Studio Monogatari: Episode 05

আজকের স্টুডিও নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে একটি ছোট্ট গল্প থাকলো:

জাপানে একটি বেশ জনপ্রিয় সাইন্স ফিকশন কনভেনশন আছে, নাম Nihon SF Taikai (Japan SF Convention), যেটি বিভিন্ন বছর বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। যেই শহরে অনুষ্ঠিত হয় সেই শহরের নাম অনুযায়ী এই কনভেনশনের ডাকনাম দেওয়া হয়। যেমন, টোকিও শহরে হলে সেবারেরটির নাম হয় TOKON, ওসাকা শহরে হলে নাম হয় DAICON, নাগোয়াতে হলে MEICON ইত্যাদি। কনভেনশনগুলি তাদের এই ডাকনামেই বেশি পরিচিত।

১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত হয় DAICON 3 [অর্থাৎ দাইকনের ৩য় আসর], এবং সেইবার কনভেনশনটির ওপেনিং গান তৈরির দায়িত্ব নেয় একদল শৌখিন অ্যানিমেটর, যারা Daicon Films নামের একটি অপেশাদার অ্যানিমেশন দল তৈরি করেছিল। তারা একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করে অনুষ্ঠানটির জন্যে, যেখানে দেখানো হয় স্পেসশিপ থেকে কয়েকজন লোক এসে ছোট একটি মেয়েকে এক বোতল পানি দেয় এবং সেটি একটি মূলা গাছে ঢেলে দিতে হবে যেন। মেয়েটি সেই পানির বোতল নিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু পথে বিভিন্ন শত্রু তাকে আক্রমণ করে। রোবট, স্পেসশিপ ইত্যাদি বিভিন্ন সাই-ফাই উপকরণ নিয়ে আসে এই ভিডিওতে, এবং মেয়েটি সবার মারামারি করে অবশেষে সেই মূলা গাছটির কাছে যেতে পারে। গাছটিতে সেই পানি ঢালবার সাথে সাথে সেটি একটি বিশাল স্পেসশিপে পরিণত হয়, এবং মেয়েটি ক্যাপ্টেন হয়ে যায় সেটির। অবশেষে স্পেসশিপটি নিয়ে মেয়েটি মহাকাশে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। ভিডিওটি দিয়েই উদ্বোধনি হয় কনভেনশনের। এখানে বলে রাখা ভাল, মূলা জিনিসটি দেখানোর কারণ pun হিসাবে ব্যবহার করেছে [Daicon ~ Daikon = Radish]!

অপেশাদার কয়েকজন অ্যানিমেটরের তৈরি এই ভিডিওটি দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়, প্রশংসায় ভাসানো হয় তাদের। তাদের উন্নতমানের অ্যানিমেশন কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে Studio Nue তাদের দুইজনকে একটি কাজের জন্যে প্রস্তাব দেয়, তাদের পরবর্তী আনিমে Macross-এ কাজ করার প্রস্তাব!

সময়ের সাথে সাথে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে, DAICON 4 এর জন্যেও তারা এরকম আরেকটি ভিডিও বানায়, যা আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে মূলত এবার তাদের কাজের কোয়ালিটির উন্নতি ঘটায়। ৬ জনের সেই শৌখিন অ্যানিমেটরের তৈরি Daicon Films নতুন নাম নিয়ে আসে অ্যানিমেশন স্টুডিওর জগতে, আর প্রতিষ্ঠা করে Gainax স্টুডিও।

