Movie: The Wind Rises: Background Discussion!
আকাশ ছোঁয়ার প্রয়াস দুর্ধর্ষ, ভয়ংকর সুন্দর; ডানা মেলে দিয়ে বিস্তীর্ণ শুন্যপথে উড়ে বেড়ানোর প্রত্যাশা অলৌকিকতা আর লৌকিকতার মাঝে মেলবন্ধন জুড়ে দেওয়া একটা অতি আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। কিন্তু ঝড়ো হাওয়ায় যদি মুহূর্তে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় ডানাগুলো, তখন ফরাসি সাহিত্যিক পল ভেলারির মত বলতে হয়ঃ ‘The wind is rising! We must try to live on’.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানিজ ইমপেরিয়াল নেভি আকাশযুদ্ধে শুভ সূচনা করেছিল, সৃষ্টি করেছিল ত্রাস, বোমারু বিমান দিয়ে নয়, দূর্দান্ত কিছু ক্যারিয়ার ফাইটার প্লেন দিয়ে। জাপানিজ পাইলটরা এই অভিনব ডিজাইনের প্লেনের নাম দিয়েছিল ‘রেইসান’ (জিরো ফাইটার)। Maneuverability আর লং-রেঞ্জ এর কম্বিনেশনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে পুরো বিশ্বের সেরা ফাইটার হিসাবে নাম ছড়িয়ে পড়েছিল এই জিরো ফাইটারের, একে ডগফাইটের (বিমান-বিমান যুদ্ধ, ১৯৭০-৮০ পর্যন্ত অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার ছিল একটা) লিজেন্ড হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। তবে ধীরে ধীরে ইউরোপ-আমেরিকা আরো উন্নত এবং ভয়ংকর ফাইটার প্ল্যান বানিয়ে ফেলে যুদ্ধ শেষের আগেই। যাইহোক, এই প্লেন বানিয়েছিল মিটসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ, আর মূল উদ্ভাবক ছিলেন লিজেন্ডারি জাপানিজ এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জিরো হোরিকোশি। তার জীবন নিয়েই কিংবদন্তী নির্মাতা হায়াও মিয়াজাকি নির্মাণ করেন তার স্বঘোষিত শেষ চলচ্চিত্র এনিমেশন মুভি, ‘দ্যা উইন্ড রাইজেস’।
তবে এক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হলো মুভিতে জিরো’র জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে অনেক কাল্পনিক প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে। কয়েকটা বিরাট পার্থক্যের কথা বলতে গেলে, বাস্তবের জিরো কিন্তু ছোটবেলা থেকে এয়ারক্রাফট নিয়ে ফেসিনেটেড ছিলেন এমন কোন নজির নেই, মূলতঃ তিনি ভার্সিটি পড়ুয়া অবস্থায় তার বড় ভাইয়ের এক এরোনটিক্স প্রফেসর বন্ধুর সংস্পর্শে এসে অনুপ্রাণিত হন এই ব্যাপারে। হুম বড় ভাই কিন্তু, তার কোন ছোট বোন ছিল না। তিনি ইউরোপীয় এয়ারক্রাফট ম্যাগাজিনের পোকা ছিলেন সত্য; কিন্তু তার সাক্ষাৎকার, আত্মজীবনী কিংবা অন্য কোনখানে ইতালীয়ান এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার জিওভান্নি ক্যাপ্রোনির উল্লেখ ছিল না, ছিল না ম্যাকারেল বোনের কীর্তি! আর সবথেকে বড় কথা, মুভির মূল হিরোইনের বাস্তব অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারপর, বাস্তব জীবনে অন্যান্য জিনিয়াসের মতই জিরোও ছিলেন কিছুটা সমাজবিমুখ, কিন্তু হ্যাঁ, তিনি কখনোই চাননি তার উদ্ভাবন মানুষ মারার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হোক।(যদিও এ ব্যাপারে অনেক কিছু বলার আছে, এখানে বলতে চাই না)। ১৯২৩ এর ভয়ানক ভূমিকম্পের যে দৃশ্যটা আছে সেটা মুভির সবথেকে আবেগ-জাগানীয়া দৃশ্য সম্ভবত, কিন্তু জিরো নিজে এই ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এমনটাও কোথাও রেফারেন্স নেই।
মুভিতে জিওভান্নির উল্লেখের পিছনে কাজ করেছে মিয়াজাকির নিজস্ব ফ্যাসিনেশন, বিমানের প্রতি, বিশেষ করে ইটালীয়ান এয়ারক্রাফটের প্রতি (যেমনঃ Porco Rosso)। ‘Ghibli’ নামটাও এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাহারার স্কাউটিং প্লেনগুলোর ইটালীয়ান নাম থেকে। আর বড় ভাইয়ের জায়গায় ছোটবোন দেবার কারণও বোধহয় নির্মাতার ব্যক্তিগত দর্শনের সাথে সম্পর্কিত। তার অনেক মুভিতেই থাকে শক্তিশালী নারী চরিত্র (প্রিন্সেস মনোনকে, স্পিরিটেড এওয়ে), এক্ষেত্রে এর একটা প্রভাব থাকতে পারে। (যদিও এই চরিত্র অতটা প্রভাবশালী নয়)
মিয়াজাকির নিজস্ব ইনোভেশনের পাশাপাশি এই মুভিতে রয়েছে ‘হরি তাতসুও’ নির্মিত ‘দ্যা উইন্ড হ্যাজ রাইজেন’ শীর্ষক উপন্যাসের প্রভাব। মিয়াজাকি নিজেও এক টিভি শোতে বলেছেন ‘নাওয়াকো’ চরিত্রটি উক্ত উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সেটসুকোর আলোকে তৈরীর কথা। আরো একটা ব্যাপার হলো এই নোবেলে ব্যবহৃত মেটাফোর ‘A mackerel sky’ থেকে হয়ত মুভিতে জিরোর মেকারিল পছন্দের ব্যপারটাও এসেছে।
যাইহোক, মুভিটা কালজয়ী নির্মাতা হায়াও মিয়াজাকির সম্ভবত সর্বশেষ উপহার; অনেক ইন্সপায়ারিং, অনেক ইন্টারেস্টিং একটি সৃষ্টি। সবার জন্য ‘অবশ্যই দেখা উচিত’ ক্যাটেগরীতে থাকবে নিশ্চিতভাবে।