ইতাচি কেন আসামী (প্যারোডি ফ্যানফিক) — Rahat Rubayet

——————————————————————

রাউন্ড টেবিলে টুকটাক কথাবার্তার সাথে সাথে হালকা চা নাশতার আয়োজন চলছে। প্রাউড কিং এর কপালে চিন্তার ভাজ লক্ষ্য করছে সবাই। আর চিন্তা করবেন না-ই বা কেন কিং আরতুরিয়া পেন্ড্রাগন? স্বয়ং ইতাচি উচিহার মামলার রায়ের শুনানী আজ। অবশ্য বেডিভিয়ার আর হোয়াইট নাইট আর কারোর মতন বিচলিত হয় না খুব সহজে। কিং অব নাইটস মানে আরতুরিয়া যতক্ষণ জীবিত আছেন, অবিচার দ্যুলোক-ভুলোক কোথাওই হবার উপায় নেই।
ওদিকে কোর্টরূমে ততক্ষণে লোকজনের কোন কমতি দেখা যাচ্ছে ন। সাধারন দর্শকের আসনে জনাকয়েক ব্যক্তি বসতে বসতেই নিজেদের মাঝের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কথার ঝুলি উগলে দিচ্ছে। এদের মধ্যে একজন বলতে থাকে, “এ আবার কেমন কতা, বল দেকিনি? হ্যা? নিজের ভক্তকেই শেষমেষ আমাতেরাসু মেরে দিলো?”
-“আরে, রিল্যাক্স। এত সিরিয়াসনেস দেখানোর কি আছে? এটা জাস্ট একটা ট্রায়াল। আমাদের কি আমরা ‘পোটেটো চিপ্স’ খাবো আর এঞ্জয় করবো এইসব নিয়ে অফেন্ডেড ফিল করা কি আর আমাদের সাজে? মজা নিতে আসছি, চুপচাপ মজা নিয়ে যাই।”
ওদিকে জুরিবক্সে বসে আছে পাকুন, তাকামুরা মামুরো, গিলগামেশ আর ৯ জন ‘সাকুরা’। আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জগতবিখ্যাত ইতাচি উচিহা যার অগ্নিদৃষ্টির সামনে নষ্যি সবকিছু। বিচারকের আসন গ্রহন করলো গিন্তোকি। বাদী পক্ষের উকিল হিসেবে আছে ইজাইয়া অরিহারা আর আসামী পক্ষে আছে ফুউরা কাফকা।
বিচারকের ইশারায় গুঞ্জন স্থিমিত হয়ে আসতেই উকিল আর আসামী, বাদী সবাই প্রস্তত হতে থাকে। আসামী পক্ষের উকিলের কথা বলার বা নিজেদের ডিফেন্ড করার পালা আসলো। ফুউরা কাফকা তার পোশাক আশাক ঠিক করে বিচারকের সামনে দাড়িয়েই যেন ঘোষণা করলো,
“মহামান্য বিচারক, বাদী পক্ষের উকিল যে অভিযোগ করেছেন তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন”, বিচার দেখতে আসা ‘সাধারন’ মানুষদের গুঞ্জন উস্কে দেবার জন্যই যেন বলতে থাকে “কারণ একজন মানুষের চোখ দিয়ে আগুন বের হবে আর তা দিয়ে আরেকজন মানুষ ভস্মীভূত হবে, এ কথা মাঙ্গা আর এনিমেতে সম্ভব বাস্তবে না।
আর তাছাড়াও একজন মানুষ কখনোই এই সুন্দর বসন্তকালে আরেকজন মানুষকে খুন করতে পারে না।”
-“তাহলে?” স্বভাবজাত প্রশ্ন
“আমাদের বাদীপক্ষের গায়ে শীত শীত ভাব হচ্ছিল, তাই আমার মক্কেল তার শীত নিবারনের চেষ্টা করেছেন মাত্র। আপনিই বলুন মহামান্য বিচারপতি, এই সুন্দর পৃথিবীতে কি কেউ কাউকে প্রানে মেরে ফেলতে পারে?”
আর থাকতে না পেরে বাদীপক্ষের উকিলের প্রশ্ন-
“তাহলে কি খুনটাই হয়নি?”
-“খুন? কিসের খুন? ভদ্রলোক তো sword art online খেলছেন। বিচারপতি, আপনি নিশ্চয়ই সর্বকালের সেরা গেম (এনিমে) SAO এর নাম শুনেছেন”
ফুউরা কাফকা কথা শেষ করতে পারল না, তার আগেই হইচই পরে গেলো যেন কোরটরুমে।
জুরি বক্সে বসে বসে নাক খোঁচাতে খোঁচাতে “কোনটা সেরা তা নিয়ে কি এদের কামড়াকামড়ি কোনদিন শেষ হবে না? এতো সেই কবে থেকেই প্রতিষ্ঠিত সত্য যে হাজিমে নো তাকামুরা সবার সেরা।”
গিলগামেশ বাকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে। কিছু বলতে গিয়েও বলল না, ইন্তারেস্টিং কিছু একটা দেখার লোভে ইনভাইটেশান প্রত্যাখ্যান করতে পারে নি। আরো কিছুক্ষণ ব্যাপারটা দেখবে বলে ঠিক করেছে ইতিমধ্যে।
প্রায় আধাঘন্টা যাবত উকিলদ্বয়ের বাক্যালাপ চলতে থাকলো, মজার ব্যাপার হলো, কিভাবে কিভাবে যেন বাদী পক্ষের প্রতিটি যুক্তিই স্রেফ ধোপে টিকলো না ফুউরা কাফকার প্রত্যয়ী বিশ্লেষণ এর কাছে। একটা পর্যায়ে ধীরে ধীরে কোর্ট রুমের ভেতরে সবার কাছেই পরিস্কার হয়ে গেলো রায় কোনদিকে যাচ্ছে।
কিন্তু বিচারক গিন্তোকিকে কেন যেন বিরক্ত লাগছে।
আর কেউ না জানুক, ফ্যানফিকের লেখক নিজে জানে, গিন্তোকি আসামী পক্ষকে ফাঁসি দেয়ার সুযোগ খুঁজে না পেয়ে যারপরনাই বিরক্ত।
আর তাই কিং অব দা কিংস এর সামনে বসেও দিব্যি কানি আংগুল দিয়ে কান চুলকোতে চুলকোতে প্রশ্ন করে বসে,
“তা শিতাচি , থুক্কু ইতাচি উচিহা, হাশিরামার থেকে বেটার শিনোবি বলার জন্য আপনি আপনার এক ভক্তকে খুন করেছেন- এই অভিযোগের শুনানি হবে।
তার আগে, একটা প্রশ্নের উত্তর যে দিতে হয়”, জলজল চোখে যোগ করে, “তা আপনি কি কে পপ শুনেন?”
উত্তর দিতে এক মুহূর্ত দ্বিধাবোধ করলো ‘সর্বকালের সেরা এই ফিকশনাল ক্যারেকটার’, চোখের সামনে অন্তত ডজনখানেক মেকাপ মাখা মায়াকাড়া চেহারা স্লাইডের মতন চলে গেলো সামনে দিয়ে। বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলে ইতাচি, তার জলদগম্ভীর কন্ঠে “না”
ক্রুঢ় হাসি ফুটে উঠে, হাতুড়ির বারি হাকিয়ে ঘোষণা করতে থাকে রায়, “বিজ্ঞ আদালত আসামী ইতাচি উচিহাকে ফাঁসির দন্ডে দণ্ডিত করলো, কারণ যারা কেপপ শুনে না, তারা শুধু ছাগল ক্ল্যানের এক নম্বর বাচ্চাই না, এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কোন অধিকারই তাদের নেই।”
পুরো কোর্টরুম যেন ফুসে উঠলো, সবথেকে উত্তেজিত হয়ে উঠলো, ইতাচির আদরের ছোট ভাই, ‘নিসান উচিহা’।
-‘বাকা, মানে বোকা! চক্ষুলজ্জা হাহ! নিসান যে কেপপের মিউজিক ভিডিও আর লাইভ কন্সার্ট মাংগে কিয়্যু শারিংগান দিয়ে দেখতে দেখতেই চোখের এই হাল করেছে, তা বললে কি আর ক্ষতি হত, প্রানটা তো খোয়াতে হতো না।
আমি এই বিচার মানি না, আমি হিডেন লিফ ধ্বংস করবো আর খুন করবো ৫ কাগে কে।” বলে নিজের শারিংগানে চাক্রা রিলোড করে নিতে নিতেই, পাশে হটাত হাজির হয় শিশুই উচিহা।
সাস্কের পিঠে হাত রেখে বডি ফ্লিকার দিয়ে তাকে নিয়ে যাবার আগে আগে বলতে থাকে, “এতো মন খারাপ করার কিছু নেই সাস্কে, যারা কে-পপ শুনে তারা মরে না তারা অমর …….”

Naruto Fanfic: Minakushi — Rahat Rubayet

——————————————————————

(পারলে, https://www.youtube.com/watch?v=R451rerZ_Fw ost টা প্লে করে দিতে পারেন ব্যাকগ্রাউন্ডে)

