Honobono Log [রিভিউ] — Fatiha Subah

Honobono Log 1

হনোবনো লগ
পর্ব: ১০
ডিউরেশন: প্রতি পর্ব ২ মিনিট
জানরা: স্লাইস অফ লাইফ, রোমান্স
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৭.৪৭
ব্যক্তিগত রেটিং:

মাত্র ২ মিনিটে কিই বা দেখানো যায়? দেখানো গেলেও তা হবে নিশ্চয় অনেক গভীর, প্রতীকি, উচ্চমার্গীয় কিছু? আর শর্ট স্লাইফ অফ লাইফ আনিমে তো বেশ কিছুই আছে, এ আর এমন কি? নাহ! যদি এমনটা ভেবে থাকেন তো বিশাল ভুল করছেন। এই ছোট্ট দুই মিনিটের পর্বগুলোতেই হনোবনো লগ এমনভাবে দৈনন্দিন জীবনের সুখ, দু:খের ছোট ছোট মুহূর্ত তুলে ধরেছে যে আপনাকে অবাক করে দেবে। অহরহ ঘটে চলা এই মুহূর্তগুলোই যে দেখতে এত ভালো লাগতে পারে তাই নতুন করে আবিষ্কার করবেন। প্রতিটি পর্ব কোন না কোন কাপল বা পরিবারকে নিয়ে। তাদের গল্পগুলো এতই মিষ্টি যে অনেকে বলে তা নাকি ডায়াবেটিস ধরিয়ে দিতে পারে! তবে কথাটি নেগেটিভলি নেওয়ার মত কিছু না কিন্তু। কোন আনিমে অতিরিক্ত মিষ্টি হওয়ার পরেও যে তা চিনি দেওয়া সস্তা গল্প মনে না হয়ে মনের মধ্যে অন্যরকম ভালোলাগা সৃষ্টি করতে পারে তারই এক দারুণ উদাহরণ হনোবনো লগ। রোমান্স কিংবা অতি মিষ্টি কিছুতে আপনার এলার্জি থাকলেও চিন্তা নেই। তারপরেও আপনার ভালো লাগবে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। কারণ যেই আমি কিনা লাভি-ডাভি কাপল দেখলেই চেতে গিয়ে দৌড়ানি দিতে চাই সেই আমিই আবার এটা দেখার সময় ভেবেছিলাম, ‘ইশ!! এরকম কিছু জীবনে থাকলে মন্দ হত না মনে হয়!’!! হুম!! এই আনিমের ক্ষমতা এতটাই!!

ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে শর্ট আনিমের আর্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব আনিমের আর্ট সাধারণ আনিমের তুলনায় অনেক সময় অদ্ভুত ধরণের হয়। আর্ট পছন্দ না হলেই সেটা দেখায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বলাই বাহুল্য হনোবনো লগ বানানোই হয়েছে একটি ছবির বই থেকে। ছবিগুলো দেখতে এবং এগুলোর রঙের ব্যবহার খুবই সুন্দর। ঠিক এই আর্টগুলোই শুধু অ্যানিমেট করা হয়েছে। আনিমের সাথে তা মানিয়ে গেছে ভালোভাবেই। ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদামাটা এক রঙা দেয়াল কিন্তু তা মোটেও কোন মুখ্য বিষয় না। খুব সাদামাটা কিন্তু সুন্দর এক কথায় বলতে গেলে।

এর সাথে আরো আছে মনকে শীতল, শান্ত করে দেওয়ার মত একটি ওপেনিং সং। আমে নো প্যারেডের মর্নিং। আনিমেটি এখনই দেখতে না চাইলেও গানটি একবার শুনে আসুন। মেজাজটা ঠাণ্ডা করার পাশাপাশি আনিমেটি দেখতেও আগ্রহী করে তুলবে বলে আশা করি। লিংক: https://youtu.be/VRn0cFH9-2Y

Honobono Log 2অল্প সময়ে সুন্দর কোন আনিমে দেখে ফেলার জন্য হনোবনো লগ খুবই উপযুক্ত। দশ দুগুণে মোট বিশ মিনিটেই কাছের মানুষদের মাঝে খুনসুটি দেখতে দেখতে কখন সময়টা পেরিয়ে যাবে খেয়ালই করবেন না। মাত্র ২০ মিনিটই তো! একটা সাধারণ দৈর্ঘ্যের আনিমের একটা পর্বের সমান। তাই কমের মাঝে উপভোগ্য সময় কাটাতে চাইলে দেখে ফেলুন হনোবনো লগ।

নাইন্টিন, টুয়েন্টি-ওয়ান [মানহোয়া রিকমেন্ডেশন] — Fatiha Subah

 

Nineteen Twenty-One

নাইন্টিন, টুয়েন্টি-ওয়ান
জনরা: জোসেই, ড্রামা, রোমান্স, স্লাইস অফ লাইফ
চ্যাপ্টার: ২১
লেখক: ইয়োহান (গল্প), কিম হিয়ে-জিন (আর্ট)
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.০২
ব্যক্তিগত রেটিং: ৮/১০

সময় খুবই মূল্যবান সম্পদ। কেউ হাতে সময় থাকতেও তার মূল্য না দিয়ে হেলায় হারিয়ে ফেলে। কেউবা হারিয়ে ফেলা সময়কে খুঁজে ফেরে। Yun-lee এমনই একজন মেয়ে যার জীবনের ২টি বছর হারিয়ে গেছে। এক ট্র্যাফিক অ্যাক্সিডেন্ট কেড়ে নিয়েছে তার ১৯ থেকে ২১ বছর বয়সের সময়টুকু। এই ২টি বছর বেঁচে থাকার পরেও যেন তাদের অস্তিত্ব নেই। অথচ সমাজ এই ২১কেই বলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স। হঠাৎ করেই যেন Yun-lee কে এগিয়ে যাওয়া বাকি সবার সাথে জীবন যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। হতাশাগ্রস্থ Yun-lee এই শূন্যতা বুকে নিয়েই তবু প্রিপারেটরি স্কুলে যায় নতুন করে সব শুরু করতে। তার এই বিবর্ণ জীবনে সান্ত্বনা খুঁজে পায় শুধু একটি জিনিস থেকে। আর তা হল লাঞ্চ ব্রেকে বিড়ালদের সাথে সময় কাটানো আর তাদেরকে খাবার কিনে খাওয়ানো।

এই বিড়ালের মাধ্যমেই সে আরেক বিড়াল প্রেমী Dong-hwi এর দেখা পায়। ১৯ বছর বয়সী Dong-hwi এর জীবনে আছে সেই ২টি বছর যা Yun-lee এর নেই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই ছেলেটি সমাজের নিয়ম মেনে ইউনিভার্সিটিতে যেতে কিংবা চাকরি করতে চায় না। Dong-hwi এর কথা জীবনের ২০টি বছর যখন সে বড় হয়েই কাটাবে তবে ২০ বছর বয়সটা নিজের মত করে বেঁচে থাকতে চাওয়াটা খুব অপরাধের? চিন্তাভাবনায় উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরু হলেও এই দুই তরুণ-তরুণীর মিল আছে একটি দিক থেকে। তারা দুজনেই বিড়াল ভালোবাসে এবং রাস্তার অবহেলিত বিড়ালদের জন্য কিছু করতে চায়। Dong-hwi Yun-lee কে বলে, “I read it in a book before, that animals don’t feel sorry for themselves. That touched my heart. The life of animals and simply devoted to the time given. The life of humans, with sympathy for other living beings. ..If we can travel halfway between those two paths, don’t you think our lives would be wonderful?”

শুরুতে জীবন নিয়ে ভারীক্কি গল্প মনে হলেও মজার ব্যাপার হলো বিড়াল নিয়েই গড়ে উঠেছে নাইন্টিন, টুয়েন্টি-ওয়ানের গল্প। মাইআনিমেলিস্ট এটাকে শৌজো ট্যাগ দিলেও এটি খুব সুন্দর একটি জোসেই মানহোয়া। লাইটহার্টেড কিন্তু ভাবানোর মত গল্প আর চোখ জুড়ানো চমৎকার রঙিন আর্টের সাথে আপনার সময়টা দারুণ কাটবে। আর আপনি যদি হন বিড়াল প্রেমিক তাহলে তো কথাই নেই! মানহোয়াটি পড়ে দেখতে ভুলবেন না।

তোমোদাচি নো হানাশি [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

tomodachi-no-hanashi

তোমোদাচি নো হানাশি
ইংরেজি নামঃ দ্যা সিক্রেট অফ ফ্রেন্ডশিপ
জানরাঃ ড্রামা, স্কুল, শৌজো, রোমান্স
চ্যাপ্টারঃ
মাঙ্গাকাঃ কাওয়াহারা আযুনে (গল্প), ইয়ামাকাওয়া আইজি (আর্ট)
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.২৩
ব্যক্তিগত রেটিং: ১০/১০

শৌজো মাঙ্গায় সাধারণত কি হয়? একটি মেয়ে এবং ছেলে তাদের মনের মানুষকে খুঁজে পায় তারপর চারপাশের সবকিছু ভুলে নিজেদের জগতে হারিয়ে যায়। আচ্ছা এবার ভাবুন তো, আপনিও জীবনে ঠিক এমনটি ঘটতে দেখছেন। না না, নিজেকে শৌজো মাঙ্গার নায়ক বা নায়িকা ভাবতে বলিনি তো! থামেন! বলছি আপনার কাছের কোন মানুষের কথা। তার জীবনে এমন কিছুর সূচনা দেখলে আপনার কি প্রতিক্রিয়া হবে? আপনি সুন্দেরের মত অস্বীকার করেন আর নাই করেন, জানা কথা আপনি মনে মনে হলেও ইয়ুনো গাসাইয়ের মত ইয়ান্দেরে মোডে গিয়ে পারলে আপনার কাছের মানুষের জীবনে হাজির হওয়া ওই মানুষটাকে কোপ দিয়ে আসবেন!! আর কাছের মানুষটা যদি হয় আপনার জিগরি দোস্ত তাহলে তো কথাই নেই! কেননা এই নতুন মানুষটিই এতদিনের চেনা ফ্রেন্ডটিকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। বাস্তবে যে এটা হয় তার অসংখ্য উদাহরণ আছে। এরূপ নিষ্ঠুর বাস্তবতায় বেঁচে থাকলে এইকো নামক মেয়েটিকে নিয়ে আপনার ঈর্ষা হবেই।

এইকো সাকামোতো বন্ধুত্ব নিয়ে এই মাঙ্গার প্রধান চরিত্র। তাকে কখনোই সম্পর্ক হয়েছে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড হারিয়ে যাবে এই ভয়ে থাকতে হয় না। বরং ভয়ে থাকতে হয় তার উল্টোটা নিয়ে। সে শঙ্কিত কারণ তার জন্যেই তার ফ্রেন্ড মোয়ে হয়ত কখনও তার মনের মানুষ খুঁজে পাবে না। এমন না যে সে মোয়ের কাছে কোন ছেলেকে ঘেঁষতে দেয় না কিংবা সে খুবই সুন্দরী। মোয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর এবং অনেক ছেলেই তাকে পছন্দ করে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? প্রতিবার যখন কোন ছেলে মোয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় মোয়ে সবসময় একটি উত্তরই দেয়। সে রাজি হবে শুধু একটি শর্তে। সেই শর্ত হল তার চেয়েও বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে এইকোকে। মোয়ের সাথে সময় কাটানো মানেই এইকোর সাথে সময় কাটানো। যেই ছেলে তার এই শর্তে রাজি হবে তাকেই বেছে নেবে মোয়ে। কিন্তু কোন ছেলেই বা রাজি হবে এমন প্রেমিকা পেতে যে তাদের ডেটিংয়েও তার ফ্রেন্ডকে নিয়ে হাজির হবে? তবু শেষমেশ কেউ একজন রাজি হয়েই গেল। “বন্ধুত্বের গল্প” মাঙ্গার গল্পটা শুরু হল এখানেই।

