Studio Monogatari: Episode 06

আজকের পর্বে থাকছে এমন এক স্টুডিও নিয়ে গল্প, যা আনিমের একদম প্রথম দিক থেকে শুরু করে বর্তমান যুগেও দাপটের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আজ থাকছে তোয়েই অ্যানিমেশনের গল্প।

Toei Animation

1. Toei Animation logo

১৯৪৮ সালে প্রথম যখন স্টুডিওটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এর নাম ছিল Japan Animated Films (Nihon Douga Eiga, সংক্ষেপে Nichidou Eiga)। ১৯৫৬ সালে Toei Company Ltd. এটি কিনে নেবার পর নাম হয়ে যায় Toei Douga, তবে তখনও ইংরেজি নাম ছিল Toei Animation Co. Ltd., ১৯৯৮ সাল থেকে পুরাপুরিভাবে স্টুডিওটির নাম পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান নামের রূপ নেয়। ১৯৫৬ সালে তোয়েই দৌগা নামে যাত্রা শুরু পর সে সময়ে অনেক নামীদামী ও গুণী ব্যক্তি এখানে কাজ করে। Osamu Tezuka, Hayao Miyazaki, Isao Takahata, Yoichi Kotabe, Leiji Matsumoto, Yasuo Otsuka-এর মত নামকরা ব্যক্তিদের কর্মজীবনের শুরুর দিকটা কাটিয়েছিল তোয়েই দৌগায়। তোয়েই অ্যানিমেশনের ম্যাস্কট হিসাবে যেই বিড়ালটা দেখা যায় তার নাম Pero, তোয়েই-এর এক আনিমে ফিল্ম Puss in Boots (1969)-এর এই বিড়াল চরিত্রটিই তাদের ম্যাস্কট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আনিমে দেখার জন্যে দর্শকদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল Animax-এর শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অন্যতম বড় নাম তোয়েই অ্যানিমেশন [সাথে আরও রয়েছে Sunrise, TMS Entertainment, Sony, Nihon Ad Systems]। আনিমে ইন্ডাস্ট্রিকে আসলে তোয়েই অ্যানিমেশনে কাছে ঋণী হয়ে থাকতে হবে আজীবন, কারণ বিশালাকার মেকা, স্পেস অপেরা, শৌনেন, ম্যাজিকাল গার্ল-এর যে বর্তমান ধারণা সেটাকে জনপ্রিয় করার জন্যে তোয়েই অ্যানিমেশনই সবচেয়ে বড় দাবীদার।

2. Toei Big Names

তোয়েই অ্যানিমেশনের উপহার দেওয়া কিছু “প্রথম”:

  • The Tale of the White Serpent: প্রথম রঙিন আনিমে মুভিই শুধু নয়, এটি একইসাথে ছিল প্রথম রঙিন আনিমে। আমেরিকাতে প্রথম ৩টি আনিমে ফিল্ম হিসাবে যেগুলি মুক্তি পায় তার মধ্যে অন্যতম এই মুভিটি।
  • Mazinger Z: মাজিঙ্গার যি-কে প্রথম সফল মেকা আনিমে হিসাবে ধরা হয়। এর আগেও মেকা আনিমে ছিল, কিন্তু ১৯৭২ সালে শুরু হওয়া এই সিরিজই প্রথম মেকা জনরাকে জনপ্রিয় করে তুলে।

3. Toei Firsts

এবার আসি তোয়েই অ্যানিমেশন সবচেয়ে জনপ্রিয় যেসব কাজের জন্যে দর্শকদের কাছে পরিচিত সেই প্রসঙ্গে। এক দৃষ্টিতে নিচের নামগুলি পড়ে যেতে থাকুন, তাহলেই বুঝবেন দর্শক মহলে জনপ্রিয় হবার কারণ হিসাবে তোয়েই অ্যানিমেশনের সবচেয়ে বড় শক্তি কোথায়:

  1. Dragon Ball
  2. Dragon Ball Z
  3. Sailor Moon
  4. Kinnikuman (Muscleman)
  5. Transformers
  6. Pretty Cure
  7. Saint Seiya
  8. One Piece
  9. Yu-Gi-Oh!
  10. Digimon
  11. Toriko
  12. World Trigger

নামগুলি দেখে এতক্ষণে হয়তো জেনে গিয়েছেন আসল কাহিনী। সব ক্যাশকাউ ফ্র্যাঞ্চাইজির বেশিরভাগই তোয়েইয়ের দখলে। উপরের সবগুলি নাম সমান জনপ্রিয় না হলেও একটা দিক থেকে ভাল মিল আছে এদের মধ্যে – সবগুলি সিরিজই অনেকগুলি পর্বের এবং এদের অনেকগুলিই একাধিক সিজনে বিভক্ত যার প্রত্যেকটিতেই রয়েছে ৫০ থেকে ১০০ করে পর্ব। লম্বা সময় ধরে এয়ার হয়ে গিয়েছে বা এয়ার হচ্ছে এগুলি, এবং দর্শক জনপ্রিয়তা না পেলে সেটা ঠিকমত সম্ভব হতও না।

4. Toei Big Shots

তবে শুধু এগুলিই তোয়েই অ্যানিমেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ ভাবলে ভুল করবেন। দেখে নিন গত প্রায় ৫৫ বছরের সময়কালে তোয়েইয়ের রেখে যাওয়া জনপ্রিয় কিছু কাজ:

  • ১৯৬০ এর দশক: এই সময়টাতে তাদের বেশিরভাগ কাজই ছিল ডিজনি ধাঁচের বা ডিজনি অনুপ্রাণিত, শুধু কাহিনীর পটভূমি ছিল ট্রেডিশনাল জাপানিজ কালচার: Arabian Nights: Sinbad no Bouken, Samurai Kid, Space Patrol Hopper, Rainbow Sentai Robin, Cyborg 009, Mahou Tsukai Sally, GeGeGe no Kitaro series, Akane-chan, Himitsu no Akko-chan, Tiger Mask
  • ১৯৭০ এর দশক: Kick no Oni, Mahou no Mako-chan, Sarutobi Ecchan, Devilman, Mazinger Z, Cutie Honey series, Getter Robo series, Candy Candy, Space Pirate Captain Harlock, Galaxy Express 999, Dangard Ace, Jetter Mars, The Guardian of Space
  • ১৯৮০ এর দশক: Mahou Shoujo Lalabel, Ganbare Genki, Dr. Slump, Galactic Whirlwind Braiger, Asari-chan, Patalliro!, Ai Shite Knight, Kinnikuman, Stop!! Hibari-kun!, Hokuto no Ken (Fist of the North Star), Dragon Ball, Dragon Ball Z, Ginga Nagareboshi Gin, Saint Seiya, Bikkuriman series, Transformer series, Sakigake!! Otokojuku
  • ১৯৯০ এর দশক: Sailor Moon series, Marmalade Boy, Dragon Ball GT, Aoki Densetsu, Kindaichi Shounen no Jikenbo, Slam Dunk, Yu-Gi-Oh!, Phantom Thief Jeanne, Ojamajo Doremi series, One Piece, Digimon series
  • ২০০০ এর দশক: Kanon (কিয়োঅ্যানির আগে ২০০২ সালে তোয়েই কানোনের একটি আনিমে অ্যাডাপশন নিয়ে আসে), Air Master, Nadja of Tomorrow, Bobobo-bo Bo-bobo, Pretty Cure series, Air Gear, Lovely Complex, Ayakashi: Samurai Horror Tales, Mononoke, Demashita! Powerpuff Girls Z
  • ২০১০ ও এর পরবর্তী সময়: Toriko, Kyousou Giga, Marvel Disk Wars: The Avengers, Majin Bone, World Trigger
  • মুভি: The Tale of the White Serpent, Magic Boy, Alakazam the Great, Arabian Nights: The Adventures of Sinbad, The Little Prince and the Eight-Headed Dragon, Gulliver’s Travels Beyond the Moon, The Puss in the Boots trilogy, Himitsu no Akko-chan, 30000 Miles Under the Sea, Flying Phantom Ship, Ali Baba and the Forty Thieves, Interstella 5555, এবং তাদের প্রায় সব বড় ফ্র্যাঞ্চাইজগুলির প্রত্যেকটির একগাদা মুভি।

5. Toei Anime

তোয়েই অ্যানিমেশন অনেকগুলি ওয়েস্টার্ন অ্যানিমেশন ও কার্টুন সিরিজ নির্মাণে সহযোগিতা করে, যেমন: The Smokey the Bear Show (1969), Spider-Man (1981), The Pink Panther (1981), The Wizard of Oz (1981), G.I. Joe: A Real American Hero (1983–1986), Inspector Gadget (1983), Dungeons and Dragons (1983–1985), My Little Pony (specials) (1984–1985), The Transformers (1984–1987), Defenders of the Earth (1986–1987), The Smurfs (1987–1988), Dennis the Menace (1988), Superman (1988) ইত্যাদি। তাছাড়া তোয়েই অ্যানিমেশনের নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির গেমসহ বেশ কিছু গেমের অ্যানিমেশনেও কাজ করেছে। এসব গেমের মধ্যে রয়েছে One Piece-এর গেমগুলি, Dragon Ball-এর গেমগুলি, Sailor Moon-এর গেম, Chrono Trigger, Ninja Hayate, Cobra Command ইত্যাদি।

তোয়েই আনিমেশনের কাজের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  • ক্যাশকাউ ফ্র্যাঞ্চাইজ: One Piece, Sailor Moon, Dragon Ball, Transformers, Digimon, Pretty Cure ইত্যাদি জনপ্রিয় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি তোয়েইয়ের জন্যে আর্থিক দিক থেকে বেশ লাভজনক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। একারণে সিরিজ শেষ হয়ে গেলেও আমরা সেইলর মুনের রিব্যুট পেলাম গতবছর, সামনে এর আরও অনেক সিকোয়েল আসবে; ড্রাগন বল জি পুরাটা নতুন করে ড্রাগন বল কাই আকারে বের করা হয়েছে এবং এখন চলছে ড্রাগন বল সুপার; অনেক বছর চোখের আড়ালে থেকে আবার জেগে উঠলো ডিজিমন ফ্যাঞ্চাইজ; আর ওয়ান পিস তো সামনের আরও ১০-১৫ বছর আরামসে চলবে, সাথে প্রায় প্রতি এক-দুই বছরের মধ্যে এর একটি করে মুভিও রিলিজ হয়ে থাকে।
  • অ্যানিমেশন কোয়ালিটির পতন: Dragon Ball, One Piece, World Trigger, Sailor Moon – প্রায় সব বড় বড় সিরিজগুলিতে অ্যানিমেশন কোয়ালিটির অবনমন চোখে পরার মত। এর কারণও অবশ্য সিরিজগুলির পর্বের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। শত-শত পর্বের একেকটা সিরিজ বলে এগুলির প্রতি পর্বের পিছে বাজেটের পরিমাণও আর দশটা স্বাভাবিক আনিমের চাইতে কম থাকে।
  • লং রানিং আনিমে: অন্যান্য স্টুডিওগুলি যেখানে দুই কোরের বড় আনিমে সিরিজ করার কথা ভাবেই না সাধারণত, কপাল ভাল থাকলে নতুন সিজন পাওয়া যায় কোন আনিমের, সেখানে তোয়েই অ্যানিমেশন দোর্দন্ড প্রতাপে এখনও শতাধিক পর্বের একেকটি সিরিজ নিয়ে আসছে। World Trigger এখন ৭৩ পর্বে শেষ হয়ে গেলেও কিছুদিন পরেই হয়তো সিকোয়েলের ঘোষণা আসবে। ড্রাগন বল সুপার তো ১০০ পর্বের সিরিজ হবে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ওয়ানপিস তো আর কয়েক বছর পরেই হাজার পর্বের ক্লাবে পা রাখবে।
  • লাইসেন্সে অনাগ্রহ: বেশ অনেক বছর থেকেই তোয়েই অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় নিজেদের সিরিজগুলির বাইরের দেশে লাইসেন্স দেওয়াতে অনীহার ব্যাপারটা। Sailor Moon-এর ক্ষেত্রে প্রায় বিশ্বের অনেক দেশেই লাইসেন্স দেবার পর দেখা যায় লংকাকান্ড। একেক দেশে একেকধরণের ট্রান্সলেশন কোয়ালিটি, সেন্সরিং, ভুল ট্রান্সলেশন, ইচ্ছামত এডিটিং ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কারণে লাইসেন্সিং-এর উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তোয়েই অ্যানিমেশন। আবার One Piece-এর 4kids ডাবিং ও এডিটিং ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নেয়। এই নতুন এডিটিং করার পর দেখা যায় তলোয়ার মানুষকে কাটে না, সিগারেটের জায়গায় চরিত্ররা ললিপপ “ফুঁকে”! মদ জাতীয় পানীয়র জায়গায় জ্যুস, পিস্তলের জায়গায় হাতুড়ি, এমনকি কোন চরিত্রের মৃত্যুর ব্যাপারটা পরিবর্তিত করে দেখানো হয় তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বাচ্চাদের মনে আঘাত যেন না দেয় এই অজুহাতে এরকম এডিটিং করার ব্যাপারটা অনেক সমালোচিত হয়। এসব বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তোয়েই অ্যানিমেশন বাইরের দেশে নিজেদের শো-গুলি লাইসেন্সিং-এর ব্যাপারে তেমন বেশি আগ্রহ দেখায় না।
  • স্পেস অপেরা: তোয়েই আনিমেশের প্রস্তুত করা আনিমে সিরিজের অনেকগুলি স্পেস অপেরা: Space Pirate Captain Harlock, Galaxy Express 999 ও এর মুভিগুলি, Space Patrol Hopper, Captain Future, Space Emperor God Sigma ইত্যাদি।
  • মেকা আনিমেপ্রীতি: মেকা জনরার আনিমে তৈরিতে তোয়েই অ্যানিমেশনের আগ্রহ চোখে পরার মত: Mazinger Z, Transformers, Getter Robo, Gaiking, Magne Robo Gakeen, RoboDz Kazagumo Hen, Space Emperor God Sigma, Robot Girls Z ইত্যাদি।

তোয়েই অ্যানিমেশন ছেড়ে দিয়ে এর বিভিন্ন প্রাক্তন স্টাফ-মেম্বাররা পরে যেসব আনিমে স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন:

  • Mushi Production: কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে যাবার পর ওসামু তেজুকা তোয়েই অ্যানিমেশন ছেড়ে চলে আসেন এবং ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মুশি প্রোডাকশন।
  • Studio Ghibli: ১৯৮৫ সালে তোয়েই-এর প্রাক্তন সদস্য হায়াও মিয়াজাকি ও ইসাও তাকাহাতা প্রতিষ্ঠা করেন স্টুডিও ঘিবলি।

 

তুলনামূলক খারাপ কোয়ালিটির অ্যানিমেশনের জন্যে তোয়েইয়ের কিছুটা বদনাম থাকলেও এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, অল্প বাজেট নিয়েও একের পর এক বিশালাকার এবং জনপ্রিয় আনিমে তৈরি করে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়, তাও আবার ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, যেখানে কিনা অনেক জনপ্রিয় স্টুডিও হলেও বেশ কিছু স্টুডিও সময়ে সময়ে দেউলিয়া ঘোষিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়!

