কন আর্ট – স্বপ্ন, বিভ্রম আর চলচ্চিত্রের প্রতি প্রেমপত্র — Fahim Bin Selim

১৮ মে, ২০১০।

টোকিওর মুশাশিনো রেডক্রস হাসপাতালে সাতোশি কনের মৃত্যুপাঠ পড়ে শোনানো হল। সাথে ড্রিমিং মেশিন-এরও – স্ক্রিপ্ট আর ১৫০০ এর মধ্যে ৬০০ শট সম্পূর্ণ হওয়ার পরও – কারণ কাপ্তান কন তখন আর তার হাল ধরে থাকার মত অবস্থায় ছিলেন না – তাঁর দর্শন নিয়ে,  নির্দেশনাশৈলী নিয়ে – যে জাহাজ একমাত্র তিনিই সৈকতে ভেড়াতে পারতেন। তিনি যদিও আরও ৩ মাস বেঁচে থাকবেন, কখনো হাসপাতাল বিছানায়, কখনো নিজের বাসার; ক্যান্সারের আক্রমনে ক্রমাগত হার মানতে থাকা অগ্ন্যাশয় নিয়ে। একেবারে কাছের আত্নীয় আর সহকর্মী ব্যতীত বাকিদের কাছ থেকে এ খবর অজানা থাকবে একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত।

এই টোকিওর মুশাশিনো আর্ট ইউনিভার্সিটিতেই সাতোশি কনের হাতেখড়ি, গ্রাফিক ডিজাইনিং এর উপর। যদিও তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা হোক্কাইদোর সাপ্পোরোতে। ছোটবেলায় কনের সময় কাটতো ফিলিপ কে. ডিক(Blade Runner) আর ইয়াসুতাকা সুতসুই(The Girl Who Leapt Through Time, Paprika) এর সাই-ফাই উপন্যাস পড়ে, আর দেশী-বিদেশী চলচ্চিত্র দেখে – বিদেশীই বেশি। ১৯৭৪ সালে, কন খুঁজে পেলেন তাঁর পছন্দের দুইটি জিনিসের সংমিশ্রণ – সাইন্স ফিকশনের অবাধ্য কল্পনাশক্তি আর তার সাথে অ্যানিমেশনের চলচ্চৈত্রিক স্বাচ্ছন্দ্যতা, একই কাপে – স্পেস ব্যাটলশীপ ইয়ামাতোতে। সাতোশি কন অ্যানিমের প্রেমে পড়ে গেলেন।

 

অবশ্য তাঁর পেশাদারিত্বের শুরুটা হয়েছিলো মাঙ্গা দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই কনের প্রথম মাঙ্গা – Toriko(১৯৮৪) – কোদানশার তেৎসুয়া চিবা অ্যাওয়ার্ডে রানারআপের পুরস্কার পেয়ে গেল। সাথে তাঁর সুযোগ মিলল কাৎসুহিরো ওতোমোর(Akira, Patlabor, Memories) সহকারী হয়ে যাওয়ার। কন পরবর্তীতে শুধু মাঙ্গাতেই না, স্ক্রিপ্টরাইটার, অ্যানিমেশন ডিরেক্টর হিসেবে ওতোমোর বেশ কয়েকটি অ্যানিমে চলচ্চিত্রের কাজেও সহযোগী ছিলেন। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ১৯৯৫ এর তিনখন্ডের ওভিএ Memories-এর Magnetic Rose অংশ। কন তার প্রথম সিরিয়ালাইজড মাঙ্গা প্রকাশ করে্ন ১৯৯০ তে; Kaikisen – এর কাগজে কাগজে, সাদাকালোর কালির আঁচড়েও তার অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফির পরিচয় পাওয়া যাবে, যা পরবর্তীতে তার অ্যানিমে চলচ্চিত্রগুলোর অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে পরিচিতি পায়।

