রিভিউ কন্টেস্ট এন্ট্রি [২০১৫] #৪: Hajime no Ippo — Arnab Basu

“এনিমখোর রিভিউ কন্টেস্ট [২০১৫] – তৃতীয় স্থান অধিকারী এন্ট্রি”

————————————————————————————————————-

এনিম/মাঙ্গা : হাজিমে নো ইপ্পো
মাঙ্গাকা : জর্জ মোরিকাওয়া
জনরা : স্পোর্টস, কমেডি, একশন, ড্রামা, শৌনেন

হাজিমে নো ইপ্পো দেখেছে অথচ জ্যাব প্র্যাক্টিস করে নাই এমন মানুষ বোধহয় খুব একটা নেই। এটা এমন একটা এনিম যা দেখে খুব সহজেই অনুপ্রাণিত হওয়া যায়, “পরিশ্রমের ফল কখনও বৃথা যায় না” এ কথা সহজেই বিশ্বাস করা যায়। হাজিমে নো ইপ্পো তাই শুধুমাত্র বক্সিং এর গল্প না, জীবনের গল্প, বাধা ও বাধা অতিক্রমের গল্প এবং সর্বোপরি, অণুপ্রেরণার গল্প।

মাকুনৌচি ইপ্পো সহজ সরল ছেলে, যার জীবন স্কুল আর তার মাকে মাছ ধরার জাহাজের ব্যবসায় সাহায্য করার মাঝেই গণ্ডীবদ্ধ। স্কুলে সহপাঠীদের হাতে রোজকার মত অপদস্থ হওয়ার সময় তাকে রক্ষা করে তাকামুরা। এই তাকামুরাই তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় বক্সিং এর জগতের সাথে। ইপ্পো যখন বক্সিং শিখতে চায় তখন তাকামুরা তাকে এক কঠিন শর্ত দেয়। তাকামুরাকে অবাক করে সেই শর্ত পূরণ করে ইপ্পো। তাকামুরা তখন তাকে নিয়ে আসে কামোগাওয়া বক্সিং জিমে যেখানে অভিজ্ঞ মিয়াতার সাথে প্রথমবার রিং এ ঢোকা ইপ্পোর হার না মানা মনোভাব জয় করে নেয় কোচ কামোগাওয়ার মন। শুরু হয় বক্সার হিসাবে তার পথচলা। তবে গল্প শুধুমাত্র ইপ্পোর ম্যাচগুলোর মধ্যেই শেষ না, প্রতিটি ম্যাচের আগে প্রস্তুতি, প্রতিপক্ষের কাহিনী, অন্যান্য চরিত্রদের কাহিনী, তাদের লড়াইগুলো সমান গুরুত্ব পেয়েছে। বক্সারদের জীবনের কষ্ট, আত্নত্যাগ আর সীমাবদ্ধতাগুলো খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে কাহিনীতে।

হাজিমে নো ইপ্পোর সবচাইতে শক্তিশালী দিক এর চরিত্রগুলো। মিয়াতা, মাশিবা, ভর্গ, সেন্দো, দাতে এইজি, সাওয়ামুরার মত চরিত্রগুলোকে শুধুমাত্র ইপ্পোর প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখানো হয়নি, দেখানো হয়েছে তাদের জীবনের সংগ্রাম আর বক্সিং নিয়ে তাদের একাগ্রতা। তাকামুরার ম্যাচগুলা দেখার সময় মনে হবে এই লোকটাই বোধহয় নায়ক। প্রায় প্রতিটি চরিত্রকে কেন্দ্র করেই একটা মাঙ্গা বা এনিম তৈরি করা সম্ভব। এ থেকেই প্রতিটি চরিত্রের গভীরতা বোঝা যায়। তার পরেও এই গল্পের নায়ক ইপ্পো। সে এমন একটা চরিত্র যার শুরু শূন্য থেকে, যার প্রতিটি ম্যাচের পিছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম, যে রিং এর বাইরে নিতান্তই সহজ সরল। ইপ্পোর থেকে অনেক ক্যারিশম্যাটিক চরিত্র থাকার পরেও সেই এই গল্পের নায়ক, কারণ তার সাথে খুব সহজেই একাত্নতা প্রকাশ করা যায়। রিং এর বাইরে কোচ কামোগাওয়ার কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। ইপ্পো বা তাকামুরার উত্থানের পিছনে এই মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি। বক্সিং আর দশটা স্পোর্টস থেকে আলাদা। অধিকাংশ স্পোর্টস এনিমগুলো হাইস্কুল ভিত্তিক, যা জাপানের সীমানারর মধ্যেই গণ্ডীবদ্ধ। ব্রায়ান হক, ডেভিড ঈগল আর রিকার্ডো মারটিনেজ এর মত চরিত্রগুলো এটাই প্রমাণ করে যে ইপ্পোর কাহিনী জাপানের সীমানা ছাড়িয়ে পুরো পৃথিবীব্যাপি বিস্তৃত।

এনিমের আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর কমেডি। ডায়লগ তো আছেই, চরিত্রগুলোর বিভিন্ন অভিব্যক্তিই হাসির খোরাক হওয়ার জন্য যথেষ্ট। অসাধারণ সব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়াও আছে দুর্দান্ত কিছু ওপেনিং আর এন্ডিং সং। ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া এই মাঙ্গার এখন পর্যন্ত ১০০০ এর উপর চ্যাপ্টার বের হয়ছে। ২০০০ সালে আসে এনিমের প্রথম সিজন। এর পর আরো দুই সিজনসহ আছে একটি মুভি আর একটি ওভিএ।

দুর্দান্ত একশন, টানটান উত্তেজনা কিংবা দমফাঁটানো কমেডি, বিনোদনের জন্য প্রয়োজন সবকিছুর সাথে আছে সাবলীল কাহিনী। কোন ধরণের অতিপ্রাকৃত কিছু ছাড়াই এ কারণে হাজিমে নো ইপ্পো অনন্যসাধারণ। তাই অসাধারণ কিছু থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে দেখে ফেলুন হাজিমে নো ইপ্পো।

4 Hajime no Ippo

Comments