Gurren Lagann [রিভিউ] — Md Asiful Haque

Gurren Lagann 1

অনেকে বলেন এই সিরিজটা আসলে দুইটা আলাদা সিরিজের ম্যাশাপ হয়ে গেসে; টাইমস্কিপের আগে এবং পরে।

আমার কাছে আসলে এইটা ‘তিনটা’ আলাদা সিরিজ মনে হইসে।

১) প্রথম ১৫ (/১৬) এপি – ৭ বছর টাইমস্কিপের আগের সময়টা। You got your average mecha series. খুব বেশি চমক নাই (Well except the one at around epi 6/7; যেইটার স্পয়লার মোটামুটি দেখা শুরুর পরেই পেয়ে গেসিলাম); লিটারেলি “মেশিনে মেশিনে ঠুয়াঠুয়ি” চলসে। হাল্কা ছোট একটা লাভ ট্রায়াংগেল আর লিরন সহ কিছু ক্যারেকটার ইন্ট্রডিউস হইল এই সময়ে; প্লাস একটা মেজর এবং অনেকগুলা মাইনর ফাইট। ইন্ট্রোডাকটরি পার্ট হিসেবে খারাপ না; কিন্তু পুরো জিনিসটা আরো অনেএএএএক কম এপির ভিতরে নিয়ে আসা যেত সম্ভবত।
এই পার্টের রেটিংঃ ৫

Gurren Lagann 2

২) পরের ৮(/৯) এপি; চন্দ্রের পতন ঠেকানো পর্যন্ত। এই সিরিজ দেখার আগে যেই ইনফোটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ছিল সেটা হল – এই সিরিজের মেকাররাই Kill la kill বানাইসে। যেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেসিলাম সেইটা আসলো এই সময়ে – cheesy over the top ফাইটিং (আগের পার্টের ফাইটও যথেষ্ট over the top ছিল; বাট পুরোপুরি ‘impressive’ লাগে নাই যেমনটা এই পার্টে লাগসে) এর সাথে পলিটিকাল ক্রাইসিস, ম্যাসিভ ক্যারেকটার ডেভেলেপমেন্ট; এবং বেশ কিছুটা টুইস্ট। This part was simply awesome.
এই পার্টের রেটিংঃ ৯

৩) শেষ ৩(/৪) এপি; আউটার স্পেসে গিয়ে টাইম, ডাইমেনশন অতীত ভবিষ্যৎ স্পাইরাল এন্টি-স্পাইরাল গুলায়ে খাওয়া পার্ট (১০ আর ১১ ডাইমেনশনে গিয়ে -১০ অতীত আর +৫ ভবিষ্যৎ রেঞ্জে মিসাইল দিয়ে দুই ডাইমেনশন ওয়ালা এন্টি স্পাইরালদের সাথে কিছু মানুষ কুতকুত খেলে আসছে)। The animation of these episodes was simply outstanding and breathtaking; কিন্তু আমার কাছে চন্দ্রপতন ঠেকায়ে দেওয়ার পরেই স্টোরি থামায়ে দিলে বেটার লাগতো; দুই তিন এপিতে “হাগার হাগার” info dump ব্যাপারটা ভাল্লাগে নাই। “শেষ হইয়াও হইল না শেষ” – এই ধরণের কিছু দেখাইলে আমি পার্সোনালি প্রেফার করতাম। Still; this part was quite good, too; specially animation and all the stuffs.
এই পার্টের রেটিংঃ ৭

সো ওভারঅল রেটিংঃ ৬.৪ (প্রায়) 

Gurren Lagann 4

ক্যারেকটারদের মধ্যে প্রথমে Yoko কে ফ্যানসার্ভিস হিসেবে দেখানো হলেও পরের দিকে গিয়ে তার চমৎকার ডেভেলপমেন্ট ভাল লাগসে। তবে লাস্টের দিকে চুড়ান্ত ক্লাইম্যাক্সের মধ্য দিয়ে এর ফ্ল্যাশব্যাক খুবই পেইনফুল একটা এপিসোড ছিল। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ভাল লাগসে রসিউ চরিত্রটাকে; একটা আইডিওলোজির ম্যানিফেস্টেশন ছিল এই চরিত্র দিয়ে। সাথে লিরনকেও বেশ ভাল লাগসে।

এবং সবচেয়ে পেইন লাগসে নিয়াকে। I understand “সবার মন জয় করতে পারে এমন গুডি গুডি ফিল একটা ক্যারেকটার” দেখানোর চেষ্টা ছিল এবং দরকারও ছিল হয়ত; but she was simply irritating in every possible way.

ওভারঅল সিরিজের সাউন্ডট্র্যাক খুবই পছন্দ হইসে; প্লাস রাইট টাইমে সেইগুলার রাইট ইউজ; আর এনিমেশন তো বললামই।

At the end; পুরা সিরিজের ইন্টেনশনই ছিল সব লজিকের এগেইন্সটে গিয়ে পিওর একশন দেখানো; এবং শেষদিকে গিয়ে সেটা পুরোপুরিই করতে পেরেছে (সাথে কিছু বেশিও করসে )।

If you are a mecha fan unlike me; you will just love it.

And if you are not; chances are you will find at least the last 10-12 episodes quite fascinating and interesting.

Gurren Lagann 3

Sket Dance – মাস্ট ওয়াচ এনিম রিভিউ – মোঃ আসিফুল হক

SKET Dance.

নাম থেকেই আসলে সিরিজের মেইন স্টোরির একটা আইডিয়া করে নেওয়া যায়। SKET এর পুরো রুপ হচ্ছে – Support, Kindness, Encouragement, Troubleshoot. হাইস্কুলের ক্লাব স্কেট ডান্সের গড়ে ওঠার উদ্দেশ্য ছিল স্টুডেন্টদের ছোট বড় নানা সমস্যায় সাহায্য করা। যদিও বেশিরভাগ সময়েই তারা ক্লাব রুমে বসে ঝিমায় এবং গল্প করে; যে কোন সমস্যা তাদের কাছে এলে সেটা সমাধানে তারা তাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। সিরিজের মুল চরিত্র তিনটা – বসসুন, হিমেকো আর সুইচ।

প্রথমেই ছোট একটা জিনিস ক্লিয়ার করে নেয়া যাক। এই সিরিজটাকে অনেকেই গিন্তামার রিপ-অফ বলে দাবি করেন। যদিও সিরিজের মাঙ্গাকা এককালে গিন্তামার মাঙ্গাকার এসিস্ট্যান্ট ছিলেন এবং সেখান থেকে কিছুটা ইনফ্লুয়েন্সড হওয়াটাই স্বাভাবিক (এর ওর পোস্ট মারফত জানসি 😀 ) এবং সিরিজের সেটিং এও হয়ত কিছু মিল আছে; কিন্তু সেটা ও পর্যন্তই। দু’টো জিনিসের স্টাইল, টোন, টার্গেটে অনেক ভিন্নতা। গিন্তামা যেমন সবকিছুকে এক্সট্রীমে নিয়ে গিয়েছে; হোক সেটা কমেডি বা সিরিয়াসনেস; স্কেট ডান্স চেষ্টা করেছে পুরো সিরিজজুড়েই হাল্কা একটা ভাব ধরে রাখতে; যে কারণে কিছু ব্যাকস্টোরি ছাড়া পুরো সিরিজে তেমন সিরিয়াস কোন আর্ক বা স্টোরি নেই আসলে; এবং এই জায়গাটাই আমার কাছে মনে হয়েছে এই সিরিজের স্ট্রেংথ।

সিরিজের কোর স্টোরিলাইন খুব সিম্পল এবং এপিসোডিক। কিছু মাল্টিএপিসোড স্টোরি আছে; তবে সেগুলোর লেংথও খুব বেশি না। কমেডির পাশাপাশি ড্রামা এবং অন্যান্য এলিমেন্টগুলোও যত্ন নিয়েই ইঙ্কলুড করা হয়েছে।

