শিকড়ের সন্ধানেঃ পর্ব ৬

SS 6

Movie: The Wind Rises: Background Discussion!

আকাশ ছোঁয়ার প্রয়াস দুর্ধর্ষ, ভয়ংকর সুন্দর; ডানা মেলে দিয়ে বিস্তীর্ণ শুন্যপথে উড়ে বেড়ানোর প্রত্যাশা অলৌকিকতা আর লৌকিকতার মাঝে মেলবন্ধন জুড়ে দেওয়া একটা অতি আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। কিন্তু ঝড়ো হাওয়ায় যদি মুহূর্তে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় ডানাগুলো, তখন ফরাসি সাহিত্যিক পল ভেলারির মত বলতে হয়ঃ ‘The wind is rising! We must try to live on’.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানিজ ইমপেরিয়াল নেভি আকাশযুদ্ধে শুভ সূচনা করেছিল, সৃষ্টি করেছিল ত্রাস, বোমারু বিমান দিয়ে নয়, দূর্দান্ত কিছু ক্যারিয়ার ফাইটার প্লেন দিয়ে। জাপানিজ পাইলটরা এই অভিনব ডিজাইনের প্লেনের নাম দিয়েছিল ‘রেইসান’ (জিরো ফাইটার)। Maneuverability আর লং-রেঞ্জ এর কম্বিনেশনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে পুরো বিশ্বের সেরা ফাইটার হিসাবে নাম ছড়িয়ে পড়েছিল এই জিরো ফাইটারের, একে ডগফাইটের (বিমান-বিমান যুদ্ধ, ১৯৭০-৮০ পর্যন্ত অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার ছিল একটা) লিজেন্ড হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। তবে ধীরে ধীরে ইউরোপ-আমেরিকা আরো উন্নত এবং ভয়ংকর ফাইটার প্ল্যান বানিয়ে ফেলে যুদ্ধ শেষের আগেই। যাইহোক, এই প্লেন বানিয়েছিল মিটসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ, আর মূল উদ্ভাবক ছিলেন লিজেন্ডারি জাপানিজ এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জিরো হোরিকোশি। তার জীবন নিয়েই কিংবদন্তী নির্মাতা হায়াও মিয়াজাকি নির্মাণ করেন তার স্বঘোষিত শেষ চলচ্চিত্র এনিমেশন মুভি, ‘দ্যা উইন্ড রাইজেস’।

তবে এক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হলো মুভিতে জিরো’র জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে অনেক কাল্পনিক প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে। কয়েকটা বিরাট পার্থক্যের কথা বলতে গেলে, বাস্তবের জিরো কিন্তু ছোটবেলা থেকে এয়ারক্রাফট নিয়ে ফেসিনেটেড ছিলেন এমন কোন নজির নেই, মূলতঃ তিনি ভার্সিটি পড়ুয়া অবস্থায় তার বড় ভাইয়ের এক এরোনটিক্স প্রফেসর বন্ধুর সংস্পর্শে এসে অনুপ্রাণিত হন এই ব্যাপারে। হুম বড় ভাই কিন্তু, তার কোন ছোট বোন ছিল না। তিনি ইউরোপীয় এয়ারক্রাফট ম্যাগাজিনের পোকা ছিলেন সত্য; কিন্তু তার সাক্ষাৎকার, আত্মজীবনী কিংবা অন্য কোনখানে ইতালীয়ান এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার জিওভান্নি ক্যাপ্রোনির উল্লেখ ছিল না, ছিল না ম্যাকারেল বোনের কীর্তি! আর সবথেকে বড় কথা, মুভির মূল হিরোইনের বাস্তব অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারপর, বাস্তব জীবনে অন্যান্য জিনিয়াসের মতই জিরোও ছিলেন কিছুটা সমাজবিমুখ, কিন্তু হ্যাঁ, তিনি কখনোই চাননি তার উদ্ভাবন মানুষ মারার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হোক।(যদিও এ ব্যাপারে অনেক কিছু বলার আছে, এখানে বলতে চাই না)। ১৯২৩ এর ভয়ানক ভূমিকম্পের যে দৃশ্যটা আছে সেটা মুভির সবথেকে আবেগ-জাগানীয়া দৃশ্য সম্ভবত, কিন্তু জিরো নিজে এই ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এমনটাও কোথাও রেফারেন্স নেই।
মুভিতে জিওভান্নির উল্লেখের পিছনে কাজ করেছে মিয়াজাকির নিজস্ব ফ্যাসিনেশন, বিমানের প্রতি, বিশেষ করে ইটালীয়ান এয়ারক্রাফটের প্রতি (যেমনঃ Porco Rosso)। ‘Ghibli’ নামটাও এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাহারার স্কাউটিং প্লেনগুলোর ইটালীয়ান নাম থেকে। আর বড় ভাইয়ের জায়গায় ছোটবোন দেবার কারণও বোধহয় নির্মাতার ব্যক্তিগত দর্শনের সাথে সম্পর্কিত। তার অনেক মুভিতেই থাকে শক্তিশালী নারী চরিত্র (প্রিন্সেস মনোনকে, স্পিরিটেড এওয়ে), এক্ষেত্রে এর একটা প্রভাব থাকতে পারে। (যদিও এই চরিত্র অতটা প্রভাবশালী নয়)

মিয়াজাকির নিজস্ব ইনোভেশনের পাশাপাশি এই মুভিতে রয়েছে ‘হরি তাতসুও’ নির্মিত ‘দ্যা উইন্ড হ্যাজ রাইজেন’ শীর্ষক উপন্যাসের প্রভাব। মিয়াজাকি নিজেও এক টিভি শোতে বলেছেন ‘নাওয়াকো’ চরিত্রটি উক্ত উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সেটসুকোর আলোকে তৈরীর কথা। আরো একটা ব্যাপার হলো এই নোবেলে ব্যবহৃত মেটাফোর ‘A mackerel sky’ থেকে হয়ত মুভিতে জিরোর মেকারিল পছন্দের ব্যপারটাও এসেছে।
যাইহোক, মুভিটা কালজয়ী নির্মাতা হায়াও মিয়াজাকির সম্ভবত সর্বশেষ উপহার; অনেক ইন্সপায়ারিং, অনেক ইন্টারেস্টিং একটি সৃষ্টি। সবার জন্য ‘অবশ্যই দেখা উচিত’ ক্যাটেগরীতে থাকবে নিশ্চিতভাবে।

