আন্নারাসুমানারা- স্বপ্নভঙ্গ, প্রত্যাশা ও বড় হওয়ার গল্প; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

আচ্ছা, বড় হওয়ার মানে আসলে কি? শরীরটা আকারে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে মানুষের মনটায় কি এমন পরিবর্তন আসে, যার কারণে একসময় তার কাছে যা খুব আকর্ষণীয় ও আরাধ্য মনে হত, তা হঠাৎ করে যুক্তিহীন ও হাস্যকর লাগতে থাকে? প্রাপ্তবয়স্ক হলেই কেন মানুষকে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিতে হয়? নাকি স্বপ্ন দেখা ছাড়তে তাকে বাধ্য করা হয়! স্বপ্ন দেখলে যে সমাজ তোমাকে পাগল বলবে! তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলবে, দেখ, সে এখনও বড় হতে পারল না! সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হতে ব্যর্থ। কারণ সে সমাজের ঠিক করে দেয়া নিয়ম মেনে বড় হয়ে ওঠেনি। সে সাহস করেছিল তার জন্য সাজিয়ে রাখা চকচকে পথ ছেড়ে নেমে নতুন করে পৃথিবীটাকে দেখার।

ইউন আই মেয়েটিকে এই সত্যের মুখোমুখি হতে হয় খুব অল্পবয়সে। ঋণের বোঝায় জর্জরিত বাবাকে ছেড়ে চলে যায় তার মা, আর পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়ায় তার বাবা। নিরুপায় আই তার এবং তার ছোটবোনের জীবন চালানোর জন্য তাই অমানুষিক পরিশ্রম করে। নিজে না খেয়ে থাকে, যেন ছোটবোন স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতে পারে। স্কুল শেষ হওয়ার পর অনেক রাত পর্যন্ত একের পর এক পার্টটাইম জব করে, যেন বাড়িভাড়াটা সময়মত দিতে পারে। এতকিছুর সাথে সে কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশুনা করে নিজের গ্রেডটাও ঠিক রাখে, কারণ আই জানে, গ্রেড ভাল রাখলে একসময় হয়ত সে একটা ভাল চাকরি করে এই অভাবী জীবনটাকে পরিবর্তন করতে পারবে। ছোট্ট বয়সে বড় হয়ে ওঠা এই মেয়েটি জানে, তার কাছে যা বিলাসিতা, অন্যদের কাছে তা স্বাভাবিক জীবনের অংশ। আর সেই স্বাভাবিক জীবন পাওয়ার জন্য যা কিছু করা সম্ভব, আই সে সবই করবে।

profile_picture_by_no_hurry_to_shout-d6y3rlz

আই এর ক্লাসমেট ইল দং। সবকিছু আছে তার। ধনী পিতামাতা, বিলাসবহুল জীবন, স্কুলে ভাল গ্রেড – সবকিছু। আই এর আরাধ্য জীবন জন্মগত ভাবে পাওয়া ইল দং কখনো জীবনে না শব্দটি শোনেনি। এতকিছু থাকার পরেও কোন না কোন দিক দিয়ে ইল দং ও খুশি নয়। কারণ তার উপরে রয়েছে সীমাহীন প্রত্যাশার পাহাড়। ক্লাসে সবসময় ফার্স্ট হতে হবে, দেশের সেরা ল’ স্কুলে ভর্তি হতে হবে, বাবা-মায়ের মুখ সমাজের সামনে রক্ষা করতে হবে; এর অন্যথা হলে যে সে পরিণত মানুষ হতে ব্যর্থ হবে!

সমাজের সেট করে দেয়া স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিজেদেরকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করা এই মানুষদের ভীড়েও রয়েছে কিছু অলস মস্তিস্কের স্বপ্নবাজ মানুষ। এরা এখনো স্বপ্ন দেখা ভোলেনি। এদের চোখে পৃথিবীটা এখনো রঙিন এক আনন্দময় ভুবন। সমাজ তাদের আখ্যায়িত করে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হিসেবে; তাতে তাদের থোড়াই কিছু আসে যায়! এমনই একজন মানুষ হল শহরের পরিত্যক্ত থিম পার্কে এক পুরনো তাবুতে বাস করা “ম্যাজিশিয়ান”। প্রতিটি মানুষের পরিত্যক্ত স্বপ্নকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করা সত্যিকারের জাদু জানা এই ম্যাজিশিয়ান প্রথম দেখাতেই আইকে প্রশ্ন করে, “Do you believe in magic?”

tumblr_ngp0pu5g9Y1s2jureo1_1280

মানহোয়াটি পড়ার আগে এটির বেশ কিছু রিভিউ পড়েছিলাম, সেগুলো পড়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে গরীব এবং খুব সিরিয়াস টাইপের একটি মেয়ে ও লেইড ব্যাক জাদুকরকে নিয়ে কাহিনী হবে, মাঝে থার্ড পার্টি হিসেবে বড়লোকের ছেলের উপস্থিতি থাকবে। আমি যে আসলে কতটা ভুল ধারণা করেছিলাম, সেটা কয়েক চ্যাপ্টার পড়েই বুঝতে পারি। শুরুর দিকে মজা লাগছিল, ইউন আই এর জীবনটা অনুভব করছিলাম, আর জাদুকরের প্রশ্নে আই এর মত আমারও মনে হচ্ছিল, জাদুবিদ্যা হল একধরণের ভ্রম। কিন্তু মানহোয়াটি যত এগিয়ে যেতে থাকে, কাহিনীটা যেন আরও গভীর হতে থাকে। প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা কাহিনী গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। কে জানত, এতদিন পরে একটা মানহোয়া পড়ে এভাবে নিজের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে কাঁদব! ইল দং ও ম্যাজিশিয়ান এর পরিপূর্ণ রূপটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ও অনুভব করতে পারলাম। আর তাই শেষ দিকে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল, “I do believe in magic!”

মানহোয়াটি সম্পূর্ণ রঙিন, আর্টওয়ার্ক খুবই সুন্দর। পৃষ্ঠাগুলোতে রঙের কারুকাজের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। মানহোয়াটির আর্ট দেখে বারবার শ্যাফটের কথা মনে পড়ছিল। ক্যারেক্টার ডিজাইন বেশ সুন্দর, যদিও ইল দং ও তার বাবা-মাকে দেখে শুরুতে প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছিল!! কাহিনীর পেসিং খুবই ভাল, একটার পর একটা পৃষ্ঠা উলটে গেছি বিরতিহীন ভাবে, একটুও ক্লান্ত বা বোরড না হয়ে। কাহিনী, এই আর্ট আর পেসিং এর পারফেক্ট কম্বিনেশন এই মানহোয়াটি; দেখে মনে হচ্ছিল কাহিনীটা যেন জীবিত হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত একইরকম ভাবে মুগ্ধ করেছে এটি আমাকে।

সবমিলিয়ে মাত্র ২৭ চ্যাপ্টারের মাস্টারপিস লেভেলের এই মানহোয়াটি আমার খুব বেশি ভাল লেগেছে, তাই আমি রিকমেন্ড করছি, হাতে সময় নিয়ে টানা ২৭ টা চ্যাপ্টার শেষ করে ফেলুন, খুব ভাল সময় কাটবে আশা করি।

045

হরর মাঙ্গার রাজা – ইতৌ জুন্জি

 

19230_468959826590403_8634242293780997866_n

সত্যজিৎ রায়ের অসাধারণ ছোট গল্পগুলো পড়েছেন? খগম, মঙ্গলই স্বর্গ, এমন রহস্য আর ভয়ের মিশেলে গড়ে ওঠা গল্পগুলো, যাদের কোন সুখকর সমাপ্তি নেই, বরং গায়ে কাঁটা দেয়া পরিস্থিতি। মজার ব্যাপার হল, এসব গল্পে প্রচলিত অর্থে ভূতপ্রেত নেই, সেই জায়গায় আছে অতিপ্রাকৃত বিষয়াবলী। এই সব গল্প চিত্রায়িত করা গেলে কেমন হত?