——————————————————————

মিনাতো উত্তর পাশের ঝাউবনের পাশটায় দাঁড়িয়ে আছে। খাবারের দোকানগুলো কেবলই শেষ হয়েছে এদিকটায়। সকাল শেষ হয়েছে কেবল। দুপুরের আভাস পাওয়া যাচ্ছে রোদ আর বাতাসের অবস্থা দেখে। মিনাতোর ছোট বড় হলুদ চুল মৃদু বাতাস উড়িয়ে দিয়ে গেলেও, জুলফি বেয়ে ঘামের স্রোত ধীরে নেমে আসছে। গায়ে জোনিন জ্যাকেট নেই, দুধ-সাদা রঙের শার্ট যার পাশ দিয়ে একটা মাত্র কালো স্ট্রাইপ, পড়ে আছে। ফিরে তাকালো, “মিনাতো নি-চান” ডাক শুনেই।
পরিচিত মিষ্টি কন্ঠের আদ্রতাটুকু বরাবরের মতনই উপেক্ষা করে ফিরে তাকায়, ওর ছোট বোন, মৌনতা নামিকাজের দিকে। খুব ছোট বেলায় মৌনতাকে একটা মিশন থেকে উদ্ধার করে,নিজের ছোট বোন পরিচয়ে বড় করেছে।
-“হম,কি বলবে, বল?”
-“তুমি নাকি কয়েকদিনের ছুটি পাচ্ছো ৩য় হোকাগের কাছ থেকে? এবার কিন্তু আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে।”
মিনাতো তার স্বভাবসুলভ হাসি প্রশস্ত করে, একটা হাত রাখে ওর আদরের ছোট বোনের মাথায়। একটা বার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়,ওর আহত চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে। বলে,
“এবারের মতন ভাইটিকে মাফ করতে হবে যে। আমি কুশিনাকে আগেই কথা দিয়ে ফেলেছি, একটা যায়গায় ঘুরতে বেরুবো। ইনফ্যাক্ট, ও এই আসলো বলে”
মৌনতার মুখ কালো হয়ে যায়। কালো চুলের ফ্রেমে জমে ওঠে অভিমান। যার প্রকাশ পায় কন্ঠেও,
“সবসময়ই শুধু কুশিনা কুশিনা আর কুশিনা”, বলেই উলটো ঘুরে। হাটতে থাকে বিন্যস্তভাবে, যেন প্রতিটা পদক্ষেপই খুব মেপে মেপে ফেলছে। যাবার সময়ই কুশিনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। কুশিনার হাসির প্রতিউত্তরের মাথা নামিয়ে রাখে মৌনতা।
“ওর আবার কি হলো?” পিছনে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে কুশিনা।
“সেরম কিছু না।”
কুশিনা সাদা রঙের একটা ফ্রক এর মতন জামা পরে আছে, বুকের কাছে ফিতা আঁটা আর মাথায় সুন্দর একটা হ্যাট পরে আছে ও। দুজনের জামা একই রঙের হওয়ায় একটু অপ্রভিত বোধ করে কুশিনা। পরক্ষনেই হেসে ফেলে। বলে,
“তা আজ আমাদের কোথায় যাওয়া হচ্ছে মশাই?”
“বলো, কোথায় যেতে চাও? ”
“একটু ঠান্ডা কোথাও গেলে ভালো হত না?” বলে কুশিনা অনিশ্চিত ভাবে।
মিনাতো হাতটা বাড়িয়ে ধরে। কুশিনা তাতে আলতো করে হাত রাখতেই, টেলিপোরট করে মিনাতো। একটানা টিপটিপ শব্দে কানে নেশার মতন বোধ হয়। শীত শীত ভাব আর ঠান্ডা একটা ভাব….. চোখ মেলতেই কুশিনার কপালে টুপ করে পানি পরে গাছের পাতা থেকে।
তাকিয়ে দেখে মিনাতো এক হাতে ঝুলে আছে একটা বিশাল গাছের ডাল ধরে। আরেক হাতে ওর কোমরটা পেচিয়ে ধরে রেখেছে। বিকট শব্দে বজ্রপাত হতেই চমকে ওঠে কুশিনা। একবার ভাবলো, মিনাতোর গলাটা জড়িয়ে ধরে। কি মনে করে যেন ধরলো না।
কুশিনাকে নিয়ে নিচে নামে মিনাতো। তাকিয়ে থাকে আড়চোখে কুশিনার দিকে। আড়ষ্টভাবটা কাটিয়ে উঠেছে এরই মধ্যে। বনের মধ্যটা ছপছপ করছে পানিতে। একপাশেই, দোতলা একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। দেখে পরিত্যক্তই মনে হচ্ছে। বাড়িটার গা ঘেষে নেমুনোকি গাছের প্রশস্ত ছায়া দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির সাথেই কড়া গন্ধে মাথাটা একটু ঝিমঝিম করে যেন ওদের।
লোহার মরিচা ধরা গেটটা সরিয়ে হাটতে থাকে ভেতরের দিকে। পুরনো সিড়ি বেয়ে কুশিনার আগে উঠে পরে মিনাতো। খাবারের র‍্যাকস্যাক টা কাধে থেকে নামায় দোতলায় উঠেই। কুশিনা খুটিয়ে খুটিয়ে সবকিছু দেখছে।
এমন একটা নির্জন যায়গায় বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতো না, ভাবতে থাকে ও। একটা ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চা, ও আর ওর বর। চিন্তা করতেই চোখের নিচেটা লাল হতে চায় ওর। সেই সাথে প্রশস্ত চোখে তাকায় মিনাতোর দিকে।
আর কতদিন দেরি করবে ছেলেটা? একটা বার মুখ ফুটে বলে দিলেই তো হয়। কুশিনা বুঝে উঠতে পারে না, ওর কি নিজে থেকে কিছু করা উচিৎ?
মিনাতোর ডাকে হুশ ফেরে ওর,
“কিছু বলো?”
“বললাম, বাকিটা জীবন এভাবে কাটিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো”
“অবশ্যি ভালো হতো” প্রতুত্তর করে যেন কুশিনা।
“বিয়েথা করে এমন একটা নিরিবিলি পরিবেশেই থাকার ইচ্ছে আমার।”
কুশিনা অপেক্ষা করছে। নিঃশ্বাস টাও নিচ্ছে না, আটকে রেখেছে-যদি মিনাতোর কোন একটা কথা শুনতে না পায়!
আড়চোখে তাকিয়ে দেখে, মিনাতোর হাতে একটা আংটির বক্স শোভা পাচ্ছে। কুশিনা আর থাকতে না পেরে, জড়িয়ে ধরে মিনাতোকে।
কতদিন, কতদিন………… কত্তদিন অপেক্ষার পর…… কুশিনা কিছু চিন্তা করতে পারে না। মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেছে ওর। মুখ তুলে মিনাতোর অপ্রস্তত মুখের দিকে তাকায় একটা বার। অপলক চোখে কিসের অপেক্ষা করতে থাকে যেন।
কুশিনার চুলের গন্ধে মিনাতোর সবটা কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যেতে চায়। মাতালের মতন লাগে কেন জানি ওর। হাত দিয়ে কুশিনার মাথা থেকে হ্যাট টা ফেলে দেয়।
ইতস্তত বোধ ছাড়াই কুশিনার ঠোঁটে ঠোট মিলায় মিনাতো। সময় গতি হারাতে শুরু করে যেন।

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero (Part-8, Final); Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction — Rahat Rubayet

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero Part-8 (Final)
[Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction]

হাশিরামা আর নেতেরোর লড়াই চলতে থাকে বহুক্ষণ, বহুক্ষন ধরে। নেতেরোর ৯৯ হ্যান্ড আর হাশিরামার ট্রু সেভেরাল থাউজান্ড হ্যান্ড, সবাই তাকিয়ে দেখতে থাকে, অত্যন্ত দ্রুতগতির, ভয়াবহ শক্তিমত্তার আর বুদ্ধিশক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহার। সবাই নির্বাক হয়ে দেখতে থাকলেও খুব কম মানুষই সত্যিকার অর্থে কি হচ্ছে তা খালি চোখে বুঝতে পারছে।
হাশিরামা দীর্ঘসময় ধরে তার সেঞ্জুতসু চাক্রা ব্যবহার করতে করতে একটা সময়ে ট্রু থাউজান্ড হ্যান্ডের স্ট্যাচু ছেড়ে নেমে আসতে বাধ্য হয়।
ওদিকে নেতেরো ওকে দেখে হ্যান্ড টু কমব্যাটের জন্য সামনে এগোয়। লাফ দিয়ে এক পা সামনে নিয়ে এসেই আরেক পা দিয়ে দিয়ে হাশিরামার বুক বরাবর লাথি হাকায় সজোরে। হাশিরামা স্রেফ বাউলি কেটে সরে যায় যেন। সাথেই পা টা ধরে ঘুরিয়ে ছুড়ে ফেলার ঝোঁক টা বহুকষ্টে দমন করলো। কারণ, ও জানে নেতেরো সে অপেক্ষাতেই আছে, তার বদলে পায়ের গোড়ার দিকে উরুসন্ধির কিছুটা নিচে সজোরে ভাজ করা পা চালালো। সাথে সাথেই কনুইটা বসিয়ে দিয়েছে বুক বরাবর। নেতেরো জানত, ফাঁদে পা দেবে না হাশিরামা। তাই, কনুই দিয়ে বুক বরাবর আঘাতটা এক্সপেক্ট করছিল ও। কিন্তু, উরুসন্ধির দিকের লাথিটা অপ্রত্যাশিত। বাম দিকে হেলে পরে নেতেরো, এক হাত ভাজ করে হাশিরামার কনুই ঠেকিয়েছে। কিন্তু পায়ের ব্যথা টা দ্রুত সিগন্যাল পাঠালো মাথায়। রিফ্লেক্স দেখাতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মতন সময় দেরি করে ফেলে ও।
হাশিরামার জন্য ওটুকুই যথেষ্ট ছিলো ছোট্ট একটা লাফে ডান দিকে সরে যায় ও। হাতে প্রকান্ড একটা সোরড শোভা পাচ্ছে। নেতেরো উঠে দাঁড়ায়। বড্ড ক্লান্ত লাগছে নেতেরোকে। আসলে এতো বিশাল লড়াইয়ের ছাপ পড়েছে ২ জনের উপরেই। ২ জনেই হাপরের মতন হাপাচ্ছে। নেতেরো দু’হাত উঁচু করে ফাইটিং স্ট্যান্স নিতেই হাশিরামা বা পায়ের সবটুকু শক্তি খরচ করে সামনে লাফ দেয়। সোরড টা ঘাড়ের পেছন থেকে ঘুরিয়ে আনছে সেই সাথে। নেতেরো একটু যেন পা হড়কাল। সামনে দু’হাত দিয়ে হাশিরামার সোরড ঠেকাবার জন্য বাড়িয়ে দিলো।
হটাত, অবাক হয়ে খেয়াল করলো হাশিরামার বা হাতে কিচ্ছুটি নেই। ডান হাতে সোরড টা খাড়া করে ধরে রেখেছে। মুহূর্তের মাঝেই নেতেরোর পেটের একটা পাশে সেধিয়ে দিলো তা।
হাশিরামার গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সদা হাস্যজ্জল নেতেরো, মুখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে কিছুটা।
ওদিকে শিনোবি আর হান্টারদের সবার চোখের সামনে নেতেরোর পরাজয় ঘটলেও, মূল ব্যপারটা কেবল ধরতে পারলো ২ জন। হাশিরামা নিজে, আর শারিংগান ব্যবহার করতে থাকা মাদারা।
সোরড দিয়ে আসলে এক ধরনের ডিভারশন হিসেবেই এটাক টা করে হাশিরামা। ও নিজেও খুব ভাল করে জানতো, এ ধরনের ডিসেপশনে কাবু হবার পাত্র সে না। তাছাড়া হাশিরামা খুব ভালো করেই জানে, নেতেরো তার আর্সেনালের চুড়ান্ত অস্ত্র ব্যবহার করে নি।
ওদিকে ব্যপারটা বুঝতে পেরে গম্ভীর হয়ে গেলো মাদারাও।

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero (Part-7); Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction — Rahat Rubayet

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero Part-7
[Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction]

