All Fiction 2 (Eid Special Edition): Top 5 Anime Duo Review

ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল। সবাই কত আর্টওয়ার্ক আর ঈদ মোবারক পোস্টাচ্ছে, তাই আমিও আর চুপচাপ থাকতে পারলাম না। অল ফিকশন ২য় ইস্যু পুরোপুরি পোস্ট করতাম, কিন্তু লেখালেখিই এখনো শেষ হয়নি, ইমেজ+হাইপারলিঙ্ক ইন্সারটিং তো পরের কথা। স্পর্শ গেছে গ্রামের বাড়ি, ও না আসলে অল ফিকশনের কাজও আগানো যাচ্ছে না, মূল ইস্যু প্রকাশ করতে দেরি হবে। তাই ঈদ উপলক্ষে আমার ‘টপ ৫ অ্যানিমে Duo রিভিউ’ পোস্ট করছি, অল ফিকশনের ২য় ইস্যুর ঈদ স্পেশাল হিসেবে। পরে এই লিস্টটাকে আরও সম্প্রসারিত করে স্পর্শকে নিয়ে টপ মাঙ্গা Duoদের সহ ডকটাকে সমৃদ্ধ করবো।

প্রথমেই বলে নিই, অনেকেই Duo বলতে Couple মনে করে ভুল করে, কিন্তু Duo আর Couple পুরাপুরি ভিন্ন ব্যাপার। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত নাহয় আরেকদিন বলবো। খুবই অল্প অ্যানিমে দেখেছি, তাই বেশি ক্যারেক্টার চিনিনা, অনেক বস ডূও ক্যারেক্টার বাদ পড়লে দুঃখিত। মেইন্সট্রিম অ্যানিমে ক্যারেক্টারদের এই লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

1. Vash the Stampede and Nicholas D. Wolfwood
Anime: Trigun

ট্রাইগানের ভক্তদের কাছে এই ডূওর নাম উচ্চারণ করা মানেই একগাদা ফিলস ট্রিপ। বহু চড়াই-উৎরাই এবং লড়াইয়ে এই ডূওর ব্যাক টু ব্যাক ফাইট ভোলা যায় না। ওয়েস্টার্ন সাই-ফাই অ্যানিমে ট্রাইগানে এই দুই দোস্তর অতুলনীয় বন্দুকবাজি আর মানুষ খুন না করে বিশাল বিশাল ফাইট জেতার অ্যাবিলিটি সবসময় চোখে লেগে থাকার মত। ভাশের চিরহাস্যোজ্জল মুখ এবং প্যাসিফিজম, আর নিকের বিশাল ক্রুশ, যার মধ্যে থাকতো পিস্তল থেকে শুরু করে রকেট লঞ্চার এবং আরও নানাজাতের অস্ত্র, এমন এক্সেন্ট্রিক() ডূও খুব কমই আছে।তাই আমার তালিকায় এই দুজনের স্থান সবার উপরে।

2. Edward Elric and Alphonse Elric
Anime: FMA and FMAB

মৃত মাকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াসে বড় ভাই এডওয়ার্ড হারায় এক হাত, আর ছোটভাই আলফনসে হারায় তার সম্পূর্ণ দেহ। ছোটভাইয়ের হারানো দেহ ফিরে পাওয়া এবং অনেক অজানা প্রশ্নের জবাব পাবার লক্ষ্যে স্টেট অ্যালকেমিস্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে কিশোর এডওয়ার্ড। পুরো অ্যানিমেজুড়েই আমরা দেখতে পাই দুই ভাইয়ের সংগ্রাম, মন উথালপাথাল করা এক অনবদ্য কাহিনী। হমুনকুলাসদের সাথে ফাইট, অ্যালকেমির হাজারো রহস্য উদঘাটন, তাদের পিতার অতীত, মায়ের মৃত্যু… এবং হমুনকুলাসদের ফাদারের সাথে শেষযুদ্ধ, অন্তঃপ্রাণ এলরিকভাইদ্বয় নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা অ্যানিমে ডূওদের তালিকায় সবচেয়ে উপরের দিকে থাকবে।

3. Natsume and Madara
Anime: Natsume Yuujinchou

নাতসুমের মৃত্যুর পর তার ‘ইউজিনচো‘ পাবার লক্ষ্যে তার আমরণ দেহরক্ষী হতে রাজি হয় ভয়ঙ্কর শক্তিশালী ইয়োকাই মাদারাইউজিনচো হল ইয়োকাইদের নামসম্বলিত এক বই, যে বইয়ের সত্যিকার মালিক ওই ইয়োকাইদের ডাকলে সাথে সাথেই ইয়োকাইরা হাজির হয়। আর মাদারা হল গোলগাল বিড়ালের ছদ্মবেশী প্রচণ্ড শক্তিশালী বিশাল এক নেকড়েসদৃশ ইয়োকাই। সারাক্ষণই নাতসুমেকে মৃত্যুহুমকি দিতে থাকা মাদারার খুনসুটি আর আশ্চর্য রকমের শান্ত, অনাথ কিশোর নাতসুমের সাথে ইয়োকাইদের নানা কাহিনী, নাতসুমে এবং তার দাদির অতীত উন্মোচনের মাধ্যমে এগোতে থাকে গল্প। নাতসুমেকে ক্ষতিকর ইয়োকাই ও তাদের শাপশাপান্ত থেকে রক্ষা করা, সময়ে সময়েনাতসুমের সাথে রাগ-অভিমান করা আহ্লাদী বিড়াল মাদারার দুষ্টামি… এ যেন ‘অন্তরে মধু, মুখে বিষ’। স্লাইস অফ লাইফের বেস্ট ডূওদের মধ্যে এই ডূও অবশ্যই থাকবে, এবং তারা স্থান করে নিয়েছে আমার লিস্টের ৩ নম্বরে।

