Diamond no Ace: বেসবল সমাচার! — Mithila Mehjabin

জনরা যদি হয় স্পোর্টস, আর দর্শক যদি হয় আমার মত খুতখুতে, তাহলে স্পোর্টস না বুঝে এনিমের আনন্দ উপভোগ করাটা তাকে দিয়ে হয় কম! :’)
আহামরি খুব বেশী স্পোর্টস এনিমে দেখা হয়নি, কিন্তু যে কয়টা দেখেছি তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হলো দাইয়া নো এস তথা ডায়ামন্ড নো এস।  এনিমেটা দেখার সময় রীতিমত খাতা-কলম নিয়ে বসে গেছিলাম, বেসবলের সকল রহস্য বুঝে ছাড়ব!  বিপুল পড়াশুনা (!) করে মোটামুটি একটা ধারণা আনতে পেরেছিলাম বেসবল সম্বন্ধে, আর বাকিটা দাইয়া দেখেই বুঝেছি! :’) তাই, যারা খেলাটা না বোঝার কারণে দাইয়া বা বেসবল সংক্রান্ত অন্য কোনো এনিমে দেখতে পারছেন বা চাইছেন না, তাদের জন্য লিপিবদ্ধ করে ফেললাম আমার সকল বেসবল জ্ঞান! আশা করি উপকৃত হবেন!
ইয়াকিউ তথা বেসবল…পশ্চিমা বিশ্বে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি খেলা, ঠিক আমাদের দেশে ক্রিকেট যেমন। ক্রিকেটের সাথে বেসবলের মিলও বেশ, দুটোই ব্যাটে বলে রান তোলার দৌড়!
দুদিক থেকে দুটি তীর্যক রেখা উঠে যাওয়া একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্ত আঁকলে, তীর্যক রেখা দুটির অন্তভূক্ত অর্ধবৃত্ত, যেখানে বিন্দু থেকে অর্ধবৃত্ত পর্যন্ত একটা হীরকখন্ড বা ডায়ামন্ডের মত মনে হয়…এই ডায়ামন্ডই বেসবল খেলার মাঠ। আবার বিন্দু থেকে অর্ধবৃত্তের ভেতর দিকে একটি তাস পাতার ডায়মন্ড কল্পনা করলে, এই ডায়ামন্ডের চারটি কোণা হচ্ছে চারটি বেস। প্রথম বিন্দু, যেখান থেকে দুটি তীর্যক রেখা উঠে গেছে, সেটি হচ্ছে হোম বেস, এই হোম বেস থেকে ডানের বেসটি ফার্স্ট, বিপরীত বেসটি সেকেন্ড, এবং বামের বেসটি থার্ড বেস। বড় ডাযামন্ডের ভেতর ছোট ডায়ামন্ড, বেসবল খেলায় দুটোকেই ডায়ামন্ড বলা হয়।
ছোট ডায়ামন্ডটির কেন্দ্রে একটু উচুঁ জায়গাটা হচ্ছে পিচার’স মাউন্ড, যেখান থেকে বল ছোড়ে পিচার। পিচারের মাউন্ড বরাবর প্রথম বিন্দু, তথা ফার্স্ট বেস থেকে উঠে যাওয়া তীর্যক রেখা দুটি ফাউল লাইন। হোমবেস থেকে ছোট ডায়ামন্ডের বাইরের খানিকটা অংশ জুড়ে ইনফিল্ড, ইনফিল্ড থেকে বড় ডায়ামন্ডের আউটার ফেন্স পর্যন্ত জায়গাটুকু হচ্ছে আউটফিল্ড। কল্পনা করতে কষ্ট হলে নেট ঘেটে বেসবল ফিল্ডের একটা ছবি দেখে নিলে বুঝতে পারা খুবই সহজ।
একেকটি দলে নয়জন করে দুটি টিমের মধ্যে খেলা হয়। ক্রিকেটের মতই, এট এ টাইম একদল ব্যাটিং এবং বিপক্ষ দল বলিং এবং ফিল্ডিং করে। এভাবে পালা করে একটি ব্যাটিং ও একটি ফিল্ডিং নিয়ে হয় এক ইনিং; বেসবলে নয়টি ইনিং নিয়ে খেলা হয়। টাই হলে ইনিং বাড়তে পারে।
ব্যাটিং দলের লক্ষ্য থাকে ফিল্ডিং দলের পিচারের ছোড়া বল পিটানো, এবং পিটিয়ে যদ্দুর সম্ভব দূরে ফেলানো। ব্যাটার বল পিটিয়েই ব্যাট ফেলে দৌড় দেবে প্রথম বেস এ। এভাবে একজন ব্যাটার হোম বেস থেকে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড এবং ব্যাক হোম, অর্থাৎ পুরো চারটা টা বেস ঘুরে হোম বেস এ ফেরত আসলে তখন ব্যাটিং দলের জন্য একটি রান কাউন্ট হয়।
বলিং বা ফিল্ডিং দলের লক্ষ থাকে ব্যাটারকে যেকোনোভাবে আউট করা এবং রান করা থেকে বিরত রাখা।
ব্যাটিংদলের তিনজন খেলোয়াড় আউট হলে ব্যাটিং টিমের ব্যাটিংয়ের পালা শেষ, তারপর ব্যাটিং টিম ফিল্ডিং এবং ফিল্ডিং টিম ব্যাটিংয়ে নামবে। এভাবে করে নয় ইনিং শেষে যে দলের রান বেশী হবে, সে-ই জয়ী!
কত সহজ, তাই-না?! :’) AS IF!
লক্ষণীয়:
* বেসবল খেলায় “বল” শব্দটা একটা বিশেষ অর্থ বহন করে, তাই এখানে “বল” এর বদলে “পিচ” ব্যাবহার করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
** কোনো খেলাই শতভাগ নিয়ম অনুসরণ করে না। রুল ফ্লেক্সিবেল্, আবার নিয়ম তৈরী হয় এবং ছাঁটাই হয়। তাই খেলা দেখার সময় আরও অনেক ব্যাপারেই চোখে পড়বে। এখানে অনুক্ত কিছু চোখে পড়লে নেটের সাহায্য নিতে পারেন; অথবা প্রশ্ন থাকল উত্তর বের করে দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
***অপরিচিত লাগতে পারে, এমন সকল শব্দ “ফ্যাক্টস” অংশে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
****দাইয়া নো এস এর একটা প্রসঙ্গ যেহেতু, দাইয়ার রেফারেন্স ব্যাবহার করা হয়েছে টুকটাক জায়গায়,; সেগুলোকে কোনোভাবেই স্পয়লার বলা যায় না।
প্রত্যেক হাফ-ইনিংয়ের শুরুতে ফিল্ডিং টিম এর নয়জন প্লেয়ার নিজেদের পজিশন অনুযায়ী ফিল্ডে দাড়িয়ে যাবে। পিচার, যার কাজ বল ছোড়া বা পিচ করা, থাকবে মাউন্ডের ওপর। ক্যাচার থাকবে হোম বেসে, যেখানে ব্যাটার দাড়াবে, তার ঠিক পেছনে, বসা অবস্থায়, পিচারের দিকে মুখ করে। পিচার ও ক্যাচারের মধ্যে সাংকেতিক চিহ্ণের আদান-প্রদানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে কি ধরণের বল, কোথায় ছোড়া হবে। হোমবেসের দায়িত্বে থাকা বেসম্যানও ক্যাচার। তিনটা বেস এ চারজন ফিল্ডার অবস্থান নেয়, যাদেরকে ইনফিল্ডারও বলা হয়। প্রথম বেসপ্লেট থেকে কয়েক পা বামদিকে অবস্থানকারী হচ্ছে ফার্স্ট বেসম্যান, সেকেন্ড বেসের ডানদিকে অবস্থানকারী সেকেন্ড বেসম্যান, সেকেন্ড বেসের বামদিকে অবস্থানকারী শর্টস্টপ, এবং থার্ডবেসের কয়েক পা ডান দিকে হচ্ছে থার্ড বেসম্যান।
আউটার ফিল্ডের বাম দিকে লেফট ফিল্ডার, মাঝখানে সেন্টার ফিল্ডার, ডানে রাইট ফিল্ডার।
ক্যাচারের পেছনে একজন নিরপেক্ষ আম্পায়ার থাকে, প্রতিটা বেসেও একজন করে আম্পায়ার থাকতে পারে। গেম এর গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে একটি বেসবল ম্যাচে ১-৬ জন আম্পায়ার থাকতে পারে।
খেলার শুরুতে একজন ব্যাটার হোম বেস এ এসে দাড়াবে ব্যাট হাতে, হোমপ্লেটের দিকে পিচারের ছোড়া বল হিট করার উদ্দেশ্যে। পিচারের ছোড়া সেসকল পিচ যা ব্যাটার চেষ্টা করেও হিট করতে পারে না অথবা ইচ্ছে করেই করে না, গিয়ে ক্যাচারের মিট বা গ্লাভসে ধরা পড়ে, এবং ক্যাচার বল ফেরত পাঠায় পিচার কে। একজন ব্যাটার, যে বল পিটিয়ে খেলার মাঠে গড়াতে পারে, তাকে অবশ্যই বল গড়ানো মাত্র ব্যাট ফেলে প্রথম বেসের উদ্দেশ্যে দৌড়াতে হবে, সে বল দূরেই গড়াক, আর কাছেই গড়াক।
ব্যাটার বল গড়িয়ে হাত থেকে ব্যাট ফেলামাত্রই ব্যাটার হিসেবে তার দায়িত্ব শেষ, তখন সে একজন রানার তথা ব্যাটার- রানার। আউট না হয়ে যে ব্যাটার প্রথম বেস এ পৌছে যেতে পারে, সে হচ্ছে “সেফ”, মানে তাকে প্রথম বেস এ থাকা অবস্থায় আর আউট করা যাবে না। একজন ব্যাটার-রানার চাইলে প্রথম বেস এ থাকতে পারে, অথবা দ্বিতীয় বেস, কিংবা এর পরের বেসেও পৌছানোর সিন্ধান্ত নিতে পারে, যত বেস পর্যন্ত সে বিশ্বাস করে যে আউট না হয়ে পৌছাতে পারবে।
একজন ব্যাটার যদি পিচারের ছোড়া পিচ মাঠে গড়িয়ে নিরাপদে প্রথম বেস এ পৌছাতে পারে, সেটাকে বলা হয় “সিঙ্গেল”। যদি সে বল গড়িয়ে প্রথম প্রচেষ্টায়ই দ্বিতীয় বেস পর্যন্ত পৌছাতে পারে, তাহলে সেটা “ডাবল”, তৃতীয় বেস পর্যন্ত পৌছে গেলে সেটা “ট্রিপল”। ব্যাটার যদি পিচারের ছোড়া বল পিটিয়ে পুরো আউটফিল্টের ওপর দিয়ে আউটার ফেন্স পর্যন্ত উড়াতে পারে, তাহলে সেটাকে বলে “হোম রান”। এক্ষেত্রে ব্যাটার সহ বেস এ থাকা প্রতিটা রানার বিনা বাঁধায় সকল বেস ঘুরে হোম বেস এ পৌছানোর অধিকার পায়। ব্যাটার সহ তিন রানারের রান মিলে হয় চারটি রান- যেটা যেকোনো সিচুয়েশনে ব্যাটিং দলের জন্য সবচেয়ে প্রত্যাশিত ফলাফল।
বেস এ থাকা যেকোনো রানার ফেয়ার টেরিটোরিতে ব্যাটারের পিটানো পিচ মাটিতে গড়ানোর আগমুহুর্ত থেকে, পিচ মাটি স্পর্শ করা মাত্র বা পিচ গড়ানোর পরমুহুর্ত থেকে, তথা ব্যাটার পিচের গায়ে আঘাত করা মাত্রই যেকোনো অবস্থা থেকেই দৌড়িয়ে পরবর্তী বেস এ পৌছানোর চেষ্টা করতে পারে। প্রথম বেসের রানারকে পিচ গড়ানো মাত্র অবশ্যই দৌড় দিতে হবে, কারণ পিচ গড়ালে ব্যাটার ব্যাট ফেলে দৌড়াতে বাধ্য, সেক্ষেত্রে প্রথম বেস রানারকে প্রথম বেস খালি করে দিতে হবে। কিন্তু পিচ যদি গড়িয়ে ফাউল লাইনের বাইরে চলে যায়, তাহলে যেকোনো বেস এর রানার আবার পূববর্তী বেসে ফেরত আসবে। ব্যাটারের পিটানো পিচ যদি বাতাসে উড়ে যায়, এবং মাটিতে গড়ানোর আগে ফিল্ডার তালুবন্দী করে ফেলে, তাহলে ব্যাটার আউট। এক্ষেত্রে যে কোনো রানারকে পরবর্তী বেসে এডভান্স হবার হন্য বর্তমান বেস কে ট্যাগ বা টাচ করতে হবে। কারণ বেস রানাররা কিন্ত মোটেই ভালোমানুষের বাচ্চার মত বেসপ্লেটের ওপর দাড়িয়ে থাকে না! তারা পরবর্তী বেসের দিকে, অবস্থানকৃত বেসপ্লেট থেকে খানিকটা এগিয়ে দাড়িয়ে থাকে, যেন ব্যাটার পিচ হিট করা মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী বেস এ পৌছুতে পারে। কিন্তু এগিয়ে থাকা একজন বেসম্যান যদি বুঝতে পারে যে ব্যাটার কতৃক উড়ে যাওয়া পিচ ফিল্ডারের হাতে পড়তে যাচ্ছে, তাহলে তাকে এগিয়ে থাকা অবস্থান থেকে অবশ্যই বেসপ্লেটে ফিরে এসে প্লেট টাচ করতে হবে, তারপর পিচ ফিল্ডারের তালুবন্দী হওয়া মাত্রই পরবর্তী বেসের দিকে দৌড়াতে পারবে। পিচার ব্যাটারের দিক পিচ ছোড়া অবস্থায়ও একজন রানার পরবর্তী বেসের উদ্দেশ্যে দৌড় দিতে পারে, কারণ পিচ যেহেতু ব্যাটারের দিকে যাচ্ছে, রানারকে আউট করতে পারার সুযোগ তখন কম। এক্ষেত্রে রানারের প্রচেষ্টা সফল হলে সেটাকে বলে বেস চুরি, বা “স্টোলেন বেস”। আমাদের কুরামোচি সেনপাই একেবারে পরিষ্কার চেহারায় অনায়াসে বেস চুরি করে, কারণ এই চুরির জন্য তো আর তার শ্বাস্তি হচ্ছে না!  মিয়ুকি আবার এককাঠি বাড়া, ও ক্যাচার হলে, বিপক্ষ দলে এমনকি কুরামোচি থাকলেও বেস চুরি করার সাহস দেখাবে না, কারণ বেস চুরির ফন্দী বানচালের দায়িত্ব কিন্তু আবার ক্যাচারের!
