Bleach [লাইভ অ্যাকশন রিভিউ] — Tahsin Faruque

(Mild Spoilers warning)

 
অ্যানিমে লাইভ অ্যাকশন অ্যাডাপ্টেশন, আর নেটফ্লিক্স – এই দুইটার কম্বিনেশন অনেকের মনেই আতঙ্কের সৃষ্টি করে এসেছে যেন। এই সিরিজে এর আগে দুটি এরকম লাইভ অ্যাকশন মুভি দেখেছিলাম, ডেথ নোট আর ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্ট। দুটি দেখেই ভয়ংকর হতাশ হয়েছিলাম। তার অনেকদিন পর আজকে হঠাত এটার ট্রেইলারটা চোখে পড়তে মনে হল, ট্রেইলারে যেসব দৃশ্য চোখে পড়লো তা দেখে অন্তত মনে হয়েছে সোর্সকে সম্মান করেই বানিয়েছে (এক্ষেত্রে মাঙ্গার সাথে অ্যানিমেকেও সোর্স হিসাবে ধরছি)। মুভিই তো, দেখেই নেই না হয় কেমন হল!
 
খুব অল্প যে কয়টা লাইভ অ্যাকশন অ্যাডাপ্টেশন দেখা হয়েছে অ্যানিমের, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচাইতে বেশি ভাল লেগেছে এইটা, তবে মন্দের ভাল হিসাবে নয়, আসলেই ভাল লেগেছে। শুরুতেই বলে নেই, এই মুভিতে ব্লিচের Agent of the Shinigami আর্কটি পুরাটা অ্যাডাপ্ট করেছে। যারা ব্লিচ পড়েছেন বা দেখেছেন, তারা জানেন এই আর্ক অ্যাডাপ্ট করলে গল্পের কোন জায়গায় গিয়ে মুভিটি শেষ হবে। একই জায়গাতেই শেষ হয়েছে, তবে গল্পে সামান্য বৈচিত্র হলেও এনেছে যেন মুভিটি স্বতন্ত্র মুভি হিসাবেও কাজ করে। সিকোয়েল মুভি আসবে কি আসবে না তার যেহেতু নিশ্চয়তা নেই, তাই সেরকম হিসাব করেই গল্প শেষ করতে হয়।
 
মুভিতে স্ক্রিন রাইটার ও ডিরেক্টরের যে হাল্কা কিছু ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নেয় নাই তা নয়, বরং লাইভ অ্যাকশন মুভি হিসাবে একটা মাঙ্গা বা অ্যানিমের গল্পকে তুলে ধরতে হলে কিছু জিনিসের পরিবর্তন করতেই হবে। মাঙ্গাতে বা অ্যানিমেশনে অনেক দৃশ্য ও রিয়্যাকশন যেভাবে কাজ করে, লাইভ অ্যাকশনে তা কাজ করে না। সেখান বাস্তব মানুষের বাস্তব রিয়্যাকশন দেখাতে হয়, যা গল্পের অরিজিনাল সোর্সের সাথে কনফ্লিক্ট করতেও পারে। তবে ব্লিচের এই মুভিতে সেসব ছোটখাট পরিবর্তন যা এনেছে, আমার কাছে তা খুবই পজিটিভ দিক মনে হয়েছে মুভিটির। এমনিতে মূল গল্পে ও তার চরিত্রদের মধ্যে এতটুকুও পরিবর্তন আনে নাই এখানে। ব্লিচের অরিজিনাল গল্পের প্রথম দিকের অংশতে অনেক কমেডি উপাদান ছিল, মুভিতেও সেগুলি রয়েছে। ইচিগো-রুকিয়ার কথোপকথন, ইচিগোর বন্ধুদের সামনে রুকিয়ার উপস্থিতি ও তাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথন, চালচলনে কোন অহেতুক জিনিস আনা হয় নি। যা ছিল, একদম আসল গল্পকে সম্মান জানিয়েই দেখানো হয়েছে। ইচিগো রুকিয়ার কথাবার্তা শুনে শব্দ করেই হেসেছিলাম মুভি দেখার মাঝে।
 
 
মুভির স্বার্থেই মাঙ্গা বা অ্যানিমের প্রথম দিকের হলোর সাথের অনেকগুলি ফাইট দেখানো হয় নি, এবং সেই ব্যাপারটি খারাপ হয় নি আসলে। হলোর উপস্থিতি অতিরিক্তও নয়, একদম কমও নয়। আর এখানে সিজিআই-এর কাজ একদম খারাপও নয়, বেশ বিশ্বাসযোগ্য।
চরিত্রদের মধ্যে সবচাইতে ভাল লেগেছে আসলে ইচিগোকেই। নায়ককে ধন্যবাদ দিতেই হবে, এই চরিত্রটাকে লাইভ অ্যাকশনে প্রাণ দেবার জন্যে। এই আর্কে ওরিহিমের উপস্থিতি সেরকম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না আসলে, তাই ওরিহিমে এখানে সাইড ক্যারেক্টারদের দলেই চলেই গিয়েছে। চাদো ও উরইয়ুর চরিত্র করা অভিনেতাদের কাজ ভালই ছিল। তবে রুকিয়ার চরিত্রটি একটু সমস্যাজনক ছিল। নায়িকার কাজ একদম খারাপ যে তা নয়, কিন্তু রুকিয়ার মুখে ৯০% সময় জুড়েই একটি রিয়্যাকশন লেগে ছিল, তা সে ঐ মুহুর্তে খুশি হোক বা অবাক, বিরক্ত হোক বা রাগ, চেহারার অভিমূর্তি দেখে বুঝে উঠে সমস্যা হত। মাঙ্গা পড়া ছিল বলে জানি এই জায়গাতে রুকিয়া আসলে কেমন অনুভব করছিল, ঐ জায়গাতে রুকিয়া আসলে রাগ নয়, অবাক হয়ে ছিল। এটা জানা না থাকলে মুভিটি দেখার সময়ে মনে হয়, রুকিয়ার সমস্যা কী!? আর রেঞ্জি ও বিয়াকুয়ার চরিত্র দুটি যেহেতু এই আর্কের ভিলেইন ছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে তাদের আচরণ একটু বেশি ভিলেইনসুলভ হয়ে গিয়েছিল। ভিলেইন হলেও যে তাদের আচরণ এরকম হবার কথা নয় তা মাঙ্গা পাঠক বা অ্যানিমের দর্শকের জানার কথা। রেঞ্জির অভিব্যক্তি মাঝেমধ্যে অতিরঞ্জিত হয়েছে।
 
আর চরিত্রদের কথা বললে ইচিগোর দুই পিচ্চি বোন দুটির কথা না বললেই নয়! অতিরিক্ত কিউট দুটি পিচ্চি তাদের স্ক্রিনটাইমের প্রায় পুরাটাই মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখার মত অভিনয় করেছে।
 
সব শেষে মুভির পজিটিভ ও নেগেটিভ দিকগুলি অল্পের মধ্যে তুলে ধরিঃ
 
(+) পজিটিভ দিকঃ
  • সোর্সের প্রতি সম্মান দেখানো
  • ইচিগো
  • ইচিগোর দুই বোন
  • ইচিগো-রুকিয়ার কথোপকথন
  • সোর্ড ফাইটের দৃশ্যগুলি (চমৎকার ছিল এগুলি)
  • অ্যানিমেশন (সেরকম আহামরি না হলেও, বিশ্বাসযোগ্য)
  • ইচিগোর স্কুলের অংশগুলি
  • সউল-রিমুভিং গ্লাভস
  • শেষের ফাইট
(-) নেগেটিভ দিকঃ
  • রুকিয়ার চরিত্র
  • রেঞ্জি ও বিয়াকুয়ার “ভিলেইন” সুলভ আচরণের অতিরিক্ততা
ট্রেইলার দেখে বা একের পর এক অ্যানিমে লাইভ অ্যাকশনের ব্যর্থতা দেখে ভয় পেয়ে থাকলে চিন্তা ছাড়া মুভিটি দেখে নিতে পারেন। ব্লিচের লাইভ অ্যাকশন মুভি আমার দৃষ্টিতে অন্যতম সফল অ্যাডাপ্টেশন। এই মুভির সিকোয়েল বের করুক এই আশাতেই আজকের রিভিউ শেষ করছি।
 
ও হ্যাঁ, আমার রেটিংঃ
মুভি হিসাবেঃ ৭/১০
অ্যানিমে আডাপ্টেশন মুভি হিসাবেঃ ৮/১০
 

Tower of God, Season 1 Anime – রিভিউ, আশা/হতাশা, ২য় সিজন নিয়ে আকাঙ্ক্ষা, এবং ১ম সিজনের গল্প নিয়ে সামান্য স্পয়লারযুক্ত আলোচনা – Tahsin Faruque

বিশাল বড় টাইটেল দেখে আগেই বিরক্ত না হতে অনুরোধ করছি। সিরিজটা নিয়ে বেশ অনেক কিছু বলার ছিল। এক পোস্টেই আপাতত মনের কথাগুলি বলে ফেলছি। টাইটেলের মত পোস্ট এত বড় হবে না আসলে।
টাওয়ার অভ গড – ২০২০ সালের সবচাইতে আলোচিত এনিমেগুলির একটি। ১০ বছর আগে শুরু হওয়া ও দিনে দিনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠা কোরিয়ান ওয়েবটুনের উপর ভিত্তি করে বানানো এনিমেটি নিয়ে আগ্রহের একটা বড় কারণ ছিল যে, এই সিরিজের মাধ্যমে কোরিয়ান মানহা বা ওয়েবটুনের এনিমে এডাপ্টেশনের পথে যাত্রার শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে নোবেলিজের ছোট ২-১ পর্বের এডাপ্টেশন ছিল, কিন্তু সেগুলিকে ঠিক আসল এনিমে বলা যায় না। টাওয়ার অভ গড দিয়েই আসল যাত্রাটা শুরু, যা এরপরে গড অভ হাই স্কুল দিয়ে সামনের দিকেই আগাতে থাকবে। এজন্যে এই সিরিজটি একটি বিশাল বড় মাইলফলক হতে যাচ্ছে। তো, মাইলফলক সিরিজ হিসাবে কেমন অবদান রাখলো এটি?
আমার মতে, সিরিজটি অনেক অনেক বেশি ভাল হতে পারতো। তবে সেরকম ভাল না হলেও খারাপ হয় নি। সিরিজটি যদি দেখে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনার মনে সিরিজটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকবে, মনে হবে কিছুই তো বুঝলাম না কী হল, কেন হল, একগাদা প্রশ্নের উত্তর পাবার বদলে আরও একশত প্রশ্ন গড়ে উঠলো। ব্যাপারটা স্বাভাবিক, কারণ শুধু এটুক মনে করতে পারেন যে এই ১৩ পর্ব যা দেখলেন (কিংবা যা দেখবেন যদি সিরিজটি দেখার প্ল্যান করেন), এটি অনেকটা নারুতো বা ব্লিচ বা ওয়ান পিস ধরণের বিশাল বড় এক মেগাসিরিজের সূচনা মাত্র। প্রথম ১৩ পর্ব মানহাটির প্রথম সিজন (অর্থাৎ প্রথম ৮০ পর্ব) এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠলেও, এটুক অংশকে আসলে বড় সাইজের একটি prologue বলা যায়। ১ম সিজন শেষে গল্প যেখানে এসে দাঁড়ালো, সেখান থেকেই “আসল গল্প” শুরু হতে যাচ্ছে।
তবে এই কথা বলার অর্থ এটা না যে এর সব ত্রুটি মাফ হয়ে গেল। গুণ অনেক আছে যেমন, তেমনই দোষও নেহাত কম নেই। আপাতত ভাল অংশটুকু নিয়ে আলোচনা দিয়ে শুরু করি।
  • সম্ভবত সিরিজটির সবচাইতে ভাল দিক হচ্ছে এর মিউজিক। কেভিন পেনকিন সামনের দিনের সবচাইতে বড় এনিমে মিউজিক কম্পোজারদের একজন যে হতে যাচ্ছে, তা মেইড ইন এবিস, শিল্ড হিরোর পর টাওয়ার অভ গডের মাধ্যমে আবার একবার প্রমাণ করলো।
  • প্রথম দেখায় এনিমেশন তেমন ভাল লাগে নি, তবে এরপর একটু হাই কোয়ালিটির ভিডিওতে দেখার সময়ে বুঝলাম এনিমেশন আসলে খারাপ নয়। মানহার অরিজিনাল আর্টস্টাইল শুরুর দিকে খারাপ ছিল বেশ, নুবিশ আঁকা ছিল। পরের দিকে মাঙ্গাকার স্কিল বাড়তে থাকে, এবং আঁকার মানও উপরের দিকে উঠতে থাকে। এনিমের আর্টস্টাইল অনেকটা মাঙ্গাকার পরের দিকের আর্টস্টাইলের সাথে মিল রেখে করা হয়েছে। কিছুটা নতুনত্ব আছে তা অস্বীকার করবো না।
  • যদিও ওয়ার্ল্ড বিল্ডাপ-এর প্রায় কিছুই দেখি নি আমরা, তারপরেও টাওয়ার অভ গডের দুনিয়াটা যে বেশ নতুনত্ব কিছু নিয়ে এসেছে, সেটা অবশ্যই বলতে হবে। টাওয়ার-টা আসলে কী, এর বাইরে কী আছে, এটা কত বড় – এমন হাজারোটা প্রশ্ন এটাকে বিভিন্ন মেগাসিরিজের মধ্যে একটাকে ইউনিক কিছু বানাতে পেরেছে। তথাকথিত “টাওয়ার” বেয়ে উঠতে গেলে যে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা উতরে যেতে হবে, এটা দেখলে প্রথমেই হান্টার হান্টারের কথা মনে পড়তে পারে দর্শকের। তবে তারপরেও সিরিজটিতে এসব পরীক্ষানিরীক্ষার ধরণে অন্যরকম স্বাদ পাওয়া যায়।
  • একগাদা চরিত্র থাকলেও প্রায় সব বড় চরিত্র দর্শকদের পছন্দ হবার মত করেই বানাতে পেরেছে।
এবার আসি ক্রিটিসিজম প্রসঙ্গে।
 
  • অনেক তাড়াহুড়া করে গল্প আগাবে মনে হতে পারে। ৮০ চ্যাপ্টারের কন্টেন্ট ১৩ পর্বে এঁটে দেওয়া সহজ ব্যাপার না। পর্ব সংখ্যা অন্তত আরও ৩-৪টা বেশি হওয়া উচিৎ ছিল।
  • বড় বড় অনেক রহস্যের ব্যাখ্যা এখন না দিলেও, গল্পের এই পর্যায়ে এসে ওয়ার্ল্ড বিল্ডাপ নিয়ে যেসব সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দর্শকের জানতে পারা উচিৎ, তার অনেক কিছুই খোলাসা করা হয় নি।
  • আর বাকি যেসব নেগেটিভ দিক নিয়ে আলোচনা করবো, তা একটু নিচে স্পয়লার ট্যাগে আছে। দেখে নিতে পারেন।
 