Studio Monogatari: Episode 05

আজকের স্টুডিও নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে একটি ছোট্ট গল্প থাকলো:

জাপানে একটি বেশ জনপ্রিয় সাইন্স ফিকশন কনভেনশন আছে, নাম Nihon SF Taikai (Japan SF Convention), যেটি বিভিন্ন বছর বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। যেই শহরে অনুষ্ঠিত হয় সেই শহরের নাম অনুযায়ী এই কনভেনশনের ডাকনাম দেওয়া হয়। যেমন, টোকিও শহরে হলে সেবারেরটির নাম হয় TOKON, ওসাকা শহরে হলে নাম হয় DAICON, নাগোয়াতে হলে MEICON ইত্যাদি। কনভেনশনগুলি তাদের এই ডাকনামেই বেশি পরিচিত।

১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত হয় DAICON 3 [অর্থাৎ দাইকনের ৩য় আসর], এবং সেইবার কনভেনশনটির ওপেনিং গান তৈরির দায়িত্ব নেয় একদল শৌখিন অ্যানিমেটর, যারা Daicon Films নামের একটি অপেশাদার অ্যানিমেশন দল তৈরি করেছিল। তারা একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করে অনুষ্ঠানটির জন্যে, যেখানে দেখানো হয় স্পেসশিপ থেকে কয়েকজন লোক এসে ছোট একটি মেয়েকে এক বোতল পানি দেয় এবং সেটি একটি মূলা গাছে ঢেলে দিতে হবে যেন। মেয়েটি সেই পানির বোতল নিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু পথে বিভিন্ন শত্রু তাকে আক্রমণ করে। রোবট, স্পেসশিপ ইত্যাদি বিভিন্ন সাই-ফাই উপকরণ নিয়ে আসে এই ভিডিওতে, এবং মেয়েটি সবার মারামারি করে অবশেষে সেই মূলা গাছটির কাছে যেতে পারে। গাছটিতে সেই পানি ঢালবার সাথে সাথে সেটি একটি বিশাল স্পেসশিপে পরিণত হয়, এবং মেয়েটি ক্যাপ্টেন হয়ে যায় সেটির। অবশেষে স্পেসশিপটি নিয়ে মেয়েটি মহাকাশে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। ভিডিওটি দিয়েই উদ্বোধনি হয় কনভেনশনের। এখানে বলে রাখা ভাল, মূলা জিনিসটি দেখানোর কারণ pun হিসাবে ব্যবহার করেছে [Daicon ~ Daikon = Radish]!

অপেশাদার কয়েকজন অ্যানিমেটরের তৈরি এই ভিডিওটি দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়, প্রশংসায় ভাসানো হয় তাদের। তাদের উন্নতমানের অ্যানিমেশন কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে Studio Nue তাদের দুইজনকে একটি কাজের জন্যে প্রস্তাব দেয়, তাদের পরবর্তী আনিমে Macross-এ কাজ করার প্রস্তাব!

সময়ের সাথে সাথে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে, DAICON 4 এর জন্যেও তারা এরকম আরেকটি ভিডিও বানায়, যা আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে মূলত এবার তাদের কাজের কোয়ালিটির উন্নতি ঘটায়। ৬ জনের সেই শৌখিন অ্যানিমেটরের তৈরি Daicon Films নতুন নাম নিয়ে আসে অ্যানিমেশন স্টুডিওর জগতে, আর প্রতিষ্ঠা করে Gainax স্টুডিও।

Gainax

1. Gainax logo

আশির দশকের শুরুর দিকে তরুণ অ্যানিমেটর Hideaki Anno, Yoshiyuki Sadamoto, Hiroyuki Yamaga, Takami Akai, Toshio Okada, Yasuhiro Takeda এবং Shinji Higuchi গড়ে তুলেন Daicon Films নামের একটি প্রতিষ্ঠান, এটিই ছিল গাইনাক্সের প্রথম রূপ। DAICON 3 এর খ্যাতির পর Studio Nue তাদের পরবর্তী আনিমে Macross-এ কাজ করার প্রস্তাব দেয় হিদেয়াকি আন্নো আর হিরোয়ুকি ইয়ামাগাকে। এই আনিমেতে কাজ করার মাধ্যমে প্রফেশনাল আনিমের জগতে পা ফেলার সুযোগ পায় তারা। আর এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা ১৯৮৩ সালের DAICON 4-এর ওপেনিং ভিডিও তৈরি করে সবাইকে আরও বেশি অবাক করে দেয়। এই ভিডিও তৈরির জন্যে তারা একটি আনিমে স্টুডিও ভাড়া করে যেন প্রফেশনাল কাজ উপহার দিতে পারে। এবারের মিউজিক ভিডিওতে আগের ভিডিওর সেই মেয়েটিকেই দেখায়, কিন্তু এবার সে বয়সে বড় থাকে। একটি playboy bunny suit পরে বিভিন্ন শত্রুদের সাথে মারামারি করতে দেখা যায় তাকে, যেসব শত্রুর মধ্যে Darth Vader, Power Rangers-দের দেখা যায়, এমনকি ভিডিওটিতে আরও দেখা যায় গান্দাম, ম্যাক্রস ভ্যালকাইরি, Alien, সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যানসহ অনেক জনপ্রিয় ওয়েস্টার্ন চরিত্র থাকে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে Electric Light Orchestra-এর জনপ্রিয় মিউজিক “Twilight” [যেটি সম্ভবত অফিসিয়াল উপায়ে অনুমতি নিয়ে করা হয় নি]।

2. Daicon

দাইকনের সাফল্যের পর এই কজন অ্যানিমেটর ঠিক করে এবার তারা বড় কোন কাজের দিকে হাত বাড়াবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, যোগাযোগ করে Bandai Entertainment-এর সাথে। Bandai তাদের কাজে মুগ্ধ হয়ে একটি মুভি তৈরির প্রস্তাব দেয়, Royal Space Force-এর মুভির কাজের প্রস্তাব ছিল এটি। এই কাজের জন্যে ৮০০ মিলিয়েন ইয়েনের প্রস্তাব দেয় তারা। দাইকন ফিল্মস এতে রাজী হয়ে যায়, এবং প্রফেশনাল কাজ শুরুর জন্যে ১৯৮৪-১৯৮৫ সালের দিকে নাম পরিবর্তন করে Gainax নাম নিয়ে হাজির হয়।

3. creators

 

নামকরণ

Gainax নামটি ঠিক করার জন্যে তারা বেছে জাপানিজ শব্দ Gaina, যার অর্থ বড়, বিশাল, বা দৈত্যাকৃতির, আর তার সাথে শেষে একটি X লাগিয়ে দেয়, যেন নামের মধ্যে একটা ভাব আসে, দেখতে ভাবচক্করওয়ালা লাগে। ব্যস, অফিসিয়ালি Gainax নামের স্টুডিও তৈরি করে ফেলল সেই অ্যানিমেটররা। যদিও তখন তারা ধরে নিয়েছিল পার্মানেন্ট নয় বরং অল্প কিছুদিনের জন্যে এই নাম থাকবে তাদের, কিন্তু কন্ট্র্যাক্ট সংক্রান্ত কারণে এই নাম আর পরিবর্তন করার সুযোগ পায় নি তারা।

গাইনাক্স নামে আত্মপ্রকাশের পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের কিছু অংশ উল্লেখ করা হল এখানে-