পিচারের ছোড়া পিচ যদি ব্যাটার কতৃক হিট না হয়, তাহলে সেটা হয় “বল” নাহয় “স্ট্রাইক”। তিনটা স্ট্রাইক হলে ব্যাটার আউট। পিচারের ছোড়া পরপর চারটা পিচ যদি “বল” হয়, তাহলে ব্যাটারকে একটা “ফ্রি ওয়াক” দ্বারা পুরষ্কৃত করা হয়। অর্থাৎ পরপর চারটা পিচ “বল” হলে ব্যাটার ব্যাট ফেলে বিনা বাঁধায় প্রথম বেস এ চলে যাবে। (পিচারের পিচ যদি ব্যাটারকে হিট করে, অর্থাৎ ছোড়া পিচ ব্যাটারের গায়ে লাগে, তাহলেও একটা “ফ্রি ওয়াক” পাবে ব্যাটার, এই শর্তে যে, ব্যাটার ঐ পিচের দিকে ব্যাট সুইং করেনি।) অনেক সময় অনেক ভালো ব্যাটার পিচ স্লটে পেলে হোম রান করতে পারে, এই ভয়ে পিচার ইচ্ছা করেই চারটা “বল” করে, যেন ব্যাটার বেস এ চলে যায়। তাহলে ঐ ব্যাটারকে আপাতত ফেইস করতে হচ্ছে না তার। পিচারের ছোড়া বল কি স্ট্রাইকজোনের মধ্য দিয়ে গিয়ে “স্ট্রাইক” হয়েছে, না স্ট্রাইকজোনের বাইরে দিয়ে গিয়ে “বল” হয়েছে, তা হোমবেস আম্পায়ার নির্ধারণ করেন।
নিম্নোল্লেখিত কারণগুলোর কোনোটি ঘটলে একটা পিচ কে “স্ট্রাইক” ধরা হয়:
১. ব্যাটার স্ট্রাইকজোনের মধ্য দিয়ে পিচ করা একটি বল এ সুইং না করে তা ক্যাচারের কাছে যেতে দিলে।
২. ব্যাটার যেকোন পিচ (এমনকি সে পিচ যদি “বল” ও হয়) এর দিকে ব্যাট সুইং করলে, কিন্তু লাগাতে না পারলে সে পিচ যদি গিয়ে ক্যাচারের হাতে পড়ে।
৩. ব্যাটারের পেটানো পিচ যদি কোনোভাবে ফাউল লাইনের বাইরে গড়ায়, তাহলে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ব্যাটারের যদি অলরেডি দুটো স্ট্রাইক হয়ে থাকে, তাহলে তৃতীয় স্ট্রাইক হিসেবে ফাউল টেরিটোরিতে গড়ানো বল গণ্য করা হবে না, অর্থাৎ তৃতীয় স্ট্রাইকের সময় পেটানো পিচ ফাউল টেরিটোরিতে গড়ালেও সেটা “স্ট্রাইক” হিসেবে গণ্য হবে না, যদি না সে পিচ টা বান্ট করা হয়। ফাউল বান্ট যদি তৃতীয় স্ট্রাইকও হয়, তবুও স্ট্রাইক হিসেবে গণ্য হবে।
একটা পিচ কে “বল” হিসেবে গণ্য করা হয় যখন পিচারের ছোড়া পিচ স্ট্রাইকজোনের বাইরে দিয়ে যায়, যদি না ব্যাটার ঐ পিচের দিকে ব্যাট সুইং করে থাকে তো। ব্যাট সুইং করা হলে সেটা স্ট্রাইক হিসেবে গণ্য হবে।
ব্যাটিং টিম যখন রান করার চেষ্টা করে, ফিল্ডিং টিম এর লক্ষ থাকে ব্যাটারদের আউট করা এরং রান করা থেকে বিরত রাখা। সাধারণত নিম্নোল্লেখিত পাঁচটি উপায়ে একজন ব্যাটার বা ব্যাটার-রানার আউট হয়ে থাকে:
১. স্ট্রাইকআউট: উপরে যেমন বলা হয়েছে, তিনটা স্ট্রাইক হলে, অর্থাৎ পিচারের ছোড়া বল স্ট্রাইকজোনের মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্বেও ব্যাটার সে পিচ না পেটাল বা পেটাতে না পারলে, অথবা “বল” হওয়া সত্বেও সুইং করলে স্ট্রাইক কাউন্ট হবে। আর তিনটা স্ট্রাইক মানে ব্যাটার আউট।
২. ফ্লাইআউট: পেটানো বল যদি মাটিতে পড়ার আগে ফিল্ডার তালুবন্দী করে ফেলে, তাহলে সেটা ফেয়ার টেরিটোরি, ফাউল টেরিটোরি বা যে অবস্থায়ই হোক না কেন, ব্যাটার আউট হয়ে যাবে।
৩. গ্রাউন্ডআউট: ব্যাটারের পেটানো পিচ ফেয়ার টেরিটোরিতে গড়ানোর পর যদি সে পিচ ফিল্ডারদের হাত হয়ে ব্যাটার বা কোনো ব্যাটার-রানারের আগে বেসপ্লেট টাচ করে, তাহলে সেই ব্যাটার বা ব্যাটার রানার আউট। যেমন: ব্যাটারের পেটানো পিচ গড়িয়ে সোজা শর্টস্টপের হাতে গেলে শর্টস্টপ যদি সে পিচ ব্যাটারের ফার্স্ট র্বেস এ পৌছানোর আগে ফার্স্ট বেসে অবস্থানকারী বেসম্যান কে ছুড়ে দেয়, তাহলে ব্যাটার আউট হয়ে যাবে। একই ব্যাপার অন্যন্য বেস রানারদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। গ্রাউন্ডআউট দেখা টা আসলে শ্বাসরুদ্ধকর, কারণ শুধু একজন ব্যাটার বা একজন রানারকেই যে গ্রাউন্ডআউট করা যায় তা-ই না, মাঝেমাঝে দুজন, এমনকি তিনজন ব্যাটার-রানারকেও আউট করে ফুল বেস মুহুর্তে শুণ্য করে দেয়া যায়! উদাহারণস্বরুপ: ধরুন ব্যাটিং টিম এর তিনজন ব্যাটার তিনটা বেস এ এডভান্স করতে পেরেছে! বেস ফুল, এমন সময় চতুর্থ ব্যাটার এসে পিচারের ছোড়া পিচ পেটাতে গিয়ে ব্যাটে-বলে মেলাতে পারল না! অথচ পিচ ফেয়ার টেরিটোরিতে গড়ানো মানে কিন্তু দৌড়াতে হবে ব্যাটারকে, স্বাভাবিকভাবেই আর বাকি বেস রানারদেরও দৌড়াতে হবে আগের বেসের বেসম্যানকে জায়গা করে দেয়ার জন্য। অথচ পিচ ধুলোয় কিছুটা লুটোপুটি খেয়ে সোজা গড়ালো সেকেন্ড বেসম্যানের হাতে, মানে ফার্স্ট থেকে সেকেন্ড বেসের উদ্দেশ্যে দৌড় শুরু করা রানার আউট! সেকেন্ড বেসম্যান পিচটা ধরেই আবার ছুড়ে দিল ক্যাচার বা হোমবেসম্যান এর হাতে, অর্থাৎ থার্ড বেস থেকে হোমবেসের দিকে দৌড় শুরু করা রানার আউট! ক্যাচার আবার সেই বল ছুড়ে দিল ফার্স্ট বেসম্যানের হাতে, মানে ব্যাটার, যে হোম থেকে ফার্স্টবেসের দিকে দৌড়াচ্ছিল, সে-ও আউট!  ট্রিপল্ প্লে অর্থাৎ তিনজন প্লেয়ার আউট! এবং জ্বী! ঠিক এমনই একটা ট্রিপল প্লে দেখতে পাই আমরা দাইয়া তে! বলদ পিচারের কন্ট্রোলবিহীন পিচ দিয়েও কিভাবে একটা ট্রিপল প্লে খেলা যায়, তারই একটা চমৎকার প্ল্যান বানিয়েছিলেন জিনিয়াস ক্যাচার!
উল্লেখ্য যে: ব্যাটার বা রানারকে আউট করার জন্য পিচ বেসম্যানের হাতেই থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। মাঠের সব ফিল্ডারই অবস্থা বুঝে নিজেদের পজিশন ছেড়ে অন্য যেকোনো পজিশন খেলার অধিকার রাখে। সেকেন্ড বেসম্যান যেমন পেটানো পিচ ধরার জন্য নিজের পজিশন ছেড়ে অন্য কোথাও ছুটতে পারে, তেমনি সেকেন্ডের পজিশনে লেফ্ট ফিল্ডারও বেসম্যান হিসেবে দাড়িয়ে যেতে পারে সেকেন্ডের ছোড়া বল রানারের আগে বেসপ্লেটে টাচ করানোর জন্য। আউটের জন্য বল রানারের বেসপ্লেট টাচ করলেই হলো, কার হাত দিয়ে টাচ হচ্ছে, তা বড় কথা না। ঠিক ক্রিকেটে যেমন উইকেটরক্ষক না হয়েও উইকেট ভাঙতে পারে অন্য যেকোনো ফিল্ডার, তেমনই।
৪. ফোর্স আউট: যখন ব্যাটারের পেটানো পিচ ফেয়ার টেরিটোরিতে গড়ানোর কারণে রানার দৌড়াতে বাধ্য হয় বেস খালি করার জন্য, পরবর্তী বেসে পৌছানোর আগেই গ্রাউন্ডআউট হয়ে যাবে জেনেও। যেমন: ফেয়ার টেরিটোরিতে ব্যাটারের পেটানো পিচ দূরে না গড়ালেও; পিটিয়েছে যখন, দৌড়াতে হবে ব্যাটারকে। তখন ফার্স্ট বেসের রানার সরে গিয়ে সেকেন্ড বেস এ যেতে বাধ্য হবে, কিন্তু বল ইতোমধ্যে পৌছে গেছে সেকেন্ড বেসম্যানের হাতে, অর্থাৎ রানার আউট।
৫. ট্যাগ আউট: পেটানো পিচ ট্যাগ বা স্পর্শ করানোর মাধ্যমে যখন আউট করা হয়। রানার দৌড়াতে থাকা অবস্থায়, বা অন্যমনষ্কভাবে বেসপ্লেট থেকে দূরে দাড়িয়ে থাকলে পেটানো পিচ হাতে ফিল্ডারদের কেউ যদি সেই পিচ রানারের গায়ে স্পর্শ করে ফেলে, তাহলে সেই রানার আউট।
উদাহারণে যেমন বললাম, ব্যাটিং টিমের একইসাথে দুইজন, এমনকি তিনজন প্লেয়ারকেও আউট করা যায় ডাবল্ বা ট্রিপল্ প্লে খেলে- যদিও এধরণের সুযোগ খুব কমই পাওয়া যায়। আউট হওয়া প্লেয়ারকে অবশ্যই মাঠ ত্যাগ করে বেঞ্চ বা ডাগআউটে ফিরে যেতে হবে। রানার বেসে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় যদি টিমের তৃতীয় ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়, তাহলে রানারসহ ব্যাটিং টিমের ব্যাটিং খেলার পালা শেষ, তারপর ফিল্ডিংয়ে নামবে ব্যাটিং টিম। প্রত্যেক ব্যাটিং ইনিং শূণ্য বেস নিয়ে শুরু হবে, আগের ইনিংয়ে রানারদের পজিশন পরের ইনিংয়ে কোনো কাজে আসবে না।
একেকজন ব্যাটারের ব্যাটিং পালা, বা প্লেটে অবস্থান পূর্ণ হয়ে যায় যখন সে হোম রান করে, বেস ঘুরে হোম বেস এ ফেরত আসে, আউট হয়ে যায়, বা রানার অবস্থানে থাকাকালে টিমের তৃতীয় ব্যাটার আউট হযে যায়, তখন। একজন ব্যাটার ব্যাটিংলাইনে একবারই ব্যাটিংএ আসবে; আবার আসবে যদি শুধু তিনজন ব্যাটার স্ট্রাইক হওয়ার আগেই বাকি আটজন ব্যাটারের প্লেটে উপস্থিতি পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে- যেটা হয়না সাধারণত।
কোন প্লেয়ার কখন ব্যাটিং করবে, সেটা ব্যাটিং অর্ডারে সুনির্দিষ্ট করা থাকে, কারণ ব্যাতীত অর্ডার পরিবর্তন হয় না সাধারনত। প্রত্যেক এট ব্যাটে আগের ইনিঙয়ে ব্যাটিং এর সময় যে ব্যাটার পর্যন্ত শেষ হয়েছিল, তার থেকেই পুনরায় ব্যাটিং শুরু হয়; এভাবে সব প্লেয়ারই ব্যাটিং করতে পারে।
ব্যাটিং অর্ডারে সাধারণত প্রথম ব্যাটারকে লিডঅফ হিটার বলা হয়, যার কাজ বল কোনোমতে ঠেলে দিয়ে আগে বেস দখল করা!
দ্বিতীয় ব্যাটারকে বলা হয় কন্ট্যাক্ট হিটার, যার কাজ সাধারণত বান্ট বা নিজেকে স্যাকরিফাইসের মাধ্যমে লিডঅফ হিটারকে স্কোরিং পজিশন তথা থার্ড বেস পর্যন্ত চলে আসার সুযোগ করে দেয়া।
তৃতীয় ব্যাটার হলো থ্রি-হোল্, যাকে সাধারণত ভালো ব্যাটিং এবং বেস দখল করতে হয়; বল পিটিয়ে যেন অন্তত এতদূর নিতে পারে যা বেস রানারদের এডভান্স হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
চতুর্থ ব্যাটার হচ্ছে টিমের সবচেয়ে যোগ্য ব্যাটার, যাকে বলা হয় ক্লিনাপ-ব্যাটার। নামের মতই, ওর কাজ হলো বেস ক্লিন করা, অর্থাৎ পিচ পিটিয়ে সম্ভব হলে চাঁদে পাঠাবে, যেন রানাররা সবাই বেস ক্লিন করে হোমবেস এ ফিরে আসে।
পরবর্তী ব্যাটাররা যথাক্রমে ফিফথ-হোল্, সিক্সথ-হোল, সেভেন্থ, এইটথ ও নাইন্থ-হোল।
উল্লেখ্য যে, ব্যাটিং অর্ডার কোনো স্ট্রিক্ট ডিসিপ্লিন নয়, অবস্থা অনুযায়ী ব্যাটারদের ভূমিকা ও কাজ অনেকভাবে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হতে পারে।
