কোবাতো বন্দনা – লিখেছেন ইশমাম আনিকা

download

“কোবাতো” আনিমেটা দেখে শেষ করলাম মাত্র। এবং বলতেই হবে, অসাধারণ আনিমে ছিল। এত বেশি ভাল লেগেছে যে দৌড় দিয়ে মিথিলার পোস্টে কমেন্ট লিখা শুরু করে দিয়েছিলাম, কারণ মিথিলার সুন্দর রিভিউটা পড়েই এই আনিমে দেখতে বসেছিলাম। পরে আবিষ্কার করলাম বেশি উত্তেজনায় রচনা লিখে ফেলেছি, তাই সেই রচনা একটু বাড়িয়ে চাড়িয়ে এখানে আবার পোস্ট করছি।

কোবাতো আনিমেটা শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল, চিনির শিরার মধ্যে সারারাত ডুবিয়ে রেখে সকালে প্রেজেন্ট করেছে। কোবাতো অতিরিক্ত বেশি সুইট, এত বেশি যে সেটা দমবন্ধ করে দেয়ার মত অবস্থা করে। শুরুতে কোবাতোকে একটা এয়ারহেড, কিছুটা এনোয়িং কেয়ারলেস একটা মেয়ে ছাড়া কিছুই মনে হয়না, এবং হানাযাওয়া কানা ইউজলেস ক্যারেক্টার যে খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তা এই আনিমে দেখে সবচেয়ে বেশি বোঝা যায়। প্রথম দু-তিনটা পর্ব দেখে যদি কেউ বিরক্ত হয়ে আনিমেটা ড্রপ দেয়ার কথা ভাবে, সত্যি বলছি অবাক হব না।

এরপর আনিমেটা দেখা চালিয়ে যেতে থাকলাম, কোবাতোর স্বভাব চরিত্রে কোন পরিবর্তন এল না। কিন্তু আমি একটা ব্যাপার উপলব্ধি করলাম। তা হল, আমাদের সবার জীবনেই আসলে একজন কোবাতো প্রয়োজন, যে তার সারল্য, উচ্ছলতা, প্রাণবন্ততা দিয়ে আমাদের ম্যাড়মেড়ে মানসিকতাটা পালটে দেবে। কোবাতো সরল হতে পারে, কিন্তু বোকা নয়। সে একটা কাজ অসম্ভব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকে না, শুধুমাত্র তার সদিচ্ছার জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে সে। কাজের ক্ষেত্রে হাজারটা গোলমাল করে, কিন্তু তাও সে হাত গুটিয়ে বসে থাকে না, কাজটা করেই ছাড়ে। কোবাতোর ওপর বিরক্ত হওয়া যায়, কিন্তু সেটা প্রকাশ করা যায় না। তার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে সব বিরক্তি চলে যেতে বাধ্য।

13b605e23ec7ae50a8b6f6b56bde4dbd

কোবাতো বন্দনা বেশি করে ফেলছি, কারণ আমার এই ইউজলেস মেয়েটাকে দেখে খুব বেশি ভাল লেগেছে। এখন একটু অন্যদের কথাও বলা যাক!

আমি ফুজিমোতো আর কোবাতোকে শুরুতে দেখে, এমনকি প্রায় ১৯-২০ এপিসোড পর্যন্ত দেখেও কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে এই দুটোকে কিভাবে কাপল হিসেবে কল্পনা করব। কিন্তু শেষের দুই এপিসোড যা দেখাল :’) আমার পছন্দের কাপলগুলোর একটা (অ্যাজ ইফ আমার আর কোন পছন্দের কাপল আছে :v) হয়ে গেল কোবাতো – কিওকাযু। মাঝে অল্প সময় সেকেন্ড লিড সিন্ড্রোম ধরি ধরি করছিল, এখন সেটা পালিয়ে গেছে।

আর সবচেয়ে বড় কথা, একটা স্টোরি খালি বানালেই হয়না, সেটার এক্সিকিউশন সেইরকম না হলে আলটিমেটলি অত উপভোগ্য হয়না। কোবাতোকে প্রথমে দেখে তার অতি এন্থুসিয়াস্টিক আচরণ দেখে মেয়েটাকে এনোয়িং লাগছিল, কিন্তু আনিমে আগাতে আগাতে পুরাই “I want to protect that smile” ফিল এনে দিল, যেমনটা কিওকাযুর সাথে ঘটল, সেটা যেন আমার সাথেও ঘটল। বিরক্ত লাগে, কিন্তু সামহাউ রাগ ওঠে না। আনিমের প্রতিটা চরিত্রকেই কাহিনীর প্রয়োজনে খুব দ্রুত, কিন্তু সুচারুভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, এতে পরিবর্তনটা চোখে লাগে না, কিন্তু মনে প্রভাব ফেলে। ফুজিমোতো কিওকাযুর ডেভেলপমেন্টটা বিশেষ করে আমার খুব ভাল লেগেছে। ওর শূণ্যতাগুলো যেন নিজে অনুভব করতে পারছিলাম।

আর ক্ল্যাম্পের মেয়েগুলাকে পেলে যে কি করব 😐 😐 প্রত্যেকটা ছেলেকে এত বেশি ইকেমেন বানাতে কে কইসে এদের :’| কিওকাযু চেতলেও চেহারা কি সুন্দর দেখা যায় <3

আর হ্যাঁ, ক্ল্যাম্প ভার্সের ইস্টার এগ!! ওয়াতানুকিকে দেখাল, তাও আবার তার কুল ফর্মে <3 আবার সুবাসার ক্যারেক্টারদের নিয়ে আস্ত একটা পর্বই দিয়ে দিল!! খুব ভাল লেগেছে :’) ফাইকে আবার দেখলাম <3 এছাড়া চবিটস এর মেইন ক্যারেক্টাররা এখানে পার্মানেন্ট চরিত্র হিসেবে আছে, সেটিং এও মিল আছে দুই আনিমের।

সবমিলিয়ে কোবাতো আনিমেটি আমার খুবই ভাল লেগেছে। সুইট একটা স্টোরি, মন ভাল করে দেবার মত মিষ্টি একটা আনিমে।

07a75ed2b83a14c71e191566552f29d1

গেট ইওর ডেইলি ডোজ অফ শিরোকুমা পান; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

খুব সাধারণ একটা নাম আনিমেটার, শিরোকুমা ক্যাফে, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় শ্বেতভল্লুকের কাফে। আনিমেটা খুঁজে পেয়েছিলাম আমার বিভিন্ন পছন্দের সেইয়্যুদের কাজ চেক করতে করতে। তেমন কিছু আশা করিনি, ভেবেছিলাম শ্বেতভল্লুক ক্যাফে চালাবে, সেখানে অন্য প্রাণীদের ইন্টের‍্যাকশন দেখাবে হয়ত। ৫০ এপিসোড দেখে একটু চিন্তায় ছিলাম যে এতগুলো এপিসোডে এত কি দেখানো যায় একটা ক্যাফে নিয়ে।

আমার আন্দাজ একই সাথে ঠিক ছিল, আবার ভুল। লিটারেলি বললে আমার বর্ণনাই ঠিক, কিন্তু এইটুকু বর্ণনা দিয়ে শিরোকুমা ক্যাফে আনিমে সম্পর্কে কিছুই বলা হয় না।

এই আনিমে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, আমার অনেক পছন্দের আনিমে আছে, যা অন্যদের এতটা ভাল লাগেনা, এবং আমি বুঝতেও পারি যে তাদের কেন ভাল লাগছে না। কিন্তু এই আনিমেটা কেউ পছন্দ করবে না, এটা ভাবলেও কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে। কেন করবে না?! শিরোকুমার পানগুলো শুনলে একজন মানুষের কেন হাসি আসবে না! পেঙ্গুইনের হারেম (যা কিনা সেইম সেইয়্যুর অন্য যেকোন বিখ্যাত হারেমকে পেছনে ফেলে দেয়) দেখলে কেন কেউ মজা পাবে না! পাণ্ডার অলসতা এবং সেগুলোর পেছনের কঠিন যুক্তি কেন কাউকে ভাবিয়ে তুলবে না! বা নামাকেমোনো বা জৌগামে সানের দৃঢ় মনোবল দেখে কার মন ভরে উঠবে না!