সিরিজের প্রথম হাফে এপিসোডগুলো ছিল একদমই “ষ্টুপিড”; মানে যার যা খুশি করতেসে; আউটরেজিয়াস জিনিস আসতেসে একের পর এক (লাভ-লাভেন-লাভ জেনারেশন- মাই জেনারেশন – জেনারেশন গ্যাপ – জেনারেল জেনারেটর জেনারেশন- জেনেভা – এই সিকুয়েন্স আমি বহু দিন ভুলবো না; পৈশাচিক একটা এপি ছিল); ওইটাই বেশি ভাল ছিল। শেষঅর্ধে এরা ক্যারেক্টারগুলার মধ্যে কিছু রিলেশনশীপ ক্রিয়েট করতে গিয়েছে; এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেইটা অনেকটা ফোর্সড ছিল (পারসোনালিটি চেইঞ্জের এপিটা – রেয়ার এপিগুলার একটা যেইটা বিরক্ত লাগসে রীতিমতন :/ ); তবে সিরিজের খাতিরে সেটারও দরকার ছিল হয়তবা।

পুরো সিরিজে লক্ষ কোটি ক্যারেক্টার আসছে; থেকেও গেসে; আবার কিছু কিছু হারায়েও গেসে। সবারই কিছু না কিছু ইউনিক ট্রেইট ছিল; ইন্টারেস্টিং ছিল। কিছু কিছু এপিতেতো মেইন ক্যারেক্টারদের উপস্থিতি ছিল সাইডশো হিসেবে। মোমোকা, জো কুসারাগি ( :v ) , আগাতা, রোমান – সবগুলো ক্যারেক্টারই ইন্টারেস্টিং ছিল।

একটা সার্টেইন এপিসোডে সবাই মিলে উনিয়ুর বাসায় যায়। ওই এপিটা সম্ভবত সবচেয়ে উরাধুরা এপি ছিল আমার কাছে। লজিক মজিকরে গাট্টি বোঁচকায় বাইন্ধা তাকের উপর তুইল্লা রাইখা এপিটা বানাইসে। তাছাড়া জেনেসিস এর এপি, অনিহিমের মায়ের দাবড়ানি – পুরো সিরিজটাই জোস জোস এপিসোডে ভর্তি ছিল।

তবে পুরো সিরিজে সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র ছিল সুইচ ( অনেকেরই তাই হবার কথা 😀 )। ইউকির সাথে তার হেড-টু-হেড এঙ্কাউন্টারগুলা এবং তাদের আনউইজুয়াল রিলেশনশীপ খুবই এঞ্জয়েবল ছিল। প্লাস সুইচের উইটি কমেন্টগুলা অলওয়েজই এঞ্জয়েবল ছিল।

মিউজিক, আর্ট – এইগুলা মোটামুটি ভালই ছিল। ভয়েস এক্টিং আমার বেশ ভাল্লাগসে (সেইয়ু চিনি না; কেয়ারও করি না; সো এর বেশি কিছু আসলে বলার নাই)।

সিরিজের একটা সমস্যা হচ্ছে অনেক পান এবং প্যারোডি আসলে ধরা সম্ভব না; কারণ রেফারেন্স গুলা সমন্ধে আইডিয়ায় সবারই কম বেশি ঘাটতি থাকার কথা। প্লাস আমার মতন ম্যারাথন দিলে কিছু কিছু জোকস হয়ত ক্লিশে লাগতে পারে; আহামরি তেমন কিছু না।

ওভারঅল; চমৎকার একটা সিরিজ, যারা দেখেন নাই সবার জন্যই রিকমেন্ডেড।

Nobunaga Concerto: জাপানের এক টুকরো ইতিহাস – আসিফুল হক

horriblesubs-nobunaga-concerto-07-720p-mkv_snapshot_12-32_2014-08-31_10-33-24

“If the cuckoo does not sing, kill it.”

সেনাপতি বসে আছেন চিন্তিতমুখে। পিছনে তার অনুগত ৩০০০ সৈনিক। প্রত্যেকেই তার জন্য জান কুরবান। কিন্তু ভদ্রলোকের চিন্তার কারণ সামনে। বিপক্ষদলের সৈনিকের সংখ্যা হাজার ২৫ এর কিছু বেশি। তিনি জানেন তিনি জিতবেন; কিন্তু তার সৈনিকরা খুব একটা সাহস পাচ্ছে না আক্রমণের।

যুদ্ধের যাত্রাপথে একটা মন্দির পড়ে। সেনাপতি মন্দিরের সামনে আসতেই বলে উঠলেন, আমি এখন ভেতরে গিয়ে প্রার্থনা করব। তারপর বের হয়ে একটা মুদ্রা নিক্ষেপ করব। মাথা উঠলে জিতে গেসি; আর লেজ পড়লে কিছু করার নেই। আজকে সব কিছু ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

প্রার্থনা শেষ হল। সেনাপতি সাহেব বের হয়ে সবার সামনে মুদ্রা নিক্ষেপ করলেন। মাথা উঠল। সব সৈনিক এমনভাবে চিৎকার করতে লাগলো যেন তারা ইতিমধ্যেই যুদ্ধ জিতে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা-ই হয়েছিল।

যুদ্ধ শেষে তার সহকারী তাকে বললেন, ভাগ্যকে তো কেউ বদলাতে পারে না !
তিনি জবাব দিলেন, অবশ্যই। বলেই দুই পাশেই মাথাওয়ালা মুদ্রাটা বের করে সহকারীকে দেখালেন।

সেনাপতির নাম নবুনাগা।

ep_561192_2 (1)

পুরো জাপানকে এক পতাকাতলে আনার জন্য যে কয়জনের নাম ইতিহাসে লেখা নবুনাগা (১৫৩৪ – ১৫৮২) তাদের মধ্যে অন্যতম। জাপানের ইতিহাসে নবুনাগা অবশ্য সবসময়েই কম বেশি ভিলেনিয়াস চরিত্র হিসেবেই খ্যাত; যার অন্যতম প্রধান কারণ ১৫৭১ এ একটা বৌদ্ধ মন্দির এবং এর ভিতরে থাকা বহু সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে মারা।

নবুনাগা ইতিহাসের পাতা ছেড়ে উঠে এসেছে জাপানের সাহিত্য উপন্যাস কিংবা এনিমের জগতে। সেই রকমই একটা সিরিজ “nobunaga concerto” যা মুলত “সাবুরো”র সময় ভ্রমণের মাধ্যমে অতীতে চলে যাওয়ার গল্পের মাধ্যমে নবুনাগার গল্প শোনায় আমাদের।

সাবুরো বর্তমান সময়ের জাপানের এক স্কুলের অমনোযোগী এক ছাত্র; ইতিহাসে বরাবরই দুর্বল। একদিন হটাত করেই তার জীবনে ঘটে যায় এক অদ্ভুত ঘটনা। হটাত করেই সাবুরো সময় ভ্রমণের মাধ্যমে নিজেকে আবিস্কার করে মধ্যযুগের জাপানে; নবুনাগার সমসাময়িক সময়ে। তারপর কি ঘটল তাই নিয়েই এই সিরিজ।

ভাল দিকঃ ক্লিশে নাই; সেন্স অফ হিউমার চমৎকার; পছন্দনীয় চরিত্র; দুর্দান্ত ভয়েস এক্টিং; অনেকটা ইতিহাসকে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ; ভাল সাউন্ডট্র্যাক।

খারাপ দিকঃ ব্যাতিক্রমী এনিমেশন; সময় অগ্রগতির সামঞ্জস্যহীন গতি।

যদিও খুব একটা হইচই নেই; কিন্তু নবুনাগা কন্সার্ট ইতিহাস আর কমেডির মিশেলে চমৎকার একটি সিরিজ।

রিকমেন্ডেড।

CIWuOFs

Laputa: Castle in the sky – মুভি রিভিউ – আসিফুল হক

কি দেখলাম – Laputa: Castle in the sky
প্রোডাকশন হাউসঃ জিবলী
ডিরেক্টরঃ হায়ায়ো মিয়াজাকি