হাশিরামা আর নেতেরোর চোখের সামনেই হিডেন লিফ ধ্বসে পড়তে থাকে। মানুষের ছুটোছুটি, হাহাকার আরর আর্তনাদে চারিদিকের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
গমগম করতে থাকে হাশিরামার কন্ঠও, নেতেরোর জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে।
চকিতে নেতেরোর খেয়াল হলো, গ্রাম ধ্বংস হতে থাকলে হাশিরামা আর যাই হোক এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো না মোটেই। আর যে যেমনই হোক হাশিরামা নিজের শরীরের বিন্দু পরিমান রক্ত থাকা অব্দি গ্রামের এমন অবস্থা হতে দেবে না।
নেতেরো ভাবতে থাকে, নিশ্চয়ই এটা কোন এক ধরনের ইলিউশান। নিশ্চয়ই কেউ একজন তাকে ম্যানিউপুলেট করে এমন ইলিউশান দেখাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে করণীয় কি হতে পারে?
নেতেরো নেন রিলিজ করে।
ধীরে ধীরে সামনের দৃশ্যগুলো মুছে যেতে থাকে। নেতেরোর মুখে স্বভাবসুলভ হাসি ফিরে আসতে থাকে, সেই সাথে অদ্ভুত শিশুসুলভ সারল্য চোখে পড়ার মতন।
আর কেউ না বুঝলেও মাদারা তার শারিংগান দিয়ে ঠিকই ধরতে পারলো যে ফিস্টফাইট বা তাইজুৎসুর পরপরই হাশিরামা গেঞ্জুৎসু কাস্ট করেছিল নেতেরোর উপরে।
নেতেরো দীর্ঘ কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় গেঞ্জুৎসুর ভেতরেই ছিল।
নেন রিলিজের মাধ্যমে শরীরের যে অংশগুলো দিয়ে হাশিরামা তার চাক্রা দিয়ে নেতেরোকে গেঞ্জুৎসু দেখাচ্ছিল তা সহজেই ব্রেক করে নেতেরো। আদতে নেন আর চাক্রা তো একই জিনিষ।
২ টাই লাইফ এনার্জি।
মাদারা গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে তোবিরামার মত।
এবারে হাশিরামা কি করে তা দেখার অপেক্ষায়।
হাশিরামা দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে নেতেরোর চোখের দিকে। এরপর উড রিলিজ করে- ওঁর কেকে গেনকাই। উড রিলিজ করে উডেন গোলেম আর উডেন ড্রাগন সামোন করে।
উডেন গোলেমের ঘাড় আর শরীর পেঁচিয়ে থাকে উডেন ড্রাগন।
খুব অতিকায় না হলেও অনেকটাই বিশাল।
উডেন গোলেম দেখে হাকশেকি কেনোন সামোন করলো যা আদলে এক ধরনের নেন পাপেট।
হাশিরামা তার গোলেম নিয়ে লাফ দিয়ে সামনে যায়। নেতেরোর রিচের সামনে গিয়েই দু হাত দিয়ে জাপটে ধরতে যায়, সাথে সাথেই দেখলো নেতেরো দু হাত তুলে এনেছে বুকের কাছে।
প্রে করছে যেন!
হাশিরামা বুঝতে পারলো, এর নামই এতদিন শুনে এসেছে ওঁ, গ্যানিন বুদ্ধস্তম্ভ।
কিন্তু নেতেরোর বুকের কাছে হাত তোলার কারণ ধরতে পারছে না। দেখে মনে হচ্ছে প্রার্থনা করছে যেন। নাকি শরীরের ব্যালেন্স রক্ষা করছে?
না!!
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গোলেমের একটা পাশে প্রচণ্ড আঘাত হানলো নেতেরোর হাকশেকি কেনোনের এক হাত।
হাশিরামা দিশেহারা বোধ করছে না। ধাক্কাটা সামলানের সাথে সাথে সবকিছু বিশ্লেষণ করতে করতেই প্রতিপক্ষের দিকে চোখ রেখেছে। আবার দেখলো নেতেরো তার দু হাত উঁচু করছে বুকের কাছে, প্রার্থনার ভঙ্গিতে।
হাশিরামা জানে যে কোন মুহূর্তে আরেকটা আকস্মিক আঘাত হানবে ভয়ানক দ্রুতগতির ওই বুদ্ধস্তম্ভের হাত।
এবারের আক্রমণটা ডানে থেকে আসবে ভেবেই সিদ্ধান্ত আর প্রস্ততি নিয়ে ফেললো। অপেক্ষায় থাকলো পুঙ্খানুপুঙ্খ সময়ের জন্য।
নেতেরোর দু’ হাত নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছুবার সময়টা খেয়াল আর অনুমান করে নিয়ে উডেন গোলেম সমেত বডি ফ্লিকার দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো হাশিরামা।
নেতেরো মুচকি হাসলো শুধু।
একেবারে শেষ সময়ে হাশিরামাও ধরতে পারলো ভুল টা। টাইমিং এ হেরফের হয়ে গেছে।
হয়ে যায় নি আসলে, নেতেরো ইম্প্রোভাইজ করেছে। নেতেরো ভালো করেই জানতো, ২য়বার এটাক হজমের জন্য চুপচাপ বসে থাকবে না হাশিরামা। তাই ইচ্ছে করেই ওকে মুভ করার সুযোগ দিয়ে নিজের এটাককে ইম্প্রোভাইজ করেছে।
হাশিরামা নেতেরোর পিছনেরটায় মাটিতে ল্যান্ড করা মাত্র দেখলো নেতেরো তার দিকে ঘুরে আছে, আর সাথে সাথেই শব্দের গতিতে ছুটে এলো হাকশেকি কেনোনের এক হাত।
গোলেমের গা স্পর্শ করামাত্রই গোলেমের পিঠ বেয়ে উডেন ড্রাগন নেমে এসে পেঁচিয়ে ধরলো বুদ্ধস্তম্ভের হাত, প্রায় কিছুটা বাদেই গোলেমের দু’হাত ওঁ টা ধরে ফেললো।
উপায়ন্তর না দেখে নেতেরো হাকশেকি কেনোনের ৩ হাত ব্যবহার করলো।
এবারে হাশিরামার উডেন গোলেম ড্রাগন কিছুতেই কূলিয়ে উঠতে পারে না। হাশিরামা একবার ভাবলো লাফিং বুদ্ধ দিয়ে হাতগুলোকে নিউট্রালাইজ করা যায় কিনা!
নাহ, পরমুহূর্তে বাদ দিল সে চিন্তা।
সময় এসেছে আঘাত হানার। দু’হাত এক করে মুষ্টি করলো। এরপর তার ভান্ডারের সবথেকে ভয়ংকর অস্ত্র ট্রু সেভেরাল থাউজেন্ড হ্যান্ড সামোন করলো।
বিশাল দৈত্যাকৃতির বুদ্ধস্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে থাকে হাশিরামা। আর ওদিকে নিচে হাজার হাজার হাতের থেকে ক্রমাগত একের পর আঘাতে নাস্তানাবুদ হয়ে শেষে নেতেরোও তার ৯৯ হ্যান্ড ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
ওদের ব্যাটেল চলতে থাকে অনেক অনেকক্ষণ ধরে।
হান্টার এসোসিয়েশান আর নিঞ্জা ভিলেজের সবাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছে ভয়ানক সে লড়াই।

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero (Part-6); Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction — Rahat Rubayet

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero Part-6
[Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction]

হাশিরামা উঠে দাঁড়ায়, ভাঙা গার্ড টার বাকি অংশ খুলে ফেলে গা থেকে। উত্তরের আসা হটাত বাতাস ওঁর বড়বড় চুলগুলো উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়,কপালের হেডব্যান্ডের জন্য চোখমুখে এলোমেলো চুল উড়ে এসে পরছে না। চোখের দৃষ্টি শান্ত, নিবদ্ধ, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো নেতেরোর দিকে। নেতেরোকে এগোতে দেখেই সামনে পা বাড়ায় হাশিরামা। প্রায় ২০ গজ দূরত্ব পার হতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়। নেতেরোর বাড়িয়ে দেয়া এক হাতের নাগাল দ্রুত পাশ কাটিয়ে যায় হাশিরামা। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই নিজের কনুই নেতেরোর কলার বোনের উপর ঠেকায় আর প্রায় একই সাথে ডান পা দিয়ে ওঁর বাম পায়ের ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয়।
সেকেন্ডের ভেতর অনেকগুলো ঘটনা একেকফ্রেমে দ্রুত ঘটে গেলো বাকি সব উপস্থিত দর্শকদের কাছে যেন। তোবিরামা শান্ত চোখে নেতেরোকে ভূপাতিত হতে দেখলো। অনেক্ষন ধরে আটকে রাখা শ্বাস টা হালকা করে ছাড়তে লাগলো। ওদিকে মাদারাও কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে বৈকি। আর যাই হোক, হাশিরামার হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটের জোর তার থেকে ভালো কেউ জানে না। সে নিজে মাংগেকিয়ু শারিংগান ব্যবহার করেও আনআর্মড কমব্যাটে খুব একটা সুবিধে করে উঠতে পারে নি হাশিরামার সাথে। আর হাশিরামাকেও কোন দিন নিজের ৫০ ভাগের বেশিটা দিয়ে লড়তে দেখে নি ও। কাজেই, ধীরে ধীরে দুশ্চিন্তার জায়গাটুকু ফিকে হতে চাইছে।
ওদিকে নেতেরো হটাত আকাশের একটা অংশ দেখতেই সজোরে দু হাত চালালো। গন্তব্য হাশিরামার কানের দু’পাশ। কিন্তু ততক্ষণে হাশিরামার বদ্ধমুষ্টি হাত ওঁর বুক আর পেটের মাঝেটা স্পর্শ করে ফেলেছে।
নেতেরো চোখে শর্ষে ফুল দেখলো যেন। মুখটা হাঁ হয়ে গেলো ওঁর সাথে সাথেই। বাউন্স খেয়ে মাটিতে স্থির হবার পরপরই হাশিরামাকে খুঁজল।
নেই, আঘাতটা হেনেই একটু বামে সরে গেছে ওঁ। একটু রিল্যাক্স কি বোধ করছে এখন? নেতেরো হাসলো, বাম দিকে সরে গেলেও ওঁর নাগালের বাইরে যায় নি মোটেই। নেতেরো বাম হাতের তালু মাটিতে ঠেকালো, সাথে সাথেই এক পা ভাজ করে আরেক পা সজোরে চালালো।
হাশিরামা কিছু বুঝে উঠার আগেই নেতেরোর প্রচন্ড ঘুষিতে চোখে অন্ধকার দেখলো, তাল হারিয়ে পরে গেছে। উপর্যপুরি ঘুষি শেষ হতেই, হাটু ভেঙে বসলো হাশিরামা। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেখলো নেতেরোর মুখের হাসি ফিরে এসেছে। দাঁড়িয়ে দু হাত মুঠি করলো। মুখে বললো, Deep Forest Emergence
নেতেরো দেখলো, দ্রুত মাটি ফুঁরে বিশাল বিশাল গাছপালা বেরিয়ে এলো। চোখের পলকেই যেন আশেপাশে যদ্দূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ দেখতে পাচ্ছে ওঁ। নেতেরোর চোখে হাসির সাথে সাথেই বিস্ময়ের ভাব ফুটে ওঠে। হটাত বেড়ে ওঠা বনটা পূর্বপরিচিত লাগছে যেন ওর কাছে। তাকিয়ে দেখলো, একটা পাশ দিয়ে হিডেন লিফ ভিলেজে প্রায় পুরোটাই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
নেতেরোর বিস্ময়বোধের নতুন মাত্রা যোগ হলো বিকট আর প্রকান্ড বিস্ফোরনের শব্দে। ১ বার ২ বার, অনেকবার। চোখের সামনেই ধীরে ধীরে ধসে পড়তে থাকলো সুন্দর সাজানো গোছানো গ্রামটা। নেতেরো অবাক হয়, ওর নির্দেশ অমান্য করে হামলা করবে ওর লোকেরা? এমন তো হবার কথা নয়। ওর কথার একচুল এদিক ওদিক হবার তো কথা না।
নেতেরোর সাথে সাথে হাশিরামাও তাকিয়ে থাকে।
ওদের চোখের সামনেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে হিডেন লিফ ভিলেজ।

সাকুরা কি আসলেই ইউজলেস? নাকি সব আমাদের পার্স্পেক্টিভের ব্যাপার? — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য

নারুতো ভক্তদের অন্যতম বড় এক দাবী, সাকুরা চরিত্রটি অসম্ভব রকমের ইউজলেস, সোজা ভাষায় একদমই অকার্যকর। এক সাকুরা না থাকলেই নারুতো আর সাসকের জার্নি অনেক সহজ হয়ে যেত, গল্প অনেক গতি পেত, তাদের জীবন অনেক সহজ হত ইত্যাদি কত কথা! আসলে ব্যাপারটা কি সেটাই? নাকি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন এক জায়গায় এমন গোলযোগ বেঁধে গিয়েছে যার কারণে এরপর থেকে সাকুরা যা কিছুই করুক না কেন, চরিত্রটা আমাদের চোখে একদম অকার্যকর? আজকে এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করতে চাই।