027 028

আর এর প্রথমটি ১৯৯৭ এর Perfect Blue। ইয়োশিকাজু তাকেউরার উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী এ চলচ্চিত্র প্রথমে হওয়ার কথা ছিলো লাইভ-অ্যাকশনে। পরে কনের হাতে দায়িত্ব পরে ম্যাডহাউজের হয়ে এর অ্যানিমেটেড ওভিএ তৈরি করার। কন দায়িত্ব নিলেন ঠিকই, কিন্তু কাহিনীর মূল অংশ – আইডল, স্টকার আর হ্যালুশিনেশন – কেবল ঠিক রেখে গল্পের পুরো কাঠামোই বদলে নিলেন নিজের মত। যাতে যোগ হল সেসময়কার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা পেতে থাকা ইন্টারনেট। নিজের প্রিয় Slaughterhouse-Five বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে  Perfect Blue-র গল্প কন বললেন অনেকটা অসংযুক্ত আখ্যানে। যেখানে সময় কেবল সরলরৈখিক না, আর এতে দেখানো ঘটনাও ধ্রুবসত্য না। তা ব্যক্তি আপেক্ষিক। কল্পনা, স্বপ্ন, অবচেতন – সবই ব্যক্তির সময়ের অংশ, বর্তমান-এর অংশ।  পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোতেও যা ঘুরেফিরে এসেছে।

ma

ওভিএ হিসেবে না, ম্যাডহাউজ Perfect Blue-কে মুক্তি দিলো প্রেক্ষাগৃহেই। প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই কন পেয়ে গেলেন দেশি-বিদেশি সমালোচকদের প্রশংসা, । Perfect Blue ডাক পেল বিভিন্ন দেশের ফিল্ম-ফেস্টিভ্যালগুলোয় – পেল তাৎক্ষনিক কাল্ট ক্লাসিকের মর্যাদা আর চিরদিনের জন্য কালজয়ী সব সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভিদের পাশে স্থান।

2

চলচ্চিত্র-প্রেমিক কনের প্রথম মুভিতেই তুলে আনলেন বিনোদন-জগতের অন্ধকার দিক। যদিও ঠিক সামাজিক-ভাষ্য প্রদান  বা সমালোচনা   কখনোই তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো না। Perfect Blue নিয়ে কনের চিন্তাভাবনা, আর মূলচরিত্র মি্মা কিরিগোয়ের পতন নিয়ে বরং সমান্তরাল টানা যায় । গল্পে মিমা সাধারন এক পপ-আইডল থেকে যতই বিনোদন জগতের উপরের তলায় আরোহণ করতে থাকে – মানসিক আর শারীরিক বিভিন্ন ত্যাগ সহ্য করে – ততই তার কাছে চেতন আর অবচেতনের বিভেদ ভাঙ্গতে শুরু করে। তার আকাংক্ষিত স্বপ্নালোক বিভীষিকায় রুপ নেয়।

আমি যখন Perfect Blue এর কাজ শুরু করি তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল ইতিবাচক কিছু বানানো। কিন্তু আমি যতই সামনে আগাতে থাকলাম, ততই  গল্পটা আরো নেতিবাচক হয়ে যাচ্ছিলো, আর গম্ভীর হয়ে যাচ্ছিলো। একদিক দিয়ে এটা নিয়ে আমি বেশ অসন্তুষ্ট ছিলাম। [১]

 

চলচ্চিত্রের প্রতি কনের ভালোবাসার প্রকাশ তার অন্য মুভিগুলোতেও বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে(Tokyo Godfathers একমাত্র ব্যতীক্রম)। Paprika(2005)-‘র স্বপ্ন আর বাস্তবতা একাকার হওয়ার গল্পে নায়ক কানোকাওয়া পেশায় গোয়েন্দা হলেও, ছিলো ফিল্মস্কুলের ছাত্র। তাই তো তার ঘুমের মাঝে হানা দেয় যৌবনের অপূর্ণ বাসনা – নিজেকে সে আবিষ্কার করে তার প্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর নায়কের ভূমিকায় – কখনো Tarzan-এ, From Russia With Love-এ, অথবা Roman Holiday-তে; কখনো বা আবার পরিচালক হওয়ার প্রচেষ্টায় ব্যার্থ কানোকাওয়া নিজেকে কল্পনা করে স্ব্য়ং আকিরা কুরোসাওয়ার জায়গায়!paprika5