  • ১৯৮৯ সাল: বান্দাই এন্টারটেইনমেন্টের প্রস্তাবনা নেবার পর ১৯৮৭ সালে গাইনাক্স তাদের প্রথম কাজ Royal Space Force: The Wings of Honneamise মুভিটি নিয়ে আসে। মুভিটি ছিল তখনকার সময়ের সাধারণ আনিমের আইডিয়া থেকে একদমই আলাদা। গল্পের ধরণ, আর্টস্টাইল, অনেক দিক থেকেই মুভিটি অন্যরকম ছিল, আর জনপ্রিয়তাও পায় প্রচুর। এমনকি পশ্চিমাবিশ্বেও এটি প্রকাশিত হয় পরে।
  • ১৯৮৮ সাল: এই সাফল্যের পর বান্দাই আরেকটি প্রস্তাবনা নিয়ে আসে – এমন একটি সিরিজ তৈরি করতে হবে যার সাফল্য পেতে তো হবেই, একই সাথে অন্তত ১০ হাজার কপি বিক্রয় করতেও সক্ষম হবে। তাদের এই প্রস্তাবে সাড়া দেয় গাইনাক্স, এবং বান্দাইয়ের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেয়। ১৯৮৮ সালে নিয়ে আসে OVA সিরিজ Gunbuster, যেটি গাইনাক্সের অন্যতম বড় একটি মাইলফলক সিরিজ। প্রথমে কথা ছিল শিনজি হিগুচি সিরিজটি পরিচালনা করবেন, কিন্তু অন্যান্য কিছু প্রোজেক্ট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে উঠে না। ফলে পরিচালনার দায়িত্ব যায় হিদেয়াকি আন্নোর ঘাড়ে, আর এভাবেই ডিরেক্টর হিসাবে হিদেয়াকি আন্নোর অভিষেক হয়।
  • ১৯৮৯ সাল: ডেইলি সিরিজ Sakyo Komatsu’s Animation Theater নিয়ে আসে গাইনাক্স, তবে সিরিজটি তেমন সাড়া ফেলতে পারে নি।
  • ১৯৯০ সাল: বছরটি গাইনাক্সের জন্যে অনেক বিশেষ ছিল। এই বছরে তারা একটি নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে আসে, নাম Nadia: Secret of Blue Water. সিরিজটি কে পরিচালনা করবে সেটি নিয়ে অনেক জটিলতা থাকলেও শেষপর্যন্ত হিদেয়াকি আন্নোকেই পরিচালক হিসাবে ঠিক করা হয়, আর গাইনাক্স নিজেরাই সিরিজটির প্রডিউসার হয়। প্রোজেক্টটি অনেক ব্যয়বহুল ছিল, আর এটি তৈরি করতে গিয়ে গাইনাক্সকে অনেক দেনার মধ্যে পরতে হয়েছিল। তবে সিরিজটির জনপ্রিয়তা মূলধারার আনিমে দর্শকদের কাছে গাইনাক্সকে পরিচিত করে তুলে।
  • ১৯৯১ সাল: এই বছর গাইনাক্স নিয়ে আসে OVA সিরিজ Otaku no Video, যা ওতাকুদের জীবন-যাপন নিয়ে একটি প্যারোডি সিরিজ হিসাবে তৈরি করা হয়। আনিমের ফাঁকে ফাঁকে বাস্তবের এক ওতাকুর ইন্টারভিউ দেখায়, আরও এখানে গাইনাক্সের নিজেদের স্টুডিওরই প্যারোডি তুলে ধরে তারা।
  • ১৯৯৫ সাল: এরকম সময়ে ধারদেনা নিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় পরতে হয় গাইনাক্সকে, আর একই সাথে বেশ কয়েকজন স্টাফ গাইনাক্স ছেড়ে চলে যায়। গাইনাক্স তখন বেশ কিছু এডাল্ট ভিডিও গেম বের করে, যেগুলির বিক্রয় তাদের ধারদেনার অনেক অংশই শোধ করতে সাহায্য করে। নিজেদের এসব সমস্যার অনেকগুলিই মিটিয়ে ফেলবার পর ১৯৯৫ সালের দিকে এসে হিদেয়াকি আন্নো একটি প্রোজেক্ট হাতে নেয়, যা আনিমের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবেই চিরকাল থেকে যাবে। সময়টা গাইনাক্সের জন্যে এবং আন্নোর নিজের জন্যেও ভাল যাচ্ছিল না। স্টুডিওর ধারদেনার সমস্যা, দিন-কে-দিন আনিমের জন্যে বরাদ্য বাজেট কমে আসা, এবং কাজ সংক্রান্ত কারণে আন্নোর বিষণ্ণতা সব মিলিয়ে অনেক ধকলের একটা সময় যাচ্ছিল। এরকম সময়ে আন্নো নতুন এক প্রোজেক্টের আইডিয়া নিয়ে আসে, যেই প্রোজেক্টের ব্যাপারে শুধু আন্নো নিজেই নয়, বরং পুরা গাইনাক্সও আত্মবিশ্বাসী ছিল এই প্রোজেক্টের সাফল্যের ব্যাপারে। প্রোজেক্টটি হল Neon Genesis Evangelion, আনিমের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।
  • Neon Genesis Evangelion: শুরুর দিকে ইভাঞ্জেলিয়নের ভাগ্যের শিকে ছিড়তে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় গাইনাক্সকে। প্রথম প্রথম কেউই সিরিজটির মার্চেন্ডাইজ লাইসেন্স কিনতে চাচ্ছিল না, এর মাঙ্গার ফান্ডিং-এর জন্যে কেউ এগিয়ে আসছিল না। এতকিছুর পরেও গাইনাক্স স্টাফদের মধ্যে সিরিজটি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায় নি। এমন কি হিদেয়াকি আন্নো প্রতিশ্রুতিই দিয়ে দেয় ইভাঞ্জেলিয়ন ব্যবসাসফল হবে। ১৯৯৫ সালে সিরিজটি প্রচার হওয়া শুরু করলে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি প্রোজেক্টটি নিয়ে, ইভাঞ্জেলিয়ন মানেই যেন তখন রমরমা ব্যবসা! ইভাঞ্জেলিয়নের নাম থাকলে যেকোন জিনিসই দেদারসে বিক্রয় হচ্ছে। যদিও শেষের দিকে এসে সিরিজটির বাজেট নিয়ে টানাটানি শেষ দুই পর্বে আনিমে ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কমূলক এন্ডিং-এর জন্ম দেয়, তারপরেও ইভাঞ্জেলিয়ন নামটা এত বেশিই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে সেই নাম ভাঙ্গিয়ে এই ২০১৬ সালে এসেও যেকোন জিনিসের ব্যবসা সফল হয়ে থাকে।
  • ১৯৯৭ সাল: বাজেটের ঘাটতির কারণে ঠিকমত এন্ডিং দেখাতে না পারলেও এরপর ১৯৯৭ সালে আন্নো দুইটি মুভি নিয়ে আসে ইভাঞ্জেলিয়নের এন্ডিং নিয়ে। সেগুলিও একই সাথে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত হয়ে উঠে।
  • ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল: ইভাঞ্জেলিয়নের এরকম মারমার কাটকাট ব্যবসার জন্যে আর এত ভাল সময় কাটাবার পরেও তাদের উপর এরপর বেশ বড় রকমের এক ধাক্কা এসে লাগে। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে এসে ধরা পরে গাইনাক্স বিশাল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছে। পরিমাণটাও অবাক করার মত বড়: ৫৬০ মিলিয়ন ইয়েন!! অনেক তদন্তের পর ১৯৯৯ সালে গাইনাক্স প্রেসিডেন্ট Takeshi Sawamura-কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • কর ফাঁকি দেওয়া নিয়ে এবং প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে গাইনাক্সে অনেক বড় ঝড় যায় একটা, তবে গাইনাক্স স্টাফরা নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে খুব বেশি সময় নেয় নি।
  • ২০০০ সাল: Production I.G-এর সাথে গাইনাক্সের সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল সবসময়েই। তাদের সহযোগিতায় গাইনাক্স ২০০০ সালে আনে স্টুডিওর আরেকটি বড় সাফল্য পাওয়া সিরিজ Fuli Kuli বা FLCL, যা কিনা মডার্ন আনিমের সূচনা করা সিরিজগুলির অন্যতম। এটি তৈরি করা হয়েছিলি এই উদ্দেশ্যে যে সিরিজটি যেন তথাকথিত আনিমে থেকে একদম আলাদা হয়। ইংরেজি ভার্শনের জন্যে প্রায় সব জোক্স নতুন করেও লেখে তারা। FLCL দর্শকরা অনেক ভালভাবেই গ্রহণ করে।
  • ২০০৪ সাল: প্রতিষ্ঠানের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তারা নিয়ে আসে Gunbuster-এর সিকোয়েল সিরিজ
  • ২০০৬ সাল: হিদেয়াকি আন্নো গাইনাক্স ছেড়ে চলে যান। একই সাথে পরবর্তী কিছু সময়ে অনেক অরিজিনাল স্টাফরাও গাইনাক্স ছেড়ে অন্য স্টুডিওতে চলে যায়।
  • ২০০৭ সাল: পরিচালক Hiroyuki Imaishi নিয়ে আসে গাইনাক্সের অন্যতম সেরা সিরিজ Tengen Toppa Gurren Lagann. সিরিজটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে, কিন্তু এই সিরিজ চলাকালীন গাইনাক্সের অরিজিনাল মেম্বারদের একজন Takami Akai একই সাথে গুরেন লাগান-এর টিম ছেড়ে এবং গাইনাক্স ছেড়ে চলে যান।
  • ২০১০ সাল: Hiroyuki Imaishi আরেকটি বহুল জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত এন্ডিং-এর জন্যে বিখ্যাত সিরিজ নিয়ে আসেন: Panty & Stocking with Garterbelt. এই সিরিজটিও ছিল গাইনাক্সের আরেকটি আনিমে যা “আনিমে” ধারণা থেকে অনেক দূরে থেকেছে। আর্টস্টাইল দেখলে ওয়েস্টার্ন কার্টুন মনে না হবার কোন কারণ নেই।
  • পরবর্তী সময়: পরবর্তী সময়টা গাইনাক্সের জন্যে খুব ভাল কাটেনি ঠিক। বেশিরভাগ অরিজিনাল স্টাফ গাইনাক্স ছেরে চলে যাবার পর যেই ধরণের কাজের জন্যে গাইনাক্স বিখ্যাত তেমন কোন কিছু আর নিয়ে আসে নি। তবে এই সময়ে অনেক মাঙ্গা আর লাইট নোভেল এডাপশন করে তারা।

 

 

গাইনাক্স স্টাফরা অন্যত্র গিয়ে যেসব জনপ্রিয় স্টুডিও তৈরি করে-

  • Gonzo: ১৯৯২ সালে কিছু সংখ্যক প্রাক্তন গাইনাক্স সদস্য স্টুডিও গঞ্জো প্রতিষ্ঠা করেন।
  • Khara: ২০০৬ সালে হিদেয়াকি আন্নো গাইনাক্স ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন স্টুডিও খারা। এখানে এসে তিনি নতুন করে ইভাঞ্জেলিয়ন সিরিজ শুরু করেন এবং মুভি আকারে এগুলি নিয়ে আসেন।
  • Trigger: ২০১১ সালে Hiroyuki Imaishi এবং Masahiko Ohtsuka গাইনাক্স ছেড়ে দিয়ে এসে স্টুডিও ট্রিগার প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে এখনকার সময়ে গাইনাক্সের কাজে “গাইনাক্স” ভাবটা পাওয়া না গেলেও ট্রিগারের কাজে মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায় সেই স্বাদ। তাদের কাজ Kill la Kill, Inferno Cop, Ninja Slayer জাতীয় সিরিজগুলির মধ্যে সেই “গাইনাক্স” এর আমেজ পাওয়া যায়।

 

গাইনাক্সের নিজস্বতা আছে অনেক। তাদের সৃষ্ট কাজগুলিতে এমন কিছু জিনিস পাওয়া যায় যার কারণে কোন আনিমে গাইনাক্সের তৈরি এটি শুনলেই দর্শকরা নেড়েচড়ে বসে, কিছু অস্বাভাবিক কিন্তু চমৎকার common idea-এর জিনিস পাওয়া যাবে তাদের আনিমেতে, এই চিন্তাই সবার আগে দর্শকদের মাথায় খেলে যায়। গাইনাক্সের এরকম নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা রইলো-

 

  • Gainax Ending: এক NGE দিয়েই গাইনাক্স আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে রেখে যায় এমন এক অবদান, যার কারণে দর্শকেরা অনেক সিরিজ দেখার সময়েই অস্বস্তিতে থাকে এন্ডিং-এ এসে সব ওলটপালট করে দেওয়া কিছু হবে না তো! সোজা ভাষায় Gainax Ending হল গল্পের এমন এক এন্ডিং যা শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, বরং এমন জিনিস যা কয়েকবার না দেখলে মাথায় ঢুকবে না, কিংবা ঢুকলেও হতবিহবল করে রেখে দিবে দর্শককে। Gainax Ending হল এমন এক এন্ডিং যা দর্শকের Mind Screw করে রেখে যাবে, যা দেখার পর দর্শক মুখে মুখে না হলেও মনে মনে WTF! WTF! বলে চিৎকার করতে থাকবে। Gainax Ending বেশ কয়েকপ্রকার হতে পারে। যেমন – হাসিখুশি এন্ডিং বা দুঃখের এন্ডিং নয়, বরং ৩য় আরেক ধরণের এন্ডিং নিয়ে আসা। আবার অস্পষ্ট ক্লিফহ্যাঙ্গার দিয়ে এন্ডিং হতে পারে। অথবা এমন এন্ডিং হতে পারে যা ধরণে-বলনে এর আগে পুরা সিরিজের সাথে বিন্দুমাত্র মিল রাখে না। অথবা এমন এন্ডিং যা পুরা গল্পটাকে অন্য আঙ্গিকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য করবে আপনাকে। এরকম অদ্ভুতুরে আর ধাক্কা লাগানো এন্ডিং যে পৃথিবীর ইতিহাসে গাইনাক্স শুরু করেছে তা নয়, আরও অনেক আগ থেকেই অনেক গল্পে, মুভিতে ছিল এমন এন্ডিং। কিন্তু ইভাঞ্জেলিয়নের এন্ডিং ব্যাপারটাকে এমন শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে Mind-Fu*k ending বুঝাতে গেলে বেশিরভাগ দর্শকই, বিশেষ করে আনিমে দর্শকেরা Gainanx Ending কথাটি ব্যবহার করে থাকে। গাইনাক্সদের নিজেদের যেসব আনিমেতে Gainax Ending রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকটি: Neon Genesis Evangelion [Gainax Ending শব্দটির উদ্ভাবক], Mahoromatic, Gunbuster, He Is My Master, Magical Shopping Arcade Abenobashi, Panty & Stocking with Garterbelt, Tengen Toppa Gurren Lagann [উল্টাভাবে জিনিসটা নিয়ে আসে, যেখানে সিরিজের শুরুটা এরকম উল্টাপাল্টা হয়, কিন্তু 4. Gainax Endingবাকি সিরিজ সেরকম হয় না], Royal Space Force: The Wings of Honnêamise, Houkago no Pleiades, FLCL [উল্টাভাবে দেখায়, যেখানে পুরা সিরিজটা ওলটপালট হয়ে চলতে থাকে, কিন্তু এন্ডিং থাকে একদম সাধারণ আর স্বাভাবিক]। গাইনাক্স ছাড়া অন্যান্য স্টুডিওর আনিমে যেগুলিতে Gainax Ending দেখা যায় তার কয়েকটি উদাহরণ: Berserk, Mirai Nikki, Chobits, Revolutionary Girl Utena, Dragon Ball GT, Air, Clannad, Kanon, Robotics;Notes, Xam’d: Lost Memories, Gantz, Darker Than Black, Serial Experiments Lain, Mahou Shoujo Madoka★Magica, Mahou Shoujo Madoka★Magica: Rebellion, Guilty Crown, Eureka Seven AO ইত্যাদি। আবার Gainax Ending-এর প্যারোডি দেখা যায় Gintama-এর মাঝের এক পর্বে, Carnival Phantasm-এর প্রথম পর্বে, আবার Kill la Kill-এ এটা নিয়েও শেষের আগের পর্বে মজা করে ভয় দেখানো হয় দর্শকদের। Inferno Cop-এ পুরা Gainax Ending-কে একরকমের উপহাস করা হয় শেষের কয়েকটি পর্বে।
  • Gainaxing: ভদ্র ভাষায় এই ব্যাপারটাকে বুঝাতে গেলে বলতে হবে, কোন নারী চরিত্রকে এমনভাবে উপস্থিত করা হয় যেন তার শরীরে bounce effect অনেক বেশি দেখা যায়। নারীদেহের এক অংশে physics-এর lawগুলি কাজ করে না। গাইনাক্সের আনিমে মানেই যেন তাতে অল্প হলেও Gainaxing থাকবে।
  • Gainax Pose: Gainax Pose বা Gunbuster Pose হল এমন এক অঙ্গভঙ্গি, যেখানে গল্পের প্রোটাগোনিস্ট নায়কোচিত ভাব নিয়ে arms-crossed অবস্থায় থাকবে, শারীরিক ভাষায় একটা গর্বভাব থাকবে, আর আশেপাশে ভিজুয়াল ইফেক্ট হিসাবে বাতাসের প্রবাহ, ধোঁয়া উড়তে দেখা, আগুন জ্বলতে দেখা, আলোর খেলা ইত্যাদি দেখা যাবে। গাইনাক্সের নিজেদের কাজের মধ্যে শুধুমাত্র Gunbuster, Diebuster আর Gurenn Lagann-এই এমন জিনিস দেখা গেলেও এই পোজটির খ্যাতি দুনিয়াজুরে ছড়িয়ে গিয়েছে। নেট জুড়ে দেখা যায় অনেক আর্টিস্ট তাদের পছন্দমত কোন আনিমের নায়ক-নায়িকাকে এরকম Gainax Pose-এ রেখে এঁকেছে।