প্রথমেই আমরা আগে দেখি একদম অল্প বয়সে সিরিজের শুরুর দিকে যখন আমাদের গল্পের নায়ক-নায়িকাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তখন একেকজনের ব্যাকগ্রাউন্ড কীরকম। নাইন টেইল ফক্সের ঘটনার কারণে বিখ্যাত/কুখ্যাত হওয়া ছাড়াও নারুতোর বাবা ছিল চতুর্থ হোকাগে, মা তার সময়ের অন্যতম শক্তিশালী কুনোইচি, এবং নাইন টেইল ফক্সের জিঞ্চুরিকি। বিখ্যাত উচিহা পরিবারের অন্যতম সদস্য সাসকে। টিম ১০-এর ইনো, শিকামারু ও চৌজি তিন জনেই কোনোহার তিন বিখ্যাত পরিবারের সদস্য, যাদের অনন্য ক্ষমতা ও এদের প্রয়োগ এই তিন পরিবারকেই বানিয়েছে তাদের গ্রামের ভয়ংকর সব নিঞ্জা। টিম ৮-এর হিনাতা বিখ্যাত হিউগা পরিবারের সদস্য, তার বিয়াকুগান রয়েছে যাকে গল্পের শুরুর দিকের সবচাইতে শক্তিশালী চোখ সম্পর্কিত ক্ষমতা বলে ধরে নেওয়া হয়। শিনো হল পোকামাকড়ের উপর ক্ষমতাধরী অন্যতম ভীতিকর বংশ আবুরামে-এর সদস্য, আর কিবা হল ইনাজুকা পরিবারের সদস্য, যারা কুকুরদের নিঞ্জা হিসাবে কাজে লাগানোর জন্যে বিখ্যাত। টিম গাই-এর নেজি আরেক বিখ্যাত বিয়াকুগান ব্যবহারকারী, তেনতেন তার বিভিন্ন রকমের নিঞ্জা টুলস ব্যবহার করার জন্যে জনপ্রিয়, এবং রক লি তার ভয়াবহ তাইজুতসুর জন্যে সবার মনে জায়গা করে নেবার মত এক চরিত্র। সেই তুলনায় বাকি থাকা সাকুরার পরিচয় কী? সাকুরার একমাত্র পরিচয় সে সাসকে-কে ভালবাসে। তার বাবা-মাও বিখ্যাত কোন নিঞ্জা নয়, এমনকি সাকুরার বাবা-মায়ের ব্যাপারে পরবর্তীতে আমরা যখন জানতে পারি, ততদিনে শিপুদেনের ৩৫০ পর্ব অতিক্রম করে ফেলে, এবং যেই পর্বে জানতে পারি সেটাই ফিলার পর্ব। অর্থাৎ প্রথম পরিচয়েই সাকুরাকে আমরা কিউট একটা মেয়ে ছাড়া আর বিশেষ কোন কারণে মনে রাখতে পারছি না। প্রথম ইম্প্রেশনেই সাকুরা তাই নিজেকে মেলে ধরার মত কিছুই পায় নি গল্পের নির্মাতার কাছ থেকে।

ল্যান্ড অভ স্টিল আর্কে, অর্থাৎ জাবুজার আর্কে কাকাশি, সাসকে আর নারুতো পুরা স্পটলাইট কেড়ে নেয়। সাকুরার সেখানে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেও না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারে অন্যদের তুলনায় সে কতটা পিছনে। এরপরে চুনিন আর্কে পুরা গল্পজুড়ে সাকুরার একমাত্র বলার মত ঘটনা ছিল সাউন্ড ভিলেজের নিঞ্জাদের সাথে মারামারির এক পর্যায়ে নিজের চুল কেটে ফেলা, যেন তাকে ধরে রেখে সাকুরার বন্ধুদের পথে বাঁধা হতে না পারে। বলে রাখা দরকার, এই পর্যায়ে এসে আমরা প্রায় সব অল্পবয়স্ক নিঞ্জাদের প্রত্যেকেরই ক্ষমতার ভাল ব্যবহার দেখেছি। নারুতোর সাসকে-কে বাঁচানো কিংবা তার বিস্ময় জাগানো ট্যাকটিক্স আর সাসকের কাধের সেই সিলের ক্ষমতা, টিম ৭-এর অন্য দুইজনই এরই মধ্যে গল্পের প্রধান চরিত্র হিসাবে দাবী করার মত অনেক কিছু দেখিয়ে ফেলেছে। চুনিন পরীক্ষার ফাইনাল স্টেজ শুরু আগে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে সাকুরা আর ইনোর মারামারির সময়ে আরেকটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠে, এই দুইজন আসলে এখনও চুনিন হবার উপযুক্ত নয়। অন্যরা সবাই নিজেদের প্রমাণ করে ফেলেছে, এমনকি যারা পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারে নি তারাও।

haruno_sakura__the_last_by_vashperado-d7zwm74

পরবর্তী বড় ৩টা আর্কে সাকুরার বলার মত কোন কার্যকরী ভূমিকাই ছিল না আসলে। কোনোহা ছেড়ে দিয়ে সাসকে ওরোচিমারুর উদ্দেশ্যে চলে যায়, আর তাকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে নারুতোর কাছে মিনতি করা, যার ফলে নারুতোও জিরাইয়ার সাথে গ্রামের বাইরে চলে যায় ট্রেনিং করা – এতটুকুই ছিল সাকুরার প্রথম দিকের ভূমিকা।

গল্পের প্রথম টাইম জাম্প হবার আগ পর্যন্ত তাই সাকুরা সত্যিকার অর্থে তার সমসাময়িক অন্যান্য নিঞ্জার তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল এটা ঠিক। সে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও দেখতে পারে অন্যরা তার চাইতে যোজনে যোজনে এগিয়ে। অন্যরা যেখানে সবাই নিজেদের পরিবারের বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে, কিংবা রক লির মত নিঞ্জারা যেখানে নিজেদের একমাত্র ক্ষমতাকে শাণিত করে নিজেদের প্রমাণ দিয়ে যেতে পেরেছে, সাকুরা সেখানে পিছিয়ে গিয়েছে স্বকীয় কোন কিছু না থাকার কারণে। আমরা নারুতোর উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, ছেলেটার কিছুই ছিল না, সবার ঘৃণার পাত্র থেকে শুরু করে পুরা পৃথিবীর নায়ক হয়ে গিয়েছে, সেখানে কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবো কথাটা শুরু থেকেই ভুল। নারুতো উজুমাকির বংশধর, তার মধ্যে রয়েছে নাইন টেইলসের চাকরা। তাই কেউ যদি শুরু থেকে অভাগা হয়ে থাকে, সেটা সাকুরা। হ্যাঁ, সাকুরা অন্যদের তুলনায় বেশ সুন্দর আর চমৎকার একটা জীবন পাড়ি দিয়ে এসেছে নিঞ্জা হবার আগে, কিন্তু সুপার পাওয়ারের এই যুগে তার বলার মত কোন কিছুই ছিল না যে অন্যদের মধ্য থেকে আলাদা হয়ে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। ছিল শুধু অনেক জ্ঞান, আর প্রবল মনোবল, যার কারণে মাইন্ড কন্ট্রোল ক্ষমতা থাকবার পরেও ইনো সাকুরাকে চুনিন পরীক্ষার অফিসিয়াল ম্যাচে হারাতে পারে নি। গল্পের প্রথম অংশে তাই সাকুরা আসলে ইউজলেস ছিল না, সাকুরার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য সে তার নিঞ্জা জীবন শুরু করেছে সব জিনিয়াসদের মধ্য থেকে।

টিম ৭-এর অন্য দুজন কোনোহার বাইরে থাকাকালীন সাকুরা একটা কঠিন সিদ্ধান্তে আসে, আর তা হল, অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তাকে খুব বিশেষ কিছু করে উঠতে হবে। ৩ লেজেন্ডারি সানিনের অন্যতম সুনাদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে। টাইম জাম্পটা শেষ হবার পর যখন আমরা নারুতোকে কোনোহাতে ফেরত আসতে দেখি, তখন সাকুরা কিন্তু সুনাদের সেরা শিষ্য হয়ে উঠেছে। জিরাইয়া নিজে থেকে বলে উঠেছে যে সাকুরা সেই মুহুর্তে সুনাদের যোগ্য শিষ্য হয়ে উঠেছে, এমন একজন যাকে রাগানো ঠিক হবে না।

এখন একটা জিনিস পাঠকদের জিজ্ঞেস করতে চাই। আমরা কি এই মুহুর্তে সাকুরার ক্ষমতাটুকু বুঝতে পারছি? যদি বুঝে উঠতে না পারি, তবে আসুন দেখি সাকুরা এই মুহুর্তে কোন উচ্চতায় আছেঃ
* গল্পের এরকম সময়ে ৩ সানিনের তিনজনই নিজেদের সেরা ছাত্র-ছাত্রীকে পেয়ে গিয়েছে। ওরোচিমারুকে প্রায় অনেক দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সাসকে, যদিও তার বড় ভূমিকা রাখে সাসকের শারিঙ্গানের ক্ষমতা। জিরাইয়ার শিখানো পথে এসে তাকে পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবার আশা দেখাচ্ছে নারুতো, কিন্তু শিখবার আছে অনেক কিছু। আর সুনাদে, যে কিনা নিঞ্জা দুনিয়ার সেই মুহুর্তের সেরা মেডিকাল নিঞ্জাই শুধু নয়, বরং শারীরিক ক্ষমতার দিক থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী নিঞ্জাদের একজন, তাকে কিনা সাকুরা প্রায় ধরে ফেলেছে! সেটাই নয়, অন্য দুই বড় সানিনের কাছে শিক্ষানবিস থাকা নারুতো-সাসকে যখন দর্শকদের কাছে ভয়াবহ ক্ষমতাধর বলে পরিচিতি পায়, সেখানে সুনাদের এই ছাত্রীকে সেই মুহুর্তে ধরে নেওয়া হত যেকোনদিনে সুনাদেক ছাড়িয়ে যাবে!!! হ্যাঁ, সেই অভাগা সাকুরা যে কিনা বংশানুক্রমে কোন বিশেষ ক্ষমতা পায় নি, সেই সাকুরা যে কিনা তার সময়ের জিনিয়াস সব নিঞ্জাদের ছায়া হয়ে থাকার মত থাকলেও তাদের সাথে দাপট দেখিয়ে চলতে পেরেছে, সেই সাকুরা এখন তার শিক্ষক এবং অন্যতম লেজেন্ডারি সানিন সুনাদেকে যেকোন দিন ছাড়িয়ে যেতে পারে! আর সেটাই শুধু নয়, বরং একই সাথে সাকুরা এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে বেশ বড় এক মেডিকাল নিঞ্জা হয়ে উঠেছে। সাকুরা একটা বড় সুযোগ পেয়েছে, এবং সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যা যা অর্জন করার সব অর্জন করে নিয়েছে।

কিন্তু এসব কিছুই তো হয়েছে স্ক্রিনের পিছনে। সাকুরা ইউজলেস না, এটা প্রমাণ করার জন্যে তাকে অনস্ক্রিনে কিছু করে দেখানো লাগবে। মুখে মুখে “অন্যতম সেরা শক্তিশালী নিঞ্জা” হলে চলবে না, বরং দর্শকদের দেখানো দরকার সাকুরা আসলেই বিশেষ কিছু হয়ে উঠেছে। এজন্যে সাকুরা পরবর্তীকে কী করলো চলুন এক নজরে দেখে নেই।

কাজেকাগে হয়ে যাওয়া গারা-কে আকাতসুকি কিডন্যাপ করেছে। তাকে উদ্ধার করতে কোনোহা যে কয়জন নিঞ্জাকে পাঠায়, সাকুরা তার মধ্যে অন্যতম। গারার ভাই কানকুরো ততদিনে সুনাগাকুরের অন্যতম শক্তিশালী ও বড় মাপের এক নিঞ্জা হয়ে উঠে। আকাতসুকির সাসোরির কারণে তার মধ্যে অন্যরকমের এক বিষ ছড়িয়ে পরে, আর সেটা সাড়িয়ে তুলবার মত কোন মেডিকাল নিঞ্জা ছিল না সুনাগাকুরেতে। সাকুরা সেখানে এসে সেখানে বসেই সেই বিষ পরীক্ষা করে নিয়ে কানকুরোকে সারিয়ে তুলে। এক সাকুরা একাই সম্মিলিতভাবে সুনাগাকুরে যা করতে পারে নি তা করে দেখিয়েছে। এই পর্যায়ে এসে আমরা সাকুরার মেডিকাল ক্ষমতা হাতেনাতে প্রমাণিত হতে দেখতে পারি। সাকুরা তার অর্জিত জ্ঞানের একটি অংশের প্রমাণ দিয়ে নিজেকে চিনিয়ে নিতে পেরেছে।