 
২য় সিজন নিয়ে আশা/হতাশাঃ
১ম সিজন যেমনই হোক না কেন, দর্শকমহলে বেশ ভাল রিসিপশন পেয়েছে। ক্রাঞ্চিরোলের নিজস্ব প্রোজেক্ট বলে তারা ভাল করেই জানে কত বেশি দর্শক এটা দেখতে পেরেছে। (এক্ষেত্রে বলে রাখি, আপনি যদি বাংলাদেশে বা এই সাবকন্টিনেন্টে বসে দেখতে চান, ক্রাঞ্চিরোলে গিয়ে একদম 1080p-তেই দেখতে পারবেন আরামসে, একদম ফ্রিতে। তাই ফ্রিতে অরিজিনাল কন্টেন্ট সাপোর্ট করতে চাইলে একদম ক্রাঞ্চিরোলে গিয়েই দেখুন।) এজন্যে ২য় সিজন না আনাটা বোকামিই হবে তাদের জন্যে। তবে কিছু leaked source থেকে জানা গিয়েছে সামনের বছর ২য় সিজন আসবে। অফিশিয়াল ঘোষণা না আশা পর্যন্ত খবরটিকে আপাতত গুরুত্ব দিচ্ছি না।
তবে ২য় সিজন যদি আসে, আমি চাইবো যেন তারা rush না করে ভাল এডাপ্টেশন করতে পারে। ১ম সিজনের গল্প মানহাতে অনেক ধীরে ধীরে আগায়, যেটা আসলে rush না করলে দর্শককে বিরক্ত করে ফেলতে পারতো। তবে ২য় সিজন থেকে গল্প মানহাতেই ভাল স্পিডে আগায়। এটার স্পিড এনিমেতে আরেকটু বাড়াতে গেলে সর্বনাশ হবে। খেয়াল রাখবেন, টাওয়ার অভ গডের দুনিয়াটা বিশাআআআল, আর এখানে এত বেশি বেশি চরিত্র আছে যে, এনিমের পেসিং ঠিকমত না হলে দর্শকদের মাথা খারাপ হয়ে যাবে। স্পয়লার না দিয়েই বলি, মূল গল্পের অনেক মেইন চরিত্রকে এখনও আমরা এনিমের ১ম সিজনে দেখিই নাই। ২য় সিজন থেকেই আসলে এসব মেইন চরিত্রদের দেখতে পারবো। এজন্যে তাদের ক্যারেক্টার বিল্ডাপ খুব ভালমত হওয়া দরকার। ভালমত হওয়া দরকার সামনের দিকের কয়েকটা অসাধারণ রকমের ভাল story arc-এর। তাই, শুধু পেসিং জিনিসটি যদি ঠিক করতে পারে, আর গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ না কেটে ফেলে, তাহলে ২য় সিজন থেকে এনিমে নিয়ে কোন চিন্তা থাকবে না আমার।
 
কাট-কন্টেন্ট যা থাকা উচিৎ ছিল, পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা পরিবর্তন করা উচিৎ ছিল নাঃ
২য় সিজনের স্পয়লার দিব না, তবে ১ম সিজন যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আশা করি নিচের লেখাটি পড়তে সমস্যা হবে না। এখানে আমি মূল মানহার ১ম সিজনের শেষ পর্যন্ত গল্পের অংশে যেসব বড় বড় কন্টেন্ট এনিমেতে বাদ দিয়েছে বা পরিবর্তিত করেছে তা নিয়ে আলোচনা করবো। তাই, একটি স্পয়লার ওয়ার্নিং থাকলোঃ
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
  • সবার আগে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা বাদ দিয়েছে এনিমেতে (যেটার জন্যে আমি বেশ ভাল রকমের বিরক্ত), তা হল…
    আপনি কী জানেন যে Bam x Endorsi একটা বিরাট ব্যাপার!? জানেন না? ওয়েবটুনটি না পড়লে জানার কথাও না, কারণ এনিমেতে এই বিশাল জিনিসটা সোজা সাপটা বাদ দিয়ে দিয়েছে!!! খুব বিশ্বাস না হলে গুগলে গিয়ে Bam x লিখুন, এরপর Endorsi নিজে থেকেই চলে আসবে। গল্পের এই পর্যায়ে বাম ও এন্ডোরসির এই সম্পর্কে যে একদম রোমান্টিক তা নয়, তবে তাদের অনেক interaction একদম চোখ বন্ধ করে বাদ দিয়েছে এনিমেতে। তাদের এই সম্পর্ক এত বিশাল বড় যে এটার এক বড় প্রভাব ২য় সিজনে দেখতে পারবেন (যদি এনিমেতে দয়া করে সেটাও বাদ না দিয়ে রেখে দেয়)।
  • এন্ডোরসির ক্যারেক্টার বিল্ডাপের অনেক কিছু বাদ পড়ে গিয়েছে। বিশাল বড় ইগো-ওয়ালা এই চরিত্র যে ১ম সিজন শেষের আগেই best girl হয়ে যায়, তা এনিমে দর্শক হয়তো জানবেও না মানহা না পড়লে। Bam x Endorsi এর অংশগুলা যা বাদ দিয়েছে, সেখানেই এগুলির অনেক কিছু পড়েছে।
  • Rachel-এ সিরিজে অনেকবারই এমন আচার আচরণ করতে দেখিয়েছে, যাতে তার প্রতি শুরু থেকেই সন্দেহ থাকে সবার। ব্যাপারটি মানহাতে সেরকম ছিল না। এন্ডোরসির কথাতে এনিমের মত সে রাগ হয় নি, কথায় কথায় মানুষজনের তাকে সন্দেহ করতে দেখা যায় নি। সোজা কথা, ১২-১৩ পর্বে তার সেই বিট্রেয়ালটা একটা সারপ্রাইজ হিসাবেই ছিল মানহাতে, এনিমতে সেটা foreshadow করে এসেছে যখনই পেরেছে।
  • ক্রাউন গেমের শেষের দিকে গিয়ে বাম শিনসুতে পরিবর্তিত হয়ে যায় নি আসলে, মানহাতে জিনিসটা এভাবে দেখিয়েছিল যে, হোয়া রিউনের দিকে তার কাছ থেকে এক ঝলক শিনশু এটাক গিয়েছিল। তার ঐ শিনসু এটাকে ক্রাউন ধ্বংশও হয় নি, আর রাগ হারিয়ে রিউনকে মারতে গেলে ব্ল্যাক মার্চ সময় থামিয়েও দেয় নি, বরং বাম সেখানেই সেন্সলেস হয়ে যায়।
  • ব্ল্যাক মার্চের কথা যেহেতু এসেছিল, যতদূর মনে পড়ে, এনিমেতে একে কাতানা বলে উল্লেখ করেছিল মনে হয়। কোরিয়ান থেকে জাপানিজ ট্রান্সলেশনের ভুল কিনা জানি না, কিন্তু ব্ল্যাক মার্চ কাতানা নয়, নিডল (needle)। হ্যাঁ, নিডল বা সুই-টাইপের অস্ত্র। সোর্ড আর নিডল দুই আলাদা জিনিস, কেন সেটাও এনিমেতে ভাল করে বলে নি।
  • বাম যে বিশেষ কিছু, বা ওর মধ্যে যে ভয়ংকর পটেনশিয়াল লুকানো, সেটা আমার মনে হয় এনিমতে ভালমত দেখায় নি। কয়েকটা উদাহরণ দেইঃ
    * লেরো রো-এর সেই শিনসু টেস্টের সময়ে সবাই শিনসু দেওয়ালের পিছে চলে গিয়েছিল, বাম বাদে। এই ঘটনাটা এনিমেতে দেখে মজা লাগতে পারে, তবে যেটা সবচাইতে বড় ধাক্কা দিত, সেটা ছিল লেরো রো-এর মুখের এক্সপ্রেশন। মানহাতে লেরো রো যেই চেহারা করেছিল, সেটা দেখলে মনে হত ও জীবনের সবচাইতে বড় ভয়ংকর কিছু দেখেছে নিজ চোখে।
    * ক্রাউন টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র ওর uncontrollable shinsu flowটাই ওর ক্ষমতার একমাত্র indication ছিল না। মাঝখানে একটা বড় ফাইট একদম বাদ দিয়েছিল। সেখানে বামের ছোটখাট কিছু কারিশমা দেখলে বুঝা যেত ওর ট্যালেন্ট ধীরে ধীরে বাড়ছে।
    * Position training class, Hide and Seek – এই দুই জায়গাতে ranker-দের শিখানো দুইটা কৌশল এক দেখাতেই বাম শিখে ফেলে, যেটা ঐ ranker-দের ২-৩ বছর বা কয়েকশত বছর লেগেছিল শিখতে। বামকে একবারেই সেগুলি করতে দেখার পর ranker-দের মুখের এক্সপ্রেশন দর্শকদেরকে খুব সহজেই বুঝিয়ে দিতে পারতো বাম আসলে কোন লেভেলের monster. দুঃখের ব্যাপার, এনিমতে এগুলি ভালমত দেখায় নি।
  • বিভিন্ন পজিশনগুলি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল (Fisherman, Wave Controller, Light Bearer, Scout etc.), সেই অংশটি অল্পের মধ্যে সেরেছে এনিমেতে। এই জিনিসটা এনিমেতে মানহার মত বড় করে দেখানো উচিৎ ছিল। সেটা না করাতে অনেকেই কনফিউজড হয়ে যেতে পারে, কারণ এই ধরণের পজিশন আইডিয়াটার সাথে আমরা এনিমে দর্শকরা পরিচিত না। ইউনিক একটা কন্সেপ্ট যেহেতু, এটা ভাল করে বুঝানো উচিৎ ছিল এনিমেতে। মানহাতে সেটা করেছিল।
  • আবার বাম ও এন্ডোরসির কথায় আসি। শেষ দৃশ্যে বামকে অনেক বেশি আশাবাদী হিসাবে দেখিয়েছে এনিমেতে। মানহাতে বাম তখন এত বড় বিট্রায়ালের পর মানসিকভাবে ভেঙ্গেচুড়ে গিয়েছে। জিনিসটা ২য় সিজনে রেটকন না করলে আসলে দুই সিজনের বামকে মিলাতে কষ্ট হবে দর্শকের। আর ওদিকে বামের “মৃত্যু”-এর খবরে এন্ডোরসির মনের ভিতর যেন শূন্যতায় ভরে গিয়েছিল। হ্যাঁ, মানহার এই বড় জিনিসটাও এনিমেতে নাই, কারণ কোন এক অদ্ভুত কারণ পুরা Bam x Endorsi জিনিসটা বাদ দিয়েছে এনিমেতে (যেই জিনিসটা মাফ করতে পারবো না)।
আরও কিছু ছোটখাট পরিবর্তন বা কাট-কন্টেন্ট ছিল, তবে সেগুলি অত গুরুত্বপূর্ণ না। এডাপ্টেশন করতে গেলে ওটুক পরিবর্তন করাই যায়। তবে উপরে বলা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলি শুধু শুধু গল্পকেই পরিবর্তন করে দিবে।
 
সবশেষে বলবো, মানহা যদি পড়তে চান, কষ্ট করে ১ম সিজনটা পাড়ি দিতে পারলেই চলবে। ২য় সিজনের একদম শুরু থেকে টানটান উত্তেজনা! খুবই ফ্যানফেভারিট একগাদা নতুন মেইন চরিত্র যুক্ত হবে, থাকবে পুরানো চরিত্রদের badass প্রত্যাবর্তন, আর সবচাইতে বড় আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে বাম নিজেই। এনিমের ২য় সিজনটাতে মানহা থেকে ভালমত এডাপ্টেশন করুক, এই আশায় পোস্ট এখানে শেষ করছি।

Devilman: Crybaby-এর সবচাইতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলির একটি, Baton Passing দৃশ্যের ব্যাখ্যা — Tahsin Faruque Aninda

Miki_Makimura_(Crybaby)_ddf0e9c2-08cc-4236-8ff8-aff5e6d82d34

[Spoiler Warning: যেহেতু আনিমের সবচাইতে বড় স্পয়লারের একটি এটি, তাই আনিমে শেষ করে লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইলো।]

আনিমেটির একদম শেষ পর্বে আর্মাগেডন ধরণের এক বড় ফাইট দেখতে পাই আমরা। স্যাটান আর ডেভিলদের দলের বিপক্ষে আকিরা আর ডেভিলম্যানের দল। এই বড় ফাইটের মাঝখানে খুব আর্টিস্টিকভাবে একটি দৃশ্য যোগ করা হয়েছেঃ ব্যাটোন পাস করার দৃশ্য। হঠাৎ এরকম ফাইটের সময়ে মিকি, মিকো, আকিরা আর রিয়োর মধ্যে ব্যাটোন পাস করার দৃশ্যের মানে কী!? এই শেষ ফাইটগুলিতে তো আকিরা বাদে বাকি কেউ ছিলও না, তাহলে? আসলে, এই দৃশ্যটার একটা বেশ বড় অর্থ রয়েছে।

আনিমেটির মূল থিম কী, জানেন?

