অনিক মিয়ার ক্ষুদে মাঙ্গার বাক্স, পর্ব #০৪

মাঙ্গার নাম : ?????
চাপ্টার : ১৫ টি
মাঙ্গাকা : Oimo
ধরন : রহস্য, শিশু (পোকা) নির্যাতন
 
কীট-পতঙ্গ নিয়ে সাতোশি কিজির এক অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করে। একদিন হঠাৎ অজানা এক পোকার দেখা পায় সে। কিন্তু পোকার মুখটা দেখতে মেয়ে মানুষের মতো। পোকাটিকে সে বাড়িতে নিয়ে আসে। পোকা নিয়ে আকর্ষণ থাকলেও পোকার প্রতি খুব যে যত্ন নেয় তা নয়। উলটো পোকার সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করাটাই তার স্বভাবের সাথে যায়। কিন্তু এই খারাপ আচরণকে অদ্ভুত মেয়ে পোকাটা অস্বাভাবিক হিসাবে নেয় না। কারণ জন্মের পর সাতোশিকেই শুধু দেখেছে পোকাটি। ভালো-মন্দের তফাৎ করার মতো জ্ঞান এখনো হয়নি। লোকচক্ষুর আড়ালে অজানা পোকা পালন, অন্যদিকে ভিনগ্রহী সদৃশ কিছু উটকো পতঙ্গ মেয়ে পোকাটিকে খুঁজে চলেছে দিক-বিদিক। কে এই মেয়ে পোকা? কেনই বা একে হন্যে হয়ে খুঁজছে অন্য কিছু পোকা? সাতোশির সাথে পোকার সম্পর্ক আগাবে কীভাবে এসব নিয়ে গল্পের ফোকাস।
মাঙ্গাটা পড়ে অধিকাংশের ভালো লাগবে, এমনটা আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে দাবি করতে পারছি না। কিন্তু এ ধরনের অতিপ্রাকৃত, অদ্ভুতুরে অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত তেমন পাইনি আমি। পোকা নিয়ে একটা গা ঘিনঘিন ব্যাপার তো এখানে রয়েছেই, আবার সামনে কী হবে এমনটা ভেবে থ্রিল নেওয়ার অবকাশও রয়েছে মাঙ্গাটিতে। তাই কিছুটা বিরল গল্প অবলোকনের অভিজ্ঞতা সঞ্চারে এই মাঙ্গাটি পড়ার সুপারিশ করব সবাইকে।
 
✪জানলে ভালো, না জানলে ক্ষতি নাই✪
পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার প্রজাতির এবং তার চেয়ে অধিক রঙের মিশেলের প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতির রঙবেরঙের ডানা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্বচ্ছ। কাইটিনের তৈরি এই ডানাগুলো আসলে হাজার হাজার ক্ষুদ্র আঁশ দিয়ে গঠিত। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে সূর্যের আলো এই আঁশগুলোতে প্রতিফলিত হয়েই অজস্র প্যাটার্নের রঙিন অবস্থার সৃষ্টি করে।
 
 

অনিক মিয়ার ক্ষুদে মাঙ্গার বাক্স, পর্ব #৩

মাঙ্গার নাম: Oyaji
চাপ্টার: ২৪টি
মাঙ্গাকা: Tsuru Moriyama
ধরন: হাস্যরসাত্মক, নাটকীয়, জীবনবোধক
 
কুমাদা এক বিশালদেহী, ভয়ংকর দেখতে মানুষ। কোনো এক কারণে বহু বছর জেলে কারাভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু লোকটা খুব ভালো। এতগুলো বছর পরিবারের খবর রাখতে পারেনি। তাই বাবার অনুপস্থিতিতে সন্তানেরা উচ্ছন্নে গিয়েছে। একজন হয়েছে এলাকার পাতি মাস্তান, যদিও বড় মাস্তান দেখলেই ভয়ে পালায়। আরেকজন প্রেম জীবন নিয়ে ঝামেলায় জানটাই হারাতে বসেছে। অন্যদিকে সংসারের ভাড়ে স্ত্রী হারিয়েছে তার রূপ-লাবণ্য, যৌবন, মানসিক শান্তি।
অনেক বছর পর ঘরে ফিরেছে কুমাদা। এত বছর পরিবারে না থাকার ফলে দায়িত্ব-কর্তব্য কিছুই পালন করতে পারেনি। তাই যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা এবার ঢেলে দিতে চায় পরিবারের জন্য। কিন্তু কুমাদার চেহারা-সুরত দেখে নিজের সন্তানেরাই তাকে নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। বাপজান আবার কথাও বলে অতি অল্প। সারাদিন ঢোক ঢোক করে মদ গিলে। কিছুতেই বল-ব্যাটে মিলছে না দুই পক্ষের। তাদের বনিবনা হওয়া এবং স্বল্পভাষী পিতার অস্বাভাবিক সব উপায়ে পরিবারকে রক্ষা করা নিয়েই মাঙ্গাটি।
 
✪জানলে ভালো, না জানলে ক্ষতি নাই✪
“ও-য়াজি” শব্দটি মূলত “ও-য়াচিচি” শব্দের অপভ্রংশ। যা আবার “চিচিহুয়ে” হতে এসে থাকতে পারে(?)। সবগুলোর আক্ষরিক অর্থ “পিতা/বাবা”। ওয়াজি শব্দটা তার মধ্যে সবচেয়ে casual । “বুড়া বাপ” এর জাপানি সংস্করণ বলা যায়। বাপ ছাড়াও অপরিচিত চাচা, মামা বয়সী লোকজনকেও ও-য়াজি বলে অনেকে। প্রায় সবাই হয়ত জানেন ব্যাপারটা তাও জানালাম।
 

অনিক মিয়ার ক্ষুদে মাঙ্গার বাক্স, পর্ব #২

মাঙ্গার নাম: Koukoku no Shugosha
চাপ্টার : ৩৪টি
মাঙ্গাকা: Satou Daisuke
ধরন: ঐতিহাসিক, সামরিক, ফ্যান্টাসি
 
