ডেনগেকি ডেইযি
অন্য নামঃ ইলেকট্রিক ডেইযি
জানরাঃ মিস্টেরি, কমেডি, ড্রামা, রোমান্স, শৌজো
চ্যাপ্টারঃ ৮০
ভলিউমঃ ১৬
মাঙ্গাকাঃ মোতোমি কিয়োওসুকে
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.৫৭
মাইআনিমেলিস্ট র্যাংকিং: ১০০
মাইআনিমেলিস্ট পপুলারিটিঃ ২২
ব্যক্তিগত রেটিং: ৯.৫
শৌজো-এই জানরাটার প্রতি ছেলে হোক, মেয়ে হোক, শৌজো ভক্ত হোক না হোক সবারই কেমন জানি একটা চুলকানি আছে! কেননা প্রায় প্রতিটা শৌজোতে একই কাহিনী। টানা দেখতে বা পড়তে থাকলে বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ যতই বলুক এটা আলাদা, অন্যরকম নায়িকা; শেষ পর্যন্ত এগুলো সেই বহুল ব্যবহৃত রোমান্স নির্ভর স্কুল জীবনের গল্প। শুধু কোনটা একটু ভাল কোনটা একটু খারাপ। কিছু নতুনত্ব আছে আকাতসুকি নো ইয়োনা, আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে, সাইয়ুনকোকু মোনোগাতারি’র মত সিরিজগুলোতে যেগুলো আবার সবই হিস্টোরিক্যাল রোমান্স। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগেই কোন হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়ের গল্প যেটাকে আমি “ওয়ান অফ এ কাইন্ড” বলতে বাধ্য হচ্ছি তা হল ডেনগেকি ডেইযি। হাইস্কুল পড়ুয়া নায়িকা থাকলেও এটি পুরোপুরি রোমান্স নির্ভর কোন মাঙ্গা নয়। এরকম কাহিনীর দ্বিতীয় কোন আনিমে বা মাঙ্গা বোধ হয় এখন পর্যন্ত খুঁজে পাবেন না।
কুরেবায়াশি তেরু যখন মিডেল স্কুলের ছাত্রী তখন তার একমাত্র আত্মীয় তার বড় ভাইটিও ক্যান্সারে মারা যায়। শেষ সম্বল হিসেবে তেরুকে দিয়ে যায় একটি সেলফোন। এই সেলফোনে রয়েছে ডেইজি নামের একজনের ই-মেইল এড্রেস। ডেইজির দায়িত্ব সকল বিপদে-আপদে তেরুকে তার সর্বস্ব দিয়ে রক্ষা করা। যদিও ডেইযি কে, দেখতে কেমন এসব বিষয়ে তেরু কিছুই জানে না। মাঙ্গার কাহিনী শুরু যখন তেরু হাইস্কুলে উঠেছে। একদিন ভুলে সে তার স্কুলের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে বল দিয়ে। স্কুলের পরিচারক কুরোসাকি তাসুকু তেরুকে ধরে নিয়ে যায় কারণ তেরু গরিব বলে টাকার বদলে তার দেহ দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে…
ঠিক এখানে এসে লিখতে গিয়ে খুব হাসি আসছে। পুরা বাংলা সিনেমা বাংলা সিনেমা লাগছে! আসলে উপরের জানরাগুলো বা কাহিনীর বর্ণনা কোনটাই মাঙ্গাটি কি ধরনের বা কি নিয়ে তা নিয়ে তো ধারণা দেয়ই না বরং আরো চরম আকারের ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে বসে। তাই বাংলায় শুদ্ধভাবে লেখার চেষ্টাটা আপাতত বাদ দিলাম! এই সোনালী চুলের গুন্ডা ধরণের স্কুল জেনিটর কুরোসাকি তেরুকে তার সার্ভেন্ট বানিয়ে তেরুকে দিয়ে কামলা খাটায়। এই নিয়ে অতিষ্ঠ তেরু তাই যখন তখন কুরোসাকিকে বলে “গো বাল্ড কুরোসাকি”। মানে কুরোসাকি টাকলা হয়ে যাক! কিন্তু কুরোসাকির আসল লুকানো পরিচয় সে একজন হ্যাকার। শুধু যেন তেন হ্যাকার নয় তাও। সেই বিখ্যাত থুক্কু কুখ্যাত হ্যাকার ডেইযি!! কুরোসাকির সাথে পরিচয়ের পর থেকেই তেরুর জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। অচেনা সব মানুষের টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় সে। যখন তখন ভয় কারো আক্রমণের, কিডন্যাপ হয়ে যাবার। এই সব মানুষ চায় শুধু একটি জিনিস। তেরুর সেলফোন। জিনিয়াস ইঞ্জিনিয়ার কুরেবায়াশি সোইচিরো মৃত্যুর আগে সেই সেলফোনে রেখে গেছে এমন গুরুত্বপুর্ণ কিছু যার পিছনে হন্য হয়ে সবাই ছুটছে। কিন্তু তেরু কুরোসাকি কিংবা বাকিদের সাহায্যেও সহজে তা খুঁজে বের করতে পারে না। কি এমন সেই তথ্য যার জন্য তেরুর স্বাভাবিক জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ?