5. Gainax Pose

  • Mecha: মেকা আনিমে তৈরির প্রতি গাইনাক্সের ঝোঁকটা দেখার মত। সেই DAICON III ও IV থেকে শুরু করে এরপর Gunbuster, NGE, FLCL, Diebuster, Gurren Lagann একে একে অনেকগুলি মেকা আনিমে দিয়ে গিয়েছে গাইনাক্স, এবং তাদের প্রায় সব মেকা আনিমেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
  • Deconstruction and Reconstruction: গল্পে একটা আইডিয়া দেখানো, তারপর পুরা জিনিসটাকে ভেঙ্গে আবার নতুন করে গড়ে তুলা, এই ব্যাপারটা গাইনাক্সের বেশ পছন্দের এক আইডিয়া।
  • Shoutout: গাইনাক্সের অনেক আনিমেতেই দেখা যায় অন্যান্য বিভিন্ন জিনিসের প্রতি রেফারেন্স দেখানো। যেমন, FLCL-এ প্রায় প্রতি পর্বেই একগাদা রেফারেন্স থাকতো, বিশেষ করে Lupin III এর রেফারেন্স একটু পরপরই থাকতো। এক পর্বে আর্ট স্টাইল South Park-এর মত করে ফেলে কিছুক্ষণের জন্যে। এমনকি গাইনাক্সের নিজেদের গাইনাক্স-পূর্ব কাজ DAICON-এর প্রতিও ছোট্ট একটি ট্রিব্যুট রাখে এক পর্বে।

গাইনাক্সের কিছু জনপ্রিয় আনিমে-

  • TV Series: Nadia: The Secret of Blue Water (1990-1991), Neon Genesis Evangelion (1995-1996), His and Her Circumstances (1998-1999), Oruchuban Ebichu (1999), Mahoromatic (2001-2003, 2009), Magical Shopping Arcade Abenobashi (2002), Gurrenn Lagann (2007), Corpse Princess (2008), Hanamaru Kindergarten (2010), Panty & Stocking with Garterbelt (2010), The Mystic Archives of Dantalian (2011), Medaka Box (2012), Wish Upon the Pleiades (2015)
  • OVA: Appleseed (1988), Gunbuster (1988-1989), Otaku no Video (1991), FLCL (2000), Re: Cutie Honey (2004), Diebuster (2004) etc.
  • Films: Royal Space Force: The Wings of Honnêamise (1987), Evangelion: Death and Rebirth (1997), The End of Evangelion (1997), Revival of Evangelion (1997), Gunbuster vs. Diebuster (2006), Gekijōban Tengen Toppa Gurren Lagann (2008-2009) etc.
  • Collaborations with Other Studios: Cowboy Bebop: Knockin’ on Heaven’s Door (2001), Rebuild of Evangelion movies (2007-present)

6. Gainax Collage

গাইনাক্সের গল্পটা একটা রূপকথার গল্প থেকে কোন অংশে কম হয় না আসলে। অল্প কয়েকজন আনিমে পাগল তরুণ মিলে তৈরি করে ফ্যান অ্যানিমেশন, সেখান থেকে বড় স্টুডিও এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ডাক, সেখান থেকে আনিমের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় এক আনিমে স্টুডিও নির্মাণ করে ফেলা, কর কেলেংকারি নিয়ে বিশাল খবর ঘটানো, আনিমের ইতিহাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে দেবার মত কিছু আনিমে তৈরি, দাপটের সাথে ২৫-২৬ বছর রাজত্ব করে ফেলার পর সেই মূল প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেরই প্রস্থান এবং এখন স্টুডিওটির বেহাল দশা – রূপকথার চাইতে অনেক বেশি ঘটনাবহুল গাইনাক্সের জীবনকাহিনী! যদিও এখনও গাইনাক্সে বেশ সক্রিয় ও উৎসাহী অনেক স্টাফ আছে, যারা তাদের মেধার পরিচয় দিয়ে মাঙ্গা ও লাইট নোভেল এডাপশন তৈরি করে যাচ্ছে, তবে গাইনাক্সকে যারা গাইনাক্স বানিয়ে গিয়েছে, তাদের অনুপস্থিতি এখনকার কাজে ভালমতই ফুটে উঠে।

কিন্তু মজার কথা হল, গাইনাক্সের জন্যে আসলে খুব ফাটাফাটি নতুন কিছু নিয়ে আসাও খুব দরকারি না। এক ইভাঞ্জেলিয়নের মার্চেন্ডাইজই এখনও গাইনাক্সকে উপরে তুলে রাখতে যথেষ্ট। কিন্তু আয়ের কথা বাদ দিয়ে বরং দর্শকদের কথা ভাবলে গাইনাক্সের কাছ থেকে চমক জাগানিয়া কোন সিরিজের আশা করাটা এখন হয়তো দুরূহ ব্যাপার। বরং সেরকম কোন আনিমে দেখতে হলে এখন দর্শকদের আগ্রহ থাকে Trigger বা Khara-এর প্রতি, যেখানে গাইনাক্সের প্রতিষ্ঠাতাদের বড় অংশ চলে গিয়ে কাজ করছে এবং গাইনাক্সীয় জিনিস উপহার দিচ্ছে মাঝেমধ্যেই।

7. Gainax chars - Production IG

[Production I.G –এর পক্ষ থেকে গাইনাক্সের জনপ্রিয় চরিত্রদের নিয়ে এই কোলাজটি এঁকেছেন Shigeto Koyama]

Studio Monogatari: Episode 04

Tezuka Productions

Tezuka Logo.ai

১৯৬৮ সালে মুশি প্রোডাকশন ছেড়ে বের হয়ে এসে ওসামু তেজুকা প্রতিষ্ঠা করেন তেজুকা প্রোডাকশনস। মুশি প্রোডাকশন ছেড়ে দিয়ে তেজুকা প্রোডাকশন তৈরির কারণ কিন্তু এই না যে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, বরং তেজুকা নিজের মত করে কাজ করবার জন্যে মুশি প্রোডাকশনের একটি স্পিন-অফ প্রতিষ্ঠান হিসাবে তেজুকা প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে স্টুডিওটি মুশি প্রোডাকশনের বিভিন্ন অ্যানিমেশন কাজের সাবকন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করতো। ১৯৭৩ সালে মুশি প্রোডাকশন দেউলিয়া হয়ে যাবার পর তেজুকা প্রোডাকশনের পূর্ণ উদ্যোমে ব্যবসা শুরু করে এবং মুশি প্রোডাকশনের আনিমে ও মাঙ্গার কপিরাইট নিয়ে নেয়।

তেজুকা প্রোডাকশনের একদম প্রথম দিকের নিজস্ব কাজের মধ্যে অন্যতম হল Fushigi na Merumo (Marvelous Melmo), যা সেই সময়ের অন্যতম বিতর্কিত টিভি সিরিজ ছিল। আনিমেতে “panchira” জিনিসটি নিয়ে আনার পিছনে যেসব আনিমের অবদান রয়েছে তার মধ্যে একদম শুরুর দিকে ছিল এই সিরিজটি, একই সাথে বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বানানো হলেও ওসামু তেজুকার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল সিরিজটিকে শিশুদের জন্যে introductory sex education হিসেবে নিয়ে আনা। বলার অপেক্ষা রাখে না সেই সময়ে সিরিজটি নিয়ে বাবা-মাদের মধ্যে অনেক ঝড় তুলে।

মুশি প্রোডাকশন অ্যাস্ট্রো বয় সিরিজটি নিয়ে আনলেও তাদের অ্যাস্ট্রো বয় মুভিটি নিয়ে ওসামু তেজুকা বেশ অসন্তুষ্ট ছিল, একারণে তেজুকা প্রোডাকশনের হয়ে ১৯৮০-১৯৮১ সালে নতুন করে আবার অ্যাস্ট্রো বয়-এর আনিমে নিয়ে আসে।

তেজুকা প্রোডাকশনের কিছু আনিমে-

  • ১৯৭০-১৯৮০: Marvelous Melmo, Jetter Mars
  • ১৯৮০-১৯৯০: Astro Boy, Aoi Blink, The New Adventures of Kimba the White Lion
  • ১৯৯০-২০০০: The Three-Eyed One, Oniisama e…, Black Jack OVA, Black Jack the Movie
  • ২০০০-২০১০: Astro Boy (2003-2004), Hi no Tori, Black Jack (TV)
  • ২০১০-বর্তমান: Sengoku Musou, Young Black Jack, The Life of Budori Gusuko, Kumi to Tulip

এছাড়াও Madhouse-এর সাথে যৌথভাবে Mokke, TMS Entertainment-এর সাথে Genji Monogatari Senneki এবং MAPPA এর সাথে Sakamichi no Apollon তৈরি করে তারা।

Tezuka Collage 3

 

 

Shin-Ei Animation (Shin-Ei Douga)

shinei

 

অনেক বেশি পর্বের কিছু আনিমের কথা কল্পনা করুন, যেগুলি অনেক অনেক বছর ধরে সব শ্রেণীর দর্শকের মন জয় করে আসছে… খুঁজে পেয়েছেন এমন কিছু সিরিজ?

 

ডোরেমন, নিঞ্জা হাতোরি, পারম্যান, হাগেমারু, আতাশিন’চি, ক্রেয়ন শিন-চান… আনিমে দর্শকদের একটা বড় অংশের ক্ষেত্রেই শৈশবকাল থেকে দেখে আসা এসব সিরিজ তৈরি করেছে যেই স্টুডিওটি তা হল শিন-এই দৌগা। ১৯৭৬ সালে তোয়েই অ্যানিমেশনের একজন প্রাক্তন অ্যানিমেটর, দাইকিচিরো কুসুবে শিন-এই দৌগা স্টুডিওটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই ১৯৭৯ থেকে ডোরেমন এবং ১৯৯২ থেকে ক্রেয়ন শিন-চান যে চলা শুরু করেছে তা এখনও থামার নাম নেই। ডোরেমনের তো সিরিজের পাশাপাশি মুভিও বের হয় অনেক। আর শুধু এগুলোই নয়, বরং একের পর এক শতাধিক পর্বের সব বয়সী দর্শকের উপযোগী আনিমে বানিয়ে আসা এবং একই সাথে সেগুলি খুব জনপ্রিয় করে তুলতে পারার ক্ষমতা আসলেই বিশেষ কিছু!

 

শিন-এই দৌগার কিছু জনপ্রিয় আনিমে-

  • ১৯৭০-১৯৯০: Doraemon, Kaibutsu-kun, Ninja Hattori-kun, Fukuchan, Perman, Obake no Q-taro, Hagemaru-kun
  • ১৯৯০-২০০০: Crayon Shin-chan, Dororonpa!, Manmaru the Ninja Penguin, 21 Emon
  • ২০০০-বর্তমান: Atashin’chi, Ninja Hattori-kun (2004-2008), Ninja Hattori-kun (2013-বর্তমান), Tonari no Seki-kun, Denkigai no Honya-san, Kaitou Joker
  • মুভি: Summer Days with Coo, Crayon Shin-chan-এর ২৫টার মত মুভি এবং Doraemon-এর ২০-২৫টা মুভি

 

 

আর কিছু হোক না হোক, অনেকের শৈশবকাল গড়ে তুলার পিছনে শিন-এই দৌগার ভূমিকা কোনভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। শিন-এই দৌগার তৈরিকৃত আনিমেগুলি দেখলে বুঝা যায় বাচ্চাদের টার্গেট করে তৈরি সিরিজই তাদের কাজের প্রধান অংশ। যদিও এসব সিরিজ এমনই যে বড়রাও তা উপভোগ করতে পারে [যেমন টম-এন্ড-জেরি, লুনি টুন্স সব বয়সী দর্শকদের জন্যেই, এগুলিও তেমনই]।

Shin-Ei Collage 3

 

 

Studio Monogatari: Episode 03

Kyoto Animation (KyoAni)

1. Kyoto Animation Logo

এই সময়ের সেরা কয়েকটি আনিমে স্টুডিওর নাম বলতে গেলে একদম উপরের সাড়িতে যেসব নাম চলে আসবে তার মধ্যে কিয়োঅ্যানি অন্যতম। মুশি-প্রো ছেড়ে আসবার পর ১৯৮১ সালে Hideaki Hatta ও তার স্ত্রী Yoko Hatta মিলে এই স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম ছিল Kyoto Anime Studio. লোগোর ভিত্তি হিসাবে kyō-এর কাঞ্জি (京) ব্যবহার করা হয়। শুরুর দিকে তারা বিভিন্ন আনিমে মুভি ও অন্যান্য আনিমে সিরিজের জন্যে cell painting ও বিভিন্ন কমিশন কাজ করতো। এরকম চলতে থাকার পর ১৯৮৫ সালে তারা একটি লিমিটেড কম্পানি হিসাবে এবং ১৯৯৯ সালে কর্পোরেশন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে, আর তাদের অফিশিয়াল নাম হয় Kyoto Animation. এই সময়ে কিছু বড় প্রোজেক্টের সাথে তারা কাজ করে, যেমন Cowboy Bebop, গান্দাম সিরিজ, এমনকি কিছু জীবলি মুভিতেও তারা সাহায্য করেছে।