জাপানী মাঙ্গাকা ইতো জুঞ্জি মাঙ্গা আঁকছেন বিশ বছরের বেশি সময় ধরে। এরই মধ্যে তিনি হরর মাঙ্গার রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন। তাঁকে বেশিরভাগ ফ্যানই চেনে মূলত উজুমাকির মাধ্যমে, কিন্তু উনি লিখেছেন দারুণ সব ওয়ানশটও, যেগুলো তাদের নিজস্বতায় ভাস্বর। এখানেই আসে রায় সাহেবের প্রসঙ্গ তোলার কারণ। জুঞ্জি এত প্রতিভাবান, উনি সরাসরি ভূতপ্রেত নিয়ে কাজ না করে রায়ের মতই ভয়ের প্রকারভেদকে উম্মোচিত করেছেন। কত ধরনের ভয়? কিটোফোবিয়া[চুলের ভয়], মেলিসোফোবিয়া[মৌমাছির ভয়], এক্রফোবিয়া[উচ্চতার ভয়], পুপাফোবিয়া[পুতুলের ভয়], হিমোফোবিয়া[রক্তের ভয়], ট্রাইপোফোবিয়া[ছিদ্রের ভয়] আরো কত কি! উদ্ভট সব কাহিনী ফেঁদে সেই সাথে ভৌতিক আবহ সৃষ্টি করায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

তাঁর মাঙ্গা যেগুলো স্ক্যানলেট হয়েছে, পড়তে পারবেন মাঙ্গাফক্সে। আর ডাউনলোড করার জন্য বাকাবিটি তো আছেই। http://bakabt.me/torrent/180715/the-junji-ito-horror-comic-collection-museum-of-terror-ito-junji-kyoufu-manga-collection

আমার নিজের পছন্দের কিছু টাইটেল হচ্ছে – The Bee Hive, The Bully, Falling, My Dear Ancestors, The Groaning Drain, Frankenstein [হ্যাঁ, মেরি শেলির সেই বিখ্যাত কাহিনীর মাঙ্গারূপ]

তবে জুঞ্জির মুনশিয়ানা কিন্তু কেবল হরর মাঙ্গাতেই সীমাবদ্ধ না, উনি গ্যাগ মাঙ্গায়ও পারদর্শী। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুই ধরনের মাঙ্গা আঁকতে পারা, সব্যসাচী ছাড়া আর কি বলা যায়? জুঞ্জি কিন্তু নিজেকে আর তাঁর স্ত্রীকে চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেও একটা মাঙ্গা এঁকেছেন। বিড়ালপ্রেমী মাঙ্গাকা তাঁর স্ত্রীর সাথে লড়াই করছেন। তাঁদের পোষা বিড়াল দম্পতির কাকে বেশি ভালবাসে, জায়াকে, নাকি পতিকে, এই বিষয় নিয়ে। এমন মাঙ্গাকাকে পছন্দ না করে পারা যায়?

Once Again [Manhua] Review

review poster 4

 

Genre: Drama, Romance, Slice of Life, Josei
Chapter: 7
Volume: 1
Author: Feng Xi, Shen Lei, BUDDY

 

Yuan Ge তার কর্মজীবনে এত বেশি সময় দেয় সারাক্ষণ, সাংসারিক জীবন বলতে যেন কিছুই নেই।
ঘুম থেকে উঠে অফিসে চলে যায় স্ত্রীর ঘুম ভাঙবার আগে, রাত্রে বাসায় ফেরত আসে স্ত্রী ঘুমিয়ে যাবার পরে। সকাল বেলায় আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা ঠান্ডা নাস্তাই যেন তাকে মনে করিয়ে দেয় তার একজন স্ত্রী আছে। দুই জন ঘুমায় দুই আলাদা রুমে। এইটুকু বাদ দিলে Yuan Ge এর জীবনের বাকি অংশ দখল করে রাখে অফিসের ব্যস্ততা। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অফিসে সাফল্যের আদর্শ উদাহরণ হিসাবে গড়ে তুলে নিজেকে। এমন সময়ে একদিন অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার নিকট স্ত্রীর মৃত্যুর খবর চলে আসে।

বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকা স্ত্রীর অসুস্থতার কথা যেন সেই সময়ে মনে পড়ে তার। স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে যেন বৈবাহিক জীবনের সব দায়িত্ব পালন করেছে বলে মনে করে, এবং আবার তার কর্মজীবনে ফেরত চলে যায় – এতটুকু সারা ফেলে না তার মনে।

Yuan Ge দক্ষতার কারণে যেকোন মানুষের চেহারা বা চালচলন দেখেই তাকে একদম পড়ে ফেলতে পারে, বুঝে নিতে পারে তার দক্ষতা কিরকম, কিংবা তার সাথে খাতির জমালে লাভ হবে না লোকসান। এমন অবস্থায় একদিন ট্রেনে চলার সময়ে এক স্কুলপড়ুয়া মেয়ের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে যায়। মেয়েটিকে কোনভাবেই যেন বুঝে উঠতে পারে না সে, খোলা বইয়ের মত সবাইকে পড়তে পারতো যেই Yuan Ge, সে কিনা এই অচেনা মেয়েটিকে দেখে কোন হিসাব মিলাতে পারে না! টিনেজ মেয়েটির মধ্যের শিশুসুলভ ব্যাপার-স্যাপার যেন তাকে আরও বেশি অবাক করে তুলে। বউ থাকার পরেও যেখানে বউকে কিংবা অন্য কোন মহিলার প্রতি বিন্দুমাত্র দৃষ্টি দিত না, সেই Yuan কিনা এখন প্রতিদিন ট্রেনে চড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন মেয়েটি ট্রেনে উঠবে, তার দিকে এক পলক তাকাতে পারবে! ধীরে ধীরে একসময়ে Yuan টের পায় নিজের বয়সের প্রায় অর্ধেক বয়সী এই মেয়ের প্রতি তার অন্যরকম এক আকর্ষণ তৈরী হয়। বুঝতে পারে সে মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়।

একদিন আর ধৈর্য্যের বাঁধ ধরে রাখতে না পেরে মেয়েটির পিছু নেয় সে, উদ্দেশ্য তার সাথে একটু কিছু কথা বলা, তাকে আরেকটু জানা। মেয়েটির পিছু পিছু আসতে আসতে Yuan এসে পরে মেয়েটির স্কুলে – এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করে এটি সেই স্কুল যেখানে সে ছোটবেলায় পড়তো। হঠাত করে সে নিজের স্কুল জীবনের স্মৃতিতে চলে যায়, এবং সাথে সাথে যেন তার পুরা দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে যায়! যে স্ত্রীকে জীবিত থাকাকালে একটুও সময় দিতে পারতো না, মৃত্যুর পরেও যেই স্ত্রীর জন্যে তার মন ভারাক্রান্ত হয় নি, এখন এতদিন পর স্ত্রীর সাথে জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত চোখের সামনে ভেষে উঠে। পুরানো দিনগুলি জাপটে ধরে তাকে, এবং Yuan আবিষ্কার করে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তটুকু কিভাবে তার হাতছাড়া হয়ে যায়।

চরিত্র: ৯/১০

৭ চ্যাপ্টারের এই মানহুয়াটির মূল চরিত্র Yuan Ge, যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে সমগ্র কাহিনীটি। অল্প কয়েকটি চ্যাপ্টার হলেও এরই মধ্যে তার চরিত্রের দিকগুলি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে, প্রত্যেক চ্যাপ্টারের সাথে সাথে তার উপলব্ধি ও চারিত্রিক বিস্তৃতি চোখে পরার মত।

এছাড়াও গল্পের মূল চরিত্রের মধ্যে পরে স্কুল পড়ুয়া মেয়েটি, এবং Yuan-এর সদ্য অতীত স্ত্রী।

