


বাংলায় এনিমে নিয়ে আড্ডার কমিউনিটি
𝙂𝙚𝙣𝙨𝙝𝙞𝙠𝙚𝙣
সম্প্রতি দেখে ফেললাম ওতাকু সংস্কৃতি নিয়ে তৈরি 𝙂𝙚𝙣𝙨𝙝𝙞𝙠𝙚𝙣 নামক সিরিজটি। ৩ টি সিজনে বিভক্ত সিরিজটির প্রেক্ষাপট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ও তার সদস্যদের কেন্দ্র করে। 𝗠𝗼𝗱𝗲𝗿𝗻 𝗩𝗶𝘀𝘂𝗮𝗹 𝗖𝘂𝗹𝘁𝘂𝗿𝗲 𝗦𝘁𝘂𝗱𝘆 𝗦𝗼𝗰𝗶𝗲𝘁𝘆 বা সংক্ষেপে গেনশিকেন নামক ক্লাবটিতে সদস্যরা মূলত এনিমে, মাঙ্গা, গেইম , কসপ্লে, হেন্তাই এবং যাবতীয় ওতাকু সম্পর্কিত জিনিস নিয়ে আলাপ আলোচনা করে । গল্পের শুরু হয় ভার্সিটিতে সদ্য ভর্তি হওয়া কেঞ্জি সাসাহারা নামক ছেলেকে নিয়ে। বেশ নম্র ভদ্র স্বভাবের হলেও তার ইচ্ছা জাগলো বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে ওতাকু জগতে একটু প্রবেশ করে দেখবে । গেনশিকেনের খোঁজ পেয়ে ক্লাবটিতে সানন্দে সদস্য হয়ে গেল সে। একইসাথে মাকোতো কোসাকা নামক আরেক ছেলে তার সাথে ক্লাবে যোগ দেয়। কোসাকা দৈহিকভাবে বেশ সুদর্শন । একইসময় সাকি কাসুকাবে নামক মেয়ে প্রথম দেখাতেই কোসাকা এর প্রেমে পড়ে যায় এবং অদ্ভুতভাবে দুইজনে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় এই অল্প সময়ে । কিন্তু ওতাকু কালচারকে অপছন্দ করা কাসুকাবে তার প্রেমিকের গেনশিকেন ক্লাবে যোগদানের ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখলো না। তবু বাধ্য হয়ে ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত চলতে থাকে তার । একই সময় ক্লাবের পুরাতন সিনিয়র সদস্যদের সাথে সদ্য যোগ দেয়া এই ৩ জনের নানা হাসি ঠাট্টা, খোঁচাখুচি চলতে থাকে এবং এভাবে দিনকাল অতিবাহিত হতে থাকে।
মতামত ও পর্যালোচনা:
এই সিরিজের সবচেয়ে বড় দিকটা আমার মতে এর বাস্তবতা এবং ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট। ভার্সিটির শেষ বছরগুলোতে সবার চাকরি খোঁজা নিয়ে ব্যস্ততা ও হতাশা, প্রেমের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সঙ্গীর ভালো মন্দ লাগার ব্যাপারটা না চাইতেও মেনে নেয়া ও একটা সময় তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া, পেশাগত জীবনকে আলিঙ্গন করতে যেয়ে পুরনো সুখ স্মৃতিগুলো বিসর্জন দেয়ার মতো দিকগুলো ফুটে এসেছে। অন্যদিকে প্রায় প্রতিটি মূল চরিত্রকে বেশ ভালো রকম স্ক্রিন টাইম দিয়ে তাদেরকে গভীরতা দান করা হয়েছে । প্রত্যেকের দৃষ্টিকোণ থেকে একে অপরকে দেখানো হয়েছে। ধীরে সুস্থে সময় ও যত্ন নিয়ে এদের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়া গড়ে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে সিরিজের আরেকটা ভালো দিক ছিল এর গল্প। স্লাইস অফ লাইফ হিসাবে গল্পের পেসিং নিয়ে এ ধরনের সিরিজে অনেক সময় সমস্যা দেখা যায়, বোরিং লাগে। কিন্তু সিরিজটিতে সেরকমটা লাগেনি মোটেও। যতটুকু ধীর ছিল, সেটা চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে প্রয়োজন ছিল।
এতক্ষণ যা যা বললাম সেগুলো মূলত প্রথম ২ সিজনের ব্যাপারে বলেছি। ৩য় সিজন থেকেই শুরু যত বিপত্তি। নতুন চরিত্রগুলোর মাঝে আগের মতো সেই চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল না। ক্লাবের কাজগুলো খুব রসকষহীন লাগছিল। গল্প Repetitive হয়ে যাচ্ছিল। পুরো গল্প বলতে গেলে শুধু ২ টা চরিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল যেটা প্রথম ২ সিজনের পুরো বিপরীত। তবে মাদারামে এর চরিত্রটার এক্ষেত্রে প্রচুর বিকাশ ঘটে। ক্লাবের সবচেয়ে “বড় ওতাকু” এই সময় ম্যাচিউরিটি অর্জন করে। মাদারামে এর এই পরিপক্বতা দেখার মতো ছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পুরো ৩য় সিজন মানে 𝗚𝗲𝗻𝘀𝗵𝗶𝗸𝗲𝗻 𝗡𝗶𝗱𝗮𝗶𝗺𝗲 একটা আক্ষেপের নাম ছিল আমার কাছে। ক্লাবের পুরো ফোকাস হঠাৎ করে BL আর cross-dressing এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। প্রথম ২ সিজনে যেভাবে ছোটো থেকে বড় সকল চরিত্রের সুন্দর ডেভেলপমেন্ট দেখা গেছে, সেই তুলনায় ৩য় সিজনে মন ভরেনি। বিশেষত কুচিকি নামক চরিত্রটাকে তো ব্যবহার ই করা হয়নি ঠিকমতো। অল্প যেটুকু স্ক্রিনটাইম দেয়া হয়েছে কুচিকি কে, তা অযথা কাজকারবারে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ ভারী রকম character based এই সিরিজে কুচিকি কে খুব ভালো করে ব্যবহারের সুযোগ ছিল।
সে যাই হোক। ৩য় সিজনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল মাদারামে এর চারিত্রিক বিকাশ। সম্ভবত, মাদারামে এর জন্যই পুরো ৩য় সিজনটা বানানো হয়েছে এক হিসাবে। পুরো সিরিজের সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র হিসাবে মন জয় করে নিয়েছে।
সর্বোপরি, ওতাকুদের নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ অনেকগুলো সিরিজ দেখেছি। তবে নিঃসন্দেহে 𝐆𝐞𝐧𝐬𝐡𝐢𝐤𝐞𝐧 এদের মধ্যে সেরা। ৩য় সিজনের কথা বাদ দিলে চমৎকার একটা সিরিজ। এনিমে, মাঙ্গা নিয়ে আমরা যারা সারাদিন মেতে থাকি, তাদের জন্য সিরিজটা দেখা আবশ্যক আমার মতে।
রেটিং
প্লট: ৮/১০
গল্প: ৮/১০
চরিত্রায়ন: ৮.৫/১০
এনিমেশন-আর্টওয়ার্ক: ৭.৫/১০ (আগের দিনের সিরিজ। সেই হিসাবে ভালোই)
সামগ্রিকভাবে –
সিজন ১+২: ৮/১০
সিজন ৩: ৭.৫/১০ (মাদারামে এর জন্য ০.৫ বাড়িয়ে দিলাম। এছাড়া ৭/১০ এর বেশি দিতে মন সায় দিচ্ছে না। বলে রাখা ভালো, আমার ৭ রেটিং হয়ত অন্যদের ৬.৫ বা ৬ এর সমান হবে 😂)
এই উপমহাদেশের লোকগল্পের একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এতে প্রচুর পরিমাণে anthropomorphic চরিত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের জীবনের নানা কাহিনীর বর্ণায়ন করা হয়। ছোটবেলায় শেয়াল পণ্ডিত আর কুমিরের বাচ্চাদের সেই কাহিনী শুনে নি এমন কেউ বোধহয় নেই। এই গল্পে পশুপাখির মাধ্যমে যেভাবে মানব চরিত্রের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে সেটাকেই anthropomorphism বলে। লোকগল্পে এই উপাদানটার ব্যবহার বেশ পুরনো। অনেক অনেক আগের পঞ্চতন্ত্রে যেমন এর ব্যবহার আছে, আমাদের সুপরিচিত ঠাকুরমার ঝুলিতে আম-সন্দেশ নামের একটা অধ্যায়ই আছে পশুপাখির মাধ্যমে বলা রূপকথাগুলো নিয়ে। আধুনিক সাহিত্যেও এর ব্যবহার আছে। লর্ড অফ দ্যা রিংসের কথা উল্লেখ করা যায় আর জর্জ অরওয়েলের অ্যানিমেল ফার্মের কথা তো সবারই জানা।
তো জাপানিজ পপ কালচারে জিনিসটা যেভাবে ব্যবহার করা হয় সচরাচর তাকে আর যাই হোক সুশীল কিছু বলা যায় না। ইন্টারনেটে furry কমিউনিটির কার্যকলাপ অনেক দেখা যায়, তা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই। অন্যকে বিরক্ত না করে সবাই যার যার আগ্রহের জিনিস চর্চা করা মোটেই খারাপ কিছু নয়।
তো এই গতানুগতিক ধারায় একটা নতুন হাওয়া নিয়ে আসা এনিমের নাম Beastars. সিরিজটা একই নামের একটা মাঙ্গা থেকে অ্যাডাপ্ট করা হয়েছে। সেই ২০১৬ সাল থেকে মাঙ্গাটা চলছে, অথচ এতদিন এটা নজরেই পড়ে নি কখনো।
বিস্টার্সের দুনিয়া আমাদের দুনিয়ার মতই এক দুনিয়া যেখানে পশুপাখিরা মানুষের মত সামাজিক জীবনযাপন করে। মানবসমাজে সাধারণত যা দেখা যায় তার সবই আছে সেখানে শুধু মানুষই নেই। সেখানে নগর, বন্দর, সভ্যতা যা বলা যায় সবই আছে। এখানে পশুপাখি মানুষের মত নয়টা-পাঁচটা অফিস করে বাসায় এসে সন্তানের কপালে চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তারা সুখ পেলে হাসে, দুঃখ পেলে কান্নাও করে। ধর্ম, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবগুলা superstructure ই সেখানে দারুণভাবে বিদ্যমান।
