সামুরাই চ্যাম্পলু [রিভিউ] — Rafiul Alam

Samurai Champloo

“এইটা না এদো পিরিয়ডের কাহিনী? নামের মধ্যেই সামুরাই আছে যে জিনিসে সেটা কিভাবে ওয়েস্টার্ন হয়?”
ওয়েল টাইটেলেই ভেল্কিবাজি। চ্যাম্পলু শব্দের বাংলা অর্থ হল গুলানো । তাই এনিমেটি এদো পিরিয়ডের পটভূমির, কিন্তু মডার্ন কালচার আর হিপহপ ইনফ্লুয়েন্সড। বলা যায়, দা ভেরি ডেফিনিশন অফ ইউনিক এনিমে। চ্যাম্পলু এমন একটি এনিমে, যেখানে তরবারির কোপাকুপিতে লিটারেলি রক্তের বন্যা বয়ে যায়, কিন্তু তাতেও স্ক্রিনের থেকে চোখ সরাতে পারবেন না। ভায়োলেন্স, এক্সপ্লিসিটনেস ছাড়াও অনেক বেশি ম্যাচুর থিমের শো মনে হয়েছে। সামুরাই চ্যাম্পলু অনেক দিক থেকেই কাউবয় বিবপের অনেক কাছের আত্নীয়। যার মূল কারণ, উভয়েরই ডিরেক্টর ছিলেন ওয়াতানবে শিনোচিরো। আনিমেটি বর্তমানে বিলুপ্ত ম্যানগ্লোব স্টুডিও থেকে ২০০৪-৫ সালে এয়ার হয়। ২৪ মিনিটের মোট ২৬ টি এপিসোড। সম্পূর্ণ জাপানি সেটাপের গল্প হলেও সাবের চেয়ে ডাব বেশি ভালো লেগেছে।

Synopsis:
ঘটনার অন্যতম প্রোটাগনিস্ট ১৫ বছরের ফু কাসুমি একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েট্রেস হিসেবে কাজ করে। একদিন সেই রেস্টুরেন্টে গুন্ডা পান্ডার দল ইচ্ছামত পেটপূজা করতে আসে। অবস্থা খারাপ হয় যখন ভুলক্রমে ফু একজনের মুখের উপর চা ফেলে দেয়। গুন্ডার দল ফু এর উপর চড়াও হয়, তার আঙুল কেটে ফেলবে বলে!
এখন ফুকে ফ্রি ডাম্পলিংয়ের চুক্তিতে বাঁচাতে আসে তরবার গুরু মুগেন। ব্রেকডান্সের তালে একাই গুন্ডার দলকে “কুপিয়ে” রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে দেয় সে। সেখানে থাকা জমিদারের (গভর্নর) ছেলেকেও ভয় পায় না সে। কিন্তু মারামারি আরও খারাপ আকার ধারন করে যখন সেখানে ঢুকে আরেক তরবার গুরু সামুরাই জিন। মাঝখান দিয়ে এক গুন্ডা রেস্টুরেন্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগলে সবাই জানে বাঁচলেও মারা যায় সেই জমিদারের ছেলে। ফলে সরকারি লাঠিয়াল বাহিনী জিন ও মুগেনকে বন্দি করে পরদিন পাব্লিক এক্সিকিউশন করার জন্য। তো সেই রাতে, তাদের বন্দিশালায় ফু এর আগমন ঘটে। ফু চুক্তি করে যে সে তাদেরকে পালানোর জন্য সাহায্য করবে, বিনিময়ে তাদের একজন সামুরাইকে খুজে দিতে হবে। পরদিন লংকাকান্ড বাধিয়ে জিন আর মুগেন এক্সিকিউশন থেকে পালায়। কিন্তু ফু তাদের পিছু ছাড়ে না। সে তার চুক্তি অনুযায়ী সেই সামুরাইকে খুঁজার জন্য মুগেন আর জিনকে শক্ত করে ধরে। মজার ব্যাপার হল, ফু সেই সামুরাই সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। শুধু জানে যে সেই সামুরাই থেকে নাকি সূর্যমূখী ফুলের ঘ্রাণ বের হয়। কিন্তু জিন আর মুগেন নিজেদের ফাইট নিয়ে ব্যস্ত। কয়েন দিয়ে টস করে ফু তাদের মারামারি থামায়। এবং চুক্তি হয়, সেই সূর্যমুখী সামুরাই কে না পাওয়া পর্যন্ত জিন আর মুগেন নিজেদের মাঝে ফাইট করতে পারবে না। অগত্যা মুগেন আর জিন, ফু এর সূর্যমুখী সামুরাই খোঁজে তার সহযাত্রী হতে রাজি হয়। শুরু হয় সূর্যমুখী সামুরাই অভিযান। এরপরের ঘটনাগুলো মূলত এপিসোডিক, কিন্তু মূল কাহিনী ঠিকই ফোকাসে থেকে আগাতে থাকে। এক্সাইটিং একশন সিনের সাথে ক্যারেক্টার ব্যাকস্টোরি রিভিল হতে থাকে। ফলে কয়েক এপিসোড পর চাইলেও ড্রপ দেয়া যায় না।

Theme setup, Animation and Music:
পটভূমি কেমন? সেটার এক লাইনের উত্তর হবে, “শিনোচিরোর চোখে এদো পিরিওড।”
এমন এক জাপানকে দেখানো হয়েছে, যেখানের মানুষজন চালচলনে উনিশ-বিশ শতকের কিন্তু মনের দিক থেকে ২১ শতকের। খুব লক্ষ করলে মডার্ন মিউজকের ইস্টার এগ ধরতে পারবেন। চ্যাম্পলুর আর্টওয়ার্ক, এনিমেশন বেস্ট অফ ২০০৪-৫। ব্যক্তিগতভাবে সেই সময়ের নন আই ক্যান্ডি কিন্তু রিয়েলিস্টিক মুভমেন্টের এনিমেশন আমার অনেক প্রিয়। আর চ্যাম্পলু সেই ধরনের আনিমেশনের ব্রান্ড এম্বাসেডর। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিককে সব দিক থেকে এক্সপ্লয়েট করা হয়েছে। এবং অবশ্যই তাতে হিপহপের ইনফ্লুয়েন্স লক্ষণীয় ছিল। তবে আমার প্রিয় হল এপিসোড ১৪ এর রিয়ুকিউয়ান মিউজিক, অবোকুরি ইউমি ট্র্যাকটি। মিউজিকের দায়িত্বে ছিলেন জাপানিজ হিপহপ গুরু, রেকর্ড প্রোডিউসার জুন সেবা (নুজাবেস)। তার করা এনিমের ওপেনিং ট্র্যাক, ব্যাটলক্রাই, আমার শোনা বেস্ট ওপেনিং গুলার একটি। মিনমির গাওয়া এন্ডিং গানটাও বার বার শোনার মত।

Characters setup:
১৫ বছরের হাসিখুশি মেয়ে ফু, রাফ এন্ড টাফ মুগেন এবং ঠান্ডা মাথার জিন, এই ত্রয়ীর এডভেঞ্চার নিয়েই সামুরাই চ্যাম্পলু। এপিসোডিক এনিমে বিধায় সাইড ক্যারেক্টরের অভাব নেই। “ব্যাড গাই” বা “গুড গাই”, যে যাই হোক না কেন, প্রতেকটি ক্যারেক্টার ডিজাইন ইউনিক। শুরুর থেকেই সবার আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো অনেক বেশি স্পষ্টভাবে নজরে আসবে। একই সাথে চরিত্রগুলোর একে অপরের সাথে সম্পর্কের বিল্ডাপ দেখানো হয়েছে।
ফাইনালি আমি বলব, সামুরাই চ্যাম্পলু সব দিক থেকেই ইউনিক একটি এনিমে যা সব রুচির দর্শকের কাছেই ভালো লাগবে। কারো দেখা মাস্টারপিস এনিমের লিস্টে চ্যাম্পলু না থাকার সবচাইতে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা সম্ভবত “সে চ্যাম্পলু দেখে নি”।

Opening track:

https://www.youtube.com/watch?v=OobUV9q0aDA

OST Playlist:

https://www.youtube.com/watch?v=yS6uWWrjf8c&list=PL3E1DD4F30F9D8923

Overall Rating :
MyAnimeList.net: 8.5/10
IMDb: 8.7/10
My Rating : 9.5/10

দেনপা তেকি না কানোজো (Denpa Teki na Kanojo) রিভিউ — Rafiul Alam

Denpa Teki na Kanojo

এনিমেটির টাইটেল ইংরেজি করলে হয়, ‘electromagnetic girlfriend’. শুনতে অদ্ভুত শোনালে রাইটার সার্থক। অদ্ভুত ধরনের স্লাইস অফ লাইফ/ থ্রিলার জানরার এনিমে এটি। অনেকগুলো দিক থেকে আমার অনেক প্রিয়। তার একটি হল “ক্রাফটিং”। মাত্র ২ টা ৪৫ মিনিটের এপিসোডে যে চমৎকারভাবে গল্প সাজিয়ে একাধিক টুইস্ট ডেলিভারি করেছে, তা সত্যিই উঁচু মানের প্ল্যানিং এর ফসল। ব্রেইনস বেইস স্টুডিও থেকে ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতে আসে প্রথম পর্ব, ডিসেম্বরে দ্বিতীয়টি।