আর্ট: ৮/১০

শৌজো বা জোসেই ধাঁচের মাঙ্গার মতই আর্টস্টাইল, খুব বিশেষ কিছু নয়। তবে মূল চরিত্র বাদে বাকি কারও চেহারাই তেমন দেখানো হয় না, দেখালেও সেখানে Yuan তাদেরকে কী হিসাবে দেখছে সেটাই উল্লেখ থাকে শুধু।

গল্প: ৯/১০

অল্পের মধ্যে মন ছুঁয়ে যাবার মত একটি রোমান্টিক গল্প। বিশেষ করে শেষ দিকে এসে গল্পের টুইস্ট মনে সাড়া জাগাবে সহজেই।

উপভোগ্যতা: ৯.৫/১০

গল্পের আবর্তনের সাথে সাথে নায়কের প্রতি সমর্থন, সহমর্মিতা, বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও একটি করুণ পরিসমাপ্তি – একটি সফল উপভোগ্য ছোট রোমান্টিক গল্পে পরিণত করেছে একে।

MyAnimeList রেটিং: ৭.৯৬/১০
আমার রেটিং: ৯.০/১০

আমার পড়া সবচেয়ে সুন্দর রোমান্টিক গল্পগুলির মধ্যে পরবে unique এই গল্পটি।

MyAnimeList Link: http://myanimelist.net/manga/65923/Once_Again

মাঙ্গাটি পড়ুন এখানে: http://mangafox.me/manga/once_again/

গিন নো সাজি- রূপার চামচের গল্প; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

000

কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “অ্যানিমে কেন দেখ?” অনেক ধরণের উত্তরের মাঝে সবচেয়ে বেশি যে উত্তরটা পাওয়া যায়, তা হল, “অ্যানিমে / মাঙ্গা থেকে আমি অনুপ্রেরণা পাই।” এই উত্তরটা আমাকে সবসময় খুব অবাক করত, কারণ আমি অ্যানিমে / মাঙ্গাকে সবসময় বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু অন্তত এই একটি অ্যানিমে আমার ধারণার ব্যতিক্রম ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। তাই অ্যানিমেটা শেষ করার পর আমি মাঙ্গাটাও পড়ে ফেলি। তাই এই রিভিউটি গিন নো সাজির অ্যানিমে এবং মাঙ্গা দুটিই কভার করবে।

প্রথমে মাঙ্গা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেই-
Genres: Comedy, Drama, School, Shounen
Authors: Arakawa, Hiromu (Story & Art)
Status: Publishing
Score: 8.26
Ranked: 428

Gin-no-Saji-Ep-2-Img-0016-1024x576

হাচিকেন ইয়্যুগো একজন শহুরে কিশোর। বলতে গেলে তার সারাজীবন কেটেছে চার দেয়ালের মাঝে। বাসা, স্কুল এবং পড়াশোনা ছাড়া তার জীবনে আর কিছুই ছিল না। এই শহুরে ছেলেটা হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেয়, সে কোন শহুরে হাইস্কুলে পড়বে না; বরং টোকিও থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত একটি অ্যাগ্রিকালচারাল স্কুলে পড়বে, এবং সেখানে ডর্মিটরিতে থাকবে।

স্কুলের প্রথম দিন থেকেই হাচিকেন একের পর এক উদ্ভট পরিস্থিতির সামনে পড়ে! তার সহপাঠীরা সবাই খামারের কাজে ওস্তাদ; তারা সবাই এই স্কুলে এসেছে, কারণ তারা কৃষিকাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের পরিবারকে ব্যাবসায় সাহায্য করতে চায়। সেখানে হাচিকেন জীবনে কোনদিন কাছ থেকে গবাদি পশুও চোখে দেখেনি; অন্যদের কাছে যা স্বাভাবিক ঘটনা, হাচিকেনের কাছে সেগুলোই একেকটা নতুন চ্যালেঞ্জ!

1

জীবনের টুকরা জনরার বিরূদ্ধে একটা সাধারণ অভিযোগ, এগুলো নাকি বোরিং। কিন্তু রূপার চামচের বিরূদ্ধে আমার অভিযোগ, এটা দেখতে বসলে খিদে পায়! আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে কাজগুলো শুধু করার জন্য করি, সেগুলো যে আনন্দ নিয়েও করা যায়, তা গিন নো সাজি থেকে শিখেছি। একজন শহুরে ছাত্রের অ্যাগ্রিকালচার স্কুলে পড়তে যাওয়া, সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে টিকে থাকার প্রচেষ্টা, বন্ধুত্ব এবং বাস্তব জীবনের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু কথা- সব মিলিয়ে এই গল্পটি রূপার চামচের মতই এক টুকরো সম্পদ। সামান্য ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনারও যে কতটা উপভোগ্য হতে পারে, আমরা যে পিজা দোকানে গিয়ে কিনে খাই, তা সবাই মিলে বানিয়ে খাওয়া কতটা মজার হতে পারে… একটা পশুকে নিজে হাতে যত্ন করে বড় করার পর তাকে খাদ্যে পরিণত হতে দেয়াটা একইসাথে কত কষ্টের এবং আনন্দের হতে পারে- জীবনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোর গুরুত্ব এই গল্পটি আমাকে মনে করিয়েছে। সেইসাথে খামার বা কৃষিকাজ করে যারা জীবন যাপন করে, তাদের জীবনের সুখদুঃখটা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন মাঙ্গাকা, আর তা পারবেনই বা না কেন! এর আগে তিনিই যে আমাদের উপহার দিয়েছিলেন ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্টের মত অসাধারণ এক গল্প!

014

মাঙ্গাটি আরাকাওয়া সেনসেই এর কাজ, কাজেই আর্ট এবং গল্প বলার স্টাইলের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই, প্রতিটা পৃষ্ঠা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয়। আর গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তিনি হালকা হাস্যরস তৈরি করেছেন, পড়ার সময় তা মনটাকে হালকা করে তোলে। সেইসাথে অ্যানিমেটিও কম যায়না, এর ঝকঝকে মন ভাল করা আর্ট এবং অসাধারণ ওএসটির কারণে।

একজন মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, সেগুলো মাঝে গল্প উপন্যাসকেও হার মানায়! সেই চ্যালেঞ্জ পার করতে “ও পারলে আমি পারব” ধরণের মানিসকতা কাজে দেয়না; বরং নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে সেখান থেকেই যা করা সম্ভব তা করতে হয়। নাকামা পাওয়ার নয়, এনিথিং ফর মাই নাকামা নয়, সাধ্যমত সাহায্য করা এবং না পারলে নিজের অক্ষমতা মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। গিন নো সাজিতে এই বার্তাটি খুব সুন্দর একটা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

তাই, পারলে আজই পড়া শুরু করে দিন মাঙ্গাটি এবং আবিষ্কার করুন স্লাইস অফ লাইফ জনরার একটি অমূল্য রত্ন!

10847473_407429682754877_2032844622808354923_o

মাঙ্গা রিভিউ – Watashitachi no Shiawase na Jikan – Syed Tawsifuzzaman

Volumes: 1

Chapters: 8
Genres: Drama, Romance, Slice of Life, Psychological, Seinen
Authors: Yumeka, Sumomo (Art)
MAL Rating: 9.8
MAL Ranking: 4th

কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের মানসিক অবস্থা কেমন হয়? বা সকলেই কি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য? তারা কি আরেকটা সুযোগ পেতে পারেনা?

এও কি আপনাদের মাথায় কখনো উদয় হয়েছে যে বিত্তবানরাই কি প্রকৃত সুখী? তাদের জীবনও তো হতে পারে বিষাদময়।

আজকাল দেখি অনেকেই তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যাই কি ঝামেলামুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায়? এত সুন্দর পৃথিবী কি এত সহজেই ছেড়ে যাওয়া যায়, বা উচিত?

সকল মা ই কি মমতাময়ী?