4. Isaac Dian and Miria harvent
Anime: Baccano!

আইজ্যাক এবং মিরিয়া। যতটা না কাপল, তার চেয়ে বেশি ‘ডূও’ এই স্যাটায়ারিক জুটি তাদের প্রাণবন্ত কার্যকলাপের দ্বারা বাকানো’ অ্যানিমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মাতিয়ে রেখেছে। তাদের কাণ্ডকারখানা বাচ্চাদের মত মনে হতে পারে, কিন্তু এর মাঝে লুকিয়ে আছে গভীর কিছু অর্থ(স্যাটায়ার এক্সপ্লেইন করার মত বোকামি আমি করতে চাইনা, নিজ যোগ্যতায় বুঝে নিন)। সামান্য ব্যাপারকে অসামান্য লেভেলে নিয়ে যাওয়া, আবার ছোটোখাটো বিষয়গুলো বুঝতে ভুল করে ‘তিলকে তাল করা, তালকে মাকাল করা’ এই জুটি বেদম হাসাবে আপনাকে, তাদের আদিখ্যেতা আর ফালতু কাজ করার উদ্দীপনা তাদেরকে রেখেছে আমার ডূও লিস্টের ৪ নম্বরে।

5. Mashiro Moritaka and Takagi Akito
Anime: Bakuman

মাশিরো মোরিতাকা, তাকাগি আকিতো, দুই মাঙ্গা আর্টিস্ট বন্ধুর মাঙ্গাকা হয়ে ওঠার অনবদ্য কাহিনী বাকুমান। প্রতিভাবান আর্টিস্টমাশিরোকে প্রচুর জোরাজুরি করে তার টীমআপ করতে রাজি করায় মাশিরোর ক্লাসমেট তাকাগি। ধীরে ধীরে তারা ‘আশিরোগি মুতোউ‘ নামে একের পর এক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে থাকে, ওয়ান শট মাঙ্গা সাবমিট করতে থাকে। এবং প্রচুর চেষ্টার পর তারাশউনেন জ্যাকের(জাম্পের বাকুমান ভার্শন) রেগুলার মাঙ্গাকা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। শত প্রতিকুলতার মোকাবিলা করে তারা তাদের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত তাদের নিরলস পরিশ্রম সফলতার মুখ দেখে। মাশিরো এবং তাকাগি হল পারফেক্ট ডূওর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্বপ্নপূরণের পথে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া, মাঙ্গাকাদের জীবনের নানা দিক অতীব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এই ডূও।

All Fiction 1: Random Topic

র‍্যান্ডম টপিক

স্পিরিচুয়াল সাকসেসর/Spiritual Successor

কোন সাহিত্যকর্ম বা কল্পকাহিনীর সাথে অপর একটি সাহিত্যকর্মের কাহিনিসুত্রে মিল না থাকা সত্ত্বেও উভয়েই একই ভাব বহন করে, অথবা অনেক কিছুতেই সাদৃশ্য থাকে , এরূপ একটি কাহিনীকে পূর্ববর্তী কাহিনীর স্পিরিচুয়াল সাকসেসর বলা হয়ে থাকে। একে স্পিরিচুয়াল সিক্যুয়ালও বলা হয়। দেখা যায় যে উভয় কাহিনীর সুপারন্যাচারাল ব্যাপারগুলো, অথবা কাহিনীর অগ্রগতিতে অনেকখানি মিল থাকে, কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ এক বলা যায়না। গতানুগতিক সিক্যুয়ালগুলোতে যেমন একই কাহিনীধারাই বজায় রাখা হয়, এটা ঠিক সেরকম না।

এই ‘স্পিরিচুয়াল সাকসেসর’ টার্মটাতে বুঝানো হয় যে কোন সাহিত্যকর্মের স্পিরিট অপর কোন সাহিত্যকর্মে পরবর্তীতে সঞ্চালিত হয়, কিন্তু কাহিনীসূত্র হুবহু থাকেনা।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, জনপ্রিয় “প্রিন্স অফ পার্সিয়া” সিরিজের স্পিরিচুয়াল সাকসেসর হল “অ্যাসাসিন্স ক্রিড”। অ্যাসাসিনস ক্রিড গেমটিকে প্রিন্স অফ পার্সিয়ার গতানুতিক সিক্যুয়াল বানানোর কথা থাকলেও পরবর্তীতে তাকে একই ভাবধারার একটি গেম সিরিজ হিসেবে তৈরি করা হয়, সরাসরি সিক্যুয়াল নয়।

যুগে যুগে অনেক সাহিত্যকর্মই প্রকাশিত হয়েছে। হয়তোবা দেখা গেছে, এক প্রজন্মের সাহিত্যিকরা পূর্ববর্তী সাহিত্যিকদের লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু সাহিত্য রচনা করেছেন, তাই তাতে পূর্বসুরির প্রভাব রয়ে গেছে।

অনেক জায়গাতেই দেখা যায়, মানুষজন তাদের প্রিয় সিরিজের ভাবধারার সাথে মিল থাকা অপর কোন সিরিজকে নকল বলছে। কিন্তু আদতে তা হল পূর্ববর্তী সিরিজটির স্পিরিচুয়াল সাকসেসর, নকল নয়।