দুই প্রতিবেশী দেশ কৌকোকু এবং তেইকাকু। ক্ষমতা ও প্রভাবের লড়াইয়ে লড়ে চলেছে তারা। তবে এতদিন কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও তা শীঘ্রই মাঠের লড়াইয়ে রূপ নেয়। উত্তরের হীম শীতল অঞ্চলের দখলটা নিয়ে শুরু হয় প্রথম ঝামেলা। শুধু মানুষ নয়, সঙ্গে লড়ছে ঘোড়া, লড়ছে বাঘ সদৃশ বিড়ালেরা।
হঠাৎ একদিন তেইকোকুর পূর্ব ডিভিশনের সেনারা আচমকা হামলা করে কৌকোকুর উত্তরাঞ্চল প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর উপর। ভারী, উন্নত অস্ত্র ও সমর কৌশলের সামনে তাসের মতো ভেঙ্গে পড়ে কৌকোকুর প্রাথমিক প্রতিরক্ষা। শত্রুর প্রথম ধাক্কায় উদভ্রান্তের মতো রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাতে থাকে কৌকোকুর সেনারা। কিন্তু সুশৃঙ্খলভাবে পিছু হটে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দরকার এমন এক ইউনিটের, যারা মূল বাহিনী নিরাপদে সরার আগ পর্যন্ত শত্রুর অগ্রাভিযান রোধ করে রাখবে। সামরিক ভাষায় যাকে বলে Rear guard action । এই কাজে ডাক পড়লো ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট শিঞ্জো নাউয়ের ব্যাটালিয়নের। প্রথম আক্রমণে তার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা হয় মৃত, আহত, নয়তো বন্দী। সেনা সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক। তবু সাকুল্যে ৬০০ সৈন্যের এই ব্যাটালিয়নকে রুখে দিতে হবে শত্রুকে। ৪০ হাজার সেনার বিশাল শত্রুকে বেধে রাখা লাগবে যতক্ষণ না তাদের বাহিনী নিরাপদ পশ্চাদপসরণ সম্পন্ন করে। প্রয়োজনে শেষ সিপাহির প্রাণের বিনিময়ে হলেও লড়ে যেতে হবে এই ইউনিটকে।
এই অসম যুদ্ধে আদৌ কতক্ষণ টিকবে শিঞ্জোর ব্যাটালিয়ন, কৌকোকুর মূল বাহিনী নিরাপদে পিছু হটতে পারবে কি না – এই কাহিনি নিয়েই মাঙ্গাটি।
মাঙ্গাটায় যদিও কিছু কিছু সময় ভাগ্যের খেল দেখে বাড়াবাড়ি লাগতে পারে, তবে যুদ্ধে ভাগ্য বিধাতার সহায়তার অনেক ইতিহাস, পৌরাণিক গল্পই তো আমরা জানি। কাহিনি এমনিতে যথেষ্ট বাস্তবিক ও চিত্তাকর্ষক। বিশুদ্ধ যুদ্ধ নিয়ে মাঙ্গা বিরল। যদিও এনিমের তুলনায় পরিমাণটা একটু বড়। সেরকম একটার নমুনা এই মাঙ্গাটি।
 
✪জানলে ভালো, না জানলে ক্ষতি নাই✪
মাঙ্গাটির প্রেক্ষাপট ঊনিশ শতকের শেষ দিকে রুশ-জাপানি সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বের একটা অল্টারনেট সেটিং এর উপর ভিত্তি করে গড়া। এশিয়াতে রাশিয়ার পূর্বমুখী বিস্তার এবং জাপানের মেইজি যুগ পরবর্তী সময়টার একটা বিকল্প রূপ দেখানো হয়েছে গল্পে। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য একটা আকর্ষণীয় দিক হতে পারে মাঙ্গাটা। উপরে মাঙ্গাকার নাম হিসাবে সাতো দাইসুকের নাম লিখেছি। ইনি কিন্তু সেই একই ভদ্রলোক যিনি Highschool of the Dead এর মূল গল্প লেখক। অনেকেই জানেন তিনি হৃদরোগে ভুগে মারা গিয়েছেন ২০১৭ সালে। ভদ্রলোক অল্টারনেটিভ ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন গল্প লিখতে খুব পছন্দ করতেন। এটা ছাড়াও এরকম কিছু মাঙ্গায় কাজ করেছেন তিনি, যদিও সেগুলোর অনুবাদ না থাকায় নেটে নেই বললেই চলে। অন্যদিকে পোস্টের মাঙ্গাটির আঁকিয়ে হিসাবে কাজ করেছেন Itoh Yu । ২০০৪ সালের মাঙ্গা হিসাবে স্ট্যান্ডার্ড আর্ট বলা যায়।
 

অনিক মিয়ার ক্ষুদে মাঙ্গার বাক্স, পর্ব #১

মাঙ্গার নাম: Saltiness
চাপ্টার: ৪৪ টি
মাঙ্গাকা: Furuya Minoru
ধরন: হাস্যরসাত্মক, সেইনেন, স্লাইস অফ লাইফ
 
হিমুকে তো চিনেন? হুমায়ুন আহমেদের হলুদ হিমু। সেই ভবঘুরে, উদ্ভট চালচলন, মাথা চক্কর দেওয়া থতমত খাওয়া দার্শনিক কথাবার্তার হিমু।
Saltiness মাঙ্গার কেন্দ্রীয় চরিত্র তাকেহিকো নাকামুরা কিছুটা হিমুর মতোই, কিন্তু হিমু না। কর্মহীন , ঘুরঘুর, খাইখাই করা সমাজের অকর্মা লোকটি “জীবন” কে বশীভূত করে ফেলেছে বলেই বিশ্বাস করে। দুনিয়ার সকল প্রকার দুঃখ, কষ্ট, ভেজালের ধরাছোঁয়ার বাইরে সে। তয় একদিন বোধদয় হয় প্রিয় বোনের মাথা থেকে বোঝা কমাতে নিজে থেকে কিছু করতে হবে। যতদিন সে তার বোনের ঘাড়ে চেপে থাকবে, বোনের আর বিয়ে করা হবে না, সংসার পাতা হবে না। সে যেই “জীবনকে” বশীভূত করে ফেলেছিল বলে ভেবেছিল, সেই জীবনের বাস্তবতা এক ধাক্কায় তাকে চুরমার করে দিল। “জীবন” নামের এক হিংস্র অস্তিত্বের সম্মুখীন হলো সে । এই হিংস্র জিনিসটাকে বধ করার সুবুদ্ধি হবার সাথে সাথেই তার মাথায় ঢুকে আরেক কুবুদ্ধি। হঠাৎ করেই ঘর থেকে পালায়। গ্রাম ছেড়ে টোকিওর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দাড়াতে হবে নিজের পায়ে। টোকিও পৌছে সাক্ষাৎ হয় নানা কিসিমের weirdo দের সাথে। আর এইসব অস্বাভাবিক প্রাণীরা একত্রিত হয়ে যখন নানা তরিকায় জীবিকা নির্বাহের সন্ধান চালানো শুরু করলো, হাস্যকর সব ঘটনাও অবতীর্ণ হতে থাকল।
মাঙ্গার আর্ট সুন্দর, পরিচ্ছন্ন। বিশেষ করে এই মাঙ্গাকার খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা চেহারা আঁকার দৃশ্যের ভক্ত হয়ে গেছি। ৪৪ চাপ্টারের কাহিনি আগেই শেষ। সম্প্রতি ইংলিশ অনুবাদ সমাপ্ত হয়েছে। তাই আপনার হাতে সময় কম থাকলে, নিখাদ বিনোদন পেতে চাইলে আজই শুরু করে দেন Saltiness!
 