একটা দৃশ্যর কথা চিন্তা করুন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের হাতছানি শুরু হল মাত্র। হাতের কাজ শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন, বাড়ি ফিরবেন বলে। হটাত করেই ঈশান কোণে অদ্ভুত এক আলো দেখতে পেলেন। খানিকটা কৌতুহল নিয়েই আলোর উৎসের কাছাকাছি হতেই দেখতে পেলেন আকাশ থেকে নেমে আসছে ছোট একটা মেয়ে। তার গলায় জ্বলজ্বল করছে উজ্জ্বল এক মণীহার, যেটা মেয়েটাকে ধীরে ধীরে ভাসিয়ে নামাচ্ছে। দস্যুদল আর সেনাবাহিনী – সবাইই তাড়া করে ফিরছে মেয়েটিকে। কারণ মেয়েটির কাছে আছে আকাশে ভেসে বেড়ানো স্বপ্নের এক জগতের চাবিকাঠি; যে জগত অসীম ধনসম্পদের হাতছানি দেয় নিরন্তর।

ঠিক এমনই এক দৃশ্যপটকে ঘিরে শুরু হয় “Laputa: Castle in the sky” এর কাহিনী। ছোট্ট মেয়েটি শীলা, এবং তাকে উদ্ধার করা ছেলেটি পাযু। সেনাবাহিনী এবং জলদস্যু – দু’দলের ধাওয়া পালটা ধাওয়া, লাপুতার খোঁজ এবং শীলা পাযুর অভিযানের গল্প মিয়াজাকির এ মুভিটি।

লাপুতার জগত স্পর্শ করেছে অনেক কিছুই – যাদু থেকে উন্নত বিজ্ঞান; খুন কিংবা দস্যুতা; ছিল জোনাথন সুইফট থেকে লুইস স্টিভেনসন কিংবা হিন্দু পুরান থেকে শুরু করে বাইবেলের শ্রুতির রেফারেন্সও। রামায়ণের ইন্দ্রর তীর কিংবা ব্রিটিশ মাইনিং এর শহর; অথবা ইউরোপীয় ঘরানার দুর্গের ডিজাইন – মিয়াজাকি মুভিতে একগাদা রেফারেন্স ব্যাবহার করেছেন নিপুণ দক্ষতায়।

ম্যাজিক মুভির একটা বিরাট ফ্যাক্টর হলেও শুরুর অর্ধেক অংশ তা থেকে কম বেশি মুক্ত ছিল। এবং এ অংশে মুভিটা বেশি আকর্ষণীয়ও ছিল; অসাধারণ কিছুর জন্য না; বরং ছিমছাম সাধারণত্বে; স্বভাবী কিছু চরিত্রের গুণে। ছোটবেলায় বাবা মা হারানো খনিতে কাজ করা পাযু এমন এক এলাকায় থাকে যেখানকার লোকজন নিজেদের স্বার্থেই কম্যুনিটিকে সবার আগে জায়গা দেয়; বিরাট কষ্ট আর পরিশ্রমের মাঝেও তারা সুখী। ঘটনাক্রমে পাযু জড়িয়ে পরে এমন এক ঘটনায়; যা তার বহুদিনের দেখা স্বপ্নের রাস্তাতেই তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়।

বৃহত্তর গন্ডীতে লাপুতা আমাদের জীবনেরই গল্প; শীতা এবং পাযুকে আমরা পাই শত লোভ, স্বার্থপরতা আর ক্ষমতার দড়ি টানাটানির মাঝেও নিজেদের নিষ্পাপ সত্তা ধরে রাখতে; অন্যদিকে মুস্কা এবং সেনাবাহিনী যেন মনের অন্ধকার জগতের প্রতিচ্ছবি। এর মাঝে সবচেয়ে বাস্তব চরিত্র বোধহয় দস্যুদল; বিশেষ করে তাদের লিডার ডোরা। এরা সম্পদ লুটে নেবার জন্য ঘুরে বেড়ায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়; কিন্তু আবার দুটো বাচ্চাকে দলে আশ্রয় দেয় পরম মমতায়।

পুরো মুভিতে গল্প যথেষ্ট সরল; এবং টার্গেট অডিয়েন্সের কথা মাথায় রাখলে খুব চমৎকারভাবেই সেই মুভির চিত্রায়ন হয়েছে। জিবলীর নিজস্ব আর্টস্টাইল এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এই মুভিতেও ছিল বরাবরের মতনই। সাদামাটা মাইনিং শহর থেকে সবুজে পূর্ণ স্বপ্নের নগরে স্থানান্তর মুভিটি সামলেছে দক্ষতার সাথেই। মুভিটা শেষ করে ম্যালে গিয়ে আমি রীতিমত চমকে উঠেছিলাম সালের ঘরে ১৯৮৬ লেখা দেখে। আমাকে বেশ কয়েকবার ঠিকভাবে দেখে নিশ্চিত করতে হয়েছে যে আমি ভুল দেখছি না; এতটাই চমৎকার ছিল এনিমেশন। মিউজিকও যথেষ্ট ভাল ছিল; ইমোশনাল জায়গাগুলোতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকগুলো যথার্থই ছিল। এছাড়া শেষ গানটা তো খুবই প্রিয় হয়ে গেছে এর মধ্যেই !

তবে দু’ঘন্টার এ মুভিটা যে গল্প বলা শুরু করেছিল; সেটাতেই সত্য থাকার চেষ্টা করেছে; যে কারণে অনেক বড় প্রশ্নেরই আসলে উত্তর মেলে নি মুভিটায়। লাপুতা কেন জনমানবশুন্য ছিল কিংবা শীলার অতীতে কি ঘটেছিল এবং মুস্কাই বা কি করে পৃথিবীতে ছিল, কতদিন ধরে ছিল; সে লাপুতা সমন্ধে এতো কিছু জানলো কি করে – এসবের কিছুই জানা যায় নি মুভিটায়। এছাড়া শীলা একগাদা স্পেল জানলেও সেগুলোর কোনটাই ব্যাবহারের চেষ্টা করে নি পুরো মুভি জুড়েই। লাপুতা কি করে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে কিংবা অতীতেই বা কি করে করেছিল – এ ধরণের কোন সুত্রও মুভিটা আমাদের দেয় না।

শেষ কথা; হাতে ঘন্টা দুয়েক সময় আর সুন্দর ছিমছাম গল্প, মনোমুগ্ধকর আর্ট আর চমৎকার পেসিং এর একটা মুভি দেখার ইচ্ছে থাকলে জিবলীর যে কোন মুভিই সবসময়েই ভাল একটা চয়েস। লাপুতাও তার ব্যাতিক্রম কিছু না।

The Wind Rises: মুভি রিভিউ – মোঃ আসিফুল হক

কি দেখলামঃ The Wind Rises
প্রোডাকশন হাউসঃ জিবলী।
ডিরেক্টরঃ হায়াতো মিয়াজাকি।

ইতালীয় বৈমানিক নকশাকার কাপ্রনি দ্বারা অনুপ্রাণিত জিরোর ছোটবেলার স্বপ্ন পাইলট হবার পথে বাদ সাধে তার চোখের সমস্যা। এতে দমে না গিয়ে জিরো বরং এয়ারপ্লেন ডিজাইনকে তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করে নেন। ১৯২৭ সালে তিনি যোগ দেন জাপানিজ এক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এয়ারক্রাফট ডিভিশনে। এবং খুব দ্রুতই তার প্রতিভার সাক্ষর রেখে এই ধারার একজন পুরোধা ব্যাক্তি হয়ে উঠেন।