পরবর্তীতে বেশ বড়সড় অনেক ঘটনা ঘটে, এবং এক পর্যায়ে দেখতে পাই চিয়ো-এর সাথে মিলে সে আকাতসুকির অন্যতম বড় এক নাম সাসোরিকে হারিয়ে দেয়। হ্যাঁ, চিয়োর ভূমিকা এখানে বেশি ছিল হয়তো, কিন্তু সাকুরার ভূমিকা কোন দিক থেকেই কম নয়। কম তো নয়ই, বরং অনেক অনেক বেশি। নিজেকে চিয়োর পাপেট বানিয়ে নিলেও সাকুরার নিজের ক্ষমতা তেমন কিছু বলার মত না হলে এই মারামারির ফলাফল তাদের বিপক্ষে চলে যেত একদম শুরুর দিকেই।

সাকুরা, যে কিনা নিজের দূর্ভাগ্যের জন্যে এরই মধ্যে “ইউজলেস” খেতাব পেয়ে গিয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে, সে প্রথম পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়েই আকাতসুকির সবচাইতে ভীতি জাগানিয়ে একজনকে হারিয়ে দিয়েছে। আরেকজনের সাথে মিলিত হয়ে মারামারি মূখ্য নয়, কারণ নিঞ্জাদের শক্তির এক বড় অংশ হলে অন্যদের সাথে মিলে নিজেদের কাজ উদ্ধার করে নেওয়া। সাকুরা সেই মারামারিতে বড় ভূমিকা রেখে আকাতসুকির একজনকে শেষ করে ফেলে। গল্পের এই পর্যায়ে আমরা সাকুরার একই ব্যাচের আর কয়জন নিঞ্জাকে আকাতসুকির কোন সদস্যকে হারিয়ে দিতে দেখি? একজনকেও না।

এর পরবর্তীতেই সাকুরা কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার আরেকটা সুযোগ নিয়েও কাজে লাগিয়ে দেয়, যেটা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। তেনচি ব্রিজে টিম কাকাশি যখন ওরোচিমারুর মুখোমুখি হয়, তখন নারুতো নিজের উপর ক্ষমতা হারিয়ে নাইন টেইল অবস্থায় চলে যায়। একাই ওরোচিমারুকে পিছে হটিয়ে দিতে পারে। এই অবস্থায় নারুতোকে শান্ত করবার জন্যে সবাই যেখানে ভয়ে ভয়ে থাকে, সাকুরা এগিয়ে আসে। নারুতো তার উপর চড়াও হলেও গুরুতর জখম পায়, কিন্তু নারুতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসলে তাকেও আমার সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে নিজের মেডিকাল ক্ষমতার বলে। বড় বড় নিঞ্জারা যেখানে এগিয়ে যেতে ভয় করে, সাকুরা সেখানে এগিয়ে যায়, এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও অন্যদের সারিয়ে তুলে। অকার্যকর? না, এটা অকার্যকারিতার সংজ্ঞা নয়।

এর পরবর্তীতে বড় যেই আর্কে আমরা সাকুরাকে দেখি, সেটা নারুতোর অন্যতম সেরা আর্কঃ পেইন আর্ক। আসলে এই আর্কটিতে সাকুরার ভূমিকা ছিল মেডিকাল নিঞ্জা হিসাবে সবার সাহায্য করা। কোনোহা ধ্বংসের পরে আসলে নারুতো বাদে চোখে পড়ার মত একমাত্র যে ছিল সে হল নারুতো ভালবেসে নিজেকে উতসর্গ করে দেবার জন্যে এগিয়ে আসা হিনাতা। সেই জন্যে এই আর্কে সাকুরার আসলে অন্য সব নিঞ্জার মত ভূমিকা থাকার কথা না তেমন। কিন্তু সবাই যেখানে বসে বসে হাহুতাশ করছে কিংবা নারুতোর দিকে চেয়ে আছে, সেখানে সাকুরা নিজের ক্ষমতা দিয়ে সব মেডিকাল নিঞ্জাকে যতজনের সম্ভব চিকিৎসা করার আহ্বান জানায় এবং সুনাদের পাশে থাকে।

নিজের একমাত্র ভালবাসার মানুষটির উপর যখন মৃত্যুর পরওয়ানা জাড়ি হয়, তখন নিজের সব রকমের কষ্টকে ধামাচাপা দিয়ে সাসকেকে নিজেই মারতে উদ্যোগী হয়। সাকুরা শুধু শারীরিকভাবেই শক্তিশালী নয়, মানসিক দিক থেকেও অনেকের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে এগিয়ে ছিল তার ভাল প্রমাণ এটি।

সর্বশেষে থাকছে সম্ভবত সাকুরার সবচাইতে বড় অবদানের কথা – ৪র্থ নিঞ্জা ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ঘটনা। গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমাদের গল্পের দুই নায়ক নারুতো ও সাসকে, ও খলনায়ক তোবি এবং পরে মাদারাসহ সব বড় বড় নামগুলি একের পর এক পাওয়ারাপ পেয়ে গিয়েছে। যেই টিমের সদস্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যাবে, সেই দলের সবাই গল্পের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে একের পর এক ক্ষমতা পেয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ হবার কারণে খলনায়কেরাও নিজেদের অকল্পনীয় সব ক্ষমতা দেখানো শুরু করেছে। এমতাবস্থায় সাকুরার কী করণীয়? গল্পকার যখন তাকে এক রকমের পার্শচরিত্রের কাতারে ফেলেই দিয়েছে, সেখানে বসেই নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে যেতে থাকে সে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বড় চরিত্র আগাতপ্রাপ্ত হলে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসাটা অনেক বেশি হয়েছে বলে হয়তো এটি দর্শকদের কাছে একটি স্বাভাবিক দৃশ্যই হয়ে উঠেছে, কিন্তু ব্যাপারটির ভূমিকা কত বড় সেটা এভাবে ভেবে দেখুন যে, এই যুদ্ধে এদের সবাই বারবার বিভিন্ন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে। সাকুরার চিকিৎসা না পেলে গল্পের এত বড় বড় চরিত্রদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতো না।

এদিকে সাদা জেতসুর অতর্কিত হামলার কারণে যেখানে সবাই দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছিল, তখন সাকুরা সাদা জেতসুর ব্যাপারটি সবার আগে ধরতে পারে। হ্যাঁ, গল্পের নায়ক হবার কারনে নারুতো আরেকটি পাওয়ারাপ পায়, এবং এখন সে সবধরনের এরকম লুকায়িত জেতসুদের খুঁজে বের করতে পারে। পাওয়ারাপ না পাওয়া সাকুরা নিজ ক্ষমতায় তাদের ব্যাপারটি জেনে নিতে পারে ও সবাইকে সে ব্যাপারে সতর্ক করতে পারে। “ইউজলেস” সাকুরা অন্য সব নিঞ্জাদেরকে ইউজলেস হওয়া হতে আরেকবার বাঁচিয়ে দেয়।

শেষ পর্যন্ত যখন বড় যুদ্ধে মেডিকাল নিঞ্জা হবার পরেও অংশগ্রহণ করে, তখন দর্শকদের মনে করা উচিৎ সুনাদের সেই নিয়মের কথা। যেখানে শেষ নিয়মটিতে বলা হয়, যদি মেডিকাল নিঞ্জা এত ক্ষমতাধর হয় যে সরাসরি মারামারি করতে পারে, তাহলে অন্য সব নিয়ম ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেই ফ্রন্টলাইনে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। সাকুরা সেটিই করে, এবং নারুতো ও সাসকের সাথে মিলে ওবিতোর বিপক্ষে লড়াই করে। নারুতোর কাছ থেকে যখন নাইন টেইলসকে কেড়ে নেওয়া হয়, তখন নারুতো যেন সাথেসাথে মারা না যায় তার জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে। খেয়াল রাখতে হবে, নারুতোকে এই পর্যায়ে বাঁচিয়ে তুলবার জন্যে সাকুরা ছাড়া আর কেউ যোগ্য মেডিকাল নিঞ্জা ছিলও না। নারুতোর হার্টকে পাম্প করতে থাকে, যেন নারুতো বেঁচে ফিরবার জন্যে আরেকটু সময় পায়। “ইউজলেস” সাকুরা একাই পুরা নিঞ্জার দুনিয়ার হার্ট পাম্প করে বাঁচিয়ে তুলে।

কাগুইয়ার সাথে মারামারিতে যেখানে নারুতো আর সাসকেই একমাত্র তাকে হারানর ক্ষমতা রাখে, সেখানে সাকুরার সাহসিকতা সাসকে-কে উদ্ধার করবার জন্যে বড় ভূমিকা রাখে। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থে এক দেবীকে হারাবার জন্যে যেই দুজনের একত্রে উপস্থিত থাকা দরকার, সেখানে একজন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, সাকুরার সাহসী ভূমিকার অভাবে হয়তো সেক্ষেত্রে গল্পের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।

সত্যিকার অর্থে বলার মত ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকার পরেও একের পর এক ক্ষমতা আর জিনিয়াস নামধারী সব নিঞ্জাদের পাশেই শুধু ছিল না সাকুরা, তাদের অনেককে ছাড়িয়ে গিয়ে যুদ্ধে নিঞ্জাদের জোটকে জিতাতে সাহায্য করেছে সাকুরা। সাকুরা যদি সত্যিকার অর্থেই অকার্যকর হয়ে থাকতো, তাহলে নারুতোর গল্পটি নারুতো কম বরং বার্সার্কের মত হয়ে যেত। একের পর এক ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া থেকে একাই রক্ষা করেছে গল্পের অন্যান্য মূল চরিত্রদের।

তাহলে কেন দর্শকদের অধিকাংশই সাকুরাকে এখনও ইউজলেস বলে আসছে? এখানে আসলে দর্শকদের সাইকোলজি একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা যখনই সাকুরাকে দেখি, তখনই তার তুলনা করি নারুতো আর সাসকের সাথে। কেনই বা করবো না আমরা, তারা তিনজন যে একই টিমের সদস্য। সেই টিমের লিডার আবার কাকাশি নিজেই। পরবর্তীতে তাদের এই টিমে যোগ দেয় ইয়ামাতো আর সাই, যারা স্পেশাল আনবু ফোর্সের সদস্য বলে আগে থেকেই তাদের ভারী ক্ষমতার অধিকারি বলে জানি। আসলে এত সব জিনিয়াস আর অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারীদের দলে এমন একজনকে আমরা দেখতে পাই যার শুরু থেকে বলার মত কিছু ছিল না কখনই। এমনকি নারুতোর মাঙ্গা বা আনিমের ইনফো ঘাটলে আমরা দেখতে পাই সাকুরা একজন মেইন চরিত্র, অথচ গল্পে তাকে আমরা নারুতো আর সাসকের তুলনায় খুব কম সময়েই দেখেছি। হ্যাঁ, সাকুরার চরিত্রের সবচাইতে বড় দিক হল সে সাসকে-কে অনেক বেশি ভালবাসে। বলার মত কিছু নেই এমন এক চরিত্রের যখন মূল ফোকাসটা পড়ে তার ভালবাসার জীবনের উপর, যেখানে তার আশেপাশের সবার ফোকাস পড়ে তাদের নিঞ্জা ক্ষমতার উপর, সেখানে দর্শকদের মনে এই ধারণাটা হওয়া অসম্ভব নয় যে সাকুরা ইউজলেস। ব্যাপার হল, সাকুরা কখনই ইউজলেস ছিল না। বরং কঠিন পরিবেশে শুরুতে খাপ খেয়ে নেওয়াতে কষ্ট পেতে হলেও এরপর সে ঠিকভাবেই সেই পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দর্শক মনের সাইকোলজিতে আরেকটা জিনিস খাটে – প্রথম ইম্প্রেশন। সেটা শুধু দর্শকদের জন্যেই নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবক্ষেত্রেই দেখতে পারি। প্রথম ইম্প্রেশনের উপরেই আমাদের আরেকটি মানুষের ব্যাপারে জন্ম নেওয়া ধারণাটি গড়ে উঠতে থাকে। হয়তো তার চরিত্রের অন্যান্য দিক দেখতে পেলে সেই ধারণাতে বিভিন্ন প্রলাপ পড়ে, কিন্তু ধারণার মূল ভিত্তি থাকে সেই প্রথম ইম্প্রেশনেই। সাকুরার ক্ষেত্রেও সেরকমই হয়েছে, দর্শকদের প্রথম ইম্প্রেশনটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাসকে উচিহা কেন “নারুতো” গল্পের সবচাইতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত চরিত্র — তাহসিন ফারুক অনিন্দ্য