ভালবাসা।

হ্যাঁ, আকিরার ডেভিলম্যান হয়ে ডেভিলদের সাথে মারামারি, তারপর কাহিনী এক দিক থেকে গড়াতে গড়াতে আরেকদিকে চলে যাওয়া, এত সবকিছু মূলে আসলে একটি মূল ব্যাপার ছিল, তা হল – ভালবাসা। কীভাবে, বুঝতে পারছেন না? চিন্তা নেই, সেটি বুঝানোই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।

আর হ্যাঁ, আনিমের মূল থিম ভালবাসা – এইটা আমার নিজের বানানো কথা না। মূল গল্পের মাঙ্গাকা আর ডিরেক্টর দুইজনেই এই কথা বলেছে। আমার পোস্টের উদ্দেশ্য সেটা সবার জন্যে সোজা ভাষায় তুলে ধরা।

মিকো ব্যাটোনটা মিকিকে পাস করে, মিকি সেটা আকিরাকে পাস করে, আকিরা সেটা রিয়োকে দিতে যায়, কিন্তু রিয়ো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বা একদম ইগ্নোর করে। ব্যাটোন আর পাস করা হয় না। বেশ অনেকবার এই দৃশ্যটি দেখি আমরা, তাও এমন সময়ে যখন আকিরা আর স্যাটান মারামারি করতে থাকে, দুনিয়া ধ্বংস হতে থাকে। হঠাৎ এরকম মুহুর্তে ব্যাটোন পাস করা কেন? আসলে ব্যাটোন পাস – এই আইডিয়াটা পুরা সিরিজ জুড়েই ছিল কিন্তু। যেমন এই দৃশ্যেও একবার দেখতে পাই আমরাঃ

tumblr_p25ocfLs0u1tg8peeo1_500

এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। মিকোকে দিয়েই শুরু করা যাক।

৯ম পর্বের এক পর্যায়ে মিকো তার ভালবাসার কথা মিকিকে বলতে পারে অবশেষে, যার কিছুক্ষণের পরেই মিকো মারা যায়। মিকো তাই মিকিকে ভালবাসার ব্যাটোন পাস করে দিল। শেষ পর্বের ব্যাটোন পাসের সিরিয়ালে প্রথমেই তাই দেখতে পাই মিকো মিকিকে ব্যাটনটা দিল।

এরপর ৯ম পর্বের শেষে মিকি মারা যাবার আগে আকিরার প্রতি তার আস্থা আর ভালবাসা পৌঁছে দেয়। মৃত্যুর মুহুর্তে কল্পনার দৃশ্যে সেটা দেখতে পায় সেই ব্যাপারটা। আকিরা শেষ মুহুর্তে হলেও তাকে বাঁচাবে, সেই বিশ্বাস মিকির ছিল, এমনকি মারা যাবার সময়েও আকিরার প্রতি তার টান বুঝা যায়। মিকি আর অন্য সবার ছিন্নবিচ্ছিন্ন মৃতদেহ দেখে আকিরার কষ্ট পাওয়াটা খুবই ইমোশনাল এক দৃশ্য ছিল। মিকো আর মিকি, ছোটকালের দুই বন্ধুর পৌঁছে দেওয়া ভালবাসা আর তাদের করুণ মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেল। ব্যাটোন পাসের সিরিয়ালে দ্বিতীয় ক্রমে মিকোর পৌঁছে দেওয়া ব্যাটোন মিকির হাত থেকে আকিরার কাছে চলে যায় এ জন্যে।

শেষ যুদ্ধে আকিরা রিয়োর প্রতি এতদিনের ভালবাসা আর ঘৃণার এক অদ্ভুত মিশ্রণে পড়ে সব অনুভূতি একের পর এক ঘুষির আকারে পৌঁছে দেয়। রিয়োর বিট্রে করা আকিরা মন থেকে মেনে নিতে পারে নি — শুধু এই কারণে না যে পৃথিবীর এই অবস্থা হয়েছে বলে। বরং তার সবচাইতে কাছের বন্ধু তাকে বিট্রে করেছে। সেই দুঃখ তো আছেই, আর রয়েছে আকিরার সব চেনাজানা মানুষ, এবং পুরা পৃথিবীরই করুণ পরিণতি!

ঐ সময়ে প্রত্যেকটা ঘুষির সময়ে ব্যাটোন পাস দেখানো হয়। স্যাটানকে একটা করে ঘুষি মারে, আর পরের দৃশ্যেই আকিরা রিয়োকে ব্যাটোন পাস করার চেষ্টা করে। স্যাটান ফিরতি আঘাত দেয়, আর রিয়ো সেই ব্যাটোন ফেলে দেয়। মানুষদের প্রতি আকিরার ভালবাসা জিনিসটা রিয়ো ঠিকমত বুঝে না, তাই বারবার আকিরার পাস করা ব্যাটোন রিয়োর কাছে পৌছার আগেই নিচে পড়ে যায়।

যুদ্ধের শেষে আকিরার মৃত্যু হয়, আর তখন রিয়ো বুঝতে পারে তার ভুলটা। গড কেন ডিমনদের ধ্বংস করবে এই রাগের কারণে স্যাটান নিজেই যে মানুষদের ধ্বংস করতে গিয়ে হিপোক্রিসি করলো সেটা সব মানুষ আর আকিরা মারা যাবার পর বুঝতে পারলো। আর আকিরাকে হারানোর পর বুঝতে পারে আকিরার প্রতি তার ভালবাসার ব্যাপারটা। বুঝতে পারে কত বড় ভুল হয়েছে। আকিরার পাস করা ব্যাটোন অবশেষে রিয়োর কাছে পৌঁছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক, অনেক দেরী হয়ে যায়! একমাত্র কাছের বন্ধু, একমাত্র ভালবাসার মানুষটাকে নিজ হাতে মেরে ফেলে স্যাটান নিজেই পরাজিত হয়ে যায়।

মিকোর সেই এগিয়ে দেওয়া ভালবাসার ব্যাটোন মিকির হাত ধরে আকিরার কাছ হয়ে রিয়োর হাতে পৌঁছে যায় অবশেষে। আর সেই সাথে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়।

সাকুরা কি আসলেই ইউজলেস? নাকি সব আমাদের পার্স্পেক্টিভের ব্যাপার? — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য

নারুতো ভক্তদের অন্যতম বড় এক দাবী, সাকুরা চরিত্রটি অসম্ভব রকমের ইউজলেস, সোজা ভাষায় একদমই অকার্যকর। এক সাকুরা না থাকলেই নারুতো আর সাসকের জার্নি অনেক সহজ হয়ে যেত, গল্প অনেক গতি পেত, তাদের জীবন অনেক সহজ হত ইত্যাদি কত কথা! আসলে ব্যাপারটা কি সেটাই? নাকি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন এক জায়গায় এমন গোলযোগ বেঁধে গিয়েছে যার কারণে এরপর থেকে সাকুরা যা কিছুই করুক না কেন, চরিত্রটা আমাদের চোখে একদম অকার্যকর? আজকে এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করতে চাই।

প্রথমেই আমরা আগে দেখি একদম অল্প বয়সে সিরিজের শুরুর দিকে যখন আমাদের গল্পের নায়ক-নায়িকাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তখন একেকজনের ব্যাকগ্রাউন্ড কীরকম। নাইন টেইল ফক্সের ঘটনার কারণে বিখ্যাত/কুখ্যাত হওয়া ছাড়াও নারুতোর বাবা ছিল চতুর্থ হোকাগে, মা তার সময়ের অন্যতম শক্তিশালী কুনোইচি, এবং নাইন টেইল ফক্সের জিঞ্চুরিকি। বিখ্যাত উচিহা পরিবারের অন্যতম সদস্য সাসকে। টিম ১০-এর ইনো, শিকামারু ও চৌজি তিন জনেই কোনোহার তিন বিখ্যাত পরিবারের সদস্য, যাদের অনন্য ক্ষমতা ও এদের প্রয়োগ এই তিন পরিবারকেই বানিয়েছে তাদের গ্রামের ভয়ংকর সব নিঞ্জা। টিম ৮-এর হিনাতা বিখ্যাত হিউগা পরিবারের সদস্য, তার বিয়াকুগান রয়েছে যাকে গল্পের শুরুর দিকের সবচাইতে শক্তিশালী চোখ সম্পর্কিত ক্ষমতা বলে ধরে নেওয়া হয়। শিনো হল পোকামাকড়ের উপর ক্ষমতাধরী অন্যতম ভীতিকর বংশ আবুরামে-এর সদস্য, আর কিবা হল ইনাজুকা পরিবারের সদস্য, যারা কুকুরদের নিঞ্জা হিসাবে কাজে লাগানোর জন্যে বিখ্যাত। টিম গাই-এর নেজি আরেক বিখ্যাত বিয়াকুগান ব্যবহারকারী, তেনতেন তার বিভিন্ন রকমের নিঞ্জা টুলস ব্যবহার করার জন্যে জনপ্রিয়, এবং রক লি তার ভয়াবহ তাইজুতসুর জন্যে সবার মনে জায়গা করে নেবার মত এক চরিত্র। সেই তুলনায় বাকি থাকা সাকুরার পরিচয় কী? সাকুরার একমাত্র পরিচয় সে সাসকে-কে ভালবাসে। তার বাবা-মাও বিখ্যাত কোন নিঞ্জা নয়, এমনকি সাকুরার বাবা-মায়ের ব্যাপারে পরবর্তীতে আমরা যখন জানতে পারি, ততদিনে শিপুদেনের ৩৫০ পর্ব অতিক্রম করে ফেলে, এবং যেই পর্বে জানতে পারি সেটাই ফিলার পর্ব। অর্থাৎ প্রথম পরিচয়েই সাকুরাকে আমরা কিউট একটা মেয়ে ছাড়া আর বিশেষ কোন কারণে মনে রাখতে পারছি না। প্রথম ইম্প্রেশনেই সাকুরা তাই নিজেকে মেলে ধরার মত কিছুই পায় নি গল্পের নির্মাতার কাছ থেকে।

ল্যান্ড অভ স্টিল আর্কে, অর্থাৎ জাবুজার আর্কে কাকাশি, সাসকে আর নারুতো পুরা স্পটলাইট কেড়ে নেয়। সাকুরার সেখানে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেও না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারে অন্যদের তুলনায় সে কতটা পিছনে। এরপরে চুনিন আর্কে পুরা গল্পজুড়ে সাকুরার একমাত্র বলার মত ঘটনা ছিল সাউন্ড ভিলেজের নিঞ্জাদের সাথে মারামারির এক পর্যায়ে নিজের চুল কেটে ফেলা, যেন তাকে ধরে রেখে সাকুরার বন্ধুদের পথে বাঁধা হতে না পারে। বলে রাখা দরকার, এই পর্যায়ে এসে আমরা প্রায় সব অল্পবয়স্ক নিঞ্জাদের প্রত্যেকেরই ক্ষমতার ভাল ব্যবহার দেখেছি। নারুতোর সাসকে-কে বাঁচানো কিংবা তার বিস্ময় জাগানো ট্যাকটিক্স আর সাসকের কাধের সেই সিলের ক্ষমতা, টিম ৭-এর অন্য দুইজনই এরই মধ্যে গল্পের প্রধান চরিত্র হিসাবে দাবী করার মত অনেক কিছু দেখিয়ে ফেলেছে। চুনিন পরীক্ষার ফাইনাল স্টেজ শুরু আগে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে সাকুরা আর ইনোর মারামারির সময়ে আরেকটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠে, এই দুইজন আসলে এখনও চুনিন হবার উপযুক্ত নয়। অন্যরা সবাই নিজেদের প্রমাণ করে ফেলেছে, এমনকি যারা পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারে নি তারাও।

haruno_sakura__the_last_by_vashperado-d7zwm74

পরবর্তী বড় ৩টা আর্কে সাকুরার বলার মত কোন কার্যকরী ভূমিকাই ছিল না আসলে। কোনোহা ছেড়ে দিয়ে সাসকে ওরোচিমারুর উদ্দেশ্যে চলে যায়, আর তাকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে নারুতোর কাছে মিনতি করা, যার ফলে নারুতোও জিরাইয়ার সাথে গ্রামের বাইরে চলে যায় ট্রেনিং করা – এতটুকুই ছিল সাকুরার প্রথম দিকের ভূমিকা।

গল্পের প্রথম টাইম জাম্প হবার আগ পর্যন্ত তাই সাকুরা সত্যিকার অর্থে তার সমসাময়িক অন্যান্য নিঞ্জার তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল এটা ঠিক। সে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও দেখতে পারে অন্যরা তার চাইতে যোজনে যোজনে এগিয়ে। অন্যরা যেখানে সবাই নিজেদের পরিবারের বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে, কিংবা রক লির মত নিঞ্জারা যেখানে নিজেদের একমাত্র ক্ষমতাকে শাণিত করে নিজেদের প্রমাণ দিয়ে যেতে পেরেছে, সাকুরা সেখানে পিছিয়ে গিয়েছে স্বকীয় কোন কিছু না থাকার কারণে। আমরা নারুতোর উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, ছেলেটার কিছুই ছিল না, সবার ঘৃণার পাত্র থেকে শুরু করে পুরা পৃথিবীর নায়ক হয়ে গিয়েছে, সেখানে কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবো কথাটা শুরু থেকেই ভুল। নারুতো উজুমাকির বংশধর, তার মধ্যে রয়েছে নাইন টেইলসের চাকরা। তাই কেউ যদি শুরু থেকে অভাগা হয়ে থাকে, সেটা সাকুরা। হ্যাঁ, সাকুরা অন্যদের তুলনায় বেশ সুন্দর আর চমৎকার একটা জীবন পাড়ি দিয়ে এসেছে নিঞ্জা হবার আগে, কিন্তু সুপার পাওয়ারের এই যুগে তার বলার মত কোন কিছুই ছিল না যে অন্যদের মধ্য থেকে আলাদা হয়ে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। ছিল শুধু অনেক জ্ঞান, আর প্রবল মনোবল, যার কারণে মাইন্ড কন্ট্রোল ক্ষমতা থাকবার পরেও ইনো সাকুরাকে চুনিন পরীক্ষার অফিসিয়াল ম্যাচে হারাতে পারে নি। গল্পের প্রথম অংশে তাই সাকুরা আসলে ইউজলেস ছিল না, সাকুরার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য সে তার নিঞ্জা জীবন শুরু করেছে সব জিনিয়াসদের মধ্য থেকে।

টিম ৭-এর অন্য দুজন কোনোহার বাইরে থাকাকালীন সাকুরা একটা কঠিন সিদ্ধান্তে আসে, আর তা হল, অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তাকে খুব বিশেষ কিছু করে উঠতে হবে। ৩ লেজেন্ডারি সানিনের অন্যতম সুনাদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে। টাইম জাম্পটা শেষ হবার পর যখন আমরা নারুতোকে কোনোহাতে ফেরত আসতে দেখি, তখন সাকুরা কিন্তু সুনাদের সেরা শিষ্য হয়ে উঠেছে। জিরাইয়া নিজে থেকে বলে উঠেছে যে সাকুরা সেই মুহুর্তে সুনাদের যোগ্য শিষ্য হয়ে উঠেছে, এমন একজন যাকে রাগানো ঠিক হবে না।