Synopsis: বৃষ্টিভেজা রাত, চেহারায় রক্তের ছিটাসহ এক উভ্রান্ত তরুণ, *ফ্ল্যাশকার্ড*, একটি বৈশিষ্ট্যবিহীন ম্যানিকুইন। *ফ্ল্যাশকার্ড*। এবার কোন স্কুলের ছাদে মারামারি হচ্ছে। একাই দুইজনকে কুপোকাত করল যে রাগচটা ছেলেটি, তার নাম জু’উযাওয়া জু। জু তার লকারে একটি চিঠি পেল, একজন তার সাথে দেখা করতে চায়। চিঠির প্রেরক ওচিবানা আমে নামের চোখ ঢাকা চুলের অদ্ভুত এক মেয়ে। জুর সাথে দেখা হলে সে বললো আগের জন্মে জু রাজা ছিল এবং সে (আমে) ছিল তার নাইট। আমে বললো, সে জুর সার্ভেন্ট হিসেবে নিজেকে সমর্পণ করবে। স্বাভাবিকভাবেই জু অবাক এবং বিরক্ত হয়। কিন্তু আমে, জুর পিছু ছাড়ে না। একসময় মানসিক বিকারগ্রস্ত আমেকে জু মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর ঘটনায় আসে সিরিয়াল কিলিং, জুর এক ক্লাসমেট যার শিকার হয়। পরে? বাকি অংশ বরং এনিমেতেই দেখুন।

Theme setup, Animation and Music: টিপিকাল জাপানের কোন শহর আর হাইস্কুল। দা ভেরি ডেফিনিশন অফ ক্লিশে। একই সেটাপে হাজারটা এনিমে থাকলেও দেনপা তেকি না কানোজো কে আলাদা বলার প্রধান কারণ এর সিনেমাটোগ্রাফি। এত্ত ফ্লুইডভাবে ঘটনার পরিস্থিতি ফ্রেম বাই ফ্রেম তুলে ধরা হয়েছে যে বিষয়টাকে নজর দিন বা না দিন, এর নান্দনিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আরবিটারী কোন জিনিসের ইন্সার্ট শট, জলি শট এবং সময়মত কাটপেপার লেটারের ফ্ল্যাশকার্ড ইত্যাদি এর ব্যবহার কাহিনীর প্রতি দর্শকের আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছে।আর্টওয়ার্ক, এনিমেশনে কোন কিছু অভারডু করার চেস্টা করা হয়নি। বরং এনভায়রনমেন্টকে জীবন্ত করার ক্ষেত্রে একটা চেষ্টা লক্ষণীয়। মিউজিকের ব্যাবহার ছিল ঝোপ বুঝে কোপ দেয়ার মত। সিনগুলোর ইমোশনাল পিককে হাইলাইট করেছে।

Characters setup: আপাত দৃষ্টিতে প্রত্যেকটি ক্যারেক্টারই খুবই সাধারণ মনে হবে। ক্যারেকটার ডিজাইনও অনেক কমন টেমপ্লেট কাটআউট। কিন্তু মূল আকর্ষণ হল এদের উদ্ভ্রান্ত সাইকোলজিক্যাল দশা। ফলে দর্শক সেন্টিমেন্ট তৈরী হবে, কিন্তু অভারল কোন চরিত্রের সবগুলো কাজকে নিজের যুক্তিতে জাস্টিফাই করতে পারবেন না। দেনপা তেকি না কানোজো এমন একটি গল্প, যেখানে সবাই মানসিকভাবে টার্বুলেন্সড, কিন্তু সেদিকে নজর দেয়ার কোন প্রয়োজনও তৈরী হয় না। বিষয়টি একটু কেমন জানি, অসুস্থ কিন্তু সুন্দর।

Overall Rating:
MyAnimeList.net: 7.82 / 10
My Rating: 9 / 10

Jin-Roh: The Wolf Brigade [Movie Review] — Rafiul Alam

Jin-Roh 1

“That’s the nature of counterintelligence. The side which correctly anticipates the moves of the other and strikes first has the advantage.”

৯০ দশকের মুভি, মামোরু ওশি, প্রোডাকশন আইজি। রিংস এনি বেল?
-ঘোস্ট ইন দ্যা শেল?
-ঠিক। কিন্তু আজকে যে আনিমের কথা বলব, তা উপরের তিনটি শর্তই পূরণ করেছে, কিন্তু Gits এর মত দর্শকপ্রিয় হতে পারেনি একদমই।
জিন রো (উলফ ব্রিগেড) মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে। জাপানে তার পরের বছর।রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ , সিম্বোলিজমের ব্যাবহার ও এবং ওশির নিজস্ব স্টাইলের দৃশ্যায়নের কারণে মুভিটি অনন্য শৈল্পিকতা লাভ করেছে, যার কারণে আর দশটি এনিমের সাথে সরাসরি তুলনায় যাওয়া কঠিন। এনিমেটির সিনেমাটোগ্রাফি, ক্যারেক্টার ডিজাইন এবং এবস্ট্রাক্ট শটগুলো খুবই রিয়েলিস্টিক ছিল। একই সাথে আমার কাছে “ফুড ফর থট” ধরনের কোন এনিমে সাজেশন চাওয়া হলে জিন রো এর নাম সবার আগে বলব, নির্দ্বিধায়।

Synopsis : সময়টা ৫০ এর দশক। অল্টারনেটিভ হিস্টেরিক টাইমলাইন, যেখানে জাপান জার্মানির কাছে পরাধীন । ঘটনার শুরুতে ছোট্ট করে একটা ন্যারেশন দেয়া হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান ঘুরে দাড়ানোর জন্য কি করে এবং তার সামগ্রিক ফলাফল কি ধরনের হয় তার উপর। যাতে বলা হয় জাপানের দ্রুত, আগ্রাসী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যাপক শ্রেণি বৈষম্য ও বেকারত্ব দেখা দেয়। ফলে সরকার বিরোধী দাঙ্গা দেখা দেয় নিয়মিতভাবে, এবং সময়ের সাথে সাথে বিপ্লবীরা আরও সংগঠিত হতে থাকে। চূড়ান্ত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গঠন করা হয় “Kerberos Panzer Cops” বা এলিট পুলিশ স্কোয়াড। তো একদিন দাঙ্গা ভয়াবহ রূপ নেয়। স্ক্রীণে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখা যায়, যে কিনা বিপ্লবীদের স্পাই। মেয়েটির সহায়তায় পুলিশের উপর বোমা নিক্ষেপ করে দাঙ্গাবাজরা। যাতে পরিস্থিতি আরও এলোমেলো হয়ে যায়, কেরবেরস স্কোয়াড আন্ডারগ্রাউন্ডে হামলা চালাতে বাধ্য হয়। জার্মান অস্ত্র MG-13 মেশিনগান, নাইট ভিশন গগলস ও পুরু আর্মরের নিচে প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের সামনে বিপ্লবীদের অবস্থা হয় ফাদে পড়া ইঁদুরের মত। গোলাগুলির মাঝে সেই মেয়েটি পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে, কিন্তু কেরবেরস বাহিনীর এক সদস্যের হাতে পড়ে যায়। এখন মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে আত্নঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করে সে। এরপর ন্যারাটিভ বিপরীত দিকে ঘুরে যায়। সেই কেরবেরস পুলিশ,যার কাছে মেয়েটি ধরা খেয়ে যায়, সে তার মুখোশ খুলে। হতবাক, বিভ্রান্ত। জানা যায় তার নাম কাজুকি ফুসে। উপরের থেকে তার উপর নির্দেশ ছিল মেয়েটিকে গুলি করার জন্য। তার বিবেকের কারণে সে পারেনি। কিন্তু দিনশেষে এটা একটি ভুল। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পুরো স্কোয়াডকে তার খেসারত দিতে হত। ভাগ্য খুবই ভাল থাকায় শুধু সামান্য চোট পায় কাজুকি। কিন্তু মনের ভিতর ঝাঁকুনি দিয়ে যায়। সে বোঝার চেস্টা করে, “কেন?”। এতসব সহিংসতা, এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, কিসের আশায়? যা জীবনের চেয়েও মুল্যবান?
আত্না শান্ত করতে সে মেয়েটির ধ্বংসাবশেষে শ্রদ্ধা জানাতে যায়। সেখানে পরিচিত হয় মেয়েটির বড় বোন কেই আমেমিয়ার সাথে। তাদের মাঝে এক অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এইখানেই সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং মেটাফরের আগমণ ঘটে। সিনেমার মূল স্টোরির সমান্তরালে Little Red Riding hood গল্পটির বর্ণনা করা হয়। সময়ের সাথে দর্শক বুঝতে পারবেন যে তা দিয়ে কি বোঝানো হচ্ছে।