শুরুতেই আপনার মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরঘুর করবে। মোয়ে কেন এরকম অদ্ভুত শর্তে জুড়ে দেয় ছেলেদের কাছে? স্কুলে কিংবা আলাদা করে ঘুরতে বেরিয়েই তো সে এইকোকে সময় দিতে পারে। তার এরপরের কিছু আচরণও অনেক বাড়াবাড়ি লাগবে। এমনও মনে হবে যে এই মেয়ের মানসিকতায়ই সমস্যা আছে। কিন্তু এরপরেই আপনি এমন ভাবার জন্য দুঃখ করবেন। এরপরের দুই চ্যাপ্টারে যে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট হয়েছে এবং কাহিনী যেভাবে এগিয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। অন্যান্য মাঙ্গাগুলো ১০-২০ চ্যাপ্টারেও যা দেখাতে পারে না এই মাঙ্গা মাত্র ২ চ্যাপ্টারেই তা দেখিয়েছে। এত ছোট একটা মাঙ্গা যে পড়ছেন তা মনেই হবে না। মাত্র দুই এক দিনের কাহিনী দেখায়নি এখানে। দেখিয়েছে একটা সময় কালের ঘটনা। এবং তা খুব যত্ন নিয়েই তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও কোন তাড়াহুড়া নেই। শুরুতে যেমনই লাগুক চরিত্রগুলোও প্রত্যেকেই ভালো লাগার মত। যেসব ছেলে ভাবে মেয়েরা শুধু ন্যাকামি এবং অন্যের সমালোচনা, কূটনামি করে বেড়ায় তাদের নারুগামি চরিত্রটি বেশ ভালো কিছু শিক্ষা দেবে। আর মোয়ে আমার খুব বেশি পছন্দের একটা চরিত্র।

এত কিছু বলার পরেও আপনি ভাবতে পারেন মাঙ্গাটি কেন পড়বেন। অল্প চ্যাপ্টার, ভালো গল্প আর ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট আছে-বোঝা গেল। কিন্তু এই কথা হয়ত অন্য আরো মাঙ্গার জন্যেও শুনবেন। তাহলে এত মাঙ্গা থাকতে তোমোদাচি নো হানাশিই কেন পড়বেন? পড়বেন কারণ এখানে খুব দুঃখ-কষ্ট, কে কাকে পছন্দ করে এই নিয়ে বিশাল প্যাঁচ, ত্রিভুজ প্রেম, নায়িকার ক্ষতি করতে চাবে এমন হিংসুটে মেয়ে, বুলিং, অতিরিক্ত মিষ্টি প্রেম এসবের বালাই নেই। আছে শুধু বন্ধুত্বের উষ্ণ গল্প আর হালকা রোমান্স। এইকো আর মোয়ের মাঝে যে বন্ধন আছে তা দেখলে মন ছুঁয়ে যায়। ওদের বন্ধুত্বের মতই হওয়া উচিৎ প্রতিটি বন্ধুত্ব। পড়তে পড়তে আপনারও এমন বন্ধু পাওয়ার ইচ্ছা জেগে উঠবে। যদিও শৌনেন মাঙ্গাতে এসব অহরহ দেখা যায় তারপরেও এখানকার গল্পটি একদম অনন্য। একেবারে “রেয়ার জেম” যাকে বলে।

আর্টের দিক থেকে বিচার করলে ভালো না খারাপ বলা উচিৎ ঠিক নিশ্চিত না। অনেক হালকা দাগ দিয়ে আবছা আবছা করে ছবিগুলো আঁকা হয়েছে। সাধারণ সাদা-কালো এর চেয়ে ধূসর ভাবটা বেশি। যে কারণে তাকিয়ে থাকতে অস্বস্তি লাগতে পারে। তবে সবকিছুর গঠন, অবয়ব একদম যথাযথ। আবার শৌজো মাঙ্গার চিরচেনা আর্ট স্টাইলে যে বিশাল গোল গোল, জ্বলজ্বলে চোখ থাকে তা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। বরং এখানে অনেক ছোট আর কুতকুতে চোখ। তাই যাদের ওই সাধারণ শৌজো মাঙ্গার আর্ট পছন্দ না তাদের কোন সমস্যা হবে না। এই ক্যারেক্টার ডিজাইন মাঙ্গাটির সাথে বেশ মানিয়ে গেছে।

দুঃখের বিষয় এই মাঙ্গার শেষ চ্যাপ্টারটি আজ অব্দি স্ক্যানলেশন করা হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে চতুর্থ চ্যাপ্টার স্ক্যানলেটেড হওয়ারও কোন আশা নেই। চ্যাপ্টার ৩ বেরিয়েছিল সেই ২০১৩ তে। তাই বলে মাঙ্গাটি না পড়ার কারণ নেই। ৩ নম্বর চ্যাপ্টার যেভাবে শেষ হয়েছে তা ছিল সন্তোষজনক। কাহিনী ওখানে শেষ ধরে নিলে কোন সমস্যা হবে না। শেষ চ্যাপ্টারে কি হতে পারে ওটা আগে থেকেই বুঝে নেওয়া যায়। তাই সমাপ্তিটা ফ্যানফিকশনের মত নিজের মনমত বানিয়ে নিতে পারবেন।

শেষ কথা, তোমোদাচি নো হানাশি আমার পড়া অন্যতম একটি অসাধারণ মাঙ্গা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় মাঙ্গাগুলোর একটা। শৌজো হিসেবে নয়, এটিকে নাকামা বা তোমোদাচি নিয়ে তৈরি মাঙ্গা হিসেবেই পড়বেন। সুতরাং ছেলে মেয়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আশা করছি আপনারও আমার মত মাঙ্গাটি খুব ভালো লাগবে।

কোইযোরাঃ সেতসুনাই কোইমোনোগাতারি [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

koizora-setsunai-koimonogatari

কোইযোরাঃ সেতসুনাই কোইমোনোগাতারি
ইংরেজি নামঃ স্কাই অফ লাভ, লাভ স্কাই-স্যাড লাভ স্টোরি
জানরাঃ স্লাইস অফ লাইফ, ড্রামা, রোমান্স, শৌজো, ট্র্যাজেডি
চ্যাপ্টারঃ ৩০
ভলিউমঃ ১০
মাঙ্গাকাঃ হানেদা ইবুকি (অঙ্কন), মিকা (গল্প)
মাইআনিমেলিস্ট স্কোরঃ ৮.১৩
ব্যক্তিগত স্কোরঃ ৯/১০

শৌজো মাঙ্গা নিয়ে কমবেশি সবারই বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায়। যার মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি হল আর যাই হোক, এসব মাঙ্গার কাহিনীতে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই বললেই চলে। গল্প যখন অনেক দূর যাওয়ার পরে তাতে নাটকীয়তা আসে ঠিক ওই অংশগুলোর জন্যই স্লাইফ অফ লাইফ বলা হয়। কিন্তু কোইযোরা এমন একটি শৌজো মাঙ্গা যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তব জীবনের ঘটনা তুলে ধরে গেছে। শুরুটুকু পড়ে অন্তত মনে হয় যেন একটি বাংলাদেশী মেয়েরই সুপরিচিত প্রেমকাহিনী নিয়ে মাঙ্গাটি তৈরি করা হয়েছে। এই একটা মাঙ্গা পড়ে আমার মনে হয়েছে হয়ত আমাদের দেশের কোন মেয়েও এই গল্পের সাথে নিজের জীবনের সাথে মিলে খুঁজে পাবে। যদিও মাঝ থেকে শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে তার সাথে মিল খুঁজে পাবে কম মানুষ এবং এই সংখ্যাটা যত কম ততই আসলে ভালো…

তাহারা মিকা খুব সাধারণ একজন মেয়ে। হাইস্কুলে উঠার পর সেও আর দশটা মেয়ের মত স্বপ্ন দেখে তার একটা বয়ফ্রেন্ড হবে, তার সাথে ঘুরতে যাবে এবং আর বাকি যা যা নিয়ে ভাবতে পারে একজন টিনএজার মেয়ে। মিকার বান্ধবী আয়া তাদের স্কুলের প্লেবয় নোযোমির সাথে ফোন নাম্বার বিনিময় করে। কিন্তু নোযোমির মিকার প্রতি আগ্রহ তাই সে আয়ার কাছে থেকে মিকার নাম্বার নেয়। মিকার সাথে সে যোগাযোগ করলে মিকা ব্যাপারটা খুব অপছন্দ করে। তাও নোযোমি মিকাকে ঘনঘন মেসেজ দিতেই থাকে। এদিকে আয়াও তার বান্ধবীর উপর অসন্তুষ্ট হতে থাকে মিকা তার পছন্দের ছেলেকে কেড়ে নিচ্ছে বলে। এরকম এক টানাপোড়নের মধ্যে একদিন আরেকটি নাম্বার থেকে মিকার ফোনে কল আসে। নোযোমি মাতাল অবস্থায় মিকাকে তার বন্ধুর বাসা থেকে ফোন দেয়। ফোন কাড়াকাড়ি করে নোযোমির বন্ধু সাকুরাই হিরোকি মিকার সাথে কথা বলে। হিরোর কণ্ঠ মিকার কাছে অনেক শান্ত আর নম্র মনে হয়, যেটা নোযোমির পুরো উল্টা। একদম স্বেচ্ছায় মিকা হিরোকে ফোন নাম্বার দেয়, ফোনে কথা বলা শুরু করে এবং একপর্যায়ে দেখাও করে। দেখা করার সময় মিকা বুঝতে পারে যেহেতু হিরো নোযোমির বন্ধু তাই সেও অবশ্যই নষ্ট ধরণের ছেলে হবে। হিরোকে দেখে সে আবিষ্কার করে এই সেই ছেলে যে জুনিয়র হাইস্কুলে একজন ডেলিনকুয়েন্ট ছিল এবং যার বোন ইয়ানকী বলে গুজব শোনা যায়। হিরোকে দেখে মিকা অনেক ভয় পেয়ে গেলেও হিরোর কিছু স্নেহশীল আচরণ দেখে সম্পর্ক রাখবে ঠিক করে। ওই সময়ের ছোট্ট একটা সিদ্ধান্তই যে পরে তার জীবনটায় আমূল পরিবর্তন আনবে মিকা কি তা ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিল?