শিকড়ের সন্ধানেঃ পর্ব ৫

আজকের নাতিদীর্ঘ এপিসোডে আলোচিত হচ্ছে ফেইট স্টে নাইট আর ফেইট জিরোর হলি গ্রেইল আর সেবার, গিলগামেশ আর বার্সার্কারের ঐতিহাসিক ও মিথিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড।

(কনটেন্ট কারটেসিঃ বিখ্যাত এনিমখোর ফারসিম আহমেদ।)

আলোচিত এনিমেঃ ফেইট জিরো, ফেইট স্টে নাইট, আনলিমিটেড ব্লেইড ওয়ার্কস, কার্নিভাল ফ্যান্টাজম (প্যারোডি)

হলি গ্রেইলঃ 

হলি গ্রেইল আসলে কি সেটা নিয়ে অনেক ধরণের মত রয়েছে, কারো মতে এটা হলো পাত্র, কাপ যা দিয়ে যিশু কোন কিছু পান করতেন, আবার কারো মতে এ হলো সেই পাত্র যাতে সেইন্ট পিটার যিশুর রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন। গ্রেইলের তাৎপর্য আর ক্ষমতা নিয়েও মতভেদ রয়েছে, ধারণা করা হয় এটি যেকোন রোগ নিরাময় করতে পারে, আবার যে কাউকে অমরত্ব দিতে পারে, আবার কোন এক লিজেন্ড অনুযায়ী হলি গ্রেইল যার কাছে থাকবে তার কোন অমঙ্গল সম্ভব নয়, খ্রিষ্টপর প্রথম শতক থেকেই গ্রেইল হান্টিং খ্রিষ্টান কমিউনিটির কাছে খুব জনপ্রিয় একটা ব্যাপার, কিং আর্থার আর তার বিখ্যাত নাইটরাও অংশ নিয়েছিল গ্রেইল কোয়েস্টে, অংশ নিয়েছিল ১২-১৩ শতকের দিকে হঠাৎ করে প্রভাবশালী হয়ে উঠা নাইট টেম্পলাররা।

কিছু মুভি যেখানে হলি গ্রেইলকে ফিচার করা হয়েছেঃ

দ্যা কোয়েস্ট অব দ্যা হলি গ্রেইল (১৯১৫)

মন্টি পাইথন এন্ড দ্যা হলি গ্রেইল, কমেডি মুভি (১৯৭৫)

এক্সক্যালিবার (১৯৮১)

সেইবার/ কিং আর্থার 

ফেইট স্টে নাইট- ফেইট জিরো এনিমের বিপুল আলোচিত সেবার, চোখ ঝলসানো রুপবতী দুর্ধর্ষ এই যোদ্ধার পাস্ট লিংকেজ হিসাবে এসেছে আর্থার, ‘দ্যা ওয়ান্স এন্ড ফিউচার’ কিং অব ইংল্যান্ড। ব্রিটোনিয়ান হিস্ট্রিতে প্রায় ৬০০ শতকে কিং আর্থারের লিজেন্ড পাওয়া যায়। অর্ধেক রোমান, অর্ধেক ব্রিটিশ রক্তের অধিকারী আর্থার রোমান সাম্রাজ্য পরবর্তী ব্রিটেনকে রক্ষা করেন স্যাক্সন আগ্রাসন থেকে। আর্থার আর তার দুঃসাহসী নাইটদের বীরত্ব, সাহসিকতা, মহানুভবতার গল্প ছড়িয়ে আছে ব্রিটেনের অলিগলিতে।

আর্থার আর বিখ্যাত তরবারী এক্স-ক্যালিবার (যা কোন আঘাতেই ভাঙ্গে না) মোটামুটি সর্বজনবিদিত, কিং আর্থার তার জ্ঞানী উপদেষ্টা (কোন বর্ণনায় ম্যাজিশিয়ান) মার্লিনের পরামর্শে রহস্যময় লেকে খুঁজে পান এই এক্স-ক্যালিবার, আর এর স্ক্যাবার্ড যেকোন আঘাতের বিরুদ্ধে শিল্ড হিসাবে কাজ করতে পারে। আর্থার সর্বমোট ১২টি যুদ্ধ জয়ে নেতৃত্ব দেন ব্রিটেনকে। তার সবচেয়ে ট্রাস্টেড নাইট ল্যান্সিলট আর আত্মীয় মরড্রেডের বিদ্রোহ দমনে গুরুতর আহত আর্থার, তখন তাকে একটি ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, তারপর আর কেউ তার খোঁজ পায় নি, কেউ বলে তিনি মারা গেছেন, আর কেউ বলে আর্থার এখনো জীবিত, ব্রিটেনের ভবিষ্যত কোন দূর্যোগে আবার ফিরে আসবেন তিনি ব্রিটেনকে জয়ের পথ দেখাতে, তাই তাকে বলা হয় ওয়ান্স এন্ড ফরেভার কিং

কিন্ত ফিরে আসার সময় যে তিনি সেবারের মত পরমাসুন্দরী রুপে আসবেন সেটা কিন্তু কোথাও বলা হয় নি !!