All Fiction 1 – Character Spotlight: Kumagawa Misogi

ক্যারেক্টার স্পটলাইট –

কুমাগাওয়া মিসোগি / Kumagawa Misogi

মাঙ্গা : মেদাকা বক্স / Medaka Box

মেদাকা বক্স (Medaka Box) মাঙ্গার সবচেয়ে ডার্ক ক্যারেক্টার কুমাগাওয়া মিসোগি (Kumagawa Misogi)। ‘Born Loser’ বলতে যা বুঝা যায় , কুমাগাওয়া তার যথার্থ উদাহরণ। ভয়ংকর অ্যাবিলিটির অধিকারী বিকৃত মানসিকতার এই ক্যারেক্টারটি জীবনে সবকিছুতেই ব্যর্থ , সকলের কাছে সকল বিষয়ে হেরেছে , এমন একটি মানুষ।

মেদাকা বক্স মাঙ্গাতে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এবং ক্ষমতার(অ্যাবিলিটি) উপর ভিত্তি করে ক্যারেক্টার দের ‘Plus’, ‘Minus’, ‘Special’, ‘Normal’ ও ‘Not Equal’ এই কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা নেতিবাচক মানসিকতার ও ক্ষমতার অধিকারী , তাদের বলা হয় ‘Minus’। এবং এই মাইনাসদের মধ্যে সবচেয়ে মাইনাস , সবচেয়ে শক্তিশালী/নেতিবাচক হল কুমাগাওয়া। একজন মানুষের পক্ষে যতটা নেতিবাচক হওয়া সম্ভব , কুমাগাওয়া ঠিক ততটাই বিকৃত , নেতিবাচক মানসিকতার অধিকারী।

বলা হয় যে , কুমাগাওয়া জীবনে যত মানুষের সাথে মেলামেশা করেছে , তাদের সব নেতিবাচক দিকগুলোই সে নিজের করে নিয়েছে।

নাস্তিবাদি এই ক্যারেক্টারটির প্রধান ‘Ability’ হল ‘All Fiction’ , যার সাহায্যে সে যেকোনো কিছুর অস্তিত্ব পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে পারে , নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে নিমেষেই । হাসতে খেলতে সে মানুষকে খুন করতে পারে। যেকোনো কিছুকে নাই করে দেওয়ার মত এই ক্ষমতার সৃষ্টি হয়েছে তার নেতিবাচক মানসিকতা থেকেই।

বিতর্কের খাতিরে বলতে গেলে, কুমাগাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী মাঙ্গা ক্যারেক্টার, কারণ তার রয়েছে যেকোনো কিছুর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেবার ক্ষমতা।

তার কাছে মানুষের জন্মমৃত্যুর কোন মুল্য নেই। বেঁচে থাকার , জীবনকে উপভোগ করার অর্থ সে জানেনা। মাইনাসদের ছাড়া সে অন্য কোন মানুষকে বিশ্বাস করেনা , কারন শুধু মাইনাসরাই বুঝতে পারে অপর মাইনাস দের দুঃখ। মাইনাসদের সচরাচর অনুভূতি (emotion) প্রকাশ করতে দেখা যায়না , তারা হাসিমুখে সব অপমান , অপবাদকে অগ্রাহ্য করে।

স্বঘোষিত সবচেয়ে দুর্বল ক্যারেক্টার, কিন্তু আদতে শক্তিশালী , ভয়ংকর এবং আনপ্রেডিকটেবল ক্যারেক্টার কুমাগাওয়া মিসোগির হৃদয়েও রয়েছে নমনীয়তা। সে যাদের বিশ্বাস করে তাদের জন্য যেকোনো কিছুই করতে পারে। মাঙ্গার এক পর্যায়ে গিয়ে তার চরিত্রের নমনীয় এই দিকগুলোর পরিচয় পাওয়া যায়। তার নিজের ব্যর্থতা থেকে অন্যদের অনুপ্রেরণা দিয়ে মানুষকে সামনে অগ্রসর হবার কথা বলে সে…

কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে কুমাগাওয়ার দারুণ কিছু পান (Pun) যা পড়ে আপনারা না হেসে পারবেননা।

পারভার্টনেস তার অনন্য বৈশিষ্ট্য । পুরো মাঙ্গা জুড়েই রয়েছে তার এরোগিরি । কৌহাইদের নিয়ে সে গঠন করেছিল ‘Naked Apron Alliance’ নামক সংঘ। নাম শুনেই বুঝতে পারবেন সংঘটি কেমন :v ।

কিছু কিছু জায়গায় তার মাত্রাতিরিক্ত পারভার্টনেস নির্মল আনন্দের উৎস হিসেবে কাজ করবে।

তার অ্যাবিলিটিগুলোর মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অ্যাবিলিটি হল ‘Hundred Gauntlet’ , যার মাধ্যমে কতগুলো বড় বড় স্ক্রু নিয়ে কুমাগাওয়া তার শত্রুদের আক্রমন করে। এই স্ক্রুগুলো কোন ক্ষতের সৃষ্টি করেনা , তবে যার গায়ে বিঁধে , তার মনটা কুমাগাওার মতই নেতিবাচক মানসিকতায় ভরে ওঠে। আর তার এই অ্যাবিলিটির মাধ্যমে শ্লেষাত্মকভাবে সে যেন মুণ্ডুপাত করে, স্ক্রুগুলো তারই বহিঃপ্রকাশ (He sarcastically screws others with his large screws)।