অবশ্যই মিকা এটা তখন জানত না। জানলে হয়ত এই মাঙ্গাটাই আর আমরা পেতাম না। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন তাহলে অন্য গল্প হত এখানে, আর তো কিছু না। কিন্তু তাহলে সেই গল্প নিয়ে মাঙ্গা তৈরি হওয়ার সম্ববনা থাকত না। কেননা মিকা তো এই মাঙ্গাতে সীমাবদ্ধ কোন চরিত্র না। সে যে রক্ত-মাংসেরই একজন সত্যিকারের মানুষ! জ্বী, কোইযোরা কোন লেখকের কল্পনায় মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা কোন গল্প না। এটি মিকা নামের একটি মেয়ের জীবনের সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে লেখা। এ কারণেই শুরুতে “স্লাইফ অফ লাইফ” কথাটা তুলেছিলাম। তবে ভুলেও ভাববেন না এতে বাস্তবধর্মী উপাদান অনেক বেশি তাই নাটকীয়তা কম। এটায় যে পরিমাণ নাটকীয়তা আছে তা ১০টা কেন ১০০টা স্লাইফ অফ লাইফ, ড্রামা কিংবা শৌজো সিরিজ খুঁজলেও পাবেন না। সাধারণের তুলনায় এখানে এসব ১০ গুণ বেশি। আমার কষ্টের গল্প খুব ভালো লাগে কারণ তা মানুষের সত্যিকারের কষ্টগুলোকে তুলে ধরে। অনেকেই এসবকে “মেলোড্রামা” বলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবে যে এমন ঘটনা অল্প হলেও ঘটে তার সাক্ষাৎ উদাহরণ এই মাঙ্গাটি। একটা কথা আছে- “life is more than drama”। জীবন নাটকের চেয়েও বেশি কিছু। মিকার জীবনের গল্পটা এমনই যে সেটাকে বাস্তবের না বলে কোন নাটক কিংবা সিনেমার গল্প বলাটাই বেশি উপযুক্ত হত। এতদিন অনেক সিরিজকেই “ড্রামাটিক” উপাধি দিয়ে এসেছেন। তবে এই শব্দটার অর্থ আসলেই বুঝতে চাইলে কোইযোরা পড়ে দেখতে পারেন।

কোইযোরা কোনভাবেই স্বাভাবিক শৌজো মাঙ্গা ভেবে পড়তে যাবেন না। আর শৌজো হলেও কারও বয়স যদি ১৪/১৫ এরকম হয় তাহলেও এটা পড়া উচিৎ হবে না বলে আমি মনে করি। একটু ম্যাচিউরিটি আসার পরে এবং একটু বড় হলে পড়াটাই ভালো হবে। তার গুরুত্বটা উপরের কথা থেকে বুঝা সম্ভব না। এই মাঙ্গা পড়ার আগে কিছু বিষয়ে জেনে রাখা উচিৎ। তাই স্পয়লার হলেও সেগুলো বলতেই হচ্ছে। এখানে শারীরিক সম্পর্ক, ধর্ষণ, মাদক, প্রেগন্যান্সি এর মত অনেক বয়ঃপ্রাপ্তদের জিনিস রয়েছে। অতএব বুঝতেই পারছেন, এটা পড়তে হলে বুঝেশুনেই পড়তে হবে। আর আপনার নিতীবোধ যদি বেশি থাকে এবং টিনএজদের উল্টাপাল্টা পাগলামি, ছাগলামি দেখে বিরক্ত হন তবেও সাবধান থাকবেন। কেননা আমার মত আপনারও একদম শুরুতেই তাহলে মাঙ্গাটা ড্রপ করতে ইচ্ছা হবে। তবে এই মাঙ্গার এসব বড়দের জিনিসপাতি বিবেচনা করলে একে শৌজোর চেয়ে জোসেই বলাটাই ভালো হত। মিকা গল্পের শুরুতে হাইস্কুলে থাকে বলেই একে শৌজো ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। যদিও পরে “জোসেই বয়সের” সময়ও আসবে।

চরিত্রগুলোর মধ্যে ইয়ূকে খুব ভালো লেগেছে। ইয়ূ অসাধারণ একজন মানুষ! এছাড়া আর কাউকে তেমন ভালো লাগেনি ওভাবে। কিন্তু ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট বেশি ভালো ছিল। মাঙ্গাটা একদম প্রথম চ্যাপ্টারেই গল্পের মধ্যে ঢুকে যায় এবং পুরা ৩০ চ্যাপ্টার জুড়েই একের পর এক ঘটনা চলতে থাকে। দম ফেলার সময় দেয় কম। তারপরেও কাহিনীতে তাড়াহুড়া লাগেনি। তার একটা কারণ এর চ্যাপ্টারগুলো (সব কিনা মনে নেই) সাধারণ শৌজো মাঙ্গার একেকটা চ্যাপ্টারের চেয়ে অনেক বড়। যেহেতু এই মাঙ্গাটি তৈরিই হয়েছে মিকার গল্পটা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য শুধু বিনোদনের জন্য তৈরি করার বদলে তাই এখানে সাধারণ মাঙ্গার মত কেয়ার-ফ্রি, মজার অপ্রয়োজনীয় চ্যাপ্টার তেমন একটা ঢুকায়নি। কিন্তু গল্পের গভীরতা বুঝার জন্য এবং চরিত্রগুলোকে বুঝার জন্য যখন যেমন সিরিয়াস বা মিষ্টি মুহূর্ত দেখানো দরকার তার সবই দেখিয়েছে। তবে পড়ার সময় বিভিন্ন জায়গায় এত রাগ উঠে চরিত্রগুলোর কিছু কিছু আচরণে যে মনে হয় এটা পড়ার কোন মানে নেই। কিন্তু সময় হলে তাদের আচরণগুলোর পেছনের কাহিনী জানতে পারবেন। এজন্যই ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট বেশ পছন্দ হয়েছে। তারা নিজেদেরকে ব্যাখা করার সুযোগ পেয়েছে। আর তাই তাদের সাথে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট কাজ করে। ভালো লাগুক আর না লাগুক, তাদেরকে অনুভব করতে পারবেন।

এমন সিরিয়াস মাঙ্গাতে বড় বড় জ্বলজ্বলে চোখ আর চকচকে ব্যাকগ্রাউন্ড মানাবে না ঠিক। কিন্তু এর আর্ট যে একটু বেশিই বাজে! আর্ট নিয়ে খুঁতখুঁতে হলে আপনি ভুল জায়গায় চলে এসেছেন। দারুণ শারীরিক গঠন, সুন্দর চোখ, এলোমেলো চুল, ডিটেইল্ড ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অন্যান্য মনোরম দৃশ্য এসবের কিছুই নেই এতে। একটা অ্যাভারেজ মাঙ্গার আর্টও এর থেকে ভালো হয়। তাই একটু কষ্ট করে আর্ট সয়ে নিতে হবে। শুধু গল্পটার স্বার্থে ব্যাপারটা মেনে নিয়ে পড়া চালিয়ে যেতে পারলে ভালো।

কোইযোরা প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে সেল ফোন নভেল হিসেবে। শুধুমাত্র মোবাইলে পড়া যায় এমন এক ওয়েবসাইটে মিকা নিজেই তার আত্মজীবনী উপন্যাস হিসেবে লেখা শুরু করে। তখনই এটি জাপানের বেস্ট-সেলিং কামিং অফ এজ এবং রোমান্স উপন্যাসের খেতাব পায়। ২০০৬ এ এটি বই আকারে প্রকাশ হয় এবং এরপরে এর জনপ্রিয়তা এতই বেড়ে যায় যে এর একটি লাইভ অ্যাকশন মুভি, টিভি সিরিজ এবং মাঙ্গা আসে। উয়িকিপিডিয়াতে আবার মাঙ্গা ডেমোগ্রাফিক দেওয়া রয়েছে সেইনেন। যেটাই হোক এটার আনিমে আসেনি এটাই যা দুঃখ! লাইভ অ্যাকশন মুভিটি আমি দেখেছি। এখানে সব ঠিক থাকলেও মাঝে মিকার জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় দেখাতে পারেনি। তাই মুভি দেখতে ইচ্ছুক হলেও মাঙ্গাটাই আগে পড়ে ফেলবেন। কিন্তু অবশ্যই এটা সবার জন্য নয়। বিচার-বিবেচনা করে যদি আপনার রুচির সাথে মিলে বা মানিয়ে নিতে পারেন তাহলে পড়বেন। তবে হ্যাঁ, এত জনপ্রিয়তা তো শুধু শুধু পায়নি কোইযোরা। ট্র্যাজিক গল্প বলে না, এরকম সত্যিকারের ভালোবাসার দেখলে যে কারোরই মন ছুঁয়ে যাবে। মিকাকে কি আসলে দুর্ভাগ্যবতী না সৌভাগ্যবতী বলে উচিৎ কে জানে! তবে এরকম ভাগ্য ১০০০ এ ১ জনেরও যে হয় না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মিকা, তুমি যেখানেই থাকো আশা করি সুখেই আছো।

ফ্যাস্টার দ্যান এ কিস [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

faster-than-a-kiss

ফ্যাস্টার দ্যান এ কিস
জাপানী নামঃ কিস য়োরি মো হায়াকু
জানরাঃ রোমান্স, স্কুল, কমেডি, ড্রামা, শৌজো
চ্যাপ্টারঃ ৫৮
ভলিউমঃ ১২
মাঙ্গাকাঃ তানাকা মেকা
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.১২
ব্যক্তিগত রেটিং: ৮/১০

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশি কথাটা আমরা সবাই জানি। আনিমে এবং মাঙ্গা জগতে এসব নিষিদ্ধ জিনিস বলতে সাধারণত ইয়াওই, ইয়ুরি বা এ ধরণের এহেম এহেম মার্কা জিনিসই বোঝানো হয়। তবে এমন কিছু পেলে কেমন হয় যেটা কোন এক নিষিদ্ধ সম্পর্ক নিয়েই তৈরি কিন্তু পড়ার সময় বারবার মনে হবে না আপনি উল্টাপাল্টা কিছু পড়ছেন বরং খুব বেশি মিষ্টি আর নিষ্পাপ একটি গল্প বলেই মনে হবে? এমনই এক মাঙ্গা হল “ফ্যাস্টার দ্যান এ কিস” যা গড়ে উঠেছে শিক্ষক-ছাত্রীর নিষিদ্ধ সম্পর্ককে নিয়ে।