একটি টিমের নয়জন প্লেয়ার খেলবে, তারমানে কিন্তু এই না যে একেকটা টিম এ মাত্র নয়জন করে খেলোয়াড় থাকবে! গেমের ইম্পরট্যান্স লেভেলের ওপর ডিপেন্ড করে রোস্টারে বিভিন্ন সংখ্যায় খেলোয়ার থাকতে পারে; মেজর লীগগুলোতে একেকটা রোস্টারে সাধারণত ২৫ জন করে খেলোয়াড় থাকে। একেকটা পজিশনের জন্য ব্যাকআপ প্লেয়ার সহ বিশেষ পজিশন, যেমন: পিঞ্চ হিটারের মত অনেকজন প্লেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি রোস্টার বা টিম। প্লেয়ার ছাড়াও টিমে থাকেন কোচ এবং ম্যানেজার। মেইন কোচ ছাড়াও সর্বোচ্চ লেভেলের খেলাগুলোতে ব্যাটিংয়ের সময় মাঠে দুজন কোচ উপস্থিত থাকে; ফার্স্ট বেস কোচ, এবং থার্ড বেস কোচ। ফাউল লাইনের বাইরে কোচে’স বক্সে অবস্থান নেয় এ দুজন, সাধারণত বল খেলার মাঠে গড়ালে বেস-রানারদের দৌড়ের ব্যাপারে এসিস্ট করাসহ মাঠে ফিল্ডারদের পজিশন অনুসারে পরিস্থিতি যাচাই করে নির্দেশনা দেয়া, মেইন কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে নির্দেশ আদান-প্রদান করা এদের কাজ। অন্যন্য খেলা থেকে ভিন্ন, বেসবল টিমের কোচ এবং ম্যানেজাররা সাধারণত দলীয় পোশাক বা ইউনিফর্ম পরে থাকেন, কোনো কারণে খেলার মাঠে আসতে হলে কোচকে অবশ্যই ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় আসতে হবে।
ম্যাচের গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে একটা বেসবল ম্যাচে ১-৬ জন আম্পায়ার থাকতে পারেন। একজন হলে ক্যাচারের পেছনে, হোমবেসের কাছাকাছি অবস্থান নেন। ছয়জন হলে চারজন চারটি বেস, বাকি দুজন ফাউল লাইনের কাছাকাছি অবস্থান নেন।
ফ্যাক্টস:
#স্ট্রাইকজোন: ব্যাট হাতে ব্যাটিং করার ভঙ্গিতে দাড়ালে ব্যাটারের কনুই থেকে হাটু পর্যন্ত যদি একটি নয়ঘর বিশিষ্ট চারকোনা বাক্স কল্পনা করা যায়, তাহলে সেটি হচ্ছে স্ট্রাইকজোন। স্ট্রাইকজোনের ভেতর দিয়ে যাওয়া পিচে হিট না করা হলে ব্যাটারের বিপক্ষে স্ট্রাইক কাউন্ট হয়। স্ট্রাইকজোনের বাইরে দিয়ে যাওয়া পিচ কে “বল” বলা হয়। পিচারের ছোড়া পরপর চারটা পিচ “বল” হলে ব্যাটসম্যান প্রথম বেস পর্যন্ত ফ্রি-ওয়াক পায়।
#বান্ট: বান্ট একটা স্পেশাল ধরণের ব্যাটিং টেকনিক যেখানে ব্যাটার হাতের ব্যাটটির দুইমাথা আলতো করে ধরে পিচারের ছোড়া বল আস্তে করে, এমনভাবে ঠেলে দেয় যেন বল মাটিতে গড়িয়ে খুব বেশী দূরে না যেতে না পারে। সাধারণত নো-ম্যানস ল্যান্ডে, যেখানে কোনো ফিল্ডার নেই, সেখানে পিচ গড়ানোর মাধ্যমে ফিল্ডারদের কনফিউজ করে রানারদের বেস এডভান্সের সুযোগ করে দেয়ার একটি কৌশল হলো বান্ট। এ কৌশলে ব্যাটারের পেটানো পিচের গতি যেহেতু খুব কমে যায়, ইনফিল্ডের ভেতর খুব বেশীদূর গড়ায় না পিচ, এবং সেটা তোলার জন্য নিজেদের অবস্থান ছেড়ে সরে আসতে হয় ইনফিল্ডারদের; উপরন্তু, পিচ্টা কে তুলবে, তা নিয়ে দ্বিধা দেখা দেয় ফিল্ডারদের মাঝে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত এডভান্স করতে পারে বেস রানাররা।
#শর্টস্টপ: বেসবলে শর্টস্টপ একটি বিশেষ ফিল্ডিং পজিশন যার অবস্থান সেকেন্ড ও থার্ডবেসের মাঝখানে। বেশীরভাগ ব্যাটার বা হিটার ডানহাতি হয়ে থাকে, এবং ডানহাতি ব্যাটারের পেটানো পিচ সাধারণত সেকেন্ড ও থার্ড বেসের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শর্টস্টপের কাজ হলো ডানহাতি ব্যাটারের ব্যাটিং এক্সপেরিয়েন্স খানিকটা বিষিয়ে দেয়া! সোজা কথায়, ব্যাটারকে সাবধান করা, যে, “চাঁদ, তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে ফাঁকি দিতে পারবে তোমার পিচ, তাহলে ভুল করছ! অতএব বুঝেশুনে পেটাও, বাপু!”   এজন্য শর্টস্টপকে প্রচন্ড দ্রুতগতির একজন প্লেয়ারও হতে হয় বটে, তাছাড়া ট্রিপল, এবং ডাবল্ প্লে তে শর্টস্টপের বড় ভূমিকা রয়েছে।
#ব্যাটারী: বেসবলে ব্যাটারী বলতে পিচার এবং ক্যাচারের পার্টনারশিপ কে বোঝানো হয়। উল্লেখ্য যে, ক্যাচারের নির্দেশ অনুযায়ী পিচ করে পিচার, যেটার ওপর ফিল্ডিং দলের ফলাফল অনেকটাি নির্ভর করে। তাই এই পার্টনারশিপকে ফিল্ডিং টিমের সঞ্জীবনী শক্তি হিসেবে ধরা হয়।
#বুলপেন: খেলায় নামার আগে পিচারদের ওয়ার্ম-আপ হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট এরিয়া হচ্ছে বুলপেন। আমাদের সম্মানিত পিচারের বড়ই প্রিয় জায়গা এই বুলপেন! :’)
# বেসবল ম্যাচের ধারাভাষ্য বিবরণকারীদের বলিং এর অবস্থা বিবরণের সময় মাঝে মাঝে “1-2”, “2-3” বলতে শোনা যায়। প্রথম সংখ্যাটা দ্বারা “বল”, এবং দ্বিতীয় সংখ্যাটা দ্বারা “স্ট্রাইক” এর সংখ্যা বোঝানো হয়। যেমন: “2-2” মানে হচ্ছে 2 “বল” 2 “স্ট্রাইকস্”।
# ডাবল্ প্লে এর বর্ণনার সময় ধারা বিবরণকারীরা “6-4-3 ডাবল্ প্লে”, বা “5-4-3 ডাবল প্লে” বলে থাকে; এর অর্থ হলে এ সকল জার্সি নম্বরের প্লেয়ারদের দ্বারা খেলাটা সংঘটিত হয়েছে। যেমন: “6-4-3 ডাবল্ প্লে” কথাটার অর্থ হলো, ব্যাটারের পেটানো পিচ গড়িয়ে সোজা শর্টস্টপের (জার্সি 6) হাতে ধরা খেয়েছে, শর্টস্টপ সে পিচ সেকেন্ড বেসম্যানের (জার্সি 4) হাতে ছুড়ে দিয়েছে, অর্থাৎ ফার্স্ট থেকে সেকেন্ড বেসের দিকে দৌড়াতে থাকা ব্যাটার আউট। সেকেন্ড বেসম্যান আবার সে পিচ ফার্স্ট বেসম্যানেে (জার্সি 3) দিকে ছুড়ে দিয়েছে, মানে হোম বেস থেকে ফার্স্ট বেসের দিকে দৌড়াতে থাকা ব্যাটার আউট, অর্থাৎ ডাবল্ প্লে।
বিভিন্ন ধরণের পিচ:
পিচার কতটা ভালো পিচ, কতটা কন্ট্রোলের সাথে এবং ব্যাটারের জন্য কতটা কঠিন করে ছুড়তে পারে, তার ওপর ফিল্ডিং টিমের সাফল্য অনেকখানিই নির্ভর করে। এস অফ ডায়ামন্ডের মেইন প্রোটাগনিস্ট যেহেতু একজন পিচার, বিভিন্ন ধরণের পিচ সংক্রান্ত আলোচনা প্রায়ই চলে আসবে এনিমেতে। কিন্তু, বেসবলে পিচের ধরনসংখ্যা অনেক, এতগুলো নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। তাই মোটামুটি কমন কতগুলো পিচ নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি।
একটা পিচ কে বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করে অনেকগুলো সংজ্ঞায় ফেলানো যায়। হাতে পিচ ধরার বা গ্রিপিংয়ের স্টাইল, ছোড়ার স্টাইল, গতি, ইত্যাদির ভিত্তিতে প্রধানত তিন ধরণের পিচ বেশী দেখা যায়:
#ফাস্টবল: ফোর-সিম, টু-সিম, কাটার, স্প্লিটার, ফর্ক।
#ব্রেকিং বল: কার্ভ, স্লাইডার, স্ক্রু।
#চেঞ্জআপ।
ফাস্টবল হচ্ছে সবচেয়ে কমন পিচ, প্রায় সব পিচারেরই প্রথম আয়ত্ত করা পিচ ফাস্টবল। নামের মতই, প্রচন্ড গতিতে ছোড়া হয় এই পিচ, গতিই এর অস্ত্র। বেগের পরিবর্তন এবং ধরার ভঙ্গির ভিত্তিতে কয়েক ধরণের ফাস্টবল রয়েছে। আমাদের Eijun এর বহুল ব্যাবহৃত একটা পিচ হচ্ছে টু-সিম ফাস্টবল, তথা মুভিং ফাস্টবল; প্লেটের ওপর বেশ নড়াচড়া করে এই পিচ, এবং দূরত্বের সাথে সাথে গতি বৃদ্ধির কারণে ব্যাটারের পক্ষে টাইমিং করা মুশকিল।
ব্রেকিং বল হচ্ছে সেই পিচ যেটা চলার সময় এর গতিপথ থেকে যেকোন দিকে ভেঙ্গে যায় বা বেঁকে যায়। গতিপথ থেকে টার্ন নিলে স্বাভাবিকই পিচের গতিতেও প্রভাব পড়ে, তাই ব্যাটারের জন্য এ পিচ ব্যাটিং করা যেমন কঠিন, তেমনি ক্যাচারের জন্যও এ পিচ ক্যাচ করা কঠিন। গ্রিপ, গতির পরিবর্তন এবং বেঁকে যাওয়ার দিকের ভিত্তিতে কার্ভ, স্লাইডার, স্ক্রু ছাড়াও আরেকটি ব্রেকিং বল হচ্ছে স্লার্ভ।
চেঞ্জআপ হচ্ছে এমন একধরণের পিচ, যেটা পিচারের হাত থেকে ছোড়ার মুহুর্তে দেখতে ফাস্টবল বলে মনে হয়, কিন্তু প্লেটের ওপর পিচের গতি নেমে যায়, এবং অনেক ধীরে এগিয়ে আসে বল। বেসিক ফাস্টবল গ্রিপ আর চেঞ্জআপের গ্রিপের মধ্যে পার্থক্য হলো; চেঞ্জআপের সময় আঙ্গুলের ডগার বদলে হাতের অনেকটা ভেতর থেকে ছোড়া হয় পিচ, ফলে সেটা দেখতে ফাস্টবলের মত মনে হলেও আসলে ফাস্টবলের তুলনায় খানিকটা পরে মুক্ত হয় পিচারের গ্রিপ থেকে, যেহেতু হাতের ভেতর থেকে মুক্ত হতে খানিকটা সময় লাগে। মানুষের চোখ এ পার্থক্য ধরতে পারে না, কারণ একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে না আসলে চোখ দিয়ে প্রচন্ড বেগে চলন্ত বস্তুর গতি ঠাওর করা যায়না। পিচ প্লেটের কাছাকাছি আসার পর বোঝা যায় যে সেটার গতি আসলে ফাস্টবলের তুলনায় বেশ ধীর, কিন্তু ততক্ষণে ব্যাট সুইং করে ফেলে ব্যাটার, কিন্তু পিচ আসে আরও পড়ে। ঠিকভাবে ছোড়া গেলে একটি চেঞ্জআপ তাই ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করতে বাধ্য, বিশেষত সেটা যদি হয় আমাদের সম্মানিত পিচারের চেঞ্জআপ! :’) ব্যাটার তো ব্যাটার, এমনকি আমাদের জিনিয়াস ক্যাচারসহ ফিল্ডে এবং গ্যালারিতে উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষ জিনিসটা দেখে বিভ্রান্ত হবেই হবে! XD
এই তো, আর কি! :’) পাঠকের বেসবল বোঝার জন্য প্রয়োজন হতে পারে, এমন সকল বিষয় সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছেন আশা করি! :’) এবার থিওরি ইন প্র্যাকটিকাল দেখতে চাইলে দেখে ফেলুন দাইয়া নো এস!
সকল তথ্যই কয়েকবার করে চেক করে শেয়ার করা হয়েছে, তারপরও কোনো তথ্যে ভুল পাওয়া গেলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সঠিক তথ্য শেয়ার করলে কৃতজ্ঞ থাকব। পোস্টটা পড়ে যদি পাঠক দাইয়া নো এস দেখতে প্রলুব্ধ হন…থুড়ি, মানে উপকৃত হন, তো আমার পরিশ্রম স্বার্থক। :’D
ধন্যবাদ সবাইকে!
বি:দ্র: পোস্টের ভীতিকর সাইজের জন্য লেখিকা ক্ষমাপ্রার্থী, এর চেয়ে ছোট করা সম্ভব বলে মনে হয়নি।