তবে মানবসমাজের হাজার বছরের পুরনো অভিশাপ বর্ণবাদ বিস্টার্সের দুনিয়াতে এখনও প্রবলভাবে নিজের আসন গেঁড়ে বসে আছে। বিস্টার্সের সমাজ মোটা দাগে তৃণভোজী ও মাংসাশী; এই দুই জাতিতে বিভক্ত। সমাজে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় এখানে তৃণভোজী আর মাংসাশীরা একই সাথে বসবাস করে। তারপরেও সর্বদা একটা অদৃশ্য টেনশন কাজ করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। মাংসাশীরা কোন একদিন নিজেদের মধ্যকার
শিকারী সত্ত্বার কাছে হার মানবে এই ভয়ে তৃণভোজী প্রাণীরা সবসময়েই তটস্থ থাকে।
সেই দুশ্চিন্তায় জ্বালানি যুগিয়ে দেয় এনিমের শুরুতেই ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। তেম নামের এক মেষকে মৃত ও আধাখাওয়া অবস্থায় আবিষ্কার করা হয় চেরিংটন হাইস্কুলের অডিটোরিয়ামে। ধারণা করা হয় তেমের কোন মাংসাশী সহপাঠীই খুনটা করেছে। পুরো স্কুলে একটা আতংকের জোয়ার বয়ে যায়। তৃণভোজী প্রাণীরা রাত ও অন্ধকার এড়িয়ে চলতে শুরু করে আর তাদের মাংসাশী বন্ধুদের অবিরাম সন্দেহের চোখে রাখা শুরু করে।
তো এসব ঘটনার সাক্ষী চেরিংটন হাইস্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমাদের প্রোটাগনিস্ট লেগোসি। এই স্কুলের সবাই ডরমিটরিতে থেকে পড়াশুনা করে। লেগোসি একজন নেকড়ে, লম্বা একহারা তার গড়ন; চালচলনে একজন স্বাভাবিক নেকড়ের পুরো উল্টো সে। ক্লাসের সবাই লেগোসিকে ধোয়া তুলসি পাতা বলেই জানে, কারোর সাত-পাঁচ কোনটাতেই নেই সে। তেম নামের সেই মেষ ছিল ড্রামা ক্লাবে তারই ক্লাসমেট, তাই মানসিকভাবে সেও কিছুটা মুষড়ে পড়ে।
তার পরের দিনই লেগোসির জীবনে একটা মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। ড্রামা ক্লাবের একটা কাজের জন্য সে যখন ক্যাম্পাসে রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন তার চোখে একাকী এক খরগোশকে চোখে পড়ে। দেখামাত্রই চকিতে তার মধ্যের শিকারী মনোভাব জেগে উঠে। সারাজীবনেও সে যে কাজ করার কথা ভাবে নি সে তাই করে বসে, প্রচণ্ড এক লাফে সে সেই খরগোশটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে…
থিমের দিক দিয়ে চিন্তা করলে বিস্টার্স অসাধারণ একটা গল্প। সুক্ষ্ম ও স্থূল, দুই ভাবেই এখানে এই এনিমেতে বর্ণবাদের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শ্রেণী বৈষম্যকে পশুপাখির মাধ্যমে বেশ বাস্তবভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই এনিমের গল্পে। আধুনিকায়ন যে আসলে আদিম সমাজের শিকারী ও শিকার মনোভাবকে দমিয়ে রাখতে পারে না তার সুন্দর চিত্রায়ণ ঘটেছে এই এনিমেতে। টুকরো টুকরো অনেক জায়গা আছে বিস্টার্সে যা আসলে মানবসমাজের অনেক অস্বস্তিকর বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এর ফলেই বিস্টার্স পরিণত হয়েছে একটা দারুণ সাইকোলজিকাল এনিমেতে। এখানে হাইস্কুলের একগাদা ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে পুরো সমাজব্যবস্থাটাকেই সুনিপুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই জায়গায় মাঙ্গাকার প্রশংসা করতেই হবে, এরকম ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনা সচরাচর দেখা যায় না। কিশোর-কিশোরীরা গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় coming-of-age স্টোরি হিসেবেও বিস্টার্সকে অনবদ্য মনে হয়েছে আমার কাছে।