বাবা-মা হারা অনাথ মেয়ে কাজি ফুমিনো। শেষ সম্বল বলতে আছে ফুমিনোর পিচ্চি ভাই তেপ্পেই যার বয়স আবার মাত্র ৪ বছর। যেই বয়সে বাবা-মায়ের আদর আর শাসনে বেড়ে ওঠার কথা সেখানে ফুমিনোর চিন্তা কিভাবে হাই স্কুল পাশ করবে আবার একই সাথে ছোট্ট ভাইটির দেখাশুনা করবে। এক আত্মীয় থেকে আরেক আত্মীয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কারো বাড়িতে ঠাই হয় না এই দুই ভাইবোনের। হয়তবা পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে ভাইকে বড় করে তোলাই ছিল ফুমিনোর একমাত্র উপায়। কিন্তু কোন এক বিকেলে পালিয়ে গিয়ে পার্কে তেপ্পেইকে নিয়ে বসে থাকতে গিয়েই ভাগ্যটা পরিবর্তন হয়ে গেল। তার স্কুলের শিক্ষক ওজিরো কাযুমা-সেন্সেই ফুমিনোকে তার বাড়িতে আসতে বললেন। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত ফুমিনো সেন্সেইয়ের এই করুণা দেখে তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। সে বলেই বসলো, সেন্সেইয়ের যদি এতই সহানুভূতি হয় তো ফুমিনোকে বিয়ে করে উনি ফুমিনো আর তেপ্পেইয়ের দেখভাল করার দ্বায়িত্ব নিয়ে দেখাক না কেন!! সেন্সেইও তার ছাত্রীর কাছে হারতে রাজি নন। উনি সাথে সাথেই ফুমিনোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন! সেন্সেই ঠাট্টা করছে না করুণা দেখাচ্ছে তা ভাবার মত অবস্থা নেই বলে ফুমিনো শুধু হাতখরচ পাওয়া আর তেপ্পেইকে বড় করার লক্ষ্যে সুযোগটা লুফে নিল। ব্যস, ফুমিনোর নতুন বাসস্থান হল ওজিরো-সেন্সেইয়ের বাসা। স্কুলে সর্বদা শিক্ষক-ছাত্রীর ভূমিকা পালন করলেও বাসায় এখন তারা স্বামী-স্ত্রী। তেপ্পেইসহ ৩ জনের এই ছোট্ট পরিবার এবং তাদের আশেপাশের মানুষদের নিয়েই ফ্যাস্টার দ্যান এ কিসের গল্প।

অনেকটা ঝোঁকের বশেই আমি এই মাঙ্গাটা পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু একটা ব্যাপারে শুরুতে আমি সন্দিহান ছিলাম। বিয়ের কারণে এই জুটির সম্পর্ক কতদূর নিয়ে যাবে এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন ছিল। ভিতরে ভিতরে বিবাহিত হলেও এই সম্পর্কটা বেশি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিয়ে যাবে কিনা এ নিয়ে সংকোচে ছিলাম। কিন্তু ওজিরো-সেন্সেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে তার অবস্থানটার কথা কখনোই ভুলে যাননি। অনুভূতির বশে এখানে কোনভাবেই একজন শিক্ষক আর তার ছাত্রীর মাঝে যে সম্পর্ক থাকে তার মর্যাদাটা পুরোপুরি হারিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের আসল সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই সেন্সেই তার একজন ছাত্রীকে পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করেছিলেন। সেন্সেই নিজের ইচ্ছা আর অনুভূতিগুলোকে দমিয়ে রাখতেন ফুমিনো তার ছাত্রী এবং ফুমিনো যাতে কোন সমস্যায় না পড়ে শুধু এজন্যে। মাঙ্গাটির এই দিকটির প্রশংসা না করলেই নয়। আমার ভয়ের আরেকটি কারণ ছিল এই মাঙ্গার নামটি। নাম শুনে এতে কি না কি আছে ভেবেছিলাম! বিশ্বাস করেন, এই রকম ভুল ধারণা দেওয়া নাম খুব কমই আছে! একটা কিস যে এখানে কত বড় একটা বিষয় তা পড়লেই বুঝবেন। অন্যান্য স্বাভাবিক জুটিগুলোও ওজিরোx ফুমিনো’র মত এতটা “নিষ্পাপ” হয় না! এই নামের একমাত্র কারণ এত ঝড়ের গতিতে স্বামী-স্ত্রী হয়ে যাওয়া। তাই সাধারণত এ ধরণের নিষিদ্ধ সম্পর্কের গল্প আমার পছন্দ না হলেও এই মাঙ্গাটি যথেষ্ট ভালো লেগেছে।

বদমেজাজি, সহজেই মারামারিতে জড়িয়ে যাওয়া ফুমিনোর ধীরে ধীরে একজন সাধারণ টিনএজ মেয়ে থেকে মানসিকভাবে বেড়ে উঠা, দ্বায়িত্বশীল হওয়া এই ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টটা ছিল চোখে পড়ার মত। ওজিরো-সেন্সেই আর ফুমিনো দুজনেরই কষ্টের পেছনের গল্প রয়েছে যা নিত্যদিনের ঘটনা না বলে বরং সত্যিকার অর্থেই গল্পটিকে ভালোভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এছাড়া শৌমা, মার্গারেট, কুরোসাওয়া, কাজি পরিবার, ওজিরো পরিবার, র‍্যিঊ-সেন্সেই প্রভৃতি চরিত্র ড্রামা এবং কমেডি যোগ করেছে। জায়গায় জায়গায় বেশ ভালোই হাসিয়েছে চরিত্রগুলো। ড্রামার পরিমাণও সঠিক ছিল বলে মনে হয়েছে। বিরক্ত হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম। মার্গারেট বা মেগ নায়িকার চিরচেনা শত্রু হতে গিয়েও হয়নি উল্টা শেষে বেশ ভালো একটা সাপোর্টিভ মেয়ে ছিল। যদিও মাঝে মাঝে শৌমাকে ধরে পিটাতে ইচ্ছা করবে আবার শৌমার জন্যই খারাপ লাগবে। সেই চিরাচরিত “থার্ড হুইল” ছেলে। আসলে আর ৮/১০টা শৌজো মাঙ্গার মতই সবকিছু আছে এখানে বলতে গেলে। সেই “স্পার্কলিং”, “বাবলি”, “ফ্লাফি” রোমান্টিক মুহূর্ত; স্কুলের বার্ষিক উৎসব, সমুদ্রে যাওয়া, পিকনিকে যাওয়া, ক্রিস্টমাস, নিউ ইয়ার ইত্যাদি। কিন্তু তারপরেও মাঙ্গাটি অনেক বেশি রকমের উপভোগ্য লাগে। এখানেই মাঙ্গাকার সার্থকতা।

শৌজো মাঙ্গার মোয়ে মোয়ে চোখের আর্ট এখানে শুধু তেপ্পেইয়ের জন্য প্রযোজ্য। বাকিদের ক্ষেত্রে এতটা মোয়ে ব্যবহার করা হয়নি। তবে দেখলে বুঝা যায় যে এটি শৌজো মাঙ্গা। আর্ট মোটামোটি ভালোই আছে। শুরুতে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত হলেও শেষের দিকে আরও বেশি গাঢ়, ঝকঝকে এবং বেশ সুন্দর ছিল। আর শৌজো মাঙ্গার “কিরা কিরা” ভাবের উপস্থিতিও আছে ভালমতো।

উম… কিছু কি বলতে ভুলে গেলাম? সবই তো বলেছি… ও হ্যাঁ! কিউটনেসের কথা বলা হয়নি। এই মাঙ্গার কিউটনেস! সেটা কিন্তু রোমান্সের কিউটনেস না। পুচকি তেপ্পেইয়ের কিউটনেস! ফুমিনোর স্কুলের বন্ধুরাই তেপ্পেইকে অ্যাঞ্জেল ডাকে। এই অ্যাঞ্জেলকে দেখে তারাই গলে যায় আর আপনি গলবেন না তা কি করে হয় বলেন! এতটুকু পিচ্চি যেভাবে তার বোনকে কেউ বিরক্ত করলে বাঁচাতে যায়, “মা-কুন” আর “বুন-চানের” জন্য কাগজের আংটি বানিয়ে দেয় আর ফুমিনো আর সেন্সেইয়ের মাঝের বন্ধনটাকে আরও দৃঢ় করে তা দেখলেই তেপ্পেইকে শক্ত করে জড়িয় ধরে চুমু দিতে ইচ্ছে করবে! এই ছোট্ট মানুষটাও গল্পে বেশ ভালোই ভূমিকা পালন করেছে।

সবমিলিয়ে ফ্যাস্টার দ্যান এ কিস আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে। ভালো না লাগলে অনগোয়িং অবস্থায় ড্রপ করে শেষ হওয়ার পর আবার পুরোটা নতুন করে পড়তাম না। একজন শৌজো ভক্তকে সন্তুষ্ট করতে যা যা দরকার তার সব উপাদানই এতে আছে। তাই শৌজো ভক্ত হলে বা শিক্ষক আর ছাত্রীর মাঝে সম্পর্ক নিয়ে গল্প ভালো লাগলে মাঙ্গাটি পড়ে ফেলবেন অবশ্যই।

ভাহলিয়া নো হানামুকো [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

Vahlia no Hanamuko

ভাহলিয়া নো হানামুকো
জানরাঃ হিস্টোরিক্যাল, ফ্যান্টাসি, রোমান্স, শৌজো
চ্যাপ্টারঃ ৪
ভলিউমঃ ১
মাঙ্গাকাঃ আকিযুকি সোরাতা
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৭.৭৫
ব্যক্তিগত রেটিং: ৮/১০

“আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে” খ্যাত মাঙ্গাকা আকিযুকি সোরাতার ৪টি আলাদা ওয়ানশটের সংকলন ভাহলিয়া নো হানামুকো মাঙ্গাটি। খুব সম্ভবত ওনার প্রথম প্রকাশিত মাঙ্গা ছিল এটি। তবে এই মাঙ্গার হাত ধরেই ওনার মাঙ্গাকা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছিল কিনা তা ঠিক নিশ্চিত না। ৪টি ওয়ানশট এবং সেগুলোর গল্পঃ

#১। ভাহলিয়া নো হানামুকো/হানামুকো’স ব্রাইডগ্রুম

রুজিরিয়া বংশের জ্যেষ্ঠ কন্যা ভাহলিয়া ছোট থাকতেই তার বাগদান হয়েছিল কালস্ড বংশের জ্যেষ্ঠ পুত্র জিরুর সাথে। কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই জিরু নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এদিকে তাদের বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই এক মাস আগে ভাহলিয়ার নতুন বাগদত্তা হল জিরুর ছোট ভাই লুসেল। কিন্তু বিকল্প হিসেবে লুসেলকে বিয়ে করতে রাজি নয় ভাহলিয়া। জিরুর জন্য অপেক্ষা করাটাও হবে বোকামি। তাই বাগদানের উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝে রাত্রে বেলা ভাহলিয়া চুপটি করে বেড়িয়ে পড়ল জিরুর খোঁজে। সাথে যোগ দিল লুসেল।

#২। রিঊ নো মোরিউতা/লুলাবাই ফর এ ড্রাগন

“হেভেনলি ড্রাগন” হল সাগর এবং দ্বীপের রক্ষাকর্তা। ১৫০ বছর আগে এই স্বর্গের ড্রাগনরা হারিয়ে ফেলেছিল তাদের প্রাচীন বাসস্থান। এরপর পৃথিবীতে নেমে এসেছে এক ড্রাগনের সন্তান। লোককথা অনুসারে এই মানবরূপী ড্রাগন কিতো কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে একদিন নতুন হেভেনলি ড্রাগন হিসেবে জেগে উঠবে। তারপর আবারও রক্ষা করবে পৃথিবীকে। কিতোর পূজারী শুয়েন আর আর কিতো অপেক্ষায় আছে সেই দিনটির যেদিন কিতো ড্রাগন হিসেবে জাগ্রত হবে।

#৩। গিনসেকাই নো শৌমেই/দ্যা স্নোকেপ’স এমব্লেম

এক তুষারময় প্রান্তরে আলযা একাকী বাস করে। হঠাৎ একদিন সেখানে অচেতন অবস্থায় তুষারের মাঝে পড়ে থাকতে দেখে এক মেয়েকে। জ্ঞান ফিরলে মেয়েটি জানায় তার নাম রিয়াহ এবং সে এসেছে দূরে দেখা যাওয়া জাদুর শহরটি থেকে। কিন্তু এতদূরে তুষারের ধূধূ প্রান্তরে সে কিভাবে হাজির হল সেটাই একটা রহস্য। আলযা জাদু ব্যবহার করতে মানা করে দেয় রিয়াহকে। জাদুর শহরে বেড়ে ওঠা রিয়াহ আবিষ্কার করে জাদুহীন পৃথিবীটাও কতটা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু আলযা কেন জাদুকে এতটা অপছন্দ করে? রিয়াহ শরীরে আঘাত নিয়ে জাদুর শহরে থেকে কেমন করে এল এখানে? সেখানে ফিরে গেলেই বা কি হবে?

