Only Yesterday [মুভি রিভিউ/রেকোমেন্ডেশন] — Towhid Chowdhury Faiaz

Omoide Poroporo 1

Only Yesterday (Omoide Poroporo)
পরিচালক: ইসাও তাকাহাতা
প্রযোজনা: স্টুডিও জিব্লি

অনেকেই হয়তবা ইতিমধ্যে শুনেছেন যে স্টুডিও জিব্লির সহ-নির্মাতা এবং গ্রেভ অফ দা ফায়ারফ্লাইস, টেইল অফ দা প্রিন্সেস কাগুয়া খ্যাত পরিচালক ইসাও তাকাহাতা আমাদের মধ্যে আর নেই। বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক। তার মৃত্যুতে তাকে শ্রদ্ধা করে আমি তার করা ছবিগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবিটাকে নিয়ে কথা বলতে চাই।

“আমাদের শৈশবকাল আমাদের স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হইয়া গেলেও,
শৈশবকালের স্মৃতি হইতে আমরা বিস্মৃত হই নাই”

কোনো এক কালে স্কুলে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোনো এক গল্পে যেন পড়েছিলাম এই জিনিসটা।আমাদের জীবনের পথে যত দিন আমরা পার করি ততই আমরা অতীতের দিনগুলোকে ভুলে যাই।ছোটবেলার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা আমরা ত্যাগ করি বড় হবার এই জীবনের বাস্তবতার জন্যে।

স্টুডিও জিব্লির বেশির ভাগ ছবিগুলোর মতো এখানে কোনো কাল্পনিক কিংবা অতিপ্রাকৃত কিছু নেই এই ছবিতে। তায়েকো অকাজিমা ২৭ বছর বয়সী একজন সিঙ্গেল চাকরিজীবী যে শহরে সবার মতোই সাদামাটা একটি জীবন বসবাস করছে। ছবিটা শুরু হয় সে তার বোনের জামাইয়ের গ্রামে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে এমন একটি সময় থেকে। তার নিজের কোনো কাছের আত্মীয় গ্রামে থাকে না বলে তাকে তার বোনের জামাইয়ের গ্রামে যেতে হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে এতটুকুই গল্পের মূল কাহিনী। বাকি পুরোটা সময় আমরা তায়েকোর সাথে তার স্মৃতিচারণা এবং তার অভিজ্ঞতার একজন যাত্রী হিসেবেই কাটাই।

Omoide Poroporo 2

“আমি আশা করি নি যে আমার পঞ্চম শ্রেণীর আমিকেও আমি এই যাত্রায় নিয়ে যাবো” এভাবেই তায়েকো পুরো যাত্রাজুড়েই নিজের পঞ্চম শ্রেণীর শৈশবেই হারিয়ে যায়। কিছু স্মৃতি মিষ্টির মতো মধুর হলে কিছু স্মৃতি আবার বিজড়িত করে এমন।জীবনের প্রথম পিরিয়ড হওয়া থেকে শুরু করে তার জীবনের প্রথম পছন্দ হওয়া সবকিছুই যেন তার মনে পড়তে শুরু করে। তখন তায়েকোই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে এটা কেন হচ্ছে। হয়তবা শৈশবের তায়েকো এই ব্যস্ত শহুরে চাকরিজীবী তায়েকোকে জীবন উপভোগ করার নতুন উপায় শিখাচ্ছে।

ছবিটিতেই কোনো বড় কোনো দৃষ্টি আকর্ষণীয় কিছু নেই। ছবিটা এর হৃদয়ে একটি মেয়ের স্মৃতিচারণা এবং বাঁচতে শিখা নিয়েই তৈরি। নেই কোনো প্রেম কিংবা ধরণের প্যাঁচ বরঞ্চ ছবিটা আমাদের জীবনের একটি বাস্তব এবং মিষ্টি প্রতিচ্ছবি। ছবিটা দেখে অসম্ভব নিজের শৈশবকালে হারিয়ে না যাওয়া। দেখতে দেখতে কখন যে আপনি আপনার নিজের জীবনের শৈশবে ফিরে যাবেন তা টেরই পাবেন না।

Omoide Poroporo 3

ছবিটার একটি চমৎকার দিক হচ্ছে এর স্মৃতিচারণার দৃশ্যগুলো। আপনি খেয়াল করে দেখেন যে ১০-১৫ বছর আগের কথা আপনি মনে করতে গেলে আপনি কতটুকুই বা মনে করতে পারবেন।কেবল নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা কিন্তু আপনি যখন ওই স্মৃতির আশে পাশের জিনিসগুলো মনে করবার চেষ্টা করবেন তখন দেখবেন যে জিনিসগুলো স্মৃতির সাথে সাথেই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ইসাও তাকাহাতা টার বিচক্ষন পরিচালনার মাধ্যমে অসম্ভব রকমের সৌন্দর্যের সাথে ফুটিয়ে তুলেছে।ছবির মিউজিকাল স্কোর আমার জীবনের শোনা সবচেয়ে প্রশান্তপূর্ণ স্কোর। প্রতিটি গান আপনাকে আপনার শহুরে বাস্তব জীবন থেকে শিথিল করবে। মুভিটার শেষ গানটি আমি আজও বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে শুনি।আমার অসম্ভব রকমের প্রিয় একটি গান।

Omoide Poroporo 4

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইংরেজি ডাব নাকি অরিজিনাল জাপানিজ ভাষারটা দেখবো? ব্যাক্তিগতভাবে অামি জাপানিজটা দেখতে বলবো কারণ ডাবের রেন্ডারিং একটু সমস্যা অাছে যদিও ডেইসি রিড্লের কন্ঠ অভিনয় জাপানিজ মিকি ইমাই থেকে ভালো হয়েছে।

আমি কোনো চলচিত্রবোদ্ধা কিংবা বিশ্লেষক নই কিন্তু আমি বলবো যে Only Yesterday আমার জীবনের দেখা সেরা চলচিত্রগুলোর মধ্যে একটি।আশা করি না দেখে থাকলে ছবিটি দেখে নিবেন।ছবি শেষে আপনার ঠোঁটে মুচকি একটি হাসি ফোটাতে ছবিটি ব্যর্থ হবে না বলেই আমি আশা করি।

The Tale of the Princess Kaguya [মুভি রিভিউ] — Subrata Barman

The Tale of the Princess KaguyaName: The Tale of the Princess Kaguya
Director: Isao Takahata
Genre: Drama/Fantasy

যারা ‘Grave of the Fireflies’ মুভিটি দেখেছেন তাদের ইসাও তাকাহাতা সম্পর্কে জানার কথা! তারপরও এই মুভিটার ব্যাপারে আলাদা করে বলতে হয়। এমন সুন্দর জল রঙের কাজ, যা দেখলে সাউন্ড অফ থাকলেও তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে! প্রতিটা ফ্রেইম হাতে একে এনিমেশন করা। এক কথায় চোখের উপর চাপ কম পড়ে! 🙂
যাই হোক, কুসুমে ফিরে যাই! The Tale of the Princess Kaguya মুভিটি জাপানী লোকগল্প ‘The Tale of the Bamboo Cutter’ এর উপর বেইস করে গড়ে উঠা। মিয়াতসুকো নামের একজন কাঠুরে বাশ বাগানে একটি আলোকিত বাশের গোড়ায় দৈব ভাবে একটি ছোট আকৃতির রাজকন্যার মত মেয়ে কে খুজে পায়! বাড়িতে নেয়ার পর কাঠুরে এবং তার বউ সেই মেয়েকে নিজেদের সন্তান হিসেবে বড় করার সিদ্ধান্ত নেয়! কন্যা শিশুটির মধ্যে দৈবভাব ধারনা করে তাকে রাজকন্যা বলে ডাকা শুরু করে তারা। অলৌকিক ভাবে কন্যা শিশুটি অসাধারন দ্রুত গতিতে বেড়ে উঠে! তার এমন কর্মকান্ডে অত্র এলাকার শিশু কিশোররা তাকে ‘তাকেনোকো’ নাম দিয়ে দেয়। সেই সব শিশুদের সাথে তাকেনোকো হেসে খেলে বেড়ায়। এদের মধ্যে সবার বয়োজ্যেষ্ঠ Sutemaru এর সাথে ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠে তাকেনোকোর। এভাবে এক সময় মিয়াতসুকো বাশ বাগানে স্বর্ন এবং রাজকীয় কাপড় খুজে পেয়ে মনে করে তার কন্যা কে রাজকন্যা করে গড়ে তোলার ইংগিত দেয়া হচ্ছে তাকে! এবং সে তাকেনোকোর অনিচ্ছাতে হঠাত করেই শহরে নির্মিত তাদের নতুন বিলাসবহুল প্রাসাদে নিয়ে যায়….মিয়াতসুকো তার জীবনের পরম দায়িত্ব হিসেবে তাকেনোকোকে একজন যথার্থ রাজকন্যা গড়ে তোলার প্রয়াস নেয় এবং তার কন্যা’র সব সুখের জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়!