বিস্টার্সের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক নিঃসন্দেহে এর চরিত্রগুলো। এখানে মাঙ্গাকার প্রশংসা করে কুলানো সম্ভব নয়। তিনি রীতিমতো বাধ্য করেছেন আমাদের চরিত্রগুলোকে মানুষের মত বিবেচনা করতে। কল্পনাশক্তি ও বাস্তবতাবোধের পরিমিত মিশ্রণ না ঘটাতে পারলে বিস্টার্সের চরিত্রগুলো এত ইন্টারেস্টিং হতো না। নানা দ্বন্দ্বে ভোগা লেগোসি, জীবনের কোন অর্থ খুঁজে না পাওয়া খরগোশ হারু, অতি উচ্চাভিলাষী হরিণ লুই; এই তিনটি ক্যারেকটারের আচার-আচরণ যেন আমাদের জীবনের পাতা থেকেই তুলে আনা। ছোট ছোট চরিত্র যেমন লেগোসির কৌহাই আরেক নেকড়ে জুনো আর তার ড্রামা ক্লাবের ক্লাসমেটগুলো অনেক কম স্ক্রিনটাইম পেয়েও নিজেদের কাজ পুরোপুরি করতে সমর্থ হয়েছে। সাথে আছে বিপদের বন্ধু পান্ডা গিওর্নো-সান যে কিনা লেগোসির কমপ্লেক্স সাইকোলজির উপর আলোকপাত করতে সমর্থ হয়। চরিত্রগুলো একে অপরের প্রতি যে অনুভূতিগুলো ধারণ করে থাকে যেমন: লেগোসি-হারু-লুইয়ের ত্রিভুজ প্রেম দ্বন্দ্ব, বিলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা তৃণভোজীদের প্রতি ঘৃণা আর সে সুবাদে লুইয়ের প্রতিও সুপ্ত জিঘাংসা মনোভাব, জুনো আর হারুর মধ্যে লেগোসিকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা; এগুলো এত এত বাস্তব যে পশুপাখির মুখোশের আড়ালে যেন নিজেদের চেহারাই দেখতে পাই। শুধু নেতিবাচক ঘটনগুলোই মনে দাগ কাটে এমন নয়, কিছু ছোট ছোট ইতিবাচক ঘটনাও আমাকে দারুণ স্পর্শ করেছে। ব্ল্যাক মার্কেটে পথ হারানো লুই যখন শেষে দেখে তার মাংসাশী বন্ধু আওবা সৎবিৎ ফিরে পেয়ে তার মতই অন্ধকার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তখন লেগোসির মত আমিও সমান আনন্দিত হই এত এত আবর্জনার ভিড়ে এমন এক পদ্মফুল ফুটতে দেখে। আরেকটা ছোট গল্প খুব ভাল লেগেছিল, সেটা হল লেগোসির ক্লাসে তার পাশে বসা মুরগীর কাহিনী। এই মুরগীর মত মানবিক চরিত্র কমই আছে এই সিরিজে আর সেটা সে তার পাঁচ মিনিটের উপস্থিতিতেই বুঝিয়ে দিয়ে সক্ষম হয়েছে। মুরগীটা নিয়মিত উন্নতমানের ডিম পাড়ে যেন মাংসাশীদের পুষ্টির অভাব না হয় সাথে এটাও যেন না হয় যে মাংসাশীরা খাদ্যের অভাবে তাদের সুপ্ত প্রবৃত্তির কাছে হার না মেনে ফেলে। এরকম সর্বমুখী আদর্শবাদী কাজকর্ম সমাজে এখন বিরল।
বিস্টার্সের একটা বড় থিম হলো শিকারী প্রাণীদের শিকার করার প্রবৃত্তি ও তা নিবৃত্ত করার জন্য সমাজব্যবস্থার গ্রহণ করা নানা পদক্ষেপ। এই জায়গাটাতে এসে আমি চিন্তার খোরাক পেয়েছি অনেক। শিকার করা যদি মাংসাশীদের মজ্জার মধ্যে মিশেই থাকে তাহলে সেটাকে এভাবে নিয়মকানুন দিয়ে চাপিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টাটা আসলে কতটা সফল? আমরা মানুষেরা এভাবে নানা বেড়াজালের মধ্যে ক্রমাগত আটকে থেকে আসলেই নিজেরাই নিজেদের বন্দী করে রাখছি, বিপরীতে অন্যান্য সৃষ্টিকুল নিজেদের প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়ে একটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে; এরকম চিন্তা বিস্টার্স দেখে আবারও এসেছে আমার মাথায়। বিস্টার্সের দুনিয়ার নাগরিকরা মানুষের মত নিজেদের নানা নিয়মে আবদ্ধ রেখে এই অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। আর এই অস্বস্তিকর পরিবেশে তৈরি হওয়া টেনশনকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে মাঙ্গাকা এই ভাল ভাল গল্পগুলো উপহার দিয়েছেন আমাদের। এই জায়গায় আবারও মাঙ্গাকার ভূয়সী প্রশংসা করবো।