Uchiha Sasuke Evolution

লেখাটির টপিক দেখে হয়তো অনেকে শুরুতেই ভ্রু কুঁচকে উঠবেন। দাঁড়ান একটু, আমি বলছি না সাসকে এই আনিমেটির সবচাইতে সেরা চরিত্র। নারুতোর গল্পের চরিত্রদের মধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় অবশ্যই ইতাচি। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না এখানে, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল, উচিহা সাসকে এই গল্পটির সবচাইতে ভালভাবে গড়ে তুলা চরিত্র। লেখাটি কিছুটা বড় হতে পারে, তাই সময় নিয়ে পড়বার অনুরোধ করছি।

একটা ১২-২৪ পর্বের সিরিজে চরিত্রের গঠন জিনিসটা যেভাবে হয়, স্বাভাবিকভাবেই একটা শত পর্বের সিরিজে তার চাইতে বেশ ভিন্নভাবে হয়ে থাকবে। এ জন্যে ৬০০+ পর্বের নারুতো সিরিজের একটা পার্শ্ব চরিত্র যে ধরণের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে যায়, তা অনেক ১২ বা ২৪ পর্বের সিরিজের প্রধাণ চরিত্রের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে না।

এবার আসি চরিত্রের গড়ে উঠার ব্যাপারটিতে, অর্থাৎ ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাক। ডেভলপমেন্ট হিসাব করলে লিটারেচার কাজগুলিতে আমরা দুই ধরণের চরিত্রায়ন দেখে থাকতে পারিঃ Static Characterization ও Dynamic Characterization. স্ট্যাটিক চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে কোন চরিত্র ঘটনাক্রমে গল্প এগিয়ে যেতে থাকলেও বড় ধরণের কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় না। তার লক্ষ্য, চিন্তা-ভাবনা, ধারণা ইত্যাদি মোটামুটি একই রকমের থেকে যায়। অন্যদিকে ডিনামিক চরিত্রায়ণ বলতে সেই ব্যাপারটি বুঝিয়ে থাকে, যেখানে একটা চরিত্র গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে থাকার সাথে সাথে বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই পরিবর্তন থাকে তার লক্ষ্যে, চিন্তাভাবনায়, আচার-আচরণে, ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দুই আলাদা ধরণের চরিত্র অর্থ কিন্তু এই নয় যে একটি বেশি ভালো ও অন্যটি খারাপ। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের উপযুক্ত ব্যবহার দুই ধরনের চরিত্রকেই বিশেষ কিছু করে তুলতে পারে।

আমাদের আলোচ্য গল্পের প্রধাণ চরিত্র নারুতো উজুমাকি স্ট্যাটিক চরিত্রায়ণের সবচাইতে বড় উদাহরণ। গল্পের একদম শুরু থেকে তার লক্ষ্য ছিল হোকাগে হওয়া ও সবার কাছে এক সম্মানজনক ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া। হাটতে-চলতে সব ক্ষেত্রেই নারুতোর এই লক্ষ্যের কথা আমরা শুরু থেকে জেনে এসেছি, এবং কোন ধরণের বাঁধা তাকে দমাতে পারে নি এই উদ্দেশ্য অর্জন থেকে। তার এই অনড় অবস্থান মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ঘৃণা থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে সম্মানের পথে নিয়ে আসে।

ডিনামিক চরিত্রায়নের আদর্শ উদাহরণ সাসকে। তার ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য ছিল তার ভাইকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিবে আর নিজের বংশের পুনরুত্থান ঘটাবে। ঘটনাপ্রবাহে আমরা দেখতে পারি সাসকে তার সেই লক্ষ্য মাঝপথেই অর্জন করতে পেরেছে, কিন্তু এরপর সত্যি কথাটা তার সামনে চলে আসলে তার চরিত্রে একটা ভাঙ্গন দেখতে পারি। শুরু হয়ে যায় ভাঙ্গা-গড়ার খেলা, যেখানে কোনোহাকে ধ্বংশ করে দেওয়া কিংবা কোনোহাকে বাঁচিয়ে ফেলা – এই দোটানায় তার চিন্তাভাবনা ঝড়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নারুতোর সাথে শেষবারের মত মারামারির মধ্য দিয়ে তার চরিত্র পূর্ণায়তা পেয়ে উঠে।

দুটি চরিত্রই আনিমে জগতের অন্যতম জনপ্রিয়তা পাওয়া চরিত্র, সন্দেহ নেই। কিন্তু এবার যদি আমরা এই দুজনের ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকি, তাহলে কোন চরিত্রটিকে আমরা ঠিকভাবে গড়ে উঠতে দেখি? নিঃসন্দেহে সেটা সাসকে। নারুতো চরিত্রটির প্রতি বিদ্বেষ নেই আমার, একটি চিরাচরিত শৌনেন গল্পের প্রধান চরিত্র হবার মত সবকিছুই তাকে দিয়েছে গল্পের লেখক – অনড় চিন্তাভাবনা, হাসিখুশিভাবে সবাইকে আপন করে নেওয়া, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, এ সব কিছুই তাকে একজন হিরো করে তুলে। কিন্তু, চরিত্রের বিকাশ যদি হিসাব করি আমরা, নারুতো উজুমাকি কি আদৌ তেমন কোন বিকাশ দেখাতে পেরেছে? নারুতোর চরিত্রে যেটি হয়ে উঠে নি, সাসকের চরিত্রে তার সবকিছু হয়ে উঠেছে আসলে।

ঘটনাক্রমে আমরা দেখে উঠতে পারি সাসকে ছোটকালে খুবই হাসিখুশি এক চরিত্র ছিল, যে বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ পাবার জন্যে সবরকমের চেষ্টা করতো। একদিন তার বড় ভাই তার বাবা-মাসহ পুরা উচিহা বংশকে হত্যা করে ফেলে। এই ঘটনা সাসকে-কে করে তুলে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ, এবং এরকম একটা অবস্থান থেকেই গল্পে প্রথম তাকে দেখতে পারি আমরা। এরকম সময়ে তার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর, নিঞ্জাদের দুনিয়া হয়ে থাকলেও ম্যাচিউরিটি আসার মত বয়স তখনও হয়ে উঠে নি। নিজের প্রতিশোধ নেবার লক্ষ্যে নিজের গ্রাম ছেড়ে দিতেও রাজী হয়ে উঠেছিল। এরপর ১৬ বছর বয়সের দিকে এসে বড় ভাইকে হত্যা করে যখনই নিজের জীবনের লক্ষ্য পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বলে মনে করেছিল, তখনই তোবির কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পারে। জানতে পারে কীভাবে তার বড় ভাই বাধ্য হয়েছিল নিজের বংশকে নির্মূল করে দিতে। এমন সময়ে এসেই আমরা সাসকের চরিত্রে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেখতে পারি। এই মুহুর্তটি ছিল তার চরিত্রের বিকাশের একটি বড় উপলক্ষ্য। অবশেষে নিজে থেকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে সে, কোনোহাকে ধ্বংস করবে সে, কোনোহার উপর বদলা নিবে সে।

ইতোমধ্যে নিঞ্জাদের ৪র্থ বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়, আর এমন এক কঠিন মুহুর্তে তোবি, কাবুতো আর জেতসু সবাই তাকে নিজের মত করে ব্যবহার করতে চেষ্টা করে, সে বিষয়টিও বুঝে উঠতে পারে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বড় ভাইকে রিএনিমেশন অবস্থায় দেখতে পারে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সত্য ঘটনাটির অন্য আরেক সংস্করণ শুনতে পারে। সাসকের চরিত্রের গঠনের আরেকটি বড় মুহুর্তের সাক্ষী হতে পারে দর্শক এই জায়গাটিতে, যখন সাসকে বুঝে উঠতে পারে শুধুমাত্র প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামি হবে। এরপর পূর্বের হোকাগেদের কাছ থেকে নিঞ্জার ইতিহাসের সবকিছু জেনে নেয় সে। বুঝে উঠতে পারে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাতেই সমস্যা হয়েছে।

শুধু প্রতিশোধ আর প্রতিশোধ যার লক্ষ্য ছিল, সেই চরিত্রকে আমরা এরপর কী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখি? সে কি এরপর পুরা নিঞ্জা দুনিয়াকে নির্মূল করতে উঠে যায়? না, বরং এই প্রথম সে বুঝে উঠতে পারে নিজের পরিণতি যেন অন্য কাউকে মুখোমুখি হতে না হয়, এজন্যে পুরা নিঞ্জা সিস্টেমটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। হোকাগে হয়ে এই লক্ষ্য পূরণের জন্যে এগিয়ে যেতে দেখি আমরা, যদিও গল্পের নায়ক না হবার কারণে সেটা তার ভাগ্যে জুটে নি। কিন্তু হোকাগে হবার লক্ষ্য নারুতোর কাছে রেখে দিয়ে এলেও, এরপর সাসকে পুরা নিঞ্জা দুনিয়া ঘুড়ে দেখে সব সমস্যা ঠিকঠাক করার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।

একটি প্রতিশোধপরায়ণ ছোট্ট বাচ্চা বিভিন্ন ধরণের মানসিক ধাক্কা, অশান্তি, কষ্ট, ক্ষোভ সামলে উঠে সুন্দর একটি বিশ্ব গড়ে তুলার উদ্দেশ্যে শান্তির পথে অগ্রসর হয় — লক্ষ্য, চারিত্রিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের পুর্ণায়ন হয়ে উঠে সাসকে উচিহা চরিত্রটির।

আমরা গল্পের ক্রমে অন্যান্য অনেক চরিত্রেরও কাছাকাছি বিকাশ দেখতে পাই। বাবার প্রতি অন্যায়ে কঠিন হয়ে যাওয়া, আপন দুই বন্ধুকে হারানোর পরে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে হারিয়ে যাওয়া এবং নারুতো-সাসকে-সাকুরার শিক্ষক হবার মাধ্যমে আবার আলোর পথে ফেরত আসা – কাকাশিরও প্রায় একই ধরণের ডিনামিক পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমরা এই পরিবর্তনের অধিকাংশই জানতে পারি গল্পের শেষের দিকে এসে। ওবিতো চরিত্রটিও বেশ ট্র্যাজিক এক চরিত্র। তবে এত বিশাল মাপের দুনিয়া পাল্টে দেওয়া যুদ্ধ শুরুর পর, অগণিত মানুষ হত্যার পর শুধু নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেটা কাটিয়ে তুলার চেষ্টা – তার চরিত্রের বিকাশটি অনেকের কাছেই তাই আপত্তিকর। অন্যদিকে ইতাচির মনের মধ্যে ঝড়ঝঞ্ঝা এবং অকল্পনীয় ত্যাগের মাধ্যমে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে উঠা – সবকিছু মিলিয়ে তাকে গল্পটির সবচাইতে পছন্দের চরিত্র করে তুলতে পেরেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তা এক জিনিস, আর ব্যক্তিত্বের গঠন আরেক জিনিস।