The Cat Returns [মুভি রিভিউ] — আতা-এ রাব্বি আব্দুল্লাহ

The Cat Returns 1

ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের একটা অসাধারণ চীনা লোকগাথার অনুবাদ পড়সিলাম । গল্পটার নাম লোলির পাহারা । গল্পটার কেন্দ্রীয় চরিত্র হল লোলি নামক এক কুড়ের হদ্দ ছেলে ।তো লোলির বাবা তাদের একমাত্র শুয়োরটাকে বিক্রি করবে এবং সেইটা পাহাড়ার দায়িত্ব দিয়ে যায় লোলিকে । তো লোলি ওই পাহারার ধার না ধেরে সোজা দিল ঘুম । ঘুম থেকে উঠে দেখে শুয়োর হাওয়া । তো শুয়োর খুজতে গিয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে নিজেই শুয়োর হয়ে যায় । তো কল্পনা করুন আপনি যদি একদিন হঠাত্‍ করে বিলাই হয়ে যান !!?

The Cat Returns 6
তো দ্যা ক্যাট রিটার্নস এর কাহিনী হল হারুকে নিয়ে । হারু স্কুলপড়ুয়া এক মেয়ে ।সে কিছুটা আলসে , অনেকখানি ছটফটে এক মেয়ে । তো একদিন স্কুল থেকে ঝাড়ি বকা খেয়ে বাসায় ফেরার পথে দেখে একটা অদ্ভুত দেখতে বিলাই প্রায় ট্রাকচাপা পড়তে যাচ্ছে । তো হারু অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সাথে বিড়ালটাকে বাচায় । তো বিড়ালটাকে বাঁচানোর পর যখন হারু ধাতস্থ হতে থাকে তখন দেখে বিড়ালটা দুই পায়ের উপর দাড়িয়ে গা ঝাড়ছে । এরপর চমক আরও বাকি । বিড়ালটা মানুষের ভাষায় হারুকে কৃতঙ্গতা প্রকাশ করে । হারুর তো মাথা খারাপ হবার যোগাড় । কেউ বিশ্বাস করে না হারুকে । তো হারুর দেখে যে সে বিলাইয়ের সাথে কথা বলতে পারে । তো একদিন রাতে বাদনা-বাজ্য বাজিয়ে হারুর বাসার সামনে উপস্থিত হয় একদল বিড়াল ।হেই বিড়ালদের মধ্যে থাকে একটা বিশাল ধুমসো বুড়ো হুলো । সে হল বিলাইদের রাজা ।সে হারুকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছে কারণ হারু যে বিড়ালকে বাচিয়েছে সে হল স্বয়ং বিড়াল রাজ্যের রাজপুত্র । এবং চমকের আরও কথা হচ্ছে তারা হারুকে চায় রাজপুত্রের কনে হিসেবে নিতে ! তো এখন কি করবে হারু !? নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যায় হারু । পরিচিত হয় মুটকো বিড়াল নাম মুটো এবং হৃদয়ের স্বরের সেই ব্যারন বিড়াল । উপস্থিত হয় বিড়ালের রাজ্যে এবং ঘটতে থাকে নানা মজার ঘটনা ।

The Cat Returns 2
মুভি স্টুডিও গিবলির । এর আর্টওয়ার্ক মানে ক্যারেকটার ডিজাইন নরমাল জিবলীর আর্ট থেকে বেশ আলাদা , যা সুন্দরই লেগেছে । এর আছে খুব সুন্দর এবং মজার সাউন্ডট্র্যাক এবং এর কাহিনীও সেরকমই । এর ব্যাকগ্রাউন্ড আর্ট জিবলীর মতই অর্থাত্‍ অসাধারণ । এই মুভি হল মনে শান্তিদায়ক মুভি । মনের স্ট্রেস নামক জিনিস ধুয়মুছে নিয়ে যায় ।কাহিনী ,ক্যারেকটার সবই সুন্দর । ব্যারন বিলাইয়ের উপস্থিতি ( হ্যা Whisper of the hearts এর সেই ব্যারন বিড়াল ) ! যারা বিলাই প্রেমিক তাদের জন্য এই মুভি দেখা সুন্নত 🙂 ! যারা দেখেননি তারা তাড়াতাড়ি দেখে ফেলুন । তবে একটা কথা । এটাকে গিবলির মাস্টারপিস ভেবে দেখতে বসলে হতাশ হতে পারেন । তাই আশার পারদ বেশি না রেখে শুধু উপভোগ করুন । বিলুই প্রেমিকদের জন্য এটা স্পেশাল ট্রিট ।

The Cat Returns 3

ডাউনলোড করুন: https://torcache.net/torrent/CC6F9B40B0FC173EC3774F4C68EC7E68C6D8B6C4.torrent?title=%5Bkat.cr%5Dthe.cat.returns.2002.dual.audio.1080p.hevc.x265