মেদাকা বক্সের লেখক নিশিও ইশিন, যিনি মোনোগাতারি সিরিজের জন্য বিখ্যাত , সুপারন্যাচারাল কাহিনীসূত্র ও পাগলাটে ক্যারেক্টার সৃষ্টিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতে কুমাগাওয়াই তাঁর সৃষ্ট সর্বোৎকৃষ্ট ক্যারেক্টার।

তাই পড়ুন মেদাকা বক্স মাঙ্গা , নিজেই উপভোগ করুন অসাধারণ, পাগলাটে ক্যারেক্টার কুমাগাওয়ার অবিশ্বাস্য সব কাণ্ডকারখানা।

All Fiction 1: Author Spotlight: Narita Ryohgo

লেখক সমাচার –

নারিটা রিয়োগো / Narita Ryohgo

ব্যক্তিগত তথ্য :

নারিটা রিয়োগো একজন নভেলিস্ট। তাঁর জন্ম ১৯৮০ সালের ৩০ই মে, জাপানের টোকিওতে। তিনি গিনতামা মাঙ্গার পাঁড়ভক্ত, তাঁর লেখার মধ্যেও গিনতামার প্রভাব রয়েছে ।

তাঁর দুটো লাইট নভেল ‘ডুরারারা’ এবং ‘বাকানো’র জন্য তিনি বিখ্যাত, কারণ এই দুটো নভেলই এনিমে অ্যাডাপশন পেয়েছে । ২০০৩ সালে যখন ‘বাকানো’র প্রথম ভলিউম প্রকাশিত হয়, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর। তার পরের বছরেই প্রকাশিত হয় তাঁর নভেল ‘ডুরারারা’র প্রথম ভলিউম ।

এর মধ্যে ‘বাকানো’ লাইট নভেলটির জন্য তিনি ‘9th Dengeki Novel Prize’ এ গোল্ডেন প্রাইজ পেয়েছেন।

লেখার ধরণ :

তাঁর লেখার স্টাইল একটু ভিন্নধাঁচের, মূলত স্যাটায়ার টাইপের(যদিও খুব কম মানুষই স্যাটায়ারিক স্টাইলের ব্যাপারটা ধরতে পারে)।

তিনি তাঁর গল্পের কাহিনীকে কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে পুরো ভলিউমে ছড়িয়ে দেন। প্রতিটি অংশের কাহিনী এবং ক্যারেক্টারদের কার্যকলাপ স্বতঃস্ফূর্ত মনে হলেও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সবগুলো অংশই একসূত্রে বাঁধা। টুকরো টুকরো কাহিনীগুলো যেমন রসে ভরা, আনন্দদায়ক, তেমনি তার ভেতর লুকিয়ে থাকে সমাজের নানা অসঙ্গতি, মানুষের অজ্ঞতা ও বিকৃত মানসিকতার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত। ক্যারেক্টারগুলোকে মনে হবে হাস্যকর, পাগলাটে অথবা অতিসাধারণ। কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় তাদের মাহাত্ম্য কতোটুকু, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারবেন, হাস্যরসের আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর কোন অর্থ।

নারিটা সেন্সেইর লেখায় কাহিনীপ্রবাহ কালানুক্রমিকভাবে সজ্জিত থাকেনা, যার ফলে কেউ কেউ হয়তো পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। প্রত্যেকটা অংশের কাহিনী পুরোপুরি শেষ হবার আগেই তিনি অপর একটি অংশে কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দেন। তাই প্রত্যেকটি অংশেরই সমাপ্তি জানতে হলে একেবারে শেষ পর্যন্ত না পড়ে উপায় থাকেনা।

শেষে যখন কাহিনীর প্রতিটা অংশ জোড়া লেগে যায়, তখন সবকিছু স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটাই নারিটা সেন্সেইর বিশেষত্ব।

নারিটা সেন্সেইর নভেল :

বাকানো ! /  Baccano!

ডুরারারা !! /  Durarara!!

ভাম্প ! /  Vamp!

তাঁর লেখা অন্যান্য সিরিজগুলোর ব্যাপারে জানতে-

http://en.wikipedia.org/wiki/Ryohgo_Narita

All Fiction 1- Durarara review

লাইট নভেল রিভিউ –

ডুরারারা / Durarara!!

লেখক : নারিটা রিয়োগো / Ryohgo Narita

জানরা : অ্যাকশন, সুপারন্যাচারাল, সাইকোলজিক্যাল, ড্রামা, মিস্টেরি, রোমান্স

ভলিউম : ১৩

সময়কাল : এপ্রিল ১০, ২০০৪ – জানুয়ারি ১১, ২০১৪

স্ট্যাটাস : কমপ্লিটেড

কাহিনীসূত্র :

ডুরারারার পটভূমি টোকিওর ইকেবুকুরো শহরে । ইকেবুকুরো, যেখানে জীবন কোন বিরাম জানেনা, ঘরে-বাহিরে, সড়কে-দপ্তরে, সবখানেই প্রানের জোয়ার বয়ে যায়।

ব্যস্ত এই শহরে রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় স্থান… বাতাসে নানারকম গুজবের ছড়াছড়ি, মাঝে মাঝে পাওয়া যায় বিপদের গন্ধ। রয়েছে বিভিন্ন গুন্ডাবাহিনী, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব… কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় এক শহুরে কিংবদন্তি। এই কিংবদন্তি এক মুণ্ডুবিহীন মোটরবাইকচালকের, যার আপাদমস্তক কুচকুচে কালো রাইডার স্যুটে ঢাকা, এমনকি তার হেডলাইটবিহীন বাইকটিও কালো। এতটাই কালো যে তাতে কোন আলো প্রতিফলিত হয়না।