জিরোর জীবনের ঘটনাপ্রবাহের সাথে সাথে এই মুভি বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা সমান্তরালে বর্ননা করে; যেমন – ১৯২৩ এর কান্তো ভুমিকম্প, যক্ষ্মার মহামারী, এবং জাপানের যুদ্ধে জড়িয়ে পরার গল্প। এর পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই নাওকোকে; জিরো যার প্রেমে মুগ্ধ হন এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন। এছাড়া জিরোর বন্ধু এবং সহকর্মী হোঞ্জোর সাথে তার চমৎকার সম্পর্ক এবং তৎকালীন জাপানের অনেক চিত্রই উঠে এসেছে এই মুভিতে।

wind rises 1

ব্যাক্তিগতভাবে আমি জিবলীর মুভির খুব বড় ভক্ত না। কারণ দর্শক হিসেবে আমার সাধাসিধে ছিমছাম গল্পই পছন্দ। খুব বেশি ভাবতে হয় এমন মুভির বদলে সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টির সাথে এক মগ কফি খেতে খেতে একটা স্নিগ্ধ ভালবাসার গল্প দেখে ফেলায় আমি বরং বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জিবলীর মুভিগুলো আমার কাছে বড্ড “কঠিন” মনে হয়। সে কারণে আসলে দেখা হয়েছে খুব কমই। Wind rises ও তার ব্যাতিক্রম না। এখানে জিরোর জীবনের সাথে উঠে এসেছে একগাদা ঘটনা, ইতিহাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবন দর্শন আর ভালবাসা। জিবলীর মুভি তাই দেখতে হয় সন্তর্পণে; মুভির সাথে একাত্মা হয়ে। সেভাবেই দেখার চেষ্টা করলাম; এবং মুগ্ধ হলাম; আবারও।

যে কোন জিবলীর মুভির মতন এই মুভির আর্টস্টাইলও দুর্দান্ত; জলরঙ্গা ব্যাকগ্রাউন্ড এতো যত্নের সাথে আকা হয়েছে যে শুধু এনিমেশন দিয়েই এই মুভি যে কোন সমালোচনা উৎরে যাবে।

চরিত্র রুপায়নে এই মুভি সম্পূর্ণ মুন্সিয়ানাই দেখিয়েছে। প্রত্যেকটা সম্পর্কই স্বাভাবিক, সাধারণ, দৈনন্দিন জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন। সবগুলো চরিত্রই বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে সুন্দরভাবেই।

wind rises 2wind rises 3

মুভিটির সবচেয়ে বড় সমালোচনার দিক্টা বোধহয় আসবে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেই। পুরো মুভি জুড়েই জাপানীদেরকে যুদ্ধের ভিক্টিম হিসেবেই দেখানোর একটা সূক্ষ্ম চেষ্টা ছিল যেখানে জাপানিজ মিলিটারির সে সময়কারই যুদ্ধাপরাধের প্রচুর ইতিহাস একটু ঘাঁটলেই খুজে পাওয়া যায়। পুরো মুভি জুড়ে যুদ্ধবিমান বানানোর জন্য নানান রকম চেষ্টার বর্ণনা চলে এসেছে; কিন্তু সেই বিমানগুলোর ব্যাবহার মুভিতে খুব সুন্দরভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। জিরোকে আমরা দেখতে পাই তার চশমা এবং পরিপাটি কাপড়ে; খুব নম্র বিনয়ী তরুণ এক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে; যুদ্ধবিমান তৈরির আফটারম্যাথ যাকে মোটেও বিচলিত করে না; বরং মুভির মাঝখানে পিরামিডের সাথে তুলনা দিয়ে পুরো ব্যাপারটাকেই গ্লোরিফাই করার নিদারুণ একটা চেষ্টা ছিল। যেটা অনেকটাই আয়রনিক; কেননা জিরোর প্রথম যুদ্ধবিমান “জিরো” তৈরিতে মিতসুবিসি ব্যাবহার করেছিল কোরিয়ান এবং চীনা দাসদের। এছাড়া পুরো মুভি জুড়ে জার্মান এবং অন্যদের জাপানে বোম্বিং করা দেখানোর মাধ্যমে জাপানীজদের মধ্যে তারা “যুদ্ধের মদদদাতা নয়, বরং শিকার ছিল” ধাঁচের যে মেন্টালিটি বিদ্যমান (জাপান জার্মান এলায়েন্স বা “এক্সিস” যুদ্ধের একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল); সেটাকেই শৈল্পিক রুপ দেয় মাত্র।

পুরো মুভিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব বেশি সাসপেন্স, খুব বেশি টেনশন ছিল না। এমনকি জিরোর ব্যাক্তিগত অন্তর্দন্দ নিয়েও আমরা খুব একটা ইঙ্গিত পাই না। আর শেষে গল্পটা যেন একেবারে হটাত করেই থেমে যায়। কোন মেসেজ না; কোন বড় সমস্যার সমাধান না; কোন ক্লাইম্যাক্স এন্টি-ক্লাইম্যাক্স কিচ্ছু না; একেবারেই যেন হটাত করেই “আচ্ছা তবে বিদায়” বলে মুভি শেষ করে দেওয়া।

ওভারঅল; সাউন্ডট্র্যাক এবং এনিমেশন বিচারে দুর্দান্ত একটা মুভি; যার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টও যথেষ্ট সন্তোষজনক; এবং দুই ঘন্টার একটা হ্যাপি জার্নি শেষে বেশ খানিকটা এব্রাপ্ট এন্ডিং এর অভিজ্ঞতা দিয়েছে এই মুভিটা।

রবার্ট ওপেনহাইমার তার ডিজাইন করা বোমার ডেমনস্ট্রেশন দেখে গভীর দুঃখ ভরে বলেছিলেন “Now I am become Death, destroyer of worlds.” একগাদা কিলিং মেশিনে ভরা আকাশের নিচে খোলা মাঠে হেটে যাওয়া জিরোর মানবহত্যার জন্য এক ফোঁটা দুঃখও জন্মায় নি; তার শেষতক দুঃখ ছিল তার কোন যুদ্ধবিমান অক্ষত ফেরত আসে নি; এই নিয়ে।
I can’t care for someone like that.

Tokyo Godfathers: মুভি রিভিউ – আসিফুল হক

 

কি দেখলামঃ Tokyo Godfathers

পরিচালকঃ সাতোশি কন
মানুষর জীবনের চিত্রনাট্যটা বড়ই অদ্ভুত। খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানেই সব হিসেবনিকেশই উলট পালট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এক দিন; শুধু একদিন; মানুষের গোটা জীবনটাকেই এলোমেলো করে দিতে পারে। আমরা যতই অতীতকে চিন্তা করে ভবিষ্যতের ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকি না কেন, আমাদের বসবাস সবসময়েই বর্তমানে, যে কারণে বেশিরভাগ সময়েই নিজেদের ভেতরের, নিজেদের জীবনের আমুল পরিবর্তনগুলো অনেক সময়েই টের পাই না।

যারা এই মুহূর্তে এই পোস্ট পড়ছেন কম বেশি সবাই-ই হয়ত নিজের রুমে অথবা অফিসে আরাম করে বসে বা শুয়ে পোস্টটা পড়ছেন। এই অবস্থায় আসলে চিন্তা করা কষ্টকর; তাও একটা দৃশ্যর কথা চিন্তা করুন। ধরুন এই মুহূর্তে আপনি গৃহহীন; রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটে। ভিক্ষা করে, কুড়িয়ে – যেভাবে পারেন এটা সেটা যোগাড় করে বেঁচে থাকেন। একদিন প্রচন্ড শীতের রাতে আবর্জনার ভিতর খাবার কুড়োতে গিয়ে একটা বাক্সের ভিতরে খুঁজে পেলেন এক শিশুকে। কি করবেন তখন? পুলিশের হাতে তুলে দিবেন, যখন আপনি জানেন যে তার জায়গা হবে কোন এতীমখানায় অথবা মায়াদয়াহীন কোন পরিবারে? নাকি বাচ্চার বাবা মা কে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করবেন? অথবা নিজেদের ছোট্ট খুপড়ি ঘরে রেখে বড় করে তোলার কথা চিন্তা করবেন?

সাধারণত শিবুইয়া; ইকেবুকোরোর মতন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা রোপ্পঞ্জি বা আকিহাবারার মতন বিনোদন এলাকাগুলো দেখতে দেখতে জাপানের আরেক্টা পাশ আমাদের অজানাই রয়ে যায়, ঘনবসতিপূর্ণ টোকিও; আর সেখানকার অভিভাসী শ্রমিকদের ঘিঞ্জি বস্তি এলাকা; কিংবা বাস্তুহারা লোকদের জীবন যাপন; যারা নিয়মিত পদে পদে লাঞ্চিত হয়; হয়রানি হয়; বেঁচে থাকার জন্য প্রবল সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
মুভিটির গল্প আবর্তিত হয় মুলত তিন গৃহহীনকে ঘিরেঃ মিয়ুকি – দলের সবচেয়ে নবীন সদস্য। হানা – ড্র্যাগ কুইন, যে কি না তার মেয়েলি ধাঁচের কথা বার্তা এবং কাজকর্ম দিয়ে সবসময় মনোযোগের কেন্দ্রে থাকার চেষ্টা করে। গিন – হতাশ মদ্যপ বয়স্ক ভদ্রলোক; যে সব সময়েই তার নিজের জীবন নিয়ে হাহুতাশ করতে থাকে।

আপাত দৃষ্টিতে খুব অচিত্তাকর্ষক এই তিনটি চরিত্রের পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্যগুলো, তাদের রাস্তায় নামার কারণগুলো একে একে আমাদের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বোধহয় হানার চরিত্রটিই। এনিমে ড্র্যাগ কুইন ধাঁচের চরিত্রগুলোর মুল লক্ষ্যই থাকে কমিকাল রিলিফ; তাদের জীবনের পিছনের গল্প, সংগ্রাম বা মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো ঘুরে দেখার চেষ্টা থাকে খুব কমই। এই মুভিটা অবশ্য সে পথে না হেঁটে হানার নিজেকে খুজে পাওয়ার সংগ্রামটা দেখিয়েছে যথেষ্ট যত্নের সাথেই।

গল্পের মাঝখানে একটা দৃশ্যে মিয়ুকি স্প্যানিশ এক মহিলার কাছে তার দুঃখগুলো, স্মৃতির কথাগুলো বলতে থাকে, জাপানিজে। ভদ্রমহিলা স্প্যানিশে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। কারো কথাই কেউ বুঝতেসে না; অথচ কে কি বলতে চাচ্ছে আন্দাজ করে নিতে মোটেও কষ্ট হচ্ছে না। দৃশ্যটা আমার কাছে পুরো মুভির হাইলাইট হয়েই থাকবে।

তবে একটা জিনিস কিছুটা চোখে লাগার মতন – একদিনের মধ্যে সব ঘটনার দৃশ্যপ্রবাহ দেখাতে গিয়ে মুভিটা নিয়মিতই কোইন্সিডেন্সকে কাজে লাগিয়েছে। শুরুতে ব্যাপারটা আকর্ষণীয় থাকলেও শেষ দিকে এসে খানিকটা একঘেয়ে হয়ে যায়। এবং এই জিনিসটা চরিত্রগুলোর ক্রেডিবিলিটিও খানিকটা খাটো করে দেয় বৈকি।

আর্টওয়ার্ক এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ চমৎকার। চরিত্রগুলোর ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন বেশ কিছু জায়গাতেই অতিরঞ্জিত হলেও অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে তুলেছে চমৎকারভাবেই।

দিনশেষে টোকিও গডফাদার ঘরছাড়া একদল ছন্নছাড়া মানুষের গল্পকে ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে ঘরের গল্প, পরিবারের গল্প, ভালবাসা আর মানবতার গল্প।

Children Who Chase Lost Voices রিভিউ – মোঃ আসিফুল হক

Children Who Chase Lost Voices – মুলত জাপানিজ একটা উপকথার উপর ভিত্তি করে তৈরি মুভি, যেখানে গল্পের দুই প্রধান চরিত্র তাদের প্রিয়জনকে ফিরিয়ে আনতে রওনা হন মৃতদের দেশে।

অন্ধকারে অদ্ভুত আওয়াজ আর ক্রিস্টাল রেডিও থেকে ভেসে আসা অপার্থিব এক সুর – শুধু এইটুকুর উপর ভর করেই আসুনার যাত্রা শুরু হয় পৃথিবীর নিচে হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তীর জগতে। অদ্ভুত প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত আর রহস্য ঘেরা এক বালকের মাধ্যমে উদ্ধার পাওয়া আসুনা নিজেকে আবিস্কার করে শতাব্দী পুরোনো এক রহস্যের মাঝে; যেটা কিনা তাকে দাঁড় করিয়ে দেয় এমন এক সত্যের মুখোমুখি যেটার সাথে জড়িত আছে খোদ জীবন আর মৃত্যুর রহস্য।

আসুনা পাহাড়ী এক গ্রামের সাধাসিধে কিন্তু মেধাবী এক মেয়ে। বাবা নেই; মায়ের কর্মক্ষেত্রে বিশাল ব্যস্ততার কারণে মোটামুটি একাকীই দিন কাটে আসুনার। পড়াশুনায় ভীষণ মেধাবী আসুনা তাই সময় পেলেই মাঝে মাঝে ছুটে যায় পাহাড়ে, ক্রিস্টাল রেডিও আর একটা বিড়ালকে সঙ্গী করে একাকী সময় কাটায় দূরদেশের সুর শোনার অপেক্ষায়।

গল্পের অন্য মুল চরিত্র রিউজি – যিনি আসুনার স্কুলে বদলি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। স্ত্রীর মৃত্যুর ১০ বছর পরেও তার স্মৃতি আর শোক বয়ে চলা ভদ্রলোকের অন্যতম লক্ষ্যই হল মৃতদের জগত থেকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা। এই নিয়ে সব রকম গবেষণা এবং খোঁজাখুঁজিতেই সময় কাটে তার। রিয়ুজির চরিত্রের মাঝে সব সময়েই আমরা একটা অন্তদ্বন্দ্ব দেখতে পাই। সে তার লক্ষে অটল, কিন্তু সেটা পাগলামির পর্যায়ে না; কিন্তু আবার অবসেসডও। এর মাঝেও সে আসুনার দিকে খেয়াল রাখে, দেখাশুনা করে; তাকে রক্ষা করে।

মৃত ব্যাক্তিকে মৃতদের রাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনা কিংবা পুনর্জন্ম – চলে যাওয়া প্রিয়জনকে ফিরিয়ে আনার চিরন্তণ যে মানব আকাঙ্ক্ষা; তার কথা ঘুরে ফিরে এসেছে সব ধর্মেই, সব কালেই, সব পুরোকথাতেই। জাপানিজ, গ্রীক কিংবা রোমান – সব মিথোলজিতেই অনেক আকর্ষণীয় গল্প আছে এই বিষয়টা নিয়ে।

জাপানিজ শ্রুতিমতে, ইজানাগি আর ইজানামি জাপান এবং এর সব দেবতাদের সৃষ্টিকর্তা। এই জুটি প্রথমে আটটা ফুটফুটে বাচ্চার জন্ম দেন, যারা কিনা পরে জাপানের আটটা দ্বীপে পরিণত হন। ইজানাগি ইজানামি এর পর একে একে জন্ম দেন পাহাড়, উপত্যকা, জলপ্রপাত, ঝর্ণা, বাতাস, এবং অন্যান্য দেবতার। সমস্যাটা বাঁধে আগুনের দেবতা কাগুতসুচি(Kagutsuchi)র জন্মের সময়; ইজানামি খুব বাজেভাবে আগুনে পুড়ে যান। তারপরেও থেমে থাকেন নি ইজানামি; এই অবস্থাতেও আরও দেবতার জন্ম দিতে থাকেন এবং কিছুদিনের মাঝেই মারা যান।

মৃত্যুর পর ইজানামির জায়গা হয় ইয়োমি সু কুনি(Yomi-tsu Kuni)তে। তাকে ফিরিয়ে আনতে ইজানাগি রওনা হন ইয়োমির পথে। সেখানে ইজানামি অন্ধকারের মাঝে তাকে বরণ করে নেন। ইজানামি তাকে অনুরোধ করেন যতক্ষণ না ইয়োমির দেবতার কাছ থেকে অনুমতি আদায় করতে পারেন ততক্ষণ যেন তার দিকে না তাকান ইজানাগি। কিন্তু স্ত্রীকে দেখার পরম আকাঙ্ক্ষায় ইজানাগি আলো জ্বেলে ইজানামিকে দেখতে উদ্যত হন। কিন্তু ইজানামির পচা গলা মৃতদেহ দেখে আতঙ্কিত ইজানাগি পালিয়ে আসেন ইয়োমি থেকে।