 

Maquia: When the Promised Flower Blooms [মুভি রিভিউ] — Md. Anik Hossain

Iorph – এক পৌরাণিক জাতিবিশেষ। অন্য মানুষদের থেকে যারা একটুখানি আলাদা। স্বাভাবিকের থেকে যারা বাঁচে অনেক বেশি বছর। তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিও তাই ঘটে খুবই ধীরে ধীরে। ফলে শত শত বছর যাবত্ তারা যেন ধরে রাখে নিজেদের তারুণ্য। মানব সভ্যতা থেকে দূরে পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা প্রত্যন্ত কিন্তু অপার সৌন্দর্যে ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রামে তাদের বসবাস। চিরযৌবনা এ জাতির জীবন আবর্তিত হয় “হিবিওল” নামের তাঁতের এক বিশেষ মিহি কাপড় বুনে। তাঁতের বুননে বুননে তাদের ইতিহাস, ধর্মবিশ্বাস ,সংস্কৃতি ফুটে উঠে। নিজেদের মনের ভাষা পর্যন্ত এই কাপড়ের মাধ্যমে আদান-প্রদান করার কৌশল রপ্ত করেছে তারা। আর তাদের ই একজন Maquia. লাজুক, একাকী এতিম কিশোরী মেয়ে। গ্রাম প্রধানের আশ্রয়ে থাকে আর তার ছোটো-খাটো কাজে সাহায্য করে। একাকীত্বে ভোগা মাকিয়া দেখতে চায় এই জগত্টাকে, অনুভব করতে চায় অকৃত্রিম ভালো লাগার। কিন্তু গ্রাম প্রধান তাকে নিষেধ করে বাইরের জগতের মানুষের সাথে মিশতে, তাদের ভালোবাসতে। কারণ সেই মানুষগুলো মরে যাবে দীর্ঘজীবি Iorph দের তুলনায় অনেক আগেই। তখন প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে যাবে এক এক করে। অথচ Iorph রা থেকে যাবে প্রায় অনন্ত সময় ধরে। হারানোর এই ব্যাপারটি শুধু কষ্টই দিয়ে যাবে… সৃষ্টিকর্তা যেন Iorph দের এভাবেই তৈরি করেছে।
 
মাকিয়া ও অন্যান্য Iorph রা সুখে শান্তিতেই বাস করছিল। ছবির মতো সুন্দর জনপদ আর আছে অপূর্ব কাপড়। যার কদর চারিপাশজুড়ে। কাপড় বিক্রি করেই মিটে যায় পেশা নির্বাহের কাজ। কিন্তু কোনো সুখ চিরস্থায়ী নয়। Iorph দের এই চিরযৌবনের দিকে নজর পড়ে Mezarte রাজ্যের রাজার। সেই কুনজরে এক রাতে পুরো Iorph দের গ্রামে নেমে আসে ধ্বংসলীলা। অধিকাংশ Iorph মারা যায় ড্রাগনের পিঠে চরে আসা রাজকীয় বাহিনীর হাতে, নয়ত ধরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীতে। কিন্তু কোনো এক ভাবেই হোক , মাকিয়া সেই নারকীয় অবস্থা থেকে বেঁচে যায় আর এক বনে এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু পুরো গ্রামকে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়ে মাকিয়া….. আর উঁচু থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার জন্য উদ্যত হয়, ঠিক তখন ই বনের অদূরে ভেসে ওঠে এক বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। হতোদ্যম মাকিয়া এগিয়ে যায় কান্নার উত্সের দিকে, আর এক তছনছ করা বসতিতে খুঁজে পায় একটি শিশুকে… মৃত মা শেষপর্যন্ত তার জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে কলিজার টুকরো ঐ বাচ্চা শিশুটিকে। প্রথম নজরেই ছোট্ট এই বাবুর প্রতি মমতা অনুভব করে মাকুয়া। তারপর উদ্ধার করে খুঁজে পাওয়া অনাথ এই শিশুকে সাথে করে নিয়ে যায় আরেক অনাথ মাকিয়া। অতঃপর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে মাকিয়া খুঁজে পাওয়া সেই বাবুকে নিজের সন্তানের মতো বড় করতে থাকে। কিন্তু সেই মা নিজেই মনের দিক থেকে শিশুশুলভ, সে কীভাবে আরেক শিশুকে লালন পালন করবে? তারচেয়েও বড় কথা – একদিন এই বাচ্চাটি বড় হবে, নিজের সন্তানের বাবা হবে, বৃদ্ধ হবে, একদিন চোখের সামনেই মারা যাবে। কিন্তু শত শত বছর ধরে বাঁচতে সক্ষম Maquia চিরদিন দেখতে একই রকম থেকে যাবে, দিন পেরিয়ে বছর যাবে, তবুও বাহ্যিক কোনো পরিবর্তন তাকে ছুঁতে পারবে না। একদিন সে বেঁচে থাকবে, কিন্তু প্রিয় সন্তান আর অন্যেরা তাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যাবে। মূলত এমন বাস্তবতাকে ঘিরেই এগিয়ে যায় এই বছর মুক্তি পাওয়া এনিমে মুভি “Maquia : When the Promised Flower Blooms” এর কাহিনী।
উপরের অংশটিতে মূলত মুভি নিয়ে একটু জানানোর চেষ্টা করেছি, আরো ছোটো করে লিখতে চেয়েছিলাম তবে সহজ করে বর্ণনা করতে গিয়ে একটু বড় হয়ে গেল। তবে মুভির পটভূমি নিয়ে আজকের লেখাটা নয় প্রধানত। ব্যক্তিগত বিচার-বিশ্লেষণ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা নিয়ে অল্প-স্বল্প লিখব নির্দিষ্ট করে বললে।
 
