space brothers – স্বপ্নের পথে জীবনের অলি গলিতে… by Asiful haque

“An earnest failure has meaning.”

প্রথমেই একটা কুইজ দিয়ে শুরু করা যাক। খুব সহজ কুইজ; ভয় পাবার কিছুই নেই। ধরুন; আপনাকে জিজ্ঞেস করা হল – খুব বেশি না ভেবে এই মুহূর্তে খুব জনপ্রিয় কয়েকটা এনিমের নাম বলুন; ওয়ান পিস, নারুতো, শিঙ্গেকি নো কিওজিন, ফেয়ারি টেইল বা হান্টার এক্স হান্টার – এইরকম কয়েকটা নামই নিশ্চয়ই মাথায় আসবে? এবার একটু চিন্তা করে দেখুনতো; এই এনিমগুলোর জনপ্রিয়তার কারণ কি কি? সুপার পাওয়ার; হ্যান্ডসাম হিরো কিংবা সুন্দরী নারী – ঘুরে ফিরে কম বেশি এগুলোই নয় কি? কিন্তু একটা এনিম জনপ্রিয় হতে; ফার্স্ট ক্লাস হতে কি এগুলো খুব জরুরি? নাহ; এগুলো হয়ত “মেইন্সট্রিম” তকমা গায়ে লাগানোর জন্য জরুরি; কিন্তু এনিম সুন্দর হতে এগুলোর কোনটাই দরকারি না। সেই জন্যই হয়ত কাইজি কিংবা স্পেস ব্রাদারের মত নাম না জানা কিন্তু অত্যন্ত চমৎকার কিছু সিরিজ আমাদের অগোচরেই থেকে যায় !!!!

সার সংক্ষেপ – আমরা অযথা ঘুরাঘুরি না করে মুল কথায় ফিরে আসি। আমাদের আজকের প্রতিযোগী থুক্কু আলোচিত এনিম “space brothers” – জাপানিজে যেইটাকে আদর করে ডাকে “uchuu kyoudai” :D :D কাহিনীর সারসংক্ষেপে জানা যায়; মুল চরিত্র ৩২ বছর বয়স্ক নানবা মুত্তা যিনি শরতের এক সুন্দর সকালে নিজ অফিসে নিমগ্নচিত্তে কাজ করছিলেন। হটাত করেই বসের রুমে ডাক পরে উনার। কথায় কথায় বস মুত্তা সাহেবের মহাকাশচারী ছোটভাই হিবিতোকে নিয়ে বেফাঁস কথা বলে বসেন। আর যায় কোথা !! জিদান সাহেবের অনুকরণে বসকে মাথা দিয়ে ঠু মেরে বসেন মুত্তা সাহেব। ফলশ্রুতিতে ৩২ বছর বয়সে এসে শুধু চাকরিই হারালেন না; বসের কল্যাণে সকল অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানে ব্ল্যাকলিস্টেডও হয়ে পড়লেন। এ সময় ছোট ভাই এর উপদেশে মুত্তা সাহেবের মা উনার সিভি ড্রপ করে দিলেন জাপানিজ মহাকাশচারী নির্বাচন পরীক্ষায়; আশ্চর্যজনকভাবে প্রাথমিক বাছাই পর্বও উৎরে গেলেন আমাদের মুত্তা সাহেব। তারপর কি হল? একদম ছোটবেলায় আকাশ আর চাঁদ তারা নিয়ে মাতোয়ারা দুই ভাই এর মাঝে মহাকাশচারি হবার যেই সঙ্কল্প ছিল – তা কি পূরণ হবে? দুই ভাই কি পারবে এক সাথে মহাকাশে ঘুরে বেড়াতে; এক সাথে চাঁদের বুকে পা রাখতে?

কেন দেখবেন – একজন সহজ সরল সিম্পল মাইন্ডেড মেল প্রোটাগনিস্ট; যে কিনা বেশ ভাল কিছু বন্ধু এবং হেল্পফুল একটা ফ্যামিলির সহায়তা নিয়ে কিছু বড় চ্যালেঞ্জ পার হয়ে আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যায় – সম্ভবত অন্যতম ক্লিশে স্টোরিলাইনের ক্যাটাগরিতে ফেলে দেওয়া যায়। এখন তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে; আমার এই এনিমটা নিয়া তাইলে এতো লাফালাফির কারণ কি? যারা আমাকেএনিমখোর গ্রুপ থেকে চেনেন; তারা হয়ত ইতিমধ্যেই অবগত যে গ্রুপে আমি এই সিরিজ নিয়ে একাধিক পোস্ট এবং কমেন্টে আলাপ করেছি। এই এনিমটার সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্ট আমার কাছে রিফ্রেশিং স্টোরি টেলিং স্টাইল। প্রায় প্রত্যেক পর্বের ৩৫-৪০% ই ফ্ল্যাশব্যাক (আরে উলটা ঘুইরা দৌড় দিয়েন না; বুঝসি তো ফ্ল্যাশব্যাক শিপ্পুডেন দেখা অতাকু সিদুরে ফ্ল্যাশব্যাক শব্দ শুনলেই ভয় পায় !!! ) – এইখানে দুই ভাই এর স্বপ্ন; তাদের স্পেস সেন্টারে সময় পেলেই ট্যুর; পরিচিত একজনের টেলিস্কোপে প্রতি রাতে আকাশ আর চাঁদ তারা দেখে মুগ্ধ হওয়া; পাহাড়ের উপর উঠে ক্যামেরা নিয়ে দুই ভাই এর দীর্ঘ প্রতিক্ষা; বড় ভাই এর মাঝপথে হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেকে বুঝ দিয়ে অন্য পেশায় মন বসানো; ছোট ভাই এর হার না মানা সঙ্কল্পে লক্ষ্য পূরণের সাফল্যগাঁথা – উচ্ছল এবং প্রাঞ্জল একটা গল্পগাঁথা। অতামুটি একটা ফিক্সড এবং ভাল পেইসে গল্প এগিয়েছে; সেই সাথে চমৎকার সাউন্ডট্র্যাক; কেরেক্টার ডেভেলপমেন্ট; চমৎকার আর্ট স্টাইল – সব মিলিয়ে একটা বেশ উপভোগ্য এনিম।

কেন দেখবেন না – আপনি যদি কোন এক ছুটির দিনে আরাম করে বিছানায় হেলান দিয়ে বাইরে বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে বাস্তবের খুব কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সহজ কিন্তু সুন্দর একটা গল্প দেখার এবং শোনার খুব বেশি একটা ভক্ত না হন; তবে এই সিরিজ টি খুব সম্ভবত আপনার জন্য নয় !!!

শুরু করেছিলাম মুত্তার একটা কোট দিয়ে; শেষটাও তার একটা কোট দিয়েই করা যাক –
“When you build something, you must be ready to spend time and money on failure. The best materials won’t always yield the best results. However, if you build something by improving on failure, you’ll end up with good results.”

 

Comments

Leave a Reply