আনিমের বেশিরভাগ চরিত্র প্রাণী, এমন আনিমে এই প্রথম দেখছি না, কিন্তু এমন অসাধারণ চরিত্রায়ন আমার মনে হয়না খুব বেশি দেখেছি। সবচেয়ে যে জিনিসটা ভাল লেগেছে, আনিমের বাঘা বাঘা সেইয়্যুদের সেরা পারফরমেন্স দেখতে পেয়েছি। প্রতিটা চরিত্রের সাথে তারা এমনভাবে মিশে গেছেন, কখনো মনে এই প্রশ্নটা আসতেই দেননি যে এতগুলো প্রাণী মানুষের মত কেন চলাফেরা করছে!

আনিমের আরেকটা ভাল দিক আমার মনে হয়েছে এর ওপেনিং আর এন্ডিং গানগুলো। তিনটি ওপেনিং, তার মাঝে প্রথম ওপেনিং “বোকু নি ইনিভিটেশন” এত বেশি ভাল, যে বাকি দুটো গান ভাল হওয়া সত্ত্বেও প্রথমটার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। আর এন্ডিং অনেকগুলো ছিল, এবং প্রায় প্রতিটাই আনিমের কোন না কোন চরিত্রকে ফোকাস করে। আমার লামা সানের এন্ডিং টা সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে। আর একেবারে শেষ এন্ডিং টায় শিরোকুমা সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে থাকে, শুনে খুব মন খারাপ হচ্ছিল যে এত সুন্দর আনিমেটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শিরোকুমা ক্যাফে নিয়ে আসলে কথা শেষ হওয়ার নয়। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি আনিমেটার, একেকটা হাসির মুহূর্ত তিন চারবার করে পেছনে টেনে দেখেছি। শিরোকুমার পানের স্ক্রিনশট দিয়ে আমার গ্যালারী ভরে গেছে। বোকু নি ইনভিটেশনের সাথে সুর মেলাতে মেলাতে মুখস্থ হয়ে গেছে। এমনকি পরের পর্বের প্রিক্যাপের কার্ডগুলোও খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতাম। শেষ পর্বের শেষ কার্ডে যখন “সি ইউ এগেইন” লেখা উঠল, খুব মন খারাপ হয়ে গেছিল, কারণ সেটা প্রচারের পর পাঁচ বছর হয়ে গেছে, কোন ছোটখাটো ওভিএ স্পেশাল কিছুই নেই এরপর। এক চেরি ব্লসম ভিউইং থেকে আরেকটা, খুব সুন্দর একটা জার্নি ছিল ক্যাফের সাথে।

My invitation came without any prior notice. I accepted it, went to this wonderful cafe knowing nothing, enjoyed myself to the fullest. Now that the party is over, I can’t even think of moving on..

Screenshot_2017-07-12-22-05-43-741_com.mxtech.videoplayer.ad

মুশিশি রিভিউ; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

2_mushishi

আচ্ছা, আপনাদের কি সেই বজ্রাহত অভিমানী ছেলেটার সাথে পরিচয় আছে? সেই ছেলেটা, যে অভিমান করে বজ্রপাতের আওয়াজ পেলেই ছুটে গিয়ে বাড়ির সামনের লম্বা গাছটাতে উঠে বসে থাকে? অথবা সেই হতভাগ্য সন্তানের সাথে, নিতান্তই কৌতুহলের বশে রাতের বেলা শিস বাজিয়ে পাখি ডাকতে গিয়ে যে দুর্ভাগ্য টেনে আনে নিজ পরিবারের ওপর। অথবা সেই পরিশ্রমী লোকটির কথা কি জানেন, যে শীত-গ্রীস্ম কোন কিছুর পরোয়া না করে পাহাড়ের ঢালে কাজ করে যেত দিনরাত, যে কারণে তুষার ঝড়ের মাঝেও সেই পাহাড়ে দেখা যেত সোনালি ফসলের হাসি। কিংবা সেই অদ্ভুত পাহাড়ের কথাই ধরুন। বসন্তের ছোঁয়া লাগতে মাসখানেক দেরি হয়ে যায় যে পাহাড়ে, শীতকাল চলে যেতে যেতেও বারবার ফিরে আসে সেখানে, এখনও কাজ শেষ হয়নি যে তার এখানে!!

মুশিশি অ্যানিমেটির ব্যাপারে কেউ আমাকে প্রশ্ন করলে বিপদে পড়ে যাই। ছোট ছোট এমন অসংখ্য কাহিনী একসাথে মনের আয়নাতে যেন ভেসে ওঠে। আর উঠবেই বা না কেন, মুশিশির কাহিনীটাই যে অমন! কোন ধারাবাহিকতা নেই এই অ্যানিমেটির, আপনি যেকোন পর্ব থেকে অ্যানিমেটি দেখা শুরু করতে পারেন, কাহিনীর তাতে কোনই ক্ষতি হবে না। একেকটি পর্ব একেকটি পরিপূর্ণ ছোট গল্প। এই অসংখ্য ছোটগল্পগুলোর মাঝে যোগসূত্র একটিই, আর তা হল এক আত্মিক ফেরিওয়ালা, যার নাম গিনকো।

21368_mushishi

গিনকোর ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর বর্ণনাটা বোধহয় মুশিশির প্রথম ওপেনিং এই বলা হয়েছে। “I walk a thousand miles to see you.” না, প্রেয়সীকে দেখার জন্য সহস্র মাইল দূরত্ব পাড়ি দেয়না গিনকো। গিনকো এক যাযাবর, যে দেশ-বিদেশে ঘুরে ঘুরে মুশি দেখে, মুশির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে, তার নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সাহায্য করে পীড়িত মানুষদেরকে।

কিন্তু এই মুশি জিনিসটা কি? সোজা বাংলায় বলতে গেলে, মুশির শাব্দিক অর্থ পোকা। কিন্তু অ্যানিমেতে মুশি জিনিসটা সাধারণ পোকার চেয়ে একটু আলাদা। সবাই তাদের দেখতে পায় না, কিন্তু তারা বাস করে মানুষের আশেপাশেই। কিছু মুশি মানুষের উপকার করে। কিছু আবার ডেকে আনে ভয়ানক দুর্ভাগ্য। গিনকো এই সমস্ত মুশি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করে বেড়ায় ঘুরে ঘুরে।

মুশিশি অ্যানিমেটা আমি দেখা শুরু করি ৩৬০ পি ফাইলে, বন-জঙ্গল আর মানুষ মিলেমিশে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়েছিল, কিছুই আলাদা করে চেনার উপায় ছিল না। তার ওপর প্রথম পর্বে বেশ গা শিরশির করা একটা মুশির কাহিনী বর্ণনা করা হয়, যেটা দেখে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিলাম। তাই ১০ পর্ব দেখে অনেকদিন ফেলে রেখেছিলাম। কিন্তু মাথায় সবসময় এর ওএসটিগুলো ঘুরত। তাই একদিন আবার মুশিশি দেখা শুরু করি, এবার ভাল কোয়ালিটির ফাইলে। এবং একটা পর্ব দেখেই আমি চমকে যাই! সম্ভবত আমার দেখা সেরা বন-জঙ্গলের আর্ট আছে মুশিশিতে- এবং কথাটা মোটেই বাড়িয়ে বলা নয়।

517747

এতকিছু বলার কারণ হল, প্রথম কথা, মুশিশি দেখতে গেলে অবশ্যই ভাল কোয়ালিটির ফাইল জোগাড় করবেন। তা না হলে এর সৌন্দর্য আপনি ধরতেই পারবেন না। দ্বিতীয়ত, মুশিগুলোকে দেখে প্রথম প্রথম ক্রিপি লাগতে পারে অনেকের। কিন্তু কয়েক পর্ব দেখে ফেলুন, এরপর আবিষ্কার করবেন, কেমন যেন একটা নেশার মত ধরে গেছে, একের পর এক এপিসোড দেখেই যাচ্ছেন অন্যকিছু চিন্তা না করে। মনে হবে যেন গিনকোর সাথে সাথে আপনিও হেটে চলেছেন পাহাড়ি রাস্তা ধরে, মাথায় খড়ের হ্যাট আর পিঠে জীর্ণ বোঝাটা নিয়ে!