এখন একটা জিনিস পাঠকদের জিজ্ঞেস করতে চাই। আমরা কি এই মুহুর্তে সাকুরার ক্ষমতাটুকু বুঝতে পারছি? যদি বুঝে উঠতে না পারি, তবে আসুন দেখি সাকুরা এই মুহুর্তে কোন উচ্চতায় আছেঃ
* গল্পের এরকম সময়ে ৩ সানিনের তিনজনই নিজেদের সেরা ছাত্র-ছাত্রীকে পেয়ে গিয়েছে। ওরোচিমারুকে প্রায় অনেক দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সাসকে, যদিও তার বড় ভূমিকা রাখে সাসকের শারিঙ্গানের ক্ষমতা। জিরাইয়ার শিখানো পথে এসে তাকে পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবার আশা দেখাচ্ছে নারুতো, কিন্তু শিখবার আছে অনেক কিছু। আর সুনাদে, যে কিনা নিঞ্জা দুনিয়ার সেই মুহুর্তের সেরা মেডিকাল নিঞ্জাই শুধু নয়, বরং শারীরিক ক্ষমতার দিক থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী নিঞ্জাদের একজন, তাকে কিনা সাকুরা প্রায় ধরে ফেলেছে! সেটাই নয়, অন্য দুই বড় সানিনের কাছে শিক্ষানবিস থাকা নারুতো-সাসকে যখন দর্শকদের কাছে ভয়াবহ ক্ষমতাধর বলে পরিচিতি পায়, সেখানে সুনাদের এই ছাত্রীকে সেই মুহুর্তে ধরে নেওয়া হত যেকোনদিনে সুনাদেক ছাড়িয়ে যাবে!!! হ্যাঁ, সেই অভাগা সাকুরা যে কিনা বংশানুক্রমে কোন বিশেষ ক্ষমতা পায় নি, সেই সাকুরা যে কিনা তার সময়ের জিনিয়াস সব নিঞ্জাদের ছায়া হয়ে থাকার মত থাকলেও তাদের সাথে দাপট দেখিয়ে চলতে পেরেছে, সেই সাকুরা এখন তার শিক্ষক এবং অন্যতম লেজেন্ডারি সানিন সুনাদেকে যেকোন দিন ছাড়িয়ে যেতে পারে! আর সেটাই শুধু নয়, বরং একই সাথে সাকুরা এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে বেশ বড় এক মেডিকাল নিঞ্জা হয়ে উঠেছে। সাকুরা একটা বড় সুযোগ পেয়েছে, এবং সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যা যা অর্জন করার সব অর্জন করে নিয়েছে।

কিন্তু এসব কিছুই তো হয়েছে স্ক্রিনের পিছনে। সাকুরা ইউজলেস না, এটা প্রমাণ করার জন্যে তাকে অনস্ক্রিনে কিছু করে দেখানো লাগবে। মুখে মুখে “অন্যতম সেরা শক্তিশালী নিঞ্জা” হলে চলবে না, বরং দর্শকদের দেখানো দরকার সাকুরা আসলেই বিশেষ কিছু হয়ে উঠেছে। এজন্যে সাকুরা পরবর্তীকে কী করলো চলুন এক নজরে দেখে নেই।

কাজেকাগে হয়ে যাওয়া গারা-কে আকাতসুকি কিডন্যাপ করেছে। তাকে উদ্ধার করতে কোনোহা যে কয়জন নিঞ্জাকে পাঠায়, সাকুরা তার মধ্যে অন্যতম। গারার ভাই কানকুরো ততদিনে সুনাগাকুরের অন্যতম শক্তিশালী ও বড় মাপের এক নিঞ্জা হয়ে উঠে। আকাতসুকির সাসোরির কারণে তার মধ্যে অন্যরকমের এক বিষ ছড়িয়ে পরে, আর সেটা সাড়িয়ে তুলবার মত কোন মেডিকাল নিঞ্জা ছিল না সুনাগাকুরেতে। সাকুরা সেখানে এসে সেখানে বসেই সেই বিষ পরীক্ষা করে নিয়ে কানকুরোকে সারিয়ে তুলে। এক সাকুরা একাই সম্মিলিতভাবে সুনাগাকুরে যা করতে পারে নি তা করে দেখিয়েছে। এই পর্যায়ে এসে আমরা সাকুরার মেডিকাল ক্ষমতা হাতেনাতে প্রমাণিত হতে দেখতে পারি। সাকুরা তার অর্জিত জ্ঞানের একটি অংশের প্রমাণ দিয়ে নিজেকে চিনিয়ে নিতে পেরেছে।

পরবর্তীতে বেশ বড়সড় অনেক ঘটনা ঘটে, এবং এক পর্যায়ে দেখতে পাই চিয়ো-এর সাথে মিলে সে আকাতসুকির অন্যতম বড় এক নাম সাসোরিকে হারিয়ে দেয়। হ্যাঁ, চিয়োর ভূমিকা এখানে বেশি ছিল হয়তো, কিন্তু সাকুরার ভূমিকা কোন দিক থেকেই কম নয়। কম তো নয়ই, বরং অনেক অনেক বেশি। নিজেকে চিয়োর পাপেট বানিয়ে নিলেও সাকুরার নিজের ক্ষমতা তেমন কিছু বলার মত না হলে এই মারামারির ফলাফল তাদের বিপক্ষে চলে যেত একদম শুরুর দিকেই।

সাকুরা, যে কিনা নিজের দূর্ভাগ্যের জন্যে এরই মধ্যে “ইউজলেস” খেতাব পেয়ে গিয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে, সে প্রথম পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়েই আকাতসুকির সবচাইতে ভীতি জাগানিয়ে একজনকে হারিয়ে দিয়েছে। আরেকজনের সাথে মিলিত হয়ে মারামারি মূখ্য নয়, কারণ নিঞ্জাদের শক্তির এক বড় অংশ হলে অন্যদের সাথে মিলে নিজেদের কাজ উদ্ধার করে নেওয়া। সাকুরা সেই মারামারিতে বড় ভূমিকা রেখে আকাতসুকির একজনকে শেষ করে ফেলে। গল্পের এই পর্যায়ে আমরা সাকুরার একই ব্যাচের আর কয়জন নিঞ্জাকে আকাতসুকির কোন সদস্যকে হারিয়ে দিতে দেখি? একজনকেও না।

এর পরবর্তীতেই সাকুরা কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার আরেকটা সুযোগ নিয়েও কাজে লাগিয়ে দেয়, যেটা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। তেনচি ব্রিজে টিম কাকাশি যখন ওরোচিমারুর মুখোমুখি হয়, তখন নারুতো নিজের উপর ক্ষমতা হারিয়ে নাইন টেইল অবস্থায় চলে যায়। একাই ওরোচিমারুকে পিছে হটিয়ে দিতে পারে। এই অবস্থায় নারুতোকে শান্ত করবার জন্যে সবাই যেখানে ভয়ে ভয়ে থাকে, সাকুরা এগিয়ে আসে। নারুতো তার উপর চড়াও হলেও গুরুতর জখম পায়, কিন্তু নারুতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসলে তাকেও আমার সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে নিজের মেডিকাল ক্ষমতার বলে। বড় বড় নিঞ্জারা যেখানে এগিয়ে যেতে ভয় করে, সাকুরা সেখানে এগিয়ে যায়, এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও অন্যদের সারিয়ে তুলে। অকার্যকর? না, এটা অকার্যকারিতার সংজ্ঞা নয়।

এর পরবর্তীতে বড় যেই আর্কে আমরা সাকুরাকে দেখি, সেটা নারুতোর অন্যতম সেরা আর্কঃ পেইন আর্ক। আসলে এই আর্কটিতে সাকুরার ভূমিকা ছিল মেডিকাল নিঞ্জা হিসাবে সবার সাহায্য করা। কোনোহা ধ্বংসের পরে আসলে নারুতো বাদে চোখে পড়ার মত একমাত্র যে ছিল সে হল নারুতো ভালবেসে নিজেকে উতসর্গ করে দেবার জন্যে এগিয়ে আসা হিনাতা। সেই জন্যে এই আর্কে সাকুরার আসলে অন্য সব নিঞ্জার মত ভূমিকা থাকার কথা না তেমন। কিন্তু সবাই যেখানে বসে বসে হাহুতাশ করছে কিংবা নারুতোর দিকে চেয়ে আছে, সেখানে সাকুরা নিজের ক্ষমতা দিয়ে সব মেডিকাল নিঞ্জাকে যতজনের সম্ভব চিকিৎসা করার আহ্বান জানায় এবং সুনাদের পাশে থাকে।

নিজের একমাত্র ভালবাসার মানুষটির উপর যখন মৃত্যুর পরওয়ানা জাড়ি হয়, তখন নিজের সব রকমের কষ্টকে ধামাচাপা দিয়ে সাসকেকে নিজেই মারতে উদ্যোগী হয়। সাকুরা শুধু শারীরিকভাবেই শক্তিশালী নয়, মানসিক দিক থেকেও অনেকের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে এগিয়ে ছিল তার ভাল প্রমাণ এটি।

সর্বশেষে থাকছে সম্ভবত সাকুরার সবচাইতে বড় অবদানের কথা – ৪র্থ নিঞ্জা ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ঘটনা। গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমাদের গল্পের দুই নায়ক নারুতো ও সাসকে, ও খলনায়ক তোবি এবং পরে মাদারাসহ সব বড় বড় নামগুলি একের পর এক পাওয়ারাপ পেয়ে গিয়েছে। যেই টিমের সদস্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যাবে, সেই দলের সবাই গল্পের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে একের পর এক ক্ষমতা পেয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ হবার কারণে খলনায়কেরাও নিজেদের অকল্পনীয় সব ক্ষমতা দেখানো শুরু করেছে। এমতাবস্থায় সাকুরার কী করণীয়? গল্পকার যখন তাকে এক রকমের পার্শচরিত্রের কাতারে ফেলেই দিয়েছে, সেখানে বসেই নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে যেতে থাকে সে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বড় চরিত্র আগাতপ্রাপ্ত হলে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসাটা অনেক বেশি হয়েছে বলে হয়তো এটি দর্শকদের কাছে একটি স্বাভাবিক দৃশ্যই হয়ে উঠেছে, কিন্তু ব্যাপারটির ভূমিকা কত বড় সেটা এভাবে ভেবে দেখুন যে, এই যুদ্ধে এদের সবাই বারবার বিভিন্ন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে। সাকুরার চিকিৎসা না পেলে গল্পের এত বড় বড় চরিত্রদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতো না।

এদিকে সাদা জেতসুর অতর্কিত হামলার কারণে যেখানে সবাই দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছিল, তখন সাকুরা সাদা জেতসুর ব্যাপারটি সবার আগে ধরতে পারে। হ্যাঁ, গল্পের নায়ক হবার কারনে নারুতো আরেকটি পাওয়ারাপ পায়, এবং এখন সে সবধরনের এরকম লুকায়িত জেতসুদের খুঁজে বের করতে পারে। পাওয়ারাপ না পাওয়া সাকুরা নিজ ক্ষমতায় তাদের ব্যাপারটি জেনে নিতে পারে ও সবাইকে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে পারে। “ইউজলেস” সাকুরা অন্য সব নিঞ্জাদেরকে ইউজলেস হওয়া হতে আরেকবার বাঁচিয়ে দেয়।

শেষ পর্যন্ত যখন বড় যুদ্ধে মেডিকাল নিঞ্জা হবার পরেও অংশগ্রহণ করে, তখন দর্শকদের মনে করা উচিৎ সুনাদের সেই নিয়মের কথা। যেখানে শেষ নিয়মটিতে বলা হয়, যদি মেডিকাল নিঞ্জা এত ক্ষমতাধর হয় যে সরাসরি মারামারি করতে পারে, তাহলে অন্য সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেই ফ্রন্টলাইনে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। সাকুরা সেটিই করে, এবং নারুতো ও সাসকের সাথে মিলে ওবিতোর বিপক্ষে লড়াই করে। নারুতোর কাছ থেকে যখন নাইন টেইলসকে কেড়ে নেওয়া হয়, তখন নারুতো যেন সাথেসাথে মারা না যায় তার জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে। খেয়াল রাখতে হবে, নারুতোকে এই পর্যায়ে বাঁচিয়ে তুলবার জন্যে সাকুরা ছাড়া আর কেউ যোগ্য মেডিকাল নিঞ্জা ছিলও না। নারুতোর হার্টকে পাম্প করতে থাকে, যেন নারুতো বেঁচে ফিরবার জন্যে আরেকটু সময় পায়। “ইউজলেস” সাকুরা একাই পুরা নিঞ্জার দুনিয়ার হার্ট পাম্প করে বাঁচিয়ে তুলে।

কাগুইয়ার সাথে মারামারিতে যেখানে নারুতো আর সাসকেই একমাত্র তাকে হারানর ক্ষমতা রাখে, সেখানে সাকুরার সাহসিকতা সাসকে-কে উদ্ধার করবার জন্যে বড় ভূমিকা রাখে। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থে এক দেবীকে হারাবার জন্যে যেই দুজনের একত্রে উপস্থিত থাকা দরকার, সেখানে একজন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, সাকুরার সাহসী ভূমিকার অভাবে হয়তো সেক্ষেত্রে গল্পের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।

সত্যিকার অর্থে বলার মত ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকার পরেও একের পর এক ক্ষমতা আর জিনিয়াস নামধারী সব নিঞ্জাদের পাশেই শুধু ছিল না সাকুরা, তাদের অনেককে ছাড়িয়ে গিয়ে যুদ্ধে নিঞ্জাদের জোটকে জিতাতে সাহায্য করেছে সাকুরা। সাকুরা যদি সত্যিকার অর্থেই অকার্যকর হয়ে থাকতো, তাহলে নারুতোর গল্পটি নারুতো কম বরং বার্সার্কের মত হয়ে যেত। একের পর এক ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া থেকে একাই রক্ষা করেছে গল্পের অন্যান্য মূল চরিত্রদের।

তাহলে কেন দর্শকদের অধিকাংশই সাকুরাকে এখনও ইউজলেস বলে আসছে? এখানে আসলে দর্শকদের সাইকোলজি একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা যখনই সাকুরাকে দেখি, তখনই তার তুলনা করি নারুতো আর সাসকের সাথে। কেনই বা করবো না আমরা, তারা তিনজন যে একই টিমের সদস্য। সেই টিমের লিডার আবার কাকাশি নিজেই। পরবর্তীতে তাদের এই টিমে যোগ দেয় ইয়ামাতো আর সাই, যারা স্পেশাল আনবু ফোর্সের সদস্য বলে আগে থেকেই তাদের ভারী ক্ষমতার অধিকারি বলে জানি। আসলে এত সব জিনিয়াস আর অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারীদের দলে এমন একজনকে আমরা দেখতে পাই যার শুরু থেকে বলার মত কিছু ছিল না কখনই। এমনকি নারুতোর মাঙ্গা বা আনিমের ইনফো ঘাটলে আমরা দেখতে পাই সাকুরা একজন মেইন চরিত্র, অথচ গল্পে তাকে আমরা নারুতো আর সাসকের তুলনায় খুব কম সময়েই দেখেছি। হ্যাঁ, সাকুরার চরিত্রের সবচাইতে বড় দিক হল সে সাসকে-কে অনেক বেশি ভালবাসে। বলার মত কিছু নেই এমন এক চরিত্রের যখন মূল ফোকাসটা পড়ে তার ভালবাসার জীবনের উপর, যেখানে তার আশেপাশের সবার ফোকাস পড়ে তাদের নিঞ্জা ক্ষমতার উপর, সেখানে দর্শকদের মনে এই ধারণাটা হওয়া অসম্ভব নয় যে সাকুরা ইউজলেস। ব্যাপার হল, সাকুরা কখনই ইউজলেস ছিল না। বরং কঠিন পরিবেশে শুরুতে খাপ খেয়ে নেওয়াতে কষ্ট পেতে হলেও এরপর সে ঠিকভাবেই সেই পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দর্শক মনের সাইকোলজিতে আরেকটা জিনিস খাটে – প্রথম ইম্প্রেশন। সেটা শুধু দর্শকদের জন্যেই নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবক্ষেত্রেই দেখতে পারি। প্রথম ইম্প্রেশনের উপরেই আমাদের আরেকটি মানুষের ব্যাপারে জন্ম নেওয়া ধারণাটি গড়ে উঠতে থাকে। হয়তো তার চরিত্রের অন্যান্য দিক দেখতে পেলে সেই ধারণাতে বিভিন্ন প্রলাপ পড়ে, কিন্তু ধারণার মূল ভিত্তি থাকে সেই প্রথম ইম্প্রেশনেই। সাকুরার ক্ষেত্রেও সেরকমই হয়েছে, দর্শকদের প্রথম ইম্প্রেশনটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাসকে উচিহা কেন “নারুতো” গল্পের সবচাইতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত চরিত্র — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য