অ্যানিমেশনের প্রসঙ্গে আসি। কোন এনিমের সাথে সিজিকে এত সুন্দরভাবে খাপ খাওয়াতে খুব কমই দেখেছি বিস্টার্সের মত। দেখে মনে হয়েছে মাঙ্গাটা লেখাই হয়েছিল এভাবে থ্রিডি সিজিতে তৈরি করার জন্য। সিজির ব্যবহারে যে জড়তা তৈরি হয় অ্যানিমেশনে, সেটা ব্যবহার করে এনিমেটা আরো দশগুণ অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। রটোস্কোপিক অ্যানিমেশনের কারণে যেমন আকু নো হানার এনিমে রীতিমতো জান্তব হয়ে উঠেছিল। এনিমেটা স্টুডিও অরেঞ্জের বানানো, যারা এর আগে Land of the lustrous বানিয়ে সিজির ঝলক দেখিয়েছিল। এই স্টুডিও কোন মাঙ্গা অ্যাডাপ্ট করার সিদ্ধান্ত নিলে সেটার এনিমে ভিন্ন একটা আবহ নিয়ে বের হয়ে আসে। সামনে তাদের আরো একক কাজের অপেক্ষায় রইলাম।
ওপেনিং সং Wild একটা অসাধারণ মিউজিক কম্পোজিশনের উদাহরণ। ইউটিউবে দেখলাম আর্টিস্ট ব্যান্ড ALI একটা মাল্টিন্যাশনাল গ্রুপ। জ্যাজ আর র্যাপ মিশিয়ে তারা দারুণ একটা গান তৈরি করেছে। আর এর সাথে সমানভাবে তাল মিলিয়েছে স্টপ মোশন অ্যানিমেশনে বানানো ওপেনিং ক্রেডিটটা। ওপেনিং ক্রেডিটটা সিরিজটাকে আরো জান্তব করে তুলেছে। বিশেষ করে That’s called Jazz বলার মুহূর্তে যে রক্তের দৃশ্যটা দেখানো হয় তার মত ক্রিপি দৃশ্য আমি কমই দেখেছি। এরকম অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়েছিল আরেক গ্রেট সাতোশি কনের এনিমে Paranoia Agent এর ওপেনিং ক্রেডিট দেখার সময়। চরম অস্বস্তিকর হওয়ার পরেও একবারও স্কিপ করতে পারি নি ওপেনিংটা।
২০১৯ সালের অনেকগুলো ভাল এনিমে দেখা বাকী পড়ে ছিল এতদিন, বিস্টার্স তার মধ্যে একটা। এখন আফসোস হচ্ছে আগে দেখে থাকলে টপচার্টে সাইকোলজিকাল পোলে একে ভোট দিতে পারতাম। বিস্টার্স নিঃসন্দেহে ম্যাচিউর ঘরানার এনিমে দর্শকদের জন্য বড় একটা উপহার। আবার নেটফ্লিক্সে সম্প্রচারিত হওয়ার কারণে অনেক নন-এনিমে দর্শকও এনিমের প্রতি ঝুঁকবে এর মাধ্যমে। সেকেন্ড সিজনের ঘোষণাও এসে গেছে শুনলাম। মাঙ্গাটা পড়বো কিনা ভাবছি। সিরিজের অ্যানিমেশনের স্টাইল নিয়ে মাঙ্গা ফ্যানদের বেশ কিছু আপত্তিও দেখলাম।
সবশেষে, ম্যাচিউরড ও কিঞ্চিৎ ডার্ক জিনিস পছন্দ করা দর্শকদের জন্য বিস্টার্স প্রচণ্ডভাবে রেকমান্ডেড। Furry জিনিস বলে একে এড়িয়ে যাবেন না।
জনরা: অ্যাকশন, ডার্ক ফ্যান্টাসি
১৬ বছরের অনাথ কিশোর দেনজি। সদ্য সে নিজের একটা কিডনি বারো লাখ ইয়েনে, একটি চোখ তিন লাখ ইয়েনে আর নিজের একটি অণ্ডকোষ বিক্রি করেছে এক লাখেরও কম ইয়েনে। গাছ কেটে সে কষ্টেসৃষ্টে আরো হাজার ষাটেক ইয়েন যোগাড় করেছে। তারপরেও ইয়াকুজার কাছে তার ঋণ শোধ করা বাকী আছে আরো তিন কোটি আশি লাখ চল্লিশ ইয়েনের মতো। অযোগ্য বাবা মরে গিয়ে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে গেছে এই ভার। প্রিয়জন বলতে তার আছে শুধু পোষা কুকুর পোচিতা যে আসলে একটা চেইন-স সদৃশ ডেভিল।
তো পোচিতাকে নিয়ে ঋণ শোধের জন্য ডেভিল হান্ট করে দেনজি। জীবনের সব মৌলিক চাহিদা থেকে বলতে গেলে বঞ্চিতই দেনজি। স্কুলে যায় নি সে কখনো, থাকে একটা নড়বড়ে ঘরে, যা পায় তাই খায়। বুক ভরে তার স্বপ্ন একটা সুন্দর জীবনযাপন করার, হয়তোবা সুন্দরী কোন এক মেয়ের সঙ্গও পাওয়ার আশা করে দেনজি।
