নিপ্পনের সৃষ্টি আর সমকালীন আরো কিছু মিথঃ
নারুতো শিপ্পুডেন যারা দেখেছি প্রায় শেষ পর্যন্ত তারা মাঙ্গেকিউ শারিঙ্গনের শক্তিশালী জুতসু ইজানামি-ইজানাগি-সুসা’নো-সুকিওনোমি সম্পর্কে মোটামুটি জানি। কিশিমোতো সেন্সে এই নামগুলো নিয়েছেন সরাসরি জাপানিজ মিথলজি থেকে…
কোজিকিঃ
জাপানিজ মিথলজির সবচেয়ে পুরাতন দলিল হলো ‘কোজিকি’, বিভিন্ন মিথ কবিতা আর গানের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে এতে, ৫০০-৭০০ সালের দিকে এর সংকলনকাল। (অনেকটা বাংলা সাহিত্যের চর্যাপদের মতই, ৮ম-৯ম শতকের কবিতাসমগ্র, সর্বমোট সাড়ে ৪৬ টি কবিতা, মূল বিষয়ঃ মিথলজি)
তো এই ‘কোজিকি’ র প্রথম অংশ কামিও নো মাকি (দ্যা এইজ অব গডস) অনুযায়ী একদম শুরুতে ছিল ছিল ৫ জন ডেইটি, যারা সম্ভবত হিভেন আর ইউনিভার্স ক্রিয়েশনের সাথে জড়িত কিন্তু পরবর্তীতে এদের কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না, এরা কোতোআমাতসুকামি (Distinguished heavenly gods) নামে পরিচিত। এদের পরপরি আসে সাত জেনারেশন কামি, যাদের সর্বশেষ জেনারেশন হলো দেবতাযুগল ইজানামি (গডেস অব ক্রিয়েশন) আর ইজানাগি (গড অব ক্রিয়েশন)।
ইজানাগি-ইজানামিঃ
কিশিমোতো সেন্সের প্রচন্ড শক্তিশালী এই অকুলার জুতসু যুগল জাপানিজ মিথে হলো জাপানের প্রধান আটটি দ্বীপের স্রষ্টা দেব-দেবী যুগল, প্রথমে ইজানাগি তার বিখ্যাত নাগিনাতা (একধরণের বর্শাসদৃশ ব্লেইড) সাগরের থেকে তুলে আনেন দ্বীপগুলো আর পরবর্তীতে এদের মিলন থেকে জন্ম নেয় আওয়াজি, আইইয়ো(শিকোকু), উকি, শুকুসি (কিউশু), ইকি, শুশিমা, সাদো আর ইয়ামাতো (হোনশু) দ্বীপগুলো। এদের থেকেই জন্ম নেয় বিভিন্ন দেব-দেবী, জাপানের এনসেস্টর- এম্পেরররা যাদের বংশধর, এ দৃষ্টিকোণ থেকে এদেরকে কতকটা আদম-হাওয়ার মতই ধরা যায়।
(Note: Izanami and Izanagi is also mentioned in the anime ‘Darker than Black’ and kind of goes with the myth too.)

আমাতেরাসু-সুকিওনোমি-সুসানোঃ
মাঙ্গেকিউ শারিঙ্গনের পাওয়ারফুল জুতসু আমাতেরাসু প্রথম দেখানো হয় নারুতোতে ইতাচি আর জিরাইয়ার এনকাউন্টারে। আর সুসানো সর্বপ্রথম দেখানো হয় ওরোচিমারোর কার্সড সিলপ্রাপ্ত সাস্কের সাথে ইতাচির লড়াইয়ের সময়ে। জাপানিজ মিথ অনুসারে ইজানাগির বাম চোখ থেকে জন্মগ্রহণ করে সূর্য দেবতা আমাতেরাসু (দেখতে পারেন গ্রিক দেবতা এপোলা, মিল আছে) আর ডান চোখ থেকে জন্ম নেয় চন্দ্রদেবতা সুকিওনোমি (গ্রিক দেবী আরতেমিস)। আর সুসানো (পোসাইডনের মত কিছুটা) হল ধ্বংস, ঝড় আর সাগরের দেবতা, সে জন্ম নেয় ইজানাগির নাক থেকে।
ইতাচি আর সাস্কের ফাইটে সাস্কের কার্স সিল থেকে জন্ম নিয়েছিল আট মাথাওয়ালা এক বিরাট সরীসৃপ, মনে আছে তো? এটা হলো সার্পেন্ট ডিমন অরোচি (মূলতঃ একটা ড্রাগন), আর মিথে সুসানো তার তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেলেছিল এই ডিমনের মাথা, ঠিক যেমন ইতাচির সুসানো কাটে এনিমেতে। অরোচির লেজ থেকে সুসানো খুঁজে পায় বিখ্যাত তরবারি ‘কুসানাগি’

জন্ম-মৃত্যুঃ
গডেস ইজানামি ফায়ার গড কুরোতসুচিকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়, আর ইজানাগি তাকে ফিরিয়ে আনতে যায় ইয়োমি বা আন্ডারওয়ার্ল্ডে। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইজানাগি দেখে ইজানামি অলরেডি ইয়োমির অশুভ প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সে পালিয়ে চলে আসে। ইজানামি তার পিছু ধাওয়া করে তাকে কার্স দেয় যে, প্রতিদিন সে জাপানের ১০০০ বাসিন্দার মৃত্যু ঘটাবে, ইজানাগি পালটা জবাব দেয় যে সে ১৫০০ জনের জন্মের কারণ সৃষ্টি করবে। এভাবেই এই ইজানাগি-ইজানামি হলো জন্ম-মৃত্যু, শুভ-অশুভেরও দেব-দেবী যুগল।