Theme setup, Animation and Music : আনিমেতে সরাসরি একবারও বলা হয়নি যে জাপানকে জার্মানি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু আকারে ইংগিতে বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। মুভিটিতে ৫০ দশকের জাপান, তখনকার চূড়ান্ত শাসন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্র দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন ডিরেক্টর হিরুয়ুকি। তৎকালীন সমাজের বাস্তবতা ভিন্ন পরিস্থিতিতে কিরকম হতে পারে, তার উপাস্থাপনা এক কথায় ইনজিনিয়াস ছিল। ল্যান্ডস্কেপ ও এবস্ট্রাক্ট সিনগুলো ছিল ক্ষুরধার। যেন কোন গল্প বলতে চাচ্ছে। আরও অবাক লেগেছে জেনে, যে এত মুগ্ধকর সিনেমাটোগ্রাফির সিনেমার ফ্রেমগুলি নাকি হাতে আঁকা। এবার আসি মিউজিকে, দায়িত্বে ছিলেন সবার প্রিয় ইয়োকো কানো। সিনগুলোর সাথে মিউজিক খাপ খাওয়ানো হয়েছে, কোন জোরাজুরি নেই। কথোপকথনের সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন শব্দ ছিল না, বরং সাইলেন্ট পজ ছিল। ফলে দর্শককে আরও মনযোগী হতে হয়।

Characters Setup : নায়ক, নায়িকা আর দুই পক্ষের লোকজন। অনেক বেশি এলিমেন্ট নেই। কিন্তু এই কয়েকজন মানুষের সম্পর্ক চমৎকারভাবে দেখানো হয়েছে। চরিত্রগুলো বাস্তব। তারা টু ডাইমেনশনাল, স্টেরিওটিপিকাল, ক্লিশে কোন ফিলসফির কারণে গতিশীল না। সবারই এজেন্ডা আছে, ইচ্ছা আছে, নিজস্ব মোরালিটি আছে। তাদের মাঝে ভাল আর খারাপের দাগ টানতে পারবেন না। জিন রো আপনাকে এমন একটা জগতে নিয়ে যাবে, যেখানে দিনশেষে কোন এট্যাকার আর ভিক্টিম নেই। যেখানে মানুষের না পাওয়ার তিক্ততা আছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন না। কারণ আপনি ক্লান্ত।

Overall Rating :
MyAnimeList.net: 7.87/10
IMDb:  7.6 /10

Jin-Roh 2

Claymore রিভিউ — Rafiul Alam

Claymore

আপনি কি এনিমে দেখায় অরুচিতে ভুগছেন? সহজ, কিন্তু অসাধারণ কোন গল্প সন্ধান করছেন? ডার্ক, ফ্যান্টাসি এবং মেডিভ্যাল‍ কিছুর জন্য ক্রেভিং হচ্ছে?
তাহলে উপরের সকল অসুখের ডোজ হিসেবে ২৬ এপিসোডের ক্লেইমোর (বা ক্লেমোর) সেবন করুন!
এর কার্যকরীতার প্রমাণ এই আমি নিজেই।
ক্লেইমোর একটি অসাধারণ সংগ্রাম, সাহসিকতা এবং মনুষ্যত্বের গল্প, যা তার স্বকীয় শৈল্পিকতা অর্জন করেছে দৃষ্টিকটু কিছু ব্যাপার থাকা সত্ত্বেও। ম্যাডহাউজ তৈরীকৃত আনিমেটি প্রচারিত হয় ২০০৭ সালে, মাংগার কাহিনী অসম্পূর্ণ রেখেই, ২৬ টি এপিসোডে।আমি সাব দেখেছি, ডাবও শুনেছি। সাব>ডাব মনে হয়েছে, তবে আপনার ব্যাক্তিগত পছন্দকে গুরত্ব দেয়ার অনুরোধ করব।
ক্লেইমোর শব্দ দিয়ে মূলত মধ্যযুগীয় স্কটিশ তলোয়ারকে বোঝায়। এনিমেতে ঠিক সেই তলোয়ারই দেখানো হয়েছে।

Synopsis : ঘটনার প্রেক্ষাপট মধ্যযুগের ইউরোপ। যেখানে মানুষের জীবন বিপন্ন ইয়োমার কারণে। ইয়োমা হল এক ধরনের নরখাদক রাক্ষস, যারা কিনা মানুষের রূপ ধারন করে মানুষের মাঝে মিলেমিশে থাকতে পারে। মহাবিপদ! এখন এই রাক্ষসের উপদ্রব থেকে মানুষজনের উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র সম্বল হল কয়েকজন নারীযোদ্ধা, যাদের সাধারণ মানুষজন ক্লেইমোর বলে ডাকে।
ঘটনার শুরুতে, এক জনপদে ইয়োমার আক্রমণে ৬ জন নিহত হয়। ফলে সেখানে ক্লেইমোর বাহিনীর আগমণ ঘটে। ক্লেইমোরদের ইয়োমাবিনাশী ক্ষমতা, শক্তিশালী দৈহিক গঠন, অতিরিক্ত ফ্যাকাশে ত্বক, এবং অস্বাভাবিক চোখের রঙের কারণে মানুষজন তাদের ভয়ের চোখে দেখে। কিন্তু ইয়োমার কাছে পরিবার হারানো অসহায় ছেলে রাকি ক্লেইমোরদের সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা নজরে দেখে না। ফলে রাকি, ক্লেয়ার নামের এক ক্লেইমোরের পিছু নেয়। ঘটনার আবর্তনে ক্লেয়ার আর রাকি নানামুখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। ফলে চরিত্রগুলোর সাথে দর্শকদের বন্ধন তৈরী হওয়ার পাশাপাশি ঘটনার প্রবাহ ত্বরান্বিত হয়। একই সাথে দর্শকদের কাছে ক্লেইমোরদের উদ্দেশ্য, গাঠনিক নিয়মাবলী পরিষ্কার হয়। নামবিহীন ‘দ্যা অর্গানাইজেশন’ এর কলকাঠি নাড়াচাড়া স্ক্রিনে আসলে গল্পেটি আরেক দিক থেকে দেখার সু্যোগ হয়। কাহিনী যত এগোয়, নতুন নতুন চরিত্র ও তাদের উদ্দেশ্য উন্মোচিত হয়। গল্পের যে দিকটি নজর কেড়েছে , তা হল এখানে চরিত্রগুলোর উদ্দেশ্য খুবই সহজে বোঝা যায়, কিন্তু গভীরতার দিক থেকে কোন অংশেই কম না। এবং অসাধারণ পেসিং থাকার কারণে কাহিনীর সমাপ্তি না জেনেও এনিমের একটি ভাল সমাপ্তি আশা করতে পারেন।

Theme setup, Animation and Music : ইউরোপের প্রকৃতি, তুষার, মধ্যযুগের পাথরের স্থাপত্য ও ধর্মীয় বিশ্বাস সবই বেশ বাস্তবিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আনিমেতে পরিমিত সূর্যের আলো দেখানোর ফলে গথিক একটা ভাইব তৈরী করতে পেরেছেন নির্মাতারা। যা আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অবচেতনভাবেই দর্শক মনে প্রভাব ফেলবে এর সিনগুলো। অসাধারণ আর্টওয়ার্ক যাকে আরও এম্প্লিফাই করেছে। তবে এনিমেশনের কিছু কিছু ব্যাপার দৃষ্টিকটু ছিল। বিশেষ করে একশন সিনগুলিতে রক্ত পড়াকে ফোয়ারার মত দেখানো হয়েছে। আবার অনেক সময় একশনগুলি বেশি অবাস্তব মনে হওয়াও অসম্ভব নয়। অবশ্য তামিল মুভির ভক্ত হলে অনুভূতি ভিন্ন হতে পারে।
এবার আসি মিউজিকে। এনিমেটির ঝাকানাকা অপেনিং খুবই মনোমুগ্ধকর লেগেছে আমার কাছে। ফোক মেটালের এন্ডিং আরও বেশি পারফেক্ট ছিল, পুরো এনিমেটির সাথে খুবই, খুবই ভালভাবে মানিয়ে যায়। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যাবহার অনেক সময় খাপছাড়া মনে হয়েছে। অনেক সময় দুটি ট্র‍্যাক গ্যাপ ছাড়া কন্টিনিউয়াসলি প্লে করা হয়েছে। এমন সাডেন চেঞ্জে কোন কোন দৃশ্যে দর্শকের ফিলিংস কনফিউজড হয়ে যায়। তবে আমি বলব, গ্লিচগুলিকে অভারলুক করা গেলে ক্লেইমোর আপনার জন্য নিঃসন্দেহে উপভোগ্য হবে।