এরকম আরও অনেক প্রশ্নই আপনার মাথায় উকি দেবে আর ঘোরাফেরা করবে এই মাঙ্গাটা পড়ার পর।

এর মুল কাহিনী একজন মেধাবী পিয়ানিস্ট কে নিয়ে যার নাম জুরি। যে জীবনের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয়। তার এই অবস্থায় তার এক খালা, যে একজন চার্চ এর সিস্টার, তাকে নিয়ে যায় একটি কারাগারে, যেখানে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামীদের রাখা হয়। সেখানে তার দেখা হয় এক আসামির সাথে, যে ৩ খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত। ওই আসামির নাম হল ইউ। সে অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সে যেই খুনগুলো করেছে তার জন্য সে প্রায়াশ্চিত্ত করতে চায় এবং সেও বহুবার আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করে। দেখা করার পর তারা তাদের মনের ভেতরের পুরনো কষ্টগুলো মনে করে এবং তা নিয়ে ভাবতে থাকে। এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যায় এবং একজনের প্রভাবে অন্যজনের জীবনও খানিকটা পালটে যায়।

কিভাবে পালটে যায় তা জানতে আপনাদের পড়তে হবে ওয়াতাশিতাচি নো শিওয়াসে না জিকান মাঙ্গাটি।

এই মাঙ্গাটির ভলিউম মাত্র একটি, সুতরাং একটু সময় খরচ করে মাঙ্গাটি পড়লে আপানার খারাপ লাগবে বলে মনে হয় না বরং অনেক ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।

All Fiction 1 – Character Spotlight: Kumagawa Misogi

ক্যারেক্টার স্পটলাইট –

কুমাগাওয়া মিসোগি / Kumagawa Misogi

মাঙ্গা : মেদাকা বক্স / Medaka Box

মেদাকা বক্স (Medaka Box) মাঙ্গার সবচেয়ে ডার্ক ক্যারেক্টার কুমাগাওয়া মিসোগি (Kumagawa Misogi)। ‘Born Loser’ বলতে যা বুঝা যায় , কুমাগাওয়া তার যথার্থ উদাহরণ। ভয়ংকর অ্যাবিলিটির অধিকারী বিকৃত মানসিকতার এই ক্যারেক্টারটি জীবনে সবকিছুতেই ব্যর্থ , সকলের কাছে সকল বিষয়ে হেরেছে , এমন একটি মানুষ।

মেদাকা বক্স মাঙ্গাতে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এবং ক্ষমতার(অ্যাবিলিটি) উপর ভিত্তি করে ক্যারেক্টার দের ‘Plus’, ‘Minus’, ‘Special’, ‘Normal’ ও ‘Not Equal’ এই কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা নেতিবাচক মানসিকতার ও ক্ষমতার অধিকারী , তাদের বলা হয় ‘Minus’। এবং এই মাইনাসদের মধ্যে সবচেয়ে মাইনাস , সবচেয়ে শক্তিশালী/নেতিবাচক হল কুমাগাওয়া। একজন মানুষের পক্ষে যতটা নেতিবাচক হওয়া সম্ভব , কুমাগাওয়া ঠিক ততটাই বিকৃত , নেতিবাচক মানসিকতার অধিকারী।

বলা হয় যে , কুমাগাওয়া জীবনে যত মানুষের সাথে মেলামেশা করেছে , তাদের সব নেতিবাচক দিকগুলোই সে নিজের করে নিয়েছে।

নাস্তিবাদি এই ক্যারেক্টারটির প্রধান ‘Ability’ হল ‘All Fiction’ , যার সাহায্যে সে যেকোনো কিছুর অস্তিত্ব পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে পারে , নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে নিমেষেই । হাসতে খেলতে সে মানুষকে খুন করতে পারে। যেকোনো কিছুকে নাই করে দেওয়ার মত এই ক্ষমতার সৃষ্টি হয়েছে তার নেতিবাচক মানসিকতা থেকেই।

বিতর্কের খাতিরে বলতে গেলে, কুমাগাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী মাঙ্গা ক্যারেক্টার, কারণ তার রয়েছে যেকোনো কিছুর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেবার ক্ষমতা।

তার কাছে মানুষের জন্মমৃত্যুর কোন মুল্য নেই। বেঁচে থাকার , জীবনকে উপভোগ করার অর্থ সে জানেনা। মাইনাসদের ছাড়া সে অন্য কোন মানুষকে বিশ্বাস করেনা , কারন শুধু মাইনাসরাই বুঝতে পারে অপর মাইনাস দের দুঃখ। মাইনাসদের সচরাচর অনুভূতি (emotion) প্রকাশ করতে দেখা যায়না , তারা হাসিমুখে সব অপমান , অপবাদকে অগ্রাহ্য করে।

স্বঘোষিত সবচেয়ে দুর্বল ক্যারেক্টার, কিন্তু আদতে শক্তিশালী , ভয়ংকর এবং আনপ্রেডিকটেবল ক্যারেক্টার কুমাগাওয়া মিসোগির হৃদয়েও রয়েছে নমনীয়তা। সে যাদের বিশ্বাস করে তাদের জন্য যেকোনো কিছুই করতে পারে। মাঙ্গার এক পর্যায়ে গিয়ে তার চরিত্রের নমনীয় এই দিকগুলোর পরিচয় পাওয়া যায়। তার নিজের ব্যর্থতা থেকে অন্যদের অনুপ্রেরণা দিয়ে মানুষকে সামনে অগ্রসর হবার কথা বলে সে…

কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে কুমাগাওয়ার দারুণ কিছু পান (Pun) যা পড়ে আপনারা না হেসে পারবেননা।

পারভার্টনেস তার অনন্য বৈশিষ্ট্য । পুরো মাঙ্গা জুড়েই রয়েছে তার এরোগিরি । কৌহাইদের নিয়ে সে গঠন করেছিল ‘Naked Apron Alliance’ নামক সংঘ। নাম শুনেই বুঝতে পারবেন সংঘটি কেমন :v ।

কিছু কিছু জায়গায় তার মাত্রাতিরিক্ত পারভার্টনেস নির্মল আনন্দের উৎস হিসেবে কাজ করবে।

তার অ্যাবিলিটিগুলোর মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অ্যাবিলিটি হল ‘Hundred Gauntlet’ , যার মাধ্যমে কতগুলো বড় বড় স্ক্রু নিয়ে কুমাগাওয়া তার শত্রুদের আক্রমন করে। এই স্ক্রুগুলো কোন ক্ষতের সৃষ্টি করেনা , তবে যার গায়ে বিঁধে , তার মনটা কুমাগাওার মতই নেতিবাচক মানসিকতায় ভরে ওঠে। আর তার এই অ্যাবিলিটির মাধ্যমে শ্লেষাত্মকভাবে সে যেন মুণ্ডুপাত করে, স্ক্রুগুলো তারই বহিঃপ্রকাশ (He sarcastically screws others with his large screws)।

মেদাকা বক্সের লেখক নিশিও ইশিন, যিনি মোনোগাতারি সিরিজের জন্য বিখ্যাত , সুপারন্যাচারাল কাহিনীসূত্র ও পাগলাটে ক্যারেক্টার সৃষ্টিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতে কুমাগাওয়াই তাঁর সৃষ্ট সর্বোৎকৃষ্ট ক্যারেক্টার।

তাই পড়ুন মেদাকা বক্স মাঙ্গা , নিজেই উপভোগ করুন অসাধারণ, পাগলাটে ক্যারেক্টার কুমাগাওয়ার অবিশ্বাস্য সব কাণ্ডকারখানা।

All Fiction 1: Claymore Review

মাঙ্গা রিভিউ –

ক্লেমোর / Claymore

মাঙ্গাকা : ইয়াগি নোরিহিরো / Norihiro Yagi

জানরা : অ্যাকশন , ট্র্যাজেডি , সুপারন্যাচারাল , ডার্ক-ফ্যান্টাসি , হরর , ড্রামা

প্রকাশনা : Jump Square (former Monthly Shounen Jump)  

চ্যাপ্টার : ১৫২

স্ট্যাটাস : অনগোয়িং

কাহিনিসুত্র এবং ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট :

মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে আছে মনুষ্যরূপী নরখাদক দানব, আর সেই দানব নিধনে বেরিয়ে পড়েছে তলোয়ারধারী এক রমণী। পিঠে বিশাল তলোয়ার, পরনে যুদ্ধের সাজপোশাক, রমণীর রণমূর্তিতে ত্রস্ত জনসাধারণ। কারণ সেই রমণীও যে অর্ধ-দানব, তাই দানবের মোকাবিলা করাও যে তাকেই মানায়। এগিয়ে যায় মানব-দানব সংকর যোদ্ধা, মুখোমুখি হয় নরখাদক বর্বর দানবের। অর্ধ-দানব হলেও মানবজাতির একমাত্র ত্রাতা এই যুদ্ধংদেহী রমণীরাই।

ক্লেমোরের পটভূমি রচিত হয়েছে একটি মধ্যযুগীয় দ্বীপে , যেখানে বসবাস করে “ইয়োমা” নামক এক ধরনের দানব। ইয়োমারা তাদের আকৃতি বদলে মানুষের রুপ ধারন করতে পারে এবং মানুষের মাঝেই বসবাস করে। যার দেহে ইয়োমা বসবাস করে , তার স্মৃতি এবং বিবেক বহন করে বলে ইয়োমারা মানুষের মাঝে সম্পূর্ণরুপে মিশে যেতে পারে , তাদের শনাক্ত করার কোন উপায় থাকেনা। ইয়োমারা মানুষের নাড়িভুঁড়ি খেয়ে বেঁচে থাকে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় না খেয়ে থাকতে পারেনা। তাই নাড়িভুঁড়ি খাওয়ার জন্য নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করতে হয় তাদের।

“দ্যা অর্গানাইজেশন” নামক এক রহস্যময় সংগঠন অর্ধ মানব-অর্ধ ইয়োমা নারীযোদ্ধা তৈরি করে। এই যোদ্ধারা অর্থের বিনিময়ে ইয়োমা মারে , সেই অর্থ অর্গানাইজেশন থেকে সংগ্রহ করা হয়।

এই নারীযোদ্ধাদের বলা হয় “ক্লেমোর” , কারন তারা সবসময় পিঠে ক্লেমোর নামক বড় এবং ভারী তলোয়ার বহন করে এবং এই তলোয়ার দিয়ে ইয়োমা খুন করে। তাদের রুপালি বর্ণের চোখের জন্য লোকে তাদের “রুপালি চোখের ডাইনী” বলেও অভিহিত করে।

ইয়োমাদের মধ্যে একধরনের আসুরিক শক্তি বিদ্যমান , যাকে বলা হয় “ইয়োকি”। এই ইয়োকি তাদের অতিমানবীয় শক্তি এবং আকৃতি বদলের ক্ষমতা প্রদান করে। শুধু ক্লেমোররাই পারে মানুষের রূপধারণকারী ইয়োমাদের শনাক্ত করতে , কারন ইয়োমাদের মত ক্লেমোররাও ইয়োকি বহন করে। তবে ক্লেমোররা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই শক্তি ব্যবহার করতে পারে । এই নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে তারা তাদের মনুষ্যরুপ হারায় এবং “Awakened Being” নামক একধরনের উৎকৃষ্ট ইয়োমায় পরিণত হয়। এই ঘটনাকে বলা হয় “Awakening”।

ক্লেমোররা মানুষের হৃদয়, কিন্তু ইয়োমার শক্তি বহন করে। যখন তাদের মনুষ্যহৃদয় ইয়োমার শক্তি দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় , তখনি তারা সীমা অতিক্রম করে এবং Awakened being এ পরিণত হয়।

নিয়ম রয়েছে যে, যদি কোন ক্লেমোর অর্গানাইজেশন পরিত্যাগ করে অথবা মানুষ খুন করে, অথবা Awakened Being এ পরিণত হয় , তবে অন্য ক্লেমোররা তাকে অবশ্যই মেরে ফেলবে।

ক্লেমোর মাঙ্গার দ্বীপটি ৪৭টি অঞ্চলে বিভক্ত। প্রত্যেকটি অঞ্চল অর্গানাইজেশনের একজন ক্লেমোরের দায়িত্বাধিন। মোটমাট ৪৭ জন ক্লেমোর তাদের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পদমর্যাদা পেয়ে থাকে , তাদের পদমর্যাদা দিয়েই তাদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ক্লেমোর মাঙ্গার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট অসাধারণ। মাঙ্গাটির কাহিনী শুরু হয় অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে দুর্বল/নিম্ন পদমর্যাদার ক্লেমোর ক্লেয়ারের একটি ইয়োমা শিকারের মধ্য দিয়ে । ধীরে ধীরে জানা যায় ক্লেয়ারের হৃদয়বিদারক অতীত, তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য, ক্লেমোর হয়ে ওঠার মুল কারণ। সময়ের সাথে সাথে ক্লেয়ারের বেশ কিছু বন্ধু হয়, মরণপণ লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা হয়। ক্যারেক্টাররা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে , নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে , নতুন রহস্যের সম্মুখীন হয়।

এক পর্যায়ে জানা যায় অর্গানাইজেশনের আসল পরিচয়, ইয়োমা উৎপত্তির রহস্য এবং আরও অনেক উত্তেজনাকর তথ্য। সবচেয়ে শক্তিশালী Awakened being – “The Abbysal Ones” এবং তাদের চেয়েও শক্তিশালী , প্রিসিলা… এদেরকে ঘিরেই বাড়তে থাকে উত্তেজনা।

প্রথমদিকে মাঙ্গাটিকে সাধারণ অ্যাকশন-সুপারন্যাচারাল মাঙ্গা মনে হলেও ধীরে ধীরে তা পাঠকের আগ্রহ বাড়াতে থাকবে। মাঙ্গাটির আসল আকর্ষণ এর মারমার-কাটকাট ব্যাটলের দৃশ্য এবং হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডিতে। সব ব্যাটলই “Survival of the fittest” এর নিদর্শন । মাঙ্গাটিতে প্রচুর রক্তপাত ও মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে , কিন্তু তা এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ক্লেমোর মাঙ্গায় প্রচুর রিয়াল সোর্ডফাইটিং স্কিল ব্যবহৃত হয়েছে , সোর্ডফাইটিং টেকনিকগুলো বাস্তবে ব্যবহৃত হত একসময়।

তাই যারা সোর্ডফাইটিং এনিমে/মাঙ্গা পছন্দ করেন , তাদের জন্য ক্লেমোর মাঙ্গা বেশি রিকমেনডেড।

আর্ট :

ক্লেমোর মাঙ্গার আর্ট এর কাহিনীর মতই অসাধারণ। সব অ্যাকশন দৃশ্যই সুনিপুণভাবে আঁকা এবং স্পষ্ট । ক্লেমোরের দৃষ্টিনন্দন ব্যাকগ্রাউনড এর অন্যতম আকর্ষণ , কিছু কিছু জায়গায় ফটোগ্রাফিক স্কেচ মনে হবে , এতোটাই পারফেক্ট।

প্রথম দৃষ্টিতে ক্যারেক্টার ডিজাইন তেমন একটা চোখে লাগবেনা । কারো কারো কাছে খারাপ লাগতেও পারে , কিন্তু আমি আশ্বাস দিচ্ছি , ক্লেমোরের ক্যারেক্টার ডিজাইন আসলে খুবই ভালো।

সব ক্লেমোরেরই চুল এবং চোখ রুপালী , তাদের পোশাকও এক-অর্গানাইজেশন থেকে সরবরাহকৃত আর্মার। এইসব বাধ্যবাধকতা নিয়ে, চেহারা-হেয়ারস্টাইলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পার্থক্য রেখে এতগুলা ক্লেমোর ক্যারেক্টার আঁকা, এবং এতগুলো চ্যাপ্টারে তা অবিকৃতভাবে বজায় রাখার প্রায় অসম্ভব কাজটাই করেছেন মাঙ্গাকা ইয়াগি নোরিহিরো সেন্সেই। কাহিনীসূত্রানুসারে মাঙ্গায় যথেষ্ট রক্তপাত থাকলেও নোরিহিরো সেন্সেই অসাধারণ স্পষ্ট আর্টের দ্বারা গোরকে(Gore) শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।