অনলাইনে দেখুন: https://kissanime.to/Anime/The-Cat-Returns-Dub
আমার রেটিং: ৮/১০

The Cat Returns 4

The Cat Returns 5

জীরোর স্বপ্ন অথবা রাগী বাতাসের কাহিনী — Anirban Mukherjee

ফুজিওকা শহর থেকে একটু দূরে ,যখন ভোরের সাদা কুয়াশাগুলো সবুজ শস্যক্ষেতের উপর গাঢ় হয়ে ভাসতে ,কাছেই একটা বাড়িতে,এক কিশোরের স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমারেখা ধংস হয়ে যায় ।গাঢ় সাদা কুয়াশার সমুদ্রের মধ্যে বনেদি জাপানি বাড়িটা একটা বিচ্ছিন্ন ভাসমান দ্বীপের মতো লাগে ,যার বিশাল ত্রিকোনাকার ছাদের একপ্রান্তে ছেলেটাকে চড়তে দেখি ,চোখে একটা এভিয়েসন গ্লাস।সে ছাদের একপ্রান্তে একটা কাঠের এরোপ্লেনে চড়ে বসে ।প্লেনটা বেমানান, ছোট ইঞ্জিন,ডানাদুটো বাঁকানো ,শেষ প্রান্তে আবার পাখির পালকের মতো কারুকার্য করা ।ছেলেটা ইঞ্জিনটা চালু করে,প্লেনের প্রোপেলার ঘোরে ।দূরে সূর্যের প্রথম লাল আলো পড়া হলুদ -সবুজ পাহাড়গুলো ঘুরন্ত প্রপেলারের মধ্যে দেখলে মনে হবে একটা গলন্ত সুন্দর লাল – হলুদ কিছু পদার্থ ।প্লেনটা পাখির মতো ডানা ছাড়ে, আর ছেলেটা প্লেনের সঙ্গে ওড়ে ।সূর্যের প্রথম লাল -হলুদ আলো ,আর নীচের সবুজ উপত্যকা ,শস্যক্ষেত ।প্লেনটা যত এগোয় ,সেই শস্যক্ষেত থেকে অন্ধকার দ্রুত পেছনে সড়ে যেতে থাকে ।যেন প্লেনটা একটা বাজপাখি আর অন্ধার কোন ভীতু ইঁদুর ।নীচের ছোট-বড় নদী,সবুজ নদীদ্বীপ ছাড়িয়ে প্লেনটা এসে পৌছয় ফুজিওকা শহরের মধ্যে ,যেখানে কাঠের সাঁকো, রেল লাইন,মেয়েদের বোডিং হাউস পেরিয়ে দেখতে পায় কালো সারসের মতো অসংখ্য ছোট বেলুন শহরে ঢুকছে ,যার মধ্যে অদ্ভুতদর্শন কালো কাপড় পড়া মানুষ দাঁড়িয়ে ,বেলুনগুলো আবার একটা বিশাল কালো বেলুন থেকে ঝুলছে ।ছেলেটা সেগুলোকে বিপদ মনে করে লড়তে যায় ,পারেনা ,ছোট প্লেনটা ভেঙে যায়,তার এভিয়েসন গ্লাস ভেঙে পড়ে যায়,সেও পড়তে থাকে এবং একসময় তার স্বপ্ন ভেঙে যায় ।ছেলেটা জীরো হোরিকোশি ,আর দৃশ্যটা হায়াও মিয়াজাকির শেষ মাস্টারপিস উইন্ড রাইজেসের প্রথম স্বপ্নদৃশ্য ।তার সিনেমাগুলোকে প্রায়ই সিনেমার ম্যাজিক রিয়ালিজম জঁরের অন্যতম সেরা সাক্ষর মনে করা হয়,উইন্ড রাইজেসও এর বাইরে নয় ,এই সিনেমাতে বারবার স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমানাটাকে মুছে ফেলা হয়েছে ।যেমন এর পরের স্বপ্নদৃশ্য,কায়ো,জীরোর ছোট বোন যখন জীরোর সঙ্গে বাড়ির ছাদে গাঢ় নীল রাত্রিআকাশে উল্কাবৃষ্টি দেখছিলো ,তখন জীরোর চোখ চলে যায় ইতালির রঙিন আকাশে ,একগাদা কাপ্রোনি কা 31 প্লেন ,যার পাখার রঙ ইতালির পতাকার মতো লাল-সাদা-সবুজে রাঙানো ,হয়ত কোনও যুদ্ধে যাচ্ছিল , আমরা পরে জানতে পারি এর ডিজাইনার জিয়োভাননি কাপ্রোনির মুখে ,ঐ প্লেনগুলো কেউ ফিরে আসবে না।পরের দৃশ্যে দেখব একটা শহরের ছবি ,যার গোটাটা প্লেনগুলোর বোমের লাল আগুনের শিখাতে গিলে ফেলেছে,প্লেনগুলোও বাঁচতে পারছে না ।এখানেই জীরো অনুপ্রেরনা পায় কাপ্রোনির কাছে ,পাইলট নয়,প্লেনের ডিজাইনার হওয়ায় উচিত তার লক্ষ ।আর অবশ্যই , “প্লেন কোনো যুদ্ধের যন্ত্র নয়,সেগুলো কোন টাকা কামাবার জিনিস নয়।এয়ারপ্লেন হচ্ছে সুন্দর স্বপ্ন,যার ইঞ্জিনগুলো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিনত করে”।
পাঁচ বছর পর,জীরো নিজের স্বপ্নগুলোকে সত্যি দেখার জন্য ট্রেনে করে যাচ্ছে টোকিওতে,এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে টোকিও ইউনিভার্সিটিতে ।ট্রেনে দেখা হয় নায়োকোর সঙ্গে।দুজনেই ইটালিয়ান ভাষা জানে ।
Le vent se leve
Il faut tenter de vivere.
(The wind is rising ,we must try to live)

wind rises 1
এই আসার পথেই জীরো পরিচিত হয় প্রকৃতির ধংসের মুখের দিকে ,1923 সালের টোকিওর ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প, মিয়াজাকি তার সিনেমাতে ভূমিকম্পকে এক ভয়ঙ্কর সুন্দর মাত্রায় দেখিয়েছেন ।ভূমিকম্প যেন এক জীবন্ত সরীসৃপ, বিশাল বড় নিশ্বাস ফেলে স্থলভাগের দিকে ধেয়ে আসছে ,তারপর এক বিশাল শব্দ, মাটির উপর দিয়ে যেন এক বিশাল বড় ঢেউ খেলে গেল,টোকিওর বাড়িগুলো,রেলপথ আর ট্রেনটাও ও সেই ঢেউএর তালে নেচে উঠল ।দানবীয় শব্দের সঙ্গে মিয়াজাকি আমাদের পরিচয় করিেছেন ভূমিকম্প পরবর্তী বিশাল অগ্নিকান্ডের,টোকিওর রাস্তায় লক্ষ জনার ভীড়,বিশাল লাল-কালো মাশরুমের মতো আগুনের ধোঁয়া ঢেকে ফেলেছে টোকিওর আকাশ ।নায়োকোর আয়াকে বাঁচানোর পর জীরো দেখে তার বিশ্ববিদ্যালয় জ্বলে গেছে,তার বন্ধু কিরো হোনজো আরও কিছু বন্ধুদের নিয়ে কিছু বই আর গবেষনা পত্র বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে ।উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে আগুনে পোড়া কাগজ,কাঠের দরজা,পোড়া গাছের ছোট ডাল ।টোকিও শেষ ।প্রায়।
“কে জানে,সেখানে হয়ত কোনও আগুনের সমুদ্র ছিলো”
1927 সালে জীরো আর কিরো গ্রাজুয়েট হয় টোকিও ইউনিভার্সিটি থেকে ,তারপর তারা মিৎসুবিসি কোম্পানির হয়ে ফ্যালকন নামে একটা ফাইটারের ডিজাইনের উপর কাজ করতে থাকে ,যেটা পরে পরিত্যক্ত হয় ।এরমধ্যে তারা দুজনা জার্মানি যায়,সেই সঙ্গে উপলব্ধি করে যুদ্ধখাতে ব্যায় বারানোর জন্য কী দারিদ্র্যের মধ্যে যাচ্ছে জাপান ।জীরো সবসময় কাপ্রোনির কথা মনে রাখতো ,যে তাকে অনেক স্বপ্নদৃশ্য এ দেখা দিয়েছে,” এই পৃথিবীটা আরো ভালো হয়ে উঠতে পারে ,সুন্দর প্লেনের সাহায্যে”।
সিনেমার শেষ স্বপ্নদৃশ্য খুব সুন্দর, একগাদা মিৎসুবিসি এ ফাইভ সিক্সের ধংসাবশেষ পেরিয়ে জীরো এগিয়ে যাচ্ছে একটা নীল আকাশ আর সবুজ ঘাসের উঁচু প্রান্তে ,যেখানে কাপ্রোনি দাঁড়িয়ে আছে কথা বলার জন্য ।কথার ফাঁকে দেখতে পারি কিছু এ ফাইভ সিক্স উড়ে যাচ্ছে নীল আকাশে ,ফরিঙের মতো ,কিংবা অসংখ্য কাগজের প্লেনের মতো ।নীচে একটা ছাতা নিয়ে নায়োকো আসছে ।

উইন্ড রাইজেসের প্লেনগুলি:-

ক্যাপ্রোনি কা 1 বা ক্যাপ্রোনি কা 31:-
জীরোর দ্বিতীয় স্বপ্ন দৃশ্যে যে বাইপ্লেনগুলো আমরা দেখতে পায়,সেগুলো সম্ভবত ক্যাপ্রোনি কা 31 সিরিজের ।এগুলো আসলে বোমারু বিমান ,দিনের বেলায় শত্রু দেশে বোম ফেলার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নাগাদ তৈরি হয় ।মোট 162 থেকে 166 টা তৈরি করা হয়েছিলো।এর প্রথম প্রটোটাইপের নাম ছিলো ক্যাপ্রোনি কা ওয়ান,যেটা প্রথম উড়ানেই ক্রাশ খেয়েছিলো ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালির হারের পর কিছু এই সিরিজের বিমান যাত্রী পরিবহনে ব্যাবহার হতো ।মোট ছয় থেকে চারজন যাত্রী ধরতো এখানে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এগুলো অস্ট্রিয়া -হাঙ্গেরি, লিবিয়া এবং ফ্রান্সে বোমাবর্ষণের কাজে ব্যাবহার করেছিলো ইতালি ।