Yuri!!! on ICE [রিএকশন/মিনি রিভিউ] — Mithila Mehjabin

yuri-on-ice

রিএকশন(এপি ১-৩)+মিনি রিভিউ
Yuri!!! on ICE
জনরা: স্পোর্টস
স্ট্যাটাস: অনগোয়িং

এনিমেটার প্রথম পোস্টার দেখে আহামরি কিছু হতে পারে, তা ঘুনাক্ষরেও মনে হয়নি। অথচ গত রাত থেকে এনিমেটার প্রথম তিনটা পর্ব তিনবার করে দেখা শেষ, প্রতিবারই এনিমে স্টার্ট করার আগে ওপেনিং শুনতে শুনতে কান দিয়ে ধোয়া বের হওয়ার আগ পর্যন্ত শুনে গেছি, এত বেশী শুনেছি যে ঘুমের ভেতরেও মাথার ভেতর বাজছে গানটা, বিরক্ত হয়ে ভোর চারটা সময় উঠে পড়তে বাধ্য হই!

ইয়ুরি অন আইস- নামটাই গড়বড়ে!  এনিমের মধ্যে না তো ইউরি আছে না ইয়াওই, ফ্যানসার্ভিস আছে যদিও, এবং ভালো পরিমাণেই আছে! সাবজেক্ট: ফিগার স্কেটিং। সোজা কথায় বরফের ওপর স্পেশাল ধরণের জুতা পড়ে পিছলিয়ে যে নাচ বা খেলা।
ম্যালের মতে, স্টুডিও মাপ্পা’র (MAPPA) চার বছর ধরে প্ল্যান করা অরিজিনাল একটি সিরিজ এটি। ক্রিয়েটর মিত্সুরো কুবো এবং ডিরেক্টর সায়ো ইয়ামামোতো সিরিজ প্ল্যানিং এর আগে রাশিয়া, বার্সেলোনা ও বেইজিং ঘুরে এসেছেন লোকেশন হান্টিং এর জন্য। ক্যারেক্টার ডিজাইনারদের একজন তাদাশি হিরামাত্সু, পরিচিত Parasyte: The Maxim এর ক্যারেক্টার ডিজাইনিংয়ের জন্য, এনিমের মেইন ক্যারেকটার: কাত্সুকি ইউরি কে দেখলেই ইযুমি শিনিচি’র কথা মনে হয়। ওপেনিং থিম “History Maker” গেয়েছেন ডীন ফুজিওকা, এই মাল্টিলিংগুয়াল মডেল, অভিনেতা ও গায়কের গাওয়া ওপেনিংটা সম্পূর্ণ চমৎকার ঝরঝরে ইংরেজীতে!  সাসুগা…ইকেমেনদের জন্য গাওযা ওপেনিং এর গায়কও একজন ইকেমেন!

গল্পের শুরু কাত্সুকি ইউরি’কে নিয়ে, যার ফিগার স্কেটার হওয়ার স্বপ্নের উদ্যোক্তা পরপর পাঁচ বার গ্র্যান্ড প্রিক্স ফাইনাল জেতা ২৭ বছর বয়সী রাশান স্কেটার ভিক্টর নিকিফরভ্! ছোট থেকে দেখে আসা স্বপ্নের পথ ধরে গ্র্যান্ড প্রিক্সে আসার সুযোগ পেলেও সেটা ধরে রাখতে পারে না কাত্সুকি, প্রচন্ড পরিশ্রমের পরও প্রেশারের কাছে পরাজিত হয় সে, এবং জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড প্রিক্স এ শেষ স্থান পাওয়ায় তার ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়! শেষমেষ সবকিছু ছেড়েছুড়ে, ফিগারের বারোটা বাজিয়ে আপাতত জাপান ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ও, বাস্তবতার হাত থেকে পালিয়ে!

পাচঁ বছর পর বাড়ী ফিরলেও মন ভালো নেই কাত্সুকি’র, শুয়ে-বসে ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে বিরক্ত কাত্সুকি অবশেষে ঘর থেকে বেরোয়, উদ্দেশ্য: ছেলেবেলার স্মৃতিঘর হাসেত্সু আইস ক্যাসেল। ফিগার স্কেটিংয়ের শুরু এখান থেকেই, প্রবেশ করতেই দেখা হয় ছেলেবেলার স্কেটিং সঙ্গীনী ইউ-চান এর সাথে! দুবছরের সিনিয়র মেয়েটি ছিল তার অনুপ্রেরণার আরেক অন্যতম উৎস্য। অফিশিয়াল স্কেটিং থেকে আপাত অবসর নিলেও পঞ্চম গ্র্যান্ড প্রিক্সে ভিক্টরের পারফর্ম করা ডান্স টা আয়ত্ত করেছে ও, ইউ-চান কে দেখাবে বলে। বরফের উপর ভিক্টরের পারফর্ম করা নাচটা পারফর্ম করছে কাত্সুকি, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে ইউ! কি মনে হয়..একটি প্রেমের সূচনা?
মোটেই না, ইউ যখন মুগ্ধ হয়ে কাত্সুকির নাচ দেখছে, তার তিনি বদের হাড্ডি আশেপাশেই কোথাও লুকিয়ে ভিডিও করছে নাচটির!  গোলগাল তিনটে বাচ্চা, জামাই নিশিগোরিও কাছাকাছিই আছে কোথাও!

রিইউনিয়ন ও খুনসুটির পর বাড়ী ফিরে নানান ভাবে ক্লান্ত কাত্সুকি মেসেজ পায় নিশিগোরির কাছ থেকে, খবর হলো: নাচটার ভিডিও অনলাইনে আপলোড করে দিয়েছে তার তিন সুকন্যা! 😀 ব্যাস, আর যায় কই! হাজার হাজার বার রিটুইট হয়ে পৌছে যায় ভিডিওটি স্বয়ং ভিক্টর নিকিফরভের কাছে! তারপর?

তারপর কি হয় জানতে চাইলে দেখতে হবে!  

এনিমেটা সম্বন্ধে প্রথমেই যা বলতে হয়, তা হলো মনোমুগ্ধকর এনিমেশন! এবং যেনতেন ধরণের মনোমুগ্ধকর না, দম বন্ধ করা মনোমুগ্ধকর!  বিশেষ করে ওপেনিংয়ে তাদের ডান্সগুলো দেখলে ঘন্টাখানেক আর অন্য কিছুই দেখতে মন চাইবে না! প্রধান তিনটে ক্যারেকটার রুপোলী চুল ও নীল চোখের ভিক্টর নিকিফরভ, শিনিচির ছোট, হ্যান্ডসাম ভাই কাত্সুকি ইউরি আর সোনালী চুল ও সবুজ চোখের গর্জিয়াস লুকিং পাঙ্ক ইউরি পিলসেতস্কি! ক্যারেক্টার ডিজাইন ছাড়াও লাইট রেফলেকশন, কস্টিউম, ডান্স-কোরিওগ্রাফি আর সং চয়েসে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে মাপ্পা!  নীলাভ সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডটা দারুণ ভাল্লাগে!  ভিএ হিসেবে আছেন ভিক্টর, কাতসুকি আর পিলসেতস্কির জন্য যথাক্রমে জুনিচি সুয়াবে, তোনিশি তোয়োনাগা, কোউকি উচিয়ামা।

স্টোরিটা দারুণ আগাচ্ছে, লেটেস্ট তিন নম্বর এপিসোডটা চমৎকার ছিল!  হালকা ফ্যানসার্ভিসটা, এইরকম একটা স্পোর্টের ক্ষেত্রে তেমন বেমানান কিছু লাগে না। খালি অনসেন-সিনগুলোর সময় ভিক্টরের অস্তিত্বের কথা মাথা থেকে বাদ রাখলেই হয়, দৃশ্যত আর কোনো সমস্যা নেই কোথাও….এখনও পর্যন্ত!  আইস-স্কেটিং বিষয়ে শূণ্য জ্ঞানহীন আমি ইউটিউবে মেন’স ফিগার স্কেটিং সার্চ দিয়ে যে ভিডিওই পাই, কমেন্টবক্সে ইউরি অন আইসের জয়জয়কার!

অনগোয়িং এনিমেটার তিনটে এপিসোড এসেছে এই পর্যন্ত, কত এপিসোডের হবে তা এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি ম্যাল এ। ডাবের এনাউন্সমেন্ট দিয়েছে ফানিমেশন, অক্টোবর ২৪, ২০১৬ অর্থাৎ আগামীকাল ইস্টার্ন টাইম অনুযায়ী রাত ১০ টায় প্রথম এপিসোডের ডাব রিলিজ হওয়ার কথা রয়েছে। *-*

মিনি রিভিউ বলেছিলাম, কিন্তু এরচেয়ে বড় রিভিউ দেয়া আদৌ পসিবল কি না, জানি না!  বালিকার উচ্ছাস কে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল!

আমার কাছে যে অসাধারণ লেগেছে তা নতুর করে বলা বাহুল্য, এবং আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে বলে সবার কাছেই অসাধারণ লাগবে- এরকম হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু অন্তত ওপেনিংটা দেখুন, এবং নিজেরাই বিচার করুন দেখবেন কি দেখবেন না! ওপেনিংটার কথা আলাদা করে বলতেই হয়, ম্যাল অনুযায়ী আমার দেখা এনিমের সংখ্যা মাত্র ১৪১ টা, সেই হিসেবে আহামরি অনেক ওপেনিং দেখা বা শোনা আছে, এটা বলা যায় না। কিন্তু এই ওপেনিংটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। বেস্ট বলে না, ওয়ান অফ আ কাইন্ড বলে। এরকম অভিভূত করা একটা ওপেনিং সচরাচর চোখে পড়েনা বলেই আমার মনে হয়েছে!  জাপানীজ একজন লোক এরকম শুদ্ধ ইংরেজী উচ্চারণ করতে পারে, না শুনলে বিশ্বাস করাই মুশকিল! এরইমধ্যে এক মিলিয়নের বেশী ভিউ পড়েছে ওপেনিং ভিডিওটিতে, চেক করে আসতে পারেন নিচের লিঙ্কটি থেকে:

 

ভালো এনিমেটা ভালোভাবে শেষ হলে বছরের অন্যতম সেরা এনিমেগুলোর একটি হলেও হতে পারে!  সবাইকেই দেখার অনুরোধ থাকবে!