#৪। ওতোগিবানাশি নো ফুদে/দ্যা ব্রাশ অফ এ ফেইরি টেল

অনেক অনেক কাল আগে কোন এক গ্রামে নদী-নালা, হ্রদ আর তৃণভূমি ছিল। এখন শুধু সেই বিশাল সবুজ তৃণভূমিই গ্রামের ছবির মত সৌন্দর্য বহন করে। এই শুকিয়ে যাওয়া গ্রামটিকে ৩০০ বছর ধরে আগলে রেখে দেবতারা। এখানে একটি পবিত্র গাছের মূলের চারদিকের লেখাগুলো চুক্তি হিসেবে গ্রামটিকে দেবতাদের সাথে বেঁধে রেখেছে। সাসারা য়ূকেইয়ের দায়িত্ব মিশে যাওয়া লেখাগুলো আবার নতুন করে তুলি দিয়ে লিখে দেওয়া। একদিন তার কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই গাছের ভেতর সে দেখা পেয়ে গেল জল দেবীর। একাকী জল দেবীর কথা বলার সঙ্গী হল য়ূকেই। কিন্তু যে কাজ করে য়ূকেই ভেবেছিল সে জল দেবীকে রক্ষা করছে ব্যাপারটা কি আসলেই তাই?

গল্পগুলো একটা অপরটার সাথে সম্পর্কহীন। তবে এই ছোট গল্পগুলো প্রতিটিই খুব সুন্দর। বেশির ভাগ ওয়ানশট পড়লে মনে হয় সেগুলো ওয়ানশট বানানোর জন্যই তৈরি হয়েছে। মাঝ খান দিয়ে কোন এক জায়গা থেকে শুরু হয়ে ধুমধাম কাহিনী আগায় তারপর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই ওয়ানশটগুলো পড়লে মনে হয় একটা পুরা মাঙ্গাই যেন এক চ্যাপ্টারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা খারাপ অর্থে নয়। এটার প্রতিটা ওয়ানশটই নিজ নিজ আলাদা মাঙ্গা পাবার মত যোগ্য। একেকটা চ্যাপ্টার পড়ে অর্থহীন মনে হয় না। শৌজো হলেও এগুলো ঠিক রোমান্টিক না, রূপকথার গল্পের মত। পড়তে পড়তে আপনি গল্পের সাথে মিশে যাবেন। চরিত্রগুলোকে দেখলেও মনে হবে না যে তাদের নিজের কোন ব্যক্তিত্ব নেই। আর একটি চরিত্রের সাথে আরেক চরিত্রের সম্পর্ক, বন্ধন এগুলোও অল্পের মধ্যেই বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। প্রতিটি গল্পের সেটিংও অভিনব। সাথে তো আকিযুকি সোরাতার জাদুকরী আর্ট আছেই! সাধারণত দেখা যায় যে সব মাঙ্গাকার আর্টই শুরুর দিকে ভয়াবহ থাকে। তারপর বছরের পর বছর আঁকতে আঁকতে তাদের আর্ট ভালো পর্যায়ে আসে। অবাক করা ব্যাপার হল এখানে সোরাতার আর্ট এত বেশি নিখুঁত আর চমৎকার যে দেখলে কেউ বলবে না এটা তার প্রথম মাঙ্গা। উনি যেন জন্ম থেকেই পেশাদার আর্টিস্ট!! তার চরিত্র এবং পোশাক-পরিচ্ছদ আঁকার যে নিজস্ব ধরণ আছে তাও একদম এখান থেকেই শুরু হয়েছে। গল্প, সেটিং, আর্ট, চরিত্র সবদিক থেকেই উনি এত নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন যে কয়েক বছর পর ভবিষ্যতে আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমের মত একটি অসাধারণ মাঙ্গা যে আমাদের উপহার দিতে যাচ্ছিলেন তার পুর্বাভাসই যেন দিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যস্ততার মাঝে বা সময় কাটানোর জন্য যদি ছোট কোন মাঙ্গা পড়তে ইচ্ছে হয় তো পড়ে ফেলতে পারেন ভাহলিয়া নো হানামুকো। পড়লে পস্তাবেন না এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

৩৬০° ম্যাটেরিয়াল [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

360 Degree Material

৩৬০° ম্যাটেরিয়াল
অন্য নামঃ থ্রি-সিক্সটি ম্যাটেরিয়ালস, ৩৬০ ডিগ্রিস ম্যাটেরিয়াল

জানরাঃ শৌজো, রোমান্স, স্কুল লাইফ, ড্রামা
চ্যাপ্টারঃ ৩৩
ভলিউমঃ ৮
মাঙ্গাকাঃ মিনামি তৌকো
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৭.৬০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৯

 

 

 

 

 

আপনি কি “সেকেন্ড লিড সিনড্রোমে” ভুগছেন? ঝিলিমিলি করা সুদর্শন তরুণদের চেয়ে তাদের ঝলমলে আলোয় ম্লান হয়ে যাওয়া পাশের ওই সাধাসিধে নম্র ছেলেটিকেই ভালো লাগে? আপনার হৃদয় কি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় যখন নায়িকা এই অভাগা ছেলেটিকে পাত্তা না দিয়ে প্রধান ছেলে চরিত্রের পিছে দৌড়াতে থাকে? তখন কি স্ক্রিনের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলেন ‘এই ছেমড়ি এটা কি করলি তুই?!! এত ভালো একটা ছেলেরে ছ্যাঁকা দিলি?! অন্ধ নাকি! আসো “*নাম বসান*”-কুন আমার বুকে আসো! ও তোমাকে মূল্য না দিলেও আমি আছি তোমার জন্য!!’ ইত্যাদি বিড়বিড় করে স্ক্রিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন জড়িয়ে ধরার জন্য? তবে আপনাকে আমন্ত্রন জানাচ্ছি এই রিভিউ পড়তে!

(সতর্কবার্তাঃ পুরো রিভিউটি পড়ার পর বুঝবেন কথাগুলো আংশিক সত্য। পাগলী রিভিউয়ার সেকেন্ড লিডের উপর ক্রাশিত হয়ে পুরো মাঙ্গাটিতে তাকে মূলবস্তু বানিয়েছে। আর কারো পাত্তা নেই!)

গল্পের শুরুটা পড়ার জন্য আহামরি কিছু না। ওতাকা মিয়ো একদিন ট্রেন স্টেশনে দেখতে পায় তার ক্লাসমেট তাকি সুনাও আনমনা হয়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে সে ট্রেন আসছে এমন সময় রেললাইনের খুব কাছাকাছি জায়গায় চলে যায় আর মিয়ো তার হাত টেনে ধরে থামায়। তাকির সাথে কথা বলে মিয়োর মনে হয় তাকি অদ্ভুত ধরণের ছেলে, যদিও সে নিজেই মিয়োকে অদ্ভুত বলে। পরদিন সকালে তাকি আবার মিয়োকে গাড়ির ধাক্কা খাওয়া থেকে বাঁচায়। এরপর থেকে তাদের স্কুলে কথাবার্তা, যোগাযোগ বাড়তে থাকে। তারপর শৌজো মাঙ্গায় যা হওয়ার ঠিক তাই হয়। গল্প নিয়ে আর তেমন কিছু বলার নাই। যা হওয়ার সব এরপরে আসে যেগুলো স্পয়লার হিসেবে নেওয়া যায়।

এই মাঙ্গাটি সস্তা শৌজো মাঙ্গায় যে সস্তা স্কুল লাইফ রোমান্স গল্পগুলো দেখায় ঠিক সেরকমই। একদম খাঁটি শৌজো যাকে বলে (খাঁটি শৌজো বলতে কিন্তু জনপ্রিয় শৌজোগুলো বুঝানো হয়নি। খাঁটি বলতে গাঁজাখুরি শৌজো মাঙ্গা যাকে বলে!)। তাহলে আমি একে ১০ এ ৯ দিলাম কেন? রিভিউয়ের প্রথম প্যারাটাতেই তার আভাস দিয়েছি। প্রধান চরিত্র দুইটি কিংবা শুধু তাদের গল্প কোনটিই আমাকে একদমই আকর্ষণ করতে পারেনি। আমার মাঙ্গাটি ভালো লাগার কারণ শুধুই পার্শ্ব চরিত্রগুলো এবং গল্পে তাদের অবদান। এই অবদান তাকি আর মিয়োর সম্পর্কে নয়; তাদের নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে, নিজেদের অনুভূতি নিয়ে যে দ্বন্দ্ব চলে তা নিয়ে। এই চরিত্রগুলোর নিজ নিজ কষ্টের কোন গল্প নেই। কিন্তু মাঙ্গার গল্পটিকে সাধারণ বাকি গল্পগুলোর মত এগুতে না দিয়ে মাঝে মাঝেই এলোমেলো করে দেওয়াই এই অবদান। প্রচলিত রীতি অনুসরণ করেও মাঙ্গাটি কিছুটা অগতানুগতিক।

প্রথমেই বলা যাক চরিত্রগুলোর কথা। তাকি আর ১০টা শৌজো মাঙ্গার নায়কদের সাথে কোন ভাবেই খাপ খায় না। খুব সুশ্রী, জনপ্রিয়, প্রতিভাবান, হাসিখুশি, বন্ধুসুলভ এই বিষয়গুলো কিছুতেই তাকির ক্ষেত্রে খাটে না। আবার সে প্লেবয় ধরণেরও না। তাকি আসলেই খুব অদ্ভুত। তাকে আনমনা, চুপচাপ, স্বল্পভাষী হিসেবে দেখা যায়। নিজের মত থাকতে পছন্দ করে, বেশ বই পড়ে। মিয়োর এমন কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই যা আলাদা করে বলার মত। সাদামাটা একজন মেয়ে, বন্ধুদের সাথে থাকতে পছন্দ করে, পরীক্ষা আসলেই পড়াশোনা নিয়ে টানাটানি অবস্থা। তবে শৌজো মাঙ্গার নায়িকা বলতে আমরা যা বুঝি ঠিক সেরকমও বলা যায় না। এই মেয়ে যা করেছে তা শৌজো মাঙ্গার ইতিহাসে কোন ভালো থেকে খারাপ মেয়ে চরিত্র করতে পারেনি। কোন শৌজো মাঙ্গার নায়িকার কাছ থেকে এমনটা কেউ কখনো আশাও করতে পারবে না। কর্মের দিক থেকে মিয়োর চেয়ে ন্যাকামো আর কান্নাকাটি করা মেয়েরাও মনে হয় ভালো হবে। তবে মেয়েটিকে অপছন্দ হলেও সেই পরিমাণ বিরক্তিকর লাগবে কি লাগবে না তা আপনার উপরেই নির্ভর করছে। তাকি আর মিয়োর সম্পর্কটাও একটু অন্যরকম। এদের মাঝে যে সম্পর্ক আছে এটা মাঝে মাঝে মনে হয় না অন্যদের সাথে তুলনা করলে। হুট করে একটা সম্পর্কে চলে যায় যেখানে কবে, কিভাবে অনুভূতি তৈরি হল তা পরিষ্কার হয় না।

