The Garden of Words [মুভি রিভিউ] — Loknath Dhar

বৃষ্টির দিনে মরে যাই যাই অনুভূতি হয় একটা। হরমোনগুলোর নিঃসরণ হয়তো একটু বেশিই হয়। মনে হয় কারো গন্ধ চাই আবার মনে হয়, না, এভাবেই তো ঠিক আছে। বারান্দায় জল জমে বৃষ্টির, ভেজা গ্রিলে হাত রাখলে শিরশির করে গোটা দেহ, মনে হয়, এভাবেই বেঁচে থাকাটাও খুব সুন্দর। একা একা। ভেতর থেকে বহুকিছু ধীরে ধীরে চলে গেছে, একলা সুন্দর একটা স্বপ্নের ইচ্ছেয় দিনগুলো পার করতে থাকার অনুভূতিটাও সুন্দর। খুব সুন্দর।
 
আমি প্রায় সকল কিছুর ভেতরেই সৌন্দর্য খুঁজতে থাকি। সৌন্দর্যের তৃষ্ণা চোখে, বুকে, ঠোঁটে, মুখে।
 
আমার একটা ব্যক্তিগত ব্লগ আছে। নাম Garden of words; একটা প্রিয়, খুব প্রিয় আনিমের নামে নাম। আনিমের নামটাই, The Garden of Words. শব্দদের বাগান। এছাড়া আর কি! যে বাগান শব্দ দিয়ে তৈরি। আসলেই তাই। কিন্তু এই কথাটাই ভাবতে বসলে বুকের ভেতর আমার ভীষণ আলোড়ন তোলে। ভীষণ! শব্দদের বাগান! ব্লগটা আমার নিজস্ব একটা বাগান, যার ফুলগুলো শব্দ//অক্ষর দিয়ে ঘেরা, এরা মাঝে মাঝে ফোটে। যত দিন যায়, এদের রূপগুলো কমতে থাকে বলে মনে হয়, বারান্দায় ফিরে যাই, সিগারেট ধরিয়ে বৃষ্টির জলকে আহবান করতে থাকি আরও, আরও, আরও অনেকক্ষণ পড়ার। মন খারাপ না, তবু মন খারাপ করতে ইচ্ছে করছে। ভীষণ মন খারাপ ডুবিয়ে দেয়া যেত গোটা শহর!
 
 
গল্পঃ আনিমের গল্প নিয়ে কথা বলি বরং। বৃষ্টি ভালোবাসেন আমার মতো?
 
অবশ্য আমি বৃষ্টি ভালোবাসি একটু একটু।
এই মুভির পুরোটা জুড়ে কেবল বৃষ্টি আর বৃষ্টি।

১৫ বছর বয়সী একজন ছেলে, Takao (বাংলায় অদ্ভুত দেখতে লাগে নাম), একজন স্কুলছাত্র, যার ধ্যান-জ্ঞান হাতে জুতো ডিজাইন করা ও বানানো। বৃষ্টির দিন হলেই তার নিজের সাথে নিজের কথা দেওয়া আছে, স্কুল মিস সেদিন। এমনিতে সরগরম থাকা সিনজুকু ন্যাশনাল গার্ডেন সেদিন থাকে চুপচাপ, সে নিজের মত নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারে। তার এই কাজ তার ভালো লাগে।

এবং ২৭ বছর বয়সী একজন নারী, ইউকিনো, তাকে একদিন আবিষ্কার করে ন্যাশনাল গার্ডেনে; কেউ কাউকে চেনে না, শুধু যাবার আগে একটু ধাঁধা হয়ঃ

 
A faint clap of thunder
Clouded skies,
Perhaps rain comes,
If so, will you stay.. with me
 
এ এক খেয়ালী প্রশ্ন যেন। এক প্রাচীন জাপানিজ কবিতা।
চাই এর খেয়ালী সঠিক উত্তর।
এর উত্তর কি দেওয়া হবে?

সেখান হতে গল্পের পথ চলা আপন ভঙ্গিতে..