সকল তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া এবং মাইএনিমেলিস্ট।

yuri-on-ice-2

Yuri!!! on Ice: ফিগার স্কেটিংয়ের ওয়ান-টু-থ্রী! — Mithila Mehjabin

Yuri on Ice দেখার আগে দুনিয়াতে ফিগার স্কেটিং বলে কিছু আছে, তাই জানতাম না! :’) ফিগার স্কেটিং বলতে আইস স্কেটিং বুঝতাম, যার মানে তলা পিছলা জুতা পড়ে বরফের ওপর স্লিপ কাটা! 😐 এবং সেটা যে একটা অফিশিয়াল স্পোর্টস্, সেটাও জানতাম না! ইয়ুরি নিয়ে বিন্দুমাত্র এক্সপেক্টেশন ছিল না, কিন্তু এই জিনিস যে এরকম যাদু করে ছাড়বে, তা কে জানত? >\\\<
ফিগার স্কেটিং বলি বা আইস স্কেটিং বলি, এর ইতিহাস অনেক পূরোনো, এ নিয়ে বেশী কিছু বলার ইচ্ছে নেই আমার। আন্তর্জাতিক ভাবে ফিগার স্কেটিং প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৯৬ সাল থেকে, এবং সেটা অলিম্পিকের অংশ হয় ১৯০৮ সাল থেকে। সেই থেকে হাজারো উথান-পতন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলে এসেছে ফিগার স্কেটিং, কিন্তু এর সৌন্দর্যতা এখনও মলিন হয়ে যায়নি! :’)
এবং ফিগার স্কেটিংয়ের এই জটিল সৌন্দর্যতাকে এনিমেশনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার সাহস দেখিয়েছে মাপ্পা, এবং ভালোই মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছে এখন পর্যন্ত! 😀 আমরা দর্শকরাও ভালোই এঞ্জয় করছি! কিন্তু এনিমেটা যেখানে স্পোর্টস্, বারবার সানকাইতেন (আক্ষরিক অর্থ: তিনবার ঘোরা) টো লুপ, বা ইয়োনকাইতেন (চারবার ঘোরা) সালকো বলছে কমেন্টর, আমরা আদৌ কি কোনো পার্থক্য বুঝতে পারছি দুটার মধ্যে? :3 স্কেটার বাতাস উড়াল দিয়ে দুইবার কি তিনবার কি চারবার ঘোরে…এটুকুই বুঝতে পারছি আমরা! XD এবং ইউরি জাম্প মিস করে আছাড় খেলে “এই গেলো গেলো!” বলে মাথায় হাত দিয়ে বসার পর যখন দেখি ভালো মার্কস পেয়ে প্রথম হচ্ছে, তখন নিজেকে বেকুব ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছেনা! :v
কিন্তু ফিগার স্কেটিং শুধু জাম্পস না, অনেক জটিল এলিমেন্টস এর সমন্বয়, এবং এটা শুধু স্পোর্টস্ই না, তার সাথে আর্ট এবং এক্টিংয়ের একটি সুন্দর সমাহার! :’) আমরা ভিউয়ার্সরা না বুঝেই জাজ করতে যাই এটাকে স্পোর্টস ভেবে, এবং পার্ফর্মাররাও সবসময় নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়, কিন্তু পাশাপাশি তার পার্ফর্মেন্স আনন্দদায়কও হতে হবে! সেই সেন্সে বর্তমানে ফিগার স্কেটিঙটা একটা আর্টিস্টিক স্পোর্টস্ অবস্থায় বিরাজ করছে, যেখানে শুধু তার টেকনিকাল ক্যাপাবিলিটি না, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, এক্সপ্রেশন, দর্শককে বিনোদিত এবং চমকিত করার ক্ষমতা, সবই নাম্বার বহন করছে, এবং এ সবকিছু হিসেব করেই নাম্বারিং করা হয় একজন স্কেটারকে, এবং এখানেই ফিগার স্কেটিংয়ের সৌন্দর্যতা এবং সাফল্য! 🙂
তাই এই সোন্দর্যতাকে উপলব্ধির স্বার্থে, এবং এনিমেটাকে পুরোপুরি এনজয়ের স্বার্থে, চলুন জেনে আসি কিছু ব্যাপার! 3:) ^_^
ফিগার স্কেটিং, যেখানে আইস রিংকে প্রবেশ করার পর থেকে স্কেটারের সবকিছুই জাজ করা হয়। শুধু জাম্পস বা এলিমেন্টস না, জাজ করা হয় তার কস্টিউম, কোরিওগ্রাফি, ট্রানজিশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, ফুটওয়ার্ক, এক্সপ্রেশন, প্রেজেন্টেশন এবং এলিমেন্টস। সবকিছুর একটা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছি! 🙂 বর্ণনায় সঙ্গতি রক্ষার স্বার্থে শব্দ বা টার্মসগুলোকে ইংরেজীতেই ব্যাবহার করা হয়েছে, বোঝার সুবিধার্থে যথাসম্ভব অর্থটা মাথায় রাখার জন্য নিম্নের বিশ্লেষন:
এলিমেন্টস- উপাদান।
কম্পোনেন্ট- কাঠামো উপাদান।
কোরিওগ্রাফি- নৃত্যবিন্যাস বা নাচের পরিকল্পনা।
ফুটওয়ার্ক- পায়ের ব্যাবহার
ট্রানজিশন- রূপান্তর (অঙ্গভঙ্গির এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তন।
রোটেশন/রেভোলুশন- ঘূর্ণন বা ঘোরা।
টো পিক- পায়ের পাতার আঙ্গুল বা অগ্রভাগ।
এড্জ- কিনারা।
টেকঅফ- মাটি ত্যাগ করা।
ল্যন্ডিং- মাটিতে নামা।
হাইট কাভারেজ- অতিক্রান্ত উচ্চতা বা যতটুকু উচ্চতায় জাম্প করা যায়।
ডিসট্যান্স কাভারেজ- অতিক্রান্ত দূরত্ব, বা জাম্পের সময় যতটুকু দূরত্ব পার করা হয়।
মেন্স সিঙ্গেল- ছেলেদের একক পার্ফরমেন্স।
ইউরি অন আইস যেহেতু মেন্স সিঙ্গেল নিয়ে, তাই এখানে যা কিছু বলা হয়েছে সবকিছু ছেলেদের প্রতিযোগিতার নিয়ম মাথায় রেখেই। লেডিজ সিঙ্গেল, পেয়ার স্কেটিং, আইস ডান্স এবং সিনক্রোনাইজ স্কেটিংয়ের নিয়মে খানিকটা ভিন্নতা আছে।
কম্পিটেটিভ ফিগার স্কেটিং দুটো সেগমেন্টের সমন্বয়, যে দুটির একটি হলো শর্ট প্রোগ্রাম, অপরটি লং প্রোগ্রাম বা ফ্রি স্কেট। শর্ট প্রোগ্রামের সময়সীমা আড়াই মিনিট এবং লং প্রোগ্রামের সাড়ে চার মিনিট। এই দুটি সেগমেন্টের মার্কের সমন্বয়ে স্কেটারের টোটাল মার্ক নির্ধারিত হয়।
এলিমেন্টস:
ফিগার স্কেটিংয়ে প্রধান এলিমেন্ট বলতে যেটা বোঝায়, সেটা হলো জাম্পস।
একেকটা জাম্পকে আমরা বেসিকালি তিনটা জিনিসের সমন্বয় ভাবতে পারি, যেগুলো হলো: টেকঅফ, রোটেশন এবং ল্যান্ডিং। এখন জাম্পগুলোর পার্থক্য কোথায়? সহজ উত্তর হচ্ছে এক্সেকিউশন সিস্টেমে।
দুধরণের এক্সেকিউশন সিস্টেমের একটি হলো টো জাম্প, যেখানে জুতোর সামনের অংশে দিয়ে বরফে খোঁচা মেরে গতিতে ব্রেক সৃষ্টির মাধ্যমে জাম্প করা হয়। আরেকটি হলো এড্জ জাম্প, যেখানে হাটু ভেঙে প্রেসারের বিপরীতে লাফ দেয়া হয়, অনেকটা স্প্রিং এর মত। ফিগার স্কেটিং বিশ্বে এই দুধরণের এক্সেকিউশন সিস্টেমের আন্ডারে মূলত ছয়রকমের জাম্প সবচেয়ে বেশী পরিচিত। তিনটা টো জাম্প হলো: টো-লুপ, ফ্লিপ এবং লুটয্। তিনটি এড্জ জাম্প হলো: সালকো, লুপ এবং এক্সেল। এখন কথা হলো, একই নিয়মে করা প্রতিটা জাম্পকে আলাদা করা হয় কিভাবে? যেমন: ফ্লিপ, টো-লুপ, লুটয্, তিনটাই টো জাম্প, তাহলে ডিফারেন্স টা কোথায়? উত্তর টা হচ্ছে, এড্জ, বা ব্লেডের কিনারার ব্যাবহারে, ল্যান্ডিং এবং টেকঅফে যেটার ভূমিকা বিশাল!
জাম্প বোঝার আগে আমরা স্কেটিংয়ের জন্য ব্যাবহৃত জুতোগুলোর দিকে মনোযোগ দিই। স্কেটিংয়ের জুতাগুলোর নিচে ব্লেড লাগানো থাকে, এটা এখন আমরা সবাই জানি। এই ব্লেড গুলোর কারণেই বরফের ওপর যেকোনোদিকে ভর দিয়ে গ্লাইড করা যায়। ব্লেডের সামনের দিকটায় দাতের মত খাজ কাটা থাকে গতিতে ব্রেক আনার জন্য বা বরফে খোঁচা মেরে টো জাম্পের জন্য। পাশাপাশি দুই পায়ের নিচে দুই জুতার দুটো ব্লেডের মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশের দিকে যে কিনারা তাকে বলে ইনসাইড এড্জ বা ভেতরের কিনারা। দুই জুতোর ভিতরের কিনারা দুটি পরপস্পরের দিকে মুখ করে থাকে। আর ব্লেডের বাইরের অংশের দিকের কিনারা, যেক্ষেত্রে দুই জুতোর দুই কিনারা বিপরীতমুখী, তাকে বলে আউটসাইড এড্জ বা বাইরের কিনারা। স্কেটার যেকোনো দিকে ভর দিয়ে বা কাঁত হয়ে এড্জ পরিবর্তন করতে পারে। টেকঅফে বিভিন্ন জাম্পের জন্য বিভিন্ন সাইডের এড্জ ব্যাবহৃত হলেও ল্যান্ডিংয়ে সাধারণত আউটসাইড ব্যাক এড্জ ব্যাবহার করা হয়, অর্থাৎ স্কেটার পায়ের পেছনের অংশে ভর দিয়ে ব্লেডের বাইরের কিনারার দিকে কাঁত হয়ে ল্যান্ডিং করে। শুধু এক্সেল জাম্পে টেকঅফের সময় ফরোয়ার্ড বা সামনের দিকের এড্জ ব্যাবহার করা হয়, যার কারণে এক্সেল জাম্পে একটি এক্সট্রা হাফ রেভোলুশন পাওয়া যায়, এবং এজন্য সবগুলো জাম্পের মধ্যে এক্সেল যথেষ্ট কঠিনও বটে। অবশ্য কার কাছে কোনটা কঠিন, সেটা একেকজনের জন্য একেকরকম, যেমন ইউরি এক্সেল ভালোই করতে পারে, খালি সালকো’র বেলায়ই আছাড় খায়! :'( আবার ইউরিওর কাছে সালকো হোক বা এক্সেল হোক, সবই ডালভাত! টেকঅফ ও ল্যান্ডিংযের সময় এই এড্জ এর ব্যাবহারের দিকে লক্ষ রেখেই জাম্পগুলোর পার্থক্য এবং স্কোরিং করা হয়, এবং যেখানে যে এড্জ ব্যাবহার করার কথা, তা না করে অন্য কোনো এড্জ ব্যাবহার করলে এড্জ ভায়োলেশনের জন্য পয়েন্ট ডিডাকশন হতে পারে।
জাম্পের সময় বাতাসে যে কয়বার ঘোরা হয়, তা সেই জাম্পের নামের সাথে যোগ করা হয়, দুবার ঘুরলে ডাবল্, তিনবার ঘিরলে ট্রিপল্ এবং চারবার ঘুরলে তাকে কুয়াড্রুপল বা কোয়াড বলা হয়। মেন্স সিঙ্গেলে স্কেটাররা সাধারণত ট্রিপল্ এবং কুয়াড্রুপল্ জাম্পের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে, কারণ রেভোলুশন বেশীর জন্য পয়েন্টও বেশী।
পরপর কয়েকটা জাম্প করা হলে তাকে বলে কম্বিনেশন জাম্প। এড্জ এর জাম্পগুলো সাধারণত পারফর্ম করা মুশকিল, তাই কারও প্ল্যানিংয়ে কম্বিনেশন জাম্প থাকলে সে সাধারণত একটি এড্জ জাম্পের পর একটি টো জাম্প পারফর্ম করে, যেমন: প্রথমে সালকো করা হলে ঠিক পরেরটা হতে পারে টো-লুপ।
তারপর আসি স্পিন এর কথায়! 😀
স্পিন হচ্ছে যখন স্কেটার পায়ের ওপর ভর দিয়ে বরফের ওপর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘোরে। সেটা দুপায়ে অথবা একপায়ে হতে পারে, পায়ের মাঝখান এবং আঙ্গুলের মধ্যবর্তী অংশে ভর দিয়ে ঘোরা হয়। বাঁ পায়ে ভর দিয়ে বাম থেকে ডানে ঘোরাকে বলে ফরোয়ার্ড অথবা ফ্রন্ট স্পিন, আর ডান পায়ে ভর দিয়ে ডান থেকে বামে ঘুরলে সেটা হলো ব্যাক স্পিন। স্পিন শুরুর আগে ছোট্ট একটা জাম্প দিয়ে নিলে সেটাকে বলা হয় ফ্লাইং স্পিন। এই তিন ধরণের সিস্টেমের আন্ডারে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যাবহার, রোটেশন, এড্জ, দাড়ানো বা বসার ভিত্তিতে একেক ধরণের স্পিনকে কম করে হলেও দশ ভাগে ভাগ করা যায়!
অনেকটা কম্বিনেশনের জাম্পের মতই, একই স্পিন এ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন, এড্জ বা রোটেশনের পরিবর্তন…অর্থাৎ একই এটেম্পটে পরপর বিভিন্ন ধরণের স্পিন পারফর্ম করাকে বলা হয় কম্বিনেশন স্পিন। কম্বিনেশন স্পিন এবং জাম্প, দুটোই ভারী মার্ক আনতে সক্ষম।
স্পিন এবং জাম্প ছাড়াও স্টেপ সিকুয়েন্স এবং কম্পালসরি ফিগারও ফিগার স্কেটিংয়ের দুইটি আবশ্যক এলিমেন্ট। স্পিন এর মতই, বিভিন্ন ধরণের স্টেপ সিকুযেন্স এবং কম্পালসরি ফিগার আছে। যেমন: পাঁচ নম্বর এপিসোডে ইউরির স্কেটিংয়ের সময় আমরা ভিক্টরকে ইনা বাউয়ার (Ina Bauer), এবং স্প্রেড ঈগল (Spread Eagle) এর কথা বলতে শুনি। স্প্রেড ঈগল হলো কিছুটা দুই পায়ের পাতা দুদিকে ছড়িয়ে দেয়ার ভঙ্গি, যেখান দুপায়ের গোড়ালী একে অপরের দিকে মুখ করে থাকে, এবং দুপায়ের সম্মুখভাগ তথা আঙ্গুল থাকে পরস্পরের থেকে সবচেয়ে দূরে। স্কেটার যেকোন সাইডের এডজ ব্যাবহার করে স্প্রেড ঈগল পারফর্ম করতে পারে। ইনা বাউয়ার ঠিক স্প্রেড ঈগল এর মতই, শুধু এটার বেলায় হাটু ভেঙে করা হয়। ভালো করে বোঝার জন্য পঞ্চম এপিসোডে ইউরির করা স্প্রেড ঈগল আর ইনা বাউয়ার দেখলেই পার্থক্য টা পরিষ্কার বোঝা যায়।
স্পাইরাল হচ্ছে যখন এক পায়ের ওপর ভর দিযে পুরো শরীর কে বিভিন্নভাবে বাঁকিয়ে ফেলা পজিশন, সাধারণত কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত সামনের দিকে বাকিয়ে দুহাত ও এক পা ছড়িয়ে দিয়ে পাখির ওড়ার মত করে পজিশন নিয়ে এক পা দিয়ে স্কেট করা হয়। এটাতেও, যেকোন এড্জ ব্যাবহার করতে পারে স্কেটার। ইউরি অন আইস এর পারফর্মেন্সে ইউরিকে আমরা স্পাইরাল করতে দেখেছি।
এ তিনটা ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকমের অনেক স্টেপ সিকুয়েন্স এবং কম্পালসরি ফিগার রয়েছে।
কস্টিউম, সং এবং থিম:
ফিগার স্কেটিংকে একটা আর্টিস্টিক স্পোর্টস হিসেবে ধরা হয়, এখানে স্কেটারের টেকনিকাল এ্যাসপেক্টক গুলো যতটা মূল্য বহন করে, তারচেয়ে বেশী মূল্য বহন করে দর্শককে চমকিত বা বিনোদিত করতে পারার ক্ষমতা! তাই কস্টিউম, সং চয়েস এবং থিম একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বৈ কি!
কম্পিটিশন ফিগার স্কেটিংয়ের কস্টিউম সাধারণত চাকচিক্যময় ও দৃষ্টিনন্দন হয়। পোশাকের ডিজাইন স্কেটার নিজেও করতে পারে অথবা প্রফেশনাল ফ্যাশন ডিজাইনারকে দিয়েও করাতে পারে। স্কেটিংয়ের জন্য ডিজাইনকৃত কস্টিউম অনেক এক্মপেন্সিভ হয় এর উপর ক্রিস্টালের ব্যাবহারের কারণে। এসব ক্রিস্টাল হাতে বসাতে হয়, যাতে প্রচুর সময় লাগে।
মেন্স ফিগার স্কেটিংয়ে কস্টিউম রুল একটাই, সেটা হলো ট্রাউজার থাকতে হবে, কোনোপ্রকার টাইট্স বা অন্য কিছু পড়া যাবে না। তারমানে এই না যে শুধু ট্রাউজারই পড়বে, গায়ে কিছু থাকতে হবে বৈ কি! এরেঞ্জাররা সবসময়ই চায় স্কেটারের পোশাক দৃষ্টিনন্দন, কিন্তু পরিশীলীত হোক। সুন্দর পোশাকে সুন্দর প্রেজেন্টেশনে সহায়ক, কস্টিউম রুল ব্রেক করলে পয়েন্ট ডিডাকশন হতে পারে।