কিং আর্থার নিয়ে কিছু মুভিঃ

এক্সক্যালিবার (১৯৮১)

কিং আর্থার (২০০৪)- খুব ভালো, দেখা উচিত…

কেমেলট (টিভি সিরিজ, ২০১০)

লিজেন্ড অব কিং আর্থার (টিভি সিরিজ ১৯৭৯)

সিজ অব দ্যা সেক্সন্স (১৯৬৩)

দ্যা লাস্ট লিজিয়ন (২০০৭)

বার্সারকার/ হারকিউলিসঃ 

সম্ভবত আমাদের সবাই কমবেশি শুনেছি হারকিউলিসের নাম, মিথ, নাটক, মুভি, সিরিয়াল, গেইম বিভিন্নক্ষেত্রে অতি জনপ্রিয় শক্তিমত্তা আর বীরত্বের প্রতীক এই গ্রিক ডেমিগডকে তুলে আনা হয়েছে ফেইট স্টে নাইটের বার্সারকাররুপে…

হারকিউলিস মূলত গ্রীক ডেমিগড হেরাক্লসের রোমান নাম, কুইন অব আরগসের গর্ভে জন্ম নেওয়া দেবতাপুরী অলিম্পাসের অধিপতি বজ্রদেব জিউসের সর্বশেষ মনুষ্য সন্তান, অপ্রতিদ্বন্দ্বী শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত। হারকিউলিসের সর্বপ্রথম লিজেন্ড ছিল সম্ভবত কুখ্যাত মানুষখেকো নেমিয়ান লায়নকে খালি হাতে দমন করা, এছাড়াও হারকিউলিসের আছে বিখ্যাত ১২ লেবার (১২ টি কোয়েস্ট) যার মধ্যে অন্যতম হলো বহুমাথাওয়াল দানব হাইড্রা আর ভয়ংকর মিনাটর নিধন।

বার্সারকার চরিত্রে যেভাবে দেখানো হয়েছে হারকিউলিস তেমনই মাথামোটা, বদরাগী ছিল, তার বেশিরভাগ দুর্ভোগের কারণ তার বদমেজাজ আর বুদ্ধিশুদ্ধির অভাব, তবে বন্ধুবাৎসল আর মহানুভব হিসাবেও তার পরিচিতি রয়েছে। হারকিউলিস একমাত্র ডেমিগড যে মৃত্যুর পর পূর্ণ দেবতার স্থানে অধিষ্ঠিত হয়।

হারকিউলিসের কিছু মুভি ও টিভি সিরিজঃ 

হারকিউলিস ইউনিভার্সাল টেলিভিশন মুভিস (৫ টা মুভি, ১৯৯৪)

হারকিউলিস (১৯৯৭)

লিজেন্ড অব হারকিউলিস (২০১৪)

দ্যা লিজেন্ডারি জার্নিস অব হারকিউলিস (টিভি সিরিজ, ১৯৯৮)

ইয়াং হারকিউলিস (টিভি সিরিজ, ৯৮-৯৯)

গিলগামেশ/দ্যা কিং অব হিরোসঃ 

গিলগামেশ, ফেইট সিরিজের অন্যতম প্রভাবশালী চরিত্র কিন্তু সরাসরি গ্রীক-এশিয়ান মিথ থেকে এসেছে, খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে রাজত্ব করা উরুকের (ব্যবিলন, বর্তমান ইরাক-দামেস্ক-সিরিয়া) রাজা। কথিত আছে, গিলগামেশ পুরো পৃথিবী জুড়ে তার রাজত্বকে সম্প্রসারিত করতে পেরেছিল, ইসলামী হিস্ট্রিতে একই টাইমলাইনে এরকম এক অত্যাচারী পুরো পৃথিবীর রাজা বখত-নসরের (কিংবা নমরুদ) উল্লেখ পাওয়া যায় যার সাথে খুব মিলে যায় এই গিলগামেশের।

গিলগামেশ আসুরিক শক্তির অধিকারী, তীব্র অহংকারী ও অত্যাচারী রাজা ছিল, তার অত্যাচারের নমুনা বলতে গেলেঃ উরুকের সমস্ত তরুণদের ধরে এনে বাধ্যতামূলক অসহ্য কায়িক পরিশ্রম করাত সে, আর তরুণীদের বিয়ের রাতে তার সাথে থাকতে হত, দেব-দেবীদের ও মানত না সে। দেবতারা তাকে শায়েস্তা করার জন্য পাঠান বনমানুষ এনকিদোকে, কিন্তু প্রচন্ড যুদ্ধের পর এনকিদো গিলগামেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়, দু’জনে মিলে তারা বেরিয়ে পড়ে ভয়ংকর সব এডভেঞ্চারে, এর মধ্যে রয়েছে বুল অব হেভেন আর বনের অপদেবতা শামাস দমন।

ঘটনাক্রমে এনকিদো মারা গেলে গিলগামেশ শোকে অভিভূত হয়ে পরে, সে সমস্ত রাজত্ব-অহংকার-সৈন্যসামন্ত ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে জীবনের অর্থ অন্বেষণে আর অমরত্বের খোঁজে (এইখানে আবার আরেক পৃথিবীবিজয়ী সিকান্দার জুলকারনাইনের সাথে মিল রয়েছে), কিন্তু দীর্ঘ সাধনার পরও অমরত্বের সন্ধানে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ১২৬ বছর রাজত্ব করার পর মারা যায় গিলগামেশ।

সমসাময়িক সমস্ত বীরদের চাইতে বেশি শক্তিশালী ছিল গিলগামেশ, আর সব ধনীর ধন এক করলেও তার সমান হত না, তাই তাকে বলা হয় কিং অব হিরোজ…।

 

‘শিকড়ের সন্ধানে’ পর্ব ৪

নিপ্পনের সৃষ্টি আর সমকালীন আরো কিছু মিথঃ

নারুতো শিপ্পুডেন যারা দেখেছি প্রায় শেষ পর্যন্ত তারা মাঙ্গেকিউ শারিঙ্গনের শক্তিশালী জুতসু ইজানামি-ইজানাগি-সুসা’নো-সুকিওনোমি সম্পর্কে মোটামুটি জানি। কিশিমোতো সেন্সে এই নামগুলো নিয়েছেন সরাসরি জাপানিজ মিথলজি থেকে…