১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই ৩০+ বছর সময়ে তাদের কাজ মাত্র ২২টি টিভি সিরিজ ও ৯টি ফিল্ম। এর কারণ তাদের প্রথম নিজস্ব কাজ আসে ২০০৩ সালে, যখন স্টুডিও গনজোর Full Metal Panic! এর সিকোয়েল সিরিজ Full Metal Panic! Fumoffu তৈরির দায়িত্ব পায় তারা। অবশ্য রিলিজ পাওয়া হিসাবে তাদের সর্বপ্রথম নিজস্ব কাজ OVA সিরিজ Munto. Munto তৈরি করেছিল তারা স্টুডিও হিসাবে নিজেদের ক্ষমতা দেখাবার জন্যে, আর Full Metal Panic! Fumoffu এর সাফল্যের কারণে সিরিজটির পরবর্তী এন্ট্রিগুলিও তৈরির দায়িত্বও তাদেরকে দেওয়া হয়।

কিয়োঅ্যানির অধীনে ২০০০ সালে Animation Do নামের একটি সাবসিডিয়ারি অ্যানিমেশন স্টুডিও তৈরি হয়, এই স্টুডিও কিয়োঅ্যানিরই একটি অংশ হিসাবে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে কিয়োঅ্যানির রয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। এই সাফল্য প্রমাণ করার জন্যে একটি মজার তথ্য দেওয়া যাক-

২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কিয়োঅ্যানির চেয়ে বেশি সফল হতে পারে নি অন্য কোন স্টুডিও। এই সময়ের মধ্যে ২০টি সিরিজ রিলিজ দেয় কিয়োঅ্যানি, যার ১৮টিরই DVD-Bluray বিক্রয়ের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়ে যায়। শতকরা হিসাবে ৯০% সাফল্যের হার, যা ২য় স্থানে থাকা ৬৯% সাফল্য নিয়ে Shaft-এর সাথে পার্থক্যটা চোখে পরার মত!

2. 2005-2014 success

আনিমে স্টুডিও হলেও জাপানের তথাকথিত আনিমে স্টুডিও হতে কিয়োঅ্যানি অনেক আলাদা। এই আলাদাভাবে কাজকর্ম এগিয়ে নিয়ে যাবার কারণে তাদের সাফল্যের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়-

  • আভ্যন্তরীণ কাজ: সবচাইতে বড় কারণ হল, কিয়োঅ্যানি তাদের সব কাজ আভ্যন্তরীণভাবে করে থাকে। ডিরেক্টিং, অ্যানিমেশন, রাইটিং – সবকিছু কিয়োঅ্যানি নিজেদের স্টুডিওর ভেতরেই করে থাকে। অন্যান্য আনিমে স্টুডিওগুলির ক্ষেত্রে যেখানে ডিরেক্টর কিংবা অ্যানিমেটর-এর জন্যে ফ্রিল্যান্স কিংবা অন্য কোন স্টুডিওর কাছে যেতে হয়, সেখানে কিয়োঅ্যানি সবকিছু নিজেরা নিজেরাই করে থাকে। আর এর সুফলও পায় কিয়োঅ্যানি – যেহেতু নিজেদের মধ্যেই সব কাজ হয়ে থাকে, তাই আনিমে প্রস্তুতকর্তাদের মধ্যে একটা ভাল যোগাযোগ থাকে। একজন আরেকজনকে ভালমত বুঝতে পারে, ঠিকমত জেনে যায় কে কেমন কাজ চাচ্ছে, কেমন ফলাফল আশা করছে।
  • অ্যানিমেশন স্কুল: অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে নিজেরা নিজেরা করবে – এই ব্যাপারটা নিয়ে কিয়োঅ্যানির এতই কড়াকড়ি যে তারা নিজেরাই একটি স্কুল খুলেছে যেখানে অ্যানিমেটরদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিয়োঅ্যানির Kyoukai no Kanata-এর প্রায় সবটুকু অ্যানিমেশনই কিয়োঅ্যানির সেই স্কুলের গ্র্যাজুয়েটদের করা।
  • পারিশ্রমিক: একটি বড় কারণ কিয়োঅ্যানির পেমেন্ট সিস্টেম। কিয়োঅ্যানি তাদের স্টাফদেরকে বেতন হিসাবে পারিশ্রমিক দেয়, যেখানে অন্যান্য স্টুডিওর ক্ষেত্রে  স্টাফদেরকে কমিশন হিসাবে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এই কাজটা কিয়োঅ্যানির নিজেদের সাফল্যেরও একটা অন্যতম বড় কারণ, যেহেতু মাসিক বেতনের কারণে স্টাফরা নিজেদের কাজ ঠান্ডা মাথায় চিন্তাহীনভাবে করতে পারে। কোন এক আনিমে তৈরির জন্যে কাজে তাড়াহুড়া করা লাগে না, নিজেদের সময় নিয়ে সুন্দরমত কাজ শেষ করতে পারে।
  • অ্যানিমেশন প্রস্তুতি: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিয়োঅ্যানি তাদের কোন আনিমের অ্যানিমেশনের সব কাজ সিরিজটি টিভিতে প্রচার শুরুর বেশ আগেই প্রস্তুত করে ফেলে। এর ফলে তারা সময় নিয়ে অনেকরকমের ডিটেইলস নিয়ে কাজে লেগে যেতে পারে – যে কারণে কিয়োঅ্যানির সব সিরিজই দেখতে খুবই সুন্দর হয়ে থাকে।
  • LN প্রকাশণাস্বতন্ত্র স্টুডিও হিসাবে তাদের সাফল্যের আরেকটি বড় কারণ বিভিন্ন লাইট নোভেল প্রকাশনা। নিজেদের প্রতিষ্ঠান হতে প্রতিবছর একটি লাইট নোভেল কম্পিটিশনের আয়োজন করে তারা, এবং এখান থেকে উঠে আসা ভাল লাইট নোভেলের উপর ভিত্তি করে আনিমে বের করে তারা। এই ব্যাপারটি অন্য সব আনিমে স্টুডিও থেকে তাদেরকে অনেক উপরে নিয়ে রেখেছে একটি ব্যাপারে – কাজের নিশ্চয়তা। অন্যান্য আনিমে স্টুডিওগুলিকে কোন এডাপশনের জন্যে একধরণের নিলামে জিতে নিতে হয়, প্রতিপক্ষ স্টুডিওগুলিকে হারিয়ে দখল করতে হয় কোন LN, VN বা মাঙ্গা এডাপশনের অধিকার। এরকম কাজ না পেতে থাকলে এক সময়ে স্টুডিওটি বিলুপ্তির পথেও পরতে হতে পারে [খুব সাম্প্রতিক এমন ঘটনা দেখা হয়েছে Studio Manglobe-এর ক্ষেত্রে, বেশি কাজ না পেতে পেতে দেউলিয়া হয়ে যায় তারা]। কিয়োঅ্যানির এখানে সবচেয়ে বড় বাজিমাত – নিজেদের প্রকাশণা থেকে LN বের হয় বলে তাদের হাতে সবসময়েই কোন না কোন এডাপশনের সত্য থাকে, কাজ ফুরিয়ে যাবার চিন্তা থাকছে না আর [অবশ্য নিজেদের LN বাদেও বাইরের কোন LN থেকেও তারা এডাপশন নিয়ে আসে মাঝেমধ্যে, যেমন Amagi Brilliant Park, Hibike! Euphonium]। আবার এই সুযোগে নিজেদের LN-এরও বিজ্ঞাপন হয়ে যায় – সবদিক থেকেই Win-Win অবস্থা কিয়োঅ্যানির।
  • Visual Storytelling: কিয়োঅ্যানির একটি স্ট্রং পয়েন্ট হল ভিজুয়াল স্টোরিটেলিং। একজন ন্যারেটর বা কোন ক্যারেক্টার কথার মাধ্যমে কোন ঘটনা কিংবা কারও চরিত্রের কোন দিক বুঝিয়ে দেওয়ার থেকে বরং দর্শকদেরকে চাক্ষুষরূপে একটা ঘটণা বা চরিত্রের দিক তুলে ধরা হল ভিজুয়াল স্টোরিটেলিং। কোন ক্যারেক্টারের নরণ-চরণ, আচার-আচরণ, ইন্ট্যার‍্যাকশন, সিনেমাটোগ্রাফি ইত্যাদির মাধ্যমে কোন একটা ব্যাপার দর্শকদের অবচেতন মনে ঢুকিয়ে দেবার এই কাজটা কিয়োঅ্যানি অনেক ভালভাবে করতে পারে। যার জন্যে Moe চরিত্র দিয়ে আনিমে ভরিয়ে রাখলেও এবং কোন বিশেষ ঘটনা না থাকলেও একটা গল্প অনেক মন ছোঁয়ার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে কিয়োঅ্যানি।

এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন আসে, কিয়োঅ্যানি এরকম সব পদক্ষেপ নিয়ে এত সফল হলে অন্যান্য স্টুডিও কেন এরকম করছে না?

  • ভাগ্য। কিয়োঅ্যানির সৌভাগ্য যে তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলি ঠিকমত সফল হতে পেরেছে।
  • কিয়োঅ্যানিও একসময়ে অন্যান্য স্টুডিওর মত কাজ করতো, প্রায় ১০ বছর ধরে তারা Kadokawa-এর সাথে পার্টনারশিপে ছিল। এ সময়ে তারা বেশ কয়েকটি VN এর key adaption করে, নিয়ে আসে অন্যান্য প্রোজেক্টের এডাপশন যেমন Haruhi Suzumiya, Lucky☆Star ।
  • ২০০৯ সালে তারা এক বিশাল জুয়াখেলা খেলে। নিজেদের নামে একটি কম্পিটিশনের আয়োজন করে যাতে বিজয়ী LN-এর আনিমে আডপশন করবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্রোজেক্ট সাফল্যের মুখ দেখতে পাওয়ায় পরবর্তীতে এই কন্টেস্টের এন্ট্রিগুলির মধ্য থেকে Chuunibyo, Tamako Market, Free! এর এডাপশন নিয়ে আনে কিয়োঅ্যানি।

কিয়োঅ্যানির কিছু জনপ্রিয় আনিমে-

3. KyoAni Collage

কিয়োঅ্যানির এই সাফল্যের পথটার একটা ছোট্ট বিবরণ দেওয়া যাক-

  • ২০০৫ সালকিয়োঅ্যানির জন্যে বছরটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এই বছরই তারা নিয়ে আসে তাদের প্রথম VN adaption: Air. এয়ার আনিমেটি ছিল সেই সময়ের নতুন বাড়ন্ত Moe ট্রেন্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং একই সাথে VN adaptation-এর জনপ্রিয় হয়ে উঠার সময়ের অন্যতম এন্ট্রি। এয়ার আনিমেটি কিয়োঅ্যানিকে আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত স্থানে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
  • ২০০৬ সালআরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বছর কিয়োঅ্যানির জন্যে, এ বছর তারা নিয়ে আসে তাদের ২য় VN adaption: Kanon. তবে ২০০৬ সালে কিয়োঅ্যানি স্পটলাইট কেড়ে নেয় যেই সিরিজটি দিয়ে তা হল The Melancholy of Haruhi Suzumiya. এমনিতেই হারুহি সুজুমিয়ার ফ্যানবেজ বেশ বড় ছিল তখন, তার উপর অল্প কয়েকটি আনিমে নিয়ে আসা কিয়োঅ্যানির জন্যে ব্যাপারটি ছিল অনেক বড় চাপের। বলাই বাহুল্য, চাপকে উড়িয়ে দিয়ে সাফল্যের মুখ দেখতে পায় তারা।
  • ২০০৭ সাল৩য় VN adaption নিয়ে আসে কিয়োঅ্যানি: Clannad, একই সাথে আরেকটি জনপ্রিয় Moe Comedy সিরিজLuckyStar নিয়ে হাজির হয় তারা। দুটি সিরিজই কিয়োঅ্যানির জন্যে ব্যবসাসফল ছিল।
  • ২০০৯ সালহারুহি সুজুমিয়া ফিরে আসে এই বছর, এবং নতুন সিরিজটির কুখ্যাত/বিখ্যাত Endless Eight-এর জন্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় কিয়োঅ্যানির উপর দিয়ে। কন্ট্রোভার্শিয়াল হয়ে থাকলেও সিরিজটির ব্লুরে বিক্রয় বেশ ভাল হয়। একই সাথে এই বছর থেকেই তারা LN এর পাবলিশার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে বছরটি কিয়োঅ্যানির জন্যে বিশেষ কিছু ছিল কারণ এই বছরেই তারা নিয়ে আসে K-On! যার ব্লুরে বিক্রয় সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়!
  • ২০১১ সালNichijou এই বছরে আসে, এবং এর ব্লুরে বিক্রয় ৩০০০ ছাড়ালেও তা কিয়োঅ্যানির জন্যে খুব বেশি ছিল না। তবে তারপরেও সংখ্যাটা অন্যান্য স্টুডিওর হিসাবে বেশ বড় একটা সংখ্যা।
  • ২০১২: পরবর্তী বছরগুলিতেও একই ট্রেন্ড দেখা যায়। Hyouka, Chuunibyo বেশ ভাল বিক্রয় হলেও কিয়োঅ্যানির জন্যে সেটা খুব বেশি ছিল না।
  • ২০১৩ সালTamako Market বেশ বড় ধরণের হতাশার কারণ হয় কিয়োঅ্যানির জন্যে। তবে এই বছরই এমন এক সিরিজ নিয়ে আসে কিয়োঅ্যানি যা তাদের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজে পরিণত হয়: Free!. সিরিজটি রিলিজ পাবার আগে থেকেই হিট হয়ে যায় একদম, আর এর ২য় অ্যাড মুক্তি পাবার পর তা একদম ভাইরাল হয়ে যায় নেটজুড়ে।
  • ২০১৪ সাল: বছরটা তেমন ভাল ছিল না কিয়োঅ্যানির জন্যে। Kyoukai no Kanata তেমন ভাল ব্যবসা করতে পারে না, আর Amagi Brilliant Park তার চাইতে অল্প কিছু ভাল ব্যবসা করতে পারে।
  • ২০১৫ সালHibike! Euphonium অনেকটা K-On ধাঁচের বানানোর চেষ্টা করা হয়, সিরিজটা বেশ জনপ্রিয় হয়।
  • ২০১৬ সালএ বছরে এই মুহুর্তে এয়ার হচ্ছে Musaigen no Phantom World, সিরিজটি নিয়ে এই মুহুর্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