কাহিনীর শুরু রিউগামিনে মিকাদোকে দিয়ে, যে তার বাল্যবন্ধু কিদা মাসাওমির আমন্ত্রণে ইকেবুকুরোতে আসে, হাইস্কুলে পড়ার জন্য। এবং ধীরে ধীরে সে মিশে যায় ইকেবুকুরোর ব্যস্ত নগরজীবনে, এর অস্তিত্বের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন ঘটনাক্রমে সে পরিচিত হয় ডুরারারার ক্যারেক্টারদের সাথে।

প্রথমদিকে স্কুললাইফ বেসড মনে হলেও দ্রুতই নভেলটি অ্যাকশন-সাইকোলজিক্যাল-সুপারন্যাচারাল-রোমান্স জানরায় পদার্পণ করে এবং অসাধারণ একটি নভেলে রুপ নেয়।

ক্যারেক্টার :

প্রধান ক্যারেক্টারদের মধ্যে রিউগামিনে মিকাদো, সোনোহারা আনরি, কিদা মাসাওমি, ওরিহারা ইযায়া, হেইওয়াজিমা শিজুও, সেলটি স্টারলুসন, শিনরা কিশিতানি, কাদোতা কিয়োহেই অন্যতম।

ডুরারারার ক্যারেক্টারদের প্রত্যেকেরই রয়েছে মৌলিক কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা তাদের বৈচিত্র্যকে ফুটিয়ে তুলেছে। প্রাণবন্ত এই ক্যারেক্টারদের ঘিরেই জমে উঠেছে ডুরারারার কাহিনী । ইকেবুকুরোর ব্যস্ত জীবনে তাদের কর্মচাঞ্চল্য, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের কর্মকাণ্ডগুলো শেষ পর্যন্ত একসুত্রে গেঁথে যায়, যা নভেলের কাহিনীকে নিয়ে যায় এক অনন্য মাত্রায়।

ডুরারারার প্রথম ৩ ভলিউম মূলত এই ক্যারেক্টারদের ঘিরেই । ভলিউম ৪ থেকে আরও বৈচিত্র্যময় নতুন ক্যারেক্টারদের আবির্ভাব ঘটে, আগের ক্যারেক্টারদেরও দারুণ ডেভেলপমেন্ট হয়।

নিজস্ব মতামত :

আর্ট ভালো নয়, ক্যারেক্টার ডিজাইন মোটামোটি। তবে নভেলে আর্টের তেমন একটা প্রভাব নেই। নারিটা সেন্সেইর কাহিনী বর্ণনায় অসাধারণ দক্ষতার কারনে প্রতিটি ভলিউমই একেবারে শেষ পর্যন্ত না পড়ে পারা যায়না। তবে যাদের বই পড়ে অভ্যাস নেই, তারা বিরক্ত বোধ করতে পারেন। কারণ কাহিনীর প্রতিটি অংশ কালানুক্রমিকভাবে সজ্জিত নেই, এক অংশের কাহিনী একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে যাওয়ার পর অন্য একটি অংশের কাহিনী শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত না পড়লে প্রতিটি কাহিনী অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, ঘটনাগুলোর সমাপ্তি জানতে পারবেন না। পড়তে শুরু করলে সময়ের হিসাব হারিয়ে ফেলবেন, না শেষ করে উঠতে পারবেননা,

এমনটাই মনোমুগ্ধকর ডুরারারার কাহিনীবিন্যাস।

মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ, সুপারন্যাচারাল ক্যারেক্টারদের সাধারণ জীবনযাপন, নিখাদ অ্যাকশন, সাধারণ ক্যারেক্টারদের অসাধারণ কর্মকাণ্ড, কোন অংশেই কম নয় এমন একটি নভেল ডুরারারা।

তাই আমি বলব, দ্রুতই পড়া শুরু করুন। পড়লে পস্তাবেন না, অন্তত এটুকু আশ্বাস দিতে পারি।

কাহিনিসুত্র : ১০

ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট : ৯.৭

আর্ট এবং ক্যারেক্টার ডিজাইন : ৭.৫

সর্বমোট : ৯.৫/১০

মাইএনিমেলিস্ট রেটিং : ৮.৬৭

All Fiction 1: Claymore Review

মাঙ্গা রিভিউ –

ক্লেমোর / Claymore

মাঙ্গাকা : ইয়াগি নোরিহিরো / Norihiro Yagi

জানরা : অ্যাকশন , ট্র্যাজেডি , সুপারন্যাচারাল , ডার্ক-ফ্যান্টাসি , হরর , ড্রামা

প্রকাশনা : Jump Square (former Monthly Shounen Jump)  

চ্যাপ্টার : ১৫২

স্ট্যাটাস : অনগোয়িং

কাহিনিসুত্র এবং ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট :

মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে আছে মনুষ্যরূপী নরখাদক দানব, আর সেই দানব নিধনে বেরিয়ে পড়েছে তলোয়ারধারী এক রমণী। পিঠে বিশাল তলোয়ার, পরনে যুদ্ধের সাজপোশাক, রমণীর রণমূর্তিতে ত্রস্ত জনসাধারণ। কারণ সেই রমণীও যে অর্ধ-দানব, তাই দানবের মোকাবিলা করাও যে তাকেই মানায়। এগিয়ে যায় মানব-দানব সংকর যোদ্ধা, মুখোমুখি হয় নরখাদক বর্বর দানবের। অর্ধ-দানব হলেও মানবজাতির একমাত্র ত্রাতা এই যুদ্ধংদেহী রমণীরাই।