Uchiha Sasuke Evolution

লেখাটির টপিক দেখে হয়তো অনেকে শুরুতেই ভ্রু কুঁচকে উঠবেন। দাঁড়ান একটু, আমি বলছি না সাসকে এই আনিমেটির সবচাইতে সেরা চরিত্র। নারুতোর গল্পের চরিত্রদের মধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় অবশ্যই ইতাচি। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না এখানে, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল, উচিহা সাসকে এই গল্পটির সবচাইতে ভালভাবে গড়ে তুলা চরিত্র। লেখাটি কিছুটা বড় হতে পারে, তাই সময় নিয়ে পড়বার অনুরোধ করছি।

একটা ১২-২৪ পর্বের সিরিজে চরিত্রের গঠন জিনিসটা যেভাবে হয়, স্বাভাবিকভাবেই একটা শত পর্বের সিরিজে তার চাইতে বেশ ভিন্নভাবে হয়ে থাকবে। এ জন্যে ৬০০+ পর্বের নারুতো সিরিজের একটা পার্শ্ব চরিত্র যে ধরণের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে যায়, তা অনেক ১২ বা ২৪ পর্বের সিরিজের প্রধাণ চরিত্রের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে না।

এবার আসি চরিত্রের গড়ে উঠার ব্যাপারটিতে, অর্থাৎ ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাক। ডেভলপমেন্ট হিসাব করলে লিটারেচার কাজগুলিতে আমরা দুই ধরণের চরিত্রায়ন দেখে থাকতে পারিঃ Static Characterization ও Dynamic Characterization. স্ট্যাটিক চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে কোন চরিত্র ঘটনাক্রমে গল্প এগিয়ে যেতে থাকলেও বড় ধরণের কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় না। তার লক্ষ্য, চিন্তা-ভাবনা, ধারণা ইত্যাদি মোটামুটি একই রকমের থেকে যায়। অন্যদিকে ডিনামিক চরিত্রায়ণ বলতে সেই ব্যাপারটি বুঝিয়ে থাকে, যেখানে একটা চরিত্র গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে থাকার সাথে সাথে বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই পরিবর্তন থাকে তার লক্ষ্যে, চিন্তাভাবনায়, আচার-আচরণে, ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দুই আলাদা ধরণের চরিত্র অর্থ কিন্তু এই নয় যে একটি বেশি ভালো ও অন্যটি খারাপ। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের উপযুক্ত ব্যবহার দুই ধরনের চরিত্রকেই বিশেষ কিছু করে তুলতে পারে।

আমাদের আলোচ্য গল্পের প্রধাণ চরিত্র নারুতো উজুমাকি স্ট্যাটিক চরিত্রায়ণের সবচাইতে বড় উদাহরণ। গল্পের একদম শুরু থেকে তার লক্ষ্য ছিল হোকাগে হওয়া ও সবার কাছে এক সম্মানজনক ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া। হাটতে-চলতে সব ক্ষেত্রেই নারুতোর এই লক্ষ্যের কথা আমরা শুরু থেকে জেনে এসেছি, এবং কোন ধরণের বাঁধা তাকে দমাতে পারে নি এই উদ্দেশ্য অর্জন থেকে। তার এই অনড় অবস্থান মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ঘৃণা থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে সম্মানের পথে নিয়ে আসে।

ডিনামিক চরিত্রায়নের আদর্শ উদাহরণ সাসকে। তার ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য ছিল তার ভাইকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিবে আর নিজের বংশের পুনরুত্থান ঘটাবে। ঘটনাপ্রবাহে আমরা দেখতে পারি সাসকে তার সেই লক্ষ্য মাঝপথেই অর্জন করতে পেরেছে, কিন্তু এরপর সত্যি কথাটা তার সামনে চলে আসলে তার চরিত্রে একটা ভাঙ্গন দেখতে পারি। শুরু হয়ে যায় ভাঙ্গা-গড়ার খেলা, যেখানে কোনোহাকে ধ্বংশ করে দেওয়া কিংবা কোনোহাকে বাঁচিয়ে ফেলা – এই দোটানায় তার চিন্তাভাবনা ঝড়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নারুতোর সাথে শেষবারের মত মারামারির মধ্য দিয়ে তার চরিত্র পূর্ণায়তা পেয়ে উঠে।

দুটি চরিত্রই আনিমে জগতের অন্যতম জনপ্রিয়তা পাওয়া চরিত্র, সন্দেহ নেই। কিন্তু এবার যদি আমরা এই দুজনের ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকি, তাহলে কোন চরিত্রটিকে আমরা ঠিকভাবে গড়ে উঠতে দেখি? নিঃসন্দেহে সেটা সাসকে। নারুতো চরিত্রটির প্রতি বিদ্বেষ নেই আমার, একটি চিরাচরিত শৌনেন গল্পের প্রধান চরিত্র হবার মত সবকিছুই তাকে দিয়েছে গল্পের লেখক – অনড় চিন্তাভাবনা, হাসিখুশিভাবে সবাইকে আপন করে নেওয়া, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এ সব কিছুই তাকে একজন হিরো করে তুলে। কিন্তু, চরিত্রের বিকাশ যদি হিসাব করি আমরা, নারুতো উজুমাকি কি আদৌ তেমন কোন বিকাশ দেখাতে পেরেছে? নারুতোর চরিত্রে যেটি হয়ে উঠে নি, সাসকের চরিত্রে তার সবকিছু হয়ে উঠেছে আসলে।

ঘটনাক্রমে আমরা দেখে উঠতে পারি সাসকে ছোটকালে খুবই হাসিখুশি এক চরিত্র ছিল, যে বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ পাবার জন্যে সবরকমের চেষ্টা করতো। একদিন তার বড় ভাই তার বাবা-মাসহ পুরা উচিহা বংশকে হত্যা করে ফেলে। এই ঘটনা সাসকে-কে করে তুলে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ, এবং এরকম একটা অবস্থান থেকেই গল্পে প্রথম তাকে দেখতে পারি আমরা। এরকম সময়ে তার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর, নিঞ্জাদের দুনিয়া হয়ে থাকলেও ম্যাচিউরিটি আসার মত বয়স তখনও হয়ে উঠে নি। নিজের প্রতিশোধ নেবার লক্ষ্যে নিজের গ্রাম ছেড়ে দিতেও রাজী হয়ে উঠেছিল। এরপর ১৬ বছর বয়সের দিকে এসে বড় ভাইকে হত্যা করে যখনই নিজের জীবনের লক্ষ্য পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বলে মনে করেছিল, তখনই তোবির কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পারে। জানতে পারে কীভাবে তার বড় ভাই বাধ্য হয়েছিল নিজের বংশকে নির্মূল করে দিতে। এমন সময়ে এসেই আমরা সাসকের চরিত্রে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেখতে পারি। এই মুহুর্তটি ছিল তার চরিত্রের বিকাশের একটি বড় উপলক্ষ্য। অবশেষে নিজে থেকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে সে, কোনোহাকে ধ্বংস করবে সে, কোনোহার উপর বদলা নিবে সে।

ইতোমধ্যে নিঞ্জাদের ৪র্থ বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়, আর এমন এক কঠিন মুহুর্তে তোবি, কাবুতো আর জেতসু সবাই তাকে নিজের মত করে ব্যবহার করতে চেষ্টা করে, সে বিষয়টিও বুঝে উঠতে পারে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বড় ভাইকে রিএনিমেশন অবস্থায় দেখতে পারে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সত্য ঘটনাটির অন্য আরেক সংস্করণ শুনতে পারে। সাসকের চরিত্রের গঠনের আরেকটি বড় মুহুর্তের সাক্ষী হতে পারে দর্শক এই জায়গাটিতে, যখন সাসকে বুঝে উঠতে পারে শুধুমাত্র প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামি হবে। এরপর পূর্বের হোকাগেদের কাছ থেকে নিঞ্জার ইতিহাসের সবকিছু জেনে নেয় সে। বুঝে উঠতে পারে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাতেই সমস্যা হয়েছে।

শুধু প্রতিশোধ আর প্রতিশোধ যার লক্ষ্য ছিল, সেই চরিত্রকে আমরা এরপর কী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখি? সে কি এরপর পুরা নিঞ্জা দুনিয়াকে নির্মূল করতে উঠে যায়? না, বরং এই প্রথম সে বুঝে উঠতে পারে নিজের পরিণতি যেন অন্য কাউকে মুখোমুখি হতে না হয়, এজন্যে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। হোকাগে হয়ে এই লক্ষ্য পূরণের জন্যে এগিয়ে যেতে দেখি আমরা, যদিও গল্পের নায়ক না হবার কারণে সেটা তার ভাগ্যে জুটে নি। কিন্তু হোকাগে হবার লক্ষ্য নারুতোর কাছে রেখে দিয়ে এলেও, এরপর সাসকে পুরা নিঞ্জা দুনিয়া ঘুড়ে দেখে সব সমস্যা ঠিকঠাক করার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।

একটি প্রতিশোধপরায়ণ ছোট্ট বাচ্চা বিভিন্ন ধরণের মানসিক ধাক্কা, অশান্তি, কষ্ট, ক্ষোভ সামলে উঠে সুন্দর একটি বিশ্ব গড়ে তুলার উদ্দেশ্যে শান্তির পথে অগ্রসর হয় — লক্ষ্য, চারিত্রিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের পুর্ণায়ন হয়ে উঠে সাসকে উচিহা চরিত্রটির।

আমরা গল্পের ক্রমে অন্যান্য অনেক চরিত্রেরও কাছাকাছি বিকাশ দেখতে পাই। বাবার প্রতি অন্যায়ে কঠিন হয়ে যাওয়া, আপন দুই বন্ধুকে হারানোর পরে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে হারিয়ে যাওয়া এবং নারুতো-সাসকে-সাকুরার শিক্ষক হবার মাধ্যমে আবার আলোর পথে ফেরত আসা – কাকাশিরও প্রায় একই ধরণের ডিনামিক পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমরা এই পরিবর্তনের অধিকাংশই জানতে পারি গল্পের শেষের দিকে এসে। ওবিতো চরিত্রটিও বেশ ট্র্যাজিক এক চরিত্র। তবে এত বিশাল মাপের দুনিয়া পাল্টে দেওয়া যুদ্ধ শুরুর পর, অগণিত মানুষ হত্যার পর শুধু নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেটা কাটিয়ে তুলার চেষ্টা – তার চরিত্রের বিকাশটি অনেকের কাছেই তাই আপত্তিকর। অন্যদিকে ইতাচির মনের মধ্যে ঝড়ঝঞ্ঝা এবং অকল্পনীয় ত্যাগের মাধ্যমে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে উঠা – সবকিছু মিলিয়ে তাকে গল্পটির সবচাইতে পছন্দের চরিত্র করে তুলতে পেরেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তা এক জিনিস, আর ব্যক্তিত্বের গঠন আরেক জিনিস।

সবসময়ে শান্তির পথে থাকতে চাওয়া ইতাচিকে নিজের পুরা বংশকে হত্যা করতে বাধ্য হতে হয়। এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সন্দেহ নাই, কিন্তু এত বড় এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবার পরে সবার চোখে অপরাধী হয়ে থাকার পরেও কোনোহাকে ও নিজের ছোট ভাইকে চোখে চোখে রাখতে আকাতসুকিতে যোগদান করে সে। ভাইয়ের হাতে নিজের মৃত্যুটিকে নিজের পাপের শাস্তি ও কষ্ট থেকে মুক্তির পথ হিসাবে বেঁছে নেয়। আমরা গল্পের শুরু থেকেই ইতাচিকে গল্পের সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবে দেখে এসেছি, তার অংশ শেষ হবার পরেও একইভাবে তাকে গল্পের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবেই জানতে পেরেছি। ফলাফল স্বরূপ, তার ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট জিনিসটি বাদ পড়ে গিয়েছে।

অতএব, ডেভলপমেন্ট ব্যাপারটি যদি লক্ষ্য করি শুধু, তাহলে পুরা গল্পে সাসকের মত চারিত্রিক বিকাশ আর দ্বিতীয়টি কারও নেই। সাসকে চরিত্রটি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কখনই ছিল না, কিন্তু নিজের ত্রুটি মেনে নিয়ে সেটিকে ঠিক করে তুলবার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে, এবং প্রায় ৬৫০ পর্বের এই যাত্রায় তাতে সফল হওয়াটা তার চরিত্রকে পরিপূরণ করতে পেরেছে। Well-developed চরিত্রের কথা যদি উঠে থাকে, তাহলে এই গল্পে সাসকের চরিত্রের গঠনের ধারেকাছেও কেউ নেই।

Macross: Do You Remember Love? (1984) [মুভি রিকমেন্ডেশন] — Tahsin Faruque Aninda

Macross Do You Remember Love

সেই ৩৩ বছর আগের একটা মুভি, অথচ এখনও দেখলে দর্শকেরা সেই যুগের মতই উপভোগ করে যায়। এটাই কি “কালজয়ী” কথাটার একটা ব্যাখ্যা ধরে নেওয়া যায়? যায় কি যায় না, সেটা না হয় দর্শকদের উপরেই ছেড়ে দিব। মুভিটি নিয়ে কথা বলতে গেলে বলবো, ‘মেকা’ এবং ‘স্পেস’ জনরা নিয়ে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী হয়েও একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় – এই মুভিটি অন্যান্য ‘মেকা’ ও ‘স্পেস’ গল্প থেকে আলাদা বেশ। কীরকম, তার অল্পস্বল্প বর্ণনা দেই।

সাধারণত অন্যান্য মেকা জনরার আনিমেগুলি আমরা দেখি বিশাল বিশাল একেকটি মেকা নিয়ে বিভিন্ন চরিত্রদের মারামারি, আর এসব মারামারির পিছনে অনেক অনেক কলাকৌশল, থাকে রাজনৈতিক প্রভাব। থাকে সাইকোলজিকাল ব্যাপার, আবার থাকে মাইন্ড-গেম। উল্লেখ্য, যেসব ব্যাপার এখানে বললাম, সেগুলি “সাধারণত” দেখা যায়, কারণ ব্যাতিক্রম তো থাকেই। ম্যাক্রসের এই মুভিটিও তেমন একটি ব্যাতিক্রম।

