তোমোদাচি নো হানাশি [মাঙ্গা রিভিউ] — Fatiha Subah

tomodachi-no-hanashi

তোমোদাচি নো হানাশি
ইংরেজি নামঃ দ্যা সিক্রেট অফ ফ্রেন্ডশিপ
জানরাঃ ড্রামা, স্কুল, শৌজো, রোমান্স
চ্যাপ্টারঃ
মাঙ্গাকাঃ কাওয়াহারা আযুনে (গল্প), ইয়ামাকাওয়া আইজি (আর্ট)
মাইআনিমেলিস্ট রেটিং: ৮.২৩
ব্যক্তিগত রেটিং: ১০/১০

শৌজো মাঙ্গায় সাধারণত কি হয়? একটি মেয়ে এবং ছেলে তাদের মনের মানুষকে খুঁজে পায় তারপর চারপাশের সবকিছু ভুলে নিজেদের জগতে হারিয়ে যায়। আচ্ছা এবার ভাবুন তো, আপনিও জীবনে ঠিক এমনটি ঘটতে দেখছেন। না না, নিজেকে শৌজো মাঙ্গার নায়ক বা নায়িকা ভাবতে বলিনি তো! থামেন! বলছি আপনার কাছের কোন মানুষের কথা। তার জীবনে এমন কিছুর সূচনা দেখলে আপনার কি প্রতিক্রিয়া হবে? আপনি সুন্দেরের মত অস্বীকার করেন আর নাই করেন, জানা কথা আপনি মনে মনে হলেও ইয়ুনো গাসাইয়ের মত ইয়ান্দেরে মোডে গিয়ে পারলে আপনার কাছের মানুষের জীবনে হাজির হওয়া ওই মানুষটাকে কোপ দিয়ে আসবেন!! আর কাছের মানুষটা যদি হয় আপনার জিগরি দোস্ত তাহলে তো কথাই নেই! কেননা এই নতুন মানুষটিই এতদিনের চেনা ফ্রেন্ডটিকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। বাস্তবে যে এটা হয় তার অসংখ্য উদাহরণ আছে। এরূপ নিষ্ঠুর বাস্তবতায় বেঁচে থাকলে এইকো নামক মেয়েটিকে নিয়ে আপনার ঈর্ষা হবেই।

এইকো সাকামোতো বন্ধুত্ব নিয়ে এই মাঙ্গার প্রধান চরিত্র। তাকে কখনোই সম্পর্ক হয়েছে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড হারিয়ে যাবে এই ভয়ে থাকতে হয় না। বরং ভয়ে থাকতে হয় তার উল্টোটা নিয়ে। সে শঙ্কিত কারণ তার জন্যেই তার ফ্রেন্ড মোয়ে হয়ত কখনও তার মনের মানুষ খুঁজে পাবে না। এমন না যে সে মোয়ের কাছে কোন ছেলেকে ঘেঁষতে দেয় না কিংবা সে খুবই সুন্দরী। মোয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর এবং অনেক ছেলেই তাকে পছন্দ করে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? প্রতিবার যখন কোন ছেলে মোয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় মোয়ে সবসময় একটি উত্তরই দেয়। সে রাজি হবে শুধু একটি শর্তে। সেই শর্ত হল তার চেয়েও বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে এইকোকে। মোয়ের সাথে সময় কাটানো মানেই এইকোর সাথে সময় কাটানো। যেই ছেলে তার এই শর্তে রাজি হবে তাকেই বেছে নেবে মোয়ে। কিন্তু কোন ছেলেই বা রাজি হবে এমন প্রেমিকা পেতে যে তাদের ডেটিংয়েও তার ফ্রেন্ডকে নিয়ে হাজির হবে? তবু শেষমেশ কেউ একজন রাজি হয়েই গেল। “বন্ধুত্বের গল্প” মাঙ্গার গল্পটা শুরু হল এখানেই।

শুরুতেই আপনার মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরঘুর করবে। মোয়ে কেন এরকম অদ্ভুত শর্তে জুড়ে দেয় ছেলেদের কাছে? স্কুলে কিংবা আলাদা করে ঘুরতে বেরিয়েই তো সে এইকোকে সময় দিতে পারে। তার এরপরের কিছু আচরণও অনেক বাড়াবাড়ি লাগবে। এমনও মনে হবে যে এই মেয়ের মানসিকতায়ই সমস্যা আছে। কিন্তু এরপরেই আপনি এমন ভাবার জন্য দুঃখ করবেন। এরপরের দুই চ্যাপ্টারে যে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট হয়েছে এবং কাহিনী যেভাবে এগিয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। অন্যান্য মাঙ্গাগুলো ১০-২০ চ্যাপ্টারেও যা দেখাতে পারে না এই মাঙ্গা মাত্র ২ চ্যাপ্টারেই তা দেখিয়েছে। এত ছোট একটা মাঙ্গা যে পড়ছেন তা মনেই হবে না। মাত্র দুই এক দিনের কাহিনী দেখায়নি এখানে। দেখিয়েছে একটা সময় কালের ঘটনা। এবং তা খুব যত্ন নিয়েই তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও কোন তাড়াহুড়া নেই। শুরুতে যেমনই লাগুক চরিত্রগুলোও প্রত্যেকেই ভালো লাগার মত। যেসব ছেলে ভাবে মেয়েরা শুধু ন্যাকামি এবং অন্যের সমালোচনা, কূটনামি করে বেড়ায় তাদের নারুগামি চরিত্রটি বেশ ভালো কিছু শিক্ষা দেবে। আর মোয়ে আমার খুব বেশি পছন্দের একটা চরিত্র।