Gainax

1. Gainax logo

আশির দশকের শুরুর দিকে তরুণ অ্যানিমেটর Hideaki Anno, Yoshiyuki Sadamoto, Hiroyuki Yamaga, Takami Akai, Toshio Okada, Yasuhiro Takeda এবং Shinji Higuchi গড়ে তুলেন Daicon Films নামের একটি প্রতিষ্ঠান, এটিই ছিল গাইনাক্সের প্রথম রূপ। DAICON 3 এর খ্যাতির পর Studio Nue তাদের পরবর্তী আনিমে Macross-এ কাজ করার প্রস্তাব দেয় হিদেয়াকি আন্নো আর হিরোয়ুকি ইয়ামাগাকে। এই আনিমেতে কাজ করার মাধ্যমে প্রফেশনাল আনিমের জগতে পা ফেলার সুযোগ পায় তারা। আর এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা ১৯৮৩ সালের DAICON 4-এর ওপেনিং ভিডিও তৈরি করে সবাইকে আরও বেশি অবাক করে দেয়। এই ভিডিও তৈরির জন্যে তারা একটি আনিমে স্টুডিও ভাড়া করে যেন প্রফেশনাল কাজ উপহার দিতে পারে। এবারের মিউজিক ভিডিওতে আগের ভিডিওর সেই মেয়েটিকেই দেখায়, কিন্তু এবার সে বয়সে বড় থাকে। একটি playboy bunny suit পরে বিভিন্ন শত্রুদের সাথে মারামারি করতে দেখা যায় তাকে, যেসব শত্রুর মধ্যে Darth Vader, Power Rangers-দের দেখা যায়, এমনকি ভিডিওটিতে আরও দেখা যায় গান্দাম, ম্যাক্রস ভ্যালকাইরি, Alien, সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যানসহ অনেক জনপ্রিয় ওয়েস্টার্ন চরিত্র থাকে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে Electric Light Orchestra-এর জনপ্রিয় মিউজিক “Twilight” [যেটি সম্ভবত অফিসিয়াল উপায়ে অনুমতি নিয়ে করা হয় নি]।

2. Daicon

দাইকনের সাফল্যের পর এই কজন অ্যানিমেটর ঠিক করে এবার তারা বড় কোন কাজের দিকে হাত বাড়াবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, যোগাযোগ করে Bandai Entertainment-এর সাথে। Bandai তাদের কাজে মুগ্ধ হয়ে একটি মুভি তৈরির প্রস্তাব দেয়, Royal Space Force-এর মুভির কাজের প্রস্তাব ছিল এটি। এই কাজের জন্যে ৮০০ মিলিয়েন ইয়েনের প্রস্তাব দেয় তারা। দাইকন ফিল্মস এতে রাজী হয়ে যায়, এবং প্রফেশনাল কাজ শুরুর জন্যে ১৯৮৪-১৯৮৫ সালের দিকে নাম পরিবর্তন করে Gainax নাম নিয়ে হাজির হয়।

3. creators

 

নামকরণ

Gainax নামটি ঠিক করার জন্যে তারা বেছে জাপানিজ শব্দ Gaina, যার অর্থ বড়, বিশাল, বা দৈত্যাকৃতির, আর তার সাথে শেষে একটি X লাগিয়ে দেয়, যেন নামের মধ্যে একটা ভাব আসে, দেখতে ভাবচক্করওয়ালা লাগে। ব্যস, অফিসিয়ালি Gainax নামের স্টুডিও তৈরি করে ফেলল সেই অ্যানিমেটররা। যদিও তখন তারা ধরে নিয়েছিল পার্মানেন্ট নয় বরং অল্প কিছুদিনের জন্যে এই নাম থাকবে তাদের, কিন্তু কন্ট্র্যাক্ট সংক্রান্ত কারণে এই নাম আর পরিবর্তন করার সুযোগ পায় নি তারা।

গাইনাক্স নামে আত্মপ্রকাশের পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের কিছু অংশ উল্লেখ করা হল এখানে-