কিন্তু আমার ভালো লেগেছে মারুই, আকানে, শিমিযু এই ছেলেমেয়েগুলোকে। মারুই য়ুউকি হল সেই ছেলে যার কথা শুরুতে বলছিলাম। এই মাঙ্গাতে মারুই আসলে প্রধান ছেলে চরিত্রগুলোর মত। দেখতে সুন্দর, খেলাধুলায় ভালো, মেয়েদের কাছে প্রিয়। তাকির মত চুপচাপ স্বভাব পছন্দ না, নাকি মারুই শৌজো নায়কদের মত বলে নাকি সেকেন্ড লিডদের প্রতি আমার দুর্বলতা বেশি এ কারণে আমার মারুইকে ভালো লেগেছে তা ঠিক নিশ্চিত না। কিন্তু এই চরিত্র গল্পে জড়িয়ে যাওয়ার পরেই আমি টানা মাঙ্গাটি গোগ্রাসে গিলেছিলাম! মারুইয়ের জন্যেই গল্পটি ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে। তবে সেটা দুইবার ১৮০ ডিগ্রী করে! তাই নামের মতই মাঙ্গাটি ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে প্রচলিত নিয়মেই শেষ হয়েছে। মারুইকে খারাপ লাগা বা ভালো লাগা দুটার সম্ভবনাই অনেক বেশি। তবে যে চরিত্রটিকে সবাই পছন্দ করতে পারবে সে হল এবিহারা আকানে। প্রথমে সে যে রকম মানুষ হিসেবে ধারণা দিবে পরে দেখা যাবে মোটেও সে তেমন না। আকানে নায়িকা হলেই বোধ হয় বেশি ভালো হত।

কাহিনীর মাঝ থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক নাটকীয়তা আছে। আমার কাছে একটি বিষয় সবচেয়ে মজা লেগেছে। আমরা ভক্তরা কোন সিরিজে কোন কিছু পছন্দ না হলে কিংবা বুঝাই যায় হবে এমন কিছু দেখলেই অভিযোগ শুরু করি। অথবা কোন চরিত্র গল্পে প্রধান না বলে তার সাথে এমন অবিচার করা ঠিক না এসব বলে চেঁচামেচি করি। নিজেদের পছন্দমত শিপিং শুরু করি। কিন্তু আপনার ইচ্ছা যদি আসলেই পূরণ হত তাহলে কি ব্যাপারটা আসলেই ভালো হত? আপনি কি তখন আসলেই সেটা পছন্দ করতেন? এই জিনিসটা হারে হারে টের পাবেন এই মাঙ্গাটি পড়লে। শুরুর দিকে কমেন্ট সেকশনে মানুষকে যেটা সমর্থন করতে দেখেছি পরে সত্যি সত্যি সেটা ঘটতে দেখে আবার সেটা নিয়ে দুয়ো দিতে দেখেছি। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে বিনোদন লেগেছে! সাধারণ এই প্রথা একটুআধটু ভাঙ্গার জন্যেই বোধ হয় আমার উপভোগ করা হয়েছিল বেশ। তবে শেষে গিয়ে অনেক তাড়াহুড়া করে গল্পটি শেষ করা হয়েছে। এর চেয়ে আরেকটু সময় নিয়ে, সহজ একটা সমাপ্তি না দিয়ে আরেকটু নাটক করে যেরকম হওয়া উচিৎ ঠিক সেরকম করে কাহিনীর ইতি টানাটাই ভালো হত। হঠাৎ করেই কাহিনী শেষ হয়ে যায়।

৩৬০ ডিগ্রীস ম্যাটেরিয়াল কেন আমার এত ভালো লেগেছে এখনো আমি ঠিক ঠাওরে উঠতে পারি না। কারণ এর কিছু কিছু জিনিস পছন্দ করাটাই আসলে ভুল। আমারে মারুইকে ভালো লেগেছে, এই মাঙ্গাটি ভালো লেগেছে এবং এই বিষয়টা ভাবতেও আমি অস্বচ্ছন্দ বোধ করি। আমার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করে!! সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এটি বিতর্কমূলক একটি শৌজো মাঙ্গা। শৌজো মাঙ্গার বিশাল ভক্ত হলে তবেই এটা পড়ার কথা চিন্তা করতে পারেন। তারপরেও আপনার ভালো লাগবে না খুব খারাপ লাগবে তা পড়ার পরেই বুঝতে পারবেন।

ডিয়ার গ্রীন [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

Dear Green

ডিয়ার গ্রীন

ধরণঃ ওয়ানশট
জানরাঃ ড্রামা, রোমান্স, শৌজো
মাঙ্গাকাঃ সাকুরা আমইয়ূ
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৭.৯০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৮

মাত্র একটি চ্যাপ্টারের মাঝে কতটুকু গল্পই বা বলা সম্ভব? শৌজো ওয়ানশটগুলোতে সাধারণত নায়ক-নায়িকার ধুমধাম হঠাৎ দেখা হবে তারপর কিছু ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর পর মধুর মিলন হবে কাহিনী এখানেই শেষ। ভালো, নতুনত্ব থাকা গল্প পাওয়াই কঠিন। সেখানে অর্থপূর্ণ কোন ওয়ানশট মাঙ্গা তো আশা করাও ভুল। কিন্তু সাকুরা আমইয়ূ তার ডিয়ার গ্রিন মাঙ্গাটি মাত্র একটি চ্যাপ্টারেই তুলে ধরেছেন অর্থবহ একটি গল্প যেটির অভিজ্ঞতা বাস্তবে আমাদের সবারই কম-বেশি আছে।

কাউকে ভাইবোনের সাথে তুলনা করা আমাদের সমাজে নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। যখন এই তুলনা চলে তখন কেউ ভেবে দেখে না যে মানুষটিকে তুলনা করা হচ্ছে তার উপর তাদের মন্তব্য কি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে অপর ভাই বা বোনটি যদি হয় মেধাবী, প্রতিভাবান তাহলে তো কথাই নেই। আওয়ি শুন এমনই এক হতভাগা মেয়ে যার সেই ছোটবেলা থেকে গুণী বড় বোনের সাথে তুলনা চলে। সারাক্ষণ এই তুলনা দেখতে দেখতে সে বিরক্ত। শুন বাঁশি বাজাতে পছন্দ করলেও বোনের কারণে তাও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ঠিক মত চালিয়ে যেতে পারে না। সবকিছুর প্রতি উদাসীনতা, নিজের ইচ্ছামত চলা আর শহরের লুকানো এক সুন্দর জায়গায় একা একা বাঁশি বাজানো নিয়েই তার জীবন। সেখানে শুন একদিন একজন তরুণ ফটোগ্রাফারের দেখা পায়। এই ফটোগ্রাফারই শুনের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনে। সবকিছু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর স্বভাব আর হাল ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতার চেয়ে নিজেকে আরও ভালো করে তোলা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সে বুঝতে পারে।

শুন চরিত্রটির সাথে অনেকেই নিজের মিল খুঁজে পাবেন। বোন হিসেবে আওয়ি মিয়ো ভালো লাগার মত যদিও খুব ক্ষুদ্র সময়ের জন্য তাকে দেখা যায়। আর ইয়োহসুকের মত অনুপ্রেরণা জোগানো মানুষ বোধ হয় প্রতিটি মানুষের জীবনেই দরকার।
মাঙ্গাটির আর্ট খারাপ না আবার খুব আহামরি কিছুও না। একদম সচরাচর শৌজো মাঙ্গায় যেরকম আর্ট দেখা যায় তেমনটাই।

৫৪টি পৃষ্ঠা দিয়ে মাঙ্গাকা একটি কথাই বলতে চেয়েছেন। নিজেকে সম্মান করতে শিখ, নিজেকে ভালবাসতে শিখ। বড় বড় মাঙ্গাতেও এরকম সুন্দর কোন বার্তা পাওয়া যায় না। তাই ওয়ানশট হলেও এটি পড়ার মতই একটি মাঙ্গা।

ডেনগেকি ডেইযি [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

Dengeki Daisyডেনগেকি ডেইযি
অন্য নামঃ ইলেকট্রিক ডেইযি
জানরাঃ মিস্টেরি, কমেডি, ড্রামা, রোমান্স, শৌজো
চ্যাপ্টারঃ ৮০
ভলিউমঃ ১৬
মাঙ্গাকাঃ মোতোমি কিয়োওসুকে
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.৫৭
মাইআনিমেলিস্ট র‍্যাংকিং: ১০০
মাইআনিমেলিস্ট পপুলারিটিঃ ২২
ব্যক্তিগত রেটিং: ৯.৫

শৌজো-এই জানরাটার প্রতি ছেলে হোক, মেয়ে হোক, শৌজো ভক্ত হোক না হোক সবারই কেমন জানি একটা চুলকানি আছে! কেননা প্রায় প্রতিটা শৌজোতে একই কাহিনী। টানা দেখতে বা পড়তে থাকলে বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ যতই বলুক এটা আলাদা, অন্যরকম নায়িকা; শেষ পর্যন্ত এগুলো সেই বহুল ব্যবহৃত রোমান্স নির্ভর স্কুল জীবনের গল্প। শুধু কোনটা একটু ভাল কোনটা একটু খারাপ। কিছু নতুনত্ব আছে আকাতসুকি নো ইয়োনা, আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে, সাইয়ুনকোকু মোনোগাতারি’র মত সিরিজগুলোতে যেগুলো আবার সবই হিস্টোরিক্যাল রোমান্স। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগেই কোন হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়ের গল্প যেটাকে আমি “ওয়ান অফ এ কাইন্ড” বলতে বাধ্য হচ্ছি তা হল ডেনগেকি ডেইযি। হাইস্কুল পড়ুয়া নায়িকা থাকলেও এটি পুরোপুরি রোমান্স নির্ভর কোন মাঙ্গা নয়। এরকম কাহিনীর দ্বিতীয় কোন আনিমে বা মাঙ্গা বোধ হয় এখন পর্যন্ত খুঁজে পাবেন না।

কুরেবায়াশি তেরু যখন মিডেল স্কুলের ছাত্রী তখন তার একমাত্র আত্মীয় তার বড় ভাইটিও ক্যান্সারে মারা যায়। শেষ সম্বল হিসেবে তেরুকে দিয়ে যায় একটি সেলফোন। এই সেলফোনে রয়েছে ডেইজি নামের একজনের ই-মেইল এড্রেস। ডেইজির দায়িত্ব সকল বিপদে-আপদে তেরুকে তার সর্বস্ব দিয়ে রক্ষা করা। যদিও ডেইযি কে, দেখতে কেমন এসব বিষয়ে তেরু কিছুই জানে না। মাঙ্গার কাহিনী শুরু যখন তেরু হাইস্কুলে উঠেছে। একদিন ভুলে সে তার স্কুলের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে বল দিয়ে। স্কুলের পরিচারক কুরোসাকি তাসুকু তেরুকে ধরে নিয়ে যায় কারণ তেরু গরিব বলে টাকার বদলে তার দেহ দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে…