মুভিটা সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড অঞ্চলে এনিমে ডিস্ট্রিবিউটর Madman Entertainment এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে, সেখানে মুভির ট্রেইলারটা দেখে বড়ই সন্তুষ্ট হয়েছিলাম। তয় অনলাইনে তখনো আসেনি তাই সেসময় দেখতে পারিনি।এই ৬-৭ মাসে প্রায় ভুলেই গেছিলাম এটার কথা। কিন্তু দিন কতক আগে দেখলাম ইতোমধ্যেই অনলাইনে এসে গেছে! কেন যেন এতদিন চোখে পড়েনি এটা। দীর্ঘসূত্রিতা না করে তত্ক্ষণাত্ নাফিয়ে ফেলি পুরো মুভি। আর আজ শুক্রবার বন্ধের সকালে নাশতা খাওয়ার পরই দেখতে বসে যাই। প্রায় দু’ঘন্টার এক চমত্কার মুভি উপভোগ করলাম তা নিঃসংকোচে বলা যায়।
 
 
প্রথমত, মুভির visual ছিল এক কথায় দারুণ! P.A. Works কে ধন্যবাদ দিতে হয় এজন্য। তবে ক্যারেক্টার ডিজাইনগুলো কোনো এক কারণে খুব বেশি আকর্ষণ করেনি আমাকে। বিশেষত মাকিয়া এর ডিজাইন। হতে পারে চিরায়ত চোঁখা চোঁখা আকৃতির মুখ দেখতে দেখতে গোলগালা ডিজাইনের সাথে মানিয়ে নিতে পারিনি। কিন্তু এটুকু বলতে পারি কিছু কিছু দৃশ্যে সাইডের দিক থেকে মাকিয়া এর চেহারা খুব বেমানান ছিল। এক্ষেত্রে সম্ভবত উন্নতি করার সুযোগ ছিল। যাই হোক, সব দিক বিবেচনায় আমি ৯/১০ দিব এনিমেশন আর্টওয়ার্ক বিভাগে। এই বিভাগটি যদিও একান্ত ব্যক্তিগত ভালো লাগার জিনিস। হতে পারে ওভাররেটিং করছি, তবে মনে করি কেউ আশাহত হবেন না মুভির এনিমেশন দেখে।
 
দ্বিতীয়ত, মুভির পটভূমি ছিল আগ্রহজাগানিয়া, কাহিনী প্রবাহও বেশ স্মুথ লেগেছে। এখানে একটা বিষয় বলে রাখি, টাইম স্কিপের একাধিক দৃশ্য ছিল। যার বেশিরভাগ খাপ ছাড়া লেগেছে। টাইম স্কিপগুলো আরো ভালো করতে পারত।একেবারে খারাপ লেগেছে তা নয়, কিন্তু আহামরি ছিল না। ডিরেক্টর ও একইসাথে রাইটার হিসেবে মারি ওকাদা এর প্রথম মুভি ছিল এটি। আশা করি ভবিষ্যতে আরো জোড় দিবেন টাইম স্কিপিং এর ব্যাপারটাতে। সামগ্রিকভাবে এই ডিপার্টমেন্টে ৮/১০ দিব।
 
তৃতীয়ত, ইমোশনাল ব্যাপার নিয়ে আমার আলাদারকম দূর্বলতা আছে। আর এক্ষেত্রে মুভির আবহ, চরিত্রগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া,বাস্তবতার নিরিখে মাকিয়া ও তার ছেলের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট টানাপড়েন খুব বাস্তবসম্মত লেগেছে। প্রচন্ড রকম ইমোশনাল ছিল। মুভি শেষে চোখ ভিজে গিয়েছিল একদম। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই দূর্বল চরিত্রায়নও চোখে লেগেছে। কয়েকটা চরিত্রকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। রাজার সেনাপ্রধানের কথা এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে। এখানে আমি কোনো রেটিং দিব না কিছু সংগত কারণে।
 
চতুর্থত, মুভিতে গান না থাকলে হয় নাকি :v ? Ending সাউন্ডট্র্যাক টা অসাধারণ ছিল! একদিকে প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছিল পিয়ানোর বাজনায় সুরেলা কন্ঠের গানটা। অন্যদিকে চোখের কোণে অনবরত পানি ঝরছিল গানটা শুনে। কোনো এক শূন্যতা অনুভূত হচ্ছিল। যদিও বাকি মুভিতে উল্লেখ করার মতো আর কোনো গান বা এজাতীয় কিছু ছিল না। মোটমাটে ৮/১০ দিব মিউজিকে। আর হ্যা ভয়েস কাস্টিং কিন্তু ভালো লেগেছে খুব। মাকিয়া এর কন্ঠ যে কী মিষ্টি লেগেছে! বলে বোঝানো যাবে না।
 
সব দিক বিবেচনায়, ৯/১০ দিব ফাইনাল স্কোর হিসাবে (মুভিতে আমি এক ধাপ বেশিই রেটিং দেই অবশ্য)।
 
সবশেষে এটাই বলব, আমার মতে এটা ২০১৮ সালে বের হওয়া সবচেয়ে সেরা এনিমে মুভি। এটা হয়ত কোনো কিংবদন্তীতুল্য মুভি নয়, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ এনিমে মুভিগুলোর একটি নয় কিন্তু নিঃসন্দেহে চমত্কার একটা মুভি। মায়ের মমতা, সমাজ বাস্তবতা নিয়ে এরকম মুভি খুব বেশি আছে বলে বোধ করি না। যারা Wolf Children দেখেছেন এবং পছন্দ করেছেন, তারা খুব উপভোগ করবেন আশা করি। এত সুন্দর একটা মুভি অথচ এটা নিয়ে এনিমে গ্রুপগুলোতে সাড়া শব্দ নেই তেমন। ব্যাপারটি খুব হতাশাজনক। Kimi no na wa আর Koe no Katachi পরবর্তী কোনো মুভি নিয়েই কোনো হইচই দেখি না।
 
তো আপনারাও দেরী না করে দেখে ফেলুন “Maquia : When the Promised Flower Blooms”…..
 