  • ১৯৮৯ সাল: বান্দাই এন্টারটেইনমেন্টের প্রস্তাবনা নেবার পর ১৯৮৭ সালে গাইনাক্স তাদের প্রথম কাজ Royal Space Force: The Wings of Honneamise মুভিটি নিয়ে আসে। মুভিটি ছিল তখনকার সময়ের সাধারণ আনিমের আইডিয়া থেকে একদমই আলাদা। গল্পের ধরণ, আর্টস্টাইল, অনেক দিক থেকেই মুভিটি অন্যরকম ছিল, আর জনপ্রিয়তাও পায় প্রচুর। এমনকি পশ্চিমাবিশ্বেও এটি প্রকাশিত হয় পরে।
  • ১৯৮৮ সাল: এই সাফল্যের পর বান্দাই আরেকটি প্রস্তাবনা নিয়ে আসে – এমন একটি সিরিজ তৈরি করতে হবে যার সাফল্য পেতে তো হবেই, একই সাথে অন্তত ১০ হাজার কপি বিক্রয় করতেও সক্ষম হবে। তাদের এই প্রস্তাবে সাড়া দেয় গাইনাক্স, এবং বান্দাইয়ের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেয়। ১৯৮৮ সালে নিয়ে আসে OVA সিরিজ Gunbuster, যেটি গাইনাক্সের অন্যতম বড় একটি মাইলফলক সিরিজ। প্রথমে কথা ছিল শিনজি হিগুচি সিরিজটি পরিচালনা করবেন, কিন্তু অন্যান্য কিছু প্রোজেক্ট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে উঠে না। ফলে পরিচালনার দায়িত্ব যায় হিদেয়াকি আন্নোর ঘাড়ে, আর এভাবেই ডিরেক্টর হিসাবে হিদেয়াকি আন্নোর অভিষেক হয়।
  • ১৯৮৯ সাল: ডেইলি সিরিজ Sakyo Komatsu’s Animation Theater নিয়ে আসে গাইনাক্স, তবে সিরিজটি তেমন সাড়া ফেলতে পারে নি।
  • ১৯৯০ সাল: বছরটি গাইনাক্সের জন্যে অনেক বিশেষ ছিল। এই বছরে তারা একটি নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে আসে, নাম Nadia: Secret of Blue Water. সিরিজটি কে পরিচালনা করবে সেটি নিয়ে অনেক জটিলতা থাকলেও শেষপর্যন্ত হিদেয়াকি আন্নোকেই পরিচালক হিসাবে ঠিক করা হয়, আর গাইনাক্স নিজেরাই সিরিজটির প্রডিউসার হয়। প্রোজেক্টটি অনেক ব্যয়বহুল ছিল, আর এটি তৈরি করতে গিয়ে গাইনাক্সকে অনেক দেনার মধ্যে পরতে হয়েছিল। তবে সিরিজটির জনপ্রিয়তা মূলধারার আনিমে দর্শকদের কাছে গাইনাক্সকে পরিচিত করে তুলে।
  • ১৯৯১ সাল: এই বছর গাইনাক্স নিয়ে আসে OVA সিরিজ Otaku no Video, যা ওতাকুদের জীবন-যাপন নিয়ে একটি প্যারোডি সিরিজ হিসাবে তৈরি করা হয়। আনিমের ফাঁকে ফাঁকে বাস্তবের এক ওতাকুর ইন্টারভিউ দেখায়, আরও এখানে গাইনাক্সের নিজেদের স্টুডিওরই প্যারোডি তুলে ধরে তারা।
  • ১৯৯৫ সাল: এরকম সময়ে ধারদেনা নিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় পরতে হয় গাইনাক্সকে, আর একই সাথে বেশ কয়েকজন স্টাফ গাইনাক্স ছেড়ে চলে যায়। গাইনাক্স তখন বেশ কিছু এডাল্ট ভিডিও গেম বের করে, যেগুলির বিক্রয় তাদের ধারদেনার অনেক অংশই শোধ করতে সাহায্য করে। নিজেদের এসব সমস্যার অনেকগুলিই মিটিয়ে ফেলবার পর ১৯৯৫ সালের দিকে এসে হিদেয়াকি আন্নো একটি প্রোজেক্ট হাতে নেয়, যা আনিমের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবেই চিরকাল থেকে যাবে। সময়টা গাইনাক্সের জন্যে এবং আন্নোর নিজের জন্যেও ভাল যাচ্ছিল না। স্টুডিওর ধারদেনার সমস্যা, দিন-কে-দিন আনিমের জন্যে বরাদ্য বাজেট কমে আসা, এবং কাজ সংক্রান্ত কারণে আন্নোর বিষণ্ণতা সব মিলিয়ে অনেক ধকলের একটা সময় যাচ্ছিল। এরকম সময়ে আন্নো নতুন এক প্রোজেক্টের আইডিয়া নিয়ে আসে, যেই প্রোজেক্টের ব্যাপারে শুধু আন্নো নিজেই নয়, বরং পুরা গাইনাক্সও আত্মবিশ্বাসী ছিল এই প্রোজেক্টের সাফল্যের ব্যাপারে। প্রোজেক্টটি হল Neon Genesis Evangelion, আনিমের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।