ফ্যালকন প্রোটোটাইপ:-
সিনেমাতে দেখি জীরো হোরিকোশি আর কিরো হৌনজো ,দুজনেই একটা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বেসড প্লেন তৈরি করার চেষ্টা করে ,মিৎসুবিসির হয়ে,জাপানি নেভির জন্য ।সেই প্রজেক্টটার নাম ফ্যালকন, মাত্র দুটো তৈরি হয়েছিলো ।আর এটাই ছিলো জাপানের প্রথম ক্যারিয়ার বেসড এয়ার ক্রাফট তৈরির উদ্যোগ ।এই প্লেনটা নেভির দ্বারা প্রতাখ্যাত হয়,তার বদলে জাপানি নেভি বেছে নেয় নাকাজিমা এ ওয়ান এন ।যেটা 1935 অবধি জাপানিজ নেভির সঙ্গে ছিলো ।মোট একশ একান্নটা তৈরি করা হয় ।

মিৎসুবিসি এ ফাইভ এম :-
জীরো হোরিকোশির অন্যতম পিয়েটা,যে প্লেনকে দেখে সিনেমাতে তার বন্ধু কিরো বলেছিলো একটা “আঁভা গার্দ” ডিজাইন ।আমেরিকার মিত্রপক্ষ এর নাম দিয়েছিলো ক্লাউড ।
1934 সালে যখন জাপানের নেভি একটি এমন এক ডিজাইন চাইলো দুই কোম্পানি, মিৎসুবিসি আর নাকাজিমার কাছে যেটা 350 কিলোমিটার প্রতিঘন্টা গতিবেগ নিয়ে উড়তে পারবে,আর 6.5 মিনিটে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় উঠতে পারবে ।আগের 1927 সালের প্রতিযোগিতায় নাকাজিমা জেতে ,মিৎসুবিসির ফ্যালকনকে হারিয়ে ।কিন্তু এবার জেতে মিৎসুবিসি ।
মোট দশটা ভারসন ছিলো,প্রথম প্রটোটাইপের ডানা অনেকটাই বাঁকানো ছিলো ।এ ফাইভ এম ফোর ভারসনের সবচেয়ে বেশি 440 কিলোমিটার প্রতিঘন্টা গতিবেগে যেতে পারতো আর 1200 কিমি এর রেনজ ছিলো ।

মিৎসুবিসি এ সিক্স এম জিরো :-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ডগফাইটে যে আমেরিকার মিত্রপক্ষের শিরঁদাড়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলো ,সেটা নেভির টাইপ জিরো ক্যারিয়ার ফাইটার ওরফে মিৎসুবিসি এ সিক্স এম জাপানিজ জিরো ।মোট দশ হাজারের উপর বানানো হয়েছিলো ।
জাপানিজ নেভি চাইছিল এমন এক ফাইটার, যেটা সাড়ে তিন মিনিটে তিন হাজার মিটার যেতে পারে এবং “600 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা” সবচেয়ে বেশি গতিবেগ হয় ।
প্রচণ্ড হালকা করা হয়েছিলো একে,যাতে শত্রুপক্ষের প্লেনকে ডগফাইটে নাস্তানাবুদ করতে পারতো সহজে ।অথবা দ্রুত দুটো ষাঠ কেজির বোম শত্রু পক্ষের ঘাঁটির উপর ফেলে চলে আসতে পারতো ।
কিন্তু এই অতিরিক্ত হালকা করার জন্য কিছু অনেক জিনিজ বাদ দিতে হয়েছিলো ।আর সেটাই হয় জিরোর দুর্বলতা ।
1942 এর 4 টা জুন,আমেরিকার ডাচ হারবারের উপর হামলা চালানোর সময় একটা জিরো তেলের অভাবে ল্যান্ডিং করে ,ডাচ হারবারের কুড়ি মাইল দূরে ।পিছলে গিয়ে ল্যান্ডিং টা ক্রাশ ল্যান্ডিং এ পরিনত হয়,পাইলট মাথার আঘাতে মারা যায় আর আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগরের উপর তার অন্যতম ত্রাসের অপারেশনের সুযোগ পায় ।ভালোভাবে যাচাই করার পর দেখে ওজন কমানোর জন্য জিরোর পাইলট , ইঞ্জিন বা অন্য ক্রিটিক্যাল পয়েন্টের চারপাশে কোন বর্ম দেওয়া নেই,যেটা সেযুগের প্লেন এবং পাইলটের অন্যতম রক্ষাকবচ ।

মিৎসুবিসি জিথ্রিএম :-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের অন্যতম সেরা বোমারু বিমান তথা পরিবহন বিমান ।এটা ডিজাইন করেছিলো জীরোর বন্ধু কিরো হৌনজো। হাজারের উপরে তৈরি করা হয় এই বোমারু বিমান ।সিক্স এম জিরোর মতো,এটাও ওজন কমানোর জন্য বেশি বর্ম (আর্মর ) দেওয়া হয়নি ।সাতজন লোক এবং আটশ কেজি বোম অথবা একটা এরিয়াল টর্পেডো নিয়ে পাড়ি দিতে পারতো চার হাজার চারশ কিলোমিটার দুরত্ব ।পার্ল হারবারের উপর আক্রমণের সময় এটার অবদান অনেক ।

ক্যাপ্রোনি কা ফোর :-
অনেকগুলো(মূলত তিনটে) মূল ডানা যুক্ত বাইপ্লেন সিনেমাতে দেখা যায়। এগুলো ক্যাপ্রোনি কা ফোর সিরিজের প্লেন, মূলত বোমারু অথবা যাত্রীবাহী এরোপ্লেন হিসাবে তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন ডিজাইনার জিয়োভাননি ক্যাপ্রোনি ।এর যাত্রীবাহী মডেল ক্যাপ্রোনি কা 48 ,প্রথম উড়ানেই ক্রাশ করে,ইটালির ভেরনা নামক জায়গায়, চোদ্দ থেকে সতেরো জন মারা যায় ।এটা ইতালির প্রথম বিমান দুর্ঘটনা ,সিনেমাতে এই ঘটনার একটা রেফারেন্স সম্ভবত আছে ।

সব শেষে-
ক্যাপ্রোনি কা 309 জিবলি :-
সম্ভবত মিয়াজাকির সবচেয়ে প্রিয় প্লেন, যার নামানুসারে নিজের (অথবা নিজেদের) কোম্পানির নামকরণ করেন ।

wind rises 2

পোরকোর প্লেনের দুনিয়া — Anirban Mukherjee

মিয়াজাকির মতো আমারও প্লেন সম্পকে আগ্রহ অনেক দিনের ।যখন ইন্টারনেট হাতে পায় তখন এরোপ্লেন সম্পকে আমার আগ্রহকে খোরাক দি ,নাহলে তার আগে কিছু বাংলা-ইংরেজি বিশ্বকোষ ছিলো ভরসা ।ইন্টারনেট আসার পর মিয়াজাকির সিনেমা জগত সম্পকেও পরিচিত হয়,দেখি পোরকো রোসো , আড্রিয়াটিকের নীল ফেনিল জল আর ততোধিক নীল আকাশ মাতাচ্ছে একটা লাল স্যাভোয়া এস-21, একটা কুরটিস আর থ্রি সি জিরো আর একটা অজানা ডাবোহায এবং আরও আরও নাম না জানা সীপ্লেন আর তাদের পাইলটরা ।
এই লেখাতে পোরকো ,মিস্টার কুরটিস এবং সি পাইরেটদের প্লেন গুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে আমাদের উচিত কিছু পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যা এভিয়েশন জগতে প্রচণ্ড প্রচলিত ।

Porco 1

1. ফিউজিলাজ:-
ডানা বা উইং ছাড়া বিমানের মূল কাঠামো ।

2. ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফট:-
পৃথিবীতে সব ধরনকে এরোপ্লেনই হচ্ছে ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফট । সব সব ফিক্সড উইংএয়ারক্রাফটের উইং বা ডানা আছে । এই প্লেনের ডানা ,প্লেনের সামনে দিয়ে আসা বাতাসের সাহায্যে,প্লেনকে উপরে তোলে ।এছাড়া ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফটের উদাহরণ হতে পারে ঘুড়ি, গ্লাইডার,ভেরিয়েবল স্যুঈপ উইং এয়ারক্রাফট বা পরিবর্তনশীল ডানাওয়ালা বিমান ।এই স্যুঈপ উইং এয়ারক্রাফট নিজের ডানাকে মূল বিমানের কাঠামো বা ফিউজিলাজের সমান্তরালে ছড়িয়ে দিতে পারে অথবা গুটিয়ে নিতে পারে । এই ধরনের বিমানের সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হলো আমেরিকা বিমানবহরে আধুনা রিটায়ার্ড গ্রুম্যান এফ-14 টমক্যাট,যা টম ক্রুজের “টপগান” সিনেমার জন্য মোটামুটি সবার কাছে পরিচিত । এছাড়া ইউরোপের পানাভা টর্নেডো ,সোভিয়েত(এবং বর্তমানের রাশিয়ার) বিমান বহরের মিগ -23,মিগ-27 ইত্যাদি যুদ্ধবিমান ।