Characters Setup : এনিমেটির ক্যারেক্টার বিল্ডআপ এর সবচেয়ে মুল্যবান দিকগুলোর একটি। কোন ফাইট শেষ হওয়ার পর তার আগের ফাইটকে খুবই নগণ্য মনে হয়েছে। ক্লেয়ার চরিত্রটি অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল। চরিত্রগুলি বেশ জীবন্ত মনে লেগেছে। যদিও রাকি চরিত্রটি বিরক্তিকর লাগতে পারে অনেকের কাছে। কাহিনীতে তেরেসা, মিরিয়া, ডেনেভ, আইরিন, অফিলিয়াসহ প্রচুর চরিত্র আছে, কিন্তু তাদের স্টোরি ঠিক যতটুকু স্পটলাইট ডিসার্ভ করে, ততটুকুই দেয়া হয়েছে। একই সাথে চরিত্রগুলির স্বতন্ত্রতা বজায় ছিল, ফলে মনে রাখা সহজ হয়।

Overall Rating :
MyAnimeList.net : 7.95/10
IMDb Rating : 8.1/10
My Rating : 8.6/10

Opening:

https://www.youtube.com/watch?v=umgoE_SASK0

Ending:

 

Hyouka রিভিউ — Rafiul Alam

Hyouka (2012) রিভিউ :

“I don’t do anything I don’t have to. What I have to do, I do quickly.”

মনে হয় আমরা সবাই কম বেশি এই উক্তির সাথে পরিচিত এবং আমরা অনেকেই হোতারুর এই অমর বাক্যের সাথে ‘লাইকের সহিত একমত’ । হিওকা এমন এক ধরনের এনিমে, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে অসাধারণভাবে তুলে ধরেছে। স্লাইস অফ লাইফ জানরার হাতে গোনা যে কয়েকটি এনিমে ভালো লেগেছে তার মাঝে হিওকা সম্ভবত চিরস্থায়ী।
-“কি কারণে হিওকা দেখব?”
ওয়েল….হিওকা মূলত মিস্ট্রি/ স্লাইস অফ লাইফ জানরার আনিমে। যার প্রায় সবটুকু স্কুল কেন্দ্রিক। নিউ ইয়ার ফেস্টিভাল, কিমোনো, চেরিব্লসম, হটস্প্রিং, স্কুল ফেস্টিভালের মত ক্লিশে কন্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও প্রতেকটি এলিমেন্টের সদ্ব্যবহার করে পেসিং ধরে রেখে একের পর এক বুদ্ধির চমক উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে এনিমেটি। তাই কোন ধরনের ফ্যানসার্ভিস ছাড়া, যেকোন বয়সের উপযোগী ২২ এপিসোডের এনিমেটি অবসরে দেখতে আশা করি মোটেও খারাপ লাগবে না।

Synopsis : কামিয়ামা হাই স্কুলের ছাত্র ওরেকি হোতারু বড়ই কর্মবিমুখ। তার মতে, হাই স্কুলের জীবনকে সবাই চেরিব্লসমের মত গোলাপী মনে করে। তারুণ্য আর উদ্যমের প্রতীক। কিন্তু হোতারু নিজেকে ধুসর বলে দাবী করে। ফলে স্কুলের এত্তগুলো ক্লাব থাকা সত্ত্বেও কোন ক্লাবে সে নিজেকে জড়ায় না। কিন্তু হোতারুর শক্তি সঞ্চয় নীতিতে বাধ সাধে বিদেশ থেকে আসা বড় বোনের চিঠি। যাতে হোতারুকে বলা হয় স্কুলের ঐতিহ্যবাহী ক্লাসিক ক্লাবে যোগ দিতে, যেটা নাকি বর্তমানে সদস্যের অভাবে মরণাপন্ন। হোতারুর বড় বোনও সেই ক্লাবের সদস্য ছিল। তাই বোনের নির্দেশ রক্ষা করতে হোতারু বাধ্য হয় ক্লাসিক ক্লাবে যোগ দিতে। তার সাথে যোগ দেয় তারই পুরানো বন্ধু, ফুকুবে সাতোশি।ক্লাবে পরিচয় ঘটে বিখ্যাত চিতান্দা পরিবারের চিতান্দা এরুর সাথে। পরে ক্লাবে যোগ দেয় ইবারা মায়াকা। যার সাথে আবার হোতারুর ঠান্ডা সম্পর্ক। তো এই চারজনের কল্যাণে ক্লাসিক লিটারেচার ক্লাব গতি পায়। ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে নানা ধরনের হেঁয়ালী আর রহস্যের সম্মুখীন হয় হোতারু বাহিনী। যার মাঝে আবার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ মানুষের নানা ধরনের অদ্ভুত ঘটনা স্থান পায়। হোতারু কি তার শক্তি সঞ্চয় নীতি ধরে রাখতে পারে? নাকি বন্ধুত্বের খাতিরে হার মানে? এই এক দ্বন্দ তৈরী করে কাহিনী এগিয়ে যায়।

Theme setup, Animation and Music : কিয়োটো এনিমেশনের কাজ। এনিমেশনে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। জাপানের গ্রাম ও প্রকৃতি নান্দনিক ভাবে উপস্থাপন করছে। ডেপথ অফ ফিল্ডের ব্যবহার বেশ কার্যকরী ছিল। তারা যেভাবে আলো ছায়া তুলে ধরেছে আর ফ্লুইড ক্যারেক্টার মুভমেন্ট তৈরী করেছে, তাতে এনিমেশন যেন প্রাণ পেয়েছে । ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকেও বেশ দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কল্যাণে চমৎকারভাবে সাসপেন্সের আবহ তৈরী হয়েছে। বিটোভেন আর ব্যাচের ক্লাসিকাল মিউজিক (cello suite no.1, prelude) সিনগুলোর সাথে খুব ভালোভাবে মিলে গেছে।

Characters Setup : গল্পের প্রধান চরিত্র হোতারুর উপর ফোকাসটা একটু বেশি ছিল। গম্ভীর চেহারার শক্তিসঞ্চয়ী হোতারুর নিজের অজান্তেই খোলস থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারটি দর্শকদের জন্য বেশ উপভোগ্য ছিল। হোতারুর বন্ধু সাতোশি হল হাসিখুশি, ইজিগোয়িং, অপ্রয়োজনীয় তথ্যের ভাণ্ডার। নিজেকে ‘ডাটাবেজ’ বলে দাবী করে। সম্পদশালী চিতান্দা পরিবারের মেয়ে চিতান্দা এরু মারাত্মক কৈতুহলী। চোখ বড় বড় করে যখন সে হোতারুকে বলে, “ওয়াতাশি কিনিনারিমাস!”, তখন হোতারু শক্তি খরচে বাধ্য হয়। ইবারা মায়াকা ছোট খাটো গড়নের সহজ সরল মেয়ে। যদিও সে নিজে, ও সবার উপর খানিকটা কঠোর। দিনশেষে, ক্লাসিক ক্লাবের এই চতুষ্টয় বেশ কর্মঠ, ক্লাবের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আর হ্যা…হোতারুর বড় বোনের চেহারা কোন এক অজানা কারণে ঢেকে রাখা হয়। রহস্যের এনিমেতে এমন রহস্য তো থাকতেই পারে!