  • Neon Genesis Evangelion: শুরুর দিকে ইভাঞ্জেলিয়নের ভাগ্যের শিকে ছিড়তে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় গাইনাক্সকে। প্রথম প্রথম কেউই সিরিজটির মার্চেন্ডাইজ লাইসেন্স কিনতে চাচ্ছিল না, এর মাঙ্গার ফান্ডিং-এর জন্যে কেউ এগিয়ে আসছিল না। এতকিছুর পরেও গাইনাক্স স্টাফদের মধ্যে সিরিজটি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায় নি। এমন কি হিদেয়াকি আন্নো প্রতিশ্রুতিই দিয়ে দেয় ইভাঞ্জেলিয়ন ব্যবসাসফল হবে। ১৯৯৫ সালে সিরিজটি প্রচার হওয়া শুরু করলে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি প্রোজেক্টটি নিয়ে, ইভাঞ্জেলিয়ন মানেই যেন তখন রমরমা ব্যবসা! ইভাঞ্জেলিয়নের নাম থাকলে যেকোন জিনিসই দেদারসে বিক্রয় হচ্ছে। যদিও শেষের দিকে এসে সিরিজটির বাজেট নিয়ে টানাটানি শেষ দুই পর্বে আনিমে ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কমূলক এন্ডিং-এর জন্ম দেয়, তারপরেও ইভাঞ্জেলিয়ন নামটা এত বেশিই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে সেই নাম ভাঙ্গিয়ে এই ২০১৬ সালে এসেও যেকোন জিনিসের ব্যবসা সফল হয়ে থাকে।
  • ১৯৯৭ সাল: বাজেটের ঘাটতির কারণে ঠিকমত এন্ডিং দেখাতে না পারলেও এরপর ১৯৯৭ সালে আন্নো দুইটি মুভি নিয়ে আসে ইভাঞ্জেলিয়নের এন্ডিং নিয়ে। সেগুলিও একই সাথে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত হয়ে উঠে।
  • ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল: ইভাঞ্জেলিয়নের এরকম মারমার কাটকাট ব্যবসার জন্যে আর এত ভাল সময় কাটাবার পরেও তাদের উপর এরপর বেশ বড় রকমের এক ধাক্কা এসে লাগে। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে এসে ধরা পরে গাইনাক্স বিশাল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছে। পরিমাণটাও অবাক করার মত বড়: ৫৬০ মিলিয়ন ইয়েন!! অনেক তদন্তের পর ১৯৯৯ সালে গাইনাক্স প্রেসিডেন্ট Takeshi Sawamura-কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • কর ফাঁকি দেওয়া নিয়ে এবং প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে গাইনাক্সে অনেক বড় ঝড় যায় একটা, তবে গাইনাক্স স্টাফরা নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে খুব বেশি সময় নেয় নি।
  • ২০০০ সাল: Production I.G-এর সাথে গাইনাক্সের সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল সবসময়েই। তাদের সহযোগিতায় গাইনাক্স ২০০০ সালে আনে স্টুডিওর আরেকটি বড় সাফল্য পাওয়া সিরিজ Fuli Kuli বা FLCL, যা কিনা মডার্ন আনিমের সূচনা করা সিরিজগুলির অন্যতম। এটি তৈরি করা হয়েছিলি এই উদ্দেশ্যে যে সিরিজটি যেন তথাকথিত আনিমে থেকে একদম আলাদা হয়। ইংরেজি ভার্শনের জন্যে প্রায় সব জোক্স নতুন করেও লেখে তারা। FLCL দর্শকরা অনেক ভালভাবেই গ্রহণ করে।
  • ২০০৪ সাল: প্রতিষ্ঠানের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তারা নিয়ে আসে Gunbuster-এর সিকোয়েল সিরিজ
  • ২০০৬ সাল: হিদেয়াকি আন্নো গাইনাক্স ছেড়ে চলে যান। একই সাথে পরবর্তী কিছু সময়ে অনেক অরিজিনাল স্টাফরাও গাইনাক্স ছেড়ে অন্য স্টুডিওতে চলে যায়।
  • ২০০৭ সাল: পরিচালক Hiroyuki Imaishi নিয়ে আসে গাইনাক্সের অন্যতম সেরা সিরিজ Tengen Toppa Gurren Lagann. সিরিজটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে, কিন্তু এই সিরিজ চলাকালীন গাইনাক্সের অরিজিনাল মেম্বারদের একজন Takami Akai একই সাথে গুরেন লাগান-এর টিম ছেড়ে এবং গাইনাক্স ছেড়ে চলে যান।
  • ২০১০ সাল: Hiroyuki Imaishi আরেকটি বহুল জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত এন্ডিং-এর জন্যে বিখ্যাত সিরিজ নিয়ে আসেন: Panty & Stocking with Garterbelt. এই সিরিজটিও ছিল গাইনাক্সের আরেকটি আনিমে যা “আনিমে” ধারণা থেকে অনেক দূরে থেকেছে। আর্টস্টাইল দেখলে ওয়েস্টার্ন কার্টুন মনে না হবার কোন কারণ নেই।
  • পরবর্তী সময়: পরবর্তী সময়টা গাইনাক্সের জন্যে খুব ভাল কাটেনি ঠিক। বেশিরভাগ অরিজিনাল স্টাফ গাইনাক্স ছেরে চলে যাবার পর যেই ধরণের কাজের জন্যে গাইনাক্স বিখ্যাত তেমন কোন কিছু আর নিয়ে আসে নি। তবে এই সময়ে অনেক মাঙ্গা আর লাইট নোভেল এডাপশন করে তারা।