ফিরে এসে ইজানাগি নিজেকে পবিত্র করার জন্য স্নানের ব্যাবস্থা করেন। এ সময় ইজানাগির কাপড় এবং শরীর থেকে আরও কিছু দেবতার সৃষ্টি হয় যাদের মধ্যে ছিল সূর্যদেবী আমাতেরাসু ( Amaterasu), চন্দ্রদেবতা সুকিয়মি(Tsuki-yomi) এবং ঝড়ের দেবতা সুসানো (Susano-ô) – যাদের মাঝে পরে ইজানাগি তার রাজত্ব ভাগ করে দেন।

মুভির ঘটনাপ্রবাহ যথেষ্ট সহজ সরল এবং কিছুটা একমুখী। এবং বেশ কিছু জায়গায়ই অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টাও করে নি। ক্লাভিস নিয়ে মুভিতে এতো ঘটনা ঘটল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্লাভিস কি জিনিস (“মাটির নিচের পৃথিবীর চাবি” – শুধু এইটুকুতে আসলে সব প্রশ্নের উত্তর হয় না) কিংবা আসুনা কি করে ক্লাভিসের অংশ হাত করে নিল – সেই প্রশ্নের কোন জবাব নেই গোটা মুভি জুড়ে। আসুনা আর রিয়ুজি একবার আগার্থায় (By the way, মাটির নিচের পৃথিবীর আরেক নাম আগার্থা) প্রবেশ করার পর উপরের পৃথিবীর কথা একেবারে বেমালুম ভুলে গেল সবাই। উপরে আসুনার মায়ের কি হল, রিয়ুজির সাথে থাকা সঙ্গী সাথীদের কি হল – মুভির শেষেও এইরকম কোন কিছুরই উত্তর পাওয়া যায় না। মুভির কিছু কিছু জায়গায় পানি সংক্রান্ত জটিলতাও ছিল; কিছু পানিতে শ্বাস নেওয়া যায়, কিছু জায়গায় সেভাবে যায় না; আগার্থার যে যে জায়গায় দরকার সেখানে সেখানে ভিটা আকুয়া(শ্বাস নেওয়া যায় এমন পানি)র ব্যাবস্থাটা খানিক্টা হলেও কাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দেয়।

মুভিটা প্রথম প্রায় ৩০ মিনিট ব্যয় করে চরিত্রগুলোকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে; এবং এই ৩০ মিনিটে আমরা আসলে কোন আভাসই পাই না সামনে কি হতে যাচ্ছে। এবং এই প্রথম পর্বে আমরা আসুনার জীবন যাপন দেখতে পাই, তার চারপাশের পরিবেশ দেখতে পাই – যেটার আসলে বাকি মুভিতে মোটেও খুব একটা গুরুত্ব নেই। এবং এই সময়ের মাঝে এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুও ঘটে না যেটা আসলে বাকি মুভিতে তেমন প্রভাব ফেলে। দু’তিনটে চরিত্রকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এতো লম্বা সময় নিয়ে নেওয়াটা খানিকটা হতাশাজনকই ছিল।

মুভিটা চরিত্রনির্ভরতার বদলে পুরোপুরিই গল্প নির্ভর ছিল। সমস্ত সময় জুড়েই আসুনা এবং রিয়ুজির অভিযানই ফোকাসে ছিল, চরিত্রগুলো নয়। সেই কারণে কোন চরিত্রই খুব বেশি স্বতন্ত্রতার সুযোগ পায় নি। মাঝে মাঝে ফ্ল্যাশব্যাক এবং পিছনের ঘটনার যে সব বর্ণনা এসেছে তাও গল্পের প্রয়োজনেই।

শিনকাই এর অন্যান্য মুভির মতন এই মুভিরও আর্টওয়ার্ক খুবই চমৎকার; যদিও “হারিয়ে যাওয়া জগত” কিংবা “মাটির নিচের রাজ্য” চেনাজানা পৃথিবীর মতনই ছিল অনেকটা। এনিমেশন খুব ফ্লুইড, সিজি থেকে শুরু করে সব কাজই খুব যত্ন নিয়ে করা ছিল; কোথাও কোন কিছু বেখাপ্পা লাগে নি। চরিত্র রুপায়ন অবশ্য খুব একটা আহামরি ছিল না; আসুনা, শিন, শুন বা রিয়ুজি – সবগুলো চরিত্রের ডিজাইনই কম বেশি একমুখী ছিল। তবে মিমি এবং গেটকিপারদের ডিজাইন ছিল খুব রিফ্রেশিং। আর সিমপ্লিসিটি থাকার কারণে প্রত্যেকটা চরিত্রকেই আলাদা করা গিয়েছে খুব সহজেই। কিছু কিছু দৃশ্য, বিশেষ করে আগার্থার চম্পকরথ কিংবা রাতের আকাশ অথবা সামনের খোলা প্রান্তরের নিখুঁত চিত্রায়ন – রীতিমত শ্বাসরুদ্ধকর। আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল পুরো মুভি জুড়েই উজ্জ্বল রঙের ছড়াছড়ি – পুরো গল্পটাকে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছে যেন !

সাউন্ডট্র্যাকও বেশ ভাল ছিল, বিশেষ করে থিম সং “Hello, Goodbye and Hello” দুর্দান্ত ছিল।

খুব আহামরি কোন কিছু হয়ত না; কিন্তু শিনকাইর নামই বোধহয় জানিয়ে দেয় একটা দুর্দান্ত সেটিং এ স্নিগ্ধ একটা গল্পের কথা। দুটো চমৎকার ঘন্টা কাটাতে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে? :)

Colorful – মুভি রিভিউ – মোঃ আসিফুল হক

 

Colorful 1

Are you alive?

মাঝে মাঝে কি এমন সময় এসেছে যখন কোন একদিন মনে হয়েছে চিরজীবন বেঁচে থাকতে পারলে বোধহয় খুব ভাল হত? অথচ ঠিক তার পরদিনই হটাৎ করে সব কিছু অর্থহীন মনে হয়েছে? বেঁচে থাকার ইচ্ছের জায়গাগুলো কি হটাৎ করেই দখল করে নিয়েছে একরাশ হতাশা, নিজের উপর; চারপাশের মানুষগুলোর উপর? নিজের ভুলগুলোর জন্য নিজের উপর প্রবল আক্রোশ এসে ভর করেছে?
আমার ধারনা আমাদের সবার জীবনেই কখনো না কখনো এমন সময় এসেছে। এবং আমরা সেই অবস্থা কাটিয়েও উঠি, আবার ফিরে যাই যান্ত্রিক জীবন যাপনে; কখনো কারো সাহায্য নিয়ে; কখনো কখনো হয়ত নিজের মনের জোরেই।

আমরা অনেক সময়েই আসলে বেচে থাকাটাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি না। কারণ আমরা আসলে পুরোপুরি বেঁচে থাকি না কখনই। আমরা তিন বেলা খাই, সারারাত ঘুমাই আর সারা দিন ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ুতে থাকি; ক্যারিয়ার; পড়াশুনা; দায়িত্ব; কর্তব্য – এখান থেকে সেখানে। একটু স্থির হয়ে বসে গোটা দুনিয়াটাকে, আকাশটাকে; চারপাশে মানুষগুলোকে চোখ মেলে দেখার একটুও ফুরসত মেলে না আমাদের। আমরা পুরোপুরি বেঁচে থাকি না; বেঁচে থাকার অভিনয় করি যাই আসলে।

খুব প্রিয়জন যখন বড় কোন ভুল করে ফেলে; এমন কিছু করে বসে যা জন্ম দেয় একগাদা অবিশ্বাসের; সেই ঘটনা ভুলে গিয়ে তাকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দিতে আসলে কত সময় লাগে? ১মাস? ৬ মাস? ১ বছর? পুরোপুরি কি ভুলে যাওয়া যায় আদৌ? যদি না যায় সেক্ষেত্রে করণীয় আসলে কি? আর সেই প্রিয়জনেরই বা কি করার থাকে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য?