Overall Rating : MyAnimeList.net Rating : 8.20
IMDb Rating : 7.9

OST : https://goo.gl/MUt7f6

Hyouka

The Wind Rises রিভিউ — Rafiul Alam

“The wind is rising! . . . We must try to live!”
– Paul Valéry’s poem, “Le Cimetière marin”

আমি জিব্লির হাতে গোনা কয়েকটা মুভি দেখেছি। কালকে যখন এই মুভিটা শেষ করলাম, মনে হল, আরো আগে দেখা উচিত ছিল। হায়াও মিয়াজাকি সাহেব পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা এটি। যা মুলত অ্যারোনটিক্যাল ডিজাইনার জিরো হিরোকশির জীবন কাহিনী। যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময় জাপানের জন্য যুদ্ধবিমান নকশা করেন। পর্দায় তুলে ধরা দৃষ্টিভঙ্গী, আর বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ের কারণে সিনেমাটি সমালোচিত, আমি সেই বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না, তাই সেব্যাপারে কোন মন্তব্য করব না।

Synopsis : জাপানী বালক জিরো বিমান ভালবাসে। সে বিদেশী বিমানের ম্যাগাজিন ঘেটে বেড়ায় অসীম কৌতূহলে। ইতালিয়ান ইঞ্জিনিয়ার জিওভান্নি কাপ্রনি তার আদর্শ। অ্যারোনটিকাল ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন এভাবেই সে তাড়া করতে থাকে।
বছর খানেক পরের দৃশ্য, বালক এখন যুবক। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের কামরা থেকে বেরিয়ে আসে জিরো। সবকিছু যখন স্থির ও শান্ত, তখনই ভুমিকম্প আঘাত হানে। ট্রেন দ্রুত থামানো হলে যাত্রীদের হুরোহুরি শুরু হয়ে যায়। এমন সময় এক মহিলার পা ভেঙে যায়। তাকে সাহায্য করতে গিয়ে জিরোর পরিচয় হয় নাওকো সাতমি নামের এক মেয়ের সাথে। সেবার নিজের নাম না বলেই বিদায় নেয় জিরো।
ধীরে ধীরে ভূমিকম্পের ক্ষতির রেশ কেটে যায়।শহর আবারো গড়তে শুরু হয়। বিমান ডিজাইনে মহা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে জিরো, নিজের বোনের সাথেও দেখা করতে ভুলে যায় । কাজের প্রতি অত্যাধিক ভালবাসার কারণে জার্মানির সাথে সেই সময়ের জাপানের প্রযুক্তিগত পার্থক্য বুঝতে শুরু করে সে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার লক্ষ্য হয় নানান সীমাবদ্ধতার মাঝে দ্রুতগামী ধাতব বিমান নকশা করা।সিনেমার পরবর্তীতে জিরোর কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের সুন্দর সংমিশ্রণ তুলে ধরা হয়েছে। যদিও সমাপ্তি ঠিক যুতসই ছিল না।

Theme setup, Animation and Music : সিনেমার ঘটনায় ১৯২৩ এর কান্তো ভুমিকম্প থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপান স্থান পেয়েছে। তেমনিভাবে ৩০-৪০ দশকের জাপানী জীবনধারা ও সেই সময়ের সীমাবদ্ধতার বাস্তবিক চিত্রায়ন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোও চোখের আরাম ছিল। এক্ষেত্রে জিব্লির স্কিল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রতিটি দৃশ্য ডিটেইলড। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, একটি চারাগাছের উপর বৃষ্টির দৃশ্য, রেললাইনের উপর একটি পাথর অথবা পাখির চোখে টোকিও শহর, এসব কিছুর পেছনেই এক ধরনের শৈল্পিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আনিমেশন বরাবরের মতই রঙিন আর ফ্লুইড। টুডি, তবে জীবন্ত, জিব্লির প্রিয় একটি বৈশিষ্ট্য।মন ঠান্ডা করা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও পারফেক্ট মনে হয়েছে। সর্বোপরি, মিয়াজাকি তার নামের প্রমাণ দিতে পেরেছেন।

Characters Setup : জিরো কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, বিনয়ী। সবচেয়ে ভাল লেগেছে যখন সে তার ভালোবাসার কথা অকপটে স্বীকার করে নেয়। জিরোর প্রতি নাওকোর কমিটমেন্ট সিনেমার একটা সুন্দর দিক ছিল, শক্ত চরিত্রের প্রকাশ। জিরোর অভিমানী বোনের হঠাৎ হঠাৎ স্ক্রিনে আগমন জিরোর পরিবারের দিকে নজর না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে। সাইড ক্যারেকটার গুলোর মাঝে সাপোর্টিভ হোঞ্জো এবং রাগী কিন্তু নরম মনের গুরুজন, কুরাকাওয়া উল্লেখ্য।

পরিশেষে কিছু ব্যক্তিগত মতামত দেই, আমি বাচ্চাকাল থেকে এভিয়েশনের প্রতি আগ্রহী। তাই সিনেমার সামগ্রিক গল্প খুব একটা বক্তব্যধর্মী না হলেও আমার কাছে বেশ ইন্সপায়ারিং লেগেছে। সেই সময়ের কাঠ আর ত্রিপলের তৈরি বিমান যুদ্ধ করার জন্য মোটেও উপযোগী ছিল না। জিরোর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল প্রায় ২৭০মাইল/ঘন্টা বেগে উড়তে পারে এমন যুদ্ধবিমান তৈরি করা। কিন্তু এত বেশি বেগে যে ড্র‍্যগ তৈরী হবে,তা নেয়ার সামর্থ তৎকালীন কাঠের এয়ারফ্রেমের ছিল না। তাই তাকে স্টিলের বডি বানাতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হল ওজন, তৎকালিন র‍্যডিকাল ইঞ্জিনের পক্ষে তখন পর্যাপ্ত থ্রাস্ট দিয়ে স্টিলের বডিকে ২৭০ মাইল/ঘন্টা স্পিডে নেয়া সম্ভব না। পরবর্তীতে সে অ্যালুমিনিয়াম এলয় ব্যাবহার করে সহনীয় উইং লোডিংয়ের বিমান বানাতে সক্ষম হয়। A6M ZERO বিমানটি লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে সেটি কনভেনশনাল এয়ারফ্রেমের বিমান, ঠিক প্রয়োজনীয় পরিমাণের ডাইহিড্রাল। কিন্তু ভাল করে তাকালে বুঝবেন যে এলোরনে পুশরড নেই। যার ফলে প্লেনের ড্র‍্যাগ অনেক কমাতে সক্ষম হয়েছেন জিরো। কয়েক বছরের সাধনার ফলস্বরূপ তার A6M5 ৩৪৫ মাইল /ঘন্টা রিচ করে। সর্বোপরি, জিরো হাল্কা ওজনের, ম্যানুভারেবল কিন্তু দ্রুতগতির বিমান বানাতে সীমিত সুবিধার মাঝেও কারিগরিকভাবে মহাসফল।যদিও অ্যালাইড ফোর্সের ইঞ্জিনিয়াররা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই তাকে টেক্কা দিতে সক্ষম হয়। কিন্তু জিরো হিরোকশির অর্জনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। জানামতে মুভিটি “The wind has risen” উপন্যাসের অ্যাডাপ্টেশন। উপন্যাসটি পড়িনি, তাই মুভির সাথে বৈসাদৃশ্য নিয়ে আমার কোন ধারনা নেই। তবে শুনামতে, নাওকো চরিত্রটি উপন্যাসে অন্যভাবে ছিল। যাই হোক…..সকল বিতর্ককে একপাশে রেখে দিয়ে সিনেমাটি দেখতে বসে যান, আশা করি ২ ঘন্টার অপচয় হবে না।

Overall Rating :
MAL Rating : 8.3
IMDb Rating : 7.8
My Rating : 8.0

The Wind Rises

রিভিউ কন্টেস্ট এন্ট্রি [২০১৫] #৫: BACCANO! — Rafiul Alam

BACCANO! রিভিউ:

“I don’t understand any of it,but it’s absolutely incredible!”

-Miria Harvent

এই রকম সাধারণ একটা কোট দিয়ে শুরু করলাম কেন?ওয়েল….প্রথম দুইটা এপিসোড দেখার পর এই ছিল আমার অনুভূতি।নন লিনিয়ার ন্যারাটিভে স্টোরি সবসময়ই বুঝতে খুব কষ্টসাধ্য কিন্তু উপভোগ্য হয়।আনিমে জগতে এমন বর্ণনাশৈলীর সবচে দর্শকপ্রিয় শো হল বাকানো।বিখ্যাত হলিউড মুভি পাল্প ফিকশন যদি আপনার ভাল লেগে থাকে,তাহলে এই আনিমে আপনার ভাল লাগবেই।মাফিয়া বিষয়ক অন্যতম আনিমে,আনিপ্লেক্স স্টুডিও প্রযোজিত,তাকাহিরো ওমরির পরিচালনায় ২০০৭ সালে প্রচার করা হয় ১৩ এপিসোডের এই সিরিজটি।পরের বছর রিলিজ হয় ৩ এপিসোডের বাকানো স্পেশাল।ও হ্যা…আনিমেটার ডাবড ভার্শন দেখার জন্য অনুরোধ করব।