তবে চলচ্চিত্রের প্রতি কনের অকৃত্রিম ভালোবাসার সবচেয়ে বড় নিদর্শন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, তার সবচেয়ে সমালোচক-প্রশংসিত-ও, ২০০১ সালের Millennium Actress।

 

Perfect Blue নিয়ে কনের যে অসন্তুষ্টি ছিলো, তা দূর করার উদ্দেশ্যেই Millennium Actress-এর আগমন। এ দুটো মুভিকে যেন এক জোড়া, একই মুদ্রার দুই পিঠ। সাতোশি কন ফিরিয়ে আনলেন তার পুরোনো সেই মূল থিম – আইডল  আর অ্যাডমায়ারার-এর গল্প – কিন্তু এবার সম্পর্কটা অবশেসন এর না, বরং প্রকৃত ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার। কনের  আকাংক্ষিত ইতিবাচক এক ছবি।

আমি যখন প্রযোজকের সাথে Millennium Actress এর কাজ হাতে নিলাম, তখনই আমার লক্ষ্য ছিল আইডল-অ্যাডমায়ারার নিয়ে আরেকটি গল্প বলা। যেন  এদুটি সহোদর চলচ্চিত্র হবে।

শুধু গল্পের দিক দিয়েই না, আখ্যানেও Millennium Actress ছিলো Paprika আর Perfect Blue-‘র মত আনঅর্থডক্স(Tokyo Godfathers এখানেও ব্যতীক্রম!)। পাশাপাশি ভিজুয়ালেও কন নিয়ে আসলেন সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক সিনেমাটিক টেকনিক – Trompe-l’œil. দ্বিমাত্রিক চলমান ছবি দিয়ে ত্রিমাত্রিক বিভ্রম তৈরী করার এর চেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরন হয়তো বড় পর্দায় আর খুব বেশি পাওয়া যাবে না। Millennium Actress তার ৮৭ মিনিটের ব্যপ্তীকাল জুড়ে এক অনবদ্য ট্যুর-ডি-ফোর্স। চিয়োকো ভেসে বেড়ায় স্থান-কাল আর বাস্তব-রুপালী পর্দার রেখার উপর দিয়ে – কুরোসাওয়ার[২] এডোতে, মাঞ্চুরিয়ার প্রোপাগান্ডায়, যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া শহরে, ওযুর[৩] কোন প্রথম-গ্রীষ্ম অথবা বসন্ত-শেষের টোকিওতে, আবার অনেক অনেক দূরের কোন ভবিষ্যতের এক মহাকাশযাত্রায়।

Millennium Actress, সেতসুকো হারা[৪] আর হিদেকো তাকেমিনে[৫] – জাপানের দ্বিতীয় সহস্রাব্দের কালজয়ী সব নায়িকাদের প্রতি সশ্রদ্ধ-স্বীকৃতি, একই সাথে জাপানের ইতিহাস, তার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রতি “অ্যাডমায়ার” কনের প্রেমপত্র। সাতোশি কনের আর বাকি সব চলচ্চিত্রগুলো মতই তাতে লজিক গুরুত্বপূর্ণ না, ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্য থেকে কোন বার্তা খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ না – এখানে যাত্রাটাই মুখ্য বিষয়।  আর এ যাত্রা এক অতুলনীয় অভিজ্ঞতা – যা বইয়ের পাতায় পাওয়া সম্ভব না, গানের সুরে পাওয়া সম্ভব না, মানব অভিনীত চলচ্চিত্রেও পাওয়া সম্ভব না।

 

নিশ্চিতভাবেই এই ধারা Dreaming Machine-এও বজায় থাকতো – যেমন কন তার দর্শকদের আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন Paprika-‘র শেষ দৃশ্যে।

drea

কিন্তু সেই সাতোশি কন কিনা ২০১০ এর আগষ্টে মারা গেলেন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে!