একটা শেষ কথা , ফ্যান্টাসি-ড্রামার এই মুভি তে ন্যুডিটি, সেক্সুয়াল সিনারি নেই। ফলে পরিবার পরিজন সকলকে নিয়ে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার মতো আদর্শ এক মুভিটা।
 
তো আজ এটুকুই থাকুক।
Happy anime watching!

How to Fight [ওয়েবটুন রিভিউ] — Md. Anik Hossain

ভিডিও ব্লগিং বা Vlogging হাল আমলের তুমুল জনপ্রিয় জিনিস। বিশেষত ভিডিও আপলোড করে অর্থ উপার্জনের দুয়ার খুলে যাওয়ায় অনেকে জীবিকার পথ হিসাবেই বেঁছে নিয়েছে এটা। যা একটি বৈপ্লবিক ব্যাপার। ইউটিউব, বা চীনের উইবু এর মতো প্লাটফর্ম এই বিপ্লবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। শুধু যে অর্থ আয়ের রাস্তা তা নয়, রীতিমতো সেলিব্রেটি বনে গেছে অনেকে ভিডিও ব্লগিং করে। তো ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে পয়সা, খ্যাতি অর্জন নিয়ে চমৎকার একটা ওয়েবটুন/মানহোয়া রয়েছে। নাম How to Fight.
 
☆কাহিনী সারসংক্ষেপ✰
হবিন এক গরিব হাই স্কুল পড়ুয়া ছেলে। দুর্বল হবিনের উপর সহপাঠীদের bullying চলে। চুপচাপ সহ্য করে গেলেও একদিন সহ্যের বাধ ভেঙে একজনের সাথে মারামারি লেগে যায়। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এই মারামারির দৃশ্য লাইভ ভিডিও আকারে আপলোড হয়ে যায়। আর এতেই সে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে উঠে! এরপর সেই ভিডিও কে কাজে লাগিয়ে নতুন চ্যানেলকে আরো জনপ্রিয় করার মনস্থির করে হবিন। যাতে প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহ যুগিয়েছে টাকা আয়ের বাসনা। সিদ্ধান্ত নেয় মারামারির ভিডিও আপলোড করেই চ্যানেলটা গড়ে তুলবে। কিন্তু দুর্বল ছোট্টখাট্টো হবিন এর সাথে আর যাই হোক মারামারির ব্যাপারটা যায় না। তাই ইউটিউব থেকেই ঘরোয়া উপায়ে মারামারি শিখার টিউটোরিয়াল দেখে ভ্লগিং করার খোঁজ চালায় সে। এরপর যা হয় তা বললে স্পয়লার হয়ে যাবে মনে হয়। তাই বেশি কিছু বললাম না।
মানহোয়ার আর্ট খুব নজরকাড়া। মুখের অভিব্যক্তিগুলো তো দেখার মতো। উদাহরণ হিসাবে ৩য় ছবিটি দেখুন। চরিত্রগুলোর বিকাশ বেশ ভালো লাগছে এখন পর্যন্ত। মানহোয়াটার মূল আকর্ষণ এটার মারামারির দৃশ্যগুলি। মজার ব্যাপার হলো, মারামারিতে বাস্তব মার্শাল আর্ট / স্পোর্টস এর বিভিন্ন রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। মার্শাল আর্ট নিয়ে আগা-মাথা কিছু না জানলেও মারামারিগুলো দেখতে চরম আকর্ষণীয় লাগে। সম্প্রতি Line Webtoon থেকে ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করা শুরু হয়েছে Viral Hit নামে। কিন্তু শুনেছি অনুবাদ সুবিধার না। PH Scans, Death Troll স্ক্যানলেশন গ্রুপের ব্যানারে ৫৮ টা চাপ্টার বের হয়েছে এখন পর্যন্ত। তাদেরটা পড়ে দেখতে পারেন।
অতিরিক্ত তথ্য- এই ওয়েবটুন এর স্রষ্টা এর আগে জনপ্রিয় Lookism সিরিজটা তৈরি করেছেন।
 
 

Soredemo Machi wa Mawatteiru/And Yet The Town Moves [রিভিউ] — Md. Anik Hossain

★কাহিনী সারসংক্ষেপ★
আরাশিয়ামা একটা বোকা মেয়ে, খাঁটি বাংলায় “মগা”। যেখানেই যায় সেখানেই ঝামেলা পাকায়। তবে নানা রকম রহস্য নিয়ে খুব আগ্রহ রয়েছে ওর। এক বুড়ির ছোট রেস্তোরাঁ / মেইড ক্যাফেতে কাজ করে। কিন্তু রেস্তোরাঁর ব্যবসার অবস্থা যাচ্ছেতাই। নিয়মিত গ্রাহক বলতে আরাশিয়ামার এক ক্লাসমেট…নাম তার সানাদা। আরাশিয়ামা আবার সানাদা সাহবের গোপন ক্রাশ। একদিন রেস্তোরাঁয় আরাশিয়ামার এক বান্ধবী তাৎসুনো আসে। আসার পর এখানকার ধ্বজভঙ্গ অবস্থা দেখে রেস্তোরাঁয় কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে ব্যবসার উন্নতি করা যায়। একইসাথে আরাশিয়ামার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হতে সুযোগটি লুফে নেয় সানাদা, সেও রেস্তোরাঁয় কাজ যোগ দেয়। অতঃপর রেস্তোরাঁয় তাদের প্রাত্যহিক হাস্যরসাত্মক কাজ, বিভিন্ন বেহুদা রহস্য উন্মোচন নিয়ে কাহিনী আবর্তিত হয়।
 
 
 
