“সুকি নো ইউ” বাথহাউজের মালিক কানায়ে সেকিগুচির বয়স তেমন বেশি না। মাত্র চার বছর আগেই হাই স্কুল থেকে পাশ করে বেড়িয়ে সে বিয়ে করে ফেলে এক সহপাঠী যুবককে। তার কিছুদিন পর বাবার মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকার হিসেবে বাথহাউজের দায়িত্ব পড়ে কানায়ে আর তার স্বামীর উপরে। সেখানে দুজনে মিলে বাথহাউজের দেখাশোনা করে সংসার শুরু করে ফেললো। বেশ ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিল তাদের।
তারপর…
একদিন কানায়ের বর হারিয়ে গেল। অন্যসব দিনের মতই কাজের খাতিরে তাকে বাইরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সে আর ফিরে আসলো না। সবজায়গায় অনেক খোঁজ করা হল। কিন্তু সে কোথায় আছে, কেমন আছে তার কখনো হদিস পাওয়া যায়নি।
মাঝে মাঝে, লোকমুখে নানান আলাপ শোনা যায় কানায়ের বরের নিখোঁজ হবার রহস্য নিয়ে।
এখন কানায়ে আর তার এক মাসি মিলে ঐ বাথহাউজটার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কানায়ে কাজের মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চায়। হারিয়ে যাওয়া মানুষের জন্যে জীবন থেমে থাকে না।
তবে গভীর দুঃখ যে বার বার দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে না, তা না। অতীতের ঘোলাটে স্মৃতিগুলোর কথা মনে করলেই রাগ, হতাশা, ঘৃণা, ভালোবাসা সব অনুভূতিগুলো একসাথে ভেতরে জট পাকিয়ে যায়। আর কতদিন একজনের অপেক্ষায় বসে থাকা যায়? প্রতিদিন টিভিতে, সংবাদপত্রে চোখ রেখে, দরজায় কান পেতে…
একদিন একজন লোক আসলো সেই বাথহাউজে কাজের সন্ধানে। কানায়ের বরের হারিয়ে যাওয়ার পর একজন কাজের লোকের দরকার পরেছিল বেশ কদিন ধরেই, হোরি নামের এই যুবকটি সেই অভাব পূরণ করে দিতে কাজে লেগে পড়লো। সে অনেক ভদ্র আর নিরব স্বভাবের মানুষ, যার কাছে মনের অনেক গোপন কথা অনায়াসে বলে দেয়া যায়। আচ্ছা, হোরি কানায়ের জীবনে ভালোবাসার মানুষের অভাবটাও পূরণ করে দিতে পারবে কি?
নাকি সেও একদিন তাকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যাবে? কেউ যদি চলে যেতে চায় তাহলে তাকে আটকানো যাবে না।
কানায়ে কাউকে ধরে রাখতে চাওয়ার মত মেয়েও না। সে নিজে মানসিকভাবে অনেক শক্ত, অন্তত বাইরে থেকে তাই মনে হয়। কিন্তু তারপরেও তার মাঝে অনেক কিছু আছে যা কখনো কাউকে বলা সম্ভব না। অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু ব্যাপার সে নিজের মাঝে অনেক দিন ধরে লুকিয়ে রেখেছে। তার কারো জন্য দুর্বল হলে চলবে না। নয়তো অনুভূতির উজান স্রোতে সেসব লুকানো স্মৃতি তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
তেতসুইয়া তোয়ওদার আন্ডারকারেন্ট মাঙ্গাটা আমার অনেক প্রিয় একটা মাঙ্গা হয়ে উঠেছে। অত্যন্ত সাদামাটা আর্টস্টাইলে একটা পরিপূর্ণ কাহিনীবিন্যাসে মাঙ্গার চরিত্রগুলো বেশ ভালো ভাবেই ফুটে উঠেছে। এবং তা সম্ভব হয়েছে কারণ চরিত্রগুলির চেহারা আর ভাবভঙ্গিতে কোনো অতিরঞ্জনের ছায়া নেই, নামের সাথে মিল রেখেই সেসব সূক্ষ্ম আকারে দেখানো হয়েছে। মূল চরিত্র কানায়ের অবসন্নতা, আর এলোমেলো অবস্থা তার চেহারায় বোঝা যায়। আর হোরির সারাক্ষণ ভাবলেশহীন মুখ নতুন রহস্যের জন্ম দেয়।
গল্পটা যেহেতু চরিত্রভিত্তিক, তাই এর প্রতিটি চরিত্রকে অনেক ম্যাচিউরিটির সাথে হ্যান্ডেল করা হয়েছে। সাধারণত সাইকোলজিক্যাল মাঙ্গাগুলোতে কিছু চরিত্র অসহ্য রকমের বিরক্তিকর কাজ কর্ম করে থাকে, যেন মূল চরিত্রের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়াই তাদের একমাত্র কাজ। সেসব চরিত্রগুলোকে তখন চরিত্র মনে হয় না, মনে হয় ক্যারিকেচার। আর মূল চরিত্রের স্ট্রাগল দেখে দেখে ব্যাপারটা আনরিয়েলিস্টিক পর্যায়ে চলে যায়। আন্ডারকারেন্ট মাঙ্গা তে সেসব পাবেন না। বরং তাদের কথা আর নিরবতার প্যানেলগুলোতে খেয়াল করলেই অনেক ইতিহাস ভেসে আসে। আর একেকটা চ্যাপ্টারে বেশ কিছু থিম দেখতে পাওয়া যাবে – মমতা, ক্ষমা, অপরাধবোধ, অতীত আর মানুষকে বুঝতে না পারা।
মাঙ্গাটা সম্পর্কে এখন আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। তার চেয়ে মাত্র ১১ চ্যাপ্টারের এই ছোট্ট মাঙ্গাটা পড়ে ফেলুন। অনেকটা ২০০০ এর দিকের টেলিফিল্মের মত লাগবে। মাঙ্গাটা বেরও হয়েছে ২০০৪-২০০৫ সালে। মাঙ্গার সমাপ্তিটা আমাকে অবাক করেছে। শুধু এটুকু বলবো, কিছু প্রশ্নের উত্তর জীবনে কখনো সোজাসুজি পাওয়া যায় না। আবার অনেক কিছুর অর্থ খুঁজতে সারা জগতও পাড়ি দিতে হয় না। অন্তঃপ্রবাহে আছে সব কিছুর মানে, কিন্তু সেই মানেটা বেশ তিক্তমধুর।
মাঙ্গাঃ Undercurrent, アンダーカレント
জনরাঃ Slice of life, seinen
মাঙ্গাকাঃ Tetsuya Toyoda
চ্যাপ্টারঃ ১১
স্ট্যাটাসঃ Completed
MAL স্কোরঃ ৭.৫৪
পার্সোনাল রেটিং: পড়ে ভালো লাগবে।
ইন্সার্ট সং: Down Town Boogie Woogie Band- The Traitor’s Journey:
By Hedeki Saijo:
Chara – Duca: