রিভিউ কন্টেস্ট এন্ট্রি [২০১৫] #৩২: Cross Game — Nehal Hasnaeen

“এনিমখোর রিভিউ কন্টেস্ট [২০১৫] – বিশেষ পুরস্কার অধিকারী এন্ট্রি”

————————————————————————————————————-

রিভিউ – ক্রস গেইম (আনিমে)

আনিমের ক্ষেত্রে যে কয়টা জনরার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে স্কুল আর স্পোর্টস একদম প্রথম সারির দিকে থাকবে। সমস্ত স্পোর্টস আনিমের কাহিনী-ই কম বেশি গৎবাঁধা, স্কুলে নতুন এইসের আগমন, তার হাত ধরে ক্লাবের পুনর্জীবন, প্রথম টুনার্মেন্টে হেরে পরেরটায় বিক্রমের সাথে জয়লাভ – এসব প্রায় সব এনিমখোরেরই দেখা হয়ে গেছে। তারপরেও স্পোর্টস আনিমের উত্তেজনায় আমরা বুঁদ হয়ে থাকি, এর সাসপেন্স একেবারেই দুর্বল হৃদয়ের দর্শকদের জন্যে নয়। প্রতিটা পর্বের জন্য এক সপ্তাহ বসে থাকাটাও অনেক কষ্টের। কিন্তু আমার এই রিভিউ টা এমন একটা আনিমে নিয়ে, যেটা কিনা একই সাথে উত্তেজনাপূর্ণ এবং শান্ত। সাধারণ স্পোর্টস-স্কুল আনিমের আভাস থাকলেও এটা যেন তার চেয়েও বেশি কিছু। বলছিলাম “ক্রস গেইম” এর কথা।

৫০ পর্বের এই আনিমের প্রধান চরিত্র কোউ কিতামুরা, যার পরিবারের খেলাধুলার সামগ্রির ব্যাবসা আছে। একই এলাকায় সুকিশিমা পরিবারের বাস, যাদের একটা ব্যাটিং সেন্টার ও কফি শপ আছে। তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে দুই পরিবারের মাঝে একটি গভীর বন্ধন সৃষ্টি হয়, দুই পরিবারের সন্তানরা আপনজনের মতই ছোটবেলা থেকে মেলামেশা করে। সুকিশিমা ওয়াকাবা আর কোউ সমবয়সী হওয়ায় তারা সবসময় একসাথে থাকত, যা সুকিশিমা আওবার একদম পছন্দ ছিলনা। সে তার বোনের সাথে সময় কাটাতে পারত না বলে কোউ কে হিংসা করত। আওবা মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও ভাল পিচিং পারত, তার পিচিং ফর্মও ছোটবেলা থেকেই নিখুঁত ছিল। এদিকে কোউ ছিল সুকিশিমা ব্যাটিং সেন্টারের হোমরান রেকর্ডধারী। আওবার কাছে একবার হারার পর ওয়াকাবা কোউ কে আওবার চেয়ে ভালোভাবে পিচ করার জন্য উৎসাহ যোগায়, তাকে আওবার মতই নিয়মিত ট্রেনিং এর পরামর্শ দেয়। তারপর থেকে কোউ ৩ বছর ধরে প্রত্যেক দিন সেই একই ট্রেনিং করে। ক্রস গেইম তারই একজন বেসবল খেলোয়াড় হয়ে উঠার কাহিনী।

স্টোরি – ৯/১০

ক্রস গেইম তার জনরার অন্য আনিমে থেকে এইদিক থেকে আলাদা, যে এইখানে প্রধান চরিত্রকে কেবল একজন এইস খেলোয়াড় হিসেবে দেখানো হয়না, মাঠের বাইরের রক্ত মাংসের মানুষটাকেও তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তাকেই না, অন্যান্য চরিত্রদেরও যথেষ্ঠ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এখানে। তারা কি করে, কি চায়, কেন, তাদের আত্মোপলব্ধি, সবকিছুই বিশ্বাসযোগ্যভাবে উঠে এসেছে। আনিমেটা বেসবল কেন্দ্রিক হলেও এতে স্লাইস অফ লাইফ-ট্র্যাজেডি ইত্যাদি উপাদানের ভাল সংমিশ্রন ঘটেছে। বলা যায়, কাহিনী কখনো সুথিং, আবার কখনো উত্তেজনাময়। মাঝে বেশ কিছু সময় খেলার উপর প্রাধান্য না দিয়ে চরিত্রদের প্রাত্যহিক জীবন তুলে ধরেছে আনিমেটি। মাঝের কিছু জায়গার ফ্ল্যাশব্যাকগুলো বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সবাই কিসের জন্য এত হন্যে হয়ে সামনের দিকে ছুটছে, জীবনে সামনের দিকে তাকানোর রসদ তারা কিভাবে পায়। আনিমের কাহিনীর বিকাশে ট্র্যাজেডি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেটা স্পোর্টস আনিমেতে তেমন একটা দেখা যায়না। এত কিছু আনিমেটি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে খুবই সহজ ও সাবলীলভাবে, কখনোই এতে জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় নাই, দর্শককে বিনোদন দিতে আনিমেটির কোন সময়ই অতিমাত্রায় চেষ্টা করতে হয়নি। বেসবল অংশগুলা ভাল হলেও তা ক্যারেকটারদের কছে প্রাধান্য কিছুটা হলেও হারায়, তবে যতটা দরকার ঠিক ততটুকুই আছে। কমেডিও নজরকাড়া, জোক্সগুলোর টাইমিং একদম ঠিকঠাক। কাহিনী কোন জায়গাতেই মুখ থুবড়ে পড়েনি, এর পেসিংও ৫০ পর্বের একটি আনিমের জন্য উপযুক্ত ছিল। এন্ডিং ও আমার মতে বেশ হয়েছে।

আর্ট – ৮/১০

আনিমেটি প্রোডিউস করেছে সিনার্জি এসপি, যারা আরেক বিখ্যাত বেসবল আনিমে মেজর সিরিজেরও প্রোডিউসার। ক্যারেকটার ডিজাইন কিছুটা ক্লাসিক ধাঁচের, আমার দেখে ‘৯০ দশকের আনিমেগুলার কথা মনে পড়েছে। বেশ সুথিং হলেও একটা সমস্যা, আওবা আর কোউ এর মাঝে পার্থক্য করতে প্রায়ই কষ্ট হয়েছে। ২০০৯ এর এই আনিমের এনিমেশানও যথেষ্ঠ ভাল, তবে তা গতানুগতিকের খুব একটা ব্যতিক্রম না। তবে তা তেমন কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনা, বরং ক্যারেকটার ডিজাইন এর কাহিনী ও সেটাপের জন্য যথোপযুক্ত ও মানানসই।

চরিত্র –১০/১০

স্পোর্টস জনরার মধ্যে অন্যতম সেরা ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট দেখিয়েছে এটি। যেখানে একই ধরণের অন্যান্য আনিমেগুলা খেলার দিকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়, খেলার টগবগে উত্তেজনাপূর্ণ সিনগুলোকে দেখাতে গিয়ে স্বয়ং খেলোয়াড়দের কথা বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু এই আনিমের শক্তি হল এর চরিত্রগুলো, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচগুলো নয়। এখানে প্রত্যেক চরিত্রকে যথেষ্ঠ সময় দেওয়া হয়েছে, যাতে করে এরা প্রথাগত ক্লিশের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে নিজের স্বকীয়তা প্রকাশ করতে পারে। সিরিয়াস ক্যাপ্টেন আকাইশি, গুরুগম্ভীর জিনিয়াস আজুমা ইয়ুহেই, বেস্ট ফ্রেন্ড নাকানিশি, চঞ্চল সেনডা, সুকিশিমা পরিবারের বড় মেয়ে ইচিয়ো, ছোট্ট মোমিজি, বেসবল প্রেমী কোচ মায়েনো, এরা সবাই যেনো নিজ নিজ চরিত্রের খোলস থেকে বেরিয়ে আরো ভালোভাবে নিজেদের বিকশিত করেছে। শুরুর প্রোলোগ এবং মাঝে বেশ কিছু ফ্ল্যাশব্যাক দর্শকদের চরিত্রগুলো সম্পর্কে আরো ভাল ধারণা দিতে সাহায্য করে। আরেকটা মজার বিষয় হল অন্যান্য আনিমের মত এখানে চরিত্রগুলো ম্যাচের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্তগুলোয় কি ভাবছে, তা বলে দিতে হয়না, এত শক্তিশালী ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের পর দর্শকদের আসলে তা বলার কোন প্রয়োজনই হয়না! চরিত্রদের প্রতি অদ্ভুত এক ভাললাগায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে দর্শক।