এই মুভিটিতে ‘মেকা’ একটি সাইড জনরা হিসাবেই ধরে নেওয়া যায়। এর মূল জনরা হল রোমান্স ও স্পেস। হ্যাঁ, এটি নিখাদ একটি প্রেমকাহিনী, যার পুরা গল্পটি ঘটেছে মহাকাশীয় পটভূমির উপর ভিত্তি করে। মুভিটির আরও একটি ব্যাপার দেখা যায়, তা হল এখানে একটু পরপরই বিভিন্ন গানের ব্যবহার। ‘মিউজিক’-ও একটি বড় জনরা মুভিটির।

গানের ছন্দে ছন্দে প্রেমকাহিনীর আবর্তন, শুনতে কি আমাদের সেই পুরান যুগের বাংলা বা হিন্দি মুভির মত শুনাচ্ছে? অনেকটা সেরকমই। আবার একদম সেরকমও না। এক নায়ক ও দুই নায়িকার ত্রিভুজ প্রেমের গল্প এটি, যা মহাকাশীয় যুদ্ধের সাথে সাথে গল্পক্রমে বিভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মানবজাতি, ‘জেনত্রায়েদি’ নামের শুধু পুরুষদের নিয়ে গঠিত এক এলিয়েন জাতি ও ‘মেলত্রান্দি’ নামের শুধু নারীদের নিয়ে গঠিত আরেক এলিয়েন জাতি – এই ৩ পক্ষের যুদ্ধ হল গল্পটির পটভূমি। এরই মধ্যে ৩ প্রধাণ চরিত্রের সম্পর্ক নিয়েই গল্পটি এগিয়ে যেতে থাকে।

৩৩ বছরের পুরানো মুভি হয়ে থাকলেও এর অ্যানিমেশন চোখ ধাঁধানো। চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টের সাথে সাথে স্পেসশিপের যুদ্ধ দেখার মত। কিছুক্ষণ পরপর গানের ব্যবহার অনেকটা আমাদের চেনাজানা হিন্দি সিনেমার ধারণা দিবে, নায়ক-নায়িকা গানের তালে তালে ঘুরে বেড়াবে। তবে গানগুলি সুন্দর হবার কারণে বেশ চমৎকারভাবে মানিয়ে গিয়েছে সবকিছু। আর শুধু এটুকুতেই গানের ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ থাকছে না, কারণ “গান” জিনিসটি গল্পটার একটা বেশ বড় অংশ, বেশ বড় এক প্লট পয়েন্ট, যেই ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে হয়তো স্পয়লার হয়ে যাবে।

যতদূর শুনেছি, এই মুভিটি এর আগে মুক্তি পাওয়া টিভি সিরিজ SDF Macross-এরই এক অল্টারনেট ভার্শন। হয়তো সে কারণেই মুভির বেশ অনেক চরিত্রের ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট ব্যাপারটি তেমন ভালমত হয়ে উঠে নি। তবে সেটা খুব বেশি বড় সমস্যার ব্যাপার হয়ে উঠে নি। মুভিটির খারাপ দিক বলতে গেলে এটুকুতেই থেমে থাকবো।

আরেকটি দিক অবশ্য সতর্ক থাকা দরকার হয়তো, যেই সময়ের মুভি, সেই সময়ে টিভি মিডিয়াতে নারী চরিত্রদের কীভাবে উপস্থাপন করা হত চরিত্র হিসাবে সেইটা মাথায় রাখা উচিৎ। এখন কিছু কিছু ব্যাপার যেগুলি অশভোনীয় বা অসম্মানজনক লাগে শুনতে, তখন সেগুলি স্বাভাবিক কথা হিসাবেই হয়তো বলা হত। এরকম কয়েকটি ডায়লগ হয়তো শুনতে পাওয়া যাবে, সেটাকে স্বাভাবিকভাবে নিবেন না ক্রোধান্বিত হয়ে গ্রহণ করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার।

ম্যাক্রস ফ্র্যাঞ্চাইজের ভক্তমহল বাংলাদেশে খুবই ছোট হয়তো, কারণ এর মুভি বা সিরিজ নিয়ে কথা শুনা যায়ই না একদম। আমি নিজেও যে দেখেছি তা না, বরং এই মুভি দিয়ে শুরু করলাম। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজটির অন্যান্য সিরিজ ও মুভিগুলি যদি এই মুভিটির মানের দিক থেকে কাছাকাছি হয়ে থাকে, আমার মনে হয় এটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠবে অনেক দর্শকদের কাছে।

Berserk (2016): [Honest Reaction, Rant, Appreciation] — Tahsin Faruque Aninda

berserk_2016_5127

সর্বকালের সেরা মাঙ্গা বলে কোন নাম উল্লেখ করতে বললে সব চাইতে বেশি নাম যেটা আসবে সেটা হল বার্সার্ক। কেন্তারো মিউরার এই অনবদ্য সৃষ্টি শুধু মাঙ্গা হিসাবেই নয়, কমিক্স/গ্রাফিক্স নোভেল হিসাব করতে গেলেও এরকম মানের জিনিস খুব কমই পাওয়া যায়। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসা এই মাঙ্গার গল্প যেমন অসাধারণ, আর্ট তেমনই অবাক করার মত সুন্দর! এত বছর ধরে চলে আসার পরেও গল্পের কোন কুলকিনারা করে উঠা যাচ্ছে না তার একটা বড় কারণ মাঙ্গাকার কয়েকদিন পরপর হায়াটাসে চলে যাওয়া। এক নৌকা ভ্রমণে গল্প ৭ বছর আটকিয়ে রাখার মত আকাম করেছে এই লোক। নাহলে কে জানে, গল্প হয়তো এতদূর এগিয়ে যেত যে গল্পের শেষের দিকে কী হতে পারে না পারে তার কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যেত।

সে যা হোক, সর্বজনবিদিত এই মাঙ্গার আনিমে এডাপশনের উপর যেন সবসময়েই একটা অভিশাপ লেগে থাকতো। অনেক নামকরা মাঙ্গার মতই এটারও আনিমে এডাপশনের ভাগ্যের শিকে ছিড়ে উঠে নি অনেকদিন। এডাপশন কনফার্ম হলেও আনিমের বাজেট খুবই কম থাকার কারণে স্টিল শট ব্যবহার করার কারণে কুখ্যাত হয়ে উঠে ১৯৯৭ সালের সেই সিরিজ। অনেকদিন পর আবার বার্সার্কের আনিমের খবর বের হলেও দেখা যায় সেটা মুভি ট্রিলজি, তাও আবার ১৯৯৭ সালে গল্প যতটুকু দেখিয়ে রেখে দিয়েছিল, ততটুকুই আবার রিবুট করবে। এই মুভি তিনটি বের হয়ে থাকলেও এরপর আবার খবর নেই। অনেকদিন পর আবার বার্সার্কের নতুন আনিমে এডাপশনের খবর বের হলেও সবাই চিন্তায় থাকে আবার রিবুট না তো! এবার অন্তত রিবুট হবে না এটা মোটামুটি কনফার্ম হবার পরেও সবার মনে আরেকটা চিন্তা উকি দেয় — CG এর ব্যাবহার আনিমের মানটাকে আবার খারাপ করে ফেলবে না তো!

তা শেষ পর্যন্ত কেমন হয়ে উঠে সিরিজটা? এডাপটেশন খারাপ বলে সবাই গলা ছাড়িয়ে বেড়ালেও আর মাঙ্গা পাঠকদের হতাশ করা হয়ে থাকলেও সব মিলিয়ে সিরিজটি কেমন হয়েছে? দেখার মত নাকি একদমই ফেলে দেবার জিনিস?

মাঙ্গা এডাপশন হিসাবে কেমন, সেই টপিক আপাতত সরিয়ে রাখি। ইন্টারনেটে গত তিন মাস উপস্থিত থাকলে যে কেউই এতক্ষণে জেনে গিয়েছে পাঠকদের রিএকশন কেমন। তাই সে কথা বাদ থাক। আগে থেকে কেউ যদি মাঙ্গা পড়ে না থাকেন, আনিমে দিয়েই শুরু করেন, তাহলে তার জন্যে এই লেখাটি একটি গাইডলাইন হতে পারে সিরিজটা সম্পর্কে বিচার করার জন্যে।

শুনতে অবাক লাগলেও, সিরিজটির বেশ ভাল কিছু দিক আছে। সেই ভাল দিকগুলি তুলে ধরার আগে অল্প কথায় সিরিজটির অনাকর্ষণীয় দিকগুলি নিয়ে আসি:

— CG মানেই খারাপ নয়, ভাল CG-এর ব্যবহার একটা সিরিজকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। বার্সার্কে CG-এর ব্যবহার খারাপ ছিল নিঃসন্দেহে, তবে তার চাইতেও বড় সমস্যা হল CG কিভাবে ব্যবহার হয়েছে এখানে। সিরিজ ডিরেক্টর এর আগে যত আনিমেতে কাজ করেছে, সেগুলি ছিল ৩-৪ মিনিটের পর্ব করে slapstick slice of life comedy সিরিজ। সেই ডিরেক্টর (এবং একই সাথে আগের আনিমেগুলির সেই একই স্টুডিওকে) এমন একটি আনিমের দায়িত্ব দেওয়া হল যা ছিল সবদিক থেকে আগের কাজগুলি থেকে একদম আলাদা। comedy slice of life এর জায়গায় dark fantasy horror, 2d এর জায়গায় 3d cg, short fast paced slapstick আনিমের জায়গায় বড় পর্বের action drama সিরিজ। এত কঠিন সব কন্ডিশনের পরেও সিরিজটা চমৎকার হয়ে উঠতে পারে যদি ডিরেক্টরের গুণ অনেক বিশেষ কিছু হয়ে উঠে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এরকম কিছুই হয়ে উঠে নি। অ্যানিমেশন, স্ক্রিনপ্লে, কোরিওগ্রাফি, কোন কিছুই ঠিকমত হয়ে উঠে নি। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই ভিডিওটি দেখে ফেলুন, সুন্দর করে সবকিছুর analysis করা হয়েছে:

— গল্পের কাটছাট অনেক বেশি হয়েছে। বিশেষ করে Black Swordsman arc ও Conviction arc এই ১২ পর্বে দেখানোর কথা থাকলেও অর্ধেকের মত গল্পের উপাদানই বাদ দেওয়া হয়েছে এখানে। বাকিটুকুও যা দেখানো হয়েছে সেগুলিও অনেক rushed করে দেখিয়েছে।

— Censoring.
এটা বলার আগেই বুঝে নেওয়া যায়, মাঙ্গায় যে ভয়াবহ রকমের বেশি পরিমাণ nudity আর gore ছিল, তা আনিমেতে কোনভাবেই দেখাতো না। HBO যদি Berserk-এর কোন এডাপশন করে, তাহলেই একমাত্র সেখানে এরকম কিছু দেখা যেত [এবং যার কাছে GoT এর nudity-কে রীতিমত childish পর্যায়ে ফেলে দেওয়া যায়]। তা স্বত্ত্বেও কিছু কিছু যায়গায় সেন্সরিং চোখে পড়ার মত ছিল।

এবার আসি সিরিজটার ভাল দিকগুলির কথায়:

+ শুরুর দিকে সিনেম্যাটোগ্রাফি খারাপ থাকলেও ধীরে ধীরে ভাল হয়ে উঠতে শুরু করে। ডিরেক্টরের কাজ দেখে মনে হয়েছে, প্রথম ৪-৫ পর্ব কোনরকম হয়ে থাকলেও এর মধ্যেই সে অনেক কিছু শিখে উঠে। যার কারণে পরের দিকের পর্বগুলি তুলনামূলক বেশ ভাল হয়।

+ মিউজিক চমৎকার ছিল। এন্ডিং গানটা খুব ভাল না হলেও ওপেনিং গানটা এই বছরের অন্যতম পছন্দের গান। মিউজিকের ব্যবহার ভাল তো ছিলই, আমার কাছে সাউন্ড ইফেক্টও ভাল লেগেছে।

+ ক্যারেক্টার ডিজাইন।
হ্যাঁ, গাটসকে বেশি খারাপ লেগেছে আসলে, মুখটা বেশি চিকন করে ফেলেছে, শরীরটাকেও। কিন্তু বাকি সবাই একদম মাঙ্গার মতই রয়ে গিয়েছে।

+ একশন দৃশ্যগুলি বেশ ভাল ছিল। শুরুর দিকে একশন দৃশ্যের মান খারাপ থাকলেও, প্রথম পয়েন্টটার মত এ ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উন্নতি ঘটে শেষের দিকে এসে। বিশেষ করে conviction arc-এর শেষের মারামারিটা বেশ মুগ্ধ করেছে আমাকে।

+ আনিমের জন্যে তৈরি নতুন অংশটি।
যেহেতু অনেকদিন পর আনিমে হিসাবে বার্সার্ক এসেছে আবার, আর তাছাড়া এর আগের সিরিজ/মুভিগুলির কারণে আর একই সাথে এইবারের সিরিজে সময়-স্বল্পতার কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিতে হয়েছে, এই জন্যে apostle জিনিসটা কী সেই ব্যাপারে দর্শকদের পরিষ্কার ধারণা না থাকতে পারে। এজন্যে apostle-এর ব্যাপারটা নতুন দর্শকদেরকে ভাল মত introduce করাবার জন্যে শুরুর দিকে একটি anime only mini arc দেখায়। এই অংশটি “ফিলার” বলে দাবী করতে গেলেও একে ফিলার বলা যাবে না আসলে। কারণ মিউরা নিজেই গল্পের এই অংশটুকু লিখেছে। আর এটি বেশ ভালই হয়েছিল, দেখার সময়ে বিরক্তি তো লাগেই নাই, বরং গল্পের অন্যান্য অংশের সাথে মানিয়ে যাবার মত ঘটনাই দেখিয়েছে। মাঙ্গাকা নিজে লিখেছে বলেই এই অংশটুকু ভাল হয়েছে।

+ নতুন জেনারেশনকে বার্সার্কের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
আনিমেটাকে মাঙ্গার এডভার্টাইজমেন্ট হিসাবে ধরে নেওয়া হোক বা না হোক, এই সুযোগে এখনকার জেনারেশনের অনেক দর্শক এবং একই সাথে পাঠকদেরকে বার্সার্কের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে একটা ভাল উদ্যোগ। “READ THE MANGA” বলে চেঁচানোর কারণে অনেকে আনিমে দেখে এরপর আর সাসপেন্স সইতে না পেরে মাঙ্গাটা শুরু করে দিবে সন্দেহ নাই।