 

 

গাইনাক্স স্টাফরা অন্যত্র গিয়ে যেসব জনপ্রিয় স্টুডিও তৈরি করে-

  • Gonzo: ১৯৯২ সালে কিছু সংখ্যক প্রাক্তন গাইনাক্স সদস্য স্টুডিও গঞ্জো প্রতিষ্ঠা করেন।
  • Khara: ২০০৬ সালে হিদেয়াকি আন্নো গাইনাক্স ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন স্টুডিও খারা। এখানে এসে তিনি নতুন করে ইভাঞ্জেলিয়ন সিরিজ শুরু করেন এবং মুভি আকারে এগুলি নিয়ে আসেন।
  • Trigger: ২০১১ সালে Hiroyuki Imaishi এবং Masahiko Ohtsuka গাইনাক্স ছেড়ে দিয়ে এসে স্টুডিও ট্রিগার প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে এখনকার সময়ে গাইনাক্সের কাজে “গাইনাক্স” ভাবটা পাওয়া না গেলেও ট্রিগারের কাজে মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায় সেই স্বাদ। তাদের কাজ Kill la Kill, Inferno Cop, Ninja Slayer জাতীয় সিরিজগুলির মধ্যে সেই “গাইনাক্স” এর আমেজ পাওয়া যায়।

 