Colorful 2

 

কালারফুল মুভিটা দেখতে শুনতে আট দশটা স্বাভাবিক পরিবারের মতন অথচ নানারকম মানসিক টানাপোড়েনে থাকা এক পরিবারের গল্প, যে পরিবারের সবচেয়ে ছোট, বিষাদগ্রস্থ, জুনিয়র হাই স্কুলে পড়া ছেলেটি একের পর এক খারাপ ঘটনার পিঠে জীবনের চরমতম সিদ্ধান্তটি নিয়ে নেয়। সৃষ্টিকর্তা অপর একটা অপরাধী আত্মাকে পাঠান সেই শরীরে; আত্মার শুদ্ধির জন্য। আমরা সেই আত্মার চোখে পরিবারটাকে দেখতে পাই; ছেলেটার চারপাশের পরিবেশটা দেখতে পাই; প্রতিদিনের সংগ্রামগুলো দেখতে পাই; একে একে সবার বদলে যাওয়াটা দেখতে পাই এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একসময় আসলে জীবনের সৌন্দর্যগুলোরও খোজ পেতে আরম্ভ করি। প্রত্যেকটা মানুষের পিছনে যে আসলে অনেকগুলো মানুষের সহযোগিতা জড়িয়ে আছে; নীরবে হোক অথবা সরবে – কেউ না কেউ যে তার উপর ভরসা করে আছে, তাকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছে – এই সহজ সত্যগুলো আমরা ভুলে যাই মাঝে মাঝেই। এই মুভিটা সেই সত্যগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখতে শিখায়; সব কিছুকে মেনে নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়; সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কি করে জীবনটাকে উপভোগ করতে হয় তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয় আমাদের।

জীবনের আসল উত্তরটা কি? তার সফলতা আর বিফলতাটাই বা কোথায়? একটা ভাল রেজাল্টে? ভাল চাকরিতে? একগাদা টাকা পয়সায়? নাকি পরিবারের সবাইকে নিয়ে; প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে একটু ভাল থাকায়? তাদেরকে সময় দেওয়ায়? চারপাশের দুনিয়াটাকে দেখায়, মানুষজনের সাথে মেশায়, জীবনটাকে নিজের মতন করে উপলব্ধি করায়, উপভোগ করায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো আসলে কখনোই মেলে না। কিংবা আমরা হয়ত মেলাতে চাই-ও না। চারপাশের মানুষগুলোকে দেখে; তাদের চিন্তাভাবনা আর তাদের উত্তরগুলোকেই নিজের উপর চাপিয়ে নেই, অবলীলায়। অথচ নিজেকে একবারও প্রশ্ন করে দেখি না – আমি কি আসলেই এটাই চেয়েছিলাম? আমরা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করি না যে অপরের সফলতা মানে কখনোই নিজের ব্যার্থতাও নয়; আর ৮-১০ জনের মতন হতে না পারাটা কোন বড় সমস্যাও নয়।

প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরেই আরেকটা মানুষ বাস করে। যে মানুষটাকে আমরা কাউকে দেখাতে চাই না; তাকে লুকিয়ে রাখতে চাই নিরন্তর। কিন্তু খুব দুর্বল মুহূর্তগুলোতে সে কি করে কি করে যেন ঠিকই বেড়িয়ে আসে। এবং সে কারণে নিজের উপর খুব অভিমান হয় পরে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই মানুষের রঙ আসলে একটা না; অনেকগুলো। সবার আলাদা আলাদা রঙ মিলেই পুরো পৃথিবীটা রঙিন। সবার জন্য একই ছাঁচ, একই ব্লুপ্রিন্ট খাটে না; খাটা উচিতও না। দিনশেষে শুধুমাত্র একগাদা রঙকে ধারণ করে, নিজের সবগুলো অপূর্ণতাকে মেনে নিয়ে নিজের মত করে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি –
Yes, I am alive.

…………

মুভিঃ কালারফুল।
সময়ঃ ২ ঘন্টা ৭ মিনিট।
ম্যাল স্কোরঃ ৮.১৩।

Colorful 3

 

Psycho-Pass Movie রিভিউ — মোঃ আসিফুল হক

কি দেখলামঃ Psycho pass movie

নিহঙ্গদেশ। চারিদিকে শুধু সুখ আর আনন্দ; দুঃখ কষ্টের কুনু বালাই-ই নাই। সিবিল সিস্টেম দেশের শান্তি রক্ষার কার্জ সমাধা করিয়া আপাতত ঘটক পাখি ভাইয়ের ভাত মারার কাজেও নিয়োজিত হইয়াছে। সুনেমরি আকানে এই দেশের একজন সৎ ঈমানদার পুলিশ অফিসার। দেশে অন্যায় অপরাধের ঘাটতি হেতু উনি বান্ধবীর সাথে বিয়ের মার্কেটিং করিয়া বেড়ান, নিজের বিশাল এপার্টমেন্টে একা একা খান, ঘুমান, টিভি টুভি দেখেন আর মাঝে মাঝে সঙ্গী রোবটের সাথে কুস্তি খেলিয়া শরীরটাকে চাঙ্গা রাখেন।
বিশাল আরামের লাইফ !

PP 1

কিন্তু নিহঙ্গদেশ আর সুনেমরি; কারো কপালেই এই সুখ শান্তি বেশিদিন সহিল না। হটাত করিয়া ট্রলার ভর্তি একঝাক রিফিউজি গেরিলা আসিয়া উপস্থিত হইল সীমান্তে। চোখে তাদের একরাশ স্বপ্ন; আর তার উপরেই কুটি টেকার দামী সানগ্লাস। সুনেমরি ম্যাডাম ছুটিয়া আসিলেন খবর পাইয়াই; একগাদা লোক মারিয়া মুরিয়া দুই একটারে ধরিয়া নিয়া আসিলেন; সানগ্লাস সমেতই। স্বপ্ন পর্যন্ত ঠিকই ছিল; কিন্তু গরীব দুখী অসহায় এইসব রিফিউজির কুটি টাকার সরঞ্জাম উনাকে বড়ই চিন্তায় ফালাইয়া দিল। উনি ভাবিতে লাগিলেন এবং শেষে ভাবিয়া ভাবিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন “কুছ তো গড়বড় হ্যায়।”

এরই মধ্যে আরেক অফিসার পাকনামো করিয়া মেমোরি থেরাপি দিয়া বসিলেন একটারে; উপরমহলের আদেশে। সুনেমরি এতে গোস্বা করিলে উপরমহল জানাইলেন; থেরাপিতে কোগামির দর্শন লাভ হইয়াছে। কোগামির চেহারা দেখিয়াই সুনেমরি সব ভুলিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন, উনি ব্যাপারখানা “তদন্ত” করিতে বিদ্রোহীদের আদি নিবাস SEAUn এ পাড়ি জমাইবেন। পারমিশন মিলিল। তিনি একখানা স্যুটকেস বগলদাবা করিয়া দামী জেট প্লেনে চড়িয়া বসিলেন।

সিওনের অবস্থা অনেকটা গুলশানের মতন। একপাশে বিশাল বিশাল অট্টালিকা; আর তার পাশেই বস্তি। বস্তি এলাকায় চলিতেছে তুমুল বিদ্রোহ। এইরকমই এক বস্তির সর্দার, জনদরদী, গরীবের বন্ধু, মজলুমের সহায় কোগামি; যার লড়াই অভিজাত সম্প্রদায়ের সাথে; যারা নিজেদের সুখ শান্তির জন্য সিবিল সিস্টেম ব্যাবহার করিয়া বাকিদের নির্বিকারে হত্যা করিতেসে। কোগামি মুলত বস্তির সাধারণ মানুষকে হাতে কলমে ড্রোন মোকাবেলার জন্য কুংফু কারাতে শিক্ষা দেন; যদিও পুরো মুভিতে গুলি আর গ্রেনেড ব্যাবহার করিয়াও ড্রোন ঠ্যাকানি যায় নাই। যাই হোক; কাহিনীতে ফেরত যাই।