Dreaming Machine  বের হওয়ার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। কিন্তু স্বপ্নই বা খারাপ কী? একটা জিনিস যদি  সাতোশি কনের মুভিগুলো শিখিয়ে দিয়ে থাকে, তবে তা হল: স্বপ্ন আর বাস্তবতা মিশে যেতে খুব বেশি কিছু লাগে না। তাই এখনই মাথায় স্বপ্ন-যন্ত্র চাপিয়ে বসুন আর ঝাঁপিয়ে পরুন কল্পনার জগতে; কে জানে, হয়তো আপনার স্বপ্নের সাথে কনের স্বপ্ন একাকার হয়ে বাস্তবে হানা দিবে টোকিওর রাস্তায় হাঁটতে থাকা কোন টেলিভিশনের পর্দায়।

Paprika-2

 

[১] http://www.midnighteye.com/interviews/satoshi-kon/

[২] আকিরা কুরোসাওয়া – কিংবদন্তী জাপানী চলচ্চিত্র নির্মাতা। উল্লেখযোগ্য কাজ – Seven Samurais, Ikiru, Rashomon.

[৩] ইয়াসুজিরো ওযু – কিংবদন্তী জাপানী চলচ্চিত্র নির্মাতা। উল্লেখযোগ্য কাজ – Late Spring, Early Summer, Tokyo Story.

[৪] সেতসুকো হারা – কিংবদন্তী জাপানী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। উল্লেখযোগ্য কাজ – Late Spring, Early Summer, Tokyo Story.

[৫] হিদেকো তাকামিনে – কিংবদন্তী জাপানী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। উল্লেখযোগ্য কাজ – Twenty-four Eyes, Floating Clouds.

Paprika: review by Tariqul Islam Ponir

পাপরিকা মনে হয় না আমার টপ তেণ এ থাকবে। শুধু আনিমে ফিল্ম এর টপ টেন লিস্ট করা হলে থাকতে পারে। 

Paprika এর খাঁটি বাংলা হল গুড়া মরিচ বাট মরিচের ঝাল/স্পাইস কম (ইন্ডিয়ান রিজিওনে), স্পাইসি (অন্যান্য রিজিওনে)। 

আমি সিনেমাটা অনেক আগে দেখেছি (২০০৯ এ যতটুকু মনে পোড়ে)। স্টোরি তেমন মনে আসছে না, আপাতত। আমার কাছে মনে হয়েছে, পাপরিকাতে দেখানো হয়েছে, মানুষের ড্রিমগুলো যদি বাস্তব হওয়া শুরু করে তাহলে কি হতে পারে। যেমন, ডিসি মিনি বিজ্ঞানী দলের প্রধান/চিফ যখন আক্রান্ত হন, তখন তিনি বাচ্চাদের মত দৌড়াতে থাকেন। আর ডিসি মিনি এর আবিষ্কারক যখন আক্রান্ত হন, তখন তিনি একটা রোবোটে পরিণত হন। যখন ড্রিম আর রিয়েল ওয়ার্ল্ড একসাথে হয়ে যায় তখন সবার ড্রিমই একটা বাস্তব ম্যানিফেস্টেশন রূপে আসে। পাপরিকা যে কিনা ড্রিমে মানুষের ত্রানকর্তা এখানেও ত্রানকর্তা হিসেবেই আসে, আর সে চিবার অল্টার ইগো হওয়ায় চিবা এর থেকে পুরো আলাদা হয়ে যায়। তখন ডক্টর ওসানাই তার ফিলিংসকে আর অবদমিত করে রাখতে পারে না, তাই করতে চায় রেপ। চ্যায়ারম্যান বাস্তবে একটি বড় ফ্যাসিলিটির কর্তা, তার কথায় প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু এতে সে খুশি নয়, তার আরো ক্ষমতা দরকার। তার ড্রিমের ম্যানিফেস্টেশনে সে পুর টোকিওকে গলে খেতে থাকে। আর অন্যান্য সবার ছোট ছোট ড্রিম মিলে এটা পরিণত হয় একটি প্যারেডে, যেখানে কোন বাঁধা নেই, তাই সেখানে থাকে ক্রিপি ডল, সেক্স এডিক্ট বা কোন ইনোসেন্ট ড্রিম। যেখানে পাপরিকা প্রটেক্টর হিসাবে নিজেই সবকিছু শুষে নেয়। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থাকে, “What about the rest of it.” স্বপ্ন শেষ হবার নয়।