 
***Spoiler Alert***
 
এটা হয়তো রিভিউ, আবার রিভিউ না। আমার মত করে বলা একটা গল্প।
 
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি; আবার ভারী ভারী। এমন সময়ে মনে হয়, বোধহয় অন্য কোন পৃথিবীতে বেঁচে আছি। সময়টা থমকে আছে, থমকে আছে – বৃষ্টিরা আছড়ে পড়ছে ধীর থেকে ধীরে – ইউকিনো কোনো স্টেশন থেকে নেমে এগোচ্ছে কি না পার্কের দিকে, দেখার জন্য বাইরের জমে থাকা জলে পা বাড়াতে ইচ্ছে করে।
 
আমি বের হলাম। সেকেন্ডের কাটাটাও আছড়ে পড়ছে ধীরে, যেমনটা ধীরে আছড়ে পড়ছে প্রতিটা জল। আমার মনে পড়লো, এই মুভিটার একটা বিশেষত্ব আছে। এতে মাকাতো শিনকাই ক্যারেক্টারগুলোর ভাবনা বোঝার কোন উপায় রাখেন নি। ক্যারেক্টারগুলোর থটস বোঝার জন্য অনেকসময় ভেতরকার মনোলগ ব্যবহার করে ভাবনার দৃষ্টিকোণটা বুঝতে সাহায্য করে। মুভিতে এরকমটা নেই, যার রিপ্রেজেন্টশনটা হয় অনেকটা রিয়ালিটির মতন। আমরা শুধু আমাদেরটাই ভাবতে পারি, আমরা ভাবতে পারি না আমাদের সামনের মানুষটার ভাবনা। পুরো মুভিতে একটা রহস্য রহস্য ভাবনা, পা বাড়াতেই বিচলিত হয়ে উঠলো আমার মন, ইউকিনো কি ভেবেছিলো? কি ভেবেছিলো তাকাও? আজ বৃষ্টিতে তাকাও আর ইউকিনো পার্কে আসবে?
 
মন খারাপ হয়ে গেলো। অসম্পূর্ণ গল্পের সম্পূর্ণটা জানতে আমার ভীষণ পোড়ায়। চিরাচরিত, সাধারণ অনুভূতির চেয়ে আলাদা একটা প্রেম, সে কি করে এগোবে, আদৌ আগাবে কি না, জানতে ইচ্ছে করে। কেউ এক টানে নিয়ে বসিয়ে দিলো তাকাও এর সিটে – টের পেলাম, আমার বুক ছিঁড়ে আসে কারো মুখ দেখার। হয়তো বাস্তবের আমির মত।
 
আমি প্রতিটা দৃশ্য ধরে ধরে এগোতে থাকি।
 
আমার মনে পড়লো, মুভিতে কথোপকথন অনেক কম। মৃদু হাসলাম। যেখানে প্রতিটা ফ্রেম নিজেই এক একটা গল্প, সেখানে আলাদা করে কথোপকথনের কি দরকার আছে? দুজন পাশাপাশি চুপচাপ বসে থাকায় যে দুই পৃথিবীর দূরত্ব তুলে ধরে, কোন কথোপকথনটা সেখানে ঠিক মানাবে?
 
বৃষ্টি কি ভেতরের কান্নার কথা বলে? নাকি, বৃষ্টির পর প্রকৃতির নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার মতন, আবারও বেঁচে ওঠার মতন, তাদের আবারও নতুন করে হাঁটতে থাকার কথা বলে? আমি ভাবি, জীবনটা তো এইটুকু, স্বাদ শেষ হবার আগেই মনে হয়, জীবন শেষ হয়ে গেলো মনে হয় আমার এখনই, এই যে না বলা রহস্যটুকু, নিংড়ে পুরো পরিবেশটাকে দুচোখের ভেতরটাকে আটকে রেখেও তৃপ্তি না পাওয়া গল্পটা এরকমই থেকে যাবে?

Comments

Leave a Reply