কেন পড়বেন :

চরম উত্তেজনাকর সোর্ডফাইটিং , ধুমধাড়াক্কা অ্যাকশন , দৃষ্টিনন্দন আর্ট এবং মনোমুগ্ধকর কাহিনী…

আমার মতে, ক্লেমোরের স্টোরিলাইন অনেক জনপ্রিয় নভেলের চেয়েও ভালো , তাই দেরি না করে পড়া শুরু করুন।

যথেষ্ট আন্ডাররেটেড , না পড়লে পস্তাবেন।

আমার রেটিং :–

স্টোরিলাইন: ১০

ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট: ১০

ক্যারেক্টার ডিজাইন: ৯.৮

আর্ট: ৯.৮

ওভারঅল: ১০/১০

মাইএনিমেলিস্ট রেটিং : ৮.৪৪

All Fiction 1: Vinland Saga review

মাঙ্গা রিভিউ –

ভিনল্যান্ড সাগা / Vinland Saga

মাঙ্গাকা : মাকোতো ইয়ুকিমুরা / Makoto Yukimura

জানরা : হিস্টোরিকাল, অ্যাকশন, সেইনেন, অ্যাডভেঞ্চার

প্রকাশনা : Afternoon

চ্যাপ্টার : ১০৪

স্ট্যাটাস : অনগোয়িং

কাহিনী :

 

ভিনল্যান্ড সাগা জমজমাট-অ্যাকশন সম্বলিত ভাইকিংদের যুগের এক অসাধারণ কাহিনী, যাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে বাস্তবতা, নাটক, দর্শন এবং চরিত্রের চরম উৎকর্ষতা। যুদ্ধ যেখানে জীবনের প্রতিশব্দ, যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করতে পারাই যেখানে একজন মানুষের জীবনের সার্থকতা, যুদ্ধবিগ্রহ, দাসত্ব, দুর্বলের উপর সবলের আগ্রাসন, নিপীড়ন, লুঠতরাজ, অরাজকতায় পরিপূর্ণ অন্ধকার এক যুগের সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে ভিনল্যান্ড সাগা । এ যেন ‘বার্সার্ক’, ‘গেম অফ থ্রোন্স’ আর দুঃসাহসী ভাইকিংদের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ।

ভিনল্যান্ড সাগার পটভূমি রচিত ইংল্যান্ড-ডেনমার্কের যুদ্ধমধ্যবর্তী সময়ে। কাহিনীর শুরু প্রতিশোধ ও প্রায়শ্চিত্তের সন্ধানে ঘুরতে থাকা কিশোর থোরফিনকে নিয়ে, পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে যে কাজ করে পিতার হন্তারক অ্যাসকেলাডের বাহিনিতে, আর মল্লযুদ্ধে অ্যাসকেলাডকে পরাজিত করার সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

কাহিনী এগোতে থাকে, থোরফিন আর অ্যাসকেলাড জড়িয়ে পড়ে ডেনমার্কের ইংল্যান্ড দখলের যুদ্ধে, সঙ্গি হয় ডানিশ রাজপুত্র কানুটের। ধীরে ধীরে থোরফিনের প্রতিশোধবাসনা তীব্র হতে থাকে, আর সেই সাথে কাহিনী অভাবনীয় মোড় নিতে থাকে, ফলশ্রুতিতে রাজপরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায় থোরফিন আর অ্যাস্কেলাড। যুদ্ধের মধ্যে থোরফিনের পরিচয় হয় পাগলাটে-খুনী থোরকেলের সাথে, অ্যাস্কেলাড আর থোরকেলের কাছ থেকে থোরফিন জানতে পারে তার পিতার অতীতসংগ্রাম আর আদর্শের কথা।

ভাইকিংদের বিশ্বাস ছিল যে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করলে যোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত পরলোকের পুণ্যস্থান ভালহালায় যেতে পারবে, আর এই আদর্শে তারা সর্বক্ষণ যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতো।কিন্তু সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাইকিং, থোরফিনের বাবা থোরস একসময় বুঝতে পারে, অস্ত্রচালনা আর রক্তপাতের মধ্যে নয়, বরং পৃথিবীতে শান্তির বানী ছড়িয়ে দিতে পারাই হল প্রকৃত জীবনযুদ্ধ, আর এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পারাই হল প্রকৃত যোদ্ধার পরিচয়। থোরফিন কি পারবে তার পিতার পথ অনুসরন করে প্রকৃত যোদ্ধার যোগ্যতা অর্জন করতে? অজ্ঞতা-অন্ধকারের যুগে শান্তির সন্ধান, এই আশা আর আদর্শ নিয়েই ভিনল্যান্ড সাগার যাত্রা।

বিশ্বাস করা কষ্টকর, কিন্তু সত্যি বলতে ভিনল্যান্ড সাগার ক্যারেক্টাররাই মাঙ্গাটির সর্বশ্রেষ্ঠ দিক। শুধু কাহিনিসুত্রের উৎকর্ষতায় নয়, বরং একটি কাহিনীর মুল আকর্ষণ তার ক্যারেক্টাররা, ইউকিমুরা সেন্সেই তা অসামান্য দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রধান ক্যারেক্টারদের জীবনের শত বাধা-বিপত্তি এবং সংগ্রামময় অতীত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এমনকি দ্বিতীয় সারির ক্যারেক্টারদেরও দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। থোরফিনের অপ্রতিরোধ্য প্রতিশোধবাসনা, অ্যাসকেলাডের অতীত ও বর্তমানের বোঝা বয়ে বেড়ানোর সংগ্রাম, নিপুণতার সাথে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষমতা, থোরকেলের দুঃসাহসিক কার্যকলাপ আর অতুলনীয় শক্তিমত্তা, থোরসের আদর্শ আর জীবনযুদ্ধে জয়ী হবার রহস্য, প্রত্যেকটি ক্যারেক্টারই পাঠককে মুগ্ধ করার যোগ্য। অসাধারণ কাহিনীনির্দেশনা আপনাকে এর সাথে আটকে রাখবে, আর আপনি দেখবেন কিভাবে প্রত্যেকটি ক্যারেক্টার সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে অগ্রসর হয় ।

আর্ট :

দৃষ্টিনন্দন ক্যারেক্টার ডিজাইন থেকে শুরু করে মনোমুগ্ধকর ব্যাকগ্রাউন্ড, মাঙ্গাটির আর্ট আসলেই ফার্স্টক্লাস। দেখে বোঝা যায় যে মাঙ্গাকার অঙ্কন ক্ষমতা আগের চেয়ে(Planetes) অনেক ভালো হয়েছে । প্যানেলগুলো ভালভাবে সজ্জিত, এবং অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ঝকঝকে। তলোয়ারের গতিপথও খুব স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে , যা খুবই বিরল ব্যাপার।

মাঙ্গার আর্টের ব্যাপারে সবারই যে বিষয়টি লক্ষ করা উচিৎ, তা হল আর্টের মাধ্যমে ক্যারেক্টারদের কার্যকলাপ এবং অনুভুতিগুলো যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারা, এবং ভিনল্যান্ড সাগা তা অনায়াসেই উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। আর যারা অ্যাকশনের জন্য মাঙ্গা পড়ছেন, তারা প্রথম চ্যাপ্টারগুলোতেই দেখতে পাবেন মধ্যযুগীয় যুদ্ধের বীভৎস নির্মমতা, যা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য।

নিজস্ব মতামত :

 