কোজিকিঃ

জাপানিজ মিথলজির সবচেয়ে পুরাতন দলিল হলো ‘কোজিকি’, বিভিন্ন মিথ কবিতা আর গানের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে এতে, ৫০০-৭০০ সালের দিকে এর সংকলনকাল। (অনেকটা বাংলা সাহিত্যের চর্যাপদের মতই, ৮ম-৯ম শতকের কবিতাসমগ্র, সর্বমোট সাড়ে ৪৬ টি কবিতা, মূল বিষয়ঃ মিথলজি)

তো এই ‘কোজিকি’ র প্রথম অংশ কামিও নো মাকি (দ্যা এইজ অব গডস) অনুযায়ী একদম শুরুতে ছিল ছিল ৫ জন ডেইটি, যারা সম্ভবত হিভেন আর ইউনিভার্স ক্রিয়েশনের সাথে জড়িত কিন্তু পরবর্তীতে এদের কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না, এরা কোতোআমাতসুকামি (Distinguished heavenly gods) নামে পরিচিত। এদের পরপরি আসে সাত জেনারেশন কামি, যাদের সর্বশেষ জেনারেশন হলো দেবতাযুগল ইজানামি (গডেস অব ক্রিয়েশন) আর ইজানাগি (গড অব ক্রিয়েশন)।

ইজানাগি-ইজানামিঃ

কিশিমোতো সেন্সের প্রচন্ড শক্তিশালী এই অকুলার জুতসু যুগল জাপানিজ মিথে হলো জাপানের প্রধান আটটি দ্বীপের স্রষ্টা দেব-দেবী যুগল, প্রথমে ইজানাগি তার বিখ্যাত নাগিনাতা (একধরণের বর্শাসদৃশ ব্লেইড) সাগরের থেকে তুলে আনেন দ্বীপগুলো আর পরবর্তীতে এদের মিলন থেকে জন্ম নেয় আওয়াজি, আইইয়ো(শিকোকু), উকি, শুকুসি (কিউশু), ইকি, শুশিমা, সাদো আর ইয়ামাতো (হোনশু) দ্বীপগুলো। এদের থেকেই জন্ম নেয় বিভিন্ন দেব-দেবী, জাপানের এনসেস্টর- এম্পেরররা যাদের বংশধর, এ দৃষ্টিকোণ থেকে এদেরকে কতকটা আদম-হাওয়ার মতই ধরা যায়।

(Note: Izanami and Izanagi is also mentioned in the anime ‘Darker than Black’ and kind of goes with the myth too.)

আমাতেরাসু-সুকিওনোমি-সুসানোঃ 

মাঙ্গেকিউ শারিঙ্গনের পাওয়ারফুল জুতসু আমাতেরাসু প্রথম দেখানো হয় নারুতোতে ইতাচি আর জিরাইয়ার এনকাউন্টারে। আর সুসানো সর্বপ্রথম দেখানো হয় ওরোচিমারোর কার্সড সিলপ্রাপ্ত সাস্কের সাথে ইতাচির লড়াইয়ের সময়ে। জাপানিজ মিথ অনুসারে ইজানাগির বাম চোখ থেকে জন্মগ্রহণ করে সূর্য দেবতা আমাতেরাসু (দেখতে পারেন গ্রিক দেবতা এপোলা, মিল আছে) আর ডান চোখ থেকে জন্ম নেয় চন্দ্রদেবতা সুকিওনোমি (গ্রিক দেবী আরতেমিস)। আর সুসানো (পোসাইডনের মত কিছুটা) হল ধ্বংস, ঝড় আর সাগরের দেবতা, সে জন্ম নেয় ইজানাগির নাক থেকে।

ইতাচি আর সাস্কের ফাইটে সাস্কের কার্স সিল থেকে জন্ম নিয়েছিল আট মাথাওয়ালা এক বিরাট সরীসৃপ, মনে আছে তো? এটা হলো সার্পেন্ট ডিমন অরোচি (মূলতঃ একটা ড্রাগন), আর মিথে সুসানো তার তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেলেছিল এই ডিমনের মাথা, ঠিক যেমন ইতাচির সুসানো কাটে এনিমেতে। অরোচির লেজ থেকে সুসানো খুঁজে পায় বিখ্যাত তরবারি ‘কুসানাগি’

 

জন্ম-মৃত্যুঃ

গডেস ইজানামি ফায়ার গড কুরোতসুচিকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়, আর ইজানাগি তাকে ফিরিয়ে আনতে যায় ইয়োমি বা আন্ডারওয়ার্ল্ডে। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইজানাগি দেখে ইজানামি অলরেডি ইয়োমির অশুভ প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সে পালিয়ে চলে আসে। ইজানামি তার পিছু ধাওয়া করে তাকে কার্স দেয় যে, প্রতিদিন সে জাপানের ১০০০ বাসিন্দার মৃত্যু ঘটাবে, ইজানাগি পালটা জবাব দেয় যে সে ১৫০০ জনের জন্মের কারণ সৃষ্টি করবে। এভাবেই এই ইজানাগি-ইজানামি হলো জন্ম-মৃত্যু, শুভ-অশুভেরও দেব-দেবী যুগল।

‘শিকড়ের সন্ধানে’- পর্ব ৩

[ষড়মাত্রার ঋষি (দ্যা সেইজ অব দ্যা সিক্স পাথ)]


বিভিন্ন এনিমেতে বহুল ব্যবহৃত একটা টার্ম, বিশেষত নারুতো’র সবকিছুই কোন না কোনভাবে এই সেইজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। রকুদো সেন্নিনের ছয়রাস্তার (ঠিক ছয় রাস্তা না, ছয় ডিমেনশন) বর্ণনা জাপানিজ মিথলজিতে যতটা না আছে তারচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বুদ্ধধর্মের মূলকথায়।

