“অরেতাচি নাকামাতাচি সুগোই কাক্কই দেসু” মূলমন্ত্র নিয়েই তৈরি হওয়া সিরিজটার পটভুমি ১৯৫৫ সালের যুদ্ধ পরবর্তী জাপানে। নানা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৬ টিনএজ ছেলের জায়গা হয় এক বিশেষ সংস্কার স্কুলের একই সেলে; যেখানে তাদের সঙ্গী হয় আগে থেকেই সেই সেলে থাকা সাকুরাগি রকুরোতা। সাকুরাগির কল্যাণে এই ছেলেগুলো কাছাকাছি আসতে থাকে; একে অপরের বন্ধু হতে থাকে; নৃশংস, অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই প্রকোষ্ঠে পরস্পরকে বাচার প্রেরণা যোগায়, সাহস যোগায়। সেই অন্ধকার ছেড়ে যখন ছেলেগুলো সমাজে ফিরে আসে তখনও সাকুরাগির শিক্ষা আর স্মৃতি বুকে নিয়ে নিজেদের স্বপ্নকে ধাওয়া করে চলে নিরন্তর।
চমৎকার স্টোরি, অন্তত শুরুর দিকটায় সেটিং চমৎকার; প্রত্যেকটা চরিত্র নিয়েই কম বেশি এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ পর্যাপ্ত। একেবারে শুরুর কয়েক মিনিটেই সিরিজটা মনোযোগও ধরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এবং শুরুর কয়েক পর্বেই প্রত্যেকটা চরিত্রেরই কম বেশি ব্যাক স্টোরি পেয়ে যাই আমরা; এবং সেটাও যথেষ্ট রিচ। So far, so good. কিন্তু বাদ সাধে এর পরেই। সিরিজটা একেবারে পুরোপুরি মনোটোনাস আর একমুখী হাঁটা শুরু করে দেয়। চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার যে সুযোগটা ছিল, সেটা একেবারে জলে ফেলে দেওয়া হয়। সবগুলো চরিত্র একেবারে দাগ টেনে সাদা কালো দলে ফেলে দেওয়া সম্ভব হয়ে যায়। খুব বেশি জটিলতায় না গিয়ে সহজ কথায় বলি, সেলে থাকা ৭ টা চরিত্রগুলো খুব ভাল; তারা কোন রকম খারাপ কাজ করতে পারে না; সেটা যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক, একেকজন দেবতার অবতার, বন্ধুঅন্তপ্রান, নীতিবান, সৎ, নিপাট ভদ্রলোক। আর বাকি চরিত্রগুলো সব খারাপ। শুধু খারাপ না; একেবারে সাক্ষাৎ ইবলিশ। এরা স্যাডিস্টিক, শিশু নির্যাতনকারী, ঘুষখোর, খুনী, ষড়যন্ত্রকারী। মানবতার ছিটেফোঁটাও নাই এদের মধ্যে। এইরকম প্লেইন চরিত্রগুলো কিছুদুর যাওয়ার পর আসলে বিরক্তিরই উদ্রেক করে।
এনিমটার মেসেজ আর প্রশ্নগুলোও বড্ড একঘেয়ে। বন্ধুত্ব কি, ফ্যামিলি কি, মানবিকতা, নীতি, ভালবাসা এবং এই জিনিসগুলোর জন্য একটা মানুষ কতটুকু আত্মত্যাগ স্বীকার করতে পারে সেই উত্তরগুলোই খোজার চেষ্টা হয়েছে; সেই উনিশশো কটকটি সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিরিজগুলোর মতনই।
আরেকটা নেগেটিভ দিক হল মেলোড্রামা। মোটামুটি শেষ ৮-৯ টা পর্ব হিন্দী সিনেমার লেভেলে নিয়ে গেসে সিরিজটাকে। কেউ কিছু একটা করে বিপদে পড়বে, এবং বাকি বন্ধুরা পারলে নিজেদের জীবনটাকে বাজি রেখে তাদেরকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে, তাদের মুখে হাসি নিয়ে আসবে – এই জিনিসটাকেই ৬ বারের মতন সেইম লুপে ফালায়ে ভ্যারিয়েবল চেইঞ্জ করে দেখানো হয়। পিওর মেলোড্রামা। তার সাথে যোগ করে নিন প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর একবার করে ধারাবিবরণী। পরিচালক মহোদয় বোধহয় ধরেই নিয়েছেন প্রত্যেকটা দর্শক গর্ধভ শ্রেণীর লোক, কোন একটা ইমোশনাল সিচুয়েশন তারা নিজেদের বুদ্ধি খাটায়ে বুঝে নিতে পারবে না; সুতরাং কিছু একটা ঘটার সাথে সাথে পুরো ফ্রেম ফ্রিজ করে দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ সহ সেই সময় প্রতিটা চরিত্র কি ভাবতেসিল, তাদের চোখে জল ছিল কি না, এবং থাকলে তার পরিমাণ সহ ব্যাখ্যা আমাদের সরবরাহ করেছেন।
আমরা কৃতজ্ঞ।
কিছু কিছু এনিম বোদ্ধারা এই সিরিজটাকে বিগিনারদের জন্য সাজেস্ট করতে চেষ্টা করেন। সিরিজটা দেখার পর আমি তাদের পোয়েটিক সারকাজমের জায়গাটা অবশ্য ফিল করতে পারতেসি। ডার্ক থিম এবং সেটিং এ এইরকম হালকা ধাঁচের সিরিজ পাওয়াটা আসলেই দুষ্কর।
ভয়েস এক্টিং, সাউন্ডট্র্যাক, এনিমেশন, আর্ট – সবগুলো দিক দিয়েই রেইনবো বেশ ভাল কাজ দেখাইসে। কোনটা নিয়েই কোন আপত্তি নাই। বিশেষ করে ভয়েস এক্টিং বেশ পছন্দ হইসে।
বটমলাইন, রেইনবো খুব ভিন্ন ধরণের কিছু না; বরং পুরনো বোতলে নতুন মদের মতন ডিফারেন্ট প্লট সেটিং এ শৌনেন সিরিজে পরীক্ষিত ফর্মুলা আর আইডিয়োলোজিগুলোরই এক্সিকিউশন মাত্র।
রেইনবো কেমন সিরিজ? খুব খারাপ? মোটেই না। মাস্টারপিস? কখনই না। পুরো সিরিজটা দেখে একটা শব্দই মাথায় আসে – “হতাশাজনক।” বিশাল প্রমিজ নিয়ে শুরু করা একটা সিরিজকে এইরকম প্রেডিক্টেড পথে চলতে দেখাটা আসলেই হতাশাজনক। আর প্রথম দিকের পর্বগুলো তাও বেশ উপভোগ্য, দ্বিতীয় ভাগের পর্বগুলো তার পিওর মেলোড্রামাটিক সেইম রিপিটিভ স্টোরি দিয়ে পুরো সিরিজেরই বারোটা বাজায় দিসে।
এখন রিকমেন্ডেশনঃ প্রথম ১৩টা পর্ব দেখেন। এইগুলা মোটাদাগে বেশ ভাল। ভাল লাগবে আশা করতেসি। পরের ১৩টা দেখতে চাইলে নিজ দায়িত্বে দেখবেন। মেলোড্রামা ভাল না লাগলে অইগুলা এভয়েড করাটাই সমীচীন হবে বোধকরি।