মুশিশি আপনাকে মানব জীবনের মূল্য নতুন করে বুঝতে শেখাবে, আশেপাশের পরিচিত জগৎটাকে নতুন করে চিনতে শেখাবে। সেই সাথে আপনার সারাদিনের ক্লান্তিকে দূর করে দেবে এক নিমিষেই। তাই মনকে প্রশান্তি দেয়া কোন অ্যানিমে দেখতে চাইলে দেখা শুরু করুন মুশিশি। পুরো ফ্র্যাঞ্চাইজ দেখার সিক্যুয়াল হল-

Mushishi
Mushishi Special: Hihamukage
Mushishi Zoku Shou
Mushishi Zoku Shou: Odoro no Michi
Mushishi Zoku Shou: 2nd Season
Mushishi Zoku Shou: Suzu no Shizuku

1184100-2016-mushishi-hdq-wallpaper

One Week Friends রিভিউ; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

Screenshot_2016-03-26-17-36-00-1

আজ দেখে শেষ করলাম ব্রেইনস বেইজের অ্যানিমে- Isshuukan Friends / One Week Friends.

কাওরি ফুজিমিয়াকে বলা যায় ক্লাসের সবচেয়ে ইউনিক মেয়ে। কারও সাথে কথা বলে না, যন্ত্রের মত স্কুলে আসে যায় আর পড়াশোনা করে। তার শীতল নির্বিকার চাহনি দেখে ক্লাসের অন্য স্টুডেন্টরা তার সাথে কথা বলতে ভরসা পায় না। এই কাওরিকে হঠাৎ একদিন বলে বসল হাসে ইউকি নামের ছেলেটি, “I’d like for us to be friends!!”

চমকে গেল কাওরি। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বিনীতভাবে হাসেকে প্রত্যাখ্যান করে দৌড়ে চলে গেল সে।

Screenshot_2016-03-26-17-35-18

এইটুকু বর্ণনা শুনলে যে কারও মনে হতে পারে, Yet another typical romance story. কিন্তু না, এরপরের কাহিনীতে আছে একটা রহস্য।

নাছোড়বান্দা হাসে তারপরেও কাওরির সাথে কথা চালিয়ে যেতে লাগল। এবং কাওরি নিজেও খেয়াল করল না যে কখন সে না চাইতেও নিয়মিত হাসের সাথে বন্ধুর মতই সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু এদিকে সোমবার যে এগিয়ে আসছে! সোমবার এলেই তো কাওরির পৃথিবী রিসেট হয়ে যাবে! কিভাবে হাসের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করবে তখন সে?

অ্যানিমেটার কাহিনী নরমাল রমকম অ্যানিমের মতই, কিন্তু এই রহস্যটার কারণে কাহিনীটা আমার কাছে বেশ ইউনিক লেগেছে। যদিও এই প্লট নতুন দেখছি না, বহু আগে দেখা একটি ইংরেজি মুভিতে প্রায় এরকম একটা কাহিনী দেখেছিলাম, তাও এই অ্যানিমেতে রহস্যটা যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা আমার ভাল লেগেছে। রোমান্সের দিকে নজর না দিয়ে কাওরি ও হাসের অন্যান্য ক্লাসমেটদের সাথে সম্পর্ক ও তাদের নিজেদের ডেভেলপমেন্ট এর দিকে বেশি ফোকাস করা হয়েছে – এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক যেটা অ্যানিমেটাকে বোরিং হতে দেয়নি। স্লাইস অফ লাইফের মত কিছুটা ধীরগতির হলেও তা কাহিনীটাকে উপভোগ্য করে তুলেছে বলে আমি মনে করি।

Screenshot_2016-03-26-20-37-02-1

শুরুতেই ব্রেইনস বেইজের কথা উল্লেখ করেছিলাম, কারণ এই স্টুডিওটি আমার অত্যন্ত পছন্দের অ্যানিমে নাতসুমে ইউজিনচৌ এবং মুভি হৌতারুবি নো মোরি ই তৈরি করেছে, আর এ দুটোর আর্টের সাথে ইশশুকেন ফ্রেন্ডস এর আর্টে অনেক মিল। ক্যারেক্টার ডিজাইন বেশ সুন্দর, ব্রেইনস বেইজের কাজ মনে হয়েছিল দেখার সময়ই। ওএসটি অ্যানিমের থিমের সাথে মানানসই, ওপেনিং টা বেশ সুন্দর।

সবমিলিয়ে মাত্র ১২ পর্বের বেশ সুন্দর একটা স্লাইস অফ লাইফ অ্যানিমে এটি, চাইলে দেখে ফেলতে পারেন।

Screenshot_2016-03-26-17-35-36-1

হানাসাকু ইরোহা রিভিউ; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

tumblr_mb3x3lVTdH1qzd219o1_500

হানাসাকু ইরোহা দেখে শেষ করলাম। শুরু থেকেই আর্ট এবং ক্যারেক্টার ডিজাইন দেখে আমার তারি তারি অ্যানিমেটার কথা মনে পড়ছিল, ম্যাল ঘেটে দেখলাম যা ভেবেছি তাই; দুটো অ্যানিমে একই স্টুডিওর বানানো। পিএ ওয়ার্কস স্টুডিওটির জন্য মোট ৩৪ টি টাইটেলের এন্ট্রি পেলাম (সেকেন্ড সিজন, ওভিএ, মুভির হিসাব সহ) এর মাঝে এঞ্জেল বিটস, এনাদার, শার্লট, শিরোবাকো নামগুলো চোখে পড়ল। হানাসাকু ও তারি তারির আর্ট খুব সুন্দর লেগেছে আমার, কিন্তু শার্লট আর এঞ্জেল বিটস সে তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর আর ঝকঝকে ছিল।

ohana

স্টুডিও বন্দনা শেষ, এখন আসি হানাসাকু ইরোহা অ্যানিমেটির কথায়।

Hanasaku_Iroha

ওহানা একজন হাইস্কুল স্টুডেন্ট, মায়ের সাথে টোকিওতে থাকে। ওহানার মা একজন সুন্দরী ও খুবই খামখেয়ালি ধরণের মানুষ, ওহানার ওপর ঘর সামলানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সারাক্ষণ নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন। এভাবেই চলছিল মা-মেয়ের সংসার, কিন্তু একদিন হঠাৎ বাধল বিপত্তি। ওহানার মা ও তার ছেলেবন্ধু একদিন ঠিক করলেন, চাঁদের আলোয় বাড়ি ছেড়ে পালাবেন তারা একজন আরেকজনের হাত ধরে। কারণ তাদের পেছনে লেগে আছে পাওনাদারেরা! ওহানাকে নিয়ে পালানো সম্ভব না, তাই ওহানার মা তাকে ধরিয়ে দেয় একটি “অনসেন ইন” এর ঠিকানা, যেটির মালিক ওহানার নানী। নিরূপায় ওহানা তার টোকিওর বন্ধুবান্ধব ও জীবনযাত্রা ছেড়ে রওনা দেয় ছোট শহরের সেই অনসেনের উদ্দেশ্যে।

অনসেনে যেতে যেতে ওহানা যা ভাবছিল, সেখানে গিয়ে তার কিছুই হল না। ওহানার নানী একজন কর্মপাগল মহিলা, কাজের বাইরে কোন কিছুই চোখে পড়েনা তার। ওহানার নতুন জীবন শুরু হল একজন অনসেন ওয়েইট্রেস হিসেবে, আর আস্তে আস্তে সে পৃথিবীটাকে নতুন রূপে দেখতে শিখল।

iroha

স্লাইস অফ লাইফ অ্যানিমের গতানুগতিক প্যাটার্নের চেয়ে এই অ্যানিমেটি অন্যরকম, এখানে শান্তিময় জীবনের ওপর ফোকাস করা হয়নি, বরং ওহানার জীবনের সংগ্রামগুলোর ওপর ফোকাস করা হয়েছে। শুরুটা বেশ সিরিয়াসভাবে হয় এই অ্যানিমের, কিন্তু পরে ওহানা কাজের মাঝে যেভাবে আনন্দ খুঁজে নেয় ও সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করে, তা দেখে খুব ভাল লাগে। হাসার মত অনেক ভাল ভাল মোমেন্ট আছে অ্যানিমেটিতে। ক্যারেক্টারগুলো খুব সহজেই আপন হয়ে যায়, কখন যে ওদের সাথে আপনিও কিসসুইসোর অংশ হয়ে গেছেন, টের পাবেন না।

আর্টের ব্যাপারে আগেই বলেছি, প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ওএসটি মানানসই, অ্যানিমের বিভিন্ন মুডকে ফুটিয়ে তুলেছে। ভয়েস অ্যাক্টিং টা আমার অনেক ভাল লেগেছে, প্রতিটি ক্যারেক্টারের সাথে কণ্ঠ খুব সুন্দর মানিয়েছে।