3. মনোপ্লেন এবং বাইপ্লেন :-
সব ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফটের মূল ডানা আছে, কিন্তু তা একটা হতে পারে অথবা দুটো (কিংবা কিছু পুরনো ডিজাইনে ততোধিক) হতে পারে । মনোপ্লেন হচ্ছে সেই ধরনের প্লেন যার একটি মূল ডানা আছে ,যা প্লেনের মূল কাঠামো বা ফিউজিলাজের দুদিক বরাবর অবস্থান করে । যে প্লেনের ডানা মূল কাঠামো বা ফিউজিলাজের উপরের দিক বরাবর থাকে তাকে হাই উইং প্লেন ,মূল কাঠামোর মধ্য বরাবর থাকলে মিড উইং প্লেন আর নিচের দিকে থাকলে তাকে লো উইং প্লেন বলে ।
বাইপ্লেন এর মূল ডানা দুটো । একটা থাকে মূল কাঠামোর নিচের দিকে আর একটা উপরের দিকে ।উপরের মানে অনেকটা উপরে, মূল কাঠামো বা ফিউজিলাজ ছাড়িয়ে বাইপ্লেন বিখ্যাত হয়েছিল কুড়ি আর ত্রিশের দশকে, এখন কিছু যাত্রী পরিবহনকারী প্লেন বা সীপ্লেন হচ্ছে বাইপ্লেন শ্রেনির ,নাহলে এখন মোনোপ্লেনের রাজত্ব ।

4. সীপ্লেন বা সমুদ্রবিমান :-
আমরা সবাই জানি এই ধরনের প্লেনগুলো জল থেকে উড়তে(টেকিং অফ) এবং নামতে (ল্যান্ডিং)
এ সক্ষম। সীপ্লেন বা সমুদ্র বিমানকে দুভাগে ভাগ করা যায় , ফ্লোটপ্লেন আর ফ্লাইং বোট ।

5. ফ্লোটপ্লেন :-
যে ধরনের সীপ্লেনের ফিউজিলাজের নিচে ফ্লোট নামে একধরনের বায়ুর থেকে হালকা ফাঁপা কাঠামো থাকে( মূলত একাধিক) তাকে ফ্লোটপ্লেন বলে । এই ফ্লোট হতে পারে কিছু নির্দিষ্ট ফাঁপা বস্তু, মূলত প্লেনকে জলের উপর ভাসিয়ে রাখার জন্য এবং উড়তে পারা বা টেক অফ করার জন্য কাজে লাগে ।
এই ধরনের প্লেনগুলো জলে এবং স্থলে নামতে পারে,সেজন্য এগুলোকে উভচর বিমান বা এমফিবিয়াস এয়ারক্রাফটও বলে।

6. ফ্লাইং বোট:-
ফ্লাইং বোট হচ্ছে এমন এক ধরনের সী প্লেন ,যার ফিসজিলাজ বা মূল কাঠামোটা জলে ভাসে ,কাঠামোর দুপাশে বড় বড় ডানা থেকে ঝোলানো “হূল” (hull) এর সাহায্যে ।এই হূলের আক্ষরিক অর্থ হলো “জাহাজের কাঠামো”। মূলত যেকোনো ফ্লাইং বোট বা সীপ্লেনে ব্যাবহার করা হূলগুলো জাহাজের কাঠামো আকৃতিই হয় ।ল্যান্ডিং এর সময় মূল কাঠামোর সঙ্গে হূলও জলে ভাসে ।

Porco 2

এবার পোরকো রোসো সিনেমাতে ব্যাবহার করা প্লেনগুলোর দিকে চোখ বোলানো যাক ।

1. স্যাভোয়া এস -21:-
সিনেমার মূল হিরো পোরকোর লাল রঙের প্লেনটা হচ্ছে স্যাভোয়া এস-21। পোরকো যখন ইতালীয়ান এয়ার ফোর্স ছেড়ে আসে তখন এই প্লেনটাকে ফোর্স থেকে কিনে নেয় ।তার অনেক প্রিয় এই লাল রঙের প্লেনটার ইঞ্জিন হচ্ছে রোলস রয়েস ক্রেসট্রল (ক্রেসট্রল হচ্ছে বাজ জাতীয় এক ধরনের শিকারি পাখি,সেই থেকে নাম)।বারো সিলিন্ডারের আর সাতশো কুড়ি হর্স পাওয়ারের মোটর যুক্ত এই লাল “এড্রিয়াটিকের রানি”র সর্বোচ্চ গতিবেগ তিনশো কুড়িকিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ।অস্ত্র হচ্ছে দুটো এমজি 08 টাইপের মেশিনগান ,যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান এবং তার মিত্র সেনারা ব্যাবহার করত ।পোরকোর প্লেনের পেছনে যে R চিহ্নটা আছে সেটা রোসো আর রিপাবলিক ,এই দুটোর প্রতীক ।পোরকো ফ্যাসিবাদ ঘৃণা করত ।
এই শ্রেণীর প্লেন বাস্তবে সত্যিই ছিলো ,এবং মাত্র একটাই তৈরি করা হয়েছিলো ।রেসের জন্য বানানো এই প্লেনটাকে কনট্রোল করা ছিলো খুবই মুশকিল ।তো,প্রজেক্ট বাতিল ।
দুটোই ফ্লাইং বোট হলেও মিয়াজাকি পোরকোর স্যাভোয়া এস-21তে কিছু পরিবর্তন আনে,যা আসল স্যাভোয়া এস-21 থেকে আলাদা ।পোরকোর এস-21 টা মোনোপ্লেন আর আসলটা ছিলো বাইপ্লেন ।

2. কুরটিস আর থ্রি সি জিরো:-
ডোনাল্ড কুরটিস, যার সঙ্গে সিনেমার শেষের দিকে পোরকোর রেস এবং ডগফাইট হয়,তার প্লেনটা ছিলো আর থ্রি সি জিরো সিরিজের । বারোটা টা সিলিন্ডার যুক্ত ছশো দশ হর্স পাওয়ারের মোটর সর্বোচ্চ তিনশো আটচল্লিশ কিলোমিটার প্রতিঘন্টা বেগে যেতে পারতো ।এর অস্ত্র হচ্ছে দুটো এম টু ব্রওনিং মেসিনগান,যা আমেরিকাতে তৈরি ।
পোরকোর প্লেনের মতোই ,এই শ্রেণীর প্লেনও সত্যি ছিলো,যা 1925 সালে আমেরিকায় তৈরি হয় ,মূলত রেসিং এর জন্য ।তৈরি করে “কুরটিস এরোপ্লেন এন্ড মোটর কোম্পানি”, যার প্রতিষ্ঠতা গ্লেন হ্যামনড কুরটিস, আমেরিকার এরোপ্লেন জগতের অন্যতম পায়োনিয়ার ।

3. ডাবোহায (যে) :-
এটা সিনেমার সী পাইরেটদের ফ্লাইং বোট ,যা একটা মোনো প্লেন।এর বডি স্টিলের তৈরি, যেখানে স্যাভোয়া এস -21 আর কুরটিস আর থ্রি সি জিরোর বডি কাঠের তৈরি ।দুটো রোলস রয়েস ঈগল ফোর ইঞ্জিন,বারোটা সিলিন্ডার যুক্ত তিনশো ষাঠ হর্স পাওয়ারের ক্ষমতা দিয়ে সর্বোচ্চ একশ তিরানববই কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগ দিতে পারে ।
এটি একটি কাল্পনিক প্লেন, সম্ভবত মিয়াজাকির মস্তিকপ্রসূত।

Porco 3

মুভি রিভিউ: Kiki’s Delivery Service (কিকির পরিবহন সেবা) — আতা-এ রাব্বি আব্দুল্লাহ

সবার এনিমের টেস্ট এক না , কেউ একশান , কেউ রহস্য এবং কেউবা রোমান্স । কিন্তু অনেকসময় টানা একটাইপের কিছু দেখতে দেখতে ক্লান্তি বা বিরক্তি আসতে পারে । তখন টেস্ট পরিবর্তন করার জন্য এমন কিছু চাই যা মনকে ফ্রেশ করে দেবে এবং মনের স্ট্রেস দূর করে দেবে এবং আপনাকে কয়েকদিনের জন্য মুগ্দ্ধ করে রাখবে !!!? এবং সে কাজ করতে পারে গিবলি স্টুডিওর মুভি । এই লেজেন্ডারি স্টুডিওর সৃষ্ট অন্যতম এক মাস্টারপিস হচ্ছে কিকির ডেলভারি সার্ভিস ! অসাধারন এই মুভি অতিরিক্ত আবেগ বা ফ্ল্যাশি কোন কিছু না দেখিয়েই সিম্পল স্টোরিলাইন দিয়ে আপনাকে মুগ্দ্ধ করে দেবে !!!