বিন্দু বিন্দু শিশির দিয়ে দীঘি পূর্ণ করার আশা রাখা দেনজিকে একদিন তার ইয়াকুজা বস ডেকে নেয় বিশেষ কাজে। এক পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যাওয়া দেনজিকে ডেভিল হান্ট করার জন্য। সেখানে ইয়াকুজার সাঙ্গপাঙ্গরা পোচিতাসহ তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ময়লার ড্রামে ভরে রাখে। আসলে ইয়াকুজারা সবাই এক ম্যানিপুলেটিং ডেভিলের আদেশ মানছিল এতক্ষণ। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়া দেনজি অবচেতন মনে পোষা কুকুর পোচিতার সাথে চুক্তি করে, সে নিজের পুরো দেহ দান করবে পোচিতাকে বিনিময়ে পোচিতা তাকে দেবে স্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণের সুযোগ।
লাইফ লাইন পেয়ে দেনজি আবির্ভূত হয় চেইন-স ম্যান হিসেবে। চেইন-সর নির্মম আঘাতে সে কেটে টুকরো টুকরো করে ডেভিল আর তার চেলাপেলাদের। সরকারি ডেভিল হান্টাররা ঘটনাস্থলে এসে রক্ত-মাংসের স্তুপের মাঝে দেনজিকে আবিষ্কার করে। উচ্চতর অফিসার মাকিমার নজরে পড়ে যায় দেনজি আর মাকিমা তাকে সরকারি ডেভিল হান্টারদের দলে যোগদানের প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে তিনবেলা খাবার আর একটা শোয়ার জায়গার প্রস্তাব পেয়ে খুশীমনে রাজি হয়ে যায় দেনজি।
তো চেইন-স ম্যানের কাহিনী শুরু এখানেই। মাঙ্গাটা ২০১৯ সাল থেকে উইকলি শোউনেন জাম্পে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত বের হয়েছে ৭২ চ্যাপ্টার। বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে এর মাঝে। Mangaplus এ টপ টেনে থাকে প্রতি সপ্তাহেই।
চেইন-স ম্যান মাঙ্গাটার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সম্ভবত এর আন-অর্থোডক্স অ্যাপ্রোচ। মাঙ্গাটা আসলেই শোউনেন জাম্পে কিভাবে এত ভালভাবে ছাপানো হচ্ছে সেটা আসলে চিন্তার বিষয়। জাম্পে সাধারণত এত ব্রুটাল আর grotesque আর্টের মাঙ্গা সহজে দেখা যায় না। শোউনেন হিসেবে ধরলে এর স্টোরি, ক্যারেকটার ডিজাইন, আর্টস্টাইল আর সংলাপ সবই অত্যন্ত প্রথাবিরোধী। পুরো মাঙ্গাটাতেই গোছানো জিনিস খুঁজে পেলাম না তেমন, সবকিছুই প্রচণ্ড রকমের অগোছালো। যেন কেউ চেইন-স দিয়েই এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছে মাঙ্গাটাকে আগাগোড়া।
চেইন-স ম্যানের ক্যারেকটারগুলো চরম ব্যতিক্রম। শোউনেন মাঙ্গার নিয়মিত বৈশিষ্ট্য যে বন্ধুত্বের জয়গান তার ছিটেফোঁটাও নেই ক্যারেকটারগুলোর মাঝে। ক্যারেকটারগুলো এমন একটা দুনিয়ায় বসবাস করে যেখানে যেকোন মুহূর্তে জীবন চলে যেতে পারে ডেভিলের হাতে। তার প্রভাবে ক্যারেকটারগুলো হয়ে উঠেছে প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রীক, নিষ্ঠুর আর বাস্তববাদী। দিনে এনে দিনে খেতে খেতে ক্যারেকটারগুলো মানুষ মানুষের জন্য এই প্রবাদটা যেন সবাই ভুলেই গেছে। আর মাঙ্গাকাও যেন এই জিনিসটা লুকানোর কোন চেষ্টাই করেন নি। পাবলিক ডেভিল হান্টাররা বেশিরভাগই জনগণের সেবার জন্য কাজে যোগ দেয় নি। বেশীরভাগই ডেভিলদের হাতে কোন না কোনভাবে ক্ষতির স্বীকার তাই প্রতিশোধস্পৃহাই তাদের কাজে লেগে থাকার মোটিভেশন। হিরোইজমের ছিটেফোঁটাও নেই তাদের মাঝে। মানুষও তাদের অত মহান কিছু মনে করে না। এই বৈশিষ্ট্যটা মাঙ্গাটার ডার্ক ফ্যান্টাসি হওয়ার পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে যে জিনিসটা Shueisha এর অন্য দুই মাঙ্গা হিরো অ্যাকাডেমিয়া আর ওয়ান পাঞ্চ ম্যান সযত্নে পরিহার করেছে। ক্যারেকটারগুলো মারাও যায় ধুপধাপ, এমনকি টেরও পাওয়া যায় না কখন কে মারা গেল। বেঁচে থাকা মানুষগুলোও মারা যাওয়া মানুষগুলো নিয়ে অত চিন্তিত না। বিশাল একটা ম্যাসাকারের মাধ্যমে বড় একটা পেইজ শেষ হয়ে গেলে দেখা যায় পরের পেইজেই সবাই দৈনন্দিন জীবনযাপন করছে, যেন সবকিছু সয়ে গেছে তাদের। এই জায়গাটাতে মাঙ্গাকা তাতসুকি ফুজিমোতোকে রীতিমত ‘uncensored’ বলবো আমি।