গাইনাক্সের নিজস্বতা আছে অনেক। তাদের সৃষ্ট কাজগুলিতে এমন কিছু জিনিস পাওয়া যায় যার কারণে কোন আনিমে গাইনাক্সের তৈরি এটি শুনলেই দর্শকরা নেড়েচড়ে বসে, কিছু অস্বাভাবিক কিন্তু চমৎকার common idea-এর জিনিস পাওয়া যাবে তাদের আনিমেতে, এই চিন্তাই সবার আগে দর্শকদের মাথায় খেলে যায়। গাইনাক্সের এরকম নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা রইলো-

 

  • Gainax Ending: এক NGE দিয়েই গাইনাক্স আনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে রেখে যায় এমন এক অবদান, যার কারণে দর্শকেরা অনেক সিরিজ দেখার সময়েই অস্বস্তিতে থাকে এন্ডিং-এ এসে সব ওলটপালট করে দেওয়া কিছু হবে না তো! সোজা ভাষায় Gainax Ending হল গল্পের এমন এক এন্ডিং যা শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, বরং এমন জিনিস যা কয়েকবার না দেখলে মাথায় ঢুকবে না, কিংবা ঢুকলেও হতবিহবল করে রেখে দিবে দর্শককে। Gainax Ending হল এমন এক এন্ডিং যা দর্শকের Mind Screw করে রেখে যাবে, যা দেখার পর দর্শক মুখে মুখে না হলেও মনে মনে WTF! WTF! বলে চিৎকার করতে থাকবে। Gainax Ending বেশ কয়েকপ্রকার হতে পারে। যেমন – হাসিখুশি এন্ডিং বা দুঃখের এন্ডিং নয়, বরং ৩য় আরেক ধরণের এন্ডিং নিয়ে আসা। আবার অস্পষ্ট ক্লিফহ্যাঙ্গার দিয়ে এন্ডিং হতে পারে। অথবা এমন এন্ডিং হতে পারে যা ধরণে-বলনে এর আগে পুরা সিরিজের সাথে বিন্দুমাত্র মিল রাখে না। অথবা এমন এন্ডিং যা পুরা গল্পটাকে অন্য আঙ্গিকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য করবে আপনাকে। এরকম অদ্ভুতুরে আর ধাক্কা লাগানো এন্ডিং যে পৃথিবীর ইতিহাসে গাইনাক্স শুরু করেছে তা নয়, আরও অনেক আগ থেকেই অনেক গল্পে, মুভিতে ছিল এমন এন্ডিং। কিন্তু ইভাঞ্জেলিয়নের এন্ডিং ব্যাপারটাকে এমন শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে Mind-Fu*k ending বুঝাতে গেলে বেশিরভাগ দর্শকই, বিশেষ করে আনিমে দর্শকেরা Gainanx Ending কথাটি ব্যবহার করে থাকে। গাইনাক্সদের নিজেদের যেসব আনিমেতে Gainax Ending রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকটি: Neon Genesis Evangelion [Gainax Ending শব্দটির উদ্ভাবক], Mahoromatic, Gunbuster, He Is My Master, Magical Shopping Arcade Abenobashi, Panty & Stocking with Garterbelt, Tengen Toppa Gurren Lagann [উল্টাভাবে জিনিসটা নিয়ে আসে, যেখানে সিরিজের শুরুটা এরকম উল্টাপাল্টা হয়, কিন্তু 4. Gainax Endingবাকি সিরিজ সেরকম হয় না], Royal Space Force: The Wings of Honnêamise, Houkago no Pleiades, FLCL [উল্টাভাবে দেখায়, যেখানে পুরা সিরিজটা ওলটপালট হয়ে চলতে থাকে, কিন্তু এন্ডিং থাকে একদম সাধারণ আর স্বাভাবিক]। গাইনাক্স ছাড়া অন্যান্য স্টুডিওর আনিমে যেগুলিতে Gainax Ending দেখা যায় তার কয়েকটি উদাহরণ: Berserk, Mirai Nikki, Chobits, Revolutionary Girl Utena, Dragon Ball GT, Air, Clannad, Kanon, Robotics;Notes, Xam’d: Lost Memories, Gantz, Darker Than Black, Serial Experiments Lain, Mahou Shoujo Madoka★Magica, Mahou Shoujo Madoka★Magica: Rebellion, Guilty Crown, Eureka Seven AO ইত্যাদি। আবার Gainax Ending-এর প্যারোডি দেখা যায় Gintama-এর মাঝের এক পর্বে, Carnival Phantasm-এর প্রথম পর্বে, আবার Kill la Kill-এ এটা নিয়েও শেষের আগের পর্বে মজা করে ভয় দেখানো হয় দর্শকদের। Inferno Cop-এ পুরা Gainax Ending-কে একরকমের উপহাস করা হয় শেষের কয়েকটি পর্বে।
  • Gainaxing: ভদ্র ভাষায় এই ব্যাপারটাকে বুঝাতে গেলে বলতে হবে, কোন নারী চরিত্রকে এমনভাবে উপস্থিত করা হয় যেন তার শরীরে bounce effect অনেক বেশি দেখা যায়। নারীদেহের এক অংশে physics-এর lawগুলি কাজ করে না। গাইনাক্সের আনিমে মানেই যেন তাতে অল্প হলেও Gainaxing থাকবে।
  • Gainax Pose: Gainax Pose বা Gunbuster Pose হল এমন এক অঙ্গভঙ্গি, যেখানে গল্পের প্রোটাগোনিস্ট নায়কোচিত ভাব নিয়ে arms-crossed অবস্থায় থাকবে, শারীরিক ভাষায় একটা গর্বভাব থাকবে, আর আশেপাশে ভিজুয়াল ইফেক্ট হিসাবে বাতাসের প্রবাহ, ধোঁয়া উড়তে দেখা, আগুন জ্বলতে দেখা, আলোর খেলা ইত্যাদি দেখা যাবে। গাইনাক্সের নিজেদের কাজের মধ্যে শুধুমাত্র Gunbuster, Diebuster আর Gurenn Lagann-এই এমন জিনিস দেখা গেলেও এই পোজটির খ্যাতি দুনিয়াজুরে ছড়িয়ে গিয়েছে। নেট জুড়ে দেখা যায় অনেক আর্টিস্ট তাদের পছন্দমত কোন আনিমের নায়ক-নায়িকাকে এরকম Gainax Pose-এ রেখে এঁকেছে।