ফিগার স্কেটিং সং চয়েসে সাধারণত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু স্কেটারকে সং এর টেম্পোর সাথে তাল মিলিয়ে প্রেজেন্টেশন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। আগে কম্পিটিটিভ স্কেটিংয়ের সং এ লিরিক্স এলাউড ছিল না, সম্প্রতি লিরিক্স এলাউ করেছে ISU।
থিম বা টেম্পো হল স্কেটারের আর্টিস্টিক ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, যার মাধ্যমে সে কোনো না কোনো ধরণের ইমোশন ডেলিভার করতে চায়। সং এর ফিলিং এবং বিট এর সাথে মিল রেখে থিম ঠিক করা হয়, অথবা যেধরণের থিম এ পারফরমেন্স করতে চায় স্কেটার, সেধরণের থিম অনুযায়ী সং সেলেকশন হয়ে থাকে। ভালো প্রেজেন্টেশন এবং দর্শককে বিনোদিত করার জন্য একটা সুন্দর থিমের তুলনা নেই!
এবার আসি ফিগার স্কেটিঙয়ের গভর্নিং বডি, কম্পিটিশন লেভেল এবং স্কোরিং ও জাজমেন্ট সিস্টেমে।
ফিগার স্কেটিং কম্পিটিশন লেভেলকে আমরা প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল লেভেল, সেটা জুনিয়র বা সিনিয়র যাই হোক না কেন। যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীন ফিগার স্কেটিং কম্পিটিশন হলো ন্যাশনাল কম্পিটিশন, যেমন: পঞ্চম এপিসোডে ইউরি যে কম্পিটিশনে পারফর্ম করল।
যেকোন ধরণের আন্তর্জাতিক ফিগার স্কেটিং কম্পিটিশন পরিচালিত হয় এই স্পোর্টসের সর্বোচ্চ গভর্নিং বডি, ISU (International Skating Union) এর তত্বাবধায়নে। ন্যাশনাল কম্পিটিশনগুলোও ISU এর রুল মেইনটেইন করে কম্পিটিশন পরিচালনা করে থাকে।
ISU এর সরাসরি তত্বাবধায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক কম্পিটিশনগুলো হলো:-
♦World Championship
♦European Championship
♦Four Continents Championship
♦World Junior Championship
♦Olympic Games
♦ISU Grand Prix Championship
ISU Grand Prix কে ফিগার স্কেটিং কম্পিটিশনের সর্বোচ্চ ফিল্ড হিসেবে ধরা হয়। ISU Grand Prix এর ফাইনালে যেতে হলে Grand Prix কতৃক আয়োজিত অন্তত দুটি কম্পিটিশনে জিততে হয়। Grand Prix আয়োজিত কম্পিটিশনের প্রাথমিক ধাপ পরিচালনার দায়িত্ব নির্দিষ্ট ছয়টি দেশ পেয়ে থাকে, যেমন: ইউরির ক্ষেত্রে তার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে তাকে চায়নায় এসাইন করা হয়েছে, একই জায়গায় এসাইন করা হয়েছে ওর রিংক মেট পিচিত চুলানন্ত কে। সেখানে ভালো পারফর্ম করতে পারলে তার পরবর্তী ধাপ হবে রাশিয়া, যেখানে তাকে ইউরি প্লিসেত্স্কির সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
এখানে ইউরির ব্যাপারটা ক্লিয়ার হওয়া যাক। গ্র্যান্ড প্রিক্সের মত ফিল্ডে কম্পিট করতে হলে একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে হয়। ISU রাঙ্কিঙে যারা ভালো স্কেটার হিসেব স্থান পায়, তারাই গ্রান্ড প্রিক্সে কম্পিট করার সুযোগ পায়। আবার ISU এর রাঙ্কিঙে স্থান পায় তখনি, যখন ন্যাশনাল লেভেলে ভালো পারফর্ম করে।
এখন চায়নাতে পারফর্ম করতে ইউরি তো আর নিজের টাকায় উড়ে যাচ্ছে না, তাকে নিযে যাবে ন্যাশনাল এরেঞ্জমেন্ট। ইউরি আগের বছর গ্র্যান্ড প্রিক্সে ষষ্ঠ হয়েছে, ISU নিয়মস্বরুপ গ্রান্ড প্রিক্স কমিটি তাকে এবছর আবার এ্যাসাইন করেছে চায়নাতে। কিন্তু আগেরবার খারাপ করার কারণে, এবার যদি সে যোগ্য পারফর্ম করতে না পারে, ন্যাশনাল টিম তাকে চায়নায় উড়াবার দায়িত্ব নেবে না। সুতরাং, তাকে প্রথমে তার ন্যাশনাল টিমের সাপোর্ট পাওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হবে, সেজন্যই চুগোকু, শিকোকু এবং কিয়ুশু চ্যাম্পিনশিপ থেকে ব্লক পর্যায়ে পারফরমেন্স শুরু করে ইউরি।
yuri-on-ice
এবার স্কোরিং সিস্টেম:
সত্য কথা বলতে কি, ফিগার স্কেটিংয়ের স্কোরিং সিস্টেমের মত ভেজাইল্যা স্কোরিং সিস্টেম দুনিয়ার আর কোথাও আছে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার! >:( এমনকি হিসাব বিজ্ঞানের (যেটাতে আমার চেয়ে বেশী কাঁচা হওয়া মানব ইতিহাসের আরও কারও পক্ষেই সম্ভব না!) ফাইনাল একাউন্টস নামক খবিশটাও মেলা সোজা ছিল এর চেয়ে! :'( যাই হোক, প্রাথমিক একটা ধারণা দেযার চেষ্টা করছি:
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যেকোনো পর্যায়ের ফিগার স্কেটিং কম্পিটিশন মূলত দুটি ধাপের সমন্বয়, যে দুটি হলো শর্ট প্রোগ্রাম এবং ফ্রি-স্কেট বা লং প্রোগ্রাম।
আগের সিক্স পয়েন্ট জিরো সিস্টেমে এই দুটি প্রোগ্রামকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্য আলাদাভাবে স্কোরিং করা হত। কিন্তু ২০০২ এর অলিম্পিকে ফিগার স্কেটিং স্ক্যান্ডাল (যেখানে ফিক্সিং এর অভিযোগ ভয়াবহ গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়) এর পর থেকে IJS (International Judging System) এর আন্ডারে স্কোরিং করা হয়, যেটা ISU এর দ্বারাই গঠিত এবং বাস্তবায়িত। ISU জাজিং সিস্টেমের আন্ডারে, প্রতিটা স্কেটিং এলিমেন্ট এর জন্য ইন্ডিভিজুয়াল মার্কিং করা হয়, এবং এই এলিমেন্ট মার্কিং করে টেকনিকাল স্পেশালিস্ট রা। একেকটা স্পিন বা জাম্প, সব এলিমেন্টই ক্যামেরায় রেকর্ডের মাধ্যমে বারবার রিপ্লে করে করে দেখা হয় স্কেটারের স্টেপ সিকুয়েন্স বা কম্পালসরি ফিগারের যথার্থতা, জাম্পের সময়কার টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং পজিশন, হাইট কাভারেজ, ডিসট্যান্স কাভারেজ, এবং কোনোধরণের ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে সেজন্যে নাম্বার ডিডাকশন করে সবগুলো টেকনিকাল এলিমেন্টের জন্য বেস ভ্যালু বা প্রাথমিক স্কোর নির্ধারন করেন টেকনিকাল স্পেশালিস্টরা।
ফিগার স্কেটিং কম্পিটিশন পর্যবেক্ষণ বা জাজ করার জন্য টেকনিকাল স্পেশালিস্ট ছাড়াও নয়জন জাজ থাকেন, যাদের কাছে স্কেটারের টেকনিকাল মার্ক কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রেরণ করেন টেকনিকাল বিশেষজ্ঞ দল। জাজেস প্যানেল তখন স্কেটারদের গ্রেড অফ এক্সিকিউশন (GOE) অর্থাৎ এলিমেন্টসগুলোর এক্সেকিউশনের মানের ওপর একটা কোয়ালিটি মার্কিং করে থাকেন, যেটা সাধারণত -৩ থেকে +৩ (খারাপ হলে -১, তার চেয়ে বেশী খারাপ হলে -২ এবং জঘন্য হলে -৩, একইভাবে মোটামুটি হলে ১, ভালো হলে ২, বেশী ভালো হলে ৩) এর পূর্ণসংখ্যার একটি স্কেলের মধ্যে হয়ে থাকে। গ্রেড অফ এক্সেকিউশনের নাম্বারকে আবার ISU এর SOV (Scale of Value) তালিকা অনুযায়ী আরেকটি নাম্বারে রুপান্তরিত করা হয়। এই রুপান্তরিত সংখ্যাকে আবার trimmed mean বা ছাটাইকরণ পদ্ধতিতে গড় করা হয়। এই গড় সংখ্যাকে (ধনাত্নক বা ঋণাত্নক, দুটোই হতে পারে) তখন টেকনিকাল স্পেশালিস্টদের দেয়া বেস ভ্যালুর সাথে যোগ করে এলিমেন্টের টোটাল স্কোরিং করা হয়। টোটাল এলিমেন্টস স্কোরকেই স্কোরবোর্ডে TES হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এলিমেন্ট ছাড়াও জাজে’স প্যানেল আরও যা জাজ করেন তা হলো স্কেটিং স্কিল, কস্টিউম, কোরিওগ্রাফি, ফুটওয়ার্ক, ট্রানজিশন এবং ল্যান্ডিঙ, পারফরমেন্স ও এক্সেকিউশন, এবং সবশেষে থিম এবং গানের সাথে স্কেটারের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের সামঞ্জস্যতা এবং টাইমিঙ। এসকল কিছুর প্রতিটাকে ০.২৫ থেকে ১০ পর্যন্ত একটা স্কেলের মধ্যে স্কোরিং করা হয়, যেগুলোকে আবার ছাটাইকরণ পদ্ধতিতে গড় করে কম্পোনেন্ট ভ্যালু বের করা হয়। এখন এই কম্পোনেন্ট স্কোরকে আবার কম্পিটিশন লেভেল, ডিসিপ্লিন ও সেগমেন্টের হার্ডনেস লেভেল অনুযায়ী একটা ভগ্নাংশ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে একটা ভগ্নাংশে রুপান্তর করা হয়। তারপর যেটা পাওয়া যায়, সেটা হলো টোটাল কম্পোনেন্ট স্কোর।
টোটাল কম্পোনেন্ট স্কোরের সাথে টোটাল এলিমেন্ট স্কোর যোগ করে তারপর সেটা থেকে মাইনাস স্কোর বা ডিডাকশন ভ্যালু বাদ দিলেই যেটা পাওয়া যায় সেটা হলো স্কেটারের প্রাপ্ত নম্বর যেটাকে স্কোরবোর্ডে TSS বা টোটাল সেগমেন্ট স্কোর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়! শর্ট এবং ফ্রি প্রোগ্রামের TSS যোগ করে যে নম্বর পাওয়া যায, সেটা হচ্ছে স্কেটারের প্রাপ্ত মোট নম্বর, যেটাকে স্কোরবোর্ডে TOTAL হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়!
পাঠক এই মুহুর্তে কি ভাবছেন, বুঝতে পারছি! “জাহান্নামে যাক শালার স্কোরিং সিস্টেম! এত ঝামেলা কেউ করে?!” >:( আমিও একমত, বিষযটাকে এতটা জটিল করে তোলার কারণ বা যথার্থতা বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবে, কিন্তু এই সিস্টেমও যে সর্বজন স্বীকৃত, তা কিন্তু নয়! বরং উল্টোটাই সত্য, এ সিস্টেম নিয়ে সমালোচনা করার মানুষ রয়েছেন প্রচুর! এমনকি টেকনিকাল মার্কিং নিয়েও প্রচুর কন্ট্রোভার্সি রয়েছে স্বয়ং বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই। তবে ব্যাপারটা পড়তে বা শুনতে যতটা জটিল মনে হয়, আসলে অতটা জটিল নয়, কম্পিউটারাইয্ড্ প্রোগ্রামের কারণে পারফর্মেন্সের কিছুক্ষণের মধ্যেই ফলাফল দেখতে বা জানতে পারে স্কেটার ও দর্শকরা। প্রতিটা পার্ফরমারের প্রাপ্ত নম্বর তার প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পরই দিয়ে দেয়া হয়।
এখানে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, জাম্প মিস করার কারণে নাম্বার ডিডাকশন করা হয় প্রেজেন্টেশনের রিদম্ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কম্পোনেন্ট স্কোর থেকে, টেকনিকাল স্কোর থেকে না। জাম্পের যে অংশটা (টেকঅফ, ল্যান্ডিং বা রোটেশন) মিস করবে স্কেটার, সে অংশের জন্য সে টেকনিকাল নম্বর পাবে না, কিন্তু এজন্য নম্বর ডিডাকশনও হবে না। টেকনিকাল মার্ক ডিডাকশন হতে পারে শুধুমাত্র কোনো এলিমেন্টের টেকনিকাল রুলের অন্যথা ঘটলে, যেমন এড্জ ভায়োলেশন (ভুল এড্জ এর ব্যাবহার), টাইম ভায়োলেশন (অতিরিক্ত সময় নেয়া বা সময়ের আগে শেষ করে ফেলা) ইত্যাদি ঘটলে। তাই ফিগার স্কেটিঙয়ে প্রেজেন্টেশন অনেক গুরুত্ব বহন করে। সং এর থিম বা টেম্পোর সাথে মিল রেখে গানের সাথে নিজের পারফর্মেন্সের ছন্দ বজায় রাখা ভালো প্রেজেন্টেশন মার্কের জন্য আবশ্যক। জাম্প মিস করলে ছন্দপতন ঘটে, যার জন্য প্রেজেন্টেশনের রিদম্ নষ্ট হয়ে যায়, সেজন্যই স্কেটারদের আত্নবিশ্বাসী থাকাটা খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ, রিংকে নামলে আক্ষরিক অর্থেই নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রাজপুত্র বা রাজকন্যা মনে করে স্কেটাররা, যার পড়ে যাওয়ার মত সামান্য ভুলটা কোনো ভুলই না! এই আত্নবিশ্বাসই পড়ে যাওয়ার পরও তাদেরকে রিদম্ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে, এবং এ কাজে যে যতটা সফল হয়, ডিডাকশনের ভয় তার তত কম!
সুতরাং, পরে যাওয়া, বা জাম্প মিস তথা ল্যান্ডিং মিস করাটাকে আমরা যতটা ভয়াবহ অপরাধ মনে করি, ততটা ভয়াবহ নয় আসলে! :3 এমনকি জাজেস রা যদি মনে করেন কারও প্রেজেন্টেশন, এড্জ এর ব্যাবহার, টেকঅফ এবং রোটেশন এর ব্যাবহার ভালো হয়েছে অনেকগুলো ল্যান্ডিং মিস করার পরও, তাহলে তাকেই বরং কম্পিটিশনে এগিয়ে থাকার সুযোগ দেয়া হয় তার চেয়ে বেশী, যে কোনো জাম্পই মিস করেনি, কিন্তু প্রেজেন্টশনে গানের রিদম্ ধরে রাখতে পারেনি। একটা সুন্দর উদাহারণ হলো ইউরির এরোস, এবং ইউরিওর আগাপে! রিয়েল লাইফ উদাহারণও প্রচুর আছে, উল্লেখযোগ্য একটা হতে পারে ২০১৪ এর উইন্টার অলিম্পিকের ফিগার স্কেটিং মেন্স সিঙ্গেলে ইউযুরু হানইয়্যু’র পারফর্মেন্স টা। একটা সালকো ও একটা ফ্লিপ পুরাপুরি মিস করার পরও সেবছর গোল্ড মেডেল পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে সে! 😀 অতএব ফিগার স্কেটিং আসলে যতটা দেখা যায়, তারচেয়ে অনেক বেশী কিছু! মাপ্পাকে আমরা অভিনন্দন জানাতেই পারি এই জটিল ব্যাপারটাকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার সাহস দেখানোর জন্য! ^_^
আশা করি পাঠকরা এখন খানিকটা হলেও বুঝতে পারছেন ফিগার স্কেটিংয়ের রুলস্ এন্ড রেগুলেশন! :’) পোস্টটা বিশাল বড় হয়ে গেছে বলে দুঃখিত, এবং যারা কষ্ট করে পড়েছেন (আদৌ যদি কেউ পড়ে থাকেন!), তাদেরকে অভিনন্দন! 🙁 :’) ^_^ সবধরণের তথ্যই বারবার পড়ে ও দেখে যাচাই করা হয়েছে, তারপরও যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, সেটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সঠিক তথ্যটা জানালে কৃতজ্ঞ থাকব! 🙂 ফিগার স্কেটিং একটা স্পোর্টস বটে, এই জিনিসটা মাথায় রেখে এনিমের ব্রোমান্স আন্ডারটোনটাকে উপেক্ষা করতে পারলে এই পোস্টের উদ্দেশ্য স্বার্থক! :’)
সবাইকে শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। ^_^ Yuri!!! on Ice দেখুন, এঞ্জয় করুন এবং ভালো থাকুন! 😀 ^_^
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ইউটিউব, এবং আরো অন্যন্য কিছু ওয়েবসাইট।