সবকিছু মিলে বেশ কালারফুল আর লাইভলি একটা ফিল্ম। সাতোশি কন মাস্টার। 

Anime: Paprika review by Nisharggo Niloy

[ এই লেখাটিকে আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা বলে ধরে নিলে ভাল হবে। আমি অনেকটা নিজের মত করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি, কোন নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না। এটাকে রিভিঊ অথবা ক্রিটিসিজম, কোনটাই বলা যাবে না। ]

Anime: Paprika
Type: Video Animation Film
Release: 2006
Director: Satoshi Kon
Based on: Yasutaka Tsutsui’s 1993 novel of the same name.
MAL Rating: 8.20/10.0, Ranked: 277
My Rating: 8.27/10.0, Ranked: 10
Plot: উইকিপিডিয়াঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Paprika_(2006_film)#Plot

মজার ব্যাপার, পাপরিকার মূল থিমকে আমি এইভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিঃ Paprika is a motion video artwork which has the aim to “resolve the previously contradictory conditions of dream and reality.” অর্থাৎ সাররিয়ালিজমের মূল চিন্তাধারাকেই চলচ্চিত্রের মধ্যে তুলে এনেছে পাপরিকা। সাতোশি কোন নিজে এই মুভি সম্বন্ধে বলেছেনঃ “Everything but the fundamental story was changed.” সুতরাং আমার মনে হয় ৎসুৎসুই ইয়াসুতাকার উপন্যাসটা না পড়েও আমি যদি শুধু কোনের মাস্টারপিস মুভি হিসেবে এটা নিয়ে ডিসকাস করতে যাই খুব বেশি ভুল হবে না।

সাদা চোখে দেখলে পাপরিকা একটা সায়েন্স ফিকশন, যেখানে স্বপ্নকে বাস্তবে তুলে আনার প্রচেষ্টায় যেসব অদ্ভূত ভয়াবহতার সৃষ্টি হয় সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। অন্যভাবে যদি দেখতে যাই, এখানে আমি অনেক কিছুই দেখতে পাই। পরাবাস্তবতাকে সাহিত্য এবং চিত্রকর্মে একটি শক্তিশালী বাদ বা ism হিসেবে দাঁড়া করানো গেছে। কিন্তু চলচ্চিত্রে? আমার জানামতে এরকম কোন বড় সাফল্য চলচ্চিত্রে আর্টিস্টরা পাননি। দালি তার জীবদ্দশায় ডিজনির সাথে এইধরনের একটা কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন ১৯৪৬ সালের দিকে। তবে তিনি সেটা দেখে যেতে পারেননি। অসম্পূর্ণ অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর ২০০৩ সালে মুক্তি পায় “Destino”. [http://www.youtube.com/watch?v=1GFkN4deuZU ] প্রায় সমসাময়িক মুভি পাপরিকা (২০০৬), তবে পাপরিকা যেন পরাবাস্তবতাকে বাস্তবে নিয়ে আসার বিষয়টা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। পাপরিকায় প্রথম এই ব্যাপারটিই চোখে পড়ে।

আরো ভাল লাগে পাপরিকার মিউজিক। বিশেষভাবে, থিম সংয়ে ভোকালয়েডের ব্যবহার। মিউজিকটাও সাররিয়াল। একই সাথে অবাস্তব এবং সুন্দর।

