Only Yesterday (Omoide Poroporo)
পরিচালক: ইসাও তাকাহাতা
প্রযোজনা: স্টুডিও জিব্লি
অনেকেই হয়তবা ইতিমধ্যে শুনেছেন যে স্টুডিও জিব্লির সহ-নির্মাতা এবং গ্রেভ অফ দা ফায়ারফ্লাইস, টেইল অফ দা প্রিন্সেস কাগুয়া খ্যাত পরিচালক ইসাও তাকাহাতা আমাদের মধ্যে আর নেই। বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক। তার মৃত্যুতে তাকে শ্রদ্ধা করে আমি তার করা ছবিগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবিটাকে নিয়ে কথা বলতে চাই।
“আমাদের শৈশবকাল আমাদের স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হইয়া গেলেও,
শৈশবকালের স্মৃতি হইতে আমরা বিস্মৃত হই নাই”
কোনো এক কালে স্কুলে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোনো এক গল্পে যেন পড়েছিলাম এই জিনিসটা।আমাদের জীবনের পথে যত দিন আমরা পার করি ততই আমরা অতীতের দিনগুলোকে ভুলে যাই।ছোটবেলার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা আমরা ত্যাগ করি বড় হবার এই জীবনের বাস্তবতার জন্যে।
স্টুডিও জিব্লির বেশির ভাগ ছবিগুলোর মতো এখানে কোনো কাল্পনিক কিংবা অতিপ্রাকৃত কিছু নেই এই ছবিতে। তায়েকো অকাজিমা ২৭ বছর বয়সী একজন সিঙ্গেল চাকরিজীবী যে শহরে সবার মতোই সাদামাটা একটি জীবন বসবাস করছে। ছবিটা শুরু হয় সে তার বোনের জামাইয়ের গ্রামে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে এমন একটি সময় থেকে। তার নিজের কোনো কাছের আত্মীয় গ্রামে থাকে না বলে তাকে তার বোনের জামাইয়ের গ্রামে যেতে হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে এতটুকুই গল্পের মূল কাহিনী। বাকি পুরোটা সময় আমরা তায়েকোর সাথে তার স্মৃতিচারণা এবং তার অভিজ্ঞতার একজন যাত্রী হিসেবেই কাটাই।
“আমি আশা করি নি যে আমার পঞ্চম শ্রেণীর আমিকেও আমি এই যাত্রায় নিয়ে যাবো” এভাবেই তায়েকো পুরো যাত্রাজুড়েই নিজের পঞ্চম শ্রেণীর শৈশবেই হারিয়ে যায়। কিছু স্মৃতি মিষ্টির মতো মধুর হলে কিছু স্মৃতি আবার বিজড়িত করে এমন।জীবনের প্রথম পিরিয়ড হওয়া থেকে শুরু করে তার জীবনের প্রথম পছন্দ হওয়া সবকিছুই যেন তার মনে পড়তে শুরু করে। তখন তায়েকোই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে এটা কেন হচ্ছে। হয়তবা শৈশবের তায়েকো এই ব্যস্ত শহুরে চাকরিজীবী তায়েকোকে জীবন উপভোগ করার নতুন উপায় শিখাচ্ছে।
ছবিটিতেই কোনো বড় কোনো দৃষ্টি আকর্ষণীয় কিছু নেই। ছবিটা এর হৃদয়ে একটি মেয়ের স্মৃতিচারণা এবং বাঁচতে শিখা নিয়েই তৈরি। নেই কোনো প্রেম কিংবা ধরণের প্যাঁচ বরঞ্চ ছবিটা আমাদের জীবনের একটি বাস্তব এবং মিষ্টি প্রতিচ্ছবি। ছবিটা দেখে অসম্ভব নিজের শৈশবকালে হারিয়ে না যাওয়া। দেখতে দেখতে কখন যে আপনি আপনার নিজের জীবনের শৈশবে ফিরে যাবেন তা টেরই পাবেন না।
ছবিটার একটি চমৎকার দিক হচ্ছে এর স্মৃতিচারণার দৃশ্যগুলো। আপনি খেয়াল করে দেখেন যে ১০-১৫ বছর আগের কথা আপনি মনে করতে গেলে আপনি কতটুকুই বা মনে করতে পারবেন।কেবল নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা কিন্তু আপনি যখন ওই স্মৃতির আশে পাশের জিনিসগুলো মনে করবার চেষ্টা করবেন তখন দেখবেন যে জিনিসগুলো স্মৃতির সাথে সাথেই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ইসাও তাকাহাতা টার বিচক্ষন পরিচালনার মাধ্যমে অসম্ভব রকমের সৌন্দর্যের সাথে ফুটিয়ে তুলেছে।ছবির মিউজিকাল স্কোর আমার জীবনের শোনা সবচেয়ে প্রশান্তপূর্ণ স্কোর। প্রতিটি গান আপনাকে আপনার শহুরে বাস্তব জীবন থেকে শিথিল করবে। মুভিটার শেষ গানটি আমি আজও বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে শুনি।আমার অসম্ভব রকমের প্রিয় একটি গান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইংরেজি ডাব নাকি অরিজিনাল জাপানিজ ভাষারটা দেখবো? ব্যাক্তিগতভাবে অামি জাপানিজটা দেখতে বলবো কারণ ডাবের রেন্ডারিং একটু সমস্যা অাছে যদিও ডেইসি রিড্লের কন্ঠ অভিনয় জাপানিজ মিকি ইমাই থেকে ভালো হয়েছে।
আমি কোনো চলচিত্রবোদ্ধা কিংবা বিশ্লেষক নই কিন্তু আমি বলবো যে Only Yesterday আমার জীবনের দেখা সেরা চলচিত্রগুলোর মধ্যে একটি।আশা করি না দেখে থাকলে ছবিটি দেখে নিবেন।ছবি শেষে আপনার ঠোঁটে মুচকি একটি হাসি ফোটাতে ছবিটি ব্যর্থ হবে না বলেই আমি আশা করি।