কোগামির দলের সাথে সিওনের মিলিশিয়া বাহিনীর লড়াইয়ের মাঝেই কোগামিকে স্ক্রিনে দেখিয়া সুনেমরি নামিয়া গেলেন গাড়ি থেকে, “তদন্তের” জন্য। কোগামির সাথে দেখা হইল, কথাও হইল। কথাবার্তা অনেকটা এইরকম –
– কোগামি সান; আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না; ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।
– এহ; মজা নেও?
– মজা নিমু ক্যান, আপনি সন্ত্রাসী পাচার করেন না জাপানে?
– নাহ; আমি তো কিছু জানিই না। তাও এরেস্ট করবা?
– না; তাইলে করতাম না। লন; আপ্নের বাসা দেইখা আসি।
– চল; দুইটা ডাইল ভাতও খাইয়া আসবা নে।
– জোস; চলেন যাই।

PP 2

এর মধ্যে মিলিশিয়া একদল গুন্ডাপান্ডা ভাড়া করিল এই দুইজনকে মারিবার জন্য। বিপুল অঙ্কের টাকার প্রতিশ্রুতি পাইয়া তারা তাদের সকল অস্ত্র সস্ত্র ও সরঞ্জাম সহ রওনা হইয়া গেল। এবং একদিনের ভিতর আস্তানা খুজিয়া আক্রমণও করিয়া বসিল। সুনেমরি পালাইয়া গেলেন; কোগামি জীবিত অবস্থায় ধরা পড়িলেন। তারে নিয়া গিয়া গুন্ডাদল আচ্ছামত বাঁশডলা দিয়া বলিল, “আমাদের দলে আইসা পড়; অন্নেক মগা হবে।” কোগামি জানাইল “কাভি নেহি।” গুন্ডাদলের সর্দার কহিল; “যাও তুমারে খেলায় নিব না। নিকোলাস ভাইয়ের কাছে তুলিয়া দিব; তখন দেখবা; কি হয়।”

সুনেমরি পালাইয়া আসিয়া নিজের রুমে বসিয়া ফন্দি আটিতেসিলেন; কী করিয়া ইহাদিগকে মজা দেখানো যায়। এরই মধ্যে তিনারে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে অজ্ঞান করিয়া ফেলিল মিলিশিয়া বাহিনী। উনাকে আর কোগামিকে একখানা বিমানে তুলিয়া দিয়া সেইখানা উড়াইয়া দেওয়া হইবেক; যাতে করিয়া কেউ বুঝিতে না পারে যে উনারা এত্তগুলা খারাপ। যেই ভাবা; সেই কাজ। কিন্তু শেষ মুহুর্তে গিয়া শুভ কাজে বাঁধা পড়িল। একঝাক পুলিশ অফিসার বিমানে করিয়া আসিয়া গুলি করিয়া সব খারাপ মানুষ মারিয়া সাফ করিয়া ফেলিতে লাগিলেন। সুনেমরি গেলেন নেতার কাছে; গিয়া বুঝাইয়া বলিলেন; “এইগুলা খারাপ; এইগুলা করতে হয় না; লোকে পচা বলে।” নেতা বুঝিলেন; এবং “সাধারণ নির্বাচন” এর ঘোষণা দিয়া ক্ষমতা ছাড়িয়া দিলেন।

অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন।

নটে গাছটি মুড়ালো, আমার কথাটি ফুরালো।

PP 3

Tamako Love Story রিভিউ — মোঃ আসিফুল হক

Tamako 1

কি দেখলামঃ Tamako Love Story
স্টুডিওঃ Kyoto Animation

‘Everybody loves somebody.’

হয়ত কাউকে খুব করে ভালবাসেন, হয়ত খুব কাছের কোন বন্ধু; কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়ে কখনই বলা হয়ে ওঠে নি? হটাত করেই জীবনে এমন মোড় চলে এসেছে যখন সবকিছু নতুন করে ভাবার সময় সামনে; সব সমীকরণ মেলাতে হবেই, জোর করে হলেও? এমন সময় হুট করেই একদিন তাকে বলে বসলেন – ভালবাসি। অপ্রত্যাশিত কনফেশনে চমকে উঠল প্রিয় মানুষটা; হয়ত সে মানুষটা ভালবাসার জন্য প্রস্তুত ছিল না। যেরকম প্রতিক্রিয়া আকাঙ্ক্ষিত ছিল সেটা পাওয়া হল না। কি করবেন তখন? আগে যেমন ছিলেন তেমন অবস্থায় ফিরে যাবেন? সব কিছু ভুলে যেতে বলবেন তাকে? নাকি দু’জন দু’জনকে এড়িয়ে চলা আরম্ভ করবেন? নাকি পুরো ব্যাপারটাকে পাশে সরিয়ে রেখে তাকে সঙ্গ দিয়ে যাবেন; অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতে সব তুলে দিয়ে, একদিন না একদিন সে আপনাকে বুঝতে পারবে – এই আশায়?

তারপর, কোন একদিন; হটাত করেই হয়ত ইয়োকোর কিন্নরী কন্ঠ মুঠোফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা অপ্রত্যাশিত ফোনের কথা জানিয়ে দেবে আশ্চর্য নির্লিপ্ততায়। “কেমন আছেন?” আর “ব্যস্ত আপনি?”র পরই শুরু হয়ে যাবে পরিচিত সেই খুনসুটি, কপট অভিমান, আর প্রাণখোলা হাসি। অনেক কথাই বলা হবে; বাকি থেকে যাবে হয়ত তার চেয়েও বেশি কিছু কথা। বিদায়টাও হয়ত হবে বিষণ্ণ রকম দ্রুততায়। কিন্তু বিদায় বেলায় শোনা একটা বাক্য কিন্তু দু’তিনটে শব্দ হয়ত বদলে দেবে পুরো জগতটাকেই।

Tamako 2

তারপর একদিন হলুদ খামে নীল কাগজে ভালবাসা চিঠি পাঠাবে অভিমানকে, ফিরবে বলে। আকাশপথে উড়ে যেতে যেতে ভালবাসা গান গাইবে গুনগুন করে; তার চোখের তারায় নীল সমুদ্রটাকে আরও একটু বেশি নীল মনে হবে তখন। অভিমান তখন পথে পথে ঘুরে বেড়াবে; ভালবাসার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর আকুতিতে। একটা সময় সে ঘরে ফিরবে; ভালবাসা যেখানে অপেক্ষা করছিল; চুপচাপ।
অভিমান দরজায় এসে মাথা নিচু করে দাঁড়াবে; অস্ফুট স্বরে হয়ত বলে উঠবে “দুঃখিত।” “কেন?” – শুধাবে ভালবাসা। “আমি যে শুধু তোমার আর তুমি আমার, ব্যস” – কাঁপা গলায় বলবে অভিমান।

Tamako love story – সহজ সরল খুব সাধারণ ভালবাসার গল্প, সহজ স্বীকারোক্তির গল্প, প্রতিউত্তরের গল্প, দ্বিধাদন্দ আর দোলাচলের গল্প, অনুভুতির গল্প, আর দুটো মানুষের কাছে আসার গল্প। কিয়োএনি এনিমেশন আর ক্যারেক্টার ডিজাইনে কখনই হতাশ করে না; এখানেও তাই। দুর্দান্ত এনিমেশন আর চরিত্রগুলোর অভিব্যাক্তিতে ভালবাসার রুপ প্রকাশের সাথে যুক্ত হয়েছে স্নিগ্ধ সুন্দর সাউন্ডট্র্যাক। “Yet another romantic movie, it’s gonna be cheesy, just like many others out there” বলে শুরু করা মুভিটা ১৫ মিনিটের মধ্যে এমনভাবে বেঁধে ফেলল যে ৮৩টা মিনিট কেটে যাওয়ার কথা টেরই পাই নি।

Tamako 3

Bitter memories are proof that you did something. Taste the regret, bitter as it may be, and indulge in it.
অনেক দিন মনে রাখব মুভিটা; অনেক অনেক দিন।

(নোটঃ এই মুভিটা Tamako market সিরিজের সিক্যুয়াল। জ্ঞানীগুণীজন বলে থাকেন মুভির আগে সিরিজ দেখা থাকলে মুভিটার আনন্দ আরও বেশি করে পাওয়া যাবে; এবং সিরিজটাও নাকি মন্দ না। আমি অবশ্য সিরিজ না দেখেই দেখেছি।)

Tamako 4