ভিতরের দৃশ্যগুলোর মধ্যে ভাল লেগেছে পুতুলের মিছিল। দৃশ্যটা কেমন অশুভ, ভয় লাগে দেখলে। কিংবা বাস্তবের সাথে যখন আসলেই স্বপ্নগুলো মিশে যায়, তখন মানুষগুলোর ল্যাম্পপোস্ট, অদ্ভূত প্রাণী কিংবা খেলনা রোবট হয়ে নাচতে থাকা, দৃশ্যগুলোকে স্বপ্ন মনে হয় না।

আরো একটা চোখে পড়ার মত বিষয় হল রেফারেন্স। বহু ফিল্ম, আর্টওয়ার্ক, সাহিত্যকর্মের রেফারেন্স আছে। সাতোশি কোনের অন্যান্য মুভি গুলো- টোকিও গডফাদার, পারফেক্ট ব্লু; সফোক্লিসের ইদিপাস; দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ, রোমান হলিডে; পিনোচ্চিও, অ্যান্ডারসেনের মারমেইড– আরো বহু রেফারেন্স। পুরাপুরি সবগুলো সিন বুঝতে হলে কমপক্ষে শখানেক জিনিসপাতি সম্বন্ধে ভাল জানতে হবে।

মুভির নাম কেন পাপরিকা, সেটা মুভির দুইটা কোটেশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়ঃ
“That’s right, keep running. There are no boundaries to dreams.The spirit will be freed from the constraints of the body and gain limitless freedom. Including me! I will also be free!!”
“The one I’ve been waiting for since historic times! Your flute melody is a sound for sore neurons!…….. A fragrant fat is a first class lunch…. It needs a little more spice, maybe some paprika?”

শেষ দিকের দৃশ্যে যখন দানবীয় পাপরিকা/ড. আতসুকো শুষে খেয়ে ফেলে চেয়ারম্যানকে, সেই দৃশ্যটা ভাল লাগে। পুরুষতন্ত্রের প্রতি একটা বিদ্রূপ মনে হয় দৃশ্যটাকে। সেই সাথে কেন জানি আদি টাইটান, মাদার নেচার গায়া-র কথাও মনে পড়ে। অবশ্য র‍্যাডিকাল ফেমিনিজম দিয়েও ভাল ব্যাখ্যা করা যায় এটাকে।

একটা প্রশ্ন থাকে, ড. আতসুকো কেন স্বপ্নের মাঝে পাপরিকা হয়ে যান? তিনি ডিসি মিনি-র টেকনোলজিকে সাইকোথেরাপির কাজে ব্যবহার করেন কেন পাপরিকার রূপ নিয়ে? সেই রূপ কি আসলে তাকে একটু বেশি অতিমানবে পরিণত করে? পরাবাস্তবতায় তিনি নিজের অপূর্ণ আকাঙ্খাগুলো পূরণ করতে চান? সেই জগতের নিরর্থকতাকেও তিনি অর্থপূর্ণ করতে চান? এ প্রশ্নগুলো নীৎসের ‘উবেরমেনশ’ কনসেপ্টকেও খানিকটা টেনে আনে।

শেষ কথা, সালভাদর দালি, ম্যাক্স আর্ন্সট-রা যদি জীবদ্দশায় এই মুভিটা দেখে যেতেন তবে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হত খুব জানার ইচ্ছা হয়। আর এই অ্যানিমটা যদি কারো টপ টেনের বাইরে থাকে, তবে তা শুধুমাত্র এর দুর্বোধ্যতার জন্যই। 