অ্যানিমেটির এন্ডিং টা একটু আশাহত করতে পারে অনেককে, তবে রিয়েলিস্টিক এন্ডিং হিসেবে আমার ভাল লেগেছে। এছাড়া পুরো ২৬ পর্বে এত এত ছোট ছোট কিন্তু সুন্দর সব ঘটনা ঘটে, সেগুলো সবই অ্যানিমেটিকে মনে রাখার মত একটি সিরিজে পরিণত করেছে। তাই সবাইকে সাজেস্ট করব এই সুন্দর অ্যানিমেটি দেখতে।

Hanasaku.Iroha.full.837892

জিগোকু শৌজো রিভিউ; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

জিগোকু শৌজো / হেলগার্ল সিজন ১ দেখে শেষ করলাম। শুরু করেছিলাম অনেকদিন আগে, প্রায় আট নয়মাস হবে। শুরুর দিকে খুব ইন্টারেস্টিং লাগছিল, কারণ মানুষের মনের কদাকার রূপগুলোকে খুব বাস্তবসম্মত ভাবে তুলে আনা হয়েছিল, মনে কিছুটা চাপও পড়ছিল। কিন্তু ১০-১১ টা পর্যন্ত দেখার পর আবিষ্কার করলাম, জিনিষটা বেশ বোরিং হয়ে গেছে, কারণ প্রতি এপিসোডের কাহিনী একইরকম। ভয়াবহ রিপিটেশন দেখে বোর হয়ে তখন আপাতত বাদ দিয়েছিলাম, এতদিন পর অবশেষে বাকি এপিসোড গুলো দেখলাম। এবং দেখে স্বস্তি পেলাম যে, রিপিটেশন পুরোপুরি দূর না হলেও, শেষদিকে হাজিমে ও তার মেয়ে সুগুমির কাহিনী ইনক্লুড হওয়ার কারণে জিনিষটা অনেক ইন্টারেস্টিং ভাবে শেষ হয়েছে।

ভেবেছিলাম অল্প কথায় রিএকশন লিখে পোস্ট করব, এখন দেখছি বলার মত অনেক কথা মাথায় ঘুরছে। রিভিউ লিখেই ফেলি ছোট করে।

Enma.Ai.full.722587

পৃথিবীতে যতদিন মানুষ থাকবে, ততদিন অন্যায়, অত্যাচারও থাকবে। দুর্বলেরা নির্যাতিত হবে, তাদের অধিকার খর্ব করা হবে, আর সবলেরা অন্যায়ভাবে সুবিধা ভোগ করবে। ন্যায়বিচার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক দিবাস্বপ্ন; নির্যাতিতের মনে তাই জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের আগুন। ক্লাসে আপনার পাশে বসা মেয়েটিই হয়ত আরেকটি মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামত তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নিচ্ছে, আপনি টেরও পাচ্ছেন না। অথবা পাশের বাড়ির যে মহিলাটিকে কিছুদিন আগে দুশ্চরিত্রা অপবাদ দেয়া হল, কেউ খোঁজ নিয়েও দেখল না যে বাস্তবে সে কত বড় ষড়যন্ত্রের শিকার। কিংবা হাসিমুখে আপনাকে সাহায্য করতে আসা প্রতিবেশীটি হয়ত মনে মনে আপনার ক্ষতি করার প্ল্যান নিয়ে এসেছে, আপনি যখন জানবেন, ততক্ষণে সব শেষ, কিচ্ছু করার নেই।

এইসব মানুষ কি তাহলে কোনদিন ন্যায়ের দেখা পাবে না? এভাবে অত্যাচারিত হয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে তাদের?

তাদের জন্য রয়েছে হেল লিঙ্ক। এমন একটি ওয়েবসাইট, যা শুধুমাত্র রাত ১২ টায় একসেস করা যায়, আর যা শুধু অত্যাচারিত মানুষই একসেস করতে পারে। আপনার সাথে যে অন্যায় করেছে তার নামটা লিখে দিন সেখানে, নরক কন্যা এনমা আই আপনার হয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। কিন্তু সেজন্য মূল্য দিতে হবে আপনাকে। আপনার মৃত্যুর পর অনন্তকালের জন্য আপনার আত্মার ঠাঁই হবে নরকে।

অ্যানিমেটির যে দিকটা আমার ভাল লেগেছে, আপনার নৈতিকতা, বিবেকবোধ এবং মনুষত্ব্যের মাঝে একটা ছোটখাটো গৃহ যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে অ্যানিমেটি, যা হয়ত ডেথ নোট, কোড গিয়াসও করতে পারেনি। কিরকম? আপনাকে প্রথমে নির্যাতিতের কষ্টটা প্রত্যক্ষভাবে দেখানো হবে। নির্যাতিতের ক্ষোভ আপনি নিজে অনুভব করবেন। আর যখন ভাগ্যের সেই লাল সুতো টেনে খুলতে সে দ্বিধাবোধ করবে, আপনার নিজেরই ইচ্ছে হবে যে গিয়ে সুতোটা খুলে দিয়ে আসি।

কিন্তু যদি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করা হয়, তাহলে ব্যাপার টা কি দাড়াতে পারে? এভাবে নিজের আত্মাকে অনন্তকালের জন্য বিসর্জন দিয়ে ক্ষণিকের মুক্তির জন্য প্রতিশোধ নেয়াটা কতখানি যৌক্তিক? প্রতিশোধের এই মরণচক্র তো তাহলে কোনদিন শেষ হবে না! রিপোর্টার হাজিমে ও তার মেয়েকে এনে অ্যানিমেটার কাহিনী আরও জটিল হয়েছে, কিন্তু সেইসাথে আরেকটা দৃষ্টিভঙ্গি দর্শকের সামনে উঠে এসেছে, তাই কাহিনীটা আরও ভাল লেগেছে।

অ্যানিমেটার আর্ট ভালই, ওএসটি অনেক সুন্দর। কাহিনীর পেসিং এ একটু সমস্যা আছে, এছাড়া ওভার অল এটি অবশ্যই সবার দেখার মত অ্যানিমে। শেষ দিকে জিগোকু শৌজোর লাইফ নিয়ে কিছু ঘটনা দেখানো হয়, এটা ভাল লেগেছে। সিজন টু দেখার জন্য আগ্রহ বেড়ে গেছে এখন।

jigoku_shoujo_sakura_kimono_girl_brunette_posture_29489_1920x1080

xxxHOLiC, একটি অলীক দিবাস্বপ্নের গল্প; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

কখনো চিন্তা করেছেন, আমাদের সাথে প্রতিদিন যে বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ঘটে, সেগুলোর পেছনে ভাগ্যের হাত না থেকে অন্যকিছুর হাত থাকতে পারে? হয়ত আমাদেরই অসতর্কতাবশত করা কোন ভুলের মাশুল এই ঘটনাগুলো! কর্মফলের কথা না ভেবে আপনি যে পিঙ্কি প্রমিসটা অতি সহজে ভেঙে ফেললেন, তা কিন্তু ডেকে নিয়ে আসতে পারে জীবন সংশয়ে ফেলার মত বিপদ! কিংবা খুব চেনা একটা প্রবচন – “রাতে নখ কাটলে আপনি আপনার বাবা মায়ের ফিউনারেলে উপস্থিত থাকতে পারবেন না”; কখনো কল্পনা করেছেন যে এই বাক্যটার পেছনে কোন গূঢ় অর্থ থাকতে পারে? ইচিহারা ইউকো সান কিন্তু তাই বলেন- “There is no such thing as coincidences in this world. There is only the inevitable.”

হলিকের পৃথিবীটা খুবই আজব। এখানে রয়েছেন ইচিহারা ইউকো সান, সৌন্দর্য ও জ্ঞানের সংমিশ্রণ একইসাথে যার মাঝে বিদ্যমান। পৃথিবীর সব ধরণের সুপারন্যাচারাল ঘটনার ব্যাখ্যা মিলবে ইউকো সানের ইচ্ছাপূরণ দোকানে; যে দোকানের দেখা শুধু তারাই পায়, যাদের কোন অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। যে কোন আশা পূর্ণ করতে পারবেন ডিমেনশনাল উইচ ইউকো সান, যদি আশার সমপরিমাণ মূল্য তাকে দেয়া হয়। এবং সেই মূল্য কখনোই অর্থ দিয়ে বিচার করা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে, আপনার মৃত দাদার রেখে যাওয়া একমাত্র স্মৃতিটা, কিংবা আপনার মাথার প্রিয় চুলগুলোই হল আপনার আকাঙ্ক্ষার মূল্য!