এতটুকু পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন মাঙ্গাটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। অল্প অল্প করে পুরো মাঙ্গা জুড়েই রহস্য উদঘাটন হতে থাকে। তাই কাহিনী ঝুলে যায়নি কোথাও। এখানে শৌনেন মাঙ্গার মত কিছু সিরিয়াস কাহিনী চলে তারপর আবার লাইটহার্টেড হয়ে যায় একটু আনন্দ দেওয়ার জন্য। অনেকটা আর্কের মতই। আসলে এই মাঙ্গাটি যদি একটু পরিমার্জন করে প্রধান চরিত্রকে মেয়ে না হয়ে ছেলে বানান হত তবে এটাকে শৌনেন কিংবা সেইনেন ট্যাগ দিলেও বোধ হয় আমি অবাক হতাম না। মাঝে মাঝে ভুলেই যেতে হয় যে এটি একটি শৌজো মাঙ্গা! আর তার অন্যতম একটি কারণ হল এর রোমান্টিক অংশটা অনেক স্লো। রোমান্স যে অনেক কম ঠিক তা না কিন্তু খুব ধীরে ধীরে সময় নিয়ে এখানে রোমান্সের অগ্রগতি হয়। যখনই চোখে পড়ার মত অগ্রগতি হতে যায় ঠিক তখনই আটকে যায় তা। তাই রোমান্টিক শৌজো ফ্যানদের মাঝেই মাঝেই হতাশায় মাথার চুল ছিঁড়তে বা টেবিল উল্টাতে ইচ্ছা করলেও কিছু করার নেই! তবে ধীরে আগানটা আসলে গল্পটার জন্য ভালো ছিল। যখন যেটার জন্য উপযুক্ত সময় ঠিক তখনই সেটা হয়েছে। তাই বলে ভাবার কারণ নেই এটা সবসময় খুব গুরুগম্ভীর ধরণের। এখানে কমেডি দৃশ্যগুলো দেখলে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। কমেডি সবচেয়ে কমন একটা জানরা হলেও এতটা হাসাতে পারে না সব আনিমে, মাঙ্গা। মাঙ্গাকা মোতোমি কিয়োওসুকে মাঙ্গার পেজে সাইড নোট হিসেবে অনেক কিছু লেখেন তার পাঠকদের জন্যে। এই সাইড নোটগুলো আরও হাসির খোরাক যোগায়।
তবে একটি জিনিস বলে রাখা ভালো। চ্যাপ্টার ৪০ এর দিকে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ পায়। এবং ঠিক এখানেই অনেকগুলো চ্যাপ্টারের ট্রান্সলেশন ভয়াবহ বাজে। এই চ্যাপ্টারগুলো রিপ্লেস করা হয়েছে বা দ্বিতীয় কোন ট্রান্সলেশন আছে কিনা আমার জানা নেই। যদি থাকে তো বেঁচে গেলেন। না থাকলে এখানে কাহিনী বুঝতে অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই। সামনের চ্যাপ্টারগুলোতে ওই ঘটনাগুলো আবার উঠে আসে তাই এখন না বুঝলেও পরে সব বুঝতে পারবেন।
অনেক দিক দিয়েই কুরোসাকির সাথে মেইড-সামা’র উসুই তাকুমির মিল পাওয়া যায়। আবার দুজনে দেখতেও অনেকটা একই রকম যে কারণে কেউ কেউ চিনতে ভুল করে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার কুরোসাকিকে উসুইয়ের চেয়েও বেশি ভালো লেগেছে। তার কারণ হল কুরোসাকি “মানুষের মতই একজন চরিত্র”। শৌজো হিরোদের বাস্তবতার কাছাকাছি লাগে খুব কম। তারা শুধু যেন রোমান্স নিয়েই ব্যস্ত। সেখানে কুরোসাকির জীবন, সংগ্রাম, আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, স্বভাব-চরিত্র সবকিছুই অন্যরকম আর বাস্তবধর্মী। একজন মানুষ হিসেবে