয়কো কানো Zankyo No Terror নিয়ে।
এবং অ্যানিমেটার পাশাপাশি OST ও যে সবার মন জয় করে নিয়েছে সেটা বোঝা যায় এনিমখোর টপচার্ট ২০১৪ এর বেস্ট OST এর পোল দেখলই।
সেকেন্ড পজিশনে থাকা Aldonah Zero (২৪ ভোট) থেকে প্রায় দ্বিগুন ভোটে এগিয়ে থাকা(মোট ৪২ ভোট) Zankyo no Terror এর ওপেনিং সং, এন্ডিং সং আর সাউন্ড ট্র্যাক যে সবাইকে বিমোহিত করেছে সেটা আসলে বলাই বাহুল্য।
ধন্যবাদ ইয়োকো কানোকে অসাধারন সব মিউজিক ট্র্যাক উপহার দেয়ার জন্য

সময় থাকলে আপনিও ডাউনলোড করে নিতে পারেন Zankyo no Terror এর ২টি OST এবং সেখান থেকে পছন্দের মিউজিক ট্র্যাক নিয়ে সাজাতে পারেন আপনার প্লে লিস্ট।

15-best-ost

 

Best Ending Song (2014) – “believe” by Kalafina

Fate/Zero তে তিন সুন্দরী ও ট্যালেন্টেড ভদ্রমহিলার ব্যান্ড Kalafina এর করা ওপেনিং ট্র্যাক to the beginning মনে আছে? সেই Kalafina ই এবার করছে Fate/StayNight: Ultimate Blade Works এর এন্ডিং believe. আবার মুগ্ধ করেই ছেড়েছে তারা এ গানটি দিয়ে। পুরোগানটা শুনে ফেলুন এখানে:
http://www.jpopsuki.tv/video/Kalafina—believe/4b1a0fc506c04ee03c1a3b1a2a8ac7db

দ্বিতীয় স্থানে আছে বছরের অন্যতম বিস্ময়ের পরিচয় দেওয়া ক্লাসিক আনিমে PingPong the Animation এর এন্ডিং ট্র্যাক Ano Hero to Bokura no Tsuite। Merengue এর গানটি শুনুন এখানে:
https://www.youtube.com/watch?v=iqxzXesDHu0

14-best-ed

 

Best Opening Song (2014) – “unravel” by Ling Tosite Sigure

টোকিয়ো গুল আনিমের বাকি সব দিক নিয়ে যেমনই মতামতথাকুক মানুষের, ইন্ডি রক ব্যান্ড TK from Ling Tosite Sigure এর Unravel ছিল বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওপেনিংগুলোরএকটি। গানটির অরিজিনাল ভিডিও দেখে ফেলুন এখানে।
http://www.jpopsuki.tv/video/TK-from-Ling-tosite-sigure-–unravel/9b5ddf0d3556c44d5053d8bb1eaa39c6

অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বছরের শেষে এসে সম্প্রচার শুরু করেইসেনসেশনে পরিণত হওয়া Shigatsu Wa Kimi no Uso এর জন্য করা Goose House এর অত্যন্ত সুন্দর গান Hikaru Nara. গানটার খুব ভালো একটি লাইভ পারফরম্যান্স:

https://www.youtube.com/watch?v=SnXkhkEvNIM

13-best-op

 

Best Female Seiyuu (2014) – Suzuko Hara

মিষ্টি, সহজ সরল বাচ্চা মেয়ে নারু কোন এনিমখোরের মন জয় করতে পারেনি, সেটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। সুচারুভাবে তার কণ্ঠ দিয়ে চরিত্রকে যিনি প্রাণ দান করেছেন, সেই সুজুকো হারা এবারের পোলে বিপুল ভোটে বিজয়ী। আশা করা যায় ভবিষ্যতেও এমন মনে রাখার মত চরিত্রে তিনি আবারো কণ্ঠ দান করবেন।

12-best-female-seiyuu

Best Male Seiyuu (2014) – Daisuke Ono

ক্যারিসমাটিক, ম্যানলি দায়সুকে অনো আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন অনেকদিনই. গত বছর পোলে হিরোশি কামিয়ার বিপুল ভোটের জয়ে শেষমেষ পাদপ্রদীপের আলোতে আসতে পারেননি, কিন্তু এই বছরে কুজো জোতারো সহ আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় চরিত্রের কণ্ঠ দিয়ে উনি মন জয় করেছেন এনিমখোরদের।

11-best-male-seiyuu

 

Best Anime Movie (2014) – The Wind Rises

বাংলাদেশের থিয়েটারে দুঃখজনকভাবে জাপানী চলচ্চিত্র মুক্তি পায় না বলে, এনিমখোরের পোলটা মূলত ছিল “২০১৪ সালে ব্লুরে/ডিভিডি মুক্তি পাওয়া – সেরা অ্যানিমে মুভি”। এদিক থেকে ২০১৪ সালে স্ট্যান্ড-এলোন অ্যানিমে মুভির ভালো একটা খরা গেছে বলা যায়। তাই এটা বিষ্ময়কর না যে এই পোলের জয়ী অ্যানিমে মুভি মূলত ২০১৩ সালের। কিন্তু Madoka Magica, Ano Hana, Ghost in the Shell, Lupin III, Detective Conan-এর মত জনপ্রিয় সব ফ্র্যাঞ্চাইজির মুভিকে পিছনে ফেলে যে তুলনামুলক অনেক কম জনপ্রিয় Tamako Market সিরিজের সিক্যুয়েল Tamako Love Story দ্বিতীয় হয়ে গেল তা বড় একটা বিষ্ময়ই ছিল। এবং অন্যতম বড় অঘটন।অন্যদিকে আগামী বছর অস্কারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অসাধারণ কাহিনী নিয়ে তৈরী Giovanni’s Island বা ইসাও তাকাহাতার (সম্ভবত) বিদায়ী চলচ্চিত্র Tale of Princess Kaguya কিছু করতে পারে কিনা তা দেখার বিষয়, কিন্তু এনিমখোরের পোলে এই দুটি মুভি বেশ উপেক্ষিতই ছিল। বরং এই বছরের অস্কার না জিতা, জিবলীর আরেক কর্ণধার হায়াও মিয়াজাকির (সম্ভবত) বিদায়ী চলচ্চিত্র একাধিপত্য দেখিয়ে জিতেছে।সৃষ্টির সুখ আর সেই সৃষ্টির বয়ে নিয়ে আসা পরিণতির দুই বিপরীতধর্মী দ্বন্দ্বের অসাধারণ প্রতিফলন ঘটা, The Wind Rises/Kaze Tachinu এনিমখোর টপচার্ট ২০১৪ এর সেরা মুভি।

 

10-best-movie