ক্লেমোরের পটভূমি রচিত হয়েছে একটি মধ্যযুগীয় দ্বীপে , যেখানে বসবাস করে “ইয়োমা” নামক এক ধরনের দানব। ইয়োমারা তাদের আকৃতি বদলে মানুষের রুপ ধারন করতে পারে এবং মানুষের মাঝেই বসবাস করে। যার দেহে ইয়োমা বসবাস করে , তার স্মৃতি এবং বিবেক বহন করে বলে ইয়োমারা মানুষের মাঝে সম্পূর্ণরুপে মিশে যেতে পারে , তাদের শনাক্ত করার কোন উপায় থাকেনা। ইয়োমারা মানুষের নাড়িভুঁড়ি খেয়ে বেঁচে থাকে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় না খেয়ে থাকতে পারেনা। তাই নাড়িভুঁড়ি খাওয়ার জন্য নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করতে হয় তাদের।

“দ্যা অর্গানাইজেশন” নামক এক রহস্যময় সংগঠন অর্ধ মানব-অর্ধ ইয়োমা নারীযোদ্ধা তৈরি করে। এই যোদ্ধারা অর্থের বিনিময়ে ইয়োমা মারে , সেই অর্থ অর্গানাইজেশন থেকে সংগ্রহ করা হয়।

এই নারীযোদ্ধাদের বলা হয় “ক্লেমোর” , কারন তারা সবসময় পিঠে ক্লেমোর নামক বড় এবং ভারী তলোয়ার বহন করে এবং এই তলোয়ার দিয়ে ইয়োমা খুন করে। তাদের রুপালি বর্ণের চোখের জন্য লোকে তাদের “রুপালি চোখের ডাইনী” বলেও অভিহিত করে।

ইয়োমাদের মধ্যে একধরনের আসুরিক শক্তি বিদ্যমান , যাকে বলা হয় “ইয়োকি”। এই ইয়োকি তাদের অতিমানবীয় শক্তি এবং আকৃতি বদলের ক্ষমতা প্রদান করে। শুধু ক্লেমোররাই পারে মানুষের রূপধারণকারী ইয়োমাদের শনাক্ত করতে , কারন ইয়োমাদের মত ক্লেমোররাও ইয়োকি বহন করে। তবে ক্লেমোররা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই শক্তি ব্যবহার করতে পারে । এই নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে তারা তাদের মনুষ্যরুপ হারায় এবং “Awakened Being” নামক একধরনের উৎকৃষ্ট ইয়োমায় পরিণত হয়। এই ঘটনাকে বলা হয় “Awakening”।

ক্লেমোররা মানুষের হৃদয়, কিন্তু ইয়োমার শক্তি বহন করে। যখন তাদের মনুষ্যহৃদয় ইয়োমার শক্তি দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় , তখনি তারা সীমা অতিক্রম করে এবং Awakened being এ পরিণত হয়।

নিয়ম রয়েছে যে, যদি কোন ক্লেমোর অর্গানাইজেশন পরিত্যাগ করে অথবা মানুষ খুন করে, অথবা Awakened Being এ পরিণত হয় , তবে অন্য ক্লেমোররা তাকে অবশ্যই মেরে ফেলবে।

ক্লেমোর মাঙ্গার দ্বীপটি ৪৭টি অঞ্চলে বিভক্ত। প্রত্যেকটি অঞ্চল অর্গানাইজেশনের একজন ক্লেমোরের দায়িত্বাধিন। মোটমাট ৪৭ জন ক্লেমোর তাদের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পদমর্যাদা পেয়ে থাকে , তাদের পদমর্যাদা দিয়েই তাদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ক্লেমোর মাঙ্গার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট অসাধারণ। মাঙ্গাটির কাহিনী শুরু হয় অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে দুর্বল/নিম্ন পদমর্যাদার ক্লেমোর ক্লেয়ারের একটি ইয়োমা শিকারের মধ্য দিয়ে । ধীরে ধীরে জানা যায় ক্লেয়ারের হৃদয়বিদারক অতীত, তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য, ক্লেমোর হয়ে ওঠার মুল কারণ। সময়ের সাথে সাথে ক্লেয়ারের বেশ কিছু বন্ধু হয়, মরণপণ লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা হয়। ক্যারেক্টাররা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে , নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে , নতুন রহস্যের সম্মুখীন হয়।

এক পর্যায়ে জানা যায় অর্গানাইজেশনের আসল পরিচয়, ইয়োমা উৎপত্তির রহস্য এবং আরও অনেক উত্তেজনাকর তথ্য। সবচেয়ে শক্তিশালী Awakened being – “The Abbysal Ones” এবং তাদের চেয়েও শক্তিশালী , প্রিসিলা… এদেরকে ঘিরেই বাড়তে থাকে উত্তেজনা।

প্রথমদিকে মাঙ্গাটিকে সাধারণ অ্যাকশন-সুপারন্যাচারাল মাঙ্গা মনে হলেও ধীরে ধীরে তা পাঠকের আগ্রহ বাড়াতে থাকবে। মাঙ্গাটির আসল আকর্ষণ এর মারমার-কাটকাট ব্যাটলের দৃশ্য এবং হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডিতে। সব ব্যাটলই “Survival of the fittest” এর নিদর্শন । মাঙ্গাটিতে প্রচুর রক্তপাত ও মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে , কিন্তু তা এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ক্লেমোর মাঙ্গায় প্রচুর রিয়াল সোর্ডফাইটিং স্কিল ব্যবহৃত হয়েছে , সোর্ডফাইটিং টেকনিকগুলো বাস্তবে ব্যবহৃত হত একসময়।