635814093931043176

এই আজব পৃথিবীর এক আজব বাসিন্দা ওয়াতানুকি কিমিহিরো। ছোটবেলায় বাবা মা হারানো হাইস্কুল পড়ুয়া এই ছেলেটির দুর্ভাগ্য, সে ইয়োকাই দেখতে পায়। ইয়োকাইরা তাকে তাড়া করে প্রায়ই, আর তাই প্রাণের ভয়ে দৌড়াতে থাকা ওয়াতানুকিকে দেখে সাধারণ মানুষের তাকে পাগল বলে মনে হয়।

এভাবে এক সকালে দৌড়াতে দৌড়াতে ওয়াতানুকি পৌছে যায় ইউকো সানের দোকানে; কে জানে, হয়ত ইয়োকাইয়ের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষাই তাকে টেনে নিয়ে যায় ওখানে!

অ্যানিমেটির কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে ওয়াতানুকিকে ঘিরে। শান্তশিষ্ট, সোজা সরল, কর্মঠ এবং কিছুটা শর্ট টেম্পার্ড এই ছেলেটিকে বড় বোনের মত আগলে রাখেন ইউকো সান, অ্যানিমে যত সামনে আগায়, তত তা স্পষ্ট হয়। সবসময় বিভিন্নভাবে ওয়াতানুকির সাথে খুনসুটি করতে থাকা ইউকো সানের ব্যক্তিত্ব পুরোপুরি পালটে যায়, যখন তিনি আশা নিয়ে দোকানে পা রাখা কাষ্টোমারদের ইচ্ছা পূরণ করেন। তার সাথে আরও রয়েছে মারু-মোরো এবং মোকোনা, যাদের ছাড়া হলিক অ্যানিমেটি অপূর্ণ রয়ে যেত।

এছাড়া হলিকে আরও দুজন ইমপর্ট্যান্ট ক্যারেক্টার রয়েছে, দৌমেকি শিজুকা এবং ওয়াতানুকির ক্রাশ হাসিখুশি এবং মিশুক হিমাওয়ারি কুনোগী। দৌমেকিকে বলা যায় ওয়াতানুকির বিপরীত; অ্যাভারেজ মানুষের আইডিয়াল অ্যানিমে ক্যারেক্টার। ওয়াতানুকিকে জ্বালানো তার অন্যতম প্রধান কাজ, কিন্তু তা তো ভাল বন্ধুত্বেরই একটা সাইন! তিনজনেই একে অন্যের বিপদে নিজের জীবন বিপন্ন করতে কখনো পিছপা হয়না।

হলিক অ্যানিমেটির সিজন ১ এর কাহিনী এপিসোডিক, দেখে মনে হতে পারে যে এই অ্যানিমেটার মূল থিম হল “ডেইলি লাইফ অফ ওয়াতানুকি অ্যান্ড ইউকো”। কোন একজন মানুষের উইশ এবং সেটার সাথে জড়িত ঘটনা বা দুর্ঘটনা একটা এপিসোডেই শেষ হয়ে যায়। এতে ঘটনাগুলো অনেক ইন্টারেস্টিং, কিন্তু অনেকের মনে হতে পারে, “when does the story actually kick off?” তাদের জন্য বলছি, এপিসোডিক ব্যাপারটা সিজন ১ এই শেষ। হলিকের দুনিয়ার সাথে সিজন ১ এ পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর সিজন ২ তে শুরু হয় ওয়াতানুকিকে ঘিরে সব টুইস্ট। এই সিজনে কাহিনীটা বেশ ডার্ক একটা মোড় নেয়, বেশ বড় একটা ধাক্কা ছিল সেটা আমার জন্য। সব ক্যারেক্টারের ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়, আর সেটার পরিণতি দেখা যায় এর ওভিএ, রৌ তে। ওয়াতানুকির ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট আমার দেখা অন্যতম সেরা। দুই পর্বের ওভিএটি শুরু হয় একটি দুঃখের সংবাদ দিয়ে, আর শেষ হয় একটি আশার আলো দেখিয়ে।

হলিক অ্যানিমের দূটি স্ট্রং পয়েন্ট হল এর আর্ট এবং ওএসটি। ক্ল্যাম্পের ডিজাইন করা চিকন চিকন হাত পা দেখে অনেকেরই হয়ত অদ্ভুত লাগে, কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যটির জন্যেই ক্ল্যাম্পের আর্ট আমার পছন্দ। সিজন ১ এর শুরুর দিকে আর্টে কিছুটা ঘাটতি ছিল, এটা অস্বীকার করব না, তবে প্রোডাকশন আইজি সেটাও পরে ঠিক করে নিয়েছে, সিজন ২ এবং ওভিএগুলোর আর্ট নিখুঁত; মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার মত। আর ওএসটির যত প্রশংসা করা যায় কম হয়ে যায়, সুগা শিকাও এর পার্ফরম্যান্সে প্রতিটা ওপেনিং সুন্দর এবং সেইসাথে এন্ডিং গুলোও পাল্লা দিয়ে সুন্দর, এমনকি ওভিএগুলোর ওএসটিও একটাও স্কিপ করার মত না। প্রতিটা দৃশ্যের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পারফেক্টভাবে মানিয়ে গিয়েছে, আর ওপেনিং এন্ডিং গুলোর সুর আর ভিজ্যুয়াল যে রহস্যময় ভাইবটা দেয়, এককথায় অসাধারণ!

আরেকটা কথা উল্লেখ করাটা এখানে আবশ্যক, তা হল সেইয়্যু কাস্ট, অর্থাৎ কণ্ঠশিল্পীদের অবদান। ওয়াতানুকি চরিত্রটিকে প্রাণ দিয়েছেন জুন ফুকুয়ামা; আমার দেখা তার সেরা চরিত্র এটি। প্রথম এপিসোডের শুরুতেই ওয়াতানুকি যখন আয়াকাশিদের হাত থেকে পালাতে থাকে, এই একটা সিনই কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ফুকুয়ামা সানের দক্ষতা প্রমাণ করে দেয়। চঞ্চল হাইস্কুল পড়ুয়া কিশোর এবং পরিণত যুবক; দুটি রূপকেই তিনি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এছাড়া ইউকো সান চরিত্রে ওহারা সায়াকা, দৌমেকি শিজুকা চরিত্রে নাকাই কাজুয়া, হিমাওয়ারি কুনোগী চরিত্রে ইতোও শিজুকা, মোকোনা চরিত্রে কিকুচি মিকা; সবাই চমৎকার কাজ করেছেন।

xxxHOLIC 3

হলিকের মাঙ্গাটি পুরোটা পড়া হয়নি, তবে যেটুকু পড়েছি, তাতে বলতে পারি, মাঙ্গাটি আর্ট ও স্টোরির দিক থেকে অনন্য। তবে একে প্রাণ দিয়েছে অ্যানিমেটি।

সবমিলিয়ে সাইকোলজিক্যাল, মিস্ট্রি এবং সুপারন্যাচারাল জনরার এই অ্যানিমেটি আমার জীবনে দেখা অন্যতম সেরা অ্যানিমেগুলোর একটি; হিওকার সাথে যদি কোন অ্যানিমেকে স্থান দেই, তবে সেটা হলিক। আপনারা যারা দেখবেন, তাদের জন্য একটি সাজেশন, সিজন ১ এ থেমে যাবেন না, কারণ সিজন ২ থেকে কাহিনী জমে উঠতে শুরু করে। এই সিরিয়ালে দেখবেন –
xxxHOLiC – ২৪ এপিসোড
xxxHOLiC Kei – ১৩ এপিসোড
xxxHOLiC Shunmuki – ২ এপিসোড
xxxHOLiC Rou – ২ এপিসোড

এছাড়া এটির একটি মুভি আছে, xxxHOLiC Movie: Manatsu no Yoru no Yume; এটি সিজন ১ দেখার পরই চাইলে দেখতে পারবেন। এখানেও কিছু টুইস্ট আছে, যার রিভিউ আমি “মুভি টাইম উইথ ইয়ামি” তে দিয়েছিলাম।