বুদ্ধ ধর্মে মোট দশটি প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের কথা বলা হয়, একে ডাইমেনশন হিসাবেই চিন্তা করা যায়, মানুষ অতীতের কাজের উপর নির্ভর করে পরজন্মে এর যেকোনটায় যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে এই দশটি পাথ আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই বিরাজমান, কারণ বুদ্ধদের বিশ্বাস সষ্ট্রা আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই রয়েছেন। এই দশপাথের মধ্যে প্রথম ছয়টি হলো নিম্নস্তরের, এগুলোই সিক্স পাথ নামে পরিচিত, আর বাকি চারটা হলো উচ্চস্তরের, দ্যা ফোর নোবেল ওয়ার্ল্ড…

সিক্স পাথঃ
১) জিগুকোদো- হেল- সবচেয়ে খারাপ আর নিচের পাথ, এর বৈশিষ্ট্য হলো নারকীয় অত্যাচার আর কল্পনাতীত অশুভ…
২) গাকিদো- ক্ষুধার্ত অতৃপ্ত আত্মাদের ডিমেনশন
৩) চিকোশোদো- এনিম্যাল ওয়ার্ল্ড- অজ্ঞতা আর দাসত্বের প্রতিনিধিত্ব করে
৪) আসুরাদো- অসুর, ডিমন কিংবা অপদেবতার ওয়ার্ল্ড- ক্রোধ, হিংসা, যুদ্ধের প্রতিভু
৫) নিনদো- হিউম্যান ওয়ার্ল্ড- এদের মাঝে ভালো খারাপ দুটিই আছে, হাতের কাছে প্রজ্ঞার দরজা পেয়েও স্বার্থের তাগিদে অন্ধ হয়ে থাকে এরা…
৬) তেনদো- দেব-দেবীর পাথ- যদিও এরা আনন্দ আর মহানুভবতার মধ্যে বাস করে, ক্ষমতার আতিশয্য এদের অন্ধ করে দেয়, তাই এরাও সিক্স পাথের সর্বোচ্চ স্তরপর্যন্তই আছে…

ফোর নোবেল ওয়ার্ল্ড হলোঃ
১) জ্ঞানার্জন (Learning)
২) আত্ম উপলব্ধি ( Self Realization)
৩) বোধিসত্ত্বা (Altruism)
৪) বুদ্ধা (Supreme Happiness)
ফোর নোবেল ওয়ার্ল্ডে তারাই যেতে পারে যারা যাবতীয় ক্ষুধা, লালসা, ঘৃণা, হিংসা, ক্রোধ, আনন্দের উর্ধ্বে, এরা মূলতঃ বিভিন্ন শ্রেণীর মঙ্ক বা সেইজ। আমাদের আলোচিত সেইজ অব দ্যা সিক্স পাথ এমনই একজন সেইজ, তার সাথে যে আগায় রিং লাগানো লাঠি থাকে তাকে বলা হয় ‘সাকুজো’ (sounding stuff), মঙ্ক স্টাফ, প্রধানত প্রার্থনার কাজে ব্যবহার করা এই দন্ডের অনেক ধরণের ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন রিচুয়ালে ব্যবহার করা হতো, আর জাপানিজ মঙ্করা সাকুজো ব্যবহার করত আত্মরক্ষা ও যেকোন ফাইটিং এ।

সাকুজো মূলতঃ তিন ধরণের হয়ে থাকেঃ
১) চার রিং এর- ফোর নোবেল ট্রুথ বুঝায় (দুঃখ, দুঃখের কারণ, পরিত্রান, পরিত্রানের রাস্তা)- সাধারনত নবিশ মঙ্করা এধরণের সাকুজো ব্যবহার করে…
২) ছয় রিং -সিক্স পাথ বুঝায়- বোধিসত্ত্বারা ব্যবহার করে…
৩) ১২ রিং- বুদ্ধা ব্যবহার করে
তাহলে ব্যবহৃত সাকুজোর টাইপের উপর ভিত্তি করে বলা যায় নারুতোর রকুদো সেনিন বোধিসত্ত্বার অধিকারী একজন বোদ্ধ সন্নাসী।


‘শিকড়ের সন্ধানে’- পর্ব ২

“দ্যা ওয়ে অব নিনজা (অন্ধকারের রহস্যময় গুপ্তঘাতক)”

এনিমে বিশ্বে কম বেশি যাওয়া-আসা আছে কিন্তু নারুতো সম্পর্কে জানে না এমন কেউ নেই, তাই নিনজা কিংবা শিনোবি শব্দটিও আমাদের অতি পরিচিত। সাধারণ ধারণাটা হয়ত এরকম, নিনজারা আনসাং হিরো, সুপারহিউম্যান ক্ষমতার অধিকারী, লোকচক্ষুর আড়ালে-আবডালে নানারকম মিশন সফল করে সাপোর্ট দিয়ে চলেছে সমাজকে, নিজের জীবন বিপন্ন করছে দেশকে রক্ষার জন্য, কতকটা আজকের সিআইএ কিংবা অন্য স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চগুলোর মত। একবিংশ শতাব্দীর স্পাই, শেডি ডিটেকটিভ, স্পেশাল এজেন্টদের পূর্বপুরুষ এই নিনজাদের জীবনধারা কেমন ছিল, কিভাবে সূচনা হলো নিনজুৎসুর, জাপানের ইতিহাসে তাদের ভূমিকা কি ছিল?

