The Wind Rises: মুভি রিভিউ – মোঃ আসিফুল হক

কি দেখলামঃ The Wind Rises
প্রোডাকশন হাউসঃ জিবলী।
ডিরেক্টরঃ হায়াতো মিয়াজাকি।

ইতালীয় বৈমানিক নকশাকার কাপ্রনি দ্বারা অনুপ্রাণিত জিরোর ছোটবেলার স্বপ্ন পাইলট হবার পথে বাদ সাধে তার চোখের সমস্যা। এতে দমে না গিয়ে জিরো বরং এয়ারপ্লেন ডিজাইনকে তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করে নেন। ১৯২৭ সালে তিনি যোগ দেন জাপানিজ এক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এয়ারক্রাফট ডিভিশনে। এবং খুব দ্রুতই তার প্রতিভার সাক্ষর রেখে এই ধারার একজন পুরোধা ব্যাক্তি হয়ে উঠেন।

জিরোর জীবনের ঘটনাপ্রবাহের সাথে সাথে এই মুভি বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা সমান্তরালে বর্ননা করে; যেমন – ১৯২৩ এর কান্তো ভুমিকম্প, যক্ষ্মার মহামারী, এবং জাপানের যুদ্ধে জড়িয়ে পরার গল্প। এর পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই নাওকোকে; জিরো যার প্রেমে মুগ্ধ হন এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন। এছাড়া জিরোর বন্ধু এবং সহকর্মী হোঞ্জোর সাথে তার চমৎকার সম্পর্ক এবং তৎকালীন জাপানের অনেক চিত্রই উঠে এসেছে এই মুভিতে।

wind rises 1

ব্যাক্তিগতভাবে আমি জিবলীর মুভির খুব বড় ভক্ত না। কারণ দর্শক হিসেবে আমার সাধাসিধে ছিমছাম গল্পই পছন্দ। খুব বেশি ভাবতে হয় এমন মুভির বদলে সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টির সাথে এক মগ কফি খেতে খেতে একটা স্নিগ্ধ ভালবাসার গল্প দেখে ফেলায় আমি বরং বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জিবলীর মুভিগুলো আমার কাছে বড্ড “কঠিন” মনে হয়। সে কারণে আসলে দেখা হয়েছে খুব কমই। Wind rises ও তার ব্যাতিক্রম না। এখানে জিরোর জীবনের সাথে উঠে এসেছে একগাদা ঘটনা, ইতিহাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবন দর্শন আর ভালবাসা। জিবলীর মুভি তাই দেখতে হয় সন্তর্পণে; মুভির সাথে একাত্মা হয়ে। সেভাবেই দেখার চেষ্টা করলাম; এবং মুগ্ধ হলাম; আবারও।

যে কোন জিবলীর মুভির মতন এই মুভির আর্টস্টাইলও দুর্দান্ত; জলরঙ্গা ব্যাকগ্রাউন্ড এতো যত্নের সাথে আকা হয়েছে যে শুধু এনিমেশন দিয়েই এই মুভি যে কোন সমালোচনা উৎরে যাবে।

চরিত্র রুপায়নে এই মুভি সম্পূর্ণ মুন্সিয়ানাই দেখিয়েছে। প্রত্যেকটা সম্পর্কই স্বাভাবিক, সাধারণ, দৈনন্দিন জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন। সবগুলো চরিত্রই বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে সুন্দরভাবেই।

wind rises 2wind rises 3

মুভিটির সবচেয়ে বড় সমালোচনার দিক্টা বোধহয় আসবে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেই। পুরো মুভি জুড়েই জাপানীদেরকে যুদ্ধের ভিক্টিম হিসেবেই দেখানোর একটা সূক্ষ্ম চেষ্টা ছিল যেখানে জাপানিজ মিলিটারির সে সময়কারই যুদ্ধাপরাধের প্রচুর ইতিহাস একটু ঘাঁটলেই খুজে পাওয়া যায়। পুরো মুভি জুড়ে যুদ্ধবিমান বানানোর জন্য নানান রকম চেষ্টার বর্ণনা চলে এসেছে; কিন্তু সেই বিমানগুলোর ব্যাবহার মুভিতে খুব সুন্দরভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। জিরোকে আমরা দেখতে পাই তার চশমা এবং পরিপাটি কাপড়ে; খুব নম্র বিনয়ী তরুণ এক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে; যুদ্ধবিমান তৈরির আফটারম্যাথ যাকে মোটেও বিচলিত করে না; বরং মুভির মাঝখানে পিরামিডের সাথে তুলনা দিয়ে পুরো ব্যাপারটাকেই গ্লোরিফাই করার নিদারুণ একটা চেষ্টা ছিল। যেটা অনেকটাই আয়রনিক; কেননা জিরোর প্রথম যুদ্ধবিমান “জিরো” তৈরিতে মিতসুবিসি ব্যাবহার করেছিল কোরিয়ান এবং চীনা দাসদের। এছাড়া পুরো মুভি জুড়ে জার্মান এবং অন্যদের জাপানে বোম্বিং করা দেখানোর মাধ্যমে জাপানীজদের মধ্যে তারা “যুদ্ধের মদদদাতা নয়, বরং শিকার ছিল” ধাঁচের যে মেন্টালিটি বিদ্যমান (জাপান জার্মান এলায়েন্স বা “এক্সিস” যুদ্ধের একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল); সেটাকেই শৈল্পিক রুপ দেয় মাত্র।

পুরো মুভিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব বেশি সাসপেন্স, খুব বেশি টেনশন ছিল না। এমনকি জিরোর ব্যাক্তিগত অন্তর্দন্দ নিয়েও আমরা খুব একটা ইঙ্গিত পাই না। আর শেষে গল্পটা যেন একেবারে হটাত করেই থেমে যায়। কোন মেসেজ না; কোন বড় সমস্যার সমাধান না; কোন ক্লাইম্যাক্স এন্টি-ক্লাইম্যাক্স কিচ্ছু না; একেবারেই যেন হটাত করেই “আচ্ছা তবে বিদায়” বলে মুভি শেষ করে দেওয়া।

ওভারঅল; সাউন্ডট্র্যাক এবং এনিমেশন বিচারে দুর্দান্ত একটা মুভি; যার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টও যথেষ্ট সন্তোষজনক; এবং দুই ঘন্টার একটা হ্যাপি জার্নি শেষে বেশ খানিকটা এব্রাপ্ট এন্ডিং এর অভিজ্ঞতা দিয়েছে এই মুভিটা।

রবার্ট ওপেনহাইমার তার ডিজাইন করা বোমার ডেমনস্ট্রেশন দেখে গভীর দুঃখ ভরে বলেছিলেন “Now I am become Death, destroyer of worlds.” একগাদা কিলিং মেশিনে ভরা আকাশের নিচে খোলা মাঠে হেটে যাওয়া জিরোর মানবহত্যার জন্য এক ফোঁটা দুঃখও জন্মায় নি; তার শেষতক দুঃখ ছিল তার কোন যুদ্ধবিমান অক্ষত ফেরত আসে নি; এই নিয়ে।
I can’t care for someone like that.

Comments