ষাটের দশকে Astroboy প্রথম অ্যানিমে হিসেবে টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার পর অনেকটাকাল সাই-ফাই আর ফ্যান্টাসী অ্যানিমে ছোটপর্দা শাসন করেছে। অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা সম্পন্ন অথবা আদর্শবান সব মূল চরিত্র। ভালো আর খারাপের স্পষ্ট ব্যাবধান থাকা গল্প। অ্যানিমে ছিল বিনোদনের এক ভিন্নধর্মী মাধ্যম যা উপভোগ করতে পারতো পরিবারের সবাই।
যার ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে শুরু হল “ওয়ার্ল্ড মাস্টারপিস থিয়েটার”। Dororo, Moomin’, Anderson Monogatari, Rocky Chuck অথবা তাকাহাতার Heidi – প্রথমে Zuiyo Eizo আর পরে Nippon TV তে প্রতি রবিবার সন্ধ্যা ৭ঃ৩০ বরাদ্ধ ছিল Mushi Production এর অ্যানিমেশনে তৈরি বিশ্বের জনপ্রিয় সব ধ্রুপদী গল্পের জন্য।
সত্তরের শুরুতে আরো একটা জিনিস যা জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করল তা হল, স্পোর্টস অ্যানিমে। TIger Mask, Kyojin no Hoshi-’র পর, ১৯৭০ সালে ওসামু দেজাকির পরিচালনায় শুরু হল Ashita no Joe. ইকি কাজিওয়ারার মাঙ্গা অবলম্বনে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চলা ৭৯ পর্বের প্রথম মৌসুমে ছিল জো ইয়াবুকির শুন্য থেকে শীর্ষে ওঠার এক অনবদ্য কাহিনী। কিন্তু অ্যানিমের পরবর্তী বিশাল জাগরনটা আরো তিন বছর পরের।
১৯৭৩ সালে প্রযোজক ইয়োশিনোবু নিশিজাকি প্রথম সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক অ্যানিমের পরিকল্পনা শুরু করেন। যার গল্প হবে গতানুগতিক অ্যানিমে থেকে তুলনামূলক জটিল আর পরিণত। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই অ্যানিমের হওয়ার কথা ছিল “Lord of the Flies”-এর আন্তঃমহাকাশীয় পূনর্বণনা। যাতে পৃথিবী রক্ষার এক অন্তীম মহাকাশীয় যাত্রায় সঙ্গী হবে বিভিন্ন দেশের ছোট ছোট বাচ্চারা। কিন্তু পরবর্তীতে মাঙ্গাকা লেইজি মাৎসুমোতো এই প্রকল্পে যোগদান করায় প্রাথমিক গল্পের প্লট আমূল বদলে গেল ১৯৭৪ এ প্রচার শুরু হওয়া অ্যানিমেতে।
“ ২১৯৯ সাল। পৃথিবী দূর মহাকাশের অ্যালিয়েন জাতি “গামিলাস”-দের আক্রমনের শিকার। পৃথিবীপৃষ্ট বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া এখন মানবজাতি আবাস গেড়েছে ভূতলে, কিন্তু সেখানেও ক্রমশ বিকিরনের কারণে তাদের সমাপ্তী ক্ষনীয়ে আসছে। এমন সময় সাহায্যের হাত বাড়ালো ইস্কান্দার গ্রহের রাণী স্টারশা। পথ বাতলে দিলো পরিত্রানের। মানবজাতিকে মোকাবেলা করতে হবে গ্রহে গ্রহে ওঁত পেতে থাকা শত্রুর আক্রমন, পাড়ি দিতে হবে হাজার হাজার আলোকবর্ষ, আর সময়-কালের বাধা; পৌছতে হবে বৃহৎ ম্যাজেলানিক মেঘ-এর কাছে থাকা ইস্কান্দার গ্রহে। যেখানে অতিবুদ্ধিমান ইস্কান্দারিয়ানদের কাছে আছে গ্রহ পূনর্জীবিত করার ক্ষমতা থাকা – কসমো ডিএনএ। “
ডার্ক, ইমোশোনালি ড্রামাটিক, কাহিনীপ্রবাহে ধারাবাহিক;বাস্তব-ত্রুটিপূর্ণ, মোরালি অ্যাম্বিগিউয়াস চরিত্রের আনসাম্বল – জায়ান্ট রোবট, সুপার রোবট আর সুপার হিউম্যান থেকে বের হয়ে এসে Space Battleship Yamato সাই-ফাই অ্যানিমে জগতে প্রথম এক নতুন ধারার সূচনা করলো – স্পেস অপেরা। ইয়ামাতো পেল তুমুল জনপ্রিয়তা। এবং তা শুধু জাপানেই না।
১৯৭৭ এ বের হওয়া Star Wars-এর রেষ কাটতে না কাটতেই ১৯৭৯ সালে ইয়ামাতো আমেরিকায় প্রচার শুরু হল “Star Blazers” নামে। ইউরোপীয়ান আর লাতিন দেশগুলোও পিছিয়ে ছিলো না। ইতালীতে একই নামে, গ্রীসে “Spaceship Argo”, স্পেন আর লাতিন আমেরিকায় “Starship Intrepid” আর ব্রাজিলে “Star Petrol” নামে প্রচার হওয়া ইয়ামাতো অ্যানিমের জনপ্রিয়তা নিয়ে গেল বিশ্বব্যাপী, নতুন এক প্রজন্মের কাছে।
প্রথম প্রচারিত ২৬ পর্বের সিজনের পর সিকুয়াল হিসেবে বের হয়েছে আরো দুটি সিজন এবং চারটি মুভি। আর এর পর তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে আরো কয়েকটি রিবুট। প্রথম প্রচারের তিন দশক পরও ইয়ামাতোর জনপ্রিয়তার রেশ কমেনি একটুও। ২০১২ প্রথম ২৬ পর্বের মূল গল্পের পূনর্বর্ণনা হয়ে ইয়ামাতো ফিরে এসেছে, Space Battleship Yamato 2199 নামে।
শুধু অ্যানিমের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করায় ইয়ামাতো্র অবদান সীমাবদ্ধ ছিল না, অ্যানিমে ইন্ড্রাস্ট্রিতে এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা এর মাধ্যমেই। ইয়ামাতোই প্রথম অ্যানিমে বা মুভি যা জাপানের Seiun Award জয়লাভ করেছিল। Gundam, Macross, Legend of the Galactic Heroes, Space Runaway Ideon কিংবা একই মাঙ্গাকার Galaxy Exoress 999 Space Pirate Harlock-এর মত স্পেস অ্যাডভেঞ্চার আর স্পেস অপেরা অ্যানিমে ‘৭০ আর ‘৮০ জুড়ে জাপানের টিভি শাসন করেছে। যে পথটা বাতলে দিয়েছিল ইয়ামাতোই।
Gundam আর Macross-এর আগে, Harlock আর Legend of the Galactic Heroes-এর আগে, Star Wars আর Battlestar Galactica-’র আগে ইয়ামাতো সাই-ফাই ভক্তদের জন্য দিয়ে গেছে মহাকাশে মহাকাব্যিক এক যাত্রার গল্প। আর ইয়ামাতো দেখে বড় হওয়া, অনুপ্রানিত হওয়া এক প্রজন্ম আর কয়েক দশক পর অ্যানিমের হাল ধরেছে নিজেরাই। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটা সম্ভবত আনো হিদেয়াকি।