মাঙ্গাটি স্ব-জানরার মাঙ্গাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা এবং সবার জন্য অবশ্যই পঠনীয়। আগ্রহ জাগানিয়া কাহিনী, অসাধারণ সব ক্যারেক্টার আর মনোমুগ্ধকর আর্ট। অ্যাকশনের কোন কমতি নেই, নাটুকেপনাও দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। আর মাঙ্গাটিকে বাস্তবধর্মী করে তুলতে ইউকিমুরা সেন্সেই যে কি পরিমাণ গবেষণা করেছেন, তা যেন না বললেই নয়। প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার, প্রত্যেকটা পেইজ, প্রত্যেকটা প্যানেলই কাহিনির গড়নে অবদান রেখেছে, যা মনোমুগ্ধকর। অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, হিস্টোরিকাল ড্রামা, সবকিছুর মিশেলে অপূর্ব এক কাহিনী।

যে কারনে আমি এনিমে দেখার চেয়ে মাঙ্গা পড়া বেশি পছন্দ করি, এই মাঙ্গাটিই তার যথার্থ উদাহরণ।

 

কাহিনী: এ+

ক্যারেক্টার : এ+

আর্ট : এ

সর্বমোট : এ++(৯.৬/১০)

Skip Beat manga review – Zahura Chowdhury Abonti

মোগামি কিয়োকো সাধাসিধে গোবেচারা এক মেয়ে। ছোটবেলা থেকে তার বন্ধু ফুওয়া শোতারো বা সংক্ষেপে শো। কিয়োকো শো এর প্রতি খুবই বিশ্বস্ত। তার ধারণা সে বড় হয়ে শো-কে বিয়ে করবে। শুধুমাত্র শো এর জন্য কিয়োকো একা একা পাড়ি জমায় অন্য শহরে। সেখানে গিয়ে সে শো এর জন্য কি না করে! Part time job করে টাকা জমিয়ে শো এর আবদার পূরণ করে। অথচ এর জন্য কিনা সে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু তার এতে কোন দুঃখ নেই। Aspiring star শো কে সে সব সময় উতসাহ দিয়ে যায় এই বলে যে শো এর মত ভাল গায়ক আর নেই। শো-ও এদিকে বেশ নামডাক কামাতে থাকে। শো এর প্রতিদ্বন্দী আরেক সুদর্শন নায়ক তসুরুগা রেন। শুধুমাত্র শো কে খুশি করতে কিয়োকো কখনো রেনের প্রশংসা করে না। সব মিলিয়ে এমন কিছু নেই যা কিয়োকো করে না তার ভালবাসার জন্য। বিপত্তি বাধে তখনই যখন একদিন কিয়োকো শো-কে দেখে ফেলে আরেক মেয়ের সাথে। আর শুনে ফেলে শো এর কথা। শো নিজের মুখে বলে যে কিয়োকো তার ফরমায়েশ পূরণ করে বলেই কিয়োকোর সাথে সে আছে, এছাড়া তার কাছে আর কোন মূল্য নেই কিয়োকোর। নিজ কানে এসব শুনে প্রচন্ড রকমের ধাক্কা খায় কিয়োকো আর ঠিক করে এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ সে নিবেই। সে উঠেপড়ে লাগে শোবিজ join করার জন্য, পাল্টেফেলে নিজের বেশভূষা। কিন্তু ব্যাপারটা এত সোজা নয়। অনেক রকম চড়াই উতরাই পার হয়ে (যার অনেকগুলোই বেশ হাস্যকর) এক সময় কিয়োকো মোটামুটি এক জায়গাতে এনে নিজেকে দাঁড়া করায়। আর এখানে এসে তার সামনাসামনি পরিচয় হয় রেনের সাথে; যাকে সে আগে কতনা গালমন্দ করেছে শো এর প্রতিদ্বন্দী হওয়ার কারণে! আর সেই রেনই কিনা দেখা যায় পদে পদে কিয়োকোকে সাহায্য করে। কিয়োকোকে অভিনয় নিয়ে, জীবন নিয়ে নানা রকম বুদ্ধি দেয়, মাঝে বকাবকিও করে। কিয়োকো মাঝে মাঝে রেনকে অনেক ভয় পেলেও, মনে মনে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করে আর কৃতজ্ঞতাবোধও অনুভব করে।

কিয়োকো জানেনা যে রেনের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল ছোটবেলায়। তখন রেনের আসল পরিচয়ই সে জেনেছিল। তার আসল নাম রেন নয়, কুওন। আর নিজের পরিচয় ঢেকে রাখার পিছনে আছে অতীতের গাঢ় এক রহস্য যা রেন কাওকে জানতে দিতে চায় না। 
শো এর থেকে প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর আর কখনো কারো প্রতি দুর্বল না হয়ে পড়ার প্রতিজ্ঞা করা কিয়োকোর কি হবে পরিণতি? রেনের আসল পরিচয়ই বা কিভাবে নেবে কিয়োকো?

কাহিনী বেশ গতবাধা মনে হলেও ঠিক তেমনটা নয়। কিয়োকোর কাজকারবার বেশ মজার। তার expression গুলি আরো বেশি মজার। খুবই সাধাসিধে এই মেয়ে মাঝে মাঝে খুবই শক্ত আর তখন তাকে দেখে মনে হয় না এই মেয়েই মাঝে মাঝে এমন সব বোকার মত কাজ করতে পারে। আমার বেশ পছন্দের মাঙ্গা। পড়ে দেখতে পারেন।

Annarasumanara [মানহোয়া রিভিউ] by Tahsin Faruque Aninda

 

ছোটকালে মানুষের জীবন থাকে অনেক রকমের স্বপ্নে পূর্ণ, জীবনের প্রতিটি ছোটবড় ঘটনা যেন জাদুর ছোঁয়ায় হয়ে উঠে রঙিন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যেন সেই সব অদ্ভুত সৌন্দর্যময় দিনগুলি জায়গা ছেড়ে দেয় কর্মব্যস্ততার জীবনকে, জাদুময় পৃথিবীকে গ্রাস করে নেয় নির্মম বাস্তবতা। সমাজে সম্মানজনক অবস্থানের জন্যে বেঁছে নিতে হয় ভাল পেশা, পরিবারকে দেখে শুনে রেখে দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে হেঁটে চলবার পথ। নিজে ভালমতো খেয়েপরে নিয়ে সবাই চায় তাদের সন্তানেরাও যেন তাদের দেখানো পথে চলে, সবাই যেন ঠিকমতো “বড় হয়ে উঠে”।
তবে কেউ যদি সমাজের দেখানো পথে “বড় হয়ে উঠতে” না চায়, তাহলে কী হবে? সমাজ কি তার এই “ছোট থেকে যাওয়া” মেনে নিবে? নাকি সবাই তাকে আর সবার মতই তথাকথিত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে উঠেপরে লাগবে?
তারচেয়েও বড় প্রশ্ন, সবার দেখানো পথে “বড় হয়ে উঠে” জীবন গড়ে তুলার বিরোধিতা করে ছোটকালের সেই স্বপ্নময় জীবনকে তাড়া করে ছুটলে কী হবে সেই মানুষটির? তার জীবন কি সেখানেই থেমে থাকবে? নাকি কারও তোয়াক্কা না করে আপন গতিতে ছুটে চলতে পারবে জীবনের পথে?