✴️মতামত ও সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা✴️
স্টুডিও Shaft এর আর্ট, এনিমেশন নিয়ে আলাদা করে দিছু বলার নেই। ওদের চকচকা আর্ট দেখলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়।
মূলত কমেডি সিরিজ হলেও অনর্থক মিস্ট্রিগুলো বেশ আকর্ষণীয় ছিল। আমার কাছে Hyouka এর পরে ছোট রহস্য উদঘাটনের দিক দিয়ে এই সিরিজটা সবচেয়ে চমৎকার লেগেছে। রহস্য বলতে আমরা যেমন কাঠখোট্টা সিরিয়াস জিনিস ভাবি, সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একরকম উপহাস করা হয়েছে এখানে। আমাদের রহস্যখোর নায়িকা আরাশিয়ামার চেহারাটা যেন তার চরিত্রের সাথে খাপে খাপ মিলে যায়। দেখলেই বোঝা যাবে বোকা একটা মেয়ে। কমেডির সাথে যথেষ্ট পরিমাণ রোমান্স এর স্বাদও পাওয়া গেছে সিরিজে। আরাশিয়ামা এবং সানাদার রসায়ন মন্দ ছিল না। এদিকে সময়ে সময়ে কমেডি ছাড়াও সুন্দর গুরুগম্ভীর মূহুর্ত ছিল। বিশেষত মালিক বুড়ির সাথে আমাদের নায়িকার অতীতের স্মৃতিগুলো বেশ মধুর লেগেছে।
এনিমের মিউজিক মুটামুটি বলা যায়। তবে এন্ডিং থিমটা দারুণ! Asobi Asobase সিরিজের কথা মনে আছে? অনেকটা ওরকম তবে Heavy metal(?) এর তুলনায় Soft rock গান :v (Ending link: https://www.youtube.com/watch?v=1k44tTuKKsg)
 
সিরিজটা দেখার সময় কখনো সময় নষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়নি। পেইসিং আমার মতে ঠিকাছে, বিরক্তি আসেনি।
কন্ঠাভিনয় এর মান ভালো ছিল। আলাদা করে আরাশিয়ামার গলার স্বরের কথা উল্লেখ করা যায়। খুব খুউব মজা লেগেছে শুনে…. সরল-সোজা বাচ্চা মানুষের মতো গলা। এ জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় কন্ঠাভিনেতা চিয়াকি ওমিগাওয়া কে।
 
✰রেটিং✰
অ্যানিমেশন-আর্ট : ৮.৫/১০ (এদিকটায় আমি একটু বিতর্কিত পরিমাণ ওভাররেটেড মনে হতে পারি)
প্রেক্ষাপট : ৭.৫/১০
কাহিনী : ৮.৫/১০
চরিত্রসমূহ : ৮/১০
মিউজিক : ৮/১০
কন্ঠাভিনয় : ৮.৫/১০
সামগ্রিকভাবে : ৮.৫/১০
 
সব মিলিয়ে দেখার মতো কিঞ্চিৎ underrated একটা এনিমে । আশা করি সকলের ভালো লাগবে।
 
 

I Sold My Life For 10,000 Yen A Year / Three Days of Happiness [মাঙ্গা রিভিউ] — Md. Anik Hossain

I Sold My Life For 10,000 Yen A Year
/
Three Days of Happiness
_______________________________________
 
একটা মানুষের জীবনের দাম কত ? কীসের বিনিময়ে আপনার জীবনের একেকটা বছর বেঁচা যেতে পারে ? আপেক্ষিক একটা বিষয় হতে পারে । যত আনন্দদায়ক হবে একটি বছর , সেটির দাম হয়ত তত বেশী । আরেকটু স্পষ্ট করে জিজ্ঞাসা করলে, আপনার সেই একেকটা বছরের “টাকায়” মূল্য কত হতে পারে ? কল্পনা করুন আপনার অবশিষ্ট জীবনকাল বিক্রি করা সম্ভব । এমন একটা দোকান আছে যেখানে বছর হিসাব করে আপনি ইচ্ছামতো আপনার আয়ুষ্কাল বেঁচতে পারবেন নগদ অর্থের বিনিময়ে । জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ আপনি । সামান্য রুটি রুজি করতে হিমশিম খাচ্ছেন । অভাবের তাড়ণায় বই-পত্র , গানের ক্যাসেট সব বিক্রি করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে । বাকি ভবিষ্যত্টা একেবারেই অন্ধকারাচ্ছন্ন । এই বাকি জীবনটা রেখে তবে লাভ কি ? এই অনিশ্চিত্ , লক্ষ্যহীন , অপদার্থ জীবনটার কয়েক বছর বিক্রি করে যদি কিছু টাকা পাওয়া যায় তাহলে খারাপ কি ? এমন ই ভাবনা থেকে কুসুনোকি নামক বিশ বছরের এক যুবক সন্ধান পায় এমন একটি দোকানের, যেখানে মানুষের আয়ুষ্কাল , সময় এবং স্বাস্থ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। যেখানে গিয়ে সে তার অবশিষ্ট জীবনের সবটাই বিক্রি করে দেয়, মাত্র ৩মাস বাদে । বছর প্রতি কয় টাকার বিনিময়ে জানেন ? মাত্র ১০ হাজার ইয়েনের বিনিময়ে । একইসময় সে তার অবশিষ্ট ৩ মাসে যেন কোন সমস্যা তৈরি না করে, সে জন্য দোকান থেকে পাঠানো হয় মিয়াগি নামের এক মেয়েকে । যে কিনা গ্রাহকের পর্যবেক্ষক হিসাবে সর্বদা তার পাশে থাকবে, সে যেখানেই যাক না কেন । এই ৩ মাসে কুসুনোকি নিজের জীবনের কতটুকু মূল্য ও আনন্দ খুঁজে পাবে, অতীত জীবনের ভুল ও অপ্রাপ্তিগুলো কতটা আবিষ্কার করতে পারবে এক সহচারীর উপস্থিতিতে, তা নিয়েই আবর্তিত হয় কাহিনী ।
মাত্র ১৮ চাপ্টারের এই চমত্কার পটভূমিতে তৈরি মাঙ্গাটি আপনাকে যেমন জীবনের মূল্য শেখাবে… তেমনি শেখাবে হাজারো অপ্রাপ্তি , নিরানন্দ উপেক্ষা করে অল্প, কিন্তু মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতিকে জীবিকা করে সন্তোষজনক এক পরিণতি বরণ করতে।
সুন্দর পটভূমির আড়ালে কিছু সীমাবদ্ধতা মাঙ্গাটিতে দেখতে পেয়েছি । মাঝে মাঝে কাহিনীর গতিশীলতা হারিয়ে ফেলছিল । আর্ট খারাপ ছিল না মোটেও, তবে অমায়িক এই প্লটের তুলনায় একটু সাদামাটা লেগেছে । চরিত্রের পরিমাণ এমনিতেই অত্যন্ত কম, আবার মূল চরিত্র বাদে বাকি কারো অতীত নিয়ে সেভাবে কিছু দেখানো হয়নি । হয়ত আরেকটু ভালোভাবে তাদের অতীতগুলো তুলে ধরলে আরো ইমোশনাল বানানো যেত গল্পটা ।
তবে মোদ্দাকথা , প্রত্যেক কে বলব মাঙ্গাটি পড়ে দেখতে । অত্যন্ত আবেগপূর্ণ , চিন্তা জাগানিয়া সিরিজটি এক বসাতেই পড়ে ফেলতে পারবেন । হয়ত আমার মতো আপনারাও জীবনের সুখ দূঃখের সম্পর্কে অন্যরকম এক অর্থ খুঁজে পাবেন !?
 