Synopsis:আগে কিছু বিষয় বলে নেই….১ম এপিসোডে কিছু বিচ্ছিন্ন সময়কালের ঘটনা দেখাবে,ফলে কি ঘটবে,তা আপনি জানেন।কিন্তু কিভাবে ঘটবে,সেটা জানতে আপনাকে শেষ এপিসোড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।এইরকম প্রথম কয়েকটি এপিসোডে আপনি কয়েকটি ভিন্ন স্থান এবং সময়ের  ঘটনা দেখতে পারবেন।পরবর্তী এপিসোডগুলোতে নিজেই ডট মিলাতে পারবেন,বুঝতে পারবেন যে চরিত্রগুলো একে অপরের সাথে কোন না কোনভাবে সংযুক্ত।এবং সব মিলিয়ে মুলত একটি ঘটনাই বিভিন্ন চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানো হচ্ছে।তো যাই হোক,একেবারে শুরুতে ক্যারল নামের এক ছোট্ট মেয়েকে কিছু বই ঘাঁটতে দেখা যায়।এরপর স্ক্রিনে আগমন ঘটে এক রাশভারী বয়স্ক লোকের।বুঝা যায় যে ক্যারল তার অ্যাসিস্ট্যান্ট,এবং তিনি কোন পত্রিকার বড় কর্তা।গল্পের ন্যারাটর তিনিই।ঘটনা হল ১৯৩১ সালের,ডালাস জেনোয়ার্ডের খোঁজে মাফিয়া বাহিনী ও তার বোন ইভ জেনোয়ার্ড। এদিকে লাইব্রেরীতে লাক গ্যান্ডর ও ফিরোর উপর বন্দুকের হামলা চালানো হয়।কিন্তু বুলেট তাদের শরীরের কোন ক্ষতি করতে পারে না।অন্যদিকে আন্তঃপ্রদেশ ট্রেন দ্যা ফ্লায়িং পুসিফুট শিকাগো হতে নিউইয়র্কের দিকে যাত্রা শুরু করে,সেই ট্রেনের যাত্রী হিসেবে আসার কথা আইজ্যাক ও মিরিয়ার।কিন্তু ট্রেনের কিছু যাত্রীর একেক রকমের উদ্দেশ্য,সবই পুরো ট্রেনের বাকি যাত্রীদের ঘিরে।এখন তারা কেউই অন্যদের উদ্দেশ্য জানে না।ফলাফল,সব মিলিয়ে এক ভয়ানক রক্তাক্ত পরিস্থিতি।রেল ট্র্যাকের পাশে এক হাত ছেড়া অবস্থায় পাওয়া যায় ল্যাড রুশোকে।কিভাবে তার এ অবস্থা হল?এই রকম অনেকগুলি ঝামেলাপূর্ণ ঘটনা নিয়ে আনিমেটির গল্প।এক্ষেত্রে আনিমেটির নাম স্বার্থক।ইতালিয়ান ভাষায় BACCANO শব্দের অর্থ হল ছোট খাট ঝামেলা।

Characters Setup:অনেকগুলো চরিত্র।অটিস্টিক  চরিত্রেরও অভাব নেই।এবং মজার ব্যাপার হল এতে কোন নায়ক বা ভিলেন নেই।প্রত্যেকটি চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্পটি দেখানো হয়েছে।চরিত্রগুলোর মাঝে রয়েছে আইজ্যাক ও মিরিয়া,আনিমে জগতের অন্যতম ফানি কাপল।যারা কিনা মাফিয়ার কাছ থেকে অনায়াসে টাকা ছিনতাই করতে পারে,যাদের নামে পুলিশের ওয়ারেন্ট।কিন্তু তাদের সরল সহজ মন মানসিকতা মুগ্ধ করবে।ফিরো প্রোচাইনেযো,সুদর্শন,দয়ালু এই ১৮ বছর বয়সীকে ক্যারল বলেছে,”He is kind of main character-ish”.ফিরোর মেন্টর,মাইযা আভারো।চশমা পড়া এই লোক দেখতে সাধারণ হলেও আসলে তা নয়।গ্যান্ডর ফ্যামিলির হেড লাক গ্যান্ডর।জেনোয়ার্ড পরিবারের দুই ভাই বোন ডালাস ও ইভ।ডালাস হল ঝামেলা পাকানো বখে যাওয়া ছেলে।অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী সিযলার্ড কোয়াটস,এবং তার সহকারী এনিস।হিংস্র,সাইকো খুনি ল্যাড রুশো,ও তার প্রেমিকা লুয়া ক্লেইন।অপার্থিব আক্রোব্যাটিক ক্ষমতাসম্পন্ন আরেক হিংস্র,বিকারগ্রস্ত লোক ক্লেয়ার ভিনো স্ট্যানফিল্ড।কথা বলতে অক্ষম এক মেয়ে চানে ল্যাফোর্ড,যার অতীত মোটেই সাধারণ নয়।ছোটবেলার দুই বন্ধু,মুখে তরোয়ালের ট্যাটু করা জ্যাকুযি স্পলট ও এক চোখ হারানো নিস হলিস্টোন।ছোট ছেলের মত দেখতে হলেও আসলে ছোট নয়,চ্যাযলো মেয়ার,তারও অতীত ঘটনা রয়েছে।আরও অনেক চরিত্র রয়েছে,আনিমে অ্যাডাপশনে কয়েকজনকে বাদ দেয়া হয়েছে।এতগুলো চরিত্রের কাহিনী যখন দেখতে থাকবেন,কনফিউজড হলেও প্রতি এপিসোডে নতুন কিছু বুঝতে পারবেন।

Theme setup,music and animation:১৯৩০ দশকের আমেরিকা,আনিমের প্রেক্ষাপট হিসেবে একেবারেই বিরল।যার কারণেই এই আমার কাছে এই আনিমের এত কদর।সেই সময়কার মাফিয়া বিজনেস,এক পরিবারের সাথে আরেক পরিবারের দ্বন্দ,বিশাল অঙ্কের ডলারের বাউন্টি এবং স্বার্থ হাসিলের জন্য কূটচাল খুবই উপভোগ্য ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।এছাড়াও ওই সময়ের ক্ষমতা ও আতঙ্ক তৈরির যন্ত্র, টমিগানের ব্যবহার,নতুন আবিষ্কৃত v16 ইঞ্জিনের গাড়ী,জ্যাজ মিউজিক,শিল্পায়নের প্রভাব এবং মিলিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন,সব দিক থেকেই ৩০ দশকের আমেরিকান জীবনযাত্রার হুবহু প্রতিফলন তুলে ধরতে অসাধারণভাবে সক্ষম হয়েছে আনিমেটি ডিরেক্টর ওমরি তাকাহিরোর নেতৃত্বে।এবার আসি মিউজিকে,জ্যাজ মিউজিকের ব্যাবহার আর কোন আনিমেতে এত সুন্দর লাগেনি।একেবারে মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।ওপেনিংটা আমার শোনা সবচে প্রিয় ওপেনিং গুলোর মাঝে একটা।এন্ডিংটাও বেশ ভালো ছিল।আর্টওয়ার্ক আর আনিমেশন হল আ্যনিপ্লেক্স আ্যট ইটস বেস্ট।চরিত্রগুলো খুবই সুন্দর লেগেছে এই আর্টওয়ার্কে।এবং তাদের জীবন্ত এক্সপ্রেশনগুলো।

পরিশেষে বলতে চাই,আমি কোন আনিমে দেখার সময় তার ডেপথ কিরকম সেই ব্যাপারটা সবার আগে বিবেচনা করি।তো সেইদিক বিচারে এই আনিমে আমাকে এমনভাবে সন্তুষ্ট করেছে যে আমার দেখা টপ ১০ টি আনিমের মধ্যে থাকবে।তাই যারা এখনও দেখেননি,তারা চটজলদি দেখে ফেলুন!

Overall Rating:

Mal Rating: 8.6
My Rating: 9.5

5 Baccano

Psycho-Pass: The Movie রিভিউ — Rafiul Alam

PP 1

এটা বছরের সবচাইতে প্রতিক্ষিত মুভি ছিল আমার কাছে।সেই জানুয়ারি মাস থেকে অপেক্ষা করার মেওয়া ফল পেলাম কয়েকদিন আগে।বুঝাই যাচ্ছে,ব্যাপক এক্সপেকটেশন ছিল।তাই প্রশ্ন হল এই মুভির জন্য এত অপেক্ষা স্বার্থক ছিল কিনা।আসছি সে কথাতেই।

Synopsis:যারা আনিমের প্রথম সিজন দেখেন নি,তারা না দেখলেই ভাল হয়।কাহিনী মূলত ১ম সিজনের সিকুয়াল।তো যাই হোক,ঘটনার শুরুতে দেখা যায় যে একদল বিদেশী জাপান আক্রমণ করতে আসে।আগে থেকে ঘটনা আঁচ করতে পেরে তাদের থামাতে উদ্যত হয় আকানে সুনেমরি ও তার দল।ঝটিকা মিশনে একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় তারা।সুনেমরির অজান্তে মেমরি স্কুপ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে সেই বন্দীর মাথা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন ইন্সপেক্টর সিমোটসুকি।বোঝা যায় যে সেই লোক পলাতক শিনয়া কোগামীর সাথে পরিচিত।এখন কোগামীকে ফিরিয়ে আনতে আকানে রওনা দেয় গৃহযুদ্ধরত দ্বীপ SEAUn এর উদ্দেশ্যে।যেখানে পরিক্ষামূলকভাবে জাপানের মত সিবিল সিস্টেম কার্যকর করা হয়েছে।কিন্তু আকানে যেমনটা চেয়েছিল,তেমন সহজে কোগামীকে ধরতে পারে না,বরং সেই দেশের বিশ্রি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে,তার সাথে উন্মোচিত করে সিবিলের আরো একটি রহস্য।
উল্লেখ্য,সম্পূর্ণ কাহিনীতেই ২য় সিজনের ভাইব স্পষ্ট।সিবিলের ও আকানের ভুমিকা আগের মতই ছিল।বোনাস ছিল কোগামীর ফিরে আসা।

