ফ্লাইং পুসিফুটের শেষ যাত্রাটা এমন হবে ভাবতে পারেনি কেউই। ১৯৩২ এর শুরুতে ট্রেনটার করুণ প্রত্যাবর্তন। বাকরুদ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না।
উপায় তেমনি থাকে না মাঝসমুদ্রে। এক জাহাজে। সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দী। একের পর এক অ্যালকেমিস্ট উধাও হয়ে যাচ্ছে। অমরত্বের দাম তবে কি এতটাই চড়া?
মাফিয়া এবং সাইকো। স্ট্রিট থাগ এবং কাপল। অ্যালকোহল কিংবা নিছক পাগলামো।
টারময়েল বটে গল্পটা…….. ইটালিয়ান ডিকশনারিতো তাই বলে।
গল্পের মূল পটভূমি গ্রেট ডিপ্রেশন চলাকালীন ইউনাইটেড স্টেটস। সোর্স রিয়ো’গো নারিটার লেখা নভেল। টুকরো টুকরো ঘটনা-অনুঘটনা জোড়া দিয়ে কাহিনীর প্রগ্রেশন। ‘পাল্প ফিকশন’-এর কথা মনে পড়ে যায়। অফ-ট্র্যাক ন্যারেটিভ স্টাইলের মুভি দিয়ে অমর হয়ে গেছেন কোয়েন্টিন টারান্টিনো। একুশ ভল্যুমের নারিটার নভেলগুলোও একই ধাঁচে লেখা। পুরো গল্প না পড়া পর্যন্ত সঙ্গতি মিলবে না। ২০০২ এ প্রথম ভল্যুম ‘দ্যা রোলিং বুটলেগস্’ পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়। বেশ পরে বের হয় দু’ ভল্যুমের ম্যাঙ্গা। নারিটার আরেকটা নভেল ‘দুরারারা!’ও অ্যানিমে অ্যাডাপ্টেশন পায়। ভালো বই পাঠককে তৈরি করে। শ্রোতা তৈরি করে ভালো মিউজিক। আর ‘বাকানো!’ দেখতে হলে দর্শককে তৈরি হয়ে আসতে হয়।
অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন সবসময় নষ্ট হয় না। এত বিরাট কাস্টিং নিয়ে রেকর্ড করে ফেলেছে অ্যানিমেটা। ক্যারেক্টারগুলোর ডিপিকশন বেশ ভাবায়। মর মানুষ নিজেদের যেভাবে দেখতে চায় তাই চিত্রিত করেছেন কাহিনীকার। ফ্রয়েডীয় কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে। আত্মবিশ্বাস আর স্বকীয়তা চরিত্রগুলোর উপজীব্য। তবু তাদের সম্পাত বিন্দু একটাই ― ব্যাডাসারি।
ডার্ক স্টোরির জন্য অ্যানিমেশন যেমনটা হওয়া দরকার, আলো ছায়ার খেলা। গোর সিনগুলোতে ইম্প্রেসিভ কিছু ছিল। ইম্প্রেসিভ ছিল আরো অনেক কিছুই। পাপেট মাস্টাররা চেয়েছিলেন দর্শকরা যেন স্টোরিটাকেই মূল্যায়ন করে, সেভাবেই সবকিছু হ্যান্ডল করা। ব্রেইন’স বেস কমপ্লেইন করার কোনো সুযোগ রাখেনি। সুযোগ রাখেনি সেইয়ুরাও। নতুন পুরোনো শিল্পীদের আন্তরিকতা টের পাওয়া যায়। কখনো প্রিফার করি না যদিও, বাকানো! -এর ইংলিশ ডাবিং যথেষ্ট স্ট্রং। ক্যারেক্টারগুলোর পরিপূর্ণতা আর কোনো কিছুতে হতে পারত না।
আর্লি থার্টিজ’ ভাইবটা ভালোই ফুটে উঠে বাকানো! -এর সাউন্ডট্র্যাকে। অডিওফাইল হওয়া সত্ত্বেও জ্যাজ নিয়ে কখনো আলাদা করে সময় দিইনি। অন্তত সিরিজটা দেখার আগেতো নয়ই। ভালো লেগেছে পিয়ানো সোলোগুলো। ‘কিয়োকু নো তেগামি’ ট্র্যাকটা একধরণের শূন্যতা তৈরি করে। লিখে বোঝানো সম্ভব হবে না কখনোই। আবার ‘ইন দ্যা স্পিক ইজি’ খুব সুন্দর হ্যাপি সোলো। আরো ভালো লেগেছে ‘অ্যালভিয়্যার নো ব্রুস’, ‘উতাকাতা নো ইনোরি’, ‘রিঙগো নো এ নো উয়ে নো রাকুগাকি’। স্যাটায়ার ধাঁচের বেশ কিছু ইনস্ট্রুমেন্টাল আছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে চমৎকার শোনায়।
ওপেনিং নিয়ে আলাদা কিছু না বললে রিভিউটাই মিথ্যা হয়ে যাবে। ‘গানস্ অ্যান্ড রোজেস’ অবকাশটা তৈরি করে নেয় এভাবেই। প্যারাডাইজ লাঞ্চের করা ট্র্যাকটা সেরা কিছু ওপেনিং থিমের একটা অ্যানিমের ইতিহাসে। কম্পোজিশনে এতটা পারফেকশন আনা যায় না আর কোনোভাবে। ইউটিউব লিঙ্ক : https://youtu.be/OOZ1hsb8smQ
এন্ডিং থিম কিছুটা স্লো পেসড, মাইল্ড। ওদা কাওরির ‘কলিং’ তেমন আপিল তৈরি করতে না পারলেও একেবারে খারাপ না। অ্যানিমের সাথে এটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে সফলভাবে।
বাকানো! -কে আর দশটা অ্যানিমে দিয়ে মাপতে গেলে হয় না। গল্পটা একজন শিল্পীর পরিণত মানসিকতার ফসল। অল্প কিছু শব্দে যার পর্যায় বলে ফেলা যায় না। বলে ফেলা যায় না ক্যারেক্টারগুলোর অসাধারণত্ব। বলে ফেলা যায় না অ্যানিমেটার স্ট্রেন্থ। বলে ফেলা যায় না এটার জন্য ভালো-লাগাগুলো।
খুব অপেক্ষা করে আছি সেভেন্টিন্থ এপিসোডের জন্য। অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না।