(ব্যক্তিগত রেটিং):
* প্রেক্ষাপট: ৯.৫/১০
* গল্প: ৮/১০
* আর্ট: ৮/১০
* চরিত্রসমূহ: ৮.৫/১০
চূড়ান্তভাবে: ৯/১০
 

?????? ??????? / ???????? ??????? [মাঙ্গা পরিচিতি] — Md. Anik Hossain

?????? ??????? / ???????? ???????
চ্যাপ্টারঃ ৫১+ (চলমান)

 
ড্রাগন শিকার নিয়ে পপ-কালচারে অসংখ্য সিনেমা, সাহিত্য, এনিমেশন তৈরি হয়েছে, মাঙ্গাও রয়েছে অনেক। রূপকথার গল্পে অত্যাচারী ড্রাগনদের থেকে জনপদ রক্ষায় এক দল সাহসী লোক ড্রাগন শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে – এ তো পুরান কাহিনী। তবে যে কারণে ?????? ??????? অন্য সব ড্রাগন শিকার বিষয়ক সিরিজ থেকে আলাদা, সেটা হলো ড্রাগন শিকার জিনিসটা অত্যন্ত বাস্তবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। সিরিজটি এমন এক সময়ের কথা বলে যখন মানুষ জেপেলিন/এয়ারশিপে করে আকাশে চষে বেড়ায়। ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত সব কিছু চলে আমাদের বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দেখতে পাওয়া এয়ারশিপের মাধ্যমে। বলা যায় উক্ত দুনিয়ায় সমুদ্রগামী জাহাজের স্থান দখল করেছে এয়ারশিপ। আর এসব এয়ারশিপে করে আকাশে ভেসে বেড়ানো কিছু মানুষ দানবাকৃতির ড্রাগন শিকার করে, যেই শিকারীরা কিনা “ড্রেকার” নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ড্রাগনগুলো কিন্তু শিকার করার পরে ফেলে দেয়া হয় না, ড্রাগনের মাংস এই দুনিয়াতে অত্যন্ত উপাদেয় খাবার। শুধু মাংস নয়, ড্রাগনের তেল থেকে হাড়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা হয় হরেক রকম মূল্যবান জিনিস তৈরিতে। এমন এক ড্রাগন শিকারী জাহাজ ???? ???? ও তার নাবিকদের নিয়ে লেখা মাঙ্গা ?????? ???????। মাঙ্গাটি কিছু দূর পড়লে বুঝতে পারবেন আমাদের পৃথিবীর তিমি শিকারের অনুরূপ হচ্ছে এই ড্রাগন শিকারের ব্যাপারটা। মাঙ্গাকা প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের তিমি শিকার শিল্প থেকে মাঙ্গাটি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন খুব সম্ভবত। মাঙ্গাটির বোনাস আকর্ষণ হলো ড্রাগন শিকারের পর ড্রাগন দিয়ে তৈরি নানা পদের খাবারের বর্ণনা! যারা ??????? ????? এবং ????????’? ??????? ???? ????????? (?????? ?????) মাঙ্গা দুইটি পড়েন, তারা এই ব্যাপারটি খুব পছন্দ করবেন। যদিও রান্নার প্রণালীগুলো এই দুটির মতো এত বিশদভাবে দেয়া হয় না এখানে, তবু খুব তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি পাবেন।
 
 
মাঙ্গার অন্যান্য বিষয়ের কথা বললে আঁকার মান বেশ ভালো। চরিত্রগুলোর মাঝে প্রায় সবার অতীত নিয়ে অল্প-বিস্তর আলোচনা করা হয় প্রত্যেক আর্কে। চরিত্রগুলো খুব গভীর তা বলা যাবে না, তবে একদম খারাপ লাগার মতো নয়। অন্যদিকে মাঙ্গার কাহিনী খুব সাবলীল। কোনো ধুম ধারাক্কা মারামারি, থ্রিল পাবেন না। সমুদ্রগামী জেলেদের জীবন যেমন কাটে, সেটার ভিন্ন এক সংস্করণ বলতে পারেন। তবে World building বেশ মনোমুগ্ধকর লেগেছে আমার কাছে। এ বছর ???????? ??????? এর একটা এনিমে সিরিজ বেড়িয়েছে নেটফ্লিক্সের ব্যানারে। অবশ্য আমি দেখিনি। মাঙ্গায় সমস্যা থাকলে ওটা দেখার চেষ্টা করতে পারেন। রেটিং দেখলাম (7.1/10).

Genshiken [রিভিউ] — Md. Anik Hossain

?????????