সাউন্ড – ৯/১০

আনিমেটির ওপেনিং আর এন্ডিং থিমগুলো বেশ সুথিং, ঠিক যেন এর কাহিনীর মত। একমাত্র ওপেনিং “সামার রেইন” ৫০ পর্ব জুড়েই আনিমের মুড এবং সেটাপ অনুযায়ী যথেষ্ঠ উপযোগী ছিল। আমার সবচেয়ে প্রিয় প্রথম এন্ডিং কোই কাগারেতে মিতা ইয়ুমে। আর সাউন্ডট্র্যাকও বেশ শান্ত ছিল, আবার কমেডি সিন গুলোর জন্য একটু চঞ্চল, ম্যাচের সময় একটু ড্রামাটিক, অর্থাৎ সব পরিস্থিতির জন্য মানানসই। সেইয়ুদের কাজ বেশ ভাল ছিল, কেউ সেইভাবে নজর না কাড়লেও প্রধান দুই চরিত্রে থাকা ইরিনো মিয়ু(কোউ) এবং তোমাতসু হারুকার(আওবা) জুটি চমৎকার ছিল। ওএসটি এর সবটুকু ভালভাবে ব্যাবহার করা হয়নি কারণ বেশ কিছু চমৎকার ট্র্যাক শেষের দিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিনগুলোর জন্যই বরাদ্দ ছিল।

এঞ্জয়মেন্ট – ১০/১০

অতিরিক্ত ভাল ক্যরেকটার ডেভেলপমেণ্ট, উত্তেজনাপূর্ণ ও পরিপূর্ণ কাহিনী, সুথিং আর্ট ও সাউন্ডট্র্যাক – উপভোগের সব রসদই মজুদ আছে এই আনিমেটায়। আমার মতে এটা মাস্ট ওয়াচ।

সুতরাং আমার মোট রেটিং ৯.২/১০, এবং এটি অবশ্যই একটি দেখার মত আনিমে। এখানকার উপজীব্য কোন জাঁকজমকপুর্ণ, বাস্তবতা বিবর্জিত, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ খেলার স্কিল নয়, এমনকি আজকালকার স্লাইস অফ লাইফ আনিমেগুলাতে যা অনেক বেশি চোখে পড়ে, সেইসব অকারণ হাস্যকর ভুল বুঝাবুঝি কিংবা কোন রোমান্টিক টেনসন ও নয়, বরং জীবনের সকল বাঁধা-বিপত্তি, হাসি-কান্নার মাঝে লক্ষ্য অটুট রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই এর মূল আকর্ষণ। আসলে আনিমেটির স্বরূপ বোঝানোর জন্য এত কথা না বললেও চলে, কোচ মায়েনোর একটা উক্তিই যথেষ্ঠ – “সিম্পল ইজ বেস্ট।”