Annarasumanara নামক মানহোয়াটি পড়ার সময়ে এরকম বিচিত্র প্রশ্ন মাথায় আসবে পাঠকদের। Ha Il-Kwon এর আঁকা ও লেখা এই ওয়েবটুনটি ৩টি ভলিউমে ২৭ চ্যাপ্টারে প্রকাশিত হয়।

কাহিনী: গল্পের নায়িকা Yoon Ah-Ee এক গরীব পরিবারের মেয়ে। পড়াশুনায় তুখোড় এই ছাত্রীর জীবন দারিদ্রতায় অসহনীয় হয়ে উঠে। পরার কাপড় ছিড়ে গেলেও নতুন কাপড় কিনতে চিনতা করতে হয় যে এই খরচের পর মাসের বাকি দিনের জন্যে খাবার কিনবার মত টাকা থাকবে নাকি হাতে। নতুন ক্লাসে তার পাশের চেয়ারেই জায়গা হয় Na Il-Deung-এর, যে শহরের অন্যতম ধনী পরিবারের ছেলেই শুধু নয়, ভাল ফলাফলে সবাইকে ছাপিয়ে স্কুলের সেরা ছাত্রও বটে। পড়াশুনার জন্যে অঢেল টাকা খরচ করে ফেলা তার কাছে কোন ব্যাপারই নয়। এদিকে এত বড় সম্পদশালী পরিবারের ছেলের পাশে বসে থেকে Ah-Ee-এর চিন্তাভাবনায় সারাক্ষণ চলে আসে তাদের দুজনের মধ্যে জীবনধারণের পথের এত বড় পার্থক্যের ব্যাপারটি।

তাদের স্কুলে একদিন হঠাৎ একটি গুজব ছড়িয়ে পরে যে পরিত্যক্ত এমিউজমেন্ট পার্কে এক জাদুকর এসে উঠেছে, আর সেখানেই থাকে এখন। জাদুকরটি একটু রহস্যময়, আর সে নাকি যেকোন মানুষকে গায়েব করে দেবার জাদু দেখাতে গেলে সত্যি সত্যি সেই মানুষকে গায়েব করে ফেলতে পারে। Yoon Ah-Ee ঘটনাচক্রে একদিন সেই জাদুকরের সামনে পরে, যে তাকে প্রথমেই একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, “Do you believe in magic?”

Ah-Ee এর ছোটকালে সবসময়ে শখ ছিল জাদু শিখা, বড় হয়ে সে হতে চেয়েছিল একজন জাদুকর। কিন্তু তার বাবা তাকে ও তার ছোট বোনকে ফেলে চলে যায় ঋণের বোঝা মাথায় চাপিয়ে দিয়ে। সংসারের টানাটানিতে এক সময়ে ছোটকালের সেই সুন্দর স্বপ্ন ঝেড়ে ফেলে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। নুন আনতে পান্তা ফুরানো জীবনে সে জলদি বুঝে উঠে, পড়াশুনায় ভাল ফলাফল করে ভাল একটি চাকুরী পেতে হবে তাকে। আর তাই এতদিন পর ছোটকালের সেই পূরণ করতে না পারা স্বপ্নের ব্যাপারটি তাকে গভীরভাবে আঘাত করে। জাদুকরের জীবন বেঁছে নিলে পরিবারকে কী খাওয়াবে? সমাজ তাকে কী চোখে দেখবে? সত্যিকারের জাদু বলতে কিছু নেই। এটি শুধুই চোখে ধুলো দেওয়া এক খেলা, যা মানুষকে বিনোদনই দিতে পারে, এর বেশি কিছুই না।

এদিকে রহস্যময় জাদুকর বারবার তাকে একটি কথাই বলে, সে সত্যিকারের জাদুকর। সে সত্যি সত্যিই জাদু জানে। কথাটি Ah-Ee মেনে নিতে না চাইলেও তাকে মাঝেমাঝেই কিছু অবাস্তব ধরণের জাদু দেখিয়ে দিতে থাকে। আর সেই সাথে Ah-Ee-কে একটি প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়, তার ছোটকালের স্বপ্ন কি সে চাইলে এখনও পূরণ করতে পারবে?

চরিত্র: গল্পের মূলে রয়েছে তিন প্রধান চরিত্র: দরিদ্র কিন্তু মেধাবী ছাত্রি Yoon Ah-Ee, বড়লোক ঘরের দেখতে হ্যান্ডসাম ও মেধাবী ছাত্র Na Il-Deung, এবং রহস্যময় জাদুকর। পুরো গল্পটি এই তিনজনকে কেন্দ্র করে গড়ে হয়ে উঠে, আর ধীরে ধীরে তিনজনেরই চরিত্রের বিকাশ দেখানো হয়েছে সুন্দরভাবে।

বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে অনেক পরিণত চিন্তার Yoon Ah-Ee জানে অনেক পরিশ্রম করে গরীব পরিবারের হাল ধরতে হবে। আবেগে গা ভাসিয়ে না দিয়ে সত্যের মুখোমুখি হওয়া তার সিদ্ধ্বান্তে লক্ষণীয়।
Il-Deung বিশ্বাস করে উন্নত সুখময় জীবনের জন্যে দরকার অনেক টাকা-পয়সা ও ভাল পেশা। আর বড়লোকের ঘরে জন্মানোতে সে সেইসব সুবিধা উপভোগ করতে পেরে নিজেকে আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান ভাবে।
বিলাসিতার জীবন ছেড়ে আসা জাদুকর নিজের জীবনের স্বপ্নের পথেই পা বাড়ায়। বয়স বাড়লেও, মানসিকভাবে কখনও বড় হয়ে উঠতে না চাওয়া এই জাদুকর সবাইকে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট শিশুটিকে জাদু দেখিয়ে আনন্দ দেখিয়ে বেড়ায়। তার বিশ্বাস জীবনে সবসময়ে স্বপ্নের পথেই এগিয়ে যাওয়া উচিৎ, সমাজের বাহবা পাওয়ার লক্ষ্যে নিজেকে বিলিয়ে না ইয়ে জীবন উপভোগ করাই হওয়া উচিৎ জীবনের সত্যিকারের লক্ষ্য।

আর্ট: মানহোয়াটির আর্টের মধ্যে একটা অন্যরকম সৌন্দর্যের ছোঁয়া আছে। মাঝে মাঝে এবস্ট্রাক্ট আর্টের ব্যাপারটি চোখে পরার মত, আর সেই সৌন্দর্য অনেক বেশি উপভোগ্য! জাদুর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা মানহোয়াটিতে মাঝে মাঝেই দেখা যায় একটি পুরানো বন্ধ হয়ে যাওয়া এমিউজমেন্ট পার্কের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য! চিত্রবহুল এই মানহোয়াতে এক প্যানেল থেকে আরেক প্যানেলে অংকনের পরিবর্তনগুলি কাহিনীতে গভীর ছাপ ফেলে। সবচেয়ে বেশি চোখে যা পরবে তা হল আর্টে একটা ডার্ক থিম থাকলেও কাহিনী সেরকম ডার্ক নয়, যাতে এ দুটি জিনিসের কম্বিনেশন অসাধারণ হয়ে উঠেছে!

একজন বাস্তববাদী, একজন অভিজাত-বংশীয় এবং একজন জাদুকরের কাহিনী আপনাকে মনে করে দিবে শুধু লোকদেখানো নয়, নিজের জীবনকে নিজের মত করেও গড়ে তুলা উচিৎ। স্বপ্ন শুধু স্বপ্নে থেকে যাবার জন্যেই নয়, সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারাটা জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম দিক!

মনে গভীর ছাপ রেখে যাবার মত ঘটনাবহুল একেকটি অধ্যায়, সেই সাথে চোখজুড়ানো আর্ট এই মানহোয়াটিকে স্বাভাবিকভাবেই খুব জলদি আপনার মনোযোগ কেড়ে নিবে। গল্পের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, কাহিনী আগানোর সাথে সাথে চরিত্রগুলি অনেক সুন্দর ভাবে বিকশিত হয়। চরিত্রগুলিতে দেখার মতন পরিবর্তন আসে। জাদুর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা কাহিনীতে চরিত্রগুলিও জাদুময় কিছু মুহুর্ত উপহার দিতে পারবে। 

প্রায় ৪০-৫০ পাতার একেকটি চ্যাপ্টার পড়তে খুব বেশি সময় নিবে না হয়তো। অতএব কমিক্স, মাঙ্গা, মানহুয়া ও মানহোয়া পাঠকেরা এই মানহোয়াটি না পড়ে থাকলে আর দেরী না করে এখনই পড়ে ফেলুন, আর উপভোগ করুন অসাধারণ সুন্দর একটি গল্প! জাদুময় কিছু মুহুর্তই আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে 

MyAnimeList Rating: ৮.৬৯/১০
আমার রেটিং: ১০/১০

[লেখাটি একই সাথে somewhereinblog-এও আপলোড করা হয়েছে, লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/aulaaninda/29911178 ]