তাই যারা সোর্ডফাইটিং এনিমে/মাঙ্গা পছন্দ করেন , তাদের জন্য ক্লেমোর মাঙ্গা বেশি রিকমেনডেড।

আর্ট :

ক্লেমোর মাঙ্গার আর্ট এর কাহিনীর মতই অসাধারণ। সব অ্যাকশন দৃশ্যই সুনিপুণভাবে আঁকা এবং স্পষ্ট । ক্লেমোরের দৃষ্টিনন্দন ব্যাকগ্রাউনড এর অন্যতম আকর্ষণ , কিছু কিছু জায়গায় ফটোগ্রাফিক স্কেচ মনে হবে , এতোটাই পারফেক্ট।

প্রথম দৃষ্টিতে ক্যারেক্টার ডিজাইন তেমন একটা চোখে লাগবেনা । কারো কারো কাছে খারাপ লাগতেও পারে , কিন্তু আমি আশ্বাস দিচ্ছি , ক্লেমোরের ক্যারেক্টার ডিজাইন আসলে খুবই ভালো।

সব ক্লেমোরেরই চুল এবং চোখ রুপালী , তাদের পোশাকও এক-অর্গানাইজেশন থেকে সরবরাহকৃত আর্মার। এইসব বাধ্যবাধকতা নিয়ে, চেহারা-হেয়ারস্টাইলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পার্থক্য রেখে এতগুলা ক্লেমোর ক্যারেক্টার আঁকা, এবং এতগুলো চ্যাপ্টারে তা অবিকৃতভাবে বজায় রাখার প্রায় অসম্ভব কাজটাই করেছেন মাঙ্গাকা ইয়াগি নোরিহিরো সেন্সেই। কাহিনীসূত্রানুসারে মাঙ্গায় যথেষ্ট রক্তপাত থাকলেও নোরিহিরো সেন্সেই অসাধারণ স্পষ্ট আর্টের দ্বারা গোরকে(Gore) শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।

কেন পড়বেন :

চরম উত্তেজনাকর সোর্ডফাইটিং , ধুমধাড়াক্কা অ্যাকশন , দৃষ্টিনন্দন আর্ট এবং মনোমুগ্ধকর কাহিনী…

আমার মতে, ক্লেমোরের স্টোরিলাইন অনেক জনপ্রিয় নভেলের চেয়েও ভালো , তাই দেরি না করে পড়া শুরু করুন।

যথেষ্ট আন্ডাররেটেড , না পড়লে পস্তাবেন।

আমার রেটিং :–

স্টোরিলাইন: ১০

ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট: ১০

ক্যারেক্টার ডিজাইন: ৯.৮

আর্ট: ৯.৮

ওভারঅল: ১০/১০

মাইএনিমেলিস্ট রেটিং : ৮.৪৪

All Fiction 1: Vinland Saga review

মাঙ্গা রিভিউ –

ভিনল্যান্ড সাগা / Vinland Saga

মাঙ্গাকা : মাকোতো ইয়ুকিমুরা / Makoto Yukimura

জানরা : হিস্টোরিকাল, অ্যাকশন, সেইনেন, অ্যাডভেঞ্চার

প্রকাশনা : Afternoon

চ্যাপ্টার : ১০৪

স্ট্যাটাস : অনগোয়িং

কাহিনী :

 

ভিনল্যান্ড সাগা জমজমাট-অ্যাকশন সম্বলিত ভাইকিংদের যুগের এক অসাধারণ কাহিনী, যাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে বাস্তবতা, নাটক, দর্শন এবং চরিত্রের চরম উৎকর্ষতা। যুদ্ধ যেখানে জীবনের প্রতিশব্দ, যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করতে পারাই যেখানে একজন মানুষের জীবনের সার্থকতা, যুদ্ধবিগ্রহ, দাসত্ব, দুর্বলের উপর সবলের আগ্রাসন, নিপীড়ন, লুঠতরাজ, অরাজকতায় পরিপূর্ণ অন্ধকার এক যুগের সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে ভিনল্যান্ড সাগা । এ যেন ‘বার্সার্ক’, ‘গেম অফ থ্রোন্স’ আর দুঃসাহসী ভাইকিংদের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ।

ভিনল্যান্ড সাগার পটভূমি রচিত ইংল্যান্ড-ডেনমার্কের যুদ্ধমধ্যবর্তী সময়ে। কাহিনীর শুরু প্রতিশোধ ও প্রায়শ্চিত্তের সন্ধানে ঘুরতে থাকা কিশোর থোরফিনকে নিয়ে, পিতার মৃত্যুর বদলা নিতে যে কাজ করে পিতার হন্তারক অ্যাসকেলাডের বাহিনিতে, আর মল্লযুদ্ধে অ্যাসকেলাডকে পরাজিত করার সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