32 Cross Game

এনিমে রেকমেন্ডেশান: বাকুম্যান (Bakuman) — S M Nehal Hasnaeen

এনিমে রেকমেন্ডেশান – বাকুম্যান (Bakuman)
আগেই বলে রাখি এটা বাংলায় লেখা আমার প্রথম রিভিউ। কেমন হবে জানি না তাও হঠাৎ মনে হল তাই লিখতে বসলাম, সকল ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 🙂
বাকুম্যানের কাহিনীর শুরু ১৪-বছর বয়সী মাশিরো মোরিতাকাকে দিয়ে। মোটামুটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের (middle school এর যথাসম্ভব পরিমার্জিত বাংলা :P) গোটা সময়ই ক্লাসমেট আজুকি মিহোর প্রেমে পড়ে থাকে। এদিকে তার চাচা মাশিরো নবুহিরো একজন মোটামুটি পরিচিত মাংগাকা ছিলেন, যার একটা সুপারহিরো গ্যাগ মাংগা এনিমে এডাপটেশান পায়। তিনিও মিডিল স্কুলে একজনকে ভালবাসতেন, যার সাথে তার কেবল চিঠিতে কথা হত, এবং নবুহিরো সাফল্য পাবার আগেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বিয়ে হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে তার মাংগা শৌনেন জ্যাক থেকে ক্যানসেলড হয় এবং পরবর্তী সিরিয়ালাইজেশান এর জন্য হাঁড়ভাঙা পরিশ্রমের কারণে তিনি অকালে মৃত্যুবরণ করেন। ছোট্ট মোরিতাকার জন্য তার চাচাই ছিল সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা, চাচার মৃত্যুতে তার নিজের মাংগাকা হবার স্বপ্নও বাধাপ্রাপ্ত হয়। দুই বছর এভাবে যাবার পর তার স্বপ্ন তাকে আবার দেখতে শেখায় তার ক্লাসের মডেল স্টুডেন্ট তাকাগি আকিতো। প্রথমবার মাশিরোকে প্রস্তাব দিলেও সে তা ফিরিয়ে দেয়। এরপর আজুকির প্রতি মাশিরোর অনুভূতিকে পুঁজি করে এবার সে সরাসরি আজুকির বাসায় চলে যায়, মাশিরো মরিয়া হয়ে ছুটে যায় সেখানে। তাকাগির কাছে মাশিরো জানতে পারে আজুকির স্বপ্ন একজন সেইয়ু (voice actress) হওয়া। এরপর তার চাচার কথা স্মরণ করে মাশিরো বলে বসে, তার আর তাকাগির মাংগা এনিমে এডাপটেশান পেলে আজুকিকে মেইন ফিমেল ক্যারেক্টার এর ভয়েস করতে দেওয়া হবে, আর তাদের দুইজনের এই স্বপ্ন যখন পূর্ণ হবে, তখন তারা বিয়ে করবে। সবাইকে অবাক করে আজুকি রাজি হয়, শুরু হয় তাদের স্বপ্ন ছোঁয়ার এক অনবদ্য রূপকথা।
এবার টেকনিকাল বিষয়গুলাতে আসি, স্টোরিলাইন আমার মতে খুঁতবিহীন, একজন মাংগাকার সব ধরণের স্ট্রাগল আর ট্রায়াম্ফের কথা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। রাইভ্যাল, বিবাদ, ভুল বোঝাবুঝি, ইত্যাদি অনেক ক্লিশে এখানে থাকলেও তা কেন জানি ঠিক ক্লিশে মনে হয়না। আশিরোগির (তাকাগি আর মাশিরোর পেন নেম) হাসিকান্নার সাথে আপনার হাসিকান্না একাকার হয়ে মিশে যেতে বাধ্য। এনিমে যত সামনের দিকে যেতে থাকবে স্টোরিলাইন ততই চুম্বকের মত আপনাকে টানবে।
এনিমেশন আর মিউজিক যথেষ্ট ভাল মনে হয়েছে। এনিমেশন এর একটা দুর্বলতা হল মোটামুটি ১০ বছরে কোন চরিত্রের চেহারা বা দেহগঠন এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, যদিও মাংগায় তা ভালভাবেই আছে। এটা ছাড়া তেমন অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়েনি। আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পরিবেশের সাথে একদম মানিয়ে গিয়েছে।
আমি যখন ভাল কোন এনিমে দেখি তখন খালি মনে হয় একে আমার টপ টেনে রাখব কিনা। বাকুম্যান দেখার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, সাথে সাথে মনে হয়েছে এটা যেভাবেই হোক আমি আমার প্রথম দশটা এনিমের মধ্যে রাখব। ক্ষনিকের জন্য হলেও আশিরোগির স্বপ্ন আমার স্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল। এই এনিমে থেকে শিখার অনেক কিছুই আছে, তবে এর প্রধান উপজীব্য হল, যত বাধাই আসুক না কেন , লেগে থাকলে তোমার স্বপ্ন সত্যি হবেই, তা তিন বছর পরেই হোক আর দশ বছর পরেই হোক, শুধু নিজের কাজকে ভালবেসে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে যেতে হবে।