FLAG!(2009) রিভিউ — Fahim Bin Selim

FLAG!(2009)
★★★★☆

[ইংলিশ ডাব]

অরিজিনাল নেট অ্যানিমেশন

জনরাঃ ওয়ার ড্রামা, মিলিটারী
প্রযোজকঃ দ্য অ্যান্সার স্টুডিও (Garden of Words, Golgo 13)
মূল ও পরিচালনাঃ রিওস্কে তাকাহাশি (Gasaraki, The Cockpit)

সেন্সরঃ সরাসরি ভায়োলেন্স অনুপস্থিত

মাইঅ্যানিমেলিস্ট রেটিংঃ ৭.৩৬(#২০২৬)

 

FLAG

গৃহযুদ্ধ-বিদ্ধস্ত উদিয়ানা(Uddyana). একে অনেকটা মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ এশিয়ার সংকর বলা যায়। একপাশে দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি আর বেদুঈনদের বাস, আরেকদিকে চারিদিক ঘেরা সুউচ্চ পাহাড়ের খাঁজে গড়ে ওঠা এর প্রধান শহর সুবাশি(Subasci) – আর তার মানুষ – সনাতন আর বৌদ্ধ ধর্মের মিশেলে এক ধর্মের অনুসারী যারা, আর তাদের প্রার্থণার বড় একটা অংশ জুড়েই হয়তো বা ছিলো চলমান যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রেহাই পাওয়ার ব্যগ্র কামনা।

সায়াকো শিরাসু – জাপানী অনুসন্ধানী চিত্র-সাংবাদিক – তরুণী। যুদ্ধের কারণেই উদিয়ানায় পা রাখা তার, জ্যেষ্ঠ আর অভিজ্ঞ কেইচি আকাগির সাথে।তারপর হঠাৎ যখন বিক্ষোভের উত্তাল এক মূহুর্তে  তার তোলা বিপ্লবীদের হাতে উড়ন্ত UNF(জাতিসংঘ)-এর পতাকার এক ছবি হয়ে দাঁড়ালো উদিয়ানার শান্তিচুক্তির শক্ত হাতিয়ার, পুরো জাতির আশার প্রতীক, তখন খুব দ্রুতই শিরাসুর জীবনের মোড় ঘুড়ে গেল। সে পেয়ে গেল নায়োকোচিত(নায়িকাচিত?) সংবর্ধনা, আর আন্তর্জাতিক খ্যাতি। কিন্তু চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আগেই অপহৃত হলো সেই বিখ্যাত পতাকা। UNF থেকে তৈরি করা হল গোপন এক মিলিটারী ইউনিট, একমাত্র লক্ষ্য – শান্তিচুক্তির আগেই সেই পতাকা পুনোরুদ্ধার। আর সেই পতাকার সাথে তার যোগসূত্র থাকায়, অনেকটা মাসকট হিসেবেই শিরাসুকে জুড়ে নেওয়া হল এই দলে। তার সু্যোগ মিললো পুরো অপারেশনটা ক্যামেরাবন্দী করার। আর চিরদিনের জন্য একটি জাতির কিংবদন্তীর অংশ হওয়ার।

vlcsnap-2016-02-11-00h04m03s203

পলিটিক্যাল ড্রামা অ্যানিমে তুলনামূলক কম হলেও, একেবারে কম না। কিন্তু এক্ষেত্রে FLAG এর বিশেষত্ব হচ্ছে তার গল্পের প্রেক্ষাপট, বাস্তব-বিশ্বের সাথে রিলেটেবলিটি আর অবশ্যই এর গল্পবর্ণনার পারস্পেরক্টিভ। আর এখানে এর কৌশলগত বিশেষত্বও। FLAG-এর পুরোটাই তার দুই মূল চরিত্র সাংবাদিকের চোখ দিয়ে দেখানো, এবং সেটা আক্ষরিক অর্থেই – FLAG হলো (সম্ভবত) প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র “Found Footage” টিভি অ্যানিমে। অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য এক কীর্তি বলেই মনে হবে! কিন্তু সত্যি সত্যি-ই, FLAG-এর ২০ মিনিট ব্যপ্তীর পুরো ১৩ পর্ব ধরে দেখানো প্রতিটি মূহুর্ত হয় তার চরিত্রদের তোলাঃ স্থিরচিত্র বা ভিডিও অথবা কম্পিউটার পর্দায় চলা কোন ফাইল অথবা হেলিকপ্টার, সমরযন্ত্রের ভেতর-বাইরের ক্যামেরায় বন্দী হওয়া দৃশ্য – যেগুলো কখনো কখনো কেবলই একগাঁদা স্থিরচিত্রের মনটাজ, কখনো বা সম্মুখসমরে চলা রুদ্ধশ্বাস কোন দৃশ্য, আবার কখনো বা দুপুরের ব্যস্ততার সময়টায় মিলিটারী ক্যাম্পের রাঁধুনীর একান্ত সাক্ষাৎকার।

vlcsnap-2016-02-12-16h31m54s196

“Found Footage” কায়দাটা “সত্যিকারের” ক্যামেরায় কাজে লাগানো যতটা সহজ, অ্যানিমেশনে ততটাই কঠিন, যেহেতু অ্যানিমেশন বানাতে কোন ক্যামেরা লাগেনা। সাধারন ক্ষেত্রে ক্যামেরার বিভিন্ন বিষয়গুলো খুব দ্রুত এবং সহাজাতভাবেই হয়, সেখানে অ্যানিমেটরদের তা প্রতিটি ফ্রেমেই আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। এটেনশন টু ডিটেইলস হাঁ করে দেওয়ার মত। FLAG-এর “পাওয়া ফুটেজ”-গুলো কেবল এক কোনায় “REC” আর আরেক কোনায় সময়-তারিখ দিয়েই শেষ হয়ে যায়নি, এর ক্যামেরাগুলো গল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে ক্যামেরাগুলো হঠাৎ সূর্যের আলোতে তাক করলে পর্দা অন্ধকার হয়, জুম-ইন আর জুম-আউটের সময় ঘোলাটে হয়ে যায়, বাহকদের কাঁপা কাঁপা হাতের সাথে তারাও নড়তে থাকে। অধিকাংশ সময়ই ফার্স্ট পারসন ভিউ থেকে দেখানো, শটগুলোও অনেক সময় দীর্ঘ আর আনকাট। আর একারণেই গল্পের দুই মূলচরিত্র শিরাসু আর কেইচির স্ক্রিনটাইম খুবই নগন্য। আমরা তাদের হাতে ধরা ক্যামেরার সাথেই পুরো উদিয়ানা চষে বেড়াই।

vlcsnap-2016-02-11-00h07m25s214

FLAG এর গল্প দুটো – সমান্তরালে চলা – শিরাসু আর কেইচির। শিরাসুর উপস্থিতি মিলিটারী ক্যাম্পের ভেতরে, যা আপাত নিরস, নির্মোহ সৈন্যদেরও – যাদের কাজই হচ্ছে মানুষের প্রাণ নেওয়া, সেটা সন্ত্রাসবাদ রুখতে কোন পরিকল্পিত আক্রমনের বলী চরমপন্থীই হোক, বা কোন “অঘটনে্র শিকার” সাধারণ মানুষে – মানবীয় দিক উপস্থাপনের প্রয়াস। আমরা শিরাসুর সাথে ঘুরে বেড়াই মিলিটারী ক্যাম্পের ব্যারাক, তার রান্নাঘর, তার পরিকল্পনা রুমে – আমরা তার সাথে হেলিকপ্টারে চড়ি, বেদুঈনদের সাথে দিন কাটাই, মধ্যরাতের রোমাঞ্চকর সব মিশনের সঙ্গী হই। আবার যুদ্ধ-রাজনীতির বিশাল বিস্তৃত সাদা-কালো ঘর করা ছকে ধীরে ধীরে সৈন্য শ্রেনীর গুঁটি হিসেবে আটকা পরি, আর বাকিদের মত।

HAVWC(team)