PP 2

Characters Setup:মূলত সব আগের চরিত্রই।নতুন সাইড ক্যারেক্টার ছিল প্রচুর,জানি না ৩য় সিজনে (যদি বের হয়) তাদের আদৌ কোন আগমণ ঘটবে কিনা।তবে চরিত্রগুলোর বেশ ভাল সম্ভাবনা আছে।সবচেয়ে অপ্রিয় নতুন চরিত্র নিকোলাস ওং,প্রিয় কেউ নেই।আগেই জানতাম,শোগো মাকিশিমার মত অসাধারণ কেউ থাকবে না।কোগামিকে দেখার জন্যই যে আগ্রহ ছিল,ধুন্ধুমার একশনে সেই ক্ষুধা লাঘব হয়েছে আমার ক্ষেত্রে।তবে চরিত্রে বড় কোন পরিবর্তন ছিল না।আকানে সুনেমরিকে যেরকম আশা করেছিলাম,তেমনই “রেডী ফর একশন” মুডে পেয়েছি।আর ডাব দেখা ভাল অপশন হবে বলে মনে হচ্ছে।জাপানী ভয়েস এক্টরদের গলায় ইংরেজি শোনা বরাবরই পীড়াদায়ক।যদিও এর বাইরে কোন অভিযোগ করার সুযোগ নেই।সব চরিত্রই জীবন্ত লেগেছিল।

PP 3

Theme setup, Music and Animation:গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশ SEAUn.দরিদ্রতা,বৈষম্য এবং সিবিলের শোষণ।পাশাপাশি মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু লোকের মরিয়া চেস্টা।নতুন প্রেক্ষাপটই বলা চলে।তবে আনিমের সাথে খুবই মানানসই, সন্দেহ নেই।ভাওলেন্স আগের তুলনায় পরিমিত ছিল।তবে একশনের কমতি ছিল না।সবচাইতে প্রিয় মুহূর্ত ছিল কোগামির বাহিনীর সাথে নিকোলাস বাহিনীর দুধর্ষ যুদ্ধ এবং পিছনে অসাধারণ ক্লাসিকাল মিউজিক, destruction goes on. শুধুমাত্র এই কয়েক মিনিটের জন্যই পুরো মুভির ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেয়া যায়। মুভির এন্ডিংয়ে নতুন কোন গান ব্যবহার করলে আরও ভাল হত হয়ত।তবে যেটা ব্যবহার করা হয়েছে, ইগোইস্টের Namae no nai Kaibutsu গানটি আমার,সবারই অনেক প্রিয়। আর আনিমেশন,আর্টওয়ার্ক নিয়ে কি আর বলব? Production I.G আমাকে সবসময়ই ইম্প্রেস করতে সক্ষম হয়েছে,এবারও ব্যতিক্রম হয় নি।এই বছরের আমার দেখা মুভিগুলার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় আনিমেশন সো ফার।আর এই আনিমেশনে দূর্দান্ত একশন চোখের ব্যায়াম ছিল।

Overall Rating:
MAL Rating: 8.15
My Rating: 8.6

PP 4

সব মিলিয়ে বেশ হাই বাজেটের,হাইপড একটা মুভি।সেই হিসেবেও বেশ ভাল অঙ্কের আয় করতে সক্ষম হয়েছে এটি।সাইফাই কারিকুরি বরাবরের চেয়ে বেশি ভাল ছিল।তাই ১ম সিজন দেখা হয়ে থাকলে আর এক ঘন্টার বিনোদন পেতে চাইলে দেখে ফেলুন।

Destruction goes on-

https://www.youtube.com/watch?v=-cnly0dodeI

PP 5

নিওন জেনেসিস ইভাঙ্গেলিওন + এন্ড অফ ইভাঙ্গেলিওন রিভিউ — Rafiul Alam

Evangelion

“So, where is my dream?
-It is a continuation of reality.
But where is my reality?
-It is at the end of your dream.”

নিয়ন জেনেসিস ইভাঙ্গেলিয়ন আমার প্রিয় ৫ টা এনিমের মধ্যে একটা।২৬ এপিসোডের এই আনিমে মেকা জানরার মাঝে সেরা,Gainax স্টুডিওয়ের শ্রেষ্ঠ উপহার,৯০ দশকের মাস্টার পিস গুলোর মাঝে অন্যতম। কিন্তু আমি এটা সবাইকে রেকমেন্ড করব না।কারণ দুইটা।প্রথমত,অনেকেই এর হাইথট প্লট পছন্দ করে নাই বা করবে না।এইরকম মাথা ঘুরানো প্লট খুব একটা পাবেন না।ধর্ম,ফিলোসফি আর সাইকোলজির এমন কন্সেপ্ট এই আনিমেকে শৈল্পিক স্তরে নিয়ে গিয়েছে।দ্বিতীয়ত,আমার চেনা জানা অনেকে ৯০ এর এনিমে দেখতে পারে না।তাদের কাছে কাউবয় বিবপও “পুরানো “।তা যাই হোক,নিঃসন্দেহে এটা সবচেয়ে বিতর্কিত এনিমের মধ্যে একটা,যা সবচে বেশি এক্সপ্লেনেশনের দাবিদার। তাই আপনি দেখে থাকলে “welcome to the club”

11427238_1604511349803334_4095648615649397673_n

Synopsis: ঘটনার প্রেক্ষাপট ২০১৫ সাল।যখন মানব সভ্যতা হুমকির মুখে angels নামক ভয়াবহ দানবের আক্রমণের জন্য।এই angels গুলো হল চুড়ান্ত অভিযোজিত প্রাণি।যারা কিনা যেকোনো চরম পরিস্থিতিতে প্রাণ ধারণ করতে সক্ষম।তো এই ধ্বংসাত্নক দানবদের কবল থেকে মানুষজনকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে ইউএন এর একটি সংস্থা,NERV.তো ঘটনার শুরুতেই দেখা যায় ইকারি শিঞ্জি নামের এক ১৪ বছরের বালককে এঞ্জেলের আক্রমণ থেকে উদ্ধার করে NERV এর হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসেন তরুণী অফিসার ক্যাপ্টেন মিসাতো কাতসুরাগী।যেখানে শিঞ্জি তার বাবা গেন্ডো ইকারির দেখা পায় বহুদিন পরে ।কিন্তু শিঞ্জিকে নিয়ে আসার কারণ ভিন্ন।এঞ্জেলদের আক্রমণ থেকে সবাইকে রক্ষা করার জন্য NERV এর রয়েছে বিশেষ ধরনের অস্ত্র,ইভা ইউনিট।যা হল মূলত অতিকায় রোবট।NERV এর সেরা প্রযুক্তির এই রোবটগুলোই হল মানব সভ্যতার শেষ আশা।জ্বি হ্যা,এই রোবটের ভিতরে বসে তা অপারেট করার জন্যই শিঞ্জিকে নিয়ে আসা হয়,কারণ শুধু তার বয়সেরই কেউ তা চালাতে পারবে।এখন শিঞ্জি কি করবে?সে তো আগে কখনও এমন কিছু দেখেইনি!বিরক্তিকর এক পরিবেশের সৃষ্টি করার পর অবশেষে সে রাজি হয়।এরপর একশন!ড্রামাটিক এক লড়াই করে সে এঞ্জেলের বিরুদ্ধে।পরবর্তী এপিসোডগুলোতে এমনি মানুষ আর এঞ্জেলেদের এপিক লড়াই হয়।NERV এর আওতায় মোট তিনটি ইভা ইউনিট।অন্য দুটির অপারেটর বা পাইলট হল রেই আয়ানামি আর আসুকা ল্যাঙলেই।সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের এই তিনজনের উপর নির্ভর করছে মানব জাতির ভবিষ্যত।আনিমেটা দেখার সময় কিছু মুহুর্ত চূড়ান্ত উত্তেজনা অনুভব করবেন।কিছু ক্ষেত্রে রাগে মাথা চাপড়াবেন।আবার কিছু পারফেক্টলি ক্রাফটেড মুহুর্তে নির্বাক হয়ে যাবেন।তবে আসল খেলা বা ট্রাম্প কার্ড হল লাস্টের দুই এপিসোড।এবং ঘটনা সম্পূর্ণ জানার জন্য তাই এন্ড অফ এভাঙ্গেলিওন দেখা অবশ্যক।