কিয়োঅ্যানির কাজকর্মের ধরণ নিয়ে কয়েকটি মজার তথ্য-

  • Snarky Male Leads: কিয়োঅ্যানির আনিমেগুলিতে খামখেয়ালী, মুডি ধরণের নায়ক চরিত্র রাখবার একটা প্রবণতা দেখা যায়: Air-এর Yukito, Haruhi Suzumiya-এর Kyon, Kanon-এর Yuuichi, Clannad-এর Tomoya, Hyouka-এর Houtarou এবং কিছুক্ষেত্রে Free! এর Haruko ও Kyoukai no Kanata-এর Akihito.
  • Carbon-Copy: কিয়োঅ্যানির বিপক্ষে একধরণের নালিশ আছে যে তারা একই রকম দেখতে সব চরিত্র তৈরি করে থাকে। চুলের স্টাইল বাদ দিলে মুখের গড়ণ, চোখের স্টাইল, সবকিছু হুবহু একইরকমের হয়ে থাকে কিয়োঅ্যানির আনিমেগুলিতে।

4. Carbon Copy

শুধু তাই নয়, বরং তাদের আনিমের চরিত্রগুলির ডিজাইন দেখতে গেলে একটা মজার ব্যাপার দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের সময়টাতে তাদের সবগুলি সিরিজের চরিত্র দেখতে প্রায় একইরকম ছিল:

5. Evolution

  • Cute Girls Doing Cute Things: Moe চরিত্র, কোন প্লট বা গল্প নাই, খালি cute girls doing cute things – এরকম কারণ দেখিয়ে অনেক দর্শকই কিয়োঅ্যানির আনিমে দেখতে চায় না, তবে এই ট্রেন্ডটা এখন অনেক জনপ্রিয়। আর একে জনপ্রিয় করার পিছনে কিয়োঅ্যানিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। Lucky☆Star, K-On!, Nichijou ইত্যাদি এই ধরণের আনিমে শুধু বড় সাফল্যই পায় নি কিন্তু, বরং পরবর্তীতে একই ঘরানার অনেক আনিমের জন্যে পথ দেখিয়ে গিয়েছে। Non Non Biyori, Gochuumon ধরণের সিরিজগুলি এই জাতীয় আনিমের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। অবশ্য এরকম আনিমে তৈরি করে কিয়োঅ্যানি যে পরিমাণ সাফল্য পেয়েছে অন্যান্য স্টুডিও তার খুবই সামান্য অংশ অর্জন করতে পেরেছে মাত্র!
  • 1st Doesn’t Win: কিয়োঅ্যানি ঘটা করে তাদের LN কন্টেস্ট আয়োজন করে থাকলেও সেখান থেকে আনিমে এডাপশন করার ক্ষেত্রে বিজয়ী এন্ট্রিকে তারা গ্রহণ করে নাই!! Chuunibyo, Kyoukai no Kanata, Free!, Musaigen no Phantom World – সব ক্ষেত্রেই যেগুলি আনিমে এডাপশন পেয়েছে তা হল কন্টেস্টের Special Mentionগুলি।

 

কিয়োঅ্যানির কাজ নিয়ে সমালোচনা যতই হোক, একটা জিনিস অবশ্যই মানতে হবে – তাদের তৈরি আনিমেগুলি বেশ ভালই সফল। তারা জানে কিভাবে জনপ্রিয় আনিমে তৈরি করতে হয়, এবং সেটাই তারা করে আসছে।

Studio Monogatari: Episode 02

MADHOUSE Inc. (Madhouse)

1. madhouse

 

দর্শকমহলে সবচেয়ে পছন্দের আনিমে স্টুডিও কোনটি জিজ্ঞেস করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেই নামটি শুনা যাবে তা হল ম্যাডহাউজ স্টুডিও! এমনও সম্ভাবনা আছে, আপনি আপনার পছন্দের সেরা আনিমে লিস্টের দিকে তাকালে তার মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে ম্যাডহাউজের তৈরি সিরিজের রাজত্ব দেখতে পাবেন। স্টুডিওটির এত বেশি জনপ্রিয়তার কারণও আছে অনেক, আর আনিমে তৈরির ক্ষেত্রে innovation ও চমৎকার strategy তাদের সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ।

১৯৭২ সালে মুশি-প্রো ছেড়ে চলে আসেন চারজন বিখ্যাত আনিমে ডিরেক্টর মাসাও মারুইয়ামা, ওসামু দেজাকি, ইয়োশিয়াকি কাওয়াজিরি ও শিগেইয়ুকি হায়াশি (রিন্তারো) এবং প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাডহাউজ। ম্যাডহাউজের সর্বপ্রথম কাজ Ace wo Nerae! (Aime for the Ace!) [1973].

2. Founders

আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে ম্যাডহাউজের দাপটের সাথে টিকে থাকার জন্যে তাদের নেওয়া কিছু চমৎকার স্ট্র্যাটেজি অনেক কাজে দিয়েছিল-

ম্যাডহাউজ শুরু থেকেই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কাজ করতো। প্রথম কাজ একটি টিভি সিরিজ হয়ে থাকলেও তারা এরপর কোন টিভি সিরিজের দিকে না গিয়ে বরং একের পর এক আনিমে মুভি নির্মাণ করতে শুরু করে। ৮০’র দশকে গান্দাম ও ম্যাক্রসের সাফল্যের কারণে অন্যান্য স্টুডিও যেখানে টিভি সিরিজ নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পরে সেখানে ম্যাডহাউজ অনেক বেশি পরিমাণ মুভি তৈরি করতে থাকে, এমনকি বছরে ৪-৫টি করে মুভি রিলিজ দিতে থাকে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে এই সময়টা এমন ছিল যখন আনিমে মুভি ভাল ফান্ডিং পেত না। ম্যাডহাউজের তখনকার এই মুভিপ্রীতির ফলাফলে আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে মুভি নির্মাণের সাফল্যের পথ তৈরি হয়ে যায়।

  • ৮০’র দশকের শেষের দিকে গিয়ে দেখা যায় অন্য এক চিত্র। মুভি নির্মাণের পিছনে যা খরচ হয় তা মুভির তৈরির লাভের পরিমাণের তুলনায় বেশি। তবে ব্যাপারটি ম্যাডহাউজকে তেমন সমস্যায় ফেলে নি, কারণ তারা অন্যান্য স্টুডিও থেকে এক ধাপ এগিয়ে ছিল – অন্যান্য স্টুডিও হয় টিভি সিরিজ, কিংবা মুভি বা ওভিএ যেকোন একটা লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকলেও ম্যাডহাউজ শুধু এক নির্দিষ্ট ধরণের জিনিস তৈরির পিছনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এসময়ে তারা মুভি থেকে মুখ সরিয়ে তৈরি করা শুরু করে OVA সিরিজ। বছরে একাধিক OVA তৈরি করতে থাকে তারা, আর মাঝেমধ্যে অল্প কিছু মুভি রিলিজ দিত। আনিমের তৈরির ধরণে পার্থক্য আসলেও তাদের কোয়ালিটিতে একটুও পতন ঘটে নি। OVA নির্মাণ তাদেরকে আর্থিক সমস্যার মুখ থেকেও তুলে আনে।
  • বিভিন্ন সিরিজের সাফল্যের ক্রেডিট তখন যেত প্রধাণত এদের ডিরেক্টরদের বা প্রোডিউসারদের কাছে, কিন্তু ম্যাডহাউজ এসে সিস্টেমটার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়। বিভিন্ন প্রোজেক্টের জন্যে ম্যাডহাউজ সব ট্যালেন্টেড নির্মাতাদের যোগাড় করতো। ডিরেক্টরদের দিত তাদের এসব প্রোজেক্টের উপর পূর্ণ ক্ষমতা। এমন উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার কারণে তখন থেকে সিরিজের সাফল্যের ক্রেডিট দিতে দেখা যেত আনিমেটির সুডিওকে।
  • ম্যাডহাউজের বিভিন্ন প্রোজেক্টের জন্যে বিভিন্ন নির্মাতাদের পিছনে ছুটে চলার ফলে এমন সময়ে সাতোশি কনের মত অনেক গুণী নির্মাতা উঠে আসেন।
  • ৯০’র দশকের শেষের দিকে তাদের স্ট্র্যাটেজিতে আবার পরিবর্তন আসে, এবার তারা টিভি সিরিজ নির্মাণের দিকে দৃষ্টিপাত করে। অল্প কিছু মুভি তৈরির ব্যাপারটি তখনও চলতে থাকে।
  • ম্যাডহাউজের আনিমে তৈরির ধরণের পিছনে এরপর বড় পরিবর্তনটা আসে ২০০৮ সালের দিকে, যখন জাপানে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। সমগ্র আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতেই বিশাল পরিবর্তন চলে আসে এবং প্রায় সব স্টুডিওকেই তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হয়। আর এই ২০০৮ সাল থেকেই ম্যাডহাউজের সোনালী যুগের শেষের শুরু হয়। ২০১১ সালে ওসামু দেজাকির মৃত্যুর পর এবং এরই মাঝে অনেক নামকরা স্টাফ ম্যাডহাউজ ছেড়ে চলে যাবার সাথে সাথেই ম্যাডহাউজের সোনালী যুগের সমাপ্তি হয়।
  • নতুন চেহারার ম্যাডহাউজ অবশ্য তাদের পুরানো কৌশল অবলম্বন করতে থাকে, বিভিন্ন গুণী নির্মাতাদের নিয়ে এসে অনেক অনেক টিভি সিরিজ তৈরি করে। সোনালী যুগের সব নামকরা নির্মাতারা ম্যাডহাউজ ছেড়ে চলে যাবার পরেও ম্যাডহাউজ ধীরে ধীরে তাদের নতুন স্টাফদের মধ্য থেকেই অনেক ভাল কিছু ডিরেক্টরদের পেয়ে আসছে এখন।

ম্যাডহাউজ স্টুডিওতে আনিমে ইন্ডাস্ট্রির অনেক জিনিয়াস মস্তিষ্ক কাজ করেছে। তাদেরই অল্প কয়েকজন-

  • Masao Maruyama: ম্যাডহাউজের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম, তিনি স্টুডিও হেড হিসাবে একের পর এক নতুনত্ব নিয়ে আসা সব আনিমে প্রোজেক্টের সূচনা করেন। [শিরোবাকো আনিমেটি যদি দেখে থাকেন, তাহলে মারুইয়ামার আনিমে ভার্শনকে দেখতে পাবেন কিন্তু। সিরিজে Musashino Animation-এর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখানো হয়েছে তাকে। স্টুডিওটি ঠিক কোন সত্যিকারের অ্যানিমেশন স্টুডিওকে তুলে না ধরলেও ধারণা করা হয় ম্যাডহাউজ এবং আরও কয়েকটি আনিমে স্টুডিওর বিভিন্ন জিনিস একত্রিত করে আনিমেটিতে দেখানো এই স্টুডিওকে সাজানো হয়েছে।]
  • Satoshi Kon:  নিজস্ব ধাঁচের সিনেমাটোগ্রাফির জন্যে বিশ্ববিখ্যাত এই ডিরেক্টর ম্যাডহাউজ থেকে রিলিজ দেন Perfect Blue [1997], Millennium Actress [2001], Tokyo Godfathers [2003], Paranoia Agent [2004], Paprika [2006]
  • Takeshi Koike: Afro Samurai pilot [2003] দিয়ে নজর কাড়েন, এরপর নির্মাণ করেন Redline [2009]
  • Hiroshi Hamasaki: ডিরেক্টর হিসাবে প্রথম নির্মাণ করেন Texhnolyze [2003], এবং এরপর নিয়ে আসেন Shigurui [2007]
  • Masayuki Kojima: জনপ্রিয় এই ডিরেক্টর নিয়ে আসেন Magical Shopping Arcade Abenobashi [2002], Monster [2003], Piano no Mori [2007]
  • Mamoru Hosoda: তোয়েই অ্যানিমেশন ছেড়ে এসে ম্যাডহাউজে যোগ দেন ২০০৫ সালে, নির্মাণ করেন The Girl Who Leapt Through Time [2006], Summer Wars [2009]
  • Tetsurou Araki: Death Note [2006], ও Highschool of the Dead [2010] তৈরি করেন এই বিখ্যাত ডিরেক্টর
  • Masaaki Yuasa: Kaiba [2008], Tatami Galaxy [2010] এর মত কিছু জনপ্রিয় অন্য ধাঁচের আনিমে তৈরি করেন
  • Satoshi Nishimura: Trigun [1998], Hajime no Ippo [2000], Trigun: Badlands Rumble [2010] পরিচালনা করেন