5. Gainax Pose

  • Mecha: মেকা আনিমে তৈরির প্রতি গাইনাক্সের ঝোঁকটা দেখার মত। সেই DAICON III ও IV থেকে শুরু করে এরপর Gunbuster, NGE, FLCL, Diebuster, Gurren Lagann একে একে অনেকগুলি মেকা আনিমে দিয়ে গিয়েছে গাইনাক্স, এবং তাদের প্রায় সব মেকা আনিমেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
  • Deconstruction and Reconstruction: গল্পে একটা আইডিয়া দেখানো, তারপর পুরা জিনিসটাকে ভেঙ্গে আবার নতুন করে গড়ে তুলা, এই ব্যাপারটা গাইনাক্সের বেশ পছন্দের এক আইডিয়া।
  • Shoutout: গাইনাক্সের অনেক আনিমেতেই দেখা যায় অন্যান্য বিভিন্ন জিনিসের প্রতি রেফারেন্স দেখানো। যেমন, FLCL-এ প্রায় প্রতি পর্বেই একগাদা রেফারেন্স থাকতো, বিশেষ করে Lupin III এর রেফারেন্স একটু পরপরই থাকতো। এক পর্বে আর্ট স্টাইল South Park-এর মত করে ফেলে কিছুক্ষণের জন্যে। এমনকি গাইনাক্সের নিজেদের গাইনাক্স-পূর্ব কাজ DAICON-এর প্রতিও ছোট্ট একটি ট্রিব্যুট রাখে এক পর্বে।