শিনোবি শব্দের অর্থ অনেকটা ‘নিস্তব্ধে ছিনিয়ে নেওয়া’ যা নিনজাদের কাজকর্মের অনেকটাই ধারণা দিয়ে দেয়। জাপানে নিনজাদের উৎপত্তি হয় ফিউডাল এইজে, মোটামুটি ১২-১৫ শতকের দিকে, তবে তকুগাওয়া এরায় (১৬০০-১৮৬৮) এদের দূর্দান্ত প্রতাপ দেখায় যায়। নিনজাদের জীবনধারা ছিল মূলতঃ সামুরাইদের ঠিক বিপরীত, সামুরাইরা যেমন সুস্পষ্ট কোড বুশিডো মেনে সম্মানের সাথে জীবনযাপন করত আর যুদ্ধক্ষেত্রে সামনের সারিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত, নিনজাদের নির্দিষ্ট কোন সিস্টেম ছিল না, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যেকোন ধরণের অসদুপায়-নিকৃষ্ট কাজ করতে তাদের বিবেকে বাধত না, বেসিকেলি তাদের বিবেক বলতেই কিছু ছিল না। তারা ছিল ভাড়াটে যোদ্ধা, অর্থের জন্য যে কারো সাথে বেইমানি কিংবা যে কারো পক্ষে কাজ করতে তাদের কিচ্ছু যায় আসত না। এ কারণে মূলতঃ এসাসিনেশন, স্যাবোটাজ, স্পাইয়িং এদের মূল কাজ ছিল। তৎকালীন শাসকদের জন্য কম কষ্টে, বিনা অযুহাতে প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রুকে নীরবে ধ্বংস করার এমন মাধ্যম খুব আকর্ষণীয় ছিল, তাই নিনজারা হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় আর প্রভাবশালী।

শুরুতে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু করলেও ১৪ শতকের দিকে নিনজারা ধীরে ধীরে সঙ্গবদ্ধ হতে শুরু করে, ফলে ধীরে ধীরে সূচনা হয় বিখ্যাত নিনজা ক্ল্যান ইগা আর কোগা ক্ল্যানের, অন্য নিনজাদের সাথে এদের অনেক পার্থক্য ছিল, এরা ছিল ডেডলি, শক্তিশালী প্রফেশনাল নিনজা, ১৪৮০ থেকে ১৫৮০ সালের দিকে ফিউডাল লর্ডদের মাঝে বিভিন্ন কাজে এদের চাহিদা ছিল অত্যন্ত বেশি, মূলতঃ গুপ্তহত্যা আর এসপিওনাজের জন্য। কিন্তু এমন গুপ্তহত্যার চেষ্টাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়, বিখ্যাত সামুরাই লর্ড নবুনাগাকে হত্যার চেষ্টা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে নবুনাগা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেন।

মেজি রেস্টোরেশনের আগে টোকিও র অলি গলিতে রাজত্ব করা আরেক নিনজা ক্ল্যান ওনিওয়াবান গ্রুপ, এরা কিন্তু সরাসরি অষ্টম শোগান তকুগাওয়া ইউসিমুনের বানানো ইতিহাসের প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সিক্রেট সার্ভিস ও ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, এদের মূল দায়িত্ব ছিল ফিউডাল লর্ড ও গবমেন্ট অফিসিয়ালদের উপর কড়া নজর রাখা, মেজি এরায় ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে নিনজাদের দৌরাত্ম্য, একসময় নিনজা হয়ে উঠে আঞ্চলিক লিজেন্ড আর মিথের সংমিশ্রন সৃষ্ট রহস্যময় লোকগাঁথা।

নিনজাদের রহস্যময় সুপারহিউম্যান টেকনিক আর স্কিল সম্পর্কে প্রচলিত আছে অনেক গুজব আর উপকথা, বলা হয় তারা অদৃশ্য হতে পারত, নিজের রেপ্লিকা তৈরী করতে পারত, বিভিন্ন প্রাণি কিংবা অন্য মানুষের বেশ নিতে পারত, নিয়ন্ত্রণ করতে পারত আগুন, পানি, বাতাস। তবে এসবকিছুর কোন সুনির্ধারিত দলিল নেই। সে যাইহোক, নিনজারা ‘নিনজুৎসু’ (দ্যা আর্ট অব স্টিলথ) নামক বিশেষ মার্শালআর্ট চর্চা করত, কঠোর সাধনার মাধ্যমে তারা এমন সব করতে পারত যা পারতপক্ষেই সাধারণের চিন্তার অনেক উর্ধ্বে। এই নিনজুতসু মূলতঃ জাপানের রহস্যে ঢাকা ধর্ম ‘শিন্তো’, বুদ্ধ সেইজআর্ট আর চাইনিজ মার্শালআর্ট থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
নিনজা ওয়ারফেয়ারঃ টেকনিক, ছদ্মবেশ, অস্ত্র-শস্ত্র সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী আর তাক লাগানো, বেশিরভাগ নিনজা ট্যাকনিক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের নিনজা স্ক্রল থেকে, কয়েকটা বেশ মজারঃ

১) গার্ডকে বিভ্রান্ত করতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া- কাতন নো জুতসু, ফায়ার টেকনিক!
২) গাছে উঠে ক্যামোফ্লেজ নেওয়া, মুকতোন নো জুতসু, উড টেকনিক!
৩) আগাছা কিংবা লতাপাতা দিয়ে ঢেকে পানির নিচ দিয়ে চলাচল করা, সুইতন নো জুতসু, তারা মিজুগোমো নামক গাছের জুতো ব্যবহার করত পানির উপর দিয়ে হাটার জন্য!
৪) বলের মত গুটি মেড়ে নিশ্চল বসে থাকা, স্টোন টেকনিক…!
কি নারুতোর সাথে তেমন অমিল নেই, তাই না ?!