সবসময়ে শান্তির পথে থাকতে চাওয়া ইতাচিকে নিজের পুরা বংশকে হত্যা করতে বাধ্য হতে হয়। এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সন্দেহ নাই, কিন্তু এত বড় এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবার পরে সবার চোখে অপরাধী হয়ে থাকার পরেও কোনোহাকে ও নিজের ছোট ভাইকে চোখে চোখে রাখতে আকাতসুকিতে যোগদান করে সে। ভাইয়ের হাতে নিজের মৃত্যুটিকে নিজের পাপের শাস্তি ও কষ্ট থেকে মুক্তির পথ হিসাবে বেঁছে নেয়। আমরা গল্পের শুরু থেকেই ইতাচিকে গল্পের সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবে দেখে এসেছি, তার অংশ শেষ হবার পরেও একইভাবে তাকে গল্পের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসাবেই জানতে পেরেছি। ফলাফল স্বরূপ, তার ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট জিনিসটি বাদ পড়ে গিয়েছে।

অতএব, ডেভলপমেন্ট ব্যাপারটি যদি লক্ষ্য করি শুধু, তাহলে পুরা গল্পে সাসকের মত চারিত্রিক বিকাশ আর দ্বিতীয়টি কারও নেই। সাসকে চরিত্রটি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কখনই ছিল না, কিন্তু নিজের ত্রুটি মেনে নিয়ে সেটিকে ঠিক করে তুলবার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে, এবং প্রায় ৬৫০ পর্বের এই যাত্রায় তাতে সফল হওয়াটা তার চরিত্রকে পরিপূরণ করতে পেরেছে। Well-developed চরিত্রের কথা যদি উঠে থাকে, তাহলে এই গল্পে সাসকের চরিত্রের গঠনের ধারেকাছেও কেউ নেই।

নারুটো ফ্যান-ফিকশান: Jiraiya — Rahat Rubayet

কোনোহার আকাশপথে বিশালাকারের বেলুনযানে গ্রাম এর অবস্থা তদারকি করছেন ৭ম হোকাগে। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়-নানা কাজে এখানে সেখানে অন্তত শ’খানেক শ্যাডো ক্লোন বা কাগে বুনশিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে কাজের চাপ পাহাড়সম। এই এখন বহুতল অত্যাধুনিক হাঁসপাতালের উদ্বোধন তো ১ মিনিট বাদেই নতুন ব্রীজের কাজে শ্রমিক-বিদ্রোহ, পরক্ষনেই পাশের গ্রামের কাগের স্পেশাল গেস্ট হিসেবে গ্রামে আসা, তারওপর গাদা গাদা ডেস্কজব, টেলিভিশনের বিশেষ ইন্টারভিউ- তারপর নিজের ফ্যামিলি।
এছাড়াও গ্রামের এখানে সেখানে হাজারটা দরকারে স্বয়ং হোকাগে হিসেবে নিজেই কাজ করে যাচ্ছে। যদিও গ্রামের দেখভালের কাজটা সানন্দেই করে চলেছে নারুতো। তবু মাঝে মাঝে এতটাই ব্যস্ত সময় পার করে যে, কাজের বাইরেও যে একটা জীবন আছে তা ভুলে যেতে বসেছে ধীরে ধীরে।
এতসবের মাঝেও প্রায়ই একটা দীর্ঘশ্বাস চাপে ও মনে মনে। জীবনের চাওয়া পাওয়ার মাপকাঠিতেতে প্রাপ্তির পাল্লাটা হেলে পরলেও অপ্রাপ্তির ভারটাও নেহায়েত কম না।
নারুতো সেই ছোট থেকেই চাইতো গ্রামের সবাই ওকে গ্রহন করুক আর সম্মান করুন। সে থেকেই হোকাগে হওয়ার স্বপ্ন আর তাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার এত সাধনা।
ইরুকা সেন্সে, কাকাশি সেন্সের পাশাপাশি এরো সেননিনও থাকবে- হোকাগের ক্লোকটা গায়ে চাপিয়ে…. চাইল্ড অব প্র……… এবার আর দীর্ঘশ্বাস গোপন করে না নারুতো। মাথাটা নামায় ডেস্কের স্তুপ করে রাখা কাগজে। চোখ দুটো বুজে এসেছে -অবসন্ন। চিন্তায় ছেদ পরল দরজায় টোকা পরায়।
এরই মধ্যে নিজের অফিসে ফিরে এসেছে ও। শিকামারু ঢুকল টোকা দিয়ে।
নারুতো এরর মাঝে ধাতস্থ হয়েছে। একমনে কাজ করে যাওয়ার একটা অভিব্যক্তি চোখে মুখে।
-“নারুতো, ওরোচিমারু এসেছে, কি নিয়ে যেন কথা বলবে তোমার সাথে।”
একটু অবাক হয় নারুতো। শ্যাডো ক্লোনের সাইন করতে যেতেই বাধা দেয় শিকামারু।
-“ক্লোন নয়, তোমাকে সশরীর এ যেতে বলেছে বারবার করে। ছাদে চলে যাও সরাসরি।”
এবারে বেশ অবাক হলেও কিছু না বলে দরজার দিকে এগোয়। কাছে যেতেই দরজায় নকের শব্দ পায়, খুলেই দেখলো বোরুতো এসেছে হিমাওয়ারিকে নিয়ে।
নারুতো অন্যমনস্ক থাকলেও ঠিকই খেয়াল করল ওদেরকে। কিছু না বলে ইশারায় বসতে বলে ছাদের পথ ধরলো। ইচ্ছে করলেই জানালা গলে লাফ দিয়ে ছাদে পৌঁছতে পারত ও। কিন্তু, এখন ও হোকাগে। ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই করা সম্ভব না ওর পক্ষে।
ছাদে ওরোচিমারু দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিনমুখো হয়ে। গ্রামের প্রায় পুরোটা অংশেই চকিতে চোখ বুলিয়ে নেয়া যায়। মেয়েলি চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে নেমে গেছে- দুলছে বাতাসে। নারুতো পেছনে গিয়ে দাড়াতেই ওর দিকে ফিরলো। নারুতোর গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। দেখতে ওদের থেকেও কমবয়সী লাগছে ওরোচিমারুকে। কথা ওরোচিমারুই বলতে শুরু করে প্রথমে।
ধির ঠান্ডা গলায় তার জীবনবোধ নিয়ে বেশ কিছু কথা বলে গেলো ওরোচিমারু। নারুতো চুপ করে শুধু শুনে গেলো। বলতে বলতে জিরাইয়ার কথায় এসে হালকা দীর্ঘশ্বাস কি ফেললো ওরোচিমারু? নারুতোর কাছে দীর্ঘশ্বাসই মনে হল।একটু থামলো, উলটো ঘুরে নারুতোর মুখোমুখি হল।
হাত নাড়ল ওরোচিমারু। হ্যান্ডসাইন ওয়েভ করেই মাটি স্পর্শ করল। সামোনিং জুতসুর সাইন ভালই চিনে নারুতো। চকিতে অনেকগুলো চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, নারুতো পাত্তা দিল না। ওরোচিমারু এখন আর গ্রামের জন্য কোন থ্রেট নয়। তাছাড়া তার অভিব্যক্তিতেও এমন কিছু একটা আছে যা নারুতো ধরতে না পারলেও তা থেকে বিপদের আভাস পেল না।
ওদিকে ওরচিমারুর সামোনিং জুতসুতে সাড়া দিয়েই ধিরে একটা কফিন উঠে এল।
নারুতো তাকিয়ে আছে কফিনের দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখলো, কফিনের দরজা খুলে আছড়ে পরল একপাশে। নারুতো কফিনের দরজার দিকে তাকায় না। ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ কফিনের ভেতরের মানুষটার দিকে। এরো সেননিন(পারভি সেইজ)!
জিরাইয়া এক পা ফেলে কফিনের বাইরে, তারপর আরেক পা।
সূর্যের তাপ কি কিছুটা কমে এলো? চারিদিক কেমন যেন ম্লান আর নিষ্প্রভ লাগে নারুতোর কাছে। সেই, সাদা চুল- অদ্ভুত পোষাক। পায়ের খড়মগুলো কেমন যেন ঝাপসা লাগে নারুতোর চোখে। ইচ্ছে করলেই হাত দিয়ে চোখটা মুছে নিতে পারে ও।
নারুত ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে বোকাচোখে তাকিয়ে থাকে। বুকটা চাপ দিয়ে ওঠা অনুভূতিটা মরে গিয়ে কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগে হটাত।
জিরাইয়ার কন্ঠ গমগম করে ওঠে “হিসাশিবুরি দানা”
নারুতো কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে শুধু।
“আরে, হোকাগের ক্লোকে দারূন মানিয়েছে তোমাকে। তবে, বড্ড ছোট হয়ে গেছে- এই যা। ৪র্থ হোকাগের ক্লোকটা সে দিক থেকে বলতে চমৎকার বানিয়েছিল।”
নারুতো সামলে নিয়েছে নিজেকে। চোখের পানি অদৃশ্য হয়ে, মুখের ম্লান হাসিটা স্বরূপে ফিরে এসেছে। জিরাইয়া তির্যক চোখে নারুতোর নিল চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করলো। শেষবার যে নারুতোকে দেখেছিল তার সাথে এখনকার নারুতোর অমিল থাকবেই- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, কিছু একটার ছায়া দেখতে পেলো সে নারুতোর চোখেমুখে। ২ ২টো নিঞ্জা ওয়ার চাক্ষুষী চোখ তা চিনতে ভুল করলো না। আগেও এমন ছায়া অনেকের চোখেই দেখেছে জিরাইয়া। তবে নারুতোর প্রাণবন্ত মুখটার জায়গায় অমন ভারিক্কী চেহারা দেখে অস্বস্তি লাগছে জিরাইয়ার। ও কি মিনাতোর মৌন অনুরোধ ঠিকমতন রাখতে পারে নি? আরো বেশি সময় কি নারুতোকে দেয়া কর্তব্য ছিল তার?
না, তা নয়। জিরাইয়া তার অস্বস্তির কারনটা ধরতে পারে। অস্বস্তি লাগার কারন তাকে রিএনিমেট করা হয়েছে। আর তা করেছে, পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা চিরনবীন ওরোচিমারু।

ওরোচিমারুর দিকে তাকাতেই মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয় জিরাইয়ার।
-“পুরনো বন্ধুর কাছ থেকে অভিবাদন মূলক কথাবার্তাকে সৌজন্যতা বলে বোধ হয়, জিরাইয়া।”
–“বন্ধু, সৌজন্যতা, অভিবাদন- খেয়ালি শব্দগুলো তোমার মুখ থেকে বেরুচ্ছে, বিশ্বাস হয় না।”
-“হাহাহাহা, এত সিরিয়াস হবার কিছু নেই। তোমাকে গ্রাম ধ্বংসের কাজে ম্যানুপুলেট করার কোন ইচ্ছে আমার নেই।”
–” তাহলে?”
-“আমাদের ৭ম হোকাগের সাথে দেখা করিয়ে দেবার জন্যই এই ‘আয়োজন’।”
–” ৭ম? ৬ষ্ঠ হোকাগে কে?”, বলেই ঘুরে স্টোন-ফেইসগুলোর তাকায় জিরাইয়া।
“কাকাশি? ছোকরার মুখোশ সমেতই মুখচ্ছবি বানিয়েছে!!” বলেই হাসতে থাকে উঁচু গলায়।
এর মাঝে বেশ অনেকটা সময় কথা বলল, জিরাইয়া নারুতো আর ওরোচিমারুর সাথে।
এর মাঝে থাকতে না পেরে ঘুমন্ত হিমাওয়ারিকে সোফায় রেখে ছাদে এসেছে বোরুতোও তাও বহুক্ষণ। ছাদের দরজার আড়াল থেকে তার বাবা, ওরোচিমারু আর অচেনা ওই দীর্ঘদেহী লোকটাকে দেখে যাচ্ছে।
হটাত, হিমাওয়ারির শব্দ পেয়ে পাশে তাকাল। দেখলো, চোখ কচলে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বোরুতো তাকাতেই দেখলো, অচেনা সেই লোকটা যেন বালুর মতন ঝড়ে পরছে ছাদের ওপর।
হিমাওয়ারি আরেকবার চোখ কচলে নিয়ে ভাল করে তাকায়। তার বাবা শিশুদের মতন কাদছে ওখানে। হিমাওয়ারি ভায়ের জামাটা শক্ত করে ধরে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero (Part-5); Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction — Rahat Rubayet