এটার মর্মার্থ যাদের মাথার দুই হাত, তিন হাত, মাইল খানেক/দুয়েক উপর দিয়ে যাবে তাদের জন্য রইল আমার সমবেদনা। তারা এক কাজ করতে পার, শান্তচিত্তে ও পবিত্র দেহে কঠোর যোগসাধনা করতে থাক। একসময় লাইটবাল্বের ন্যায় তোমাদের মাথার ভেতর আবির্ভূত হবে তান্ত্রিক তরিকা। সেই তরিকা দিয়ে সবই বোঝা যাবে।
আর যারা বুঝতে পারবে, তাদের মহান পরিণতির কথা ভেবে ডেডিকেট করছি এই গানটিঃ

https://www.youtube.com/watch?v=VLnWf1sQkjY

Paprika — Anime Movie review by Farhad Mohsin

Zemanta Related Posts Thumbnail

Paprika মুভিটা দেখসি রিসেন্টলি। সেইটা নিয়ে সেমি-রিভিউ টাইপের পোস্ট।

ফিল্মের ডিরেক্টর সাতোশি কন। বেশ ভালো ডিরেক্টর। Perfect Blue তার ফিল্ম, সেইটাও অনেক ভালো।
যাই হোক, Paprika’র শুরুটা এমন, একটা কোম্পানির R&D বিভাগ একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, মিনি ডিসি, যার মাধ্যমে মানুষের স্বপ্ন দেখা যায়। একাধিক জন একসাথে সেটা ব্যবহার করলে স্বপ্ন শেয়ারও করা যায়। এই যন্ত্র ব্যবহার করে স্বপ্নের মধ্যে গিয়ে সাইকোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। তো একদম শুরুতেই এই যন্ত্র দুইটা চুরি যায়। এবং সেই চুরি যাওয়া যন্ত্র দিয়ে এই যন্ত্র ব্যবহারকারী অন্যদের স্বপ্নে প্রবেশ করে ঝামেলা করা যেতে পারে বলে সেটা নিয়ে প্যানিক সৃষ্টি হয়। চোরের পিছনে খোঁজ লাগায় মিনি ডিসির প্রধান দুই ডেভলেপার ও তাদের চীফ। এবং এরপর নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।
আরেকদিকে থাকে এক পুলিশ অফিসার, সে তার মত করে একাধিক দিক দিয়ে এর মধ্যে জড়িয়ে যায়, এবং ডিসি মিনির গল্পের মধ্যে তার স্বপ্নের গল্পও বেশ সুন্দর মত চলে আসে।
যাইহোক, রিভিউ লিখতে গিয়ে সামারি লিখা শুরু করেছিলাম। Paprika’র গ্রাফিক্স, আর্টওয়ার্ক, সব বেশ ভালো। ড্রিমওয়ার্ল্ডের প্রেজেন্টেশন বেশ সুন্দর/কালারফুল/বোল্ড। স্টোরিলাইন যথেষ্ট গ্রিপিং। ফিল্মটা মনে হয় মূলত একটা সাইফাই, কখনও স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার জন্য একটা ফ্যান্টাসি ভাব আসে, আবার কখনও বা মনে হয় একটা ডিটেক্টিভ স্টোরির মত। ক্যারেক্টার বিল্ডাপ খুব ভালো।
তবে পুরোটা দেখে আমার এ মুভি সম্বন্ধে যেটা মনে হইসে, এটা সেই ধরণের মুভিগুলোর একটা যেটার logical soundness নেসেসারি না, পুরোটার সবকিছুর লজিকাল এক্সপ্লেনেশন বুঝে বুঝে দেখাটা নেসেসারি না। এটা সেই ধরণের মুভি যেটার বেলায় বলা যেতে পারে, you go with the flow. “এটা কী হচ্ছে” “কেন হচ্ছে” মনে না হয়ে জাস্ট ধরে নেওয়া যাইতে পারে, “হচ্ছে, দেখতে থাকি”। এবং তারপরেও অসাধারণ লাগবে। (কেউ যদি বুঝে না থাকেন আমি আসলে কি বলতে চাচ্ছি, তাহলে দুঃখিত। ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারছি না এরকম আমার মনে হয়েছে রিসেন্টলি আরও একটা মুভি দেখে, Donnie Darko, এনিমে না অবশ্য)
**কেউ কেউ বলে থাকে এই মুভিটার কিছু আইডিয়া হয়তো Christopher Nolan এর Inception এর জন্য inspiration হিসেবে কাজ করতে পারে। হয়তো।