Kiki 1
কাহিনী : এই মুভির প্রধান চরিত্র হল কিকি , এবং সে একজন ডাইনী । এখন ডাইনী বললেই রুপকথার যে বিদঘুটে ডাইনির কথা মনে আসে কিন্তু এখানে তা উল্টো । কিকি যে রিয়েলিটির বাসিন্দা , সেখানে ডাক্তার , ইন্জিনিয়ারের মত ডাইনীবিদ্যা বা উইচক্রাফর্ট একটা সাধারণ জিনিস । কোন ডাইনীর ১৩বছর পূর্ণ হলে তাকে একলা একবছরের ট্রেইনিং এর জন্য তাকে বাইরে যেতে হয় এবং কিকি সে বয়স এ পৌছেছে । কিকির মাও একজন ডাইনী যদিও বাবা মানুষ । কিকি ১৩বছরে পৌছেই ট্রেনিং এবং বাইরের দুনিয়াকে জানা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়ে তার ছিমছাম গ্রামের সকলের কাছ খেকে বিদায় নিয়ে এবং তার সঙ্গী হল পোষা বিড়াল জিজি এবং বাবার রেডিও । পথে নানা ঝামেলায় পড়ে এবং তা এড়িয়ে সে পৌছায় এক ব্যাস্ত শহরে । কিকি যদিও প্রথমে অনেক উত্‍সাহি থাকে নতুন জায়গায় আসার থ্রিলে । কিন্তু শহরের ব্যাস্ত মানুষদের উপেক্ষা কিকির জন্য প্রথমে কষ্টকর হয়ে দাড়ায় । কিন্তু পরে এক দয়ালু ম্হিলা ওসোনোর সাথে পরিচয় হয় যে একটি বেকারী চালায় । ওসোনো তাকে আশ্রয় দেয় এবং সেই সাথে কিকি সেখানে তার উড়ার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যাবসাও শুরু করে । প্রথম ডেলিভারিতেই বেশ ঝামেলায় পড়ে কিন্তু ঠিকই উত্‍রে যায় । এভাবে শুরু হয় কিকির শহরে জীবন ।সেখানে তার পরিচয় হয় টমবোর সাথে যে আপাতদৃষ্টিতে কিকির উপর ছোটখাট ক্রাশ খাওয়া , উরসুলা নামক এক মেয়ে যে একজন মেধাবী আর্টিস্ট আরও অনেক ভালো মন্দ চরিত্র । কিকি কি পারবে নির্বীন্ঘে তার ডেলিভারী সার্ভিস চালু রাখতে ? তাহলে সময় থাকলে দেখে ফেলুন কিকির ডেলিভারী সার্ভিস !!
এর সাউন্ডট্র্যাক খুবই সুন্দর ।এর ল্যান্ডস্কেপ আর্ট অতিরিক্ত সুন্দর । এটার সাব এবং ডাব দুটোই অস্থির যদিও আমার কাছে ডাব বেশি ভালো লেগেছে । এই মুভিতে যদিও মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো প্লট নেই কিন্তু এটা দেখার পর এর রেশ ছুটাতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হবে !!!
আমার রেটিং : ৮.৫/১০ ।

Download link: http://www.animeout.com/majo-no-takkyuubin/

Watch online: https://kissanime.to/Anime/Kiki-s-Delivery-Service-Dub/Movie?id=49370

Kiki 2

The Wind Rises রিভিউ — Rafiul Alam

“The wind is rising! . . . We must try to live!”
– Paul Valéry’s poem, “Le Cimetière marin”

আমি জিব্লির হাতে গোনা কয়েকটা মুভি দেখেছি। কালকে যখন এই মুভিটা শেষ করলাম, মনে হল, আরো আগে দেখা উচিত ছিল। হায়াও মিয়াজাকি সাহেব পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা এটি। যা মুলত অ্যারোনটিক্যাল ডিজাইনার জিরো হিরোকশির জীবন কাহিনী। যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময় জাপানের জন্য যুদ্ধবিমান নকশা করেন। পর্দায় তুলে ধরা দৃষ্টিভঙ্গী, আর বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ের কারণে সিনেমাটি সমালোচিত, আমি সেই বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না, তাই সেব্যাপারে কোন মন্তব্য করব না।

Synopsis : জাপানী বালক জিরো বিমান ভালবাসে। সে বিদেশী বিমানের ম্যাগাজিন ঘেটে বেড়ায় অসীম কৌতূহলে। ইতালিয়ান ইঞ্জিনিয়ার জিওভান্নি কাপ্রনি তার আদর্শ। অ্যারোনটিকাল ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন এভাবেই সে তাড়া করতে থাকে।
বছর খানেক পরের দৃশ্য, বালক এখন যুবক। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের কামরা থেকে বেরিয়ে আসে জিরো। সবকিছু যখন স্থির ও শান্ত, তখনই ভুমিকম্প আঘাত হানে। ট্রেন দ্রুত থামানো হলে যাত্রীদের হুরোহুরি শুরু হয়ে যায়। এমন সময় এক মহিলার পা ভেঙে যায়। তাকে সাহায্য করতে গিয়ে জিরোর পরিচয় হয় নাওকো সাতমি নামের এক মেয়ের সাথে। সেবার নিজের নাম না বলেই বিদায় নেয় জিরো।
ধীরে ধীরে ভূমিকম্পের ক্ষতির রেশ কেটে যায়।শহর আবারো গড়তে শুরু হয়। বিমান ডিজাইনে মহা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে জিরো, নিজের বোনের সাথেও দেখা করতে ভুলে যায় । কাজের প্রতি অত্যাধিক ভালবাসার কারণে জার্মানির সাথে সেই সময়ের জাপানের প্রযুক্তিগত পার্থক্য বুঝতে শুরু করে সে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার লক্ষ্য হয় নানান সীমাবদ্ধতার মাঝে দ্রুতগামী ধাতব বিমান নকশা করা।সিনেমার পরবর্তীতে জিরোর কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের সুন্দর সংমিশ্রণ তুলে ধরা হয়েছে। যদিও সমাপ্তি ঠিক যুতসই ছিল না।

Theme setup, Animation and Music : সিনেমার ঘটনায় ১৯২৩ এর কান্তো ভুমিকম্প থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপান স্থান পেয়েছে। তেমনিভাবে ৩০-৪০ দশকের জাপানী জীবনধারা ও সেই সময়ের সীমাবদ্ধতার বাস্তবিক চিত্রায়ন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোও চোখের আরাম ছিল। এক্ষেত্রে জিব্লির স্কিল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রতিটি দৃশ্য ডিটেইলড। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, একটি চারাগাছের উপর বৃষ্টির দৃশ্য, রেললাইনের উপর একটি পাথর অথবা পাখির চোখে টোকিও শহর, এসব কিছুর পেছনেই এক ধরনের শৈল্পিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আনিমেশন বরাবরের মতই রঙিন আর ফ্লুইড। টুডি, তবে জীবন্ত, জিব্লির প্রিয় একটি বৈশিষ্ট্য।মন ঠান্ডা করা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও পারফেক্ট মনে হয়েছে। সর্বোপরি, মিয়াজাকি তার নামের প্রমাণ দিতে পেরেছেন।