22784_1604511363136666_1035733331435278699_n

Theme Setup,Music and Animation: NERV এর হেডকোয়ার্টারের ভিতরে অন্য রকম এক আবহ দেখানো হয়েছে। বিশাল,দানবতুল্য ইভা ইউনিটগুলো যখন অপারেশনের জন্য তৈরী করা হয়,তখন ইঞ্জিনিয়ারদের অস্থিরতায় প্রতিবার সেই এক এপিক সিচুয়েশন তৈরী হয়।এমনি ৯৫ সালে ২০১৫ সালকে কল্পনা করা হয়েছে।কোন ফিউচারিস্টিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অতিরঞ্জন করার চেস্টা করা হয়নি।গল্পের পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে নিতে দর্শকের পরিশ্রম করা লাগবে না।থিম কিছু ক্ষেত্রে ডার্ক মনে হবে,যা এই প্লটের জন্য মাস্ট।শেষের দুই এপিসোডে মাথা ঘুরানো সাইকোলজিক্যাল থিম আপনার সহ্য করা কঠিন হবে। ধর্মীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করার সময় অদ্ভুত সুন্দর ফিলোসফিকাল অনুভূতি পাবেন।এন্ড অফ এভাঙ্গেলিওনে যার চুড়ান্ত পরিণতি দেখবেন।আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কথা বলতে গেলে সবার আগে বলব এপিসোড ২২ এর এঞ্জেল আক্রমণের সময় বিটোভেনের সিম্ফনি নাইন।Cowboy Bebop এর Green Bird এর পর এত ওয়েল ক্রাফটেড সিন আমি দেখিনি।ও হ্যা, আরেকটাও আছে,এন্ড অফ এভাঙ্গেলিওনের সুইট ডেথ।অপেনিংটাতো সবাই শুনেছেন, Zankoku na Tenshi. আর এন্ডিংটাও আমার খুব প্রিয়,Fly me to the moon.বিশেষ করে প্রায় প্রতিটা এপিসোডে নতুন স্টাইলের এন্ডিংয়ের বিষয়টা ভালই ছিল।সাইকোলজিক্যাল অংশে শিঞ্জির ভায়োলিনের কথাও বলতে হয়।এইবার আসি আনিমেশনে,অ্যাকশন সিনগুলো নিয়ে কোন অভিযোগ নেই।কিন্তু কিছু কিছু সিন অতিরিক্ত লম্বা।আমার মনে হয় বিষয়টা অভারলুকড হওয়া নির্মাতারা ডিজার্ভ করে।কারণ তখনকার স্বল্প প্রযুক্তি নিয়েও তারা অসাধারণ আর্টওয়ার্ক উপহার দিয়েছেন।আমরা ধারণা করতে পারি প্রতিটি ফ্রেম হাতে আঁকার ব্যাপারটা কতটা শ্রমসাধ্য।

11401294_1604511529803316_4712263915210155291_n11140315_1604511533136649_907437397840372071_n

Characters Setup: আসল জায়গায় আসলাম এইবার।এই সিরিজের সব চরিত্রই কেমন জানি ব্রোক।এই আনিমের যত সমালোচনা করা হয়,তার প্রধান কারণই মনে হয় ইকারি শিঞ্জি।তো এই ইকারি শিঞ্জিকে সবার বিরক্তিকর লাগার মূল কারণ হল সে দূর্বল প্রকৃতির বিষন্ন মনের কিশোর।বেশিরভাগ সময় পরিস্থিতির দাবির দিকে কোন পাত্তা দেয় না।তবে সত্যি বলতে,আমার শিঞ্জিকে কখনও বিরক্তিকর মনে হয়নি।বরং ওকে নিয়ে সাইকোলজিক্যাল সিনগুলি অনেক বেশি পাওয়ারফুল ছিল।শিঞ্জির পরে আসে রেই আয়ানামির নাম।শান্ত চরিত্রের।কিন্তু শুরু থেকেই কিছু লুকানো হচ্ছে,এমন আভাস পাবেন।এর পর ক্যাপ্টেন মিসাতো কাতসুরাগি,সিরিজের সবচেয়ে প্রাণউচ্ছল চরিত্র।বিপদজনক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে উদ্যমী।ইকারি শিঞ্জিকে সহ্য করার জন্য উনাকে আমার বেশি ভালো লেগেছে।কিন্তু তার অতীত ঘটনা বেশ ট্রাজিক।সিরিজের কয়েক এপিসোড যাওয়ার পর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত tsundere আসুকা ল্যাঙলেইয়ের আগমন ঘটে।তারও বলার মত ব্যাকস্টোরি আছে।এছাড়াও রিটসুকো,শিঞ্জির বাবা গেন্ডো ইকারি,শিঞ্জির মা,কোজো,রিটসুকোর মা, সবারি একই সুত্রে বাধা অতীত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।চরিত্রগুলো সিরিজের অন্যতম আকর্ষণ।তাই এই বিষয়ে হতাশ হবেন না।সব ক্যারেকটারকেই আলাদাভাবে অনুভব করবেন।

11427218_1604511403136662_2287385630477565425_n

Overall Rating:
MAL Rating : 8.3,End of Evangelion:8.2
My Rating : 9.6

Opening: https://www.youtube.com/watch?v=wQq8yLco070

Ost playlist: https://www.youtube.com/watch…

Sweet Death: https://www.youtube.com/watch?v=BAmko4fvkC0

Fly me to the moon: https://www.youtube.com/watch?v=RF59-SNAi-s

1902869_1604511619803307_6098738166043621905_n

Gosick রিভিউ — Rafiul Alam

“I don’t mind being unsightly. I found something more important than pride!” — Victorique

এই মাত্র দেখে শেষ করলাম।মনে ভয়ংকর সুন্দর অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।এটি এমন এক অনুভূতি যা বলে বোঝানোটা দায়।নির্মল সুন্দর একটি এনিমে।Bones স্টুডিওয়ের এনিমে বলে কথা।এই স্টুডিওয়ের অন্যান্য এনিমের ছাপ উল্লেখযোগ্য।উদাহরণ স্বরুপ ফুলমেটাল আলকেমিস্ট।তবুও এনিমেটা স্বতন্ত্র।

Synopsis: সাল১৯২৪। ফ্রান্স ও ইতালীর মাঝে একটি কাল্পনিক দেশ হল Saubure.এই Saubure এর কোন গ্রামে অবস্থিত Saint Marguerite Academy.একাডেমিটা এমন এক জায়গায় অবস্থিত,যেখান থেকে আল্প্স পর্বত দেখা যায়।এই একাডেমিতে পড়তে আসে আমাদের গল্পের নায়ক জাপানি ট্রান্সফার স্টুডেন্ট কাজুইয়া কুজো।তার চোখ ও চুল কালো বলে একাডেমির শিক্ষার্থিরা তাকে কালো শিনিগামী বলে ডাকে এবং কাছে আসতে ভয় পায়। অগত্যা বেচারা একা একা থাকে।একদিন একাডেমির লাইব্রেরি টাওয়ারে গল্পের বই পড়তে গিয়ে সোনালী চুল আবিষ্কার করে।তার উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে পরিচয় হয় অদ্ভুত স্বভাবের মেয়ে ভিক্টোরিকার সাথে।অদ্ভুত স্বভাবের হলেও খুব দ্রুতই কুজোর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।রহস্যপ্রিয় ভিক্টোরিকা এবং কুজো নানা ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে।এগিয়ে যায় কাহিনী।


Theme setup, Background Music & Animation: “20th century europe”…এমনিতেই আমার ভালো লাগে।এক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপ।এমন প্রেক্ষাপটের এনিমে খুবই কম আছে বলে মনে হয়।গথিক এনভাইরোমেন্ট সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।তৎকালীন জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তি ভাল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এক কথায় ওয়ান অফ এ কাইন্ড।আপনাকে মুডে আনতে বাধ্য। মিউজিকও বেশ ভালো।বিশেষ করে দ্বিতীয় এন্ডিংটা কিছুটা সেল্টিক মিউজিকের মত।আমার ভাষায় “খানদানী”।এনিমেশন নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। Bones স্টুডিওয়ের গতানুগতিক এনিমেশন।
Characters setup: এক্ষেত্রে মেইন ফোকাস হল ভিক্টোরিকা।ব্যাপারটা অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে।টিপিকাল tsundere ক্যারেকটার আমার খারাপ লাগেনি।সরল ছেলে কুজোকে বেশ পছন্দ হয়েছে।

Overall Rating:

MAL rating: 8.27/10
My rating: 8.5/10

2nd Ending: http://youtu.be/4lXMrkq-NEc