সব মিলিয়ে এটুকু বলবো, কেউ যদি মাঙ্গা পড়ে না থাকেন, তার কাছে এই বার্সার্ক একদম ভয়াবহ খারাপ লাগবে না। সব মিলিয়ে একটা ইন্টারেস্টিং সিরিজ হিসাবেই মনে হবে। মাঙ্গা পড়তে না চাইলে এবং শুধু আনিমে দর্শক হয়ে থাকলে, সিরিজটা উপভোগ্য লাগবে পরের দিকে গিয়ে। বিশেষ করে সময়ের সাথে সাথে সিরিজটার making-এ উন্নতির ছাপটা বুঝা যাবে। তবে মাঙ্গা পড়তে আপত্তি না থেকে থাকলে অবশ্যই মাঙ্গা পড়তে অনুরোধ করবো।

সবশেষে বলবো, যেহেতু এর সিকোয়েল আসবে সামনের বছর, তার অর্থ খুব নিকট ভবিষ্যতে অন্য কোন ভাল স্টুডিওর পক্ষ থেকে এর রিবুট আসছে না। তাই প্রথম সিজনের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় সিজনটা যেন আরও ভাল করে তুলে সেটাই আশা করছি। Falcon of the Millennium Empire Arc-টা কোনভাবেই খারাপ কিছু যেন না হয়ে উঠে এই আশাতেই আছি।

91 Days – Ending: Theory and Analysis — Tahsin Faruque Aninda

91-days-ending

খুব অল্প সময় যখন হাতে থাকে, তখন তার মধ্যে দেখা সিরিজ এত ভাল হয়ে থাকলে মনে শান্তি লাগে। “সময়টা নষ্ট হয় নাই অন্তত” – এরকম অনুভূতি হয়ে থাকে। 91 Days সিরিজটা দেখে সেরকমই feel পেয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় বাজে এনিমেশন – এইটুক ব্যাপার বাদ দিলে সিরিজটাতে আর খুঁত পাচ্ছি না এতটুকু। বাক্কানোর পরে সম্ভবত এটাই এখন পর্যন্ত সেরা মাফিয়া গল্প। মাফিয়া সেটিং-এর গল্প যে আমার তেমন ভাল লাগে না তা না, কিন্তু এই সিরিজটা হয়তো আমার সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

আর হাজার হাজার এডাপশনের ভিড়ে ভাল মানের অরিজিনাল সিরিজ খুঁজেই পাওয়া যায় না ইদানিং, সেজন্যেও আরও বেশি ভাল লেগেছে এই সিরিজটার জন্যে।

শেষ পর্বে কী দেখায় সেই চিন্তায় ছিলাম। এত চমৎকারভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গড়ে উঠা গল্পটার এন্ডিংটা ভাল না হলে পুরা সিরিজটার আকর্ষণ মাটি করে ফেলতো। অবশ্য শেষে যা হল, বছরের অন্যতম সেরা সিরিজটার এন্ডিংটা এর চাইতে ভালভাবে টানা যেত না! দুইজনেরই পরিণতি একদম দর্শকের উপর ছেড়ে দিয়েছে! Open-Ended গল্প, দর্শক কী ধরণের এন্ডিং চায় তা একদম তাদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া।

যেহেতু দুজনের শেষ মুহুর্ত দেখায় নি, তাই চার রকমের পরিণতিই হতে পারে এখানেঃ
a) নিরো-এঞ্জেলো দুইজনেই মৃত্যুবরণ করেঃ নিরো এঞ্জেলোকে গুলি করে মেরে ফেলে, অন্যদিকে ফেরত যাবার পথে তাকে ধাওয়া করা যেই লোকটাকে দেখালো, সে নিরোকে পরে মেরে ফেলে।
b) এঞ্জেলো মারা যায়, নিরো বেঁচে থাকেঃ একই ঘটনা, শুধু নিরোকে ধাওয়া করা লোকটা ওকে মারতে পারে না।
c) ও d) নিরো মারা যায়/বেঁচে থাকে, এঞ্জেলোও বেঁচে থাকেঃ
আপাতদৃষ্টিতে হয়তো মনে হতে পারে এঞ্জেলো মারা গিয়েছে, কিন্তু লক্ষ্য করুন – তার শেষ মুহুর্ত দেখানো হয় নি। গুলি যেকোন জায়গাতেই করতে পারে। এমন কি end-credit roll হবার পরে বীচের যে জায়গাতে এঞ্জেলোর থেমে যাওয়া দেখানো হয়, সেখানে তার শরীর দেখা যায় না। হ্যাঁ হতে পারে শরীর আর রক্ত সাগরে ভেসে চলে গিয়েছে। তবে এ-ও হতে পারে সে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে হেঁটে হেঁটে। পায়ের ছাপ তো পানিতে মিশে যেতে পারে, এবং ঠিক এটাই দেখিয়েছে একদম শেষের দুই-তিন সেকেন্ডে। পায়ের বাকি চিহ্নগুলিও মুছে যায় স্রোতে।

তবে, এরকম অনেক অনেক clue দিয়ে রাখলেও, আমার নিজের যা মনে হয়েছে তা হল —
দুজনেই বেঁচে থাকে।

আর এটার পক্ষেই যুক্তি বেশি দেখানো হয়। কেন?
> দুজনের কেউই আরেকজনকে মারতে চায় নি শুরু থেকে, মারতে পারেও নি।
যতই ঘটনা ঘটুক, এঞ্জেলোর সুইসাইড প্ল্যান একদম ঠিকমত খেটে যাক, নিরো ৩ বার [ছোটকাল, থিয়েটারের সময়ে, এবং এরপর ওকে গালাসিয়াদের কাছ থেকে উঠিয়ে নেবার সময়ে/পরেও] সুযোগ পেয়েও মারে নাই।

> নিরোর ফেরত যাবার পথে খাবার ক্যান দেখে হাসি দেওয়া।
যতই মাফিয়া হোক বা খুন করে অভ্যস্ত হোক, চেনাজানা বা রিভেঞ্জ নেওয়ার ব্যাপার হলেও কেউ আরেকজনকে মেরে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের পুরাতন স্মৃতি মনে করে এরকম “মন ভাল থাকা” হাসি দেয় না।

> এঞ্জেলোর শেষ দেখানো লোকেশনে বীচের বালু
পায়ের চিহ্ন বালুতে আছে, অথচ গুলি খেয়ে মরে গিয়ে থাকলে যদি মাটিতে পরে যেত, তাহলে শরীরের চাপে বালুতে আরও বেশি চাপ পরে ডেবে যেত। কিন্তু শেষ দৃশ্যে এমন কিছুই দেখায় নি। শুধু পায়ের চিহ্ন যেখানে শেষ সেখানে আর কিছুই নেই।

> গুলি খাবার পরে এঞ্জেলোর শরীর নিচে পরে যাবার শব্দ হয় নি, কিন্তু বালু ঠিকই উড়েছিল
এই সিরিজে মৃত্যুর মুহুর্তগুলি বেশ পরিষ্কারভাবে দেখানো + শুনানো হয়। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলে মাটিতে পরে যাবার শব্দ একদম পরিষ্কারভাবেই শুনানো হয়ে এসেছে। কিন্তু শেষ দৃশ্যে এমন কিছুই শুনা যায় নি, অথচ বালি ঠিকই উড়েছে। বালিতে গুলি লাগার জন্যে বা বাতাসের বেগে সেই বালু উড়ে যাবার সম্ভাবনা তাই অনেক বেশি।

Open-ended পরিণতিগুলি এজন্যেই এত ভাল লাগে। সব কিছুই হওয়া সম্ভব – এরকম ধারণা দিলেও আসলে গল্পকারদের পছন্দ অনুযায়ী কোন পরিণতি ঘটে, সেগুলি অনেক অনেক হিন্টস দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়াও হয়ে থাকে একই সাথে; ঠিক যেমন Inception-এর শেষ দৃশ্য নিয়ে হাজার হাজার ব্যখ্যা থাকলেও আসলে কী হয়েছিল সেটা পুরা মুভি জুড়ে অজস্র হিন্টস দিয়ে শুরু থেকেই দেখিয়ে আসা হয়।

আশা করি এটার মতই আরও অনেক ভাল মানের অরিজিনাল সিরিজ পাব আমরা ভবিষ্যতে, আর সেগুলি ম্যাচুর গল্পের হলে তো কথাই নাই! এডাপশনের ভিড়ে ভাল মানের অরিজিনাল সিরিজ পাওয়া খুবই কঠিন এখন, তাই এই সিরিজ দেখে যেন অন্যান্য প্রস্তুতকারকরাও আগ্রহ পায়।

Re:Zero kara Hajimeru Isekai Seikatsu [রিভিউ/রিঅ্যাকশন] — Tahsin Faruque Aninda

Re:Zero kara Hajimeru Isekai Seikatsu
Tag: Psychological, Thriller, Groundhog Loop

2-1

Re:Zero, or more like Rem = Zero :))

Yeah I had to do it, sorry for that…

এই বছরের অন্যতম হাইপ পাওয়া সিরিজ, এবং সব জনপ্রিয় বা মেইনস্ট্রিম সিরিজের মতই একগাদা সাপোর্টারের পাশাপাশি একগাদা হেটারও জন্মেছে এটার। এটাই আসলে এই যুগের আনিমের ভাগ্যে জুটবার মত সবচাইতে স্বাভাবিক ঘটনা, হয় সিরিজটা মোটামুটি, নাইলে বেশিইইই ভাল+খারাপ, আর কিছু নাই।
এত সব আলোচনা, সমালোচনার ভীরে পক্ষে-বিপক্ষের কথা অনেক শুনা হয়ে গিয়েছে হয়তো, তাই আমি বরং পুরান কথা আবার আওড়ানোর বদলে নিরপেক্ষভাবে সিরিজটার ভাল-খারাপ কিংবা সিম্পল-স্পেশাল জিনিসগুলি নিয়ে আমার আলোচনা পোস্ট শুরু করি।

সিরিজটা নিয়ে অনেক অনেক আগেই যখন ঘোষণা আসে, তখনই এর সিনোপসিস পড়ে বুঝতে পারি সিরিজটা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার মত একটা কিছু হবে, হয় সেটা ভাল কারণে না হয় খারাপ কারণে। গল্পের নায়ক কোন এক কারণে হঠাত বাস্তব জগত থেকে এক ফ্যান্টাসি জগতে চলে আসে, যা কিনা এখনকার যুগের লাইট নোভেল আর আনিমের মধ্যে সবচাইতে কমন থিম। তবে গল্পের মূল আকর্ষণ হল এই যে, নায়কের মৃত্যু হয়ে থাকলে অতীতের কোন এক সময়ে ফেরত চলে যাবে সে। অর্থাৎ গ্রাউন্ডহগ লুপ, যার ট্রিগের হয় নায়কের মৃত্যুর মাধ্যমে – অনেকটা গেমের মত, যেখানি আপনি খেলার সময়ে মৃত্যুবরণ করলে এরপর আগের কোন এক সেইভ পয়েন্ট থেকে কন্টিনিউ করতে পারবেন। তবে এরকম থিম নিয়ে গল্প হলেও এটা আবার এই যুগের আরেক জনপ্রিয় জনরা গেম + ফ্যান্টাসির মধ্যে পরে না। আর এই আইডিয়াটাই গল্পটাকে জনপ্রিয় করার জন্যে একটা বড় উপাদান!

প্রথম পর্বটাই double episode করার মাধ্যমে বুঝা যায়, প্রস্তুতকারকেরা সিরিজটাকে একদম ঠিকমত দর্শকদের কাছে তুলে ধরার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে। White Fox স্টুডিওকে কৃতিত্ব দিতে হবে সিরিজটাকে চমৎকারভাবে তৈরি করবার জন্যে। অ্যানিমেশন, মিউজিক, ক্যারেক্টার আর্ট — সবকিছুতেই নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়েছে তারা। অতএব, প্রোডাকশনের দিক থেকে বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই।

এবার আসি গল্পের কথায়। শুরুর দিকে দর্শকদের কাছে এটাকে “আরেকটি টিপিকাল ফ্যান্টাসি আনিমে” এরকম একটা আইডিয়া দিয়েই শুরু করেছে গল্পটি, তবে তার প্রধাণ কারণ যেন কয়েক পর্বের মধ্যেই সেই ভুল ভাংতে পারে। Travel to Fantasy World এই আইডিয়ার গল্পগুলার একটা Deconstruction সিরিজ হিসাবে Re:Zero বেশ ভাল ভূমিকা রেখেছে। এরকম গল্পে নায়ক যেমন সেরাদের সেরা, অদ্বিতীয় অপরাজেয়, এরকম ধারণা থেকে শুরুতেই বের হয়ে আসে যখন দেখা যায় গল্পের নায়কের প্রায় কোন ক্ষমতাই নাই কোন কিছু নিয়ে, একটা মাত্র জিনিস বাদে। তবে সেই একটা ক্ষমতাই অবশ্য সবচাইতে বড় Deus Ex Machina, আর তা হল Return by Death. Basically, নায়কের মৃত্যু হলে আগের একটা জায়গায় ফেরত আসবে, আর নায়কের মৃত্যুর আগের সব ঘটনা শুধু তারই মনে থাকবে, অন্য কেউ কিছু জানবে না। এই ক্ষমতাটাই বিশাল বড় একটা ব্যাপার হতে পারে, যদি সেটা ভালমত ব্যাবহার করতে পারা যায়। আর এইটা নিয়ে আমার প্রথম আপত্তিঃ শুধুমাত্র plot convenience-এর জন্যে আমরা দেখতে পাই “কী করবো, কেমন করবো” এরকম ধারণা নিয়ে চলা নায়ক বারবার মৃত্যুর পর যেবার বেঁচে থেকে পুরা একটা অধ্যায় শেষ করতে পারবে, সেই সময়ে অকল্পনীয়ভাবে মারাত্মক কঠিন সব সমস্যার সমাধান অনেক ভাল ভাল সমাধান দিতে পারে। অবশ্য গল্পের শেষের দিকে গিয়ে এই পরিস্থিতিতে একটু লাগাম পরানো হয়ে থাকে, তাই এইটুক ব্যাপার গল্পের শেষ পর্যন্ত আর বড় issue হয়ে উঠে নাই।

এখানে একটা জিনিস বলে রাখতে চাই, কোন সমস্যার সমাধান না হলে মৃত্যুর মাধ্যমে আবার পিছে ফিরে গিয়ে সেটা ঠিক করে দেওয়া যায় – এই ব্যাপারটাকে ছেলেখেলা হিসাবে দেখানো হয় নাই। মৃত্যু জিনিসটা অনেক কঠিন আর painful, আর সেটা নায়কের সাথে সাথে দর্শকও অনেক ভালভাবে বুঝে উঠতে পারবে। তাই Return by Death এই আইডিয়াটাকে অহেতুক স্প্যামিং করবে এরকম ভেবে থাকলে চিন্তামুক্ত হতে পারবেন যে যতটুকু দেখানো হয়, সেটা বেশ “বাস্তবসম্মত”ভাবেই দেখানো হয় [অর্থাৎ যদি বাস্তব হত আর কি! LOL KEK LOL]। আর মৃত্যুর ব্যাপারগুলি সেন্সরিং করে নাই, gore অনেক আছে, এইটার জন্যে White Foxকে আবার ধন্যবাদ দিতে হয়।