মাঙ্গার শ্রেষ্ঠ দিক নিঃসন্দেহে এর brutal, gritty, grotesque আর্টস্টাইল। কালো কালির অত্যধিক ব্যবহারের কারণে প্যানেলগুলো আরো ভয়াবহ রকমের ভায়োলেন্ট হয়ে উঠে। বিশেষ করে কিছুটা মানুষের মত দেখতে (হিউমনয়েড) ডেভিলগুলার আর্টগুলো সবচেয়ে ভয়াবহ। দেনজির প্রতিটা ট্রান্সফরমেশন গায়ে কাঁটা দেয়। এনিমে আসবে নিঃসন্দেহে তবে এই gory পরিবেশটা কিভাবে স্টুডিও ধরে রাখবে সেটা একটা দেখার মত বিষয়। অ্যাকশন প্যানেলগুলো সব দুর্দান্ত আর প্রচণ্ড ফাস্ট-পেসড। ইউসুকে মুরাতার আঁকার সাথে মিল পাওয়া যায়, তবে মুরাতার মত অত ডিটেইলড না। ক্যারেকটারগুলোর ভয়ার্ত, আতংকিত আর নিষ্ঠুর ভাবলেশহীন চাহনি মাঙ্গাটাতে হরর এলিমেন্টের আমদানী করেছে সুন্দরভাবে।
তারমানে মাঙ্গাতে কমেডি নেই এমন না। দেনজির জীবন-দর্শনটাই একটা বিশাল কমেডি। বিশেষ করে ভয়ংকর ভয়ংকর কাজ করার পেছনে তার হাস্যকর স্বার্থসিদ্ধিগুলো সবচেয়ে মজার। বিস্তারিত বলে পাঠকদের মজা নষ্ট করতে চাচ্ছি না এখানে। তবে বেশীরভাগ কমেডিগুলাই কেমন জানি অস্বস্তিকর। এচ্চি কিছু ম্যাটেরিয়াল দেয়া হয়েছে তবে সেগুলাও সস্তা বিনোদনের যোগান দেয় না। বিন্দুমাত্র কামভাব জাগায় নি এচ্চি সিচুয়েশনগুলা। বরং বয়ঃসন্ধিকালের অস্বস্তিকর মানসিক টানাপোড়েন উঠে এসেছে আকু নো হানার মতো। পাওয়ার আর দেনজির এক বাথটাবে শুয়ে সময় পার করার দৃশ্যটা ভিন্ন এক অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। এই সাইকোলজিকাল দিকগুলো মাঙ্গাটাকে বেশ মৌলিক করে তুলেছে আমার মতে। শোউনেন জাম্পের পাতায় এমন জিনিস দেখতে পাবো ভাবি নি।
সব মিলিয়ে বিধ্বংসী এক অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে আমাকে চেইন-স ম্যান আমাকে। দুইদিনেই পড়ে ফেলেছি সবগুলা চ্যাপ্টার। আস্তে আস্তে ওয়ার্ল্ড-বিল্ডিংও হচ্ছে মাঙ্গাটাতে। গান ডেভিলই সম্ভবত সিরিজের মেইন ভিলেন, দারুণ একটা মিথ গড়ে উঠেছে তাকে ঘিরে। সবাই কেন চেইন-সর হার্ট শিকার করতে চাইছে তাও একটা দারুণ সাসপেন্স জন্ম দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথাবিরোধী এই মাঙ্গার সাফল্য কামনা করছি, আশা করি জাম্পের টপ ফাইভে উঠে আসবে সামনে। (যেহেতু Kimetsu no yaiba শেষ ও The Promised Neverland শেষের দিকে)
I want to know what ‘I love you’ means.– Violet Evergarden.
ইচ্ছেপূরণ বা wish-fulfillment একটা ইতিবাচক জিনিস হিসেবেই বিবেচিত আমাদের কাছে। দিনশেষে সবকিছু ভালভাবে মিটে গেলেই আমরা খুশী, মিটে না গেলেও সবকিছু মিটে যাওয়ার সুখস্বপ্ন নিয়ে থাকতে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু লেবু বেশী চিপলে যেমন তিতে হয়ে যায় তেমনি অতিরিক্ত উইশ-ফুলফিলমেন্ট বাস্তবতাকে ততোধিক বিকৃত করে ফেলে। এনিমে ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় আকারের কাজ এই দোষে দুষ্ট। তারপরেও এনিমে ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরণের গল্পের চাহিদা প্রচুর। প্রথমেই সমালোচনা করছি মানে এ নয় যে আমি এ ঘরানার গল্প নিতান্তই অপছন্দ করি। Clannad এই বৈশিষ্ট্যের পরাকাষ্ঠা হওয়ার পরেও আমার সেরা দশ এনিমের তালিকায় অনায়াসে জায়গা করে নেয়।