কাহিনী এগোতে থাকে, থোরফিন আর অ্যাসকেলাড জড়িয়ে পড়ে ডেনমার্কের ইংল্যান্ড দখলের যুদ্ধে, সঙ্গি হয় ডানিশ রাজপুত্র কানুটের। ধীরে ধীরে থোরফিনের প্রতিশোধবাসনা তীব্র হতে থাকে, আর সেই সাথে কাহিনী অভাবনীয় মোড় নিতে থাকে, ফলশ্রুতিতে রাজপরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায় থোরফিন আর অ্যাস্কেলাড। যুদ্ধের মধ্যে থোরফিনের পরিচয় হয় পাগলাটে-খুনী থোরকেলের সাথে, অ্যাস্কেলাড আর থোরকেলের কাছ থেকে থোরফিন জানতে পারে তার পিতার অতীতসংগ্রাম আর আদর্শের কথা।

ভাইকিংদের বিশ্বাস ছিল যে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করলে যোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত পরলোকের পুণ্যস্থান ভালহালায় যেতে পারবে, আর এই আদর্শে তারা সর্বক্ষণ যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতো।কিন্তু সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাইকিং, থোরফিনের বাবা থোরস একসময় বুঝতে পারে, অস্ত্রচালনা আর রক্তপাতের মধ্যে নয়, বরং পৃথিবীতে শান্তির বানী ছড়িয়ে দিতে পারাই হল প্রকৃত জীবনযুদ্ধ, আর এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পারাই হল প্রকৃত যোদ্ধার পরিচয়। থোরফিন কি পারবে তার পিতার পথ অনুসরন করে প্রকৃত যোদ্ধার যোগ্যতা অর্জন করতে? অজ্ঞতা-অন্ধকারের যুগে শান্তির সন্ধান, এই আশা আর আদর্শ নিয়েই ভিনল্যান্ড সাগার যাত্রা।

বিশ্বাস করা কষ্টকর, কিন্তু সত্যি বলতে ভিনল্যান্ড সাগার ক্যারেক্টাররাই মাঙ্গাটির সর্বশ্রেষ্ঠ দিক। শুধু কাহিনিসুত্রের উৎকর্ষতায় নয়, বরং একটি কাহিনীর মুল আকর্ষণ তার ক্যারেক্টাররা, ইউকিমুরা সেন্সেই তা অসামান্য দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রধান ক্যারেক্টারদের জীবনের শত বাধা-বিপত্তি এবং সংগ্রামময় অতীত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এমনকি দ্বিতীয় সারির ক্যারেক্টারদেরও দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। থোরফিনের অপ্রতিরোধ্য প্রতিশোধবাসনা, অ্যাসকেলাডের অতীত ও বর্তমানের বোঝা বয়ে বেড়ানোর সংগ্রাম, নিপুণতার সাথে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষমতা, থোরকেলের দুঃসাহসিক কার্যকলাপ আর অতুলনীয় শক্তিমত্তা, থোরসের আদর্শ আর জীবনযুদ্ধে জয়ী হবার রহস্য, প্রত্যেকটি ক্যারেক্টারই পাঠককে মুগ্ধ করার যোগ্য। অসাধারণ কাহিনীনির্দেশনা আপনাকে এর সাথে আটকে রাখবে, আর আপনি দেখবেন কিভাবে প্রত্যেকটি ক্যারেক্টার সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে অগ্রসর হয় ।

আর্ট :

দৃষ্টিনন্দন ক্যারেক্টার ডিজাইন থেকে শুরু করে মনোমুগ্ধকর ব্যাকগ্রাউন্ড, মাঙ্গাটির আর্ট আসলেই ফার্স্টক্লাস। দেখে বোঝা যায় যে মাঙ্গাকার অঙ্কন ক্ষমতা আগের চেয়ে(Planetes) অনেক ভালো হয়েছে । প্যানেলগুলো ভালভাবে সজ্জিত, এবং অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ঝকঝকে। তলোয়ারের গতিপথও খুব স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে , যা খুবই বিরল ব্যাপার।

মাঙ্গার আর্টের ব্যাপারে সবারই যে বিষয়টি লক্ষ করা উচিৎ, তা হল আর্টের মাধ্যমে ক্যারেক্টারদের কার্যকলাপ এবং অনুভুতিগুলো যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারা, এবং ভিনল্যান্ড সাগা তা অনায়াসেই উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। আর যারা অ্যাকশনের জন্য মাঙ্গা পড়ছেন, তারা প্রথম চ্যাপ্টারগুলোতেই দেখতে পাবেন মধ্যযুগীয় যুদ্ধের বীভৎস নির্মমতা, যা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য।

নিজস্ব মতামত :

 

মাঙ্গাটি স্ব-জানরার মাঙ্গাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা এবং সবার জন্য অবশ্যই পঠনীয়। আগ্রহ জাগানিয়া কাহিনী, অসাধারণ সব ক্যারেক্টার আর মনোমুগ্ধকর আর্ট। অ্যাকশনের কোন কমতি নেই, নাটুকেপনাও দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। আর মাঙ্গাটিকে বাস্তবধর্মী করে তুলতে ইউকিমুরা সেন্সেই যে কি পরিমাণ গবেষণা করেছেন, তা যেন না বললেই নয়। প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার, প্রত্যেকটা পেইজ, প্রত্যেকটা প্যানেলই কাহিনির গড়নে অবদান রেখেছে, যা মনোমুগ্ধকর। অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, হিস্টোরিকাল ড্রামা, সবকিছুর মিশেলে অপূর্ব এক কাহিনী।

যে কারনে আমি এনিমে দেখার চেয়ে মাঙ্গা পড়া বেশি পছন্দ করি, এই মাঙ্গাটিই তার যথার্থ উদাহরণ।

 

কাহিনী: এ+

ক্যারেক্টার : এ+

আর্ট : এ

সর্বমোট : এ++(৯.৬/১০)