Kobato [রিভিউ] — Mithila Mehjabin

Kobato 1

আকাশ থেকে টুপ করে একটি পরী নামল! পরনে লম্বা জামা, সাথে বড় একটা সুটকেস, আর ছোট্ট ব্যাগে একটা ছোট্ট নীলরঙা পুতুল, যেটার গলার আওয়াজ শুনলে তার খেলনা আকৃতিটা একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার বলে মনে হয়! মেয়েটার লম্বা চুলগুলো পা ছুঁইছুঁই করছে, দু চোখে অদ্ভুত সারল্য..অথচ সেটাই যেন তার দোষ! খেলনা পুতুলটা সারাক্ষণই বকছে তাকে। সুরেলা কন্ঠের সুকেশী ও সুবেশী পরী Hanato Kobato, আর তার ঐ পুতুল আকৃতির Iyorogi সান এর সম্পর্কটা কিন্তু যেমনটা দেখা যায় তার চেয়ে অনেক বেশী উষ্ণ! 😀 ^_^

রিভিউ: Kobato
এপিসোড: ২৪
জনরা: কমেডি, ড্রামা, ফ্যান্টাসী
ম্যাল রেটিং: ৮.১

আক্ষরিক অর্থেই আকাশ থেকে নামে Kobato নামের অদ্ভুত সারল্যে ভরা চঞ্চল মেয়েটি! কোথাকার কিসের সাথে কি যেন একটা চুক্তি হয়েছে তার, চুক্তিটা পূরণ করতে পারলে তার পছন্দের জায়গাটিতে যেতে পারবে সে, আর না পারলে কোথায় যেন আবার ফিরে যেতে হবে তাকে! 🙁

কে শোনে কার কথা, টুপ করে পড়েই সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে গেল Kobato! একদিকে কানের কাছে Iyorogi সান এর কান ঝালাপালা করা বকবকানি, অপরদিকে কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে না পেরে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে সে! চুক্তি অনুযায়ী হাতে যাদুর বোতল নিয়ে অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়ল Kobato, সাথে Iyorogi সান। চুক্তিটা হলো, ঐ যাদুর বোতল টা “কনফেট্টি” দিয়ে ভরতে হবে! জার্মান শব্দ কনফেট্টি এর বাংলা অর্থ মিষ্টি। তার মানে কি…বোতলটা মিষ্টি দিয়ে ভরবে Kobato?! মোটেই না! দুঃখ ভরাক্রান্ত হৃদয়ের সকল ব্যাথা-বেদনা দূর করে দিলে মানুষের সরল মন যে উষ্ণ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তা দিয়েই ভরতে হবে তাকে ঐ বোতল, Kobato যেই আরোগ্য লাভ করা উষ্ণ হৃদয়গুলোর নাম দিয়েছে “কনফেট্টি”! এটাই তার চুক্তি, ঐ বোতলটা যেন ভরে, অন্তত সেই পরিমাণ ফুটো হৃদয় সেলাই করতে হবে তাকে, ভালো করতে হবে ক্লান্ত মনের বিভ্রান্ত মানুষগুলোকে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর!

শুনতে যতই কম্পলিকটেড বা খাপছাড়া লাগুক, Kobato তার মিষ্টি, সরল, ও পরিশ্রমী আচরণের মধ্যমে সহজেই আনন্দে ভরিয়ে তোলে যেকোন দুঃখী হৃদয়! তার ভালো করে দেয়া মনের মানুষের তালিকাটা বড় হয় দিন দিন, “কনফেট্টি” দিয়ে ভরতে থাকে যাদুর বোতল। চলার পথে তার পরিচয় হয় Fujimoto সান, Sayaka সান, Kohaku চান সহ আরো বিভিন্ন দুঃখী হৃদয়ের মানুষের সাথে…যাদেরকে বিভিন্নভাবে হৃদয়রোগ থেকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করে ও, এবং এমনকি সবচেয়ে কঠিনতম হৃদয়ের মানুষটির মনেও সবচেয়ে উষ্ণ জায়গাটিও দখল করতে সক্ষম হয় সে, যে মানুষটি অনেক আগেই দখল করেছে তার মনের উষ্ণতম জায়গাটি। 🙂 শেষ পর্যন্ত কি সময় ফুরোনোর আগে যাদুর বোতলটি ভরতে পারে Kobato? নাকি যাকে নিজের সবটুকু উষ্ণতা উজাড় করে দিয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ একা করে দিয়ে সৃষ্টির সবকটি অস্তিত্বের বুক থেকে হারিয়ে যায় সে কোনো এক অজানায়? জানতে হলে দেখে ফেলতে হবে Kobato! 🙂 ^_^

অদ্ভুত একটা প্লটকে হৃদয়ছোঁয়া করে উপস্থাপন করার সবচেয়ে সুন্দর উদাহারণগুলোর একটি হতে পারে Kobato। 🙂 ক্যারেক্টারগুলো খুবই পছন্দনীয়। Fujimoto, Sayaka, Kohaku ও মূল কমিক রিলিফ Iyorogi সান! :3 বিশেষত Kobato কে খুবই ভালোলাগে! তার সরল, চঞ্চল এবং কেয়ারিং আচরণ যে কারো মনে জায়গা করে নেয় খুব সহজেই। ^_^ স্পেশালি তার গানটা বহুদিন মনে রাখার মত একটা গান, ঠিক কোকোরোতে গিয়ে লাগে! :’) একটা গাছের ইতিহাস কিভাবে মানুষকে দুচোখ ভরে কাঁদিয়ে ছাড়তে পারে, অন্তত সেটা জানার জন্য হলেও দেখা উচিৎ এনিমেটা! T^T

ওএসটিগুলোয় একটা চাইমিক ভাব আছে, ক্যারেক্টার ডিজাইনগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন। CLAMP এর সিরিজ বলেই কিনা, Holic আর Tsubasa এর মত Chobits এবং Kobato তেও ক্যারেক্টার ক্রসওভার ব্যাপারটা আছে! কাস্টের মেইন দুজনের মূলে আছেন Kana Hanazawa এবং Tomoaki Maeno!

চমৎকার একটা রিফ্রেশিং এনিমে Kobato, সবার জন্য রেকমেন্ডেড!

Kobato 2

Arakawa Under The Bridge [রিভিউ] — Mithila Mehjabin

 

আমরা যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত সংসারের মানুষ, বড়লোক বাপের বেটা দেখলেই পিঠপিছে কানাকানি শুরু করি!

মানুষের কথা বলি কেন, আমি নিজেই রাস্তার জ্যামে আটকা পরে বড়লোকদের গাড়িগুলোকে যে হারে গালাগালি করেছি, শুনলে ড্রাইভার তো বটেই, গাড়ীও তেড়ে মারত আসত আমাকে!

কিন্তু বড়লোকদের জীবনও কিন্তু বড় সহজ না, স্পেশালি যখন তাদের মানসিকতাটা হয় এরকম, যে কখনই “কারও কাছে ঋণী থাকা যাবে না!”

আজাইরারও একটা লিমিট আছে, কিন্তু Ichinomiya Ko এর বাকওয়াজ ডিকশনারীতে “আজাইরা” বলে কোন শব্দই নাই! নাহলে পোলাপানে টানাটানি করে পরনের প্যান্টখানা যখন ব্রিজের অনেক ওপরে, নাগালের বাইরে ঝুলায় দেয়, তখন আন্ডারওয়্যার পড়া Ichinomiya Ko এর মাথায় “কারো কাছে ঋনী থাকা যাবেনা” ধরনের আজাইরা চিন্তা আসে কোত্থেকে?

তার ঐ চিন্তাটাই কিন্তু কাল হয়েছে!

Arakawa Under the Bridge 1

রিভিউ: Arakawa Under The Bridge
এপিসোড: ১৩
ম্যাল রেটিং: ৭.৭
জনরা: কমেডি, রোমান্স, সেইনেন
Ichinomiya Ko মস্ত বড়লোক বাপের একমাত্র ছেলে। একদিন এক সুন্দর দুপুরে আরাকাওয়া নদীর ব্রিজের ওপর দিয়ে হাটাঁর সময় কিছু ছেলেপেলে তার বড়লোকি ভাব সইতে না পেরে তার প্যান্টখানি খুলে ব্রিজের সবচেয়ে উঁচু পিলারটায় ঝুলিয়ে দেয়। আন্ডারওয়্যার পড়া Ko তার অতিসুখী জীবনের চিন্তায় এতই রোমাঞ্চিত, যে আধান্যাংটো হয়ে ব্রিজের ওপর দাড়িয়ে থাকাটা তার কাছেই নিতান্তই ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার মনে হয়। আর তখনই সে খেয়াল করে যে নীল চোখের হলুদচুলো একটা মেয়ে ব্রিজের কিনারে বসে বড়শী দিয়ে মাছ ধরছে। “কারও কাছে ঋনী থাকা যাবেনা” নীতিতে বিশ্বাসী Ko মেয়েটির সাহায্যের প্রস্তাব বেশ ডাটের সাথে ফিরিয়ে দেয়, আর বানরের তেলা বাঁশ বেয়ে ওঠার ভঙ্গিতে প্যান্ট নামানোর জন্য পিলার বেয়ে উঠতে গিয়ে আরাকাওয়া নদীতে পরে যায়! মেয়েটা তখন বাধ্য হয় সাহায্য করতে, কিন্তু ডাঙায় উঠে জ্ঞান ফেরামাত্রই মেয়েটি তার জীবন বাঁচিয়েছে, এই ঋণ শোধের চিন্তায় পুরোপাগল হয়ে যায় আধাপাগল Ichinomiya!
কি করলে মেয়েটির ঋণটি শোধ করতে পারে সে, এই প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি বলে তাকে ভালোবাসতে! আর ঠিক এখানেই ফেসেঁ যায় Ko, মেয়েটির সাথে আরাকাওযা নদীর পাগলা বাসিন্দাদের একজন হয়ে যায় মাল্টিবিলিয়নেয়ার কোম্পানীর ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট Ichinomiya Ko ওরফে Recruit! মেয়েটার দাবি সে একজন ভেনাসবাসী! আরও আছে কস্টিউম পড়া কাপ্পা, সিস্টার ওরফে গালকাটা ব্রাদার, তারামুখো গিটারিস্ট হোশি, এইগো নো স্টেলা, গাইওয়ালা, সবজিওয়ালা সহ আরো অনেকেই!

কাহিনীটা অনেকের কাছে বেশ সাধারণই মনে হবে, কিন্তু উপাস্থাপন করা হয়েছে অসাধারণ ভাবে। বেশ আগের একটা এনিমে হওযা সত্বেও প্রায় ইরেডিসেন্ট একটা স্বচ্ছ পর্দার ভেতর দিয়ে যেন দেখানো হয়েছে পুরো জিনিসটা! যেটাকে বলে ফটো ম্যাটেরিয়াল, কাহিনীর প্লেসমেট আরাকাওয়া নদী এবং ব্রিজ এর আশপাশ থেকে খুব একটা সরেনা যদিও, নদী এবং এর আশে পাশের ছোট পল্লীমতন তাদের জগৎটা খুবই দৃষ্টিনন্দনভাবে দেখানো হয়েছে!

Arakawa Under the Bridge 3

 

কমেডি সেই লেভেলের, ক্যারেক্টারগুলির তো মাথাই নষ্ট! পুরো সময়টা “একদল পাজি পোলাপানের হাতে ধোলাই হচ্ছেন এক আজাইরা ভদ্দরনোক” ধরনের একটা পৈশাচিক শৈশবকালীন মজা পাওয়া যায়! অদ্ভুত সব এঙ্গেল থেকে দেখানোটাও ভালোই হাসির খোরাক যোগায়! হালকা রোমান্স, কমেডি আর এত্তগুলা সুন্দর সুন্দর দৃশ্য, স্ক্রীনশট নিকে নিতে আঙ্গুল ব্যাথা হয়ে গেছে!

দারুণ একটা এনিমে, সব রমকম লাভারদের জন্য রেকমেন্ডেড!

বড়লোক পোলাপাইনদের: নো অফেন্স বাই দা ওয়ে! স্রেফ কৌতুক করার স্বার্থে পকপকানি!

Arakawa Under the Bridge 4

Kaze no Stigma রিভিউ — Mithila Mehjabin

Kaze.no.Stigma.full.93320

“Kaze no Stigma” বা “Stigma of the wind”, বাংলা করলে দাড়ায় “বাতাসের কালিমা” সত্যিই খুব চমৎকার একটা অ্যানিমে! 🙂

কাহিনীটা এরকম: Kanagi ফ্যামিলীর সবচেয়ে বড় ছেলে Kazuma kanagi তাদের পরিবারের ঐতিহ্যবাহী “Fire magic” আত্নস্থ করতে ব্যার্থ হয়, এবং স্ব-পরিবারের চার বছরের ছোট কাজিন Ayano kanagi এর সাথে একটি ডুয়ালে হেরে যায়। এতে তার পিতা Genma Kanagi অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে ত্যাগ করে। কাহিনী শুরু হয় যখন এই Kazuma Kanagi চার বছর পর Kazuma Yogami নাম নিয়ে এবং Fire magic এর বদলে অসম্ভব Wind magic পাওয়ার নিয়ে বিদেশ থেকে জাপানে ফিরে আসে। Kanagi পরিবার তার এই হঠাৎ আবির্ভাব এর কথা জানতে পারে এবং পরিবারের ওপর তার রোষ থেকে পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি হতে পারে ভেবে শঙ্কিত হয়। এদিকে হঠাৎ করে পরিবারের দুজন সদস্য Wind magic দ্বারা খুন হয়ে যায়। যদিও খুনী থাকে অন্য কেও, পরিবারের সদস্যরা এতে Kazuma কেই খুনী ধরে নেয় এবং তারা তাকে হন্যে হয়ে খুজতে থাকে , তন্মধ্যে সবচেয়ে আগ্রহী থাকে পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রধান এবং Kazuma’র সেই ছোট বেলার কাজিন মেয়েটি, Ayano Kanagi, যে থাকে কাহিনীর মূল নারী চরিএ। তারপর বিভিন্ন প্লট টুইস্টের মাধ্যমে Kazuma, Ayano এবং Kazuma’র ছোট ভাই Ren Kanagi কে ঘিরে কাহিনী এগিয়ে যায়…

এখানে Ren Kanagi’র কথা না বললেই নয়। Kazuma’র এই ছোট ভাইটি থাকে অসম্ভব kawai!! 😀 ইনোসেন্ট লুকিং নরম স্বভাবের ছেলেটা যে কারো ভালোবাসা জয় করে নিতে বাধ্য! কাহিনীতে তার ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।
এদিকে রাগী এবং গরম স্বভাবের, অথচ সৎ সুন্দর Ayano Kanagi এবং স্থির, তেড়া, একরোখা এবং হ্যান্ডসাম লুকিং Kazuma Kanagi’র রসায়নটি থাকে খুবই মজার! 😀

মোট ২৪ টা এপিসোড এর কাহিনী, ডাব এবং সাব দোনোটাই এভেইলেবল। সাব টা দেখিনি যদিও, তবে ডাব টা এক কথায় অসাধারণ! বিশেষ করে Kazuma’ র গর্জিয়াস ভয়েসটা সবার ই ভাল্লাগার কথা।
এপ্রসঙ্গে একটা মজার জিনিস বলি, Kazuma’র ভয়েসে সবচেয়ে মজার শোনায় যে ওয়ার্ড টা, সেটা হলো “Basturd!” আর Ayano’র ভয়েসে “Pervert!” 😀

সো, আগ্রহী বন্ধুরা দেখে ফেলতে পারো। 🙂

বি:দ্র: কাহিনীটা একটানা এ্যাকশন মতন কিছু না, রোমান্স এবং কমেডিরও প্রচুর খোরাক রয়েছে…সুতরাং একঘেয়ে লাগবে না, এটা আশা করা যেতেই পারে!
Arigatou Minna! 🙂

Ouran Highschool Host Club রিভিউ — Mithila Mehjabin

প্রথমে যখন এই এনিমে টা দেখতে শুরু করলাম, মেজাজটা খুব খারাপ হচ্ছিল, কারণ সহজকথায়, এহেন ছাগলমার্কা এনিমে আর দেখিনি।
আর যখন দেখা শেষ করলাম তখনও মেজাজ খারাপ হচ্ছিল, কারণ পাগলামি-ছাগলামি যে এত মজার হতে পারে, তার নমুনাগুলো আর দেখা হবেনা…!