Characters Setup : জিরো কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, বিনয়ী। সবচেয়ে ভাল লেগেছে যখন সে তার ভালোবাসার কথা অকপটে স্বীকার করে নেয়। জিরোর প্রতি নাওকোর কমিটমেন্ট সিনেমার একটা সুন্দর দিক ছিল, শক্ত চরিত্রের প্রকাশ। জিরোর অভিমানী বোনের হঠাৎ হঠাৎ স্ক্রিনে আগমন জিরোর পরিবারের দিকে নজর না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে। সাইড ক্যারেকটার গুলোর মাঝে সাপোর্টিভ হোঞ্জো এবং রাগী কিন্তু নরম মনের গুরুজন, কুরাকাওয়া উল্লেখ্য।

পরিশেষে কিছু ব্যক্তিগত মতামত দেই, আমি বাচ্চাকাল থেকে এভিয়েশনের প্রতি আগ্রহী। তাই সিনেমার সামগ্রিক গল্প খুব একটা বক্তব্যধর্মী না হলেও আমার কাছে বেশ ইন্সপায়ারিং লেগেছে। সেই সময়ের কাঠ আর ত্রিপলের তৈরি বিমান যুদ্ধ করার জন্য মোটেও উপযোগী ছিল না। জিরোর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল প্রায় ২৭০মাইল/ঘন্টা বেগে উড়তে পারে এমন যুদ্ধবিমান তৈরি করা। কিন্তু এত বেশি বেগে যে ড্র‍্যগ তৈরী হবে,তা নেয়ার সামর্থ তৎকালীন কাঠের এয়ারফ্রেমের ছিল না। তাই তাকে স্টিলের বডি বানাতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হল ওজন, তৎকালিন র‍্যডিকাল ইঞ্জিনের পক্ষে তখন পর্যাপ্ত থ্রাস্ট দিয়ে স্টিলের বডিকে ২৭০ মাইল/ঘন্টা স্পিডে নেয়া সম্ভব না। পরবর্তীতে সে অ্যালুমিনিয়াম এলয় ব্যাবহার করে সহনীয় উইং লোডিংয়ের বিমান বানাতে সক্ষম হয়। A6M ZERO বিমানটি লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে সেটি কনভেনশনাল এয়ারফ্রেমের বিমান, ঠিক প্রয়োজনীয় পরিমাণের ডাইহিড্রাল। কিন্তু ভাল করে তাকালে বুঝবেন যে এলোরনে পুশরড নেই। যার ফলে প্লেনের ড্র‍্যাগ অনেক কমাতে সক্ষম হয়েছেন জিরো। কয়েক বছরের সাধনার ফলস্বরূপ তার A6M5 ৩৪৫ মাইল /ঘন্টা রিচ করে। সর্বোপরি, জিরো হাল্কা ওজনের, ম্যানুভারেবল কিন্তু দ্রুতগতির বিমান বানাতে সীমিত সুবিধার মাঝেও কারিগরিকভাবে মহাসফল।যদিও অ্যালাইড ফোর্সের ইঞ্জিনিয়াররা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই তাকে টেক্কা দিতে সক্ষম হয়। কিন্তু জিরো হিরোকশির অর্জনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। জানামতে মুভিটি “The wind has risen” উপন্যাসের অ্যাডাপ্টেশন। উপন্যাসটি পড়িনি, তাই মুভির সাথে বৈসাদৃশ্য নিয়ে আমার কোন ধারনা নেই। তবে শুনামতে, নাওকো চরিত্রটি উপন্যাসে অন্যভাবে ছিল। যাই হোক…..সকল বিতর্ককে একপাশে রেখে দিয়ে সিনেমাটি দেখতে বসে যান, আশা করি ২ ঘন্টার অপচয় হবে না।

Overall Rating :
MAL Rating : 8.3
IMDb Rating : 7.8
My Rating : 8.0

The Wind Rises

Movie Time With Yami – 62

earthsea

Name: Tales from Earthsea / Gedo Senki
Duration: 1 hr. 55 min.
MAL Score: 7.21
Ranked: 2464
Genres: Adventure, Fantasy, Magic.

বলা হয়ে থাকে, চাপ নিয়ে কাজ করলে সেই কাজটা নাকি ভাল হয়। কোন একটা কাজের ওপর যখন মানুষ ভরসা করে থাকবে, সেই কাজটা ভালভাবে করার স্পৃহা তত বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু, অনেক সময় দেখা যায়, বেশি প্রত্যাশার পাহাড় মাথায় নিয়ে মানুষ ভেঙে পড়ে। গেদো সেঙ্কি মুভিটার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তাই হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।

মুভিটি বানানো হয়েছে তিনটি উপন্যাসের কাহিনী একত্রিত করে। স্টুডিও জিবলীর ব্যানারে তৈরি এ মুভিটি বিখ্যাত পরিচালক হায়াও মিয়াজাকির পুত্র গোরো মিয়াজাকির ডেবিউ ফিল্ম। সবমিলিয়ে মুভিটির ওপর প্রত্যাশার চাপ ছিল আকাশছোঁয়া, এবং খুব সম্ভবত এটিই কাল হয়েছে মুভিটির জন্য।

স্টোরির শুরুটা বেশ প্রমিজিং। হঠাৎ করেই রাজ্যে দেখা দেয় অভাব অনটন, রাজ্যের মানুষের আচার আচরণে আসে পরিবর্তন, এবং রাজ্যে ড্রাগনের দেখা পাওয়া যেতে থাকে। তবে কি শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে? রাজ্যের রাজকুমার এক ভয়াবহ অপরাধ করে রাজ্যছাড়া হল। দিশেহারা এ বালকের সাথে দেখা হল জাদুকর স্প্যারোহক এর। কিভাবে এতগুলো রহস্যের সমাধান হবে?

শুরুটা খুব প্রমিজিং হলেও মুভিটি পরবর্তীতে এই প্রমিস রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কাহিনীটা কিছুদূর আগানোর পর কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে যায়, কোথা থেকে কি হচ্ছে বুঝতে বেগ পেতে হয়। কোন চরিত্রই মনে রাখার মত লাগেনি। এন্ডিংটা ভাল করেছে, তবে অনেক রহস্য অমীমাংসিত রেখে, এটা বেশ হতাশার ব্যাপার।

তাহলে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, এত সমস্যাযুক্ত মুভি তাহলে কেন দেখব? অবশ্যই দেখার পক্ষেও যুক্তি রয়েছে। মুভিটির আর্ট খুবই চমৎকার, প্রতিটা দৃশ্যে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। স্টুডিও জিবলীর আর্টের মর্যাদা রাখতে পেরেছে এটি। আর সেইসাথে রয়েছে মনোমুগ্ধকর ওএসটি। এগুলোর কারণে শেষপর্যন্ত মুভিটি অন্তত উপভোগ্য হয়েছে। আপনি যদি প্রশ্নের ঝাঁপিটা বন্ধ রেখে দেখতে বসেন, সময়টা খারাপ কাটবে না।

Movie Download Link-
http://kissanime.com/Anime/Tales-from-Earthsea

Movie time with Yami প্রচারিত হচ্ছে প্রতি বৃহস্পতিবার। সেগমেন্ট সম্পর্কে আপনার যেকোন মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আশা করি মুভির সাথে আপনার উইকএন্ড ভালো কাটবে !!