গাইনাক্সের কিছু জনপ্রিয় আনিমে-

  • TV Series: Nadia: The Secret of Blue Water (1990-1991), Neon Genesis Evangelion (1995-1996), His and Her Circumstances (1998-1999), Oruchuban Ebichu (1999), Mahoromatic (2001-2003, 2009), Magical Shopping Arcade Abenobashi (2002), Gurrenn Lagann (2007), Corpse Princess (2008), Hanamaru Kindergarten (2010), Panty & Stocking with Garterbelt (2010), The Mystic Archives of Dantalian (2011), Medaka Box (2012), Wish Upon the Pleiades (2015)
  • OVA: Appleseed (1988), Gunbuster (1988-1989), Otaku no Video (1991), FLCL (2000), Re: Cutie Honey (2004), Diebuster (2004) etc.
  • Films: Royal Space Force: The Wings of Honnêamise (1987), Evangelion: Death and Rebirth (1997), The End of Evangelion (1997), Revival of Evangelion (1997), Gunbuster vs. Diebuster (2006), Gekijōban Tengen Toppa Gurren Lagann (2008-2009) etc.
  • Collaborations with Other Studios: Cowboy Bebop: Knockin’ on Heaven’s Door (2001), Rebuild of Evangelion movies (2007-present)

6. Gainax Collage

গাইনাক্সের গল্পটা একটা রূপকথার গল্প থেকে কোন অংশে কম হয় না আসলে। অল্প কয়েকজন আনিমে পাগল তরুণ মিলে তৈরি করে ফ্যান অ্যানিমেশন, সেখান থেকে বড় স্টুডিও এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ডাক, সেখান থেকে আনিমের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় এক আনিমে স্টুডিও নির্মাণ করে ফেলা, কর কেলেংকারি নিয়ে বিশাল খবর ঘটানো, আনিমের ইতিহাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে দেবার মত কিছু আনিমে তৈরি, দাপটের সাথে ২৫-২৬ বছর রাজত্ব করে ফেলার পর সেই মূল প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেরই প্রস্থান এবং এখন স্টুডিওটির বেহাল দশা – রূপকথার চাইতে অনেক বেশি ঘটনাবহুল গাইনাক্সের জীবনকাহিনী! যদিও এখনও গাইনাক্সে বেশ সক্রিয় ও উৎসাহী অনেক স্টাফ আছে, যারা তাদের মেধার পরিচয় দিয়ে মাঙ্গা ও লাইট নোভেল এডাপশন তৈরি করে যাচ্ছে, তবে গাইনাক্সকে যারা গাইনাক্স বানিয়ে গিয়েছে, তাদের অনুপস্থিতি এখনকার কাজে ভালমতই ফুটে উঠে।

কিন্তু মজার কথা হল, গাইনাক্সের জন্যে আসলে খুব ফাটাফাটি নতুন কিছু নিয়ে আসাও খুব দরকারি না। এক ইভাঞ্জেলিয়নের মার্চেন্ডাইজই এখনও গাইনাক্সকে উপরে তুলে রাখতে যথেষ্ট। কিন্তু আয়ের কথা বাদ দিয়ে বরং দর্শকদের কথা ভাবলে গাইনাক্সের কাছ থেকে চমক জাগানিয়া কোন সিরিজের আশা করাটা এখন হয়তো দুরূহ ব্যাপার। বরং সেরকম কোন আনিমে দেখতে হলে এখন দর্শকদের আগ্রহ থাকে Trigger বা Khara-এর প্রতি, যেখানে গাইনাক্সের প্রতিষ্ঠাতাদের বড় অংশ চলে গিয়ে কাজ করছে এবং গাইনাক্সীয় জিনিস উপহার দিচ্ছে মাঝেমধ্যেই।

7. Gainax chars - Production IG

[Production I.G –এর পক্ষ থেকে গাইনাক্সের জনপ্রিয় চরিত্রদের নিয়ে এই কোলাজটি এঁকেছেন Shigeto Koyama]