তবে Ride Your Wave নিয়ে শুরুতেই কেন আমার এত নেতিবাচক ভূমিকা! দোষটা আসলে সরাসরি এনিমে মুভিটার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যায় না। দোষ দিলে দিতে হবে আমার এক্সপেক্টেশনকে! মাসায়াকি ইউয়াসা আর Science Saru এর কাছ থেকে আমার প্রত্যাশা বরাবরই প্রবল থাকে। ইউয়াসার কাজকে ক্ষুদ্র পরিসরে মাপা দুরূহ কাজ। সংক্ষেপে বলতে গেলে তার কাজের ব্রিলিয়ান্সটা লুকিয়ে আছে অদ্ভুতুড়ে জিনিস উপহার দেয়ার মধ্যে। জাদুবাস্তবতাও তার কাজের আরেকটা বড় উপাদান। এহেন ইউয়াসা যখন দু-বছর পরে (The Night is Short, Walk on Girl এর মুক্তির পর) এমন generic একটা মুভি বানিয়ে ফেলেন তখন নেতিবাচক পোস্ট দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
Ride Your Wave মুভিটা যাবতীয় জেনেরিক দোষে দুষ্ট। ঘটনাক্রমে নায়ক-নায়িকার দেখা হয়ে গেল, তারপর তারা কিছু সময় কাটানোর পর কাছাকাছি হওয়া শুরু করলো, একে-অপরের অনুপ্রেরণা হিসেবে আবির্ভূত হল; এরকম কয়েকটা কমন থিম নিয়েই মুভির শুরুটা। তাও প্রথম ত্রিশ মিনিট আমি মুভিটাকে কিছুটা মাফ করে দিতাম কারণ নায়ক-নায়িকার মিষ্টি মিষ্টি সময় কাটানোটা ভালই লাগছিল। চরম ইউটোপিয়ান একটা পরিবেশে তখন দুজনে বাঁধা পড়ে, বল্গাহীন ভাবে তারা জীবনকে যৌবনের নিরীখে উপভোগ করছিল। একটা ভাল দিক ছিলো, মিনাতো আর হিনাকো দুজনেই ছিল হাইস্কুল পেরোনো মানুষ, তাই তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ছিল সাধারণ এনিমের চেয়ে বেশী সাহসী। এখানে উইশ-ফুলফিলমেন্ট থেরাপি কাজ করছিল আমার উপর। দৈনন্দিন জীবনের যাঁতাকলে নিত্য পিষ্ট আমার কাছে দুই তরুণ-তরুণীর আগলছাড়া রোমান্টিসিজম ভাল লাগবে অবশ্যই।
ভাল না লাগার মাত্রাটা বাড়ে যখন গল্পের তাগিদে মিনাতো মারা যায়। মৃত্যূটা বীরোচিত ছিল তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় কোন গভীরতা বহন করছিল না। ২০১৮ সালে বের হওয়া I wanna eat your pancreas মুভিতেও একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি। এরপরেও ভেবেছিলাম মুভিটা সম্ভবত প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনার উপর আলোকপাত করবে হিনাকোর দৃষ্টিকোণ থেকে। তাও হলো না! আকাশ থেকে আনা হলো সুপারন্যাচারাল ম্যাটেরিয়াল, আমাকে পুরো বোকা বানিয়ে মুভিটা দেখালো যে পানির মধ্যে মিনাতোর অস্তিত্ব নিতান্ত হিনাকোর হ্যালুসিনেশন নয় বরং বাস্তব! তারপর আবার ‘দেখা পেয়েও ছোঁয়া হলো না’ ঘরানার জেনেরিক জিনিসের আমদানী। অথচ বোকা আমি Shape of Water এর গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করছিলাম তখন ফিল্মে! (অট্টহাসির আওয়াজ হবে)
শেষমেষ ফিল্মটা আমাকে শতভাগ বেকুব আর হতাশ বানিয়ে হিনাকোর সিঙ্গেল থাকা দেখিয়ে শেষ হলো।
তারমানে এমন না যে মুভিটাতে ভাল কোন উপাদান নেই। অ্যানিমেশন মনকাড়া, সার্ফিংয়ের জায়গাগুলা অপূর্ব। ইউয়াসার ট্রেডমার্ক ফ্লুইড অ্যানিমেশন আছে জায়গায় জায়গায়। ক্যারেকটার ডিজাইন সুন্দর, রোমান্টিক জায়গাগুলোতে হিনাকো আর মিনাতোকে খুবই সুন্দর লাগছিল। কিন্তু ঐযে style over substance বলে একটা কথা আছে না, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই মুভিটা। আর ওএসটির কথা বলতে গেলে আরেক নাটকের অবতারণা করতে হয়! পুরো মুভিতে একটা মাত্র গান বারবার ব্যবহার করা হয়েছে যে জিনিসটা আমার কাছে পরে বিষপানের মত মনে হচ্ছিল। এমন বলবো না যে Generations from Exile Tribe এর গাওয়া ‘Brand New Story’ গানটা খারাপ, বরংচ বেশ ভাল একটা গানই এটা নিজ জনরার মনে করি। তবে বারবার একই গান ব্যবহার করাটা খুব বাজে লাগছিল, কেন একই গ্রুপকে দিয়েই আরো দু-তিনটা গান গাইয়ে মুভিতে ব্যবহার করা হলো না তা এখনও বোধগম্য হলো না। এই প্রথমবারের মত ইউয়াসা আমাকে পুরোপুরি হতাশ করতে সমর্থ হলেন!
সারাংশ:
সাধারণ মুভি হিসেবে উপভোগ্য
মাসায়াকি ইউয়াসা মুভি হিসেবে চরম হতাশাজনক