আনিমেটির এই সিজনে ৩টি আর্ক দেখানো হয়। গল্পের পেসিং শুরুর দিকে ভালমত আগাতে থাকলেও ২য় আর্কে এসে একটু ঝিমিয়ে পরে। অবশ্য ৩য় আর্ক থেকে সেটা আবার ভালভাবে আগাতে শুরু করে। আর প্রথম ২ আর্ক মোটামুটি হলেও ৩য় আর্ক বেশ চমৎকার হয়ে উঠে, এখানে দেখানো psychological aspect অনেক বেশি ভাল লেগেছে।

চরিত্রদের ব্যাপারে আসি এবার। প্রথমেই বলে রাখি, নায়ক Subaru বেশ বিরক্তিকর, এবং এটা আসলে গল্পের জন্যে ভাল মানিয়েছে। কারণ বিরক্তিকর একটা চরিত্র হবার কারণেই তার ক্যারেক্টার ডেভপমেন্ট খুব ভালমত হতে পেরেছে। বারবার মৃত্যুর ভয়াবহতা একটা irritating brat-কে কিভাবে শারীরিক আর মানসিকভাবে একের পর এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটা গল্পের ৩য় আর্কে গিয়ে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। তবে সিরিজে সবচাইতে ভাল ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট যদি কারও হয়ে থাকে, সেটা এই মুহুর্তে আনিমে জগতের সবচাইতে জনপ্রিয় ক্যারেক্টার Rem-এর। Also, Rem is pretty much the MVP of this series. গল্পের আরেক প্রধাণ চরিত্র Emiliya-এর ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট আরেকটু ভাল হতে পারতো। তার স্ক্রিনটাইম আরও কিছু বেশি হওয়া উচিত ছিল। বাকি চরিত্রদের উপস্থিতিও ভালভাবেই তুলে ধরা হয়েছে।

বেশ ভাল ভাল অনেকগুলি দিকের কথা তুলে ধরলাম, এবার তাহলে সিরিজটির কিছু short-coming নিয়ে কথা বলা যাক। ২৫টা পর্ব দেখার পর একটা প্রশ্নই মনে জাগবে, গল্পের আসল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কী? এরই মধ্যে অনেক অনেক নিউজের মাধ্যমে সিরিজটা না দেখা আনিমে দর্শকেরাও জেনে গিয়েছেন যে কাহিনী প্রথম সিজনে যেখানে শেষ হয়েছে তারপর গল্পে আরও অনেক অনেক কিছু আছে। প্রথম সিজনটা পুরা গল্পের অর্ধেকও না। অনেকে আবার একটু বাড়াবাড়ি করে বলে বসবে এটা প্রোলগ।
কথা হল, এটা প্রোলগ না। হ্যাঁ, গল্পের ছোট্ট একটা অংশ মাত্র, কিন্তু প্রোলগ না। আর প্রোলগ হোক বা না হোক, যত বিশাল বিশাল গল্প আছে সেগুলির দিকে তাকালেও আপনি দেখতে পারবেন যে গল্পের মধ্যে অল্প কিছুদূর যাবার পরেই গল্পের শেষ পরিণতি বা মেইন ফোকাস কী তা জেনে গিয়েছেন। এরপর গল্প কিভাবে সেই লক্ষ্যের দিকে আগায় সেটা দেখার ব্যাপার। খুব বেশি খুঁজবার দরকার নাই, বিগ ৩-এর দিকেই তাকান, দেখবেন যে নারুতোর শুরুর দিকেই আমরা জেনে গিয়েছি গল্পের লক্ষ্য হল নারুতোর হোকাগে হওয়ার স্বপ্নপূরণ, ওয়ান পিসে লুফির পাইরেট কিং হওয়া, কিংবা ব্লিচের জন্যে ইচিগোর দলের লক্ষ্য আইজেনকে থামানো। রিঃজিরো এত বড় গল্প না, তারপরেও ২৫ পর্ব দেখে উঠার পরেও বুঝতে পারবেন না আসলে গল্পের ফোকাসটা কোথায়। সুবারুর প্রধাণ লক্ষ্য কী শুধুমাত্র নায়িকার মন জয় করা, নাকি ফ্যান্টাসি দুনিয়ায় নিজেকে অদ্বিতীয় এক “খেলোয়াড়” হিসাবে তুলে ধরা, নাকি নিজের বাস্তব জগতে ফিরে যাওয়া… এরকম অনেক অনেক প্রশ্ন জেগে উঠবে। হ্যাঁ, প্রথম সিজন বলে এখনই অনেক উত্তর অজানা থেকে যাবে এটাই স্বাভাবিক, পরের কোন সিজন [যদি বের হয়] আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিবে, তবে গল্পের আসল উদ্দেশ্য কী এটা বুঝে উঠতে না পারা একটা বড় হতাশার কারণ হতে পারে।

আরেকটা বড় issue হল, সুবারু প্রথম পর্বের শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস্তব জগত থেকে হঠাত করে ফ্যান্টাসি জগতে চলে আসলো, এরপর তার রিএকশন দেখে অনেক বেশি অবাক হতে হয়। এক দুনিয়া থেকে তুলে এনে আরেক দুনিয়ায় ফেলে দেবার পর নতুন জগতে কেন আসলাম, পুরান জগতের কী হল, হঠাত এরকম উলটাপালটা হয়ে গেল কেন সবকিছু – এরকম মনে হওয়া যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে সুবারু যেন ব্যাপারটাকে ডালভাত গিলে ফেলার মতই স্বাভাবিকভাবে নেয়; বা জাপানিজ টার্ম অনুযায়ী, র‍্যামেন ঢকঢক করে গিলে ফেলার মত মেনে নেয় (যেটা কল্পনা করতে আপনার সুবিধা হয়)। আর গল্পের অনেকদূর পর্যন্ত গিয়েও নায়কের এইটা নিয়ে আর কোন ভাবনা করতে না দেখাটাও তাই একটু হতাশাজনক লাগে।

প্রথম সিজনের গল্পের এন্ডিং নিয়ে অনেকের অনেক মত থাকতে পারে, তবে আমার মতে, একটা ভাল এন্ডিং হয়েছে। “প্রথম” সিজন, বা ইনকমপ্লিট গল্প — এসব হয়ে থাকার পরেও ক্লিফহ্যাঙ্গার না টেনে বরং একটা ভাল সিজন ফিনালি দিতে পেরেছে। গল্প এখানেই পুরাপুরি শেষ করে দিলেও খুব বেশি চোখে লাগবে না হয়তো।

মিউজিক আর গানের কথা আলাদাভাবে বলি আবার। OST এর ব্যবহার যথোপযুক্ত হয়েছে, ED 1, OP 2 এই দুইটা এত বেশি ভাল হয়েছে যে বছরের সেরা গানের তালিকায় উপরের দিকে থাকবে এ দুটি। MYTH & ROID এর জন্যে ২০১৬ সালটা Hit আর Hit দিয়েই ভরা!

এখন একটা কথা বলে রাখি, মেইন্সট্রিম বা অতিরিক্ত জনপ্রিয় হলেই সিরিজটার প্রতি বিরক্তি পোষণ না করার আহ্বান জানাই। মেইন্সট্রিম জিনিসকে ঘৃণা করাও কিন্তু অনেক বেশি মেইন্সট্রিম হয়ে গিয়েছে এখন। এটা সত্যি, যেকোন সিরিজের ফ্যানবেজের বাড়াবাড়ি আচরণের কারণে অন্যান্য স্বাভাবিক দর্শকের জন্যে সেটা বিরক্তিকর লাগতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে সেগুলি ইগনর করতে পারেন। কোনরকমের বদ্ধ ধারণা নিয়ে দেখতে না বসে বরং রিলাক্স মন নিয়ে নিজে সিরিজটি দেখুন, তাহলে অন্যদের দেওয়া মত বারবার না আওড়িয়ে বরং নিজেই নিজের মত দিতে পারবেন। ভাল লাগলো না খারাপ, নাকি মিডিওকর, নিজেই সেটা বিচার করতে পারবেন।

সিরিজটি নিয়ে আমার মতামত শেষ করি দুটি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমেঃ

> Re:Zero কী Masterpiece?
– না। Masterpiece হবার জন্যে আরও অনেক কিছু দরকার। সবার আগে দরকার গল্পটা শেষ হবার। ইনকমপ্লিট গল্পকে মাস্টারপিস দাবী করার মানে নেই। গল্পের মাঝপথে অনেক কিছুই ভাল লাগতে পারে, শেষে গিয়ে ভরাডুবি হলে একদম মত উলটে যেতে পারে। তাই আগে নতুন সিজন আসুক, গল্প শেষ হোক, তখন এই প্রশ্ন তুলবার সত্যিকারের সময়, এখন নয়।
আর গল্পের লেখক আনিমের এই জনপ্রিয়তা দেখে বলেছেন যে যথাসম্ভব খাটুনি দিয়ে যাচ্ছেন, আর আশা করছেন যে সামনের চার বছরের মধ্যে গল্পটি শেষ হবে। চার বছর বেশি সময় না কিন্তু; Shingeki no Kyojin প্রথম সিজন শেষ হয়ে যাবার চার বছর পর দ্বিতীয় সিজন আসতে যাচ্ছে সামনের বছর। Re:Zero-এর ক্ষেত্রেও দেখতে দেখতেই সময় চলে যাবে দ্বিতীয় সিজন আসার আগে।

> মাস্টারপিস না হলে Re:Zero কি তাহলে ভাল হবে?
– শুধু কি সেরাদের সেরা হলেই একটা জিনিস দেখার উপযুক্ত হয়? কোন সিরিজ ভাল হবার জন্যে সেটাকে তো সর্বকালের সেরা হবার দরকার নেই। সব মিলিয়ে ভাল একটা সিরিজ হলেই সেটা অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠবে। আর কোন সিরিজ যদি মেইন্সট্রিম হয়ে উঠে, নিশ্চয়ই সেটার মধ্যে এমন কিছু আছে যা “মেইন্সট্রিম” বা “বেশিরভাগ দর্শক”ই উপভোগ করতে পেরেছে, তাই না!?

অতএব সিরিজটি দেখুন। এই বছরের অন্যতম সেরা আর বিনোদনপূর্ণ সিরিজ। বছরের ১ নম্বর স্থান দখল করবে কি করবে না সেটা একেকজনের একেক মত, তবে সব কথার শেষ হল, আমরা মুভি, সিরিজ, আনিমে – এগুলি দেখি বিনোদন পাবার জন্যে। আর বিনোদনের জন্যে এই সিরিজটি অনেক ভাল একটি চয়েস হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে।

Freedom [রিভিউ] — Tahsin Faruque Aninda

Freedom 0

Freedom
Type: OVA
Episode: 7 + 1 Prologue
Genre: Action, Adventure, Sci-Fi, Space

পোস্ট অ্যাপোক্যালিপ্টিক সময় + স্পেস ট্রাভেল + Akira, এই ধরণের একটা আনিমের কম্বিনেশন খুঁজছেন? অপেক্ষা না করে দেখে ফেলুন “ফ্রিডম” নামের ৭ পর্বের এই ওভিএ। আকিরার মাঙ্গাকা/ডিরেক্টর Katsuhiro Otomo-এর আরেক কাজ এটি, তবে এখানে তাঁর ভূমিকা শুধুমাত্র Storyboard, Mechanical Design আর Character Design-এই সীমাবদ্ধ। তবে এর কারণেই আনিমেটিতে আকিরার ছাপ পাওয়া যায়।

Freedom 2

মানুষ চাঁদে মানব-কলোনি তৈরির পরে কোন এক সময়ে এক দুর্ঘটনার কারণে একটি স্পেস স্টেশন পৃথিবীতে পতিত হয়, আর পৃথিবীতে মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী এক বিপর্যয় ঘটে। চাঁদে থেকে যাওয়ারা তৈরি করে ‘ইডেন’ নামের এক মেগালোপোলিস।
এখানেই আমাদের গল্পের নায়ক তাকেরুকে দেখা যায় অন্যান্য স্ট্রিট গ্যাং-এর সদস্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে হোভারক্রাফট রেস চালাতে। একদিন ঘটনাক্রমে ‘ইডেন’-এর আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে সে, আর সেখান থেকে গল্প ভিন্ন এক মোড় নিয়ে ফেলে।

Freedom 3

আকিরার সাথে ক্যারেক্টার ডিজাইনই শুধু নয়, বরং বাইক রেসের সাথে এখানে হোভারক্র্যাফট রেস, স্ট্রিট গ্যাং – ইত্যাদি কিছু কিছু ব্যাপারও আকিরার মত লাগে। তবে গল্পের ধরণটা একদমই অন্যরকম হবার কারণে সেই ব্যাপারগুলি উপভোগ্যই হয়ে উঠে।

3D আর 2D-এর অদ্ভুত সুন্দর মিশ্রণ আর ব্যবহার অ্যানিমেশনকে চমৎকার করে তুলেছে। ক্যারেক্টারগুলি সব CGI-এর, তবে CGI-এর ভাল ব্যবহার হয়েছে এই আনিমেতে, যার কারণে দেখতেও আরাম লেগেছে। অন্যদিকে ব্যাকগ্রাউন্ড আর্ট মুগ্ধ করার মত।

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুবই খুবই সুন্দর, আর ওপেনিং ও এন্ডিং গান দুইটা আমার অনেক পছন্দের।

ক্যারেক্টার তৈরি অনেক ভালমত হয়েছে এই আনিমেতে। ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট সময় নিয়ে হয়েছে বলে খুব ভালমত ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে সবাইকে।

Freedom 5

গল্পটি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার হলেও স্লাইস অভ লাইফ উপাদানও আছে অনেক, আর Space সম্পর্কিত আনিমেতে যেটা আসলে অনেক বেশি দরকার বলে মনে হয়। ধীরস্থির মুহুর্তগুলা মনে শান্তি দেবার মত, আবার অ্যাকশনের মুহুর্তগুলি অস্থিরতা উপহার দিতে পারে।

সব মিলিয়ে বলবো, ৭টি মাত্র পর্বের এই ওভিএ সিরিজ দেখার জন্যে অবশ্যই সময় বের করে নিবেন। এরকম হিডেন জেম দেখার জন্যে সময় না থাকলেও সময় বের করে নেওয়া উচিৎ।

Freedom 4