ঠিক এখানে এসে লিখতে গিয়ে খুব হাসি আসছে। পুরা বাংলা সিনেমা বাংলা সিনেমা লাগছে! আসলে উপরের জানরাগুলো বা কাহিনীর বর্ণনা কোনটাই মাঙ্গাটি কি ধরনের বা কি নিয়ে তা নিয়ে তো ধারণা দেয়ই না বরং আরো চরম আকারের ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে বসে। তাই বাংলায় শুদ্ধভাবে লেখার চেষ্টাটা আপাতত বাদ দিলাম! এই সোনালী চুলের গুন্ডা ধরণের স্কুল জেনিটর কুরোসাকি তেরুকে তার সার্ভেন্ট বানিয়ে তেরুকে দিয়ে কামলা খাটায়। এই নিয়ে অতিষ্ঠ তেরু তাই যখন তখন কুরোসাকিকে বলে “গো বাল্ড কুরোসাকি”। মানে কুরোসাকি টাকলা হয়ে যাক! কিন্তু কুরোসাকির আসল লুকানো পরিচয় সে একজন হ্যাকার। শুধু যেন তেন হ্যাকার নয় তাও। সেই বিখ্যাত থুক্কু কুখ্যাত হ্যাকার ডেইযি!! কুরোসাকির সাথে পরিচয়ের পর থেকেই তেরুর জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। অচেনা সব মানুষের টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় সে। যখন তখন ভয় কারো আক্রমণের, কিডন্যাপ হয়ে যাবার। এই সব মানুষ চায় শুধু একটি জিনিস। তেরুর সেলফোন। জিনিয়াস ইঞ্জিনিয়ার কুরেবায়াশি সোইচিরো মৃত্যুর আগে সেই সেলফোনে রেখে গেছে এমন গুরুত্বপুর্ণ কিছু যার পিছনে হন্য হয়ে সবাই ছুটছে। কিন্তু তেরু কুরোসাকি কিংবা বাকিদের সাহায্যেও সহজে তা খুঁজে বের করতে পারে না। কি এমন সেই তথ্য যার জন্য তেরুর স্বাভাবিক জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ?

এতটুকু পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন মাঙ্গাটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। অল্প অল্প করে পুরো মাঙ্গা জুড়েই রহস্য উদঘাটন হতে থাকে। তাই কাহিনী ঝুলে যায়নি কোথাও। এখানে শৌনেন মাঙ্গার মত কিছু সিরিয়াস কাহিনী চলে তারপর আবার লাইটহার্টেড হয়ে যায় একটু আনন্দ দেওয়ার জন্য। অনেকটা আর্কের মতই। আসলে এই মাঙ্গাটি যদি একটু পরিমার্জন করে প্রধান চরিত্রকে মেয়ে না হয়ে ছেলে বানান হত তবে এটাকে শৌনেন কিংবা সেইনেন ট্যাগ দিলেও বোধ হয় আমি অবাক হতাম না। মাঝে মাঝে ভুলেই যেতে হয় যে এটি একটি শৌজো মাঙ্গা! আর তার অন্যতম একটি কারণ হল এর রোমান্টিক অংশটা অনেক স্লো। রোমান্স যে অনেক কম ঠিক তা না কিন্তু খুব ধীরে ধীরে সময় নিয়ে এখানে রোমান্সের অগ্রগতি হয়। যখনই চোখে পড়ার মত অগ্রগতি হতে যায় ঠিক তখনই আটকে যায় তা। তাই রোমান্টিক শৌজো ফ্যানদের মাঝেই মাঝেই হতাশায় মাথার চুল ছিঁড়তে বা টেবিল উল্টাতে ইচ্ছা করলেও কিছু করার নেই! তবে ধীরে আগানটা আসলে গল্পটার জন্য ভালো ছিল। যখন যেটার জন্য উপযুক্ত সময় ঠিক তখনই সেটা হয়েছে। তাই বলে ভাবার কারণ নেই এটা সবসময় খুব গুরুগম্ভীর ধরণের। এখানে কমেডি দৃশ্যগুলো দেখলে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। কমেডি সবচেয়ে কমন একটা জানরা হলেও এতটা হাসাতে পারে না সব আনিমে, মাঙ্গা। মাঙ্গাকা মোতোমি কিয়োওসুকে মাঙ্গার পেজে সাইড নোট হিসেবে অনেক কিছু লেখেন তার পাঠকদের জন্যে। এই সাইড নোটগুলো আরও হাসির খোরাক যোগায়।

তবে একটি জিনিস বলে রাখা ভালো। চ্যাপ্টার ৪০ এর দিকে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ পায়। এবং ঠিক এখানেই অনেকগুলো চ্যাপ্টারের ট্রান্সলেশন ভয়াবহ বাজে। এই চ্যাপ্টারগুলো রিপ্লেস করা হয়েছে বা দ্বিতীয় কোন ট্রান্সলেশন আছে কিনা আমার জানা নেই। যদি থাকে তো বেঁচে গেলেন। না থাকলে এখানে কাহিনী বুঝতে অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই। সামনের চ্যাপ্টারগুলোতে ওই ঘটনাগুলো আবার উঠে আসে তাই এখন না বুঝলেও পরে সব বুঝতে পারবেন।

অনেক দিক দিয়েই কুরোসাকির সাথে মেইড-সামা’র উসুই তাকুমির মিল পাওয়া যায়। আবার দুজনে দেখতেও অনেকটা একই রকম যে কারণে কেউ কেউ চিনতে ভুল করে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার কুরোসাকিকে উসুইয়ের চেয়েও বেশি ভালো লেগেছে। তার কারণ হল কুরোসাকি “মানুষের মতই একজন চরিত্র”। শৌজো হিরোদের বাস্তবতার কাছাকাছি লাগে খুব কম। তারা শুধু যেন রোমান্স নিয়েই ব্যস্ত। সেখানে কুরোসাকির জীবন, সংগ্রাম, আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, স্বভাব-চরিত্র সবকিছুই অন্যরকম আর বাস্তবধর্মী। একজন মানুষ হিসেবে কুরোসাকির অনুভূতিগুলো আসলেই অনুভব করা যায়। তেরুও পছন্দনীয় একটা মেয়ে। তেরুকে যেসব ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় এসবের কিছুর মধ্যে দিয়েই যেতে হয় না সাধারণ শৌজো মাঙ্গার প্রধান মেয়ে চরিত্রগুলোকে। তাও তারা “ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস” খেতাব পেয়ে যায়। সেখানে তেরুকে অগণিত বার কুরোসাকি আর বাকিদের বাঁচাতে হলেও কখনই তাকে অকর্মা মনে হবে না। আবার সে যে খুব শক্তিশালী, একাই ১০০ টাইপ তাও না। কিন্তু তারপরেও তেরু নিজের মত করে যা পারে করে যায়। কাণ্ডজ্ঞান নামক জিনিসটা তার মাঝে আছে! তেরুকে আমার কাছে খুবই ইউনিক লেগেছে। তাই বিরক্ত হওয়ার সুযোগ খুব কম। সাধারণ মাঙ্গার মত প্রধান দুই চরিত্রের কচকচানিতে এখানে বাকি চরিত্রগুলোও হারিয়ে যায়নি। বরং আশেপাশের মানুষগুলোও কমবেশি সমান গুরুত্ব পেয়েছে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ রোল প্লে করেছে। তার মাঝে আছে রিকো, মাসুদা, আনদোও, হারুকা, কিয়োশি, রেনা, সোইচিরো এবং অবশ্যই আকিরা।

মোতোমি কিয়োওসুকে’র আঁকার নিজস্ব স্টাইল আছে। আর্ট দেখে শৌজো মাঙ্গা বুঝা গেলেও বাকি শৌজো মাঙ্গার মত সব একই রকম লাগে না। ডেনগেকি ডেইযির শুরুতে আর্ট মোটামোটি ভালই ছিল। শুধু প্রথম চ্যাপ্টারের প্রথম পেজেই কভারে তেরুর ছবিটা দেখে কোন না কোন ফালতু মাঙ্গা ভেবে উড়ায় দিতে ইচ্ছা করেছিল। তারপর যত চ্যাপ্টার গেছে আর্ট ভালো থেকে আরও ভালো হয়ে উঠেছে। খুবই সুন্দর এবং ওয়েল ডিটেইল্ড আর্ট। তবে আর্টের বিষয়ে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কমেডির জন্য চিবি নয় বরং নানান ধরণের আজব এবং মজার সব ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন আর পোজ ব্যবহার করে হয়েছে। ডায়ালগগুলো এমনিতেই হাসির তার উপর এই ড্রয়িংগুলো ব্যাপারগুলোকে আরও বেশি হাস্যকর আর নাটকীয় করে তুলে। একেকটি চরিত্রের অঙ্গভঙ্গি দেখার পর হাসি থামান কঠিন হয়ে পড়ে।

অন্য শৌজো মাঙ্গাগুলোর মত এত নামডাক না শুনলেও মাঙ্গার ওয়েবসাইটগুলোতে শৌজো জানরা সার্চ দিলে এবং হট রিড মাঙ্গার তালিকায় ডেনগেকি ডেইযির নাম দেখতে পাবেন। সবচেয়ে ভালো শৌজো মাঙ্গাগুলোই আনিমে অ্যাডাপ্টেশন পায় না। আনিমে না আসলেও এই মাঙ্গা চোখের আড়ালে থেকে গেলে তা হবে দুঃখজনক। আপনার যাই পছন্দ হোক এরকম ইউনিক একটা মাঙ্গা মিস করলে নিজেই পস্তাবেন। তাই মাস্ট রিড মাঙ্গার তালিকায় অবশ্যই এই মাঙ্গাটি রাখবেন। আর মাঙ্গাটি পড়ার সময় সিন্ডি লপারের টাইম আফটার টাইম গানটি শুনতে পারেন। এই গানটির সাথে ডেনগেকি ডেইযির যোগসূত্র আছে। আশা করা যায় আপনি সময়টা দারুণ উপভোগ করবেন। আর এটি অনায়াসে আপনার সেরা মাঙ্গা তালিকায় ঢুকে গেলেও তা অবাক করার মত কিছু হবে না!

আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

Akagami no Shirayuki-hime 1

আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে
ইংরেজি নামঃ রেড-হেয়ারড স্নো হোয়াইট
জানরাঃ হিস্টোরিক্যাল, ফ্যান্টাসি, শৌজো, রোমান্স, ড্রামা
অবস্থাঃ চলমান
চ্যাপ্টারঃ ৭৪+
মাঙ্গাকাঃ আকিযুকি সোরাতা
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.৪১
ব্যক্তিগত রেটিং: ১০/১০

রূপকথার গল্প কার না ভালো লাগে? এমন কাউকে বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ছোটবেলায় রূপকথার গল্প পড়ে, শুনে কিংবা দেখে বড় হয়নি। সে সময় রাজকন্যা, রাজপুত্র, রাজা, রাণী, রাজপ্রাসাদের গল্পগুলো কতই না আকর্ষণীয় লাগত। শিশুমনের কল্পনার রাজ্যে এগুলোই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকত। তবে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার পর সেই আকর্ষণটা আর তেমন থাকে না। এসব বর্তমানে অলীক ব্যাপার নিয়ে কল্পনার রাজ্যে গা ভাসানোর জন্য যে আমরা খুব বড় হয়ে গেছি! ওসব আর মানায় না। তবু বুকের গভীরে কোথাও হয়ত সেই ভালোলাগাটা রয়েই যায়। ছোট কাউকে গল্পের বই পড়তে দেখলে এখনো স্মৃতিকাতর করে তুলে। তবে যদি এমন এক রূপকথার গল্প পাওয়া যায় যা এই বয়সেও সমানে আপনার আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না। আর মানের দিক থেকে তা যদি হয় আর দশটা সাধারণ গল্পের চেয়েও ভালো তাহলে তো সোনায় সোহাগা! এমনই এক রূপকথার মাঙ্গা আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে।

তানবারুন রাজ্যে বাস করে শিরায়ুকি নামের এক মেয়ে। শিরায়ুকির চুল লাল বর্ণের যা অনেক বিরল। এই বিরল চুলই বিপক ডেকে আনে শিরায়ুকির জন্য। তানবারুনের পাগলাটে স্বভাবের রাজপুত্র রাজি লালচুলো শিরায়ুকির কথা জানতে পারে। তাকে প্রস্তাব দেয় কনকিউবাইন হবার। কিন্তু শিরায়ুকি যে কারো হাতের পুতুল নয়। স্বাধীনচেতা শিরায়ুকি নিজেকে রাজপুত্রের হাতে সঁপে দিতে রাজি নয়। সে বেঁচে থাকতে চায় নিজের মত করে। তাই সে এই বিপদ ডেকে আনা লম্বা লাল চুল কেটে ফেলে তার নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় পাশের রাজ্য ক্লারিনেসে। সেখানে গভীর বনে দেখা পায় তারই সমবয়সী এক তরুণ ছেলে যেনে্র। সাথে যেনের দুই সঙ্গী মিতসুহিদে আর কিকি। শুরুতে সদাসতর্ক থাকা যেনের সাথে শিরায়ুকির সাথে ঝামেলা বাঁধলেও আস্তে আস্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবু লাল রঙ যেন তার ভাগ্যের পিছু ছাড়ে না। শিরায়ুকির উদ্দেশ্যে রাজপুত্র রাজির পাঠানো আপেল খেয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হল যেন্। এখন যেনকে কিভাবে বাঁচাবে শিরায়ুকি? আর যেনে্র আসল পরিচয়ই বা কি? কি করছিল সে এই গভীর বনে?

শুরুর দিকে গল্পটি শিরায়ুকি আর যেনে্র দৈনন্দিন জীবন নিয়ে চলতে থাকে। শিরায়ুকির নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দৃঢ় ইচ্ছা আর যেনে্র সাথে তার সম্পর্কের অগ্রগতিই থাকে গল্পের মূলবিন্দু। শুধু এতটুকুর জন্যেই মাঙ্গাটি চালিয়ে নেওয়া যায়। তবে একটু একটু করে আরো নতুন জিনিস যোগ হতে থাকে। ছোট ছোট ঘটনাগুলোকে আর্কে ভাগ করে নেওয়া যায়। এরপর থেকেই গল্পটি পরিপূর্ণ রূপ পায়। যেনে্র সাথে শিরায়ুকির সম্পর্কটার জন্যেই অন্তত মাঙ্গাটির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে যেখানে গল্পটিকে পৌঁছাতে হবে। তাই বর্তমানে মাঙ্গাটি খুব সুন্দরভাবে আগাচ্ছে। কাহিনী দিনকে দিন আরো জমজমাট হয়ে উঠছে।

Akagami no Shirayuki-hime 2

আকা-শিরাকে অনন্য করে তুলেছে এর প্রতিটি চরিত্র। অবশ্যই এক্ষেত্রে সবার আগে শিরায়ুকির কথা বলতে হয়। শিরায়ুকি খুব ভালো, নম্র, ভদ্র একজন মেয়ে। কিন্তু তাই বলে সে সাধারণ শৌজো নায়িকাদের মত স্যাকারিন দেওয়া মিষ্টি মেয়ে না যে অল্পতেই প্রতারিত হবে আর ভেঙ্গে পড়বে। শিরায়ুকিকে রক্ষা করার জন্য আক্ষরিক অর্থেই রাজপুত্র আছে। কিন্তু সে কখনোই তাদের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকে না। কারো কাছেই সে মাথা নোয়াবার নয়। নিজের জীবনের পথ সে নিজে বেছে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে শিরায়ুকির অন্য একটি দিক আমার তার চেয়েও বেশি ভালো লেগেছে। এখানে অন্য কোন মেয়ে হলে নিশ্চিত কোন এক সময় যেনকে বাংলা সিনেমার মত করে বলত ‘কিন্তু আমাদের সামাজিক অবস্থান যে যোজন যোজন দূরে। আমাদের এ সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না। না, আমি আর এ সম্পর্ক আগাতে দিতে পারি না। তুমি আমাকে ছেড়ে দাও যেন। তাহলে তুমি ভালো থাকবে!!’। শিরায়ুকি এ ধরণের কথাবার্তা কখনো বলেনি এবং সামনেও বলার সম্ভবনা নেই। তার মানে এও না যে সে নিজের সামাজিক অবস্থান ভুলে গিয়ে দাম্ভিকতার পরিচয় দিয়েছে। বরং সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এমন এক জায়গায় পৌঁছুতে চায় যাতে একদিন সে যেনে্র পাশে দাঁড়াতে পারে। তার হয়ত টাকাপয়সা, সামাজিক মর্যাদা বা জৌলুস নেই কিন্তু বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সে ঠিকই ওপরে উঠে আসে।

বাকি চরিত্রগুলোও কেউ কারো চাইতে কম যায় না। রাজপুত্র, প্রভু, ছোট ভাই বা প্রেমিক যেকোন ভূমিকাতেই যেন্ উয়িস্তালিয়া অনেক আন্তরিক, দায়িত্বশীল আর চিন্তাশীল। সেক্ষেত্রে ওবি একজন রহস্যময় ভৃত্য হলেও যেনে্র কাছে হেরে যায়নি। যেন্ এবং সবাইকে নিয়ে সবসময় দুষ্টামি করা কিন্তু বিশ্বস্ত ওবি বরং জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেক উপরেই আছে। কোন এক ব্যাখাতীত কারণে ওবিকে একটু বেশিই ভালো লাগে। মিতসুহিদে আর কিকির মজার অগ্রগতি দেখার জন্যেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন। এই দলটার বাইরে আছে রাজপুত্র ইযানা। শুরুতে আমি শিরায়ুকি আর যেনে্র পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ভেবে ইযানাকে একটুও পছন্দ করিনি। কিন্তু মাঙ্গা যত এগিয়েছে তত বুঝেছি ইযানা আসলে কেমন মানুষ। সে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে আর কেন নিচ্ছে তা বুঝতে পারার পর ইযানাকে তারিফ করতেই হয়। আসলে এখানে অপছন্দ করার মত এমন কোন চরিত্র নেই। আর রাজপুত্র রাজি? ধীরে ধীরে তার মাঝে এতটাই পরিবর্তন আসে যে তাকে নিয়েও আর হাসাহাসি করা যায় না।

আকা-শিরার আর্ট খুব বেশি সুন্দর। আনিমেতে মাঙ্গার একই আর্ট ব্যবহৃত হয়েছে। অ্যানিমেশন যথেষ্ট সুন্দর ছিল। তাও মাঙ্গাতে আর্ট দেখতে আনিমের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুন্দর লাগে। আর্ট দেখলে শুধু আর্টের জন্যেই মাঙ্গা পড়তে ইচ্ছে হবে। আকা-শিরাতে এর নিজস্ব জগতটার জন্য মাঙ্গাকা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের বাড়ি-ঘর আর পোশাক-আশাকের নকশা করেছেন। এই দিকটি চোখে পরার মত।

এই মাঙ্গাটি এত বেশি ভালো আর নিখুঁত যে এতে দোষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সমস্যার মধ্যে একটি রাজপ্রাসাদে যত সৈন্যসামন্ত, চাকর-বাকর আর হোমরাচোমরা ব্যক্তিদের ব্যস্ত চলাফেরা দেখা যাওয়ার কথা তা দেখা যায় না এটাই উল্লেখ করা যায়। সেই তুলনায় রাজপ্রাসাদ পুরা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কেউ কেউ রাজপরিবারের কথাও বলতে পারে। যেন আর ইযানা ছাড়া রাজপরিবারের কাউকে দেখা যায় না। কিন্তু সেটা শুধু শুরুতে। মাঙ্গা যত এগিয়েছে তত নতুন সব চমক এসেছে। কিন্তু পরে গিয়ে রোমান্স আগে যা ছিল তার চেয়ে অনেক কমে যায়। অনেকেই এটা নিয়ে অভিযোগ করে। তবে আমার মতে এভাবে শুধু মিষ্টি প্রেমের গল্পকে কেন্দ্র না করে বরং বাস্তবধর্মীভাবে কাহিনী আগাচ্ছে। এতে মাঙ্গাটি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে।

এর আনিমের দ্বিতীয় সিজনটি কিছুদিন আগেই শেষ হল। দুটি সিজনই বেশ ভালোভাবেই মাঙ্গাকে অনুসরণ করেছে। তবু একজন মাঙ্গাপড়ুয়া হিসেবে মনে হয়েছে কিছু একটা নেই। আর দ্বিতীয় সিজন যেখানে শেষ ওখানেই আরও চমকপ্রদ সব ঘটনার শুরু। তাই আনিমে যাদের ভালো লেগেছে তাদের জন্য মাঙ্গা পড়া অত্যাবশ্যক। তবে আনিমেতে মাঙ্গার চ্যাপ্টার আগাপিছা করে অনেক চ্যাপ্টার মিলে একেকটি পর্ব বানান হয়েছে। তাই কোথা থেকে মাঙ্গা শুরু করা উচিত এটা বলা কঠিন। আনিমের শেষ পর্বটি ছিল চ্যাপ্টার ২৯, ৩০ থেকে। তবে চ্যাপ্টার ৩১, ৩২ থেকে আগেই আনিমে বানান হয়েছে। চ্যাপ্টার ৩৩-এ এরপরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শুরু। তাই ওখান থেকেই শুরু করতে পারেন।

প্রতিটি জানরারই কোন কোন সিরিজ থাকে যা ওই জানরার সচরাচর সিরিজগুলোর থেকে আলাদা এবং অসাধারণ হয়। আকাগামি নো শিরায়ুকি-হিমে এমনই একটি মাঙ্গা। তথাকথিত জীবনের টুকরা শৌজো মাঙ্গা থেকে এই রূপকথার মাঙ্গা অন্য স্তরের। আনিমে আসার আগ পর্যন্ত এটি ছিল মাঙ্গা জগতের লুকান রত্ন। এখন আর চোখের আড়ালে না থাকলেও রত্নই রয়েছে। তাই সুযোগ পেলে অবশ্যই একবার এই কল্পনার রাজ্যে ডুব দিয়ে আসতে পারেন।

Akagami no Shirayuki-hime 3