সম্প্রতি দেখে ফেললাম ওতাকু সংস্কৃতি নিয়ে তৈরি ????????? নামক সিরিজটি। ৩ টি সিজনে বিভক্ত সিরিজটির প্রেক্ষাপট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ও তার সদস্যদের কেন্দ্র করে। ?????? ?????? ??????? ????? ??????? বা সংক্ষেপে গেনশিকেন নামক ক্লাবটিতে সদস্যরা মূলত এনিমে, মাঙ্গা, গেইম , কসপ্লে, হেন্তাই এবং যাবতীয় ওতাকু সম্পর্কিত জিনিস নিয়ে আলাপ আলোচনা করে । গল্পের শুরু হয় ভার্সিটিতে সদ্য ভর্তি হওয়া কেঞ্জি সাসাহারা নামক ছেলেকে নিয়ে। বেশ নম্র ভদ্র স্বভাবের হলেও তার ইচ্ছা জাগলো বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে ওতাকু জগতে একটু প্রবেশ করে দেখবে । গেনশিকেনের খোঁজ পেয়ে ক্লাবটিতে সানন্দে সদস্য হয়ে গেল সে। একইসাথে মাকোতো কোসাকা নামক আরেক ছেলে তার সাথে ক্লাবে যোগ দেয়। কোসাকা দৈহিকভাবে বেশ সুদর্শন । একইসময় সাকি কাসুকাবে নামক মেয়ে প্রথম দেখাতেই কোসাকা এর প্রেমে পড়ে যায় এবং অদ্ভুতভাবে দুইজনে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় এই অল্প সময়ে । কিন্তু ওতাকু কালচারকে অপছন্দ করা কাসুকাবে তার প্রেমিকের গেনশিকেন ক্লাবে যোগদানের ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখলো না। তবু বাধ্য হয়ে ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত চলতে থাকে তার । একই সময় ক্লাবের পুরাতন সিনিয়র সদস্যদের সাথে সদ্য যোগ দেয়া এই ৩ জনের নানা হাসি ঠাট্টা, খোঁচাখুচি চলতে থাকে এবং এভাবে দিনকাল অতিবাহিত হতে থাকে।

মতামত ও পর্যালোচনা:
এই সিরিজের সবচেয়ে বড় দিকটা আমার মতে এর বাস্তবতা এবং ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট। ভার্সিটির শেষ বছরগুলোতে সবার চাকরি খোঁজা নিয়ে ব্যস্ততা ও হতাশা, প্রেমের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সঙ্গীর ভালো মন্দ লাগার ব্যাপারটা না চাইতেও মেনে নেয়া ও একটা সময় তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া, পেশাগত জীবনকে আলিঙ্গন করতে যেয়ে পুরনো সুখ স্মৃতিগুলো বিসর্জন দেয়ার মতো দিকগুলো ফুটে এসেছে। অন্যদিকে প্রায় প্রতিটি মূল চরিত্রকে বেশ ভালো রকম স্ক্রিন টাইম দিয়ে তাদেরকে গভীরতা দান করা হয়েছে । প্রত্যেকের দৃষ্টিকোণ থেকে একে অপরকে দেখানো হয়েছে। ধীরে সুস্থে সময় ও যত্ন নিয়ে এদের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়া গড়ে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে সিরিজের আরেকটা ভালো দিক ছিল এর গল্প। স্লাইস অফ লাইফ হিসাবে গল্পের পেসিং নিয়ে এ ধরনের সিরিজে অনেক সময় সমস্যা দেখা যায়, বোরিং লাগে। কিন্তু সিরিজটিতে সেরকমটা লাগেনি মোটেও। যতটুকু ধীর ছিল, সেটা চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে প্রয়োজন ছিল।
এতক্ষণ যা যা বললাম সেগুলো মূলত প্রথম ২ সিজনের ব্যাপারে বলেছি। ৩য় সিজন থেকেই শুরু যত বিপত্তি। নতুন চরিত্রগুলোর মাঝে আগের মতো সেই চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল না। ক্লাবের কাজগুলো খুব রসকষহীন লাগছিল। গল্প Repetitive হয়ে যাচ্ছিল। পুরো গল্প বলতে গেলে শুধু ২ টা চরিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল যেটা প্রথম ২ সিজনের পুরো বিপরীত। তবে মাদারামে এর চরিত্রটার এক্ষেত্রে প্রচুর বিকাশ ঘটে। ক্লাবের সবচেয়ে “বড় ওতাকু” এই সময় ম্যাচিউরিটি অর্জন করে। মাদারামে এর এই পরিপক্বতা দেখার মতো ছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পুরো ৩য় সিজন মানে ????????? ??????? একটা আক্ষেপের নাম ছিল আমার কাছে। ক্লাবের পুরো ফোকাস হঠাৎ করে BL আর cross-dressing এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। প্রথম ২ সিজনে যেভাবে ছোটো থেকে বড় সকল চরিত্রের সুন্দর ডেভেলপমেন্ট দেখা গেছে, সেই তুলনায় ৩য় সিজনে মন ভরেনি। বিশেষত কুচিকি নামক চরিত্রটাকে তো ব্যবহার ই করা হয়নি ঠিকমতো। অল্প যেটুকু স্ক্রিনটাইম দেয়া হয়েছে কুচিকি কে, তা অযথা কাজকারবারে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ ভারী রকম character based এই সিরিজে কুচিকি কে খুব ভালো করে ব্যবহারের সুযোগ ছিল।
সে যাই হোক। ৩য় সিজনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল মাদারামে এর চারিত্রিক বিকাশ। সম্ভবত, মাদারামে এর জন্যই পুরো ৩য় সিজনটা বানানো হয়েছে এক হিসাবে। পুরো সিরিজের সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র হিসাবে মন জয় করে নিয়েছে।
সর্বোপরি, ওতাকুদের নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ অনেকগুলো সিরিজ দেখেছি। তবে নিঃসন্দেহে ????????? এদের মধ্যে সেরা। ৩য় সিজনের কথা বাদ দিলে চমৎকার একটা সিরিজ। এনিমে, মাঙ্গা নিয়ে আমরা যারা সারাদিন মেতে থাকি, তাদের জন্য সিরিজটা দেখা আবশ্যক আমার মতে।

রেটিং
প্লট: ৮/১০
গল্প: ৮/১০
চরিত্রায়ন: ৮.৫/১০
এনিমেশন-আর্টওয়ার্ক: ৭.৫/১০ (আগের দিনের সিরিজ। সেই হিসাবে ভালোই)
সামগ্রিকভাবে –
সিজন ১+২: ৮/১০
সিজন ৩: ৭.৫/১০ (মাদারামে এর জন্য ০.৫ বাড়িয়ে দিলাম। এছাড়া ৭/১০ এর বেশি দিতে মন সায় দিচ্ছে না। বলে রাখা ভালো, আমার ৭ রেটিং হয়ত অন্যদের ৬.৫ বা ৬ এর সমান হবে ?)