ছদ্মবেশ নিনজা ওয়ারফেয়ারের মূলবৈশিষ্ট্য, কখনো মঙ্ক, এন্টারটেইনার, কখনো রনিন কিংবা ভ্যাগাভন্ড, কিংবা কখনো ভবিষ্যত বক্তা হিসাবে নিনজারা তথ্য সংগ্রহ করে বেড়াত, আজকের দিনের জেন্ডার বেন্ডিং কসপ্লে কিন্তু খুব জনপ্রিয় ছিল নিনজাদের মাঝে। নিনজা ওয়ার টেকনিকগুলো খুব স্পেশাল ছিলঃ
১) এরা দলবদ্ধভাবে কাজ করত, পাসোয়ার্ড মেইনটেইন করত ২) প্রতিপক্ষ সৈন্যদের পোশাক পরে তাদের দলে ভিড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত ৩) এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে পিছুহঠবার প্রয়োজনে নিজের দলের উপর চড়াও হত তারা, এই টেকনিক বিভিন্ন গৃহযুদ্ধ-বিদ্রোহ দমনেও ব্যবহার করা হয়।

নিনজাদের লাইফস্টাইল-ফাইটিং, টেকনিক আর ভিশন সম্পর্কে আরো জানতে দ্রুত দেখে নিতে পারেন কয়েকটা টেক্সটের সামারি, বিখ্যাত ‘জিরাইয়া গোকেতসু মনোগাতারি’ যার থেকে নারুতোর কাহিনী এসেছে কতকটা, ফুওতারো ইমাদা’র “দ্যা কোগা নিনজা স্ক্রল”, “দ্যা আর্ট অব ওয়ার”…

## এনিমেঃ নিনজাদের ফিচার করা এনিমের সংখ্যা কম হলেও মোটামুটি অনেক এনিমেতেই নিনজা ওয়ারিয়রদের দেখানো হয়েছে বিভিন্ন স্টাইলের ফাইটিং আর টেকনিক সহ।
১- নারুতো/নারুতো শিপ্পুডেনঃ তেমন কোন হিস্টোরিক্যাল বেস না থাকায় এটা দেখলে নিনজাদের সম্পর্কে সত্যিকারের ধারণা পাবার সম্ভাবনা কম, তবে তাদের লাইফস্টাইল, হাতিয়ার আর ওয়ারফেয়ার সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা পাওয়া যাবে কিছুটা, আর এনিমেটা নিয়ে বলার তেমন কিছুই নেই, একজন এনিমখোরের বিরাট একটা অপূর্ণতা থেকে যাবে এটা না দেখলে, আমার পারসোনাল মোস্ট ফেভারিট, রেটিং- সাড়ে ৯/১০।
২- বাসিলিস্কঃ এই এনিমেতে ইগা আর কোগা ক্ল্যানের ইন্টারনাল ক্ল্যাশ দেখানো হয়েছে, নিনজাদের শক্তিমত্তা, ডিসেপশন, বিশ্বাসঘাতকতা, অনর্দ্বন্দ্ব আর ভয়াবহতা কিছুটা রিয়ালিস্টিকভাবে তুলে আনা হয়েছে এত, কিছুটা ভায়োলেন্স আর নুডিডিটি আছে, রেটিং সাড়ে ৭/১০
৩- নিনজা স্ক্রলঃ এক মারসেনারি নিনজার কাহিনী, একটা এনিমে আর একটা মুভি আছে, কিছুটা ভিন্নতা আছে কাহিনীতে। এনিমে রেটিং- ৭
৪- রুরোনি খেনশিনঃ ওনিওয়াবান নিনজা গ্রুপের কাহিনী চলে এসেছে এতে।
৫- কাতানাগাতারিঃ মানাবা নিনজা গ্রুপ
এছাড়া বিভিন্ন এনিমেতে অনেক ক্যারেক্টার আছে যারা নিনজা স্টাইল ধারণ করেছে, যেমনঃ ইউরোইচি, সইফন- ব্লিচ; শিগুরে-কেনিচি; ব্ল্যাক স্টার,সুবুকি- সোল ইটার; আয়ামে-গিনতামা, Sarutobi- Samurai Deeper Kyou …

এছাড়া আছে ‘Teenage Mutant Ninja Turtle’- অস্থির একটা কার্টুন, আর আছে ‘নিনজা হাত্তরি কুন’ (দেখলেই বুঝবেন কি জিনিস!)

#‪#‎নিনজাদের‬ নিয়ে কিছু মুভিঃ
১) নিনজা এসাসিন
২) আমেরিকান নিনজা সিরিজ
৩) জি আই জো

 

 

 

 

‘শিকড়ের সন্ধানে’- পর্ব ১: প্রসঙ্গঃ সামুরাই কোড, বুশিডোঃ দ্যা সোল অব জাপান

 

জাপানের সামরিক ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ‘সামুরাই’ শব্দটি, এর মূল অর্থ (those who serve), সামুরাইদের উদ্ভব হয়েছিল ফিউডাল এইজে (প্রায় ৭০০ বছর ধরে এই যুগ চলেছে জাপানে, কামাকুরা থেকে শোগনেট, মেজির আগ পর্যন্ত…), মূলতঃ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বডিগার্ড হিসাবে, কিন্তু ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, কর আদায়, বিদ্রোহ দমন ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পরে সামুরাইদের কাজের পরিধি, ধীরে ধীরে সামুরাই হয়ে উঠে জাপানের সামরিক শক্তির প্রতীক আর মূলশক্তি।

সামুরাইদের মূল ব্যাপার তাদের শক্তিমত্তায় নয়, বরং তাদের ব্যতিক্রমধর্মী লাইফস্টাইল আর বিশ্বাসে, সামুরাইদের সম্পূর্ণ নিজস্ব জীবনধারা আছে, যা ওয়ারিয়র কোড কিংবা ‘বুশিডো’ নামে পরিচিত, যাদের আগ্রহ আছে দেখে নিতে পারেন নিতোবে ইনাযোর ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার “বুশিডোঃ দ্যা সোল অব জাপান” বইটি।