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero Part-5
[Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction]

আসলে Boar এর কথাই ঠিক। Don Freecs ডার্ক কন্টিনেন্টের উপর লিখা বইয়ের ১ম কপি পাওয়া গেলেও ২য় পর্ব বা কপিটা পাওয়া যায় নি। তবে, কথিত আছে নিনজা ভিলেইজগুলোর এদিকদিয়েই ওয়েস্টার্ন এন্ট্র্যান্স ডার্ক কন্টিনেন্টের। তাই বলা যায় অনেকটাই অনিশ্চিত অবস্থায়ই হান্টার এ্যাসোসিয়েশন এই মিশনে নামে। তবে, আর কোন উপায়ও ছিল না তাদের- সরকারের কাছে যে তাদের হাত বাঁধা। কাজেই বাধ্য হয়েই এই অপ্রিয় কাজে নেতেরোর আগমন।
আর ডার্ক কন্টিনেন্ট এক্সপ্লোর এর ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা খুব করে জানে নিনজা ভিলেইজগুলো। তাই সকলে একজোট হয়েছে আজ হান্টার এসোসিয়েশনকে আটকাবে বলে-যে কোন মূল্যে। তাদের থেকে হাশিরামা তথা হোকাগেই মুখপাত্র হিসেবে প্রতিনিধিতব করছে সবার। ক্যাজুয়ালিটি মিনিমাইজ করতে নেতেরোর ওয়ান-অন-ওয়ান ব্যাটেলের প্রস্তাবে সম্মত হয় হাশিরামা। আর ওদের কে জায়গা করে দেয় দু’পক্ষই।
হান্টার এসোসিয়েশানের মতন না হলেও কিছুটা নির্ভার বোধ করছে নিনজা ভিলেইজ গুলোর প্রধানেরা, এই ভেবে যে লোকালয়ে এর এফেক্ট পরবে না। অর্থাৎ গ্রামের মানুষেরা আপাতত নিরাপদ। আর হাশিরামার ওপর তাদের আস্থা আছে। হাশিরামাকে টপকে ওদের ওপর আর ভিলেইজে এটাক করতে আসা চাট্টিখানি কথা না। আর হান্টার এ্যাসোসিয়েশন আর গভঃ ফোরস পুরোপুরিই নেতেরোর দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে তাদের একজনও নেতেরোর ফুল পাওার ব্যাটেল তো দূরে থাক কোনদিন গুরুতর পরিস্থিতির সবীকার হয়ে লড়তেও দেখে নি। আর- কেউ দেখেছে বলেও জানা নেই কারো। কাজেই আস্থার মাত্রাটা অমূলক নয় মোটে।
হাশিরামাই আক্রমণ করলো প্রথমে। আন-আর্মড কমব্যাটে লড়তে শুরু করলো তার জীবনে সবচাইতে কঠিন প্রতিপক্ষের। যার নীতিবোধকে এতোদিন প্রশংসা আর সম্মানের সাথে দেখে এসেছে, তার বিরুদ্ধে এভাবে লড়াই করতে হবে ভাবে নি। অবশ্য, তাতে কি কিছু এসে যায়? নেতেরো এই মুহূর্তে তার গ্রামের জন্য একটা ‘থ্রেট’ আর তাকে প্রতিহত করার জন্য যতদূর যেতে হয় যাবে হাশিরামা।
মাথায় চিন্তার ঝড় বইতে থাকলেও থেমে নেই বডি মুভমেন্ট। নেতেরোর ঠিক বা পাশে দাঁড়িয়েই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে কাঁধের নার্ভ পয়েন্টে সজোরে আঘাত করতে যায় সে। দেখলো বাতাসে ভেসে একটু যেন সরে গেল এক দিকে নেতেরো, মুখে তখনো হাসির ছটা লেগে রয়েছে। হাশিরামা জানতো এতো সহজে আঘাত হানা যাবে না তার ক্যালিবারের কাউকে। তাই অনেকটা ফাঁদে ফেলার জন্যেই অমন ডামি দিয়েছে। নেতেরো হালকা ডান দিকে সরে যেতেই দেখলো ইতিমধ্যেই হাশিরামার এক হাঁটু তার পাকস্থলি স্পর্শ করেছে। প্রথম আঘাতটা নেতেরো ডজ করবে জেনেই সাথেসাথেই ডান দিকে এক হাতের ওপর ভর করেই ভাঁজ করা হাঁটু সজরে ছুঁড়ে দিয়েছে।
পরক্ষনেই নেতেরো প্রায় উড়ে গিয়ে প্রায় ১০ হাত পিছনে ছিটকে পরলো। সজোর আঘাতে ফুসফুস খালি হয়ে গেছে নেতেরোর- জানে হাশিরামা। তাই ধাতস্থ হবার সময় দিবে না বলেই নেতেরোর দিকে ছুটে যায় সে। গিয়েই দেখলো কিসের কি- হাসি হাসি মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে নেতেরো। হাত দুটো অদ্ভুতভাবে বুকের কাছে তুলে ধরেছে। প্রতিক্রিয়া দেখাবার সময় পায় না হাশিরামা। তার আগেই দেখলো নেতেরোর হাত অদৃশ্য হয়ে গেছে-পরমুহূর্তেই বুকে প্রচন্ড আঘাত চোখে অন্ধকার দেখলো। একটা পাথরে পিঠ ঠেকতেই উঠে বসতে বসতে বুঝলো, এতটা স্রেফ উড়ে এসে পরেছে নেতেরোর আঘাতে। আঘাতটার দিকে নজর দেয়ার দরকার নেই। তবে বুকের গার্ড ভেঙে গেছে সেটা ঠিকই লক্ষ্য করলো।
ওদিকে মাদারা, টোবিরামাও বাকি সবার সাথেই দেখতে পাচ্ছে লড়াইয়ের প্রতিটা বিষয়। অনেকটা ক্ষেদোক্তির মতন বলতে থাকল মাদারা-“আমি বুঝতে পারছি না হাশিরামা গেঞ্জুতসু ব্যবহার করছে না কেন?” টোবিরামা কিছু বলল না, তার বড় ভায়ের জাজমেন্ট আর এবিলিটির ওপর অগাধ বিশ্বাস আছে।

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero (Part-4); Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction — Rahat Rubayet

The Battle between 2 Bodhisattva‬: Hashirama vs Netero Part-4
[Naruto & Hunter x Hunter Crossover Fanfiction]

কাচের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হাসছে যেন নেতেরো। উহু, হাসির কোন কিছুই ঘটেনি। তবে, বহুদিন-বহুদিন পর এমন এক যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে লড়বে সে। রোমাঞ্চ অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। তবে তার জন্যে সে আপন মনে হাসছে- এটা ভাবলে ভুল হবে। নেতেরো তার স্বভাবসুলভ যে হাসি সর্বক্ষণ ধরে রেখেছে ঠোঁটে তা বহুদিনের পুড়নো অভ্যেসের থেকে এসেছে। দেখলে মনে হয় কি এক কারনে থেকে থেকে তার প্রতিপক্ষকে বিদ্রুপ করছে যেন।
নিজেকে কাচের প্রতিবিম্বতে দেখে নেয় আর ভাবতে থাকে আসু লড়াইয়ের কথা। তা থেকে কি আর কেমন ধরনের ফলাফল আর সে সব পারিপার্শ্বিকতাকে কিভাবেই বা প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়েও ভাবতে থাকে।

ওদিকে হাশিরামা তার রুমে ব্যাটেলের ড্রেস পরছে। কাঁধ বুক আর পিঠে গার্ড লাগিয়ে তা টেনে পরিক্ষা করে দেখতে দেখতে খেয়াল করল, মাদারা দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুকে হাত বেঁধে। লক্ষ্য করলো মাদারাও ব্যাটেল ড্রেস পরে এসেছে। কিছু বলল না হাশিরামা। কিছু বলার দরকারও নেই। টোবিরামা, মাদারা, অন্য ৪ কাগে প্রত্যেককেই ভালমতন চেনে হাশিরামা। কার মনে কি খেলা করছে- তাও সহজেই আন্দাজ করতে পারে সে। সেখানে তাই কথা বলার প্রয়োজন বোধ হয় নেই। পিছনেই ছোট ভাই টোবিরামা উপস্থিত হয় শূন্য থেকেই যেন। অর্থাৎ, সময় হয়ে এসেছে।

হাশিরামা পৌঁছে দেখলো অন্য (প্রধান)৪গ্রামের কাগেরা আগেই জমায়েত হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের সাথেই তাদের গ্রামের সবচাইতে চৌকশ কিছু নিনজা কে নিয়ে এসেছেন। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য দিবালোকের মতন পরিষ্কার। যে কোন মূল্যে হান্টার এ্যাসোসিয়েশন কে ঠেকাতে হবে এর ডার্ক কন্টিনেন্ট এক্সপ্লোর করা থেকে। ওদিকে হান্টার এ্যাসোসিয়েশনের লোকেরা মাত্রই এসে নামলো।
ওদের থেকে এসেছে নেতেরো, ২ জোডিয়াক Monkey আর Boar আর তাদেরকে সঙ্গ দিচ্ছে গভঃ মিলিটারি ফোরস।
“বাহ! আমাদের স্বাগত জানাবার এতো আয়োজন করলে? তাহলে তো ভালই, হল। সবাই মিলেই যাওয়া যাক”, নেতেরোর আধখোলা চোখ আর মিটিমিটি হাসির কিছুই যেন স্পর্শ করলো না হাশিরামাকে। শীতল চোখে তাকিয়ে আছে নেতেরোর দিকে সে। নেতেরো যে হিডেন লিফে বেড়িয়ে যাওয়ার পরে সত্যি সত্যি আসবে- বা আক্রমণ করবে কিছুতেই বিশ্বাস হয় নি ওর। নেতেরোর রসিকতায় একটুও ভাবান্তর ঘটে না তাই।
“তুমি খুব ভাল করেই জানো আমরা কি জন্য এখানে অপেক্ষা করছি।”
“এখনও সময় আছে, আপোষের মাধ্যমে যদি,……..”
কথার মাঝপথেই তাকে থামিয়ে দেয় হাশিরামা, “You all, Will leave this place, right now”
দীর্ঘ কয়েক সেকেন্ড হাসিমুখো নেতেরো তাকিয়ে থাকে হাশিরামার অস্বাভাবিক শীতল চোখের দিকে। তারপর নিরবতা ভেঙ্গে বলল, “I guess there is no option to avoid the casuality. ” একটু থেমে যোগ করে, “আমার মনে হয় খামোখা হতাহতের চাইতে ২ জনে ব্যাপারটা ‘নিষ্পত্তি’ই সবথেকে ভাল হয়।”
হাশিরামা কিছু না বলে পিছনে গুঞ্জনরত কাগেদের দিকে পা চালাল, কথা বলবে বলে। ওদিকে নেতেরো ইশারা করতেই তার লোকজন দূরে-পিছু হটতে থাকে, হাশিরামা আর নেতেরোকে পর্যাপ্ত যায়গা দেবার জন্য। শুধু Boar যাবার সময় বলে গেল, “Don Freecs এর লিখা বইয়ের ২য় পার্ট টা কিন্তু আমরা হাতে পাই নি। পুরোপুরি একটা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আক্রমণ করাটা কি আসলেই ঠিক হচ্ছে?”
নেতেরো উত্তর করে না, ঠোট টিপে হাসতে থাকে।