এত কিছু বলার পরেও আপনি ভাবতে পারেন মাঙ্গাটি কেন পড়বেন। অল্প চ্যাপ্টার, ভালো গল্প আর ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট আছে-বোঝা গেল। কিন্তু এই কথা হয়ত অন্য আরো মাঙ্গার জন্যেও শুনবেন। তাহলে এত মাঙ্গা থাকতে তোমোদাচি নো হানাশিই কেন পড়বেন? পড়বেন কারণ এখানে খুব দুঃখ-কষ্ট, কে কাকে পছন্দ করে এই নিয়ে বিশাল প্যাঁচ, ত্রিভুজ প্রেম, নায়িকার ক্ষতি করতে চাবে এমন হিংসুটে মেয়ে, বুলিং, অতিরিক্ত মিষ্টি প্রেম এসবের বালাই নেই। আছে শুধু বন্ধুত্বের উষ্ণ গল্প আর হালকা রোমান্স। এইকো আর মোয়ের মাঝে যে বন্ধন আছে তা দেখলে মন ছুঁয়ে যায়। ওদের বন্ধুত্বের মতই হওয়া উচিৎ প্রতিটি বন্ধুত্ব। পড়তে পড়তে আপনারও এমন বন্ধু পাওয়ার ইচ্ছা জেগে উঠবে। যদিও শৌনেন মাঙ্গাতে এসব অহরহ দেখা যায় তারপরেও এখানকার গল্পটি একদম অনন্য। একেবারে “রেয়ার জেম” যাকে বলে।

আর্টের দিক থেকে বিচার করলে ভালো না খারাপ বলা উচিৎ ঠিক নিশ্চিত না। অনেক হালকা দাগ দিয়ে আবছা আবছা করে ছবিগুলো আঁকা হয়েছে। সাধারণ সাদা-কালো এর চেয়ে ধূসর ভাবটা বেশি। যে কারণে তাকিয়ে থাকতে অস্বস্তি লাগতে পারে। তবে সবকিছুর গঠন, অবয়ব একদম যথাযথ। আবার শৌজো মাঙ্গার চিরচেনা আর্ট স্টাইলে যে বিশাল গোল গোল, জ্বলজ্বলে চোখ থাকে তা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। বরং এখানে অনেক ছোট আর কুতকুতে চোখ। তাই যাদের ওই সাধারণ শৌজো মাঙ্গার আর্ট পছন্দ না তাদের কোন সমস্যা হবে না। এই ক্যারেক্টার ডিজাইন মাঙ্গাটির সাথে বেশ মানিয়ে গেছে।

দুঃখের বিষয় এই মাঙ্গার শেষ চ্যাপ্টারটি আজ অব্দি স্ক্যানলেশন করা হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে চতুর্থ চ্যাপ্টার স্ক্যানলেটেড হওয়ারও কোন আশা নেই। চ্যাপ্টার ৩ বেরিয়েছিল সেই ২০১৩ তে। তাই বলে মাঙ্গাটি না পড়ার কারণ নেই। ৩ নম্বর চ্যাপ্টার যেভাবে শেষ হয়েছে তা ছিল সন্তোষজনক। কাহিনী ওখানে শেষ ধরে নিলে কোন সমস্যা হবে না। শেষ চ্যাপ্টারে কি হতে পারে ওটা আগে থেকেই বুঝে নেওয়া যায়। তাই সমাপ্তিটা ফ্যানফিকশনের মত নিজের মনমত বানিয়ে নিতে পারবেন।

শেষ কথা, তোমোদাচি নো হানাশি আমার পড়া অন্যতম একটি অসাধারণ মাঙ্গা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় মাঙ্গাগুলোর একটা। শৌজো হিসেবে নয়, এটিকে নাকামা বা তোমোদাচি নিয়ে তৈরি মাঙ্গা হিসেবেই পড়বেন। সুতরাং ছেলে মেয়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আশা করছি আপনারও আমার মত মাঙ্গাটি খুব ভালো লাগবে।

Comments