কুরোসাকির অনুভূতিগুলো আসলেই অনুভব করা যায়। তেরুও পছন্দনীয় একটা মেয়ে। তেরুকে যেসব ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় এসবের কিছুর মধ্যে দিয়েই যেতে হয় না সাধারণ শৌজো মাঙ্গার প্রধান মেয়ে চরিত্রগুলোকে। তাও তারা “ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস” খেতাব পেয়ে যায়। সেখানে তেরুকে অগণিত বার কুরোসাকি আর বাকিদের বাঁচাতে হলেও কখনই তাকে অকর্মা মনে হবে না। আবার সে যে খুব শক্তিশালী, একাই ১০০ টাইপ তাও না। কিন্তু তারপরেও তেরু নিজের মত করে যা পারে করে যায়। কাণ্ডজ্ঞান নামক জিনিসটা তার মাঝে আছে! তেরুকে আমার কাছে খুবই ইউনিক লেগেছে। তাই বিরক্ত হওয়ার সুযোগ খুব কম। সাধারণ মাঙ্গার মত প্রধান দুই চরিত্রের কচকচানিতে এখানে বাকি চরিত্রগুলোও হারিয়ে যায়নি। বরং আশেপাশের মানুষগুলোও কমবেশি সমান গুরুত্ব পেয়েছে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ রোল প্লে করেছে। তার মাঝে আছে রিকো, মাসুদা, আনদোও, হারুকা, কিয়োশি, রেনা, সোইচিরো এবং অবশ্যই আকিরা।
মোতোমি কিয়োওসুকে’র আঁকার নিজস্ব স্টাইল আছে। আর্ট দেখে শৌজো মাঙ্গা বুঝা গেলেও বাকি শৌজো মাঙ্গার মত সব একই রকম লাগে না। ডেনগেকি ডেইযির শুরুতে আর্ট মোটামোটি ভালই ছিল। শুধু প্রথম চ্যাপ্টারের প্রথম পেজেই কভারে তেরুর ছবিটা দেখে কোন না কোন ফালতু মাঙ্গা ভেবে উড়ায় দিতে ইচ্ছা করেছিল। তারপর যত চ্যাপ্টার গেছে আর্ট ভালো থেকে আরও ভালো হয়ে উঠেছে। খুবই সুন্দর এবং ওয়েল ডিটেইল্ড আর্ট। তবে আর্টের বিষয়ে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কমেডির জন্য চিবি নয় বরং নানান ধরণের আজব এবং মজার সব ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন আর পোজ ব্যবহার করে হয়েছে। ডায়ালগগুলো এমনিতেই হাসির তার উপর এই ড্রয়িংগুলো ব্যাপারগুলোকে আরও বেশি হাস্যকর আর নাটকীয় করে তুলে। একেকটি চরিত্রের অঙ্গভঙ্গি দেখার পর হাসি থামান কঠিন হয়ে পড়ে।
অন্য শৌজো মাঙ্গাগুলোর মত এত নামডাক না শুনলেও মাঙ্গার ওয়েবসাইটগুলোতে শৌজো জানরা সার্চ দিলে এবং হট রিড মাঙ্গার তালিকায় ডেনগেকি ডেইযির নাম দেখতে পাবেন। সবচেয়ে ভালো শৌজো মাঙ্গাগুলোই আনিমে অ্যাডাপ্টেশন পায় না। আনিমে না আসলেও এই মাঙ্গা চোখের আড়ালে থেকে গেলে তা হবে দুঃখজনক। আপনার যাই পছন্দ হোক এরকম ইউনিক একটা মাঙ্গা মিস করলে নিজেই পস্তাবেন। তাই মাস্ট রিড মাঙ্গার তালিকায় অবশ্যই এই মাঙ্গাটি রাখবেন। আর মাঙ্গাটি পড়ার সময় সিন্ডি লপারের টাইম আফটার টাইম গানটি শুনতে পারেন। এই গানটির সাথে ডেনগেকি ডেইযির যোগসূত্র আছে। আশা করা যায় আপনি সময়টা দারুণ উপভোগ করবেন। আর এটি অনায়াসে আপনার সেরা মাঙ্গা তালিকায় ঢুকে গেলেও তা অবাক করার মত কিছু হবে না!