শিরাসু যেখানে বাইরের বিশ্ব থেকে বিযুক্ত, সেখানে কেইচি বরং সুবাশিতে আমাদের ভ্রমণসঙ্গী। আমরা তার সাথে পৌছাই বেজমেন্টের এক ক্যাফেতে যেখানে সব ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের আসর বসে, অথবা জ্যোৎস্না রাতে দেখে আসি উদিয়ানার শতাব্দী প্রাচীন এক ধর্মীয় আচার, কিংবা হতবিহবল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি সদ্য বোমা-বিদ্ধস্ত এক নগরীর ধ্বংসস্তুপে। কেইচি আমাদের ন্যারেটর। সে উদিয়ানার ইতিহাস সম্পর্কে জানায়, তার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানায় – আর আমরা যখন উদিয়ানার এই সমৃদ্ধ ইতিহাস আর তার প্রাণবন্ত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানি – তা কোন অংশেই “ফিকশনাল” মনে হয় না। যেন পৃথিবীর মানচিত্র ফুঁড়ে বের হওয়া জীবন্ত কোন দেশ। উদিয়ানার বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়ানো বাতাস আর এর রক্তভেজা পাহাড়, চারিদিক ছড়িয়ে থাকা এর মিথোলজি আর তার মানুষের জীবন-দর্শন, তাদের  অনিশ্চয়তায় ঘেরা বর্তমান আর আশায় বুক ভরা ভবিষ্যতের সাথে আমরা একাকার হই।

vlcsnap-2016-02-11-00h05m48s18

“Now we are out of place in our own home,” কেইচি সেইসব মানুষের ছবি তুলে, তাদের গল্প শুনে।  “You take our pictures and go home. But we have to stay here and live through all of this. Because this is the only place we can stay.”  তাদের মুখে লেগে থাকা স্মিত হাসির গভীরে দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। লুকিয়ে রাখা সেইসব ক্ষত জট পাকিয়ে বেরিয়ে আসে, দুই পাহাড়ের মাঝখানে অস্ত যাওয়ার সূর্যের ক্ষনিক আভায় দ্যুতি ছড়ায়। কেইচির ক্যামেরায় আটকা পরে যুদ্ধের রেখে যাওয়া ধ্বংসলীলা।

vlcsnap-2016-02-12-16h32m58s66

ইংলিশ ডাবের ভয়েস অ্যাক্টিং সহজাত। আর্ট আর অ্যানিমেশন চমৎকার। এমনকি থ্রিডি অ্যানিমেশনও আর বেশিরভাগ অ্যানিমের চেয়ে ভালো। আর সবকিছুর মতই এর ক্যারেক্টার আর মেকা ডিজাইনও বাস্তবস্মত। যুদ্ধযন্ত্রগুলো এক লাফে দশ ফুট উঠে যায় না, আকাশে ভেসে বেড়ায় না। বরং যখন নতুন তাতে নতুন এক রাইফেল লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়, তখন বেশ কঠিন অংক কষেই তার পরিমার্জন করা হয়। তাদেরও দূর্বলতা, সীমাবদ্ধতা আছে। তারা পদার্থবিজ্ঞানে সূত্র মেনেই চলে। মেকা অ্যাকশন দৃশ্য হাতে গোনা এবং সাধারণ, বরং এর ক্যারেক্টার ড্রামাই গল্পের মূল আকর্ষন।

vlcsnap-2016-02-12-16h30m39s177

এর চরিত্ররদের মুভমেন্ট, ফেস এক্সপ্রেশন বাস্তবসম্মত না হয়েও বাস্তবসম্মত – সর্বদাই ক্যামেরা সামনে থাকায়, সেলফ-অ্যাওয়ার হওয়ায়, আলাদা একটা অস্বস্তি, জড়তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর এখানেই মূলত FLAG ভালো লাগা, না-লাগার ব্যাপারটা এসে যায়। এর গল্প যতই আকর্ষনীয় হোক, ন্যারেটিভ স্টাইলকে কোনভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। তার চরিত্রগুলোর মতই ক্যামেরার উপস্থিতি সবসময়ই আমাদের চোখে লেগে থাকে। তার সাথে মানিয়ে নিতে না পারলে ১৩ পর্ব ধরে বসে থাকার মত ধৈর্য্য হওয়ার কথা না। FLAG-এর পেসিং ধীরগতির না হলেও, তখন সেটা “বোরিং” লাগাই স্বাভাবিক।

FLAG অনুসন্ধানী-সাংবাদিকতার প্রতি প্রেমপত্র। একে অ্যানিমেটেড স্যুডো-ডকুমেন্টারি বলা যায়, অথবা তার চেয়েও বেশি বলা যায় কোন ভবিষ্যৎ ডকুমেন্টারি বানানোর পেছনের গল্প – তার কাঁচামাল ইমেজ আর ভিডিওর সমাহার মাত্র। সেই ডকুমেন্টারি আদৌ বের হয় কিনা আমাদের জানা সম্ভব না। কারণ FLAG-এর কাহিনী অসমাপ্তই থেকে যায়। পৃথিবীর বুকে চলতে থাকা বর্তমান সব যুদ্ধের মতই কি না?

রোমিও এক্স জুলিয়েট রিভিউ; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

12513956_586684758162701_8807651964706537406_o

নায়ক এবং নায়িকা, দুজনেই শহরের দুই অন্যতম প্রভাবশালী গৃহস্থের সন্তান। এই দুই পরিবারের মাঝে আবার সাপে-নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু তারপরেও ঘটনাক্রমে (!) নায়ক-নায়িকার সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর শুরু হয় লড়াই ও যত দুনিয়ার ঝামেলা।

শেকসপীয়ার সাহেব সেই কবে এই এক কাহিনী শুরু করে দিয়ে গেছেন, এরপরে এই কাহিনীই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সারা দুনিয়াতে অন্তত কয়েক হাজারবার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য মুভি/সিরিজ। আর এই নতুন মোড়কে পুরান কাহিনী সিরিজেরই আরেকটি হল আজকের আলোচ্য অ্যানিমে, “রোমিও এক্স জুলিয়েট”।

প্রশ্ন জাগতে পারে, রোমিও জুলিয়েট এর প্রেমকাহিনী তো জানিই, তাহলে আর এই অ্যানিমে নিয়ে এত ভেজাল করার দরকার কি? ২৪ এপিসোড সময় নষ্ট করে সেই “হোয়্যারফোর দাউ আর্ট রোমিও?” র গাপানি ভার্শন কে দেখে?

এখানেই মজাটা। সেটিংটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, আপনার মনেই হবে না যে এটা আসলে শেকসপীয়ার সাহেবের কাছ থেকে ধার করা কাহিনী। কারণ এই অ্যানিমেতে শেকসপীয়ার সাহেব নিজেই যে একজন চরিত্র!! সেটিং টা এমনভাবে করা, যেন মনে হয় যে এই ঘটনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই উইলিয়াম শেকসপীয়ার তার বিখ্যাত উপন্যাসটি লিখেছেন।

12604943_586684761496034_684024832718483953_o

অনেক অনেক কাল আগে, মানুষ লাপুতার মত এক ভাসমান রাজ্য নিও ভেরোনাতে বসবাস করত। সেখানকার দয়ালু শাসক ছিলেন ক্যাপিউলেট পরিবারের প্রধান। কিন্তু এক রাতে অতর্কিতে ক্যাপিউলেটদের প্রাসাদে হামলা চালায় মন্টাগিও ফ্যামিলি। নৃশংসভাবে তারা খুন করে ক্যাপিউলেট পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ক্যাপিউলেট পরিবারের কয়েকজন ফলোয়ার চেষ্টা করে উদ্ধার করে আনে এই পরিবারের উত্তরাধিকারী জুলিয়েট ফিয়াম্মাটা অ্যাস্টো ক্যাপিউলেটকে।

এরপর কেটে যায় ১৪ টি বছর। রাজ্যে অত্যাচারী মন্টাগিও পরিবারের শাসন প্রতিষ্ঠিত। জুলিয়েটের বিরূদ্ধে জারি করা হয়েছে মৃত্যু পরোয়ানা। জুলিয়েটকে তাই মানুষ করা হয় পুরো পৃথিবীর থেকে লুকিয়ে; মেয়ে নয়, তাকে সবাই চেনে ওডিন নামের এক বালক হিসেবে।

এই ওডিনের সাথে ঘটনাক্রমে দেখা হয়ে যায় মন্টাগিও পরিবারের দয়ালু সন্তান রাজপুত্র রোমিওর। এই এনকাউন্টার কি প্রভাব ফেলবে তাদের জীবনে? বিশেষত যখন ক্যাপিউলেট পরিবারের ফলোয়াররা একত্রিত হচ্ছে, জুলিয়েটকে নতুন লীডার বানিয়ে মন্টাগিও পরিবারের পতন নিশ্চিত করার আশায়?