3. Genius

এত এত জনপ্রিয় সব মুখ ম্যাডহাউজকে আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষভাবে উঠিয়ে নিয়ে আনলেও ম্যাডহাউজ বেশ কঠিন একটা সময় পার করে কয়েক বছর আগে। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের এই সময়টিতে ম্যাডহাউজের সোনালী যুগের সমাপ্তি ঘটে যায়। সবার মুখে মুখে ম্যাডহাউজের যেসব বিখ্যাত কাজ নিয়ে প্রশংসার ফুল ফুটে বেড়ায়, সেই সব কাজ উপহার দেওয়া স্টাফদের অধিকাংশই এই কঠিন সময়টাতে ম্যাডহাউজ ছেড়ে চলে যায়।

  • শুরুটা হয় ২০০৮ সালে জাপানের অর্থনৈতিক মন্দা দিয়ে। এই সময়টাতে পুরা আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতেই এক বিশাল পরিবর্তনের ঢেউ খেলে যায়। এর ধাক্কা এসে লাগে ম্যাডহাউজের গায়েও। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পরে তারা।
  • ২০১০ সালে সাতোশি কনের মৃত্যু শুধু আনিমে ইন্ডাস্ট্রিই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির জন্যে দুঃখের এক সংবাদ নিয়ে আসে। Dream Machine নামের নতুন এক মুভির কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিদায় নেন তিনি।
  • মাসাও মারুইয়ামার সাথে ম্যাডহাউজের স্টাফদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে সম্পর্ক খারাপ হয়ে আসছিল অনেকদিন ধরে। এরই জেড় ধরে ২০১১ সালে ম্যাডহাউজ ছেড়ে দিয়ে মারুইয়ামা তৈরি করেন তার নিজস্ব স্টুডিও MAPPA, এবং সাতোশি কনের অসমাপ্ত কাজ Dream Machine মুভির সব স্বত্বাধিকার নিয়ে চলে যান তার নতুন স্টুডিওতে।
  • মাসাকি ইউয়াসা এই সময়ের পর থেকে আর ম্যাডহাউজের সাথে কোনরকমের কাজে জড়িত হন নি।
  • তেতসুরৌ আরাকি ২০১১ সালে ম্যাডহাউজ ছেড়ে দিয়ে Production I.G-তে যোগ দেন, হিরোশি হামাসাকি একই বছর যোগ দেন White Fox-এ। মামোরু হোসোদা সে বছর ম্যাডহাউজ থেকে বের হয়ে এসে তৈরি করেন Studio Chizu.
  • মাসায়ুকি কোজিমা ম্যাডহাউজের হয়ে ২০১১ সালেই তার শেষ কাজ The Tibetan Dog সম্পন্ন করে এরপর Kinema Citrus-এ কাজ করেছেন।
  • সাতোশি নিশিমুরা ২০১০ সালে ম্যাডহাউজের সাথে শেষ কাজ হিসাবে Trigun: Badlands Rumble নির্মাণ করেন। এরপর এখন তিনি মারুইয়ামার সাথে MAPPA-এ গিয়ে Ushio to Tora তৈরিতে ব্যস্ত আছেন।
  • তাকেশি কোইকে-কে ২০১০ সালে বহিস্কার করা হয়। কারণ হিসাবে মারুইয়ামা টুইটারে উল্লেখ করেন রেডলাইন সিনেমা নির্মাণে অনেক বেশি সময় নেবার কারণেই তাকে এই সমস্যার মুখে পরতে হয় [৭ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল মুভিটি নির্মাণের জন্যে]।
  • এছাড়াও ম্যাডহাউজ থেকে অনেক গুণী Key Animator, Photographer, Director, Animation Director, Storyboard Artist ম্যাডহাউজ ছেড়ে চলে যায় MAPPA, J.C. Staff, Studio Khara, Tezuka Production, T2 Studio ইত্যাদি অন্য অনেক স্টুডিওতে, অনেকে আবার ম্যাডহাউজ ছেড়ে দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজে ব্যস্ত আছেন।

ম্যাডহাউজকে ম্যাডহাউজ বানানো এসব নির্মাতা, অ্যানিমেটর চলে যাবার পরে এখন ম্যাডহাউজের কী অবস্থা?

  • ২০১১ সাল থেকে এখন যেই ম্যাডহাউজকে আমরা চিনি তা আসলে সেই আগের যুগের ম্যাডহাউজের ছায়ামাত্র বলা যায়। সোনালী দিনের মত সাফল্য পাওয়া একমাত্র সিরিজ Hunter x Hunter (2011).
  • এই সময়ে Marvel-এর কিছু আনিমে অ্যাডাপশন, Mahou Sensou [2014], Hunter x Hunter এর দুটি মুভি সহ আরও কিছু সিরিজ চরমভাবে ব্যর্থ হয় এবং ম্যাডহাউজকে এ কারণে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়।
  • BTOOM! [2012], Photo Kano [2013]-এর মত কয়েকটি Hit or Miss সিরিজ ম্যাডহাউজকে ভয়াবহ বিপদ থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়।
  • ডিরেক্টর Morio Asaka তৈরি করেন Chihayafuru [2011], Ore Monogatari!![2015], যা বেশ সুনাম অর্জন করে দর্শকমহলে।
  • ডিরেক্টর Atsuko Ishizuka তৈরি করেন Hanayamata [2014], No Game No Life [2014] এবং এই মুহুর্তের অনগোইং সিরিজ Prince of Stride: Alternative [2016]. তার ট্রেডমার্ক ভিজুয়াল স্টাইলের জন্যে অল্প সময়েই ক্ষ্যাতি ছড়িয়ে পরে তার কাজের।
  • The Ambition of Oda Nobuna [2012], Sunday Without God [2013] নিয়ে আসেন Yuuji Kumazawa.
  • ২০১১ সালের পর প্রথম অরিজিনাল আনিমে হিসাবে ম্যাডহাউজ নিয়ে আসে Death Parade [2015], পরিচালনা করেন Yuzuru Tachikawa.
  • সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাডহাউজের সবচাইতে বড় হিট সিরিজ One Punch Man-এর সাফল্য আনিমে ইন্ডাস্ট্রির জন্যে অনেক বড় এক অর্জন হলেও ম্যাডহাউজের জন্যে দুঃখজনক ব্যাপার হল, নিজস্ব স্টাফদের অবদান এতে সামান্যই ছিল। এই সিরিজ তৈরির পিছনে Key Animator হিসাবে ছিলেন Yoshimichi Kameda (Bones), Yuki Watanabe (Doga Kobo), Se Jun Kim (Sunrise/Bones), Gosei Oda (Bones/Gainax), Arifumi Imai (Wit Studio/Production I.G), Shuhei Handa (Trigger), Yutaka Nakamura (Bones), এবং ডিরেক্টর হিসাবে ছিলেন Shingo Natsume. ম্যাডহাউজের অবদান বলতে যেন ছিল এদেরকে এক টেবিলে বসিয়ে কাজ করানো।

তবে সোনালী প্রজন্মের চলে যাবার পরেও ম্যাডহাউজ এখন আবার মুখ তুলে দাঁড়াচ্ছে ধীরে ধীরে। স্টুডিওটির নিজস্ব কৌশলে পরিবর্তন তেমন আসে নি, গুণী নির্মাতাদের একত্রিত করে এখনও বেশ ভাল সিরিজ উপহার দিয়ে আসছে, অন্যদিকে স্টুডিওর ডিরেক্টররা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও অন্তত ৫-১০ বছর রাজত্ব করার মত সব অস্ত্রই তাদের হাতে আছে!

এতক্ষণ তো গেল স্টুডিওটির ছোটখাট ইতিহাস, এর আনিমেগুলির ব্যাপারে এবার আলোচনা করা যাক। এই এক স্টুডিও থেকে এত বেশি নামকরা সব আনিমে এসেছে যে শুধু বিখ্যাত আনিমেগুলির নাম একের পর এক বলে যেতে থাকলেও ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যেতে পারে! জনপ্রিয় সব নামগুলির মধ্যে অল্প কিছু নাম উল্লেখ করছি, দেখুন এবং মিলিয়ে নিন এদের কতগুলি আপনি বিভিন্ন আনিমে রিকমেন্ডেশন পোস্ট/ডক/ফোরামে সাজেশন হিসাবে দেখেছেন-

70’s-80’s: Ace wo Nerae!, Barefoot Gen, Legend of the Galactic Heroes MOVIE (1988)

  • Early 90’s: Bio Hunter, The Cockpit, Cyber City Oedo 808, DNA², Memories, Record of Lodoss War
  • Late 90’s: Cardcaptor Sakura, Master Keaton, Perfect Blue, Petshop of Horrors, Trigun, Vampire Hunter
  • 2000-2003: Afro Samurai Pilot, Beyblade [1st Season], Boogiepop Phantom, Chobits, Galaxy Angel, Gungrave, Gunslinger Girl, Hajime no Ippo, Metropolis, Millennium Actress, Space Pirate Captain Herlock: The Endless Odyssey, Texhnolyze, Tokyo Godfathers, Vampire Hunter D (2000), X the Series
  • 2004-2007: Ani*Kuri15, BECK, Black Lagoon, Claymore, Death Note, Dennou Coil, The Girl Who Leapt Through Time, Ichigo 100%, Kaiji, Kemonozume, Monster, Nana, Paprika, Paradise Kiss, Paranoia Agent, Piano no Mori, Shigurui, Strawberry Panic
  • 2008-2010: Aoi Bungaku Series, Needless, Highschool of the Dead, Kaiba, One Outs, Redline, Summer Wars, The Tatami Galaxy, Trigun: Badlands Rumble
  • 2011-Present: Btooom!, Chihayafuru, Death Billiards, Death Parade, Hanayamata, Hunter x Hunter (2011), Mahouka Koukou no Rettousei, No Game No Life, Oda Nobuna no Yabou, One Punch Man, Ore Monogatari!!, Overlord, Parasyte -the maxim-, Photo Kano, Prince of Stride: Alternative, The Tibetan Dog, The Wolf Children Ame and Yuki

Madhouse Anime

ভাল ভাল সিরিজগুলির মধ্যে অল্প কয়েকটি নাম বলাতেই এই অবস্থা! তবে ম্যাডহাউজ যে শুধু আনিমেতেই ব্যস্ত ছিল না নয়, অন্যান্য স্টুডিওর আনিমে নির্মাণেও সাহায্য করেছে বেশ, এমনকি অনেক ওয়েস্টার্ন অ্যানিমেশন, কার্টুন ও বিভিন্ন গেমের সিরিজ নিয়ে আসাতেও সাহায্য করেছে-

 

  • The Animatrix: অধিকাংশ অ্যানিমেশনই ম্যাডহাউজ করেছিল, সাথে ছিল Studio 4°C
  • Batman: Gotham Knight: “In Darkness Dwells” আর “Deadshot”, সাথে ছিল  Production I.G, Studio 4°C ও Bee Train
  • Peanuts: ২০১২ সালে তারা ঘোষণা দেয় এই জনপ্রিয় কমিক স্ট্রিপের অ্যানিমেশন সিরিজ নিয়ে আসবে
  • Wakfu: Wakfu নামের MMORPG গেমের ফ্রেঞ্চ কার্টুন ভার্শন তৈরিতেও ম্যাডহাউজ সহযোগিতা করে
  • Marvel Anime: মার্ভেলের বিভিন্ন সিরিজের আনিমে ভার্শন এনেছে ম্যাডহাউজ, যেমন- Avengers Confidential: Black Widow to Punisher, Blade, Iron Man, Wolverine, X-Men
  • Supernatural The Animation: জনপ্রিয় টিভি সিরিজ Supernatural-এর উপর ভিত্তি করে এই আনিমে নিয়ে আসে ম্যাডহাউজ
  • Collaboration with Studio Ghibli: স্টুডিও জিবলীর কিছু জনপ্রিয় মুভিতে অ্যানিমেশনে সাহায্য করে। এসব মুভি হল- My Neighbor Totoro (1988), Spirited Away (2001), Howl’s Moving Castle (2004), Ocean Waves (1993), Tales from Earthsea (2006).
  • Collaboration with Disney: ডিজনির সহযোগিতায় Stitch! এর আনিমে নিয়ে আনে ম্যাডহাউজ।
  • Game-based Anime: Square Enix-এর Last Order: Final Fantasy VII (OVA), Capcom-এর Devil May Cry এর আনিমে তৈরিতে সাহায্য করে ম্যাডহাউজ।

 

পরিশেষে বলা যায়, সবচেয়ে ভাল সময়টা পিছনে ফেলে এলেও ম্যাডহাউজ এখনও একদম পথে বসে যায় নি, বরং তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে একের পর এক চমক এখনও দিয়ে যাচ্ছে। আর ম্যাডহাউজের সাফল্য তো আসলে আনিমে দর্শকদের জন্যেই খুশির খবর! যদিও ২য় সিজন আনে না বলে একটা অপবাদ গায়ে লেগে গিয়েছে [অল্প কয়েকটা সিরিজ বাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কথাটা সত্য], তাও আনিমেভক্তরা আশায় বসে থাকে তাদের পছন্দের সিরিজের আরেকটি সিজন হয়তো এই চলে এল বলে!