এই বুশিডোর মূলতঃ আটটি ভার্চু আছেঃ
১-রেকটিচিউডঃ এটা হলো বুশিডোর মেরুদন্ড, এর উপর বাকিসবগুলো ভার্চু ডিপেন্ডেন্ট, সামুরাইদের কাছে এর অর্থ হলো খুব সহজ, ‘the power to decide upon a course of conduct in accordance with reason’, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারার দৃঢ়তা…
২-কারেজঃ কারেজ আর ব্রেভারির মধ্যে পার্থক্য আছে, কারেজ হলো সঠিক কাজ করতে পারার সাহস।
৩- বেনেভোলেন্স-মার্সিঃ নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতাশীল ব্যক্তির যে ব্যাপারটি থাকা খুব জরুরী সেটা হলো সবাইকে সমানভাবে কমপেশন আর দয়া দেখাতে পারা, কনফুসিয়াসের মতে এটা হলো একজন শাসকের সর্বোচ্চ রিকোয়ারমেন্ট।
৪-পোলাইটনেস- চাটুকারিতা আর বিনয়ের মধ্যে বিরাট কিন্তু পার্থক্য আছে, সামুরাই চরিত্রের অন্যতম স্তম্ভ হলো পোলাইটনেস।
৫-অনারঃ সামুরাই নিজের বিশ্বাস ও ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সম্মান রক্ষার্থে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে সবসময় প্রস্তুত, তার কাছে জীবনের চাইতে মানের দাম বেশি।
৬- লয়ালিটিঃ সামুরাই সুপারিয়র ও জাতির প্রতি প্রতিমুহূর্তে শ্রদ্ধাশীল আর বিশ্বস্ত, কোন অবস্থাতেই সে বিট্রে না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
৭- অনেস্টি-সিন্সিয়ারিটি…
৮-ক্যারেক্টার- সেলফ কনট্রোল…
সামুরাইদের এই ৮টি কোড পুরো বিশ্বের সকল যোদ্ধাদের জন্য একটা আদর্শের মত, তবে ঠিকভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় এ শুধু যোদ্ধাদের নয় সর্বস্তরের মানুষের জন্য আদর্শ হতে পারে। সামুরাই শুধু সৈন্যদের নাম নয়, একটা বড় সোশাল ক্লাস।

যাইহোক, বুশিডোর যেকোন লঙ্ঘনের জন্য সামুরাইদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, আর সেটা হলো ‘সেপ্পুকো’, কখনো ‘হারিকিরি, যেটা হলো নিজের সোর্ড দিয়ে পেট কেটে আত্মহত্যা করা সবার সামনে… (দেখতে পারেন Carl Rinch এর মুভি ‘৪৭ রনিন)..

 

## কিছু এনিমে যেখানে সামুরাইদের লাইফ কমবেশি ফিচার করা হয়েছেঃ

১ রুরোনি খেনশিন (সামুরাই এক্স)- এই বিখ্যাত এনিমে ত কমবেশি সবাই দেখেছেন, শোগনেট যুগের এক কুখ্যাত ম্যানস্লেয়ারের স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসার চেষ্টা, যুদ্ধ আর মৃত্যুর দুঃস্বপ্ন যেখানে তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়, মেজি যুগে সামুরাইদের জীবনধারা অনেকটাই ফুটে উঠেছে, অস্থির ক্লাসিক এনিমে, না দেখে থাকলে আজকেই শুরু করা উচিত, রেটিং- ৯/১০

২ সামুরাই চ্যাম্পলু- তকুগাওয়া পিরিয়ড (১৬০০-১৮৬০) এর অনেক ব্যাপার চলে আসছে, তবে মডার্ন রেফারেন্স বেশি, ঠিক উনিশ শতাব্দীর টিপিক্যাল কিছু নাহ, তবে এনিমে অনেক ভাল, অবশ্যই দেখার মত, রেটিং- ৮-সাড়ে ৮
৩ আফ্রো সামুরাই- রেটিং সাড়ে ৭-৮
৪ সেনগোকু বাসারা- ফিউডাল এরাকে ফিচার করা হয়েছে এ এনিমেতে, ১১৭০ এর দিকে কামাকুরা জাপান দখল করার পর বিভিন্ন অঞ্চলের ফিউডাল লর্ডরা অনেক ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে, তাদের প্রভাব বিস্তারে তৎপর হয়ে উঠে, বিখ্যাত সামুরাই লর্ড ওদা নবুনাগা আর দাতে মাসামুনের কাহিনী চলে এসেছে এই এনিমেতে, রেটিং- ৮
৫ গিনতামা- মূলতঃ প্যারোডিটাইপ এই এনিমেতে ঠিক জাপানিজ হিস্ট্রির আগামাথা না থাকলেও সামুরাইদের লাইফস্টাইল অনেকটাই ফিচার করেছে, ধরে নেওয়া যায় এদো পিরিয়ডের পর, ১৯-২০ শতকের জাপানে সামুরাইদের জীবনধারার একটা চিত্র এতে পাওয়া যাবে। আর এনিমে হিসাবে খুব বেশি ভালো, রেটিং- ৯/১০
৬ সামুরাই ৭- কুরোসাওয়া আকিরার বিখ্যাত মুভি সামুরাই সেভেনের দ্বারা কিছুটা প্রভাবান্বিত, সামুরাইদের সাথে মেকা-সাইফাই এর একটা মিক্সার, ভালই। রেটিং- ৮

## কয়েকটা মুভি যা সামুরাইদের জীবনধারা তুলে এনেছে সুন্দরভাবে-
১ দ্যা লাস্ট সামুরাই
২ সেভেন সামুরাই (১৯৫৪)
৩ ৪৭ রনিন, সেইম কন্সেপ্টে আরেকটা হলো ১৯৬২ এর চুশিনগুরা
৪ গোস্ট ডগঃ দ্যা ওয়ে অব দ্যা সামুরাই
৫ সামুরাই এসাসিন
৬ হিউম্যানিটি এন্ড পেপার ব্যালুন (১৯৩৭)
৭ হারিকিরি (১৯৬২)