অ্যানিমেটির শুরুটা খুবই ভাল ছিল, শুরুর ৮-১০ টা এপিসোড দেখার সময় আমি চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। জুলিয়েটের দ্বৈত জীবন, অত্যাচারী মন্টাগিও পরিবারের কাজকর্মের নমুনা, সেখান থেকে শহরবাসীকে বাঁচানোর জন্য জুলিয়েটের আপ্রাণ প্রচেষ্টা, রোমিওর সাথে পরিচয়, বন্ধুত্ব; আর নিজের অতীত জানার পর একটু একটু করে পরিণত হতে থাকা জুলিয়েট – সব মিলিয়ে মনে হয়েছিল যে সে জুলিয়েট ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস হবে না, সে স্বাবলম্বী এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

কিন্তু এরপর কাহিনীটা কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে যেতে থাকে। ক্যাপিউলেটদের সম্মান ফেরত নেয়ার যুদ্ধ হঠাত করে রূপ নেয় জার্নি টু সেভ জুলিয়েটে। এর মাঝে রাজকুমার রোমিও তার বাবার সাথে কলহের পরিণামে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ে যায়, সেখান থেকে পৃথিবীকে সে নতুন রূপে চিনতে শেখে। শেষের দিকে এসে কাহিনীটা আবার লাইনে ফেরত আসে, এবং এপিসোড ২৩ এ যদি কাহিনীটা শেষ করে দিত, তাহলে এটি আমার অন্যতম পছন্দের একটি অ্যানিমের তালিকায় যুক্ত হত। কিন্তু সুপারন্যাচারাল ফেনোমেনা ঢুকিয়ে যেভাবে কাহিনীর এন্ডিং দেয়া হয়, আমার ভাল লাগেনি, তবে এটা কেবলমাত্র আমার অভিমত, অনেকের ভাল লাগতেও পারে।

স্টুডিও গনজোর এই অ্যানিমেটার আর্ট ভালই, ওএসটি খুবই সুন্দর, মনে রাখার মত। ওভার অল অ্যানিমেটা ভালই, সোর্ডফাইটগুলো দেখার মত ছিল। আপনি রোমান্স ফ্যান হয়ে থাকলে এই অ্যানিমেটি নিশ্চিতভাবে ভাল লাগবে।

12509602_586684801496030_1513153742687139574_n

Tsuritama অ্যানিমে রিভিউ; লিখেছেন ইশমাম আনিকা

Tsuritama.full.1107613

জনরাঃ কমেডি, স্লাইস অফ লাইফ, স্পোর্টস, সাই-ফাই

“Even if the world ends tomorrow, I just want to fish!”

আচ্ছা, আপনারা কেউ কখনো বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছেন? কেমন লাগে ব্যাপারটা? কাঠির গায়ে সুতো বেঁধে পানিতে টোপ ফেলে চুপ করে বসে বোরিং সময় কাটানোর মাঝে কি এমন থাকতে পারে, যা নিয়ে হারু আর কোকো এত হাইপড? কিংবা বড়শিতে মাছ গাঁথার পর সেটাকে খেলিয়ে ডাঙায় তোলা কি এমন কঠিন কাজ, যার জন্যে নাতসুকিকে “প্রিন্স” উপাধি দেয়া হয়েছে?কি এমন রয়েছে এই মাছধরাতে, যে দুনিয়া উল্টে গেলেও কিছু যায় আসে না??

কিংবা মনে করুন, আপনি একজন ট্রান্সফার স্টুডেন্ট। কিন্তু অনেক লোকজনের সামনে আপনি অত্যন্ত অকওয়ার্ড ফিল করেন। তাও কষ্টেসৃষ্টে ফার্স্ট ইমপ্রেশনটা ঠিক রাখার জন্য অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে গেলেন। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শুনতে শুনতে আপনি স্পীচ দেয়া শেষ করে কেবল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন, এমন সময় হঠাৎ কোত্থেকে এসে উদয় হল রাস্তায় দেখা হওয়া সেলফ প্রোক্লেইমড এলিয়েন ছেলেটি! কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজেকে আবিষ্কার করলেন পুরো ক্লাসের সামনে, হাত নেড়ে এনোশিমা ডান্স করা অবস্থায়!! গেল আপনার সাধের ফার্স্ট ইম্প্রেশন!

HorribleSubs_Tsuritama_-_10_720p.mkv_snapshot_04.04_2012.06.16_13.44.05
অথবা, সবসময় একটা হাঁস বগলদাবা করে ঘুরে বেড়ানো ইয়ামাদার আসল উদ্দেশ্যটা কি? হারুর ব্যাপারে সে এত সতর্ক কেন? ইউকি আর নাতসুকিকে জোর করে মাছ ধরতে নিয়ে যাওয়ার মত পাগলামি ছাড়া তো আর তেমন কিছুই করেনা সে। কিংবা হারুই বা সমুদ্রে মাছ ধরতে এত আগ্রহী কেন? এনোশিমার প্রাচীন লোকগাঁথার সাথে কি ওদের কোন সম্পর্ক আছে?

অ্যানিমেটার শুরুটা এমনই ওলট পালট মার্কা, কোথা থেকে কি হচ্ছে আমি কিছু ঠাহর করে উঠতে পারছিলাম না। মাথায় মাছের জার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেলফ প্রোক্লেইমড এলিয়েন হারুর কাজকর্ম দেখে হাসি পাচ্ছিল, আবার ওর সরলতা দেখে মায়াও লাগছিল। কিন্তু যত এগোলাম, তত যেন কাহিনীটা আমাকে ভেতরে টানতে থাকল! ভেবেছিলাম কি, আর শেষে হলটা কি! সিম্পল একটা মনকে খুশি করে দেয়া হাসিখুশি স্লাইস অফ লাইফ অ্যানিমে হঠাৎ হয়ে গেল একটি জমজমাট রূদ্ধশ্বাস সাইফাই অ্যানিমে! এবং সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপারটি হল, এতকিছুর মধ্যেও অ্যানিমেটা আমার মুখ থেকে একবারের জন্যেও হাসিটা মুছতে দেয়নি!
tsuritama_by_squ_chan-d56d05l
অ্যানিমেটার আর্টওয়ার্ক অতিরিক্ত সুন্দর। উজ্জ্বল, ঝলমলে রঙ ব্যবহার করে এনোশিমা নামক সমুদ্র উপকূলের শহরটিকে খুব মনোমুগ্ধকর উপায়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে; দেখে যে কারও মনে হতে বাধ্য, একবার যদি এনোশিমায় যেতে পারতাম! ক্যারেক্টার ডিজাইন বেশ উদ্ভট, আর এই উদ্ভট ডিজাইনের কারণেই যেন অ্যানিমেটা প্রাণ পেয়েছে। নাতসুকির মাছধরা বিষয়ক জ্ঞান, ইউকি ও হারুর এ বিষয়ে অজ্ঞানতা, শুধুমাত্র এই ফিশিং এর কারণে চারটা ছেলের জীবনে পরিবর্তন, তাদের মানুষ হিসেবে পরিণত হয়ে উঠতে দেখলে নিজের অজান্তেই তাদেরকে আপন মনে হতে থাকবে!

অ্যানিমেটার ওএসটি খুবই চমৎকার, ওপেনিং এন্ডিং একটাও স্কিপ করার মত না। আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রতিটা সিচুয়েশনে পার্ফেক্টভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মাছধরা থেকে শুরু করে ক্লাইম্যাক্স, সবখানেই নিখুঁত আবহ তৈরি করেছে এর ওএসটি।

সবমিলিয়ে অ্যানিমেটা আবার খুবই ভাল লেগেছে, ভিন্নধাঁচের স্লাইস অফ লাইফ ও সাই-ফাইয়ের মিশ্রণ দেখে আরও বেশি ভাল লেগেছে। অনেকদিন পরেও তাপিওকার “ডাক” মনে করে আমি হাসব, নাতসুকি, ইউকি, হারু আর ইয়ামাদার বন্ধুত্বের কথা মনে করে আনন্দ পাব। আর ক্লাইম্যাক্সের সেই লোম খাড়া করা মূহুর্তগুলো তো কখনোই পুরনো হবার নয়!

tsuritama_wallpaper_by_chatlantic-d5974r8