হ্যা…বলছি Ouran Highschool Host Club এর কথা!
আসলে এই এ্যানিমে সম্পর্কে বেশী কিছু বলতে গেলে Spoiler হয়ে যায়…আর না বললে বোধহয় অবিচার হয়ে যায়..তাই একটুকিছু বলা উচিৎ..
কাহিনীর শুরু এরকম: ধনী এবং উচ্চবংশীয় ছেলে-মেয়েদের অভিজাত স্কুল Ouran Academy তে স্কলারশিপ পাওয়া একজন মধ্যবিত্ত স্টুডেন্ট Haruhi Fuziwoka পড়ার সুবিধার্থে একটু নিস্তব্ধতার আশায় একটি পরিত্যাক্ত মিউজিক রুম এ ঢুকে পড়ে, এবং অবাক হয়ে যায় ৬ জন অত্যন্ত ধনী এবং উচ্চবংশীয় স্টুডেন্ট তাকে ওয়েলকাম করছে দেখে, যা সে মোটেই আশা করেনি। সেখানে সে জানতে পারে যে এই ৬ জন স্টুডেন্ট মিলে গড়ে তুলেছে একটি হোস্ট ক্লাব, Ouran Highschool Host Club, যেখানে উচ্চবংশীয় সুদর্শন হোস্টরা অনেক অবসর সময় নিয়ে সেসকল উচ্চবংশীয় মেয়েদের এন্টারটেইন করে যাদের হাতেও অনেক অবসর সময় রয়েছে! পুরো ব্যাপারটাই Haruhi’র কাছে খাপছাড়া লাগে, কিন্ত ঘটনাচক্রে একটা অত্যন্ত দামী ভাস্ ভেঙে ফেলায় তার দায় মেটানোর জন্য তাকে বাধ্য হয়েই ক্লাবটিতে জয়েন করতে হয়। প্রখমে তাকে ঠুনকো কাজ করার জন্য রাখা হলেও পরে সে যে অত্যন্ত কাওয়াই, সেটা আবিষ্কার করে ক্লাবের হেড তাকে হোস্ট হিসেবে নিয়োগ করে, তারপর একটি চমক, এবং এখান থেকেই গল্পটির যাত্রা শুরু….:)

জীবনে যে হাসেনাই, এই এনিমেটি দেখে এমনকি সেও হাসতে বাধ্য! 😀

এনিমেটা মূলত কমেডি, তবে হালকে রোমান্স এর ছোয়াঁটা খুবই আবেদনময়। হোস্টক্লাবটির হেড Tamaki Suo এবং অন্যন্য সদস্য…Kyoya Outory, Hikaru এবং Kaoru Hitachi, Hanni Nozuka, Mory Nozuka এবং Haruhi Fuziwoka…এদেরকে ঘিরে যত কীর্তিকারখানাই এনিমেটার কাহিনী।

এনিমেটাতে মূলত বড়লোকদের বড়লোকীয় কাজকারবারের অর্থ বুঝতে অনভিজ্ঞ একজন মধ্যবিত্তের মিশেলে অম্ল-মধূর মুহুর্তগুলোর মধ্য দিয়ে দু’দলের কাছে পরস্পরকে বোঝার এবং পরস্পরের কাছে পরস্পরের প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আদর্শটিই এনিমেটাকে আরও ইন্টারেস্টিং করে তুলেছে… 🙂

২৬ টি এপিসোড এর এনিমেটাতে পাগলামি-ছাগলামির কোনো অভাব নেই! ডাব এবং সাব দুটোই আছে। তাড়াহুড়ো করে দেখতেও মন চাইবে না…যখন খুশি তখন দেখাতেও মজা বাড়বে বৈ কমবে না।

সো, হাতে অবসর থাকুক বা না থাকুক, যারা দেখনি তারা দেখে ফেলতে পারো! এনিমেটা যদিও নতুন নয়, আর এর একেকটা পর্ব দেখা মানেই অবসর সার্থক! বলে রাখা ভালো, এনিমেটার আসল স্বার্থ জাস্ট্ ফান্ …আর কিছু নয়। 🙂

এনিমেটা নতুন কিছু নয়, তারপরও এতকিছু লিখে যাদের বিরক্তি ধরিয়ে ফেললাম, তাদেরকে আগে থেকেই সরি বলে রাখছি! গোমেন্নাসাই!

Arigatou Minna!

Ghost Hunt রিভিউ — Mithila Mehjabin

হরর/প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেশন/মিস্টেরি/একশন/টিমওয়ার্ক- এই জাতীয় এনিমে যাদের পছন্দ, তাদের জন্য এই এনিমে টা একশবার রেকমেন্ডেড!

বলছি Ghost Hunt এর কথা! 🙂

শুরুটা এরকম: Mai Taniyama স্কুলে ক্লাস শেষে রুমের আলো নিভিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ভূতের গল্প করতে পছন্দ করে। একদিন তাদের পুরোনো স্কুলবিল্ডিংটি নিয়ে এমনই গল্পচলাকালীন একজন অপরিচিত সুদর্শন যুবক হঠাৎ করে তাদের ক্লাসরুমটিতে ঢুকে পড়লে ভয় পেয়ে যায় মেয়েগুলো! সুদর্শন ছেলেটির নাম Kazuya Shibuya, নিজেকে একজন ফ্রেশমেন হিসেবে পরিচয় দিলেও ছেলেটার কথা, কন্ঠ, স্থির – অচঞ্চল ভাবটার মধ্যে কোথাও যে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে, এ ব্যাপারটা Mai ঠিকই বুঝতে পারে। পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে তাদের সেই পরিত্যাক্ত পুরোনো ভুতুড়ে স্কুল বিল্ডিংটা চোখে পড়লে কৌতুহল বশে Mai এর ভেতরে ঢুকে পড়ে, এবং পরিত্যাক্ত বিল্ডিংটিতে একটি ক্যামেরা দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়। যেই না ক্যামেরাটি ধরতে যাবে, অমনিই ঘটে যায় বিপত্তি! হঠাৎই একটা কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় Mai, আর তারই ধাক্কায় একটা বুকশেলফ তার ওপর পড়ে যেতে নিলে কন্ঠধারী ব্যাক্তিটি তাকে বাচাঁতে গিয়ে নিজেই মারাত্নক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এসময় Kazuya নামের গতদিনের সেই রহস্যময় ছেলেটি এসে হাজির হয়, এবং আঘাতপ্রাপ্ত ব্যাক্তিটিকে সাহায্য করে। একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় অবাক হয়ে গেলেও পরে Mai জানতে পারে সেই আঘাতপ্রাপ্ত ব্যাক্তিটি ছিল Kazuya’র এসিস্টেন্ট, এবং ১৭ছর বয়সী Kazuya নামের রহস্যময় ছেলেটি আসলে একজন প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর, একটি সাইকিক রিসার্চ সেন্টার এর মালিক, যাকে ঐ ভুতুড়ে স্কুলবিল্ডিংটার রহস্যোদ্ঘাটনের জন্য হায়ার করা হয়েছে! এদিকে ক্যামেরাটি ভেঙে ফেলায়, এবং তার কারনে Kazuya’র এসিস্টেন্ট আপাতত কিছুদিনের জন্য অচল হয়ে যাওয়ায় তাকেই আপাতত Kazuya’র এসিস্টেন্ট হিসেবে যোগ দিতে বাধ্য হতে হয়। তাদের ইনভেস্টিগেটিং এ আরও যোগ দেয় Monk Takigawa- একজন এক্সরসিস্ট, John Brown- প্রিস্ট, Masuko Hara- স্পিরিচুয়ালিস্ট, Ayako Matsuzaki- স্রাইন মেইডেন। শুরু হয় গল্প, এবং একের পর এক রুদ্ধশ্বাস্ অভিযান!

স্টোরির আর্টওয়ার্ক এবং প্লটগুলো অসাধারণ, এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রশংসার দাবিদার হচ্ছে স্টোরির সাউন্ড সিস্টেম টা। এক কথায় ভয়ঙ্কর! শুধু সাউন্ড গুলোই যে কাউকে ভয় পাওয়াতে যথেষ্ট……আর মিস্টেরি ও একশন তো আছেই! 😀

২৫ টি এপিসোড্, ডাব্ ও সাব্ দুটোই আছে। সো, যারা এই ধরনের প্লটে আগ্রহী, তারা বিনা দ্বিধায় দেখে ফেলতে পারো, নিরাশ হবে না! 🙂
আর, ইয়ে….দূর্বল চিত্তের মানুষদের রাতে না দেখাই ভালো! 😛

আর এই ধরণের প্লটের আরও কোনো সাজেশন থাকলে তা জানাবেন, প্লীজ! 🙂

আরিগাটোও মিন্না!

Myself ; Yourself! রিভিউ — Mithila Mehjabin

সো দিস ইস্ দা স্টোরি অফ Myself;Yourself! 🙂
(May contain a bit spoiler)

কথায় আছে, ” Childhood is all about future, youth is about present and Old age is all about past!” 🙂

আমরা যারা ইয়ুথ যাপন করছি, সবাই আমরা বর্তমানে বেচেঁ থাকি, এবং ভবিষ্যত কে সাজাই, অতীত নিয়ে যেহেতু করার কিছু নেই, তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। সুন্দর অতীত নিঃসন্দেহে সম্পদ, আর দুঃসহ অতীত থেকে পালিয়ে বেড়াই! 🙁
হ্যা, অতীত কে বদলানোর কোনো উপায় নেই, কিন্তু দুঃসহ অতীতের প্রতি আমাদের অনুভূতি বা দৃষ্টিভঙ্গি কে বদলে, ‘খারাপ কিছুও আমার জীবনে ঘটেছে’- এই ব্যাপারটাকে স্বস্তির সাথে স্বীকার করেও যে সামনে এগুনো যায়, এই ধরণের একটা অনুভূতি কে জাগিয়ে তোলা কাহিনীই হলো Myself;Yourself!
🙂
শুরুটা এরকম: Sana Hidaka নামক অতিমাত্রায় কিউট ছোট্ট ছেলেটিকে পারিবারিক কারণে প্রিয় শহর, এবং প্রিয় বন্ধুদেরকে রেখে অনেক দূরে চলে যেতে হয়। পাচঁ বছর পর যখন সে আবার ফিরে আসে, ছোটোবেলার সেই প্রিয় শহর এবং বন্ধুদের চেনা ব্যাপারগুলোর সাথে মিল-অমিল, মান-অভিমান এবং স্মৃতিকাতরতা তাকে একইসাথে আনন্দ এবং অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। এবং তার অস্বস্তির সাথে কাটাঁ হয়ে বিধেঁ সেই ছোট্টবেলার শান্ত – শিষ্ট, মিষ্টি, মার্জিত, অতিচেনা-পরিচিত মেয়ে Nanaka Yatsushiro এর আমূল বদলে যাওয়াটা। কি হয়েছিল এই পাচঁটি বছরে? Nanaka কেন আর ভায়োলিন বাজায় না? Shuu এবং Shuri Wakatsuki কেন এত ক্লোজ্? রক্তাক্ত ছুরি কেন Sana কে এত ভয় পাইয়ে দেয়?
এসব প্রশ্নের উওর জানতে হলে দেখে ফেলতে হয় সিম্পল, অথচ সুন্দর এই ছোট্ট এনিমে টা.. 🙂

গল্পের প্রতিটি চরিত্রের ভূমিকাই অনেক যত্ন নিয়ে সাজানো হয়েছে। Aoi’র কমেডি, Hinako’র ছেলেমানুষি, এবং Hoshino’র ভিতরের সত্তাটি গল্পে অন্যরকম প্রভাব ফেলে।

রোমান্স, ড্রামা, স্কুল, স্লাইস অফ লাইফ জেনরের এই এনিমেটা মোটেই টিপিকাল কিছু না, তাই দেখার জন্য কোনো তাড়াহুড়ো অনুভব হয় না। এই হাসিখুসি, প্রাণোচ্ছল মানুষগুলোর হাসির পেছনে জীবনটা যে কতটা কুৎসিত হতে পারে, তা-ই এই কাহিনীর মূল আকর্ষণ। জীবনের তুচ্ছ ব্যাপারগুলোই হাসি-কান্নার খোরাক, গল্পটা সেটাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। অনেকের কাছেই নষ্টালজিক মনে হতে পারে। 🙂

এনিমেটির আর্টওয়ার্ক খুবই সুন্দর, এবং টাচিং সাউন্ডট্র্যাক। গল্পজুড়ে যে ব্যাপারগুলো রেফ্লেক্টেড হয়, তা মনে ছাপ ফেলে। ১৩ টি এপিসোড এবং ৩ টি স্পেশাল এপিসোড্, সাবড্ এভেইলেবল্।। 🙂

MAL rating: 7.53
Personal rating: 7
🙂

সো, আগ্রহী বন্ধুরা দেখে ফেলতে পারো! 😀

Arigatou! 🙂