Movie Time With Yami – 61

ocean-waves

Name: The Ocean Waves / Umi ga Kikoeru
Duration: 1 hr. 12 min.
MAL Score: 7.01
Ranked: 3124
Genres: Drama, Romance, School, Slice of Life

মোরিসাকি তাকু একজন ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তার বাড়ি জাপানের সমুদ্র তীরবর্তী শহর কোচিতে। হাইস্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্যে সে টোকিও থেকে কোচিতে ফিরে আসার সময়টায় মুভির কাহিনী শুরু। তাকু মনে করতে থাকে তার হাইস্কুলের দিনগুলোর কথা, তার বন্ধুদের কথা, এবং তার প্রথম প্রেমের স্মৃতির কথা।

মুভিটির কাহিনী কিছুটা টিপিক্যাল হাইস্কুল প্রেমকাহিনীর মত, কিন্তু এখানে মিষ্টি মিষ্টি ভাবটা একেবারেই অনুপস্থিত, বরং কিছুটা কাঠখোট্টা এবং রূক্ষ ভাব রয়েছে। হাইস্কুল ছাত্রদের জীবনের নির্মম দিকটায় বেশি ফোকাস করা হয়েছে মুভিটাতে, আবার একইসাথে কিছু রোমান্টিক এবং হালকা দৃশ্য দিয়ে কাহিনীটাকে হালকা করতে চেষ্টা করা হয়েছে।

স্টুডিও জিবলীর আর্ট সবসময়ই সুন্দর, কিন্তু এই মুভিটির আর্ট আমার তেমন ভাল লাগেনি। ক্যারেক্টারগুলো এক্সপ্রেশনলেস, তাই সিরিয়াস কনভার্সেশনের সময় দেখে বেশ অস্বস্তি লেগেছে। কাহিনীর পেসিং বেশ খাপছাড়া, তাই মাঝে একটু বোরিং লেগেছিল, তবে এন্ডিং দেখে ভালই লেগেছে। সাউন্ডট্র্যাক ভাল, দেখা চালিয়ে যেতে বেশ সাহায্য করেছে।

সবকিছু মিলিয়ে মুভিটি আমার খুব ভাল লেগেছে বলতে পারব না, তবে একেবারে দেখার অনুপযোগীও লাগেনি। তাই, সাহস করে নিজ দায়িত্বে কেউ দেখতে চাইলে মানা করব না! tongue emoticon

Movie Download Link-
http://kissanime.com/Anime/The-Ocean-Waves

Movie time with Yami প্রচারিত হচ্ছে প্রতি বৃহস্পতিবার। সেগমেন্ট সম্পর্কে আপনার যেকোন মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আশা করি মুভির সাথে আপনার উইকএন্ড ভালো কাটবে !!

 

The Secret World of Arrietty রিভিউ – আসিফুল হক

“আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে

আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে”

দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটা আসলে খুব মজার। কিভাবে দেখা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে একটা ঘটনাই একেক জনের কাছে একেক রকম ভাবে ধরা দিতে পারে। প্রতিদিনকার উঠোন, ঘাস, দুর্বোলতা কিংবা চিলেকোঠার ছোট্ট পুতুল খেলার ঘরটাই হয়ে উঠতে পারে সুবিন্যস্ত মই, বিস্তীর্ণ জঙ্গল অথবা ছোট্ট সুখের সংসার।

“The Secret World of Arrietty” বিলুপ্তপ্রায় ছোট মানুষদের একটা পরিবারের গল্প; ছোট্ট, সুন্দর, ছিমছাম। বাবা, মা আর ১৪ বছরের আরিয়েত্তিকে নিয়ে এই ছোট মানুষদের পরিবারের বাস শহরতলীর একটা বাগানবাড়ির কুলুঙ্গিতে, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে। সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে তাদের অগোচরে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ধার করেই এদের জীবন-যাপন। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় যখন শো নামের একটা বালক এসে উপস্থিত হয় সেই বাড়িতে; এবং ঘটনাক্রমে আরিয়েত্তিকে আবিষ্কার করে। এক অদ্ভুত কিন্তু অনন্য সাধারণ বন্ধুত্বর সুচনা হয় এদের মাঝে; যেটা কিনা দিনশেষে আরিয়েত্তির পরিবারকে বিপদের মুখেই ঠেলে দেয় এক রকম।

মুভির সবচেয়ে চমৎকার দিকটা বোধহয় ছোট মানুষদের অস্তিত্বকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য ছোট ছোট দিকগুলোর দিকে দেওয়া প্রচন্ড মনোযোগ। আরিয়েত্তিদের জীবনযাপনের এবং মানুষের কাছ থেকে ধার করার সময় তাদের বাড়িতে সহজে চলাচলের সৃজনশীল অথচ খুবই সহজ পদ্ধতিগুলো ছিল রীতিমত মুগ্ধ করার মতন; মাছ ধরার হুক থেকে শুরু করে ডাবল সাইডেড স্কচটেপ কিংবা ছোট ছুরি থেকে শুরু করে একটা পিন – প্রত্যেকটা জিনিস ছোট মানুষদের চরিত্রগুলোকে দেয় আলাদা মাত্রা।

সাউন্ডট্র্যাকগুলো এক কথায় অসাধারণ। প্রত্যেকটা মিউজিক পিস আমার খুব খুব খুব বেশি পছন্দ হইসে। আর এনিমেশন? দুর্দান্ত ! এনিমেশনের দিক থেকে আমার দেখা কোন জিবলী মুভিই এক বিন্দুও ছাড় দেয় নাই; এইটাও না। বাড়ির পিছনের উঠোন অথবা শান্ত জলস্রোত – সবকিছু এত উজ্জ্বল আর এতো ভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে যে ৯০ মিনিটের পুরোটা সময় স্ক্রিনের সামনে আঠার মতন আটকে রাখবে।

মুভির দুর্বলতার দিকটা বোধহয় সংঘাতের অনুপস্থিতি আর আর ভিলেন চরিত্রের প্রায় কমিকাল রুপ, যেটা মুভির অন্তরদন্দকে আরো ম্লান করে দেয়। ছোট মানুষদের প্রতি হারুর কি এত ক্ষোভ ছিল যে তাদের ধরে ধরে বয়ামে পুরে রাখতে হবে? শুধু “তারা বাসা থেকে জিনিসপাতি চুরি করে; আমার ধারনা” লাইনে এইরকম ঘটনা পুরোপুরি জাস্টিফাই হয়ে যায় না। এর বাইরে পুরো মুভির সবচেয়ে এক্সাইটিং মোমেন্ট বোধহয় ছিল মানুষ আর একটা কাকের মাঝে ছোট্ট একটা যুদ্ধ – ব্যাপারটা বেশ খানিকটা হতাশাজনকই বটে। আরিয়েত্তি একটা পিনকে তলোয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে; যদিও পুরো মুভিতে কখনই তা ব্যাবহারের প্রয়োজন পরে নি; কারণ তার শত্রুরা কম বেশি অজানা; এবং কেউই পিনের গুতো খেয়ে কুপকাত হবার মতন নয়। আরিয়েত্তির কিছু সিদ্ধান্ত খুব একটা মেক সেন্স করে না; শো যখন তাকে দেখে ফেলসে বলে মনে হল তখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সে কি করল? সরাসরি ফেইস টু ফেইস দেখা করে তাদের বিরক্ত করতে মানা করল ! কেন? কি বুঝে সে এই কাজ করল যখন তার বাবা মা তাকে ছোট বেলা থেকে যদি একটা শিক্ষাই দিয়ে থাকে তাহলে সেটা ছিল মানুষের ধারে কাছেও না যাওয়া এবং তারা প্রচন্ড রকমের ভয়ঙ্কর? এছাড়া মুভিটা অনেক জায়গাতেই অনেকের কাছে কিছুটা স্লো মনে হতে পারে; যদিও আমার কাছে স্বাভাবিকই লেগেছে।

সামগ্রিক বিচারে গভীর ভাব অথবা রুপক বর্জন করে আরিয়েত্তি বুঝি ঐন্দ্রজালিক এক রুপকথাই হতে চেয়েছে শেষতক। যদি তাই হয়ে থাকে তবে মুভিটা পুরোপুরি সার্থক তার আবেদনে। জিবলীর মুভিগুলো সবসময়েই আমাদেরকে সাথে করে অভিযানে বেরিয়ে পড়ে; কখনও বড় পরিসরে; কখনও বা একেবারে ক্ষুদ্র সীমায়। আরিয়েত্তি দুটো কাজই করেছে এই মুভিতে; পুরোপুরি সফলতার সাথেই। আর কিছু না হোক; দেড় ঘন্টার জাদুকরী অভিযান শেষে মুখের কোনে যে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠবে আপনার, আরিয়েত্তিকে অন্ততপক্ষে ভালবেসে ফেলবেন তার সরলতার জন্য, তার অভিযানগুলোর জন্য, লুকিয়ে থাকা বিষণ্ণতা কিংবা শো এর সাথে অদ্ভুত কিন্তু মিষ্টি বন্ধুত্বর জন্য; সে কথা বোধকরি লিখে দেওয়াই যায় !  🙂