Studio Monogatari: Episode 01

প্রথম পর্বেই থাকছে এমন একটি স্টুডিওর কথা যেটি বর্তমান যুগের আনিমের পথ মসৃণ করে তুলবার পিছনে রেখেছে যুগান্তকারী অবদান। আজকের স্টুডিও হল-

Mushi Production (or Mushi Pro)
1. mushi

 

আনিমে জগতে মুশি প্রোডাকশনের অবদান অনস্বীকার্য। স্টুডিওর শুরুটি হয় আনিমে/মাঙ্গার গডফাদার ওসামু তেজুকার হাত ধরে, যখন ১৯৬১ সালে চুক্তি শেষ হয়ে যাবার কারণে তিনি তোয়েই অ্যানিমেশন ছেড়ে চলে আসেন এবং নিজের মত করে তৈরি করেন এই মুশি প্রোডাকশন। আর হ্যাঁ, এই তোয়েই অ্যানিমেশন সেই স্টুডিও যেটি বিশাল পর্বের অনেক জনপ্রিয় কিছু আনিমে এখনও আমাদের উপহার দিয়ে আসছে। তবে এর গল্প আরেকদিন হবে। তোয়েই অ্যানিমেশনের সাথে পাল্লা দেবার জন্যে প্রতিপক্ষ স্টুডিও হিসেবেই গড়ে উঠে মুশি প্রোডাকশন, এবং এরপর স্টুডিওটি এমন কিছু জিনিস উপহার দেয় আমাদের যা পুরা আনিমের ধারণাকেই পালটে ফেলে!

2. Osamu Tezuka[ওসামু তেজুকা]

আসুন এক নজরে দেখে ফেলি আনিমে জগতকে কিছু “প্রথম” উপহার দেওয়া তাদের কাজগুলি-

  • Astro Boy (1963-1966): বর্তমান যুগের আনিমে বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তারই শুরুটা হয় এই সিরিজ দিয়ে। বিশাল বিশাল চোখ ও চোখা চোখা গুচ্ছ চুলের স্টাইলের আনিমে ক্যারেক্টার দেখা যায় এতে, যা কিনা এখনও আনিমে চরিত্রদের আঁকার ধরণের একটা কমন স্টাইল হয়ে আছে। মুশি প্রোডাকশনের আরও কয়েকটি সিরিজের সাথে এটিও প্রথমবারের মত অ্যামেরিকান দর্শকদেরকে আনিমে জিনিসটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
  • Kimba the White Lion [Jungle Taitei] (1965-1966): জাপানের টিভিতে দেখানো প্রথম রঙিন আনিমে সিরিজ। শুধু তাই নয়, এই সিরিজ থেকে অনেক কিছু “inspiration” নিয়ে ভবিষ্যতে তৈরি হয় ডিজনির বিখ্যাত Lion King মুভিটি। দেখার মত এসব inspiration-এর কিছু অংশ-
    3. Kimba - Simba
  • Princess Knight [Ribbon no Kishi] (1967-1968): ম্যাজিকাল গার্ল বা মাহৌ শৌজো আনিমের প্রোটোটাইপ সিরিজ, অর্থাৎ এক কথায় এটি প্রথম ম্যাজিকাল গার্ল আনিমে।
  • 1001 Nights (1969) ও Cleopatra [Cleopatra: Queen of Sex] (1970): নাম দেখেই হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন কিছুটা। এগুলি ছিল একদম প্রথম দিকের X-rated animated film [শুধু আনিমে নয় কিন্তু!]। অবশ্য তখনকার যুগে হেন্তাই হবার যা “যোগ্যতা” ছিল তা এখনকার যুগের স্বাভাবিক এচ্চি সিরিজের থেকেও অনেক কম। তাই এখনকার হিসাবে এগুলিকে হয়তো এচ্চি আনিমে বলে ধরে নেওয়া যায়।
  • Belladona of Sadness [Kanashimi no Belladonna] (1973): এই মুভিটিকে প্রথম avant-garde আনিমে হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। ধরে নেওয়া যায় – এই কথা বলার কারণ সেই সময়ে স্বাভাবিক আনিমে টিভিতে নিয়ে আসাই বিশাল বড় যুদ্ধ ছিল, সেখানে একটা uncommercial কাজ নিয়ে এসে অনেক বড় সাহসের পরিচয় ছিল। এরকম সাহস দেখানো কাজ তখনও কোন স্টুডিও করে উঠে নাই। বাণিজ্যিকভাবে চরম ব্যর্থ হয় এটি, আর এই মুভির ব্যার্থতা মুশি প্রোডাকশনের বন্ধ হবার অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটিও মুশি প্রোডাকশনের আরেকটি X-rated আনিমে।

স্টুডিওটি নিয়ে কয়েকটি তথ্য-

  • পোকা সংগ্রহের প্রতি ছোটকাল থেকেই মারাত্মক ঝোঁক ছিল ওসামু তেজুকার, আর এর প্রভাগ তার কাজকর্মেও দেখা যেত। ওসামুশি [গ্রাউন্ড বিটল] এর নামের সাথে তার নামের মিল – এই ব্যাপারটা তার এত মনে ধরে যে নিজের ছদ্মনাম হিসেবেই ওসামুশি শব্দটি বেছে নেন তিনি। মুশি প্রোডাকশনের নামকরণের কারণটাও কিছুটা আন্দাজ করা যায় এ থেকে।
  • ওসামু তেজুকার বিপক্ষে একটা বড় অভিযোগ রয়েছে যে তিনি অকল্পনীয় রকমের অল্প বাজেট নির্ধারণ করতেন আনিমে নির্মাণের ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র আনিমে তৈরির কম্পিটিশনে প্রতিদন্দ্বীদের পরাস্ত করা যায় যেন। আর তার এই অল্প বাজেট নির্ধারণের ব্যাপারটিই মডেল হিসাবে নিয়ে নিয়েছে ভবিষ্যতের আনিমে স্টুডিওগুলি। আনিমে তৈরির পিছনের মানুষদের ধুঁকে ধুঁকে এগিয়ে যাবার পিছনে এটিকে অনেক বড় কারণ হিসাবে দেখা হয়। 
  • মুশি প্রোডাকশন ছেড়ে দেবার পর কয়েকজন প্রাক্তন স্টাফ এরপরে নির্মাণ করেন কয়েকটি বিখ্যাত আনিমে স্টুডিও। এগুলি হল Madhouse [ওসামু দেজাকি, মাসাও মারুইয়ামা, ইয়োশিয়াকি কাওয়াজিরি, রিন্তারো], Kyoto Animation [হিদেয়াকি হাত্তা, ইয়োক হাত্তা] এবং Tezuka Productions [ওসামু তেজুকা]।
  • প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবার জন্যে অল্প বাজেটে আনিমে তৈরি, আনিমের ইন্ডাস্ট্রি ঠিকমত উঠে না দাঁড়ানো অবস্থায় একাধিক উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট হাতে নেওয়া এবং এসব প্রজেক্টের চরম ব্যার্থতা – এসব কিছুই কাল হয়ে দাঁড়ায় মুশি প্রোডাকশনের জন্যে। ১৯৬৮ সালে মুশি প্রোডাকশন ছেড়ে চলে যান ওসামু তেজুকা এবং তৈর করেন তেজুকা প্রোডাকশন। অবশেষে ১৯৭৩ সালে দেউলিয়া ঘোষিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় এই স্টুডিও। অবশ্য এরপর ১৯৭৭ সালে আবার নতুন করে মুশি প্রোডাকশন চালু হয় এবং আজ অবধি তা কাজ করে আসছে, কিন্তু ততদিনে সোনালী দিন অনেক পিছে ফেলে এসেছে মুশি প্রোডাকশন।

মুশি প্রোডাকশনেই কর্মজীবনের শুরু হয় ৭০-এর দশকে আনিমের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া নামকরা কয়েকজন আনিমে নির্মাতাদের। বেশ কিছু আইকনিক আনিমে নির্মাণ করেন এদের অনেকেই-

  • 4. Yoshiyuki TominoYoshiyuki Tomino: বিখ্যাত আনিমে ফ্র্যাঞ্চাইজ Gundam-এর জনক, অবশ্য সেই কাজ তিনি শুরু করেন স্টুডিও সানরাইজে গিয়ে। তার কাজের একটি বড় অংশের মধ্যে “Everybody Dies” এই আইডিয়াটার বাস্তবায়ন দেখা যায়।

 

 

 

 

 

  • 5. Osamu DezakiOsamu Dezaki: বক্সিং আনিমের মধ্যে কাল্ট ক্লাসিক সিরিজ Ashita no Joe এর ডিরেক্টর তিনি, সিরিজটি মুশি প্রোডাকশন থেকেই তৈরি হয়। এছাড়াও আরেকটি বিখ্যাত সিরিজ The Rose of Versailles এর একটি বড় অংশের ডিরেক্টর তিনি। নিজস্ব ধরনের অ্যানিমেশন স্টাইল ও আর্টস্টাইলের জন্যে তিনি বিখ্যাত- split screen, stark lighting, pastel-chalked freeze frame ইত্যাদি। তার অনেক ট্রেডমার্ক অ্যানিমেশন স্টাইল এরপর অনেক নামকরা অ্যানিমেটররা ব্যবহার করেছেন।

 

 

  • 6. RintaroRintaro: সাই-ফাই জনরার ভক্ত নামকরা ডিরেক্টর রিন্তারোর বিখ্যাত কিছু কাজের মধ্যে রয়েছে Metropolis, Galaxy Express 999, The Dagger of Kamui ইত্যাদি।

 

 

 

 

 

মুশি প্রোডাকশনের কিছু জনপ্রিয় আনিমে-

7. Mushi-Pro anime

যদিও এখনকার মুশি প্রোডাকশন বিভিন্ন আনিমে তৈরিতে সহায়তা করে থাকে (প্রোডাকশন কাজ, অ্যানিমেশন কাজে সহায়তা, ব্যাকগ্রাউন্ড আর্ট, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি) তারপরেও নিজস্ব কাজ হিসাবে তেমন কিছুই করে না তারা। ১৯৭৩ সালেই আসলে সত্যিকার মুশি প্রোডাকশন শেষ হয়ে যায়, এখন যা আছে তা খোলসমাত্র।

Studio Monogatari: Prologue

আজকের এই Prologue পর্বের জন্যে থাকছে জাপানের আনিমে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সর্বপ্রথম আনিমে স্টুডিওটির কথা —

Kitayama Eiga Seisakujo

জাপানের সর্বপ্রথম সত্যিকার অর্থের অ্যানিমেশন স্টুডিও হল কিতায়ামা এইগা সেইসাকুজো (Kitayama Eiga Seisakujo), বিংশ শতাব্দীর একদম শুরুর দিকের জনপ্রিয় অ্যানিমেটর Seitaro Kitayama ১৯২১ সালে এই স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। সেইতারো কিতায়ামাকে বলা হয় আনিমে নির্মাণের সর্বপ্রথম পথিকৃৎদের একজন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছু আনিমে তৈরি করলেও তিনি এই স্টুডিও-এর অধীনে ৩টি আনিমে তৈরি করেন: Kiatsu to Mizuage Ponpu (Atomospheric pressure and suction pumps) (1921), Shokubutsu Seiri: Seishoku no Maki (Plant Physiology: Story of Reproduction) (1922), Usagi to Kame (Rabbit and Tortoise) (1924)

kitayama

[বহু বছর পূর্বের এই ছবিটি সেইতারো কিতায়ামা-এর]

দুঃখের কথা হল, স্টুডিওটি বেশিদিন টিকতে পারে নি। ১৯২৩ সালের এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের (Great Kanto Earthquake) জন্যে এবং এরপর বাণিজ্যিক সাফল্য না আসার কারণে ১৯২৪ সালে স্টুডিওটি বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সময়ে কিতায়ামা আনিমে তৈরির জন্যে ব্যবহার করতো Chalkboard Technique, এবং পরবর্তীতে Paper Technique যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকতো প্রিন্ট করা দৃশ্য এবং কাগজ কেটে তৈরি করা চরিত্রের নড়াচড়ার মাধ্যমে অ্যানিমেশন চলতো।

Segmentটির Prologue শেষ হবার আগে থাকছে একটি আনিমে সাজেশন। আনিমে স্টুডিও নিয়ে সেগমেন্টটি শুরু করবার আগে আগেই স্টুডিওগুলিতে কিরকম কাজ চলে, কাজের চাপ কেমন থাকে, আনিমে নির্মাতাদের জীবন কিরকম এসব নিয়ে জানতে চাইলে এবং একই সাথে বাস্তব জীবনের নামকরা কয়েকজন আনিমের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের আনিমেতে দেখতে চাইলে